#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_০২_০৩
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সুহার প্রেগনেন্সির শুরু থেকেই নানা রকমের জটিলতা ছিল। এখনও ব্যাতিক্রম নয়।এতসব সমস্যার কারণেই সে রাহার বিয়েতে উপস্থিত হয়নি। কারণ জার্নি অনেকটা। তার উপর নিজে ওখানে গেলে সবাইকে আরো বেশি ব্যস্ত হতে হতো। কিন্তু তাই বলে রাহার বিয়েটা যে রোহানের সাথে হয়ে গেল এটা মেনে উঠতে পারল না যেন সে। স্বচ্ছকে বারবার বলা হয়েছিল যেভাবে হোক বিয়েটা আটকাবে। অথচ স্বচ্ছ করল কি? নেচে নেচে বিয়ে খেয়ে চলে এসেছে। সুহা রেগে দাঁত কিড়মিড় করে। বিছানা ছেড়ে উঠে বসেই ঘড়িকে চোখ বুলাল। সময়টা তখন রাত তিনটা। এই সময়টাতেই পেটে ক্ষিধেটা মাথাচড়া দিয়ে উঠল যেন৷ সুহা ছোটশ্বাস ফেলে বিছানা ছেড়ে উঠে যাবে ঠিক তখনই সুহাকে চোখ বন্ধ রেখেই খুঁজল স্বচ্ছ। অবশেষে না পেয়ে চোখ মেলে তাকাল৷ সুহাকে ওভাবে উঠে যেতে দেখেই সে হুড়মুড় করে উঠে বসল। জলদি জিজ্ঞেস করল,
“ একি? এই মাঝরাতে উঠে কোথায় চলে যাচ্ছো? ”
সুহা মুখ কালো করে তাকায়। স্বচ্ছ সেদিকে খেয়াল না করে দ্রুত উঠে দাঁড়াল। সুহার মুখ আগলে ধরে বলল,
“বলেছিলাম না ক্ষিধে পেলে আমায় জানাতে? এনে দিব আমি। আগ বাড়িয়ে আলো অন্ধকারে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গেলে? ”
সুহা মুখ ভার করে উত্তর দিল,
“ পড়ে গেলে পড়ে যাব৷ সমস্যা কি? ”
স্বচ্ছর মুখ গম্ভীর দেখাল এবারে। স্বর গম্ভীর করে উত্তর দিল,
“ পড়ে গেলে যদি শুধু পড়ে যাওয়াই হতো আমি তোমায় পড়ে যেতে বারণ করতাম না সুহাসিনী। কিন্তু তুমি পড়ে গেলে তোমার এবং আমার আম্মুটার দুইজনেরই বিপদ।এমনিতেই তোমার প্রেগনেন্সির শুরুর থেকে এখন পর্যন্ত পুরোটাই আমি চিন্তায় চিন্তায় মরে যাওয়ার অবস্থা যখন থেকে ডক্টর বলেছে অনেক কম্প্লিকেটেড ইস্যু আছে তখন থেকেই।এইজন্যই সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে। এবং আমি জানি আমার থেকেও তুমি দ্বিগুণ সতর্কতা অবলম্বন করো যাতে তার কোন ক্ষতি না হয়। ”
সুহা হালকা হাসে। বিনিময়ে বলে,
“যাক। বুঝলেন। এখন যেমন গুরুত্ব দেখাচ্ছেন আমি না থাকলেও কিন্তু ওকে এভাবেই প্রায়োরিটি দিবেন। মনে থাকবে? ”
কথাটা কেন জানি না স্বচ্ছর পছন্দ হয় না। ভ্রু কুঁচকে নেয় সে৷ বলে,
“ মানে? ”
সুহা কথা ঘোরাতে বলে উঠে,
“ কিছুই না, ক্ষিধে পেয়েছে তো। কিছু এনে দিবেন না? ”
স্বচ্ছ আগের মতো গম্ভীর থাকল। কন্ঠ শক্ত রেখে বলল,
“ তুমি না থাকলে মানে সুহাসিনী?তোমাকে থাকতেই হবে। মনে রাখবে। ”
সুহা মৃদু হাসে। কেউ থাকতে চাইলেই যদি তার থাকা হয়ে যেত তাহলে তো আর কোন কথাই ছিল না। স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল,
“ এমনিই বললাম। প্রেগনেন্সির শুরুর দিক থেকেই তো কত জটিলতা। ডক্টর বলল না কম্প্লিকেটেড সিচ্যুয়েশন তৈরিও হতে পারে বেবি জম্মানোর সময়। যদি কিছু হয়ে যায় আমার তখন আমার মেয়েকে অবহেলা করবেন না। আর যদি একান্তই অন্য বিয়ে করতে ইচ্ছে হয় তো আমার মেয়েকে রাহা অথবা ছুটির কাছে দিয়ে দিবেন। ওরা দেখভাল করবে ওর। ”
স্বচ্ছর বুকে মোচড় মারে। কথাগুলো যে সে এই কয়েক মাসে একবারও ভাবেনি এমন নয়। অনেকবারই এই কথাটা ভেবেছে সে।প্রত্যেকবারই ভয়ে তার বুকের ভেতর অস্থির লেগেছে।আবার মানিয়েও নিয়েছে কিছু হবে না বলে বলে। অথছ সুহা কত স্বাভাবিক ভাবেই কথা গুলো বলছে। কতোটা স্বাভাবিক! একবার যদি বুঝত তার সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির বুকের ভেতর কি তোলপাড়। স্বচ্ছ ছোট শ্বাস ফেলে জানায়,
“ তুমি খুব নিষ্ঠুর সুহাসিনী। এই যেমন স্বাভাবিক ভাবে তুমি কথাগুলো বলে গেলে, অথচ আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে এই কথাগুলোই যথেষ্ট। ”
সুহা ক্লান্ত ভঙ্গিতে ঠোঁট এলিয়ে বলে,
“ আগে থেকেই জানিয়ে রাখা ভালো নয় বলুন? যদি কিছু হয়ে যায় তখন তো বলতে পারব না। এইজন্য বলে রাখলাম। ”
স্বচ্ছ আরেকটু এগিয়ে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে সুহাকে। তার বুকের ভেতর যন্ত্রনা হচ্ছে। অদ্ভুত যন্ত্রনা। কি করে বুঝাবে এটা সে? সুহা কি টের পাচ্ছে তার বুকের ভেতরের অস্থিরতা?স্বচ্ছ ঢোক গিলে শুধায়,
“ এতোটা স্বাভাবিক কি করে থাকো সুহাসিনী? যাকে ভালোবাসি তাকে হারানোর ভয় কতোটা থাকে জানো? তোমার কি কখনো কষ্ট হয় না আমি থাকব না ভাবলে? তো আমাকে কেন বারবার মনে করাও কথাটা? কি বুঝাতে চাও? ”
সুহা ম্লান হাসে। স্বচ্ছর কন্ঠ আটকে আসছে বুঝা যায়। হৃদয়ের হৃদকম্পন বলে স্বচ্ছর বুকের ভেতর কি চলছে। প্রসঙ্গ ঘুরাতে বলে,
“ কিছু না, ক্ষিধে চলে গিয়েছে। ঘুমাব। ”
স্বচ্ছ কন্ঠ আটকে আসে। তখনও সুহাকে জড়িয়ে আসে। সেভাবে থেকেই অপরাধবোধ নিয়ে বলল,
“বিশ্বাস করো? যদি এমন জানতাম আমি কখনোই বাবা হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতাম না সুহাসিনী। আমার শুধু তুমি হলেই চলবে।”
সুহা হাসে। স্বচ্ছকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে রেখে বলে,
“ কিন্তু আমার অবশ্যই মা হওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে হতো জনাব। কারণ মা হওয়ার স্বাদ না পেলে আমি বেঁচে থাকলেও শান্তি পেতাম না। ”
স্বচ্ছর কন্ঠ এবার ভেজা অনুভব হয় যেন। সুহা পেটে এক হাত রেখে বলে,
“ আমি জানি আমার ছোট্ট আম্মুটা আমার জীবনের সুখ কাড়বে না। আমি ওকেও চাই, তোমাকেও চাই।তোমাদের যে কাউকে হারালেই আমার জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে সুহাসিনী। ”
সুহা হাসে। স্বচ্ছর ভেঙ্গে পড়াটা দূর করতে হেসে বলে,
“ নো চিন্তা! আমি আপনার জীবন থেকে অতো সহজে পালাব না অস্বচ্ছ সাহেব। এতগুলো বছর অপেক্ষা করেছি। আর এখন এত সহজেই আপনাকে না জ্বালিয়ে ছেড়ে যাব? এত সহজ নাকি হুহ? ”
স্বচ্ছ সুহার চোখের দিকে তাকায়। বাচ্চাদের মতো করে বলে,
“ আমায় ছেড়ে যাবে না সুহাসিনী, যাবে না। প্রমিজ করো যাবে না। ”
সুহাও হেসে বলে,
” প্রমিজ। ”
.
রাহাদের ভার্সিটিতে একটা প্রোগ্রাম আছেে।মূলত গান নাচ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরই আয়োজন করা হয়েছে।রাহার সেখানে গান গাওয়ার দায়িত্বও আছে সাথে কিছু প্রাসঙ্গিক কাজকর্ম। মূলত এই কারণেই বিয়ের পরদিনই ঘুম থেকে উঠে সাতসকালে গিটার নিয়ে দৌড় মারতে হয়েছে ভার্সিটিতে। অপরদিকে রোহান যখন ঘুম থেকে উঠে তখন আটটা। রাহাকে রুমের কোথাও না দেখে হালকা স্বস্তির শ্বাস ফেললেও পরমুহুর্তেই নিজের মায়ের আগমণে ভ্রু কুঁচকাল সে। শুনতে পেল,
“ নবনী তো সেই সাতসকালে বেরিয়ে গেল রে, একটু গিয়ে পৌঁছেছে কিনা জিজ্ঞেস কর তো। ”
রোহান ভ্রু কুঁচকায়। সকাল সকাল এই মেয়ে আবার কোথায় গিয়েছে? বাবার বাড়ি? রোহান ভ্র কুঁচকেই জিজ্ঞেস করে,
“ কোথায় গিয়েছে? ”
“ ভার্সিটিতে। ”
রোহান কপাল কুঁচকাল। কি এমন পড়ুয়া মেয়ে যে বিয়ের পরদিনই তাকে দৌড় মারতে হলো ভার্সিটিতে? রোহান তপ্তশ্বাস ফেলে। ব্রাশ করর এসে আয়েশ করে বসে রাহাকে কল দেয়। যখন কল তুলল তখনই সে বলে উঠল,
“ নবনী? ভার্সিটিতে গিয়ে পৌঁছেছো? ”
বিষয়টা হয়তো বা শুধুমাক্র ফর্মালিটি করেই জিজ্ঞেস করা। তবে এর পরমুহুর্তের বিষয়টায় রোহানের কোন ফর্মালিটিই আসল না। বরং রাগ হলো। ওপাশ থেকে কোন এক ছেলে উত্তর দিল,
“ নবনী মানে রাহা এই মুহুর্তেই প্র্যাকটিস করছেে।আপনি আরেকটু পর কল দিলে ভালো হয়। ”
রোহানের দাঁত কিড়মিড় করে। নবনীকে কল দিতে এখন কার সিরিয়াল ধরতে হবে? তাছাড়া অন্য ছেলেই বা কল ধরবে কেন? মোবাইল অন্য ছেলের হাতে থাকবে কেন? রোহান জানে দুইজনেই দুইজনের মতো থাকার শর্ত দিয়েছিল। কেউ কারোর জীবনে নাক গলাবে না। তবুও কেন জানি না রোহান ফারাবীর বউ নবনী মাহমুদ রাহা অনেক ছেলের সাথে মেলামেশা করবে এটা সে মানতে পারে না যেন। ধমক দিয় বলল,
“ তো আপনাকে কি নবনী চাকর রেখেছে মোবাইল রাখার জন্য? ”
আকস্মিক ধমকে ওপাশের ব্যাক্তিটি বোধহয় থমকাল। কি বলবে বুঝে না উঠে দ্রুত কল রেখে দিল। আর এই কল রেখে দেওয়াতেই রোহানের রাগটা দ্বিগুন বাড়ল।এতবড় সাহস? কল রেখে দিল মুখের উপর? তাও ঐ মেয়ের সাথে পরিচয় থাকা কোন ছেলে?
.
ছুটির চোখের নিচে কালি পড়েছে গাঢ় হয়ে। মুখটা আরেকটু রুগ্ন দেখায়। চোখে চশমা ঠেকিয়ে সে জানালার ধারে বসেছিল। নিচে ফিহাকে ছুটে আসতে দেখা গেল এই বিল্ডিংয়ের দিকেই। ছুটি কপাল কুঁচকায়।এভাবে ছুটে আসছে কেন? কি কারণ? ভাবতে ভাবতেই কলেজ থেকে সদ্য বাসায় ফেরা ফিহা এসে মাত্র খুশিতে তাকে জড়িয়ে ধরে আষ্ঠেপৃষ্ঠে। মনে হচ্ছিল যেন খুশির রেশ এতটাই যে ফিহার শরীর কাঁপছিল। ছুটি বুঝে উঠে না। একইভাবে চেয়ে থাকতেই ফিহা কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতেই ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে,
“ ছুটি আপু? আমার আজ মন ভালো। অনেকটা মন ভালো। আমি কি তোমায় জড়িয়ে ধরে থাকতে পারি কিছুটা সময়?”
ছুটি বুঝে উঠে না। রোবট মানবীর ন্যায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকে সে। ফিহা কিছুটা সময় জড়িয়ে রেখেই মাথা তুলে তাকায়। নিজের ফোনটা এগিয়ে ধরে বলে উঠে,
“ আমি কি তোমার সাথে দুটো ছবি তুলকে পারি ছুটি আপু? ”
ছুটি এবারেও উত্তর করে না। ফিহা নিজেই ছবি তুলে। ছুটি কেমন করে যেন ক্যামেরার দিকে চেয়ে থাকে। আজ কত মাস পে ছবি তোলা হচ্ছে তার। নিজের শখ আহ্লাদ সবই বোধহয় বাদ পড়ে গিয়েছিল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফিহা। ছুটিকে বলে,
“ আজ কি কিছু বলবে না আপু? ভাইয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে না? ”
ছুটি খেয়াল করল ফিহা দ্রুত হাতে ছবিগুলো কোথাও সেন্ড করতে করতেই কথাগুলো বলল। ভ্রু কুঁচকায় সে। পরমুহুর্তেই ক্লান্ত স্বরে বলে,
“ একটা মানুষ প্রথম অবহেলা দিয়ে, পরে ভালোবাসা বিষয়টা কাজেকর্মে সবকিছুতে আমায় বুঝিয়ে হুট করেই আমার সাথে আর কথা বলে না, খোঁজ নেই। অথচ তোমাদের সবার সাথেই নাকি কথা হয়। আমার সাথে কথা বললে কি আমি তার ক্ষতি করতাম ফিহা? সে আমায় এতোটা অবহেলার দৃষ্টিতে কেনই বা দেখে বলবে ফিহা? একটু বেশিই গুরুত্ব দিয়েছি বলে কি? ”
#চলবে..
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_০৩
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
রাত আটটা। স্বচ্ছ সাধারণ সন্ধ্যার পরপরই চলে আসে বাসায়। বাকি সময়টা অফিস কার বাবাই সামলায়।অথচ আজ ফিরেনি দেখে সুহা এই নিয়ে তিনবার স্বচ্ছকে কল দিয়েছে। কল তোলা হয়নি। বোধহয় অফিসের কাজকর্মে ব্যস্ত আছে। মনকে এই বলে মানালেও পরমুহুর্তেই রাগে ফুসে উঠে সে। স্বচ্ছ এতই ব্যস্ত যে তার কল তুলল না? এতই ব্যস্ত? সুহা মুখচোখ লাল করে ফোন বন্ধ করে ছুড়ে ফেলল একপাশে। তারপর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল বিছানায়। হাত গেল পেটের উপর। ঠিক তখনই পেটের ভেতরে চুপটি করে থাকা ক্ষুধে বাচ্চাটা নিজের নড় চড় দ্বারা বুঝাল নিজের উপস্থিতি। সুহার পেটে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। তবুও হেসে পেটে হাত দিয়ে তা অনুভবের চেষ্টা চালায়। বিড়বিড় করে বলে,
“ এই মেয়ে? তোর বাপ এসে যখন আম্মুজান আম্মুজান করবে তখন একদমই সাড়া দিতে পারবি না। মনে থাকবে?”
কথাটা বলা মাত্রই তার একমাত্র মেয়ে যে কিনা এখনো জম্মই নেয়ি সে মায়ের বিরোধীতা করেই নাকি অন্য অর্থে কিজানি তবে নড়চড় বন্ধ করে দিল। সুহা ভ্রু কুঁচকাল। বলল,
“ওমনি নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেল? বাপের সামনে বলেছি, এখন না তো। ”
এবারও শান্ত। সুহা ভেবেচিন্তা বলে,
“আচ্ছা তুই কার মতো হবি?ঐ আধপাগল লোকটার মতো হবি ? নাকি আমার মতো? এই যে এত কষ্ট করে তোকে সামলাচ্ছি এখন, তখন বাপের পক্ষে চলে যাবি না তো পরে? ”
স্বচ্ছ দরজায় দাঁড়িয়ে হাসছিল সুহার কথা শুনে। ফোনটা ধরেরি মূলত এই কারণেই যে সে বাসায় চলে এসেছে৷ তখন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল সে। এটুকু অভিযোগে সে তার মেয়েকে তার সামনে রেসপন্স করতে নিষেধ করে দিচ্ছে? সাংঘাতিক। স্বচ্ছ হাসে। বুকে হাত গুঁজে বলে,
“ বাপের পক্ষে গেলে কি তোমার খুব মন খারাপ হবে সুহাসিনী? ”
সুহা ঘাড় ফিরিয়ে চাইল। স্বচ্ছকে দেখে উঠে বসে বলল,
“ মন খারাপ হবে কেন? তবে আমার বিশ্বাস আমার মেয়ে আমার ভক্তই হবে। ”
স্বচ্ছ মানল না। বরং রুমে এসে শার্ট টাই খুলতে খুলতে হেসে বলল,
“ মেয়েরা অধিকাংশ সময় বাবাভক্ত হয় সুহাসিনী। ”
সুহা না করে বলল,
” আমার মেয়ে মা ভক্ত হবে। ”
স্বচ্ছ এবার এগিয়ে আসে। হেসে ফের বলে,
“ আমার মনে হয় সে আপনার মতোই কিউট হবে এবং বাপের ভক্ত হবে সুহাসিনী। ”
কথাটা বলেই ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে সে।অতঃপর খাটের কিনারায় বসে থাকা সুহার জামাটা প্রতিদিনের মতো উপর করে নিঃশব্দে চুমু বসায় পেটের চামড়ায়। ঠিক তখনই আবারও নড়চড়ের জানান পেল ছোট্ট বাচ্চাটার। সুহার পেটের চামড়ায় বুঝা গেলে আবছা ছাপ। স্বচ্ছ তা দেখে পুণরায় হাসে। আবারও ঠোঁট এগিয়ে চুমু বসিয়ে আদুরে স্বরে বলে,
“ কি? তাই না আম্মুজান? বাবার ভক্ত হবে তো তাই না? ”
সুহা খুবই বিরক্ত এমন ভাব করে বলল,
“ এক্ষুনিই, এই মাত্রই আমি ওকে বললাম যাতে বাবা আসলে সাড়া না দেয়। আর ও? বেইমানি করে আপনার কথা শোনা মাত্রই সাড়া দিয়ে দিল? বিশ্বাসঘাতক। ”
স্বচ্ছ স্বশব্দে হেসে উঠে এবার। সুহার পেটের সাথে নিজের কানটা স্পর্শ করিয়ে বলে উঠে,
“ এই থেকে কি বুঝলে? আমার আম্মুটা কার পক্ষ নিবে?”
সুহা মুখ ফুলিয়ে উত্তর করল,
“আমারই। ”
“ উহু, না সুহাসিনী।আমার মন বলছে সে পক্ষ নিবে। ”
সুহা মুখ কুঁচকায়। বলে,
” ভালো। তাহলে আপনারা দুজনেই দুজনের পক্ষ নিয়েই থাকবেন, আমি থাকব না। ”
স্বচ্ছ মুখ উপর করে তাকায় এবারে। দুই হাতে সুহার কোমড় জড়িয়ে বসে থেকে মুখ উপর করে তাকিয়ে বলে,
“ আপনাকেও থাকতে হবে জনাবা। আপনি না থাকলে আমি অসম্পূর্ণ। ”
“ মিথ্যে বলছেন না যে গ্যারান্টি কি? ”
স্বচ্ছ গম্ভীর স্বরে উত্তর করে,
“ তুমি জানো এটা সত্য। এবং তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না বলেই বাবার বিজন্যাসে হাত দিয়ে দেশে থেকে গেছি। শুধু আবিরের খোঁজ নিতে দুবার বাইরে গিয়েছিলাম তাও এক সপ্তাহ করে ট্রিপের মেয়াদ ছিল। ”
সুহা সত্যিই জানে এটা সত্য। স্বচ্ছ তাকে ভালোবাসে। তবুও মুখ কুঁচকে বলে,
“ আমি যদি না থাকি তখন আবার নিজেকে সম্পূর্ণ করতে আরেকটা বিয়ে করে ফেলবেন না তো? ”
স্বচ্ছর মুখটা কালো হয়ে এল। গম্ভীর দেখাল চোখমুখ। সবসময় থাকবে না থাকবে বলে কি বুঝায় ও? সত্যিই থাকবে না এটা? স্বচ্ছ মেনে নিবে এটা? এই যে স্বচ্ছ এত যত্ন করে রাখে এই মেয়েটাকে, এত কেয়ারফুল থাকে সবসময়, এত এত প্রার্থনা, বিধাতা বুঝি তার পাশে থাকবে না? স্বচ্ছ ছোটশ্বাস ফেলে। শান্ত স্বরে বলে,
“ রোজ রোজ কথাটা মনে করিয়ে কি বুঝাতে চাও?আমায় ভয় দেখাও তাই না? আর এই যে আরেকটা বিয়ে করব এই কথাটা মাথায় ডুকিয়ে কি ভাবছো? তুমি না থাকলে আমি দু সেকেন্ডেই অন্য নারী ঘরে তুলব? ”
“ তুলতেই পারেন। ”
স্বচ্ছ রাগ হয় এই পর্যায়ে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“ তুললে সেটা এখনও তুলতে পারি। ”
সুহা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সাহস কত? বলে,
“ আমার বর্তমানে কি করে? ”
“ কত মেয়েই তো আমায় পছন্দ করে। ওখান থেকে একজনকে চুজ করলাম নাহয়। ”
সুহা বাহবা দিয়ে বলে উঠল,
“ বাহ! আগে থেকেই প্ল্যান করা আছে তাহলে।বউ খুঁজতে আর সমস্যা হবে না বলুন? যায় হোক শুনে খুশি হলাম। ”
এই বাহবা টা যে আসলে সুহা কোন পর্যায়ে গিয়ে বলেছে তা বুঝে উঠেই স্বচ্ছ হতাশ হলো। নিজের রাগকে শীতল করে ডাকে,
“ সুহাসিনী?”
“ বলুন জনাব। ”
স্বচ্ছ হাসে। ঝুঁকে গিয়ে সুহার কপালে চুমু বসিয়ে বলে উঠে,
“ জনাব কেবল তার জনাবাকেই ভালোবাসেন। বিশ্বাস করুন,সে না থাকলে জনাব অচল। সে না থাকলে জনাব নিজেও বেঁচে থাকবে কিনা সন্দেহ। এবং আমি জানি, জনাবা কার জনাবকে ছেড়ে কোথাও যাবে না৷ ”
.
ছুটি যখন কথা বলছিল হুট করেই খেয়াল করল ফিহার ফোনে কল রানিং আছে। পাঁচ মিনিট একুশ সেকেন্ড। এবং এখনও রানিং। ফিহা কি খেয়াল করেনি নাকি? ছুটি ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোমার ফোনে কল রানিং আছে ফিহা।ভুলে রিসিভড করে ফেলেছো নাকি?”
আকস্মিক ধরা পড়ে যাওয়ায় ফিহা তোতলায়।নাটক করে বলে,
“ হ্ হ্যাঁ?হু হু।ভুলে রিসিভড করে ফেলেছি বোধহয়। আননোন নাম্বার। তুমি কি একটু কথা বলে দেখবে আপু? কে তা তো চিনি না।”
ছুটি বিস্ময় নিয়ে বলে,
“ আমি? আমি কেন? ”
ফিহা চালাকি করে বলল,
“ আমি একটু ওয়াশরুমে যাব। ততক্ষন একটু দেখোতো কে এই লোাক? ”
কথাটা বলেই ফোনটা ছুটির হাতে দিয়ে চলে গেল ফিহা। ছুটি বিস্ময়ে থ হয়ে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে ডাকে,
“ ফিহা? ”
ফিহার উত্তর,
“ আসছি আসছি, তুমি ততক্ষন একটু ফোনটা রাখো আপু। ”
ছুটি সেভাবেই ফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর অনেকটা ক্ষন কেঁটে গেল নিরবতায়। কলের ওপাশের মানুষটাও নিরব, এদিকে ছুটিও হতবিহ্বল নজরে তাকিয়ে আছে ফোনের স্ক্রিনের দিকে। তারপর অনেকটা ক্ষণ নিরবতা ভেঙ্গে সর্বপ্রথম ওপাশ থেকেই গলা ঝাড়ল কোন পুরুষ। ছুটি কান খাড়া করে শুনল। কেন জানি না তার কাছে পরিচিত লাগে। ওপাশের মানুষটা যেন তার পরিচিত কোন মানুষই। এটা ভেবে বুক ধড়ফড় করে তার। হৃদস্পন্দন বাড়ে। সে আবারও কান খাড়া করে থাকতেই শুনতে পায় নিঃশ্বাসের আওয়াজ।ছুটি তীব্র বেগে চলতে থাকা হৃদস্পন্দন নিয়েই এবার কাঁপা স্বরে শুধাল,
“ আবির ভাই? ”
ওপাশ থেকে উত্তর আসে না আর। অন্য কেউ হলে নিশ্চয় উত্তর দিত এতক্ষনে? ছুটি যেন নিশ্চিত হয় এটা আবিরই। বলে উঠে,
“ আবির ভাই? কথা বলেন না কেন আমার সাথে? প্রথম কয়েকমাস তো ঠিক ছিল। ওখানে ফিরে গিয়েও আপনি রোজ খোঁজ নিতেন। এরপর? এরপর আমার দোষটা কি ছিল আবির ভাই? কেন আমার প্রতি আপনার করুণ ব্যবহার? ”
ওপাশ থেকে মুহুর্তেই কেউ কল রেখে দির। ছুটি কথাগুলো বলতে বলতেই চোখ টলমল করছি ।এবারে কেঁদেই ফেলে। ফিহা ছুটে এসে ছুটিকে এই অবস্থায় দেখে বলে উঠে,
“আপু? কি হয়েছে আপু? তুমি কান্না করছো কেন? ”
ছুটি অভিযোগ করে বলল,
“ তোমরা সবাই খারাপ ফিহা৷ সবাই। এটা আবির ভাই ছিল। তুমি নিশ্চয় জানতে তাই না? তবুও বললে আননোন নাম্বার। ”
ফিহা শান্তস্বরে জানায়,
“ তুমি কথা বলেছো ভাইয়ার সাথে? ”
“ সে বলেনি ফিহা৷ ”
ফিহা ফের বলল,
“ বলেনি? তাহলে কি করে চিনলে? ”
“ ওটা আবির ভাই-ই ছিল। ”
ফিহা ছোটশ্বাস টানে। ছুটিকে আগলে নিতে নিতে বলে,
” হয়তো খুব শীঘ্রই কথা বলবে আপু, কথা বলেনি বলে কষ্ট পেও না। ”
.
রোহানের মা রাহার জন্য কিছু খাবার পাঠিয়েছে।মূলত সে খাবার দিতেই রোহান রাহার ভার্সিটিতে এসেছিল। এসে যখন দেখল রাহা অনেকগুলো ছেলের সাথে এক ক্লাসে বসে রিহার্সাল করছে তখনই মেজাজ খারাপ হলো যেন। তার বউ যে মেয়েটা সে মেয়েটাকে কেন অনেকগুলো ছেলের সাথে মিশতে হবে? রোহান খুব বুঝে শুনেই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছিল। প্রথমত সুহার সাথে অনেকাংশে মিল আছে এই মেয়েটার। চেহারা, চোখ, গান গাওয়া, মারপিট, চঞ্চলতা আর অনেক মিল। এদিকে থেকে এই মেয়েটার প্রতি তার কোন এক সময়ে হলেও অনুভূতি জম্মানোর সম্ভবানা প্রবল।দ্বিতীয় কারণ সুহার সামনে সুন্দর একটা সংসার প্রেজেন্টে করে দেখানো। এটা জেদ নয়। সুহার প্রতি তার অনুভূতি এই কয়েকমাসে অনেকটাই স্থির হয়ে এসেছে।মানিয়ে নিয়েছে। তবে আজকাল লজ্জা হয় নিজের করা পাগলামো গুলো ভাবলে। সুহার সামনে নিজের এই ব্যাক্তিত্বহীনতা মানতে না পেরেই রাহাকে বিয়ে করেছে সে। অথচ এখন মনে হচ্ছে সে রাহা সম্পর্কে খোঁজ কম নিয়েছে। অনেকটা সময় যাবৎ এসব ভেবে চিন্তে যখন রাহার সাথে সাক্ষাৎ হলে তখনই খাবার গুলো এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ এতগুলো ছেলেপেলে নিয়ে কিসের গান গাইছিলে? সুন্দর হচ্ছিল ওসব হাবিজাবি গান? শুনতেই তো বিচ্ছিরি লাগছিল আমার। ”
রাহা ভ্রু বাঁকায়। বলে,
“ তো আমি কি বলেছিলাম আপনাকে শুনতে?
এই মেয়ের কথাগুলোই কেমন জানি। রোহানের রাগ লাগে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” আম্মু খাবার পাঠিয়েছে, দিতে তো হতোই। দিতে এসে দেখি এই বিশ্রী দশা। ”
রোহান যেভাবে বিশ্রী দশা বলছে যেন কি খারাপ কাজ করে ফেলেছে সে। রাহা ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ বিশ্রী দশার কি দেখেছেন? আমি কি কোন ছেলের কোলে উঠে বসে ছিলাম? ”
রোহান খুবই বিরক্ত এমন ভঙ্গিতে বলে,
“ তার চেয়েও জঘন্য। ”
“ কি জঘন্য? ”
“ যে সম্পর্কে আমার স্ত্রী তার এতগুলো ছেলেফ্রেন্ড থাকাটা। আমি এটা পছন্দ করি না নবনী৷ ”
কাটকাট স্বরে কথা গুলো শুনে রাহা দীর্ঘশ্বাস টানে। এমনভাবে বলছে যেন সত্যি কারের স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক তাদের। বলে,
” পছন্দ না করলেও তো কিছু করার নেই৷ আমাদের মাঝে আগেই চুক্তি হয়েছে যার যার লাইফে যা ইচ্ছে তাই ঘটে যাক আমরা নাক গলাব না। ”
রোহান কঠিন স্বরে জানাল,
“ নাক না গলালেও এটাই মাথায় রাখতে হবে যে ছেলেদের সাথে অতিরিক্ত মেলামেশা করাটা আমার পছন্দের নয়। করবে না। ”
“ আগেই বলেছেন কেউ কারোর জীবনে অধিকার দেখাতে পারবে না। ”
রোহান তা অস্বীকার করে মুহুর্তেই বলল,
“ অধিকার দেখানোর অধিকারও আমার আছে নবনী। ”
রাহা কোমড়ে হাত রাখে। জেদ নিয়ে বলে,
“তাহলে আমারও অধিকার আছে। তাই না?”
“হয়তো। ”
“ কিন্তু আমি অধিকার দেখাব না। কারণ আমি জানি আপনি কি কি শর্ত দিয়েছিলেন।”
রোহান বুকে হাত গুঁজে বলে উঠে,
“ এটা নতুন শর্ত, ছেলেদের সাথে মেশা যাবে না। ”
রাহা রাগে নাক ফুলিয়ে বলে উঠে,
“ ছেলেদের সাথে মিশলেই কি আমি খারাপ কিছু করে ফেলছি নাকি? আজব কথা! ”
রোহান বিরক্ত গলায় বলল,
“ আজব হলেও মাথায় রাখবে।”
কথাটা বলেই গটগট পায়ে চলে গেল সে। রাহা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে থাকে। কি আশ্চর্য! বিয়ের রাতে অমন রূপ দেখিয়ে এখন আবার অধিকার দেখাতে আসছে?আশ্চর্য!
.
সাদের হাতে সিয়ার মোটা ফিজিক্স বইটাই। সামনেই পরীক্ষার মেয়েটার। অথচ মেয়েটার মাঝে সিরিয়াসন্যাসের এইটুকু ছিটেফোটারও দেখা নেই। সাদ খুবই বিরক্ত যেন এই নিয়ে। এই যে এখন যে ম্যাথটা করতে দিল তা পুরোপুরি না সম্পূর্ণ করেই সিয়া উচ্ছাস নিয়ে তাকায়। হুট করেই রলে,
“ আপনার সিগারেটের কি অবস্থা সাদ ভাই?”
সাদ বিরক্ত নিয়ে তাকায়। পরমুহুর্তেই জিজ্ঞেস করে,
“ কিসের কি অবস্থা? ”
সিয় উত্তরটা দিবে কি দিবে না বুঝে উঠে না। পরে আবার কথা ঘুরিয়ে বোকা বোকা স্বরে বলে,
“ এই যে রোজ এত কষ্ট করে আমায় পড়াতে আসেন? কষ্ট হয় না আপনার? ”
সাদ দীর্ঘশ্বাস টানে এইবার বলে,
” দুনিয়ার চরম মূল্যবান জিনিস কি জানো ইনসিয়া? টাকা। টাকার জন্য মানুষ সব করতে পারে। আমি নাহয় একটু কষ্টই করলাম। ”
সিয়া মুহুর্তেই আবার বলে,
“ আপনি কি জানেন আপনার মুখটায় হাজার মায়া লেখা আছে সাদ ভাই? আপনার মুখটায় তাকালেই মনে হয় আপনার হাজারটা কষ্ট! ”
সাত হাসে সিয়ার কথা শুনে। কোন কোন সময় মেয়েটা এমনভাবে কথা বলে যেন মেয়েটা একটা বাচ্চা এখনো। সাত হেসে বলে,
“ একটু আধটু কষ্ট তো সবার জীবনেই থাকে। মানিয়ে নিতে হয়। ”
সিয়া কাজ শেষ করে হেসে খাতা এগিয়ে দিল। পরমুহুর্তেই আবার কি বুঝে বলে উঠল,
“ আপনার কাছে সিগারেট এত মজাদার বস্তু কি করে মনে হলো সাদ ভাই? আমি টেস্ট করে দেখেছি। আসলে একটুও টেস্ট নেই। উল্টো কাঁশতে কাঁশতে আমার দমবন্ধ হয়ে গেছিল। ”
সাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। বিস্ময়ের শীর্ষে পৌঁছে বলে,
“ কি টেস্ট করেছিলে? ”
সিয়া বেশ উচ্ছাস নিয়েই উত্তর করল,,
“ সিগারেট। ”
সাদ বিশ্বাম করে না যেন। বলে,
“ মজা করছো? ”
সিয়া প্রমাণ দেখাতে ড্রয়ার থেকে সিগারেটের অংশটুকু দেখিয়ে বলে উঠল,,
“ না, সত্যিই! এই যে বাকি অর্ধেক”
সাদ বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকল। স্তব্ধ ঠেকছে পরিবেশ। চোখেমুখে বিস্ময়। এই মেয়ে সত্যিই সিগারেট টেস্ট করেছে তা আবার গর্ব করে বলছেও? সাদের মেজাজ খারাপ লাগে। উঠে দাঁড়িয়ে এক ধমকে বলে উঠে,
” কালকে দুপুরে টানা তিনঘন্টা রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে ইনসিয়া। এটা শাস্তি তোমার।এবং, আমি আগামী দুই সপ্তাহ তোমায় পড়াতে আসব না। এটাও শাস্তি। আর হ্যাঁ, আমায় কোন কল, ম্যাসেজ করতে যাতে না দেখি তোমায়। ”
কথাটুকু এক নিঃশ্বাসে বলেই পা বাড়াল সাদ। মেজাজ খারাপ লাগছে হুট করেই। ইচ্ছে হচ্ছে এই মেয়েটার দুই গালেেদুটো থাপ্পড় বসাতে। সাদ খারাপ হওয়া মেজাজ নিয়ে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখনই দেখা হলো সুহার সাথে। সুহা তাকায়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
“ সাদ? ভালো আছিস? ”
সাদ রাগ লুকিয়ে হেসে বলে,
“তোর বোনকে না পেয়ে দেবদাস হয়ে ঘুরব নাকি?”
সুহা সাদের উপর রেগে আছে। একই সাথে রাহার বিয়েটা নিয়ে স্বচ্ছর প্রতিও সে অসন্তুষ্ট। যখন সাদকে বলে রাজি করানো গেল না তখন ভেবেছিল অন্তত স্বচ্ছ হলেও বিয়েটা আটকাবে। পরে সুযোগ এলে সাদ আর রাহার একটা গতি করা যেত। অথচ তেমন কিছু করার আর সুযোগই থাকল না। বিয়েটা সত্যি সত্যিই হয়ে গেল।
“আমি জানি তুই ভালো নেই, নিজের খারাপ থাকাটা কিন্তু তুই নিজেই বেঁছে নিলি সাদ। কি হতো একটাবার পরিচয়টা আমরা দিলে?”
সাদ হেসে বলে,
“ অনেককিছুই হতো। ঘুরিফিরে প্রত্যাখানই পেতাম।বেকার যে এখনো আমি। অপরদিকে তোর ভয়াবহ দাদাজানের সাথে লড়ার সাহসও নেই যে। ”
“ তাই বলে এতকাল ভালোবেসে তাকে অন্য কারোর হতে দিয়ে দিলি? ”
সাদ এবারে ছোটশ্বাস টানে। বলে,
“ সামর্থ্য না থাকলে হাত বাড়াতে নেই সুহা।”
ব্যাস। এটুকু বলে আর দাঁড়াল না সে। সমস্ত প্রশ্নের জবাবা বোধহয় এই একটা বাক্যই। সমস্ত না পাওয়ার উত্তর ও বোধহয় এই একটা বাক্যই!
#চলবে…