#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_০৫
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
“ আসসালামুয়ালাইকুম আবির ভাই…”
আবির শুনে স্থির সে মেয়েলি গলাটা। শুকনো ঢোক গিলে সে। মনে হয় সমুদ্রসমান বিষাদ যেন এই মেয়েটির কন্ঠে৷ মুহুর্তেই তীব্র অনুশোচনা আর অপরাধবোধে দগ্ধ হয় সে। ছুটির কলটা রেখে দেয় মুহুর্তেই। সাদাপ সঙ্গে সঙ্গেই আবিরের কাজকর্ম দেখে গালি ছুড়ল। বলল,
“এমন ভাবে কল রাখলি যেন তুই নতুন বউ। লজ্জা পেয়ে যেন কল রেখে দিয়েছিস। ”
কথাটা বলেই রাগ দেখাল সাদাফ। ফের কল লাগিয়ে বলল,
“ এবার কথা না বললে কিন্তু তোর মাইর একটাও নিচে পড়বে না আবির। এক্ষুনে কলে কথা বলবি তোর ঐ ছুটির সাথে। ”
কথাটা শাসিয়ে বলেই ফোনটা এগিয়ে দিল আবিরের হাতে। আবির ক্ষুদ্রশ্বাস টানে। ওপাশ থেকে এবারও কল রিসিভড হয়। হিসেব অনুযায়ী এখন বাংলাদেশে মধ্যরাত।আবির গলা ঝাড়ে। নিজের অসহায়তা লুকিয়ে গলা শক্ত করে শাসনের সুরে আগের মতো করেই বলে,
।“ তুই এত রাতে না ঘুমিয়ে অনলাইনে কি করছিস ছুটি? ”
ছুটি বিস্ময় নিয়ে তাকায়। চ্যাক করে দেখে এটা আবির ভাই কিনা। পরমুহুর্তেই বলে,
” হ্ হু?”
আবির ফের একটু রাগ দেখায়। বলে,
“ এতদিন শাসন পাস নি বলে কি বখে গিয়েছিস বেয়াদব? ”
ছুটি হাসে তাচ্ছিল্য নিয়ে। এতদিন শাসন পায়নি কেন? তার উত্তরও তো আবির ভাইইজানে। বলে,
” আবির ভাই,তা এতদিন পর? ”
আবির রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” ভাই হই তোর? নাকি অন্য কিছু? ”
ছুচি আবারও শুধাল,
“ যেই হোন, আমায় এতগুলো দিন পর স্মরন করার কারণ কি আবির ভাই? কোন প্রয়োজনে? ”
“ প্রয়োজন ছাড়া শুধু শুধু কল দিব কেন? অবশ্যই প্রয়োজন আছে আমার। ”
“ তাই বলুন, আমিও তো ভাবছি কি কারণে এই হঠাৎ খোঁজ নেওয়া। তা বলুন, প্রয়োজনটা কি আবির ভাই?”
আবির চোখ বুঝে এই পর্যায়ে। ক্লান্তিঘেরা কন্ঠ নিয়ে শুধায়,
” যদি হোস তুই? ”
ছুটি হাসে। বলে,
“ এটা এখন আর বিশ্বাস করার মতো নয় আবির ভাই। ”
“ কেন? ”
ছুটি কিয়ৎক্ষন চুপ থাকে। অতঃপর বলে,
“ কারণ এখন আর মনেই হয় না আপনি আমায় ভালোবাসেন বা বাসতে পারেন। এখন আর কিশোরী বয়সের মতো অপেক্ষায়ও থাকি না যে আপনি আমায় ভালোবাসবেন কোন একদিন,ভালোবাসতে পারেন একটা দিন।”
আবির যেন নিশ্চিত ছিল এমনটাই হবে। যেন জানতই মেয়েটা তার প্রতি অনুভূতি হারিয়ে ফেলবে এত অবহেলা পেয়েও। দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানাল,
“ পৃথিবীতে একটা জিনিসের পুণরাবৃত্তি ঘটাটা বিরক্তিকর। আমার নিজের কাছেও বিরক্তিকর লাগে। সেদিক থেকে এটা বোধহয় অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমি জানতাম এমনটাই হবে বোধহয়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো পুনরাবৃত্তি টা আমি নিজে ঘটাতে চাইনি ছুটি…”
“ তাহলে? মন উঠে গিয়েছিল তাই খোঁজ নেননি? নাকি অন্য কারোর প্রতি নিজের অনিচ্ছাতেই মন দিয়ে ফেলেছেন?
আবিরের কন্ঠ থমথমে হয়ে আছে। জানাল,
“ এমন ধারণা কেন জম্মাল তোর? ”
ছুটি জানাল,
“ এর বাইরে অন্য কোন কথা তো মাথাতে আসেই নি এতকাল আবিরভাই। আপনিই বলুন, তাছাড়া আর কি কারণ হতে পারে যে আপনি সবার সাথে যোগাযোগ রাখলেও আমার সাথে যোগাযোগ রাখলেন না? তাছাড়া ওখানে সুন্দরী সুন্দরী বিদেশিনীও আছে। মন একটু অবাধ্য হতেই পারে। ”
“ আমার মনকে অবাধ্য করা হয়েছিল বহু বছর আগেই। তাও একটা মেয়েই করেছিল অবাধ্য। বাদ দে, আমায় কিছুদিন সময় দিতে পারবি ছুটি? আমি তোকে সরাসরি সবটা বলতে চাই। ”
“ অপেক্ষায় থাকলাম, শুনব নাহয় আপনার উপেক্ষার গল্প । তবে আপনার আমার আসলেই সাক্ষাৎ হবে কিনা জানা নেই।
আবির বড্ড ক্লান্ত এমন স্বরে এবার বলে উঠলো
“ তোকে আমি উপেক্ষা করিনি ছুটি। ”
“বুঝলাম। ”
.
রাহা তখন বেলকনিতে বসে গান শুনছিল। ফোনে বিয়ের ঠিক আগের দিনের একটা ম্যাসেজ জ্বলজ্বল করছে,
“ ভালো থেকো ফুল। অন্যের হয়ে, অন্যের অধীনে সুখী হও। জেনে রেখো, তার চেয়েও একজন তোমায় অনেক বেশি ভালোবেসে এসেছিল।দূর্ভাগ্যে, কপালে ছিলে না তুমি। ”
রাহা ম্যাসেজটা পড়তে পড়তেই ওখানে এসে দাঁড়াল রোহানও। রাহা হাসে। হেসে বলে,
“ আপনি জানেন? বিয়ের আগে আমার এক অদৃশ্য প্রেমিক ছিল? যাকে আমি কখনো দেখিনি। অনুভব করেছি বহুভাবে। ”
কথাটজ বলেই পরমুহুর্তেই আবার বলে উঠে,
“ এখন বলবেন না প্রেমিক থাকাটাও অন্যায় হয়েছে।”
রোহান ভ্রু বাঁকিয়ে থাকায়। কেন জানি না এই সংবাদটা তার সত্যিই পছন্দ হয়নি। ভ্রু বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ তোমার সে প্রেমিক মহোদয় কে ছিলেন? বিয়ে করোনি কেন তাকে?”
রাহা এড়িয়ে গিয়ে বলল,
“ সে এক লম্বা ইতিহাস৷ কোন একদিন বলব আপনাকে। ”
রোহান রাহার মুখচাহনি খেয়াল করে তাকিয়ে থাকে। বলে,
“ কষ্ট হচ্ছে নাকি প্রেমিকের কথা মনে করে?”
রাহা মুহুর্তেই উত্তে করে,
“ আমি তাকে ভালোবাসিনি কখনো মিস্টার রোহান। তবে কোথাও একটা অনুভূতি তো ছিল, আগ্রহ ও ছিল তাকে দেখার। অথচ সে আমায় দেখা দেয়নি। ”
রোহান দাঁতে দাঁত চিবিয়ে উত্তর করল এবারে,
“ কথা শুনে বুঝা যাচ্ছে ভালোবাসো তাকে,
য আমার মাথা ঘামিয়ে কি লাভ?”
রাহা মেনে নিল না। বরং বলল,
“ ভালোবাসলে আমি এত চিলভাবে আপনাকে বিয়ে করে নিতাম না। ভালোবাসলে তাকে আমি নিজের করে নিতামই। অবশ্য এবং অবশ্যই। কিন্তু কাপুরুষের মতো লুকিয়ে থাকাটা আমার পছন্দ হয়নি। ”
রোহানের মুখচোখ শক্ত দেখাল। গম্ভীর স্বরে আওয়াজ তুলে উত্তর করল
“ গুড। ”
কথাটা বলেই আর এক পাও দাঁড়াল না সে৷ দ্রুত ওয়াশরুমে গেল। চোখেমুখে পানি দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলল,
“ স্টুপিড! আমি আস্ত এক স্টুপিড। এই মেয়েটাকে মূলত বিয়ে করেছিলাম সুহার সাথে এই মেয়েটার অনেক মিল বলে। সুহার গান গাওয়া, মারপিট করার অভ্যেস, চঞ্চলতা, চেহারা, চোখ সবই প্রায় একই। আমি ভেবেছিলাম এই মেয়েটাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করতে পারলেও এই মেয়েটা আমায় ভালোবাসবে। নামমাত্র হলেও একটা বোঝাপড়া আমাদের থাকবে। অথচ হলো কি? সে অলরেডি অন্য কাউকে ভালোবেসে বসে আছে। স্টুপিড না হলে কেউ কি করে খোঁজখবর না নিয়ে প্রথমবার প্রেমে পড়ে ধোঁকা খাওয়ার পরও পরেরবার খোঁজখবর না নিয়ে বিয়ে করে নেয়। ”
.
সুহারা যখন ফিরছিল ঠিক তখনই একটা গাড়ি ওদের গাড়ির ঠিক কিনার ঘেষেই গেল যেন। যেন আরেকটু হলেই এক্সিডেন্ট হতো। ভাগ্যিস, স্বচ্ছ গাড়িটাকে ডান পাশে সাইড করল কিছুটা নাহলে এক্ষুনিই বিপদ হতো। সুহা আতংক নিয়ে তাকায়। বলে,
“গাড়িটা ওভাবে কাছ ঘেষে গেল কেন? মনে হলো আর একটু হলেই এক্সিডেন্ট হতো। গাড়িটা বোধহয় আমাদের খেয়াল করে উঠেনি তাই না? ”
স্বচ্ছ রাগে নাক লাল করে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে,
“ খেয়াল করেছে। খুব ভালোভাবেই খেয়াল করেছে। ”
সুহা বোকার মতো বলল,
“ আপনি কি করে জানলেন? খেয়াল নাও তো করতে পারে তাই না? ”
স্বচ্ছ দ্বিগুণ রাগ নিয়ে জানাল,
“ আমি জানি সে খেয়াল করেছে সুহাসিনী৷”
“ খেয়াল করলে এমন করল কেন? ঐ লোকের সাথে তো আমাদের শত্রুতা নেই যে আমাদের মেরে ফেলতে চাইবে৷ ”
স্বচ্ছ হেয়ালি করে বলল,
“ হয়তো আছে। ”
“ হ্ হু? ”
সুহাকে আতংকিত দেখাল এবারে৷ স্বচ্ছ তা দেখেই কাহিনী ঘুরাতে বলে উঠল,
“ কিছু নয় সুহাসিনী। ”
.
সিয়া যখন কলেজ যেতে রিক্সায় উঠল ঠিক তখনই রাস্তার ওপাশে দেখা মিলল সাদের। তড়িঘড়ি করেই রিক্সা খেকে নেমে পড়ল মেয়েটা। সাদের দিকে পা বাড়াল দ্রুতভাবে। অতঃপর ওর সামনে গিয়েই বলে উঠল,
“ সাদ ভাইয়া? আপনি কি আর পড়াবেন না আমায়?টানা টানা আজ তিনদিন। ”
সাদ তাকাল। যদিও মেয়েটার প্রতি এই মুহুর্তে তার রাগ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না তবুও রাগ নিয়ে বলল,
“ রোদে দাঁড়িয়েছিলে পরদিন? ”
সিয়া মুহুর্তেই মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল,
“ অবশ্যই। বিশ্বাস নাহলে পরিবারের সবাইকে জিজ্ঞেস করুন যে আমি সত্যিই রোদে দাঁড়িয়েছিলাম কিনা। ”
সাদ ফের বলে,
“সিগারেট মুখে নেবে কখনো আর? ”
সিয়া বোকাস্বরে জবাব দেয়,
“ আপনার থেকে দেখেই তো করলাম এমনটা। ”
“ ভুল করেছো। এবং এর শাস্তি ভোগ করো।”
#চলবে…