#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_০৮
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সুহার তখনও জ্ঞান ফেরেনি। ডক্টর বলেছে মায়ের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, তবে তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ অন্যদিকে সদ্য জম্মানো তাদের মেয়ে শিশুটিও একদম সুস্থ সবল বাচ্চা হিসেবে জম্ম নেয় নি। তার উপর পর্যাপ্ত সময়ের আগেই সাতমাস সময় মায়ের পেট থেকে সে এই দুনিয়ার আলো দেখেছে। স্বচ্ছকে যদিও এখন এসব নিয়ে ছোটাছুটি করতে বারণ করলেন ডক্টর। আশ্বাস দিলেন সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু স্বচ্ছ শুনল না। খবর পাওয়া মাত্রই সুহাকে দেখার জন্য ছটফট করল। ছেলেটার চোখ লালচে৷ শার্টটা ঘামে ভিজে চুপচুপে হয়ে আছে, এমনকি কপাল থেকেও ফোঁটাফোঁটা হয়ে গড়াচ্ছে ঘামের বিন্দুকণা৷ পাশাপাশি দাঁড়ালে হয়তো যে কেউই নাম সিটকাবে ঘামের গন্ধে।চেহারায় বড্ড অবসাদ৷ স্বচ্ছ কিছুটা হট্টগোলই পাকিয়ে ফেলল অপরেশন কেবিনের সামনে৷ স্বচ্ছর মা যদিও একটাবার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দেখল। কিন্তু স্বচ্ছর ধ্যানজ্ঞান তখন বাচ্চার মধ্যে ছিলই না যখন সে শুনল বাচ্চার মায়ের অবস্থা ভালো নয়। ডক্টর স্বচ্ছকে শান্ত করার চেষ্টা চালালেন। এই পর্যায়ে গলা ঝেড়ে বলে উঠলেন,
” দেখো স্বচ্ছ, এমন একটা কেইস যে তৈরি হবে তা তোমাকে আগে থেকেই জানানো হয়েছিল। আর দুয়েকটা প্র্যাগনেন্সির মতো সুহার প্রেগনেন্সিটা অতোটাও সহজ ছিল না স্বচ্ছ। অনেক কঠিন জার্নি মেয়েটার। জানি না কতটুকু সে শেয়ার করেছে কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতি যে তৈরি হবে তা তোমাকে বলেছিলাম আগেই। তাও যদি এই খারাপ রকমের ঘটনাটা না ঘটত হয়তো মা- বাচ্চা দুইজনকেই আমরা সুস্থ হিসেবে পেতাম।”
স্বচ্ছ আকস্মিক নিজের হট্টগোল পাকানো রূপ ছেড়ে গম্ভীর স্বত্তা ধারণ করল। যেন সে এসব জানে, এসব বুঝে। চোখ লাল হয়ে উঠে গাঢ় হয়ে তার। স্বচ্ছর বুক ভার লাগে। আবারও অসহায় লাগছে তার পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে।এই পরিস্থিতিটা তার পছন্দ হচ্ছে না। তার সুহাসিনী আবারও আগের মতো তার উপর রাগ দেখাক, অভিমান করুক। সে কিছু করবে না। কিন্তু এমন অনিশ্চায়তায় সে কিভাবে নিজেকে ঠিক রাখবে? বহু কষ্টে নিজেকে শক্ত রেখে হাত জোড়া মুঠো করল সে। বারকয়েক ঢোক গিলে টানটান স্বরে জানাল,
” আমি আপনার কাছে কিছুই চাই না ডক্টর।আমার মেয়েকেও না। কিন্তু আমার সুহাসিনীকে বাঁচিয়ে দিতে হবে যে কোন কিছুর মূল্যে। ফিরিয়ে দিবেন তাকে। আমি আর কোন বিশৃঙ্খলা করব না, শুধু ওকে বাঁচিয়ে দিন। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারি না ডক্টর।”
ডক্টর দীর্ঘশ্বাস ফেললেন এবারে। মুখ গোল করে শ্বাস ফেলে জানালেন,
“ আমরা চেষ্টা করছি স্বচ্ছ। তাছাড়া সুহা এখনো মারা যায়নি, তুমি এভাবে বাঁচিয়ে দিন বাঁচিয়ে দিন বলছো যেন সে আর নেই।”
স্বচ্ছ লাল রক্তিম চোখ নিয়ে তাকাল ডক্টরের দিকে। কথাটা তার একেবারেই পছন্দ হয়নি যেন।বলল,
“ ওকে থাকতে হবে ডক্টর। যেভাবেই হোক, যে কোন মূল্যে ওকে থাকতে হবে।”
ডক্টর আশ্বস্ত করে উত্তর দিল,
” আমরাও আশা করি ও বেঁচে থাকবে স্বচ্ছ। ”
এই পর্যায়ে স্বচ্ছ যেন আর কথা বলতে পারল না। গলা বেঁধে আসছে। কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে পরক্ষনেই আবার বলল সে,
“ ওকে দেখতে চাই একবার ডক্টর। দেখার অনুমতি দিয়ে দিন ডক্টর, নয়তো খারাপ হবে। ”
যেন স্বচ্ছ আদেশ করছে। অথচ মধ্যবয়স্কা ডক্টর মহিলা এবারে একটু হাসল। বলল,
“যাও। আমরা ততক্ষনে সুহাকে রক্ত দেওয়ার ব্যবস্খা করছি। ”
স্বচ্ছ আর কথা শুনল না। গটগট পায়ে পা বাড়াল কেবিনের দিকে।পিছু পিছু গেল ডক্টর নিজেও। স্বচ্ছ কেমন করে যেন উদ্ভ্রান্তের মতোই প্রবেশ করল। যা দেখে নার্সরা বাঁধা দিতে আসতেই ডক্টর ইশারায় নিষেধ করলেন। মুহুর্তেই নার্স দুইজন বেরিয়ে আসলেন। স্বচ্ছ কাঁধ ফিরিয়ে অবশ্য একবার চাইল। দেখা গেল শুতু দরজায় দাঁড়ানো ডক্টরকে। ডক্টর চোখে চেয়ে যেন এটাই বুঝাল,“যাও, বউয়ের কাছে যাও”।স্বচ্ছ অপেক্ষা করে না।পরপরই উস্কুখুষ্কু চুল নিয়ে, লাল রক্তিম চোখ নিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো গিয়ে দাঁড়াল সুহার পাশে। মেয়েটার চোখ বুঝে রাখা। স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস টানে। মাথায় হাত রেখে ঝুঁকে চুমু খায় কপালে,পরপরই গালে, মুখে অসংখ্য চুমু দিল। ছোট বাচ্চাদের মতো অভিযোগ জানিয়ে বললো,
“ সুহাসিনী? যদি আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবো তাহলে একদম মেরে দিব বলে দিলাম। আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবনায়ও আনতে পারবে না বুঝলে? আমি, তুমি দুইজনে এখনে অনেক দূর যাওয়া বাকি সুহাসিনী… ”
এই পর্যায়ে কথা বলতে গিয়েই স্বচ্ছর গলা ধরে আসে৷ অস্থির লাগে। সুহার মুখের দিকে চেয়ে মাথার চুলে হাতে বুলাতে বুলাতে বলে উঠে,
“ কেন হলো এমনটা? এতোটা সতর্ক থাকার পরও বিধাতা আমার সহায় হলো না সুহাসিনী? সে তোমার মতোই নিষ্ঠুর বলো?তোমরা সবাইই নিষ্ঠুর। ”
পেছন থেকে ডক্টর মৃদু হাসে তখন স্বচ্ছর পাগলামে দেখে।ছেলেটা সম্ভবত পাগলের মতোই বউকে ভালোবাসেন বলে আন্দাজ করেন উনি। অতঃপর স্বচ্ছকে ওভাবে কথা বলতে দেখে শুধায়,
“ স্বচ্ছ দেখেছো তো বউকে? এবার বাইরে যাওয়া যাক? ওকে ব্লাড দিতে হবে তো। ”
স্বচ্ছ ভদ্রবাচ্চার মতে সরে দাঁড়ায় এবারে। পরপরই আবারো পা বাড়িয়ে ঝুঁকে গিয়ে চুমু বসাল সুহার গালে। বলল
“ ছেড়ে যাচ্ছি না। সময় দিচ্ছি সুহাসিনী। সুস্থ হও। প্রমিস, কেবল সুস্থ হও সুহাসিনী তারপর তোমাকে আমি বুঝাব এভাবে চিন্তায় ফেললে কি হয়। ”
কথাটুকু বলেই স্বচ্ছ পা বাড়াল। ওখান থেকে বের হতেই হুট করে কোথা থেকে যেন একটা গুটানো কাগজ ছুড়া হলো তারই উদ্দেশ্য। স্বচ্ছ ভ্রু কুঁচকায়। হাতে নিতেই কাগজটা মেলে দেখতে পায়,
“ ভেবেছি তোমার বাচ্চা মরে গেলে বাপ-সন্তানের সম্পর্কটুকু দামী তা বুঝতে পারবে। কিন্তু তুমি তো দেখছি তোমার বউয়ের চিন্তাতেই অন্ধ। সন্তানকে নিয়ে ভাবার সময়ই তো নেই। তাহলে বরং তোমার সন্তানটা থাকুকই কি বলো?”
স্বচ্ছ দাঁতে দাঁত চিবোয়। কে হতে পারে তা আন্দাজে আসে না তার। তবে এদিক ওদিক তাকায় সে৷ কাউকে না দেখতে পেযে ফ্লোরে লাথি বসায়। রাগে শরীর জ্বলে উঠে৷ ঠিক এই মুহুর্তেই তার মনে পড়ল তার একটা মেয়েও পৃথিবীতে আছে যে কিনা আজই একটু আগে জম্ম নিয়েছে। স্বচ্ছর বুক ভার লাগে। অল্প সময়ে,সুস্থ হয়ে না জম্মানোতে বাচ্চাকে এন আই সিউতে রাখা হবে। নিশ্চয় এতক্ষণে রেখে দিয়েছে? স্বচ্ছর নিজেরে বাবা হিসেবে ব্যর্থ ব্যর্থ লাগে। সন্তানকে একটাবার কোলে অব্দি নিল না সে? যাকে এতকাল এত আদরে আগলে রেখেছিল?স্বচ্ছ এসব ভাবতে ভাবতেই নিজের মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় দ্রুত পায়ে। উশখুশ করতে করতে শুধায়,
” আমার আম্মুজানটা কোথায় আম্মু?একবার দেখতে চাই.. ”
স্বচ্ছর আম্মু মুহুর্তেই উত্তর ছুড়ে,
“ একটু আগেই তো নার্স এসে নিয়ে গেল। ”
“ আমি একবার দেখতে পারব আম্মু? শুধু একবারই।”
উনি উত্তর করলেন,
“ পাগল। দেখতে পারবি।”
স্বচ্ছর বুকটা ডিপডিপ করে৷ বাবা হওয়ার কিঞ্চিৎ আনন্দেই নাকি কি জানি৷ অতঃপর মায়ের আর চাচীর পিছুপিছু সে পা বাড়াল৷ সিয়া আর তিহান ওখানেই থাকল। স্বচ্ছ মা কথা বলে বাচ্চাকে দেখানোর ব্যবস্থা করল৷ স্বচ্ছর যেন হাত পা কাঁপে এবারে। ঐটুকু ছোট বাচ্চাটাকে দেখেই হৃদস্পন্দ থমকে যায় তার৷ মনে হয়, এটাই তো তাদের সে ছোট্ট অংশটা। এই ছোট বাচ্চাটার সাথেই এতদিন কত খুনসুটি৷ কত কথা!স্বচ্ছ বড্ড আবদার করে জানাল,
“ একবার কোলে নিব আম্মু?”
স্বচ্ছ মা এবারেও কথা বললেন৷ নার্সরা মুহুর্তেই নাকোচ করে বললেন,
“ উনার শরীর ময়লা লাগছে। বাচ্চাকে এভাবে কিভাবে দেয়? ”
স্বচ্ছ নিজের দিকে তাকায়। সত্যিই বিচ্ছিরি রকমে অপরিষ্কার দেখাচ্ছে বোধহয় তাকে। তবুও নার্স যখন হ্যাঁ না বলতে বাচ্চাকে এগিয়ে দিচ্ছিল সে লোভ সামলাতে পারল না৷ হাত বাড়াতে নিল। আবার পরমুহুর্তেই ভীতগ্রস্থ হলো। বাচ্চাটা যদি পড়ে যায় হাত গলিয়ে? সে নিতে পারবে কোলে এইটুকু বাচ্চাকে? স্বচ্ছ বড্ড অসহায় ফিল করে বলে,
“ ও যদি হাত গলিয়ে পড়ে যায় আম্মু? ”
স্বচ্ছর মা একটু হাসেন৷ বলেন,
“ পড়বে না। ”
স্বচ্ছ এবারে কোনভাবে কোলে নিল নিজের ঘামাটে শার্টটার সাথে চেপেই।এত নরম পুতুলটা। যেন তুলো। স্বচ্ছর মনে হলে তার শক্ত শরীরের সাথে লেগে বাচ্চাটা ব্যাথা পাবে যেন। পরমুহুুর্তেই মনে হলো তার ঘাম জড়িত শার্টে বাচ্চাটা ময়লা আবর্জনা লেগে জীবাণু সংক্রমন করলে? স্বচ্ছ মুহুর্তেই মায়ের দিকে ফিরে বলে,
“ ও এত নরম। আমার কোলে যদি ব্যাথা পায় আম্মু? ”
“ পাবে না। ”
স্বচ্ছ ড্যাবড্যাব করে পরক্ষণে কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকে বাচ্চাটার পানে। বহুক্ষন তাকিয়ে বলে,
“ আম্মু? ও আমার আম্মুজান তাই না? ”
স্বচ্ছর মা কেঁদে ফেলেন এবারে। বলেন,
” হ্যাঁ। ”
স্বচ্ছ বাচ্চাটাকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলে উঠেন,
“ আম্মু? ও তো দেখতে হুবুহু সুহাসিনীর মতো। দেখো চোখ, মুখ, নাক… ”
স্বচ্ছর চাচী হুট করেই জানাল,
“ হু, ও না থাকলেও যাতে ওর মেয়েটার মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে থাকে বোধহয় এইকারণেই উপরওয়ালা এই চেহারা দিয়েছেন। ”
স্বচ্ছর চোয়াল শক্ত হয়। এটা কেমন কথা? সে মুহুর্তেই বাচ্চাকে নার্সের কাছে দেয়৷ দেখা শেষ বলে চলে যেতে যেতে চাচীর সামনে দাঁড়াল। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বরল,
” কি বললেন চাচী? ”
এমন অবস্থা দেখে উনি চুপ করে থাকলেন৷ স্বচ্ছ ফের আবারও জোর গলায় বললেন,
“ কি হলো বলুন? ”
নার্সরা মুহুর্তেই শুধাল,
“ আওয়াজ করবেন না।”
স্বচ্ছ জোরে শ্বাস টানে। নার্সদের দিকে চেয়ে বলে,
“ ওকে।আমার মেয়েকে দেখে রাখবেন বুঝলেন? যদি শুনি আমার মেয়ের এখানে কষ্ট হচ্ছে তাহলে কিন্তু আপনাদের হসপিটালের নামেই মামলা ঠুকে দিব নার্স। ”
এটুকু বলেই হনহন করে চলে গেল সে৷ নার্সরা বোকার মতো চেয়ে থাকে। আর বিড়বিড় করে বলে,
“ অদ্ভুত পাগল লোক। ”
স্বচ্ছ যখন পা বাড়িয়ে আবারও সুহার ওখানে যাচ্ছিল ঠিক দূর থেকে কানে এল,
“ পেশেন্ট রেসপন্স করল ম্যাম, জ্ঞান ফিরেছে। ”
.
আবিরের সামনে এলিজা। চোখমুখ তার শক্ত।চাহনি কঠিন। আবির মুহুর্তেই শুধাল,
“ তুই কোন সাহসে আমার রুমে ডুকেছিলি লিজা? হ্যাঁ মানলাম, তুই নিধির খুব ভালো ফ্রেন্ড। ওর বাসায় আসতেই পারিস। কিন্তু আমার রুমে কেন? এই কয়েকমাস চিকিৎসা করেছিস বলে? বিশ্বাস কর, যদি আমি কোমায় না থেকে আমি সজ্ঞানে থাকতাম তোর হাতে চিকিৎসাও নিতাম না। ”
এলিজা যেন কষ্ট পায়। বলে,
“ একটু বেশিই ঘৃণা করছো না আবির? অতোটাও খারাপ নই আমি। তুমি বোধহয় ভুলে গেছো তুমি এখনো মাঝেমাঝে সেন্সলেস হয়ে যাও আবির। চিকিৎসা এখনো চলছে।”
“ সেন্সলেস হয়ে যাই বলেই রুমের দরজা খোলা রাখি। কিন্তু তুই যে সে সুযোগটা ব্যবহার করবি জানতাম না। কোন সাহসে আমার ফোন রিসিভড করেছিলি?”
এলিজা হেসে বলল,
“ তোর বউ কেমন রিয়্যাক্ট করে তাই দেখছিলাম। কিন্তু সে তো আমায় চিনলই না আবির। ”
আবির রেগে তাকায়। এলিজার ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছুটির নাম্বারে কল দেয়। অতঃপর ফোনটা এগিয়ে দিয়ে কাটকাট স্বরে বলে,
“ এক্ষুনি ফোন করে আমার সামনে সব সত্যিটা ওকে বলবি লিজা। নয়তো খুব খারাপ হবে। ”
.
ছুটি তখন ঘুমে। চোখে লেগে এসেছিল বোধহয়। হুট করেই চোখে ভাসল আবিরকে। তার খুব কাছে, সন্নিকটে পুরুষটাকে অনুভব করে চমকে উঠে সে। বুঝতে পারে পুরুষটা ঠোঁট ছুঁয়েছে তার কপালে, গালে, শেষ অব্দি ঠোঁটে। ছুটি এসব অনুভব করে যখন চমকে উঠে ঠিক তখনই তার ঘুম ভাঙ্গে। ছুটি বুঝতে পারে প্রতিবারের মতো এটাও তার স্বপ্ন। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। এই কয়েকমাসে আবিরকে সে বহুবার স্বপ্নে পেয়েছে, উপলব্ধি করেছে এবং যখন চোখ মেলে নিজেকে বাস্তবে ফিরে পায় ঠিক তখনই বুঝতে পারে সবটা স্বপ্ন। ছুটি মৃদু হাসে এসব ভেবে। হুট করেই কি বুঝে ফোনটা নিয়ে দেখে এই মাত্রই তিন চারটা কল এসেছে হোয়াটসএ্যাপে।কে সেটা বুঝতে না পেরে সে কল দেয়। কল দেওয়ার সাথে সাথেই কল রিসিভড হলো। কথা শুনে বুঝতে পারে এটা এলিজা। ছুটি ঝামেলা না বাড়াতে বলল,
“ শুনুন এলিজা? আবির ভাই আপনাকে ভালোবাসে। ভালোবেসে সে আপনাকে লিজা নামে ডাকেও। ”
এলিজা অব্ক হয়ে বলল,
“ ভালোবাসে? ”
ছুটি সম্মতি জানিয়ে বলে,
“ হ্যাঁ,আপনি শুধুশুধু অপছন্দ করে আমাকে অভিশাপ দিবেন না ডক্টর এলিজা। আমি খুব আশাবাদী আপনাদের ভবিষ্যৎ সংসার দেখব বলে। আমি সত্যিই মন থেকে চাই আপনি তার স্ত্রী হোন একটা সময়। ”
কথাটুকু বলা শেষ হতেই আবির খপ করে ফোনটা কেড়ে নেয়। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে উঠে,
“ কি চাস? ”
ছুটি স্তব্ধ হয়ে শুনে। বাহ!এলিজার পাশে তাহলে আবিরও আছে? ভালো তো। আবির ফের বলে,
“ কি হলো? কথারা নিভে গেছে এখন? কি চাস মন থেকে বল? ”
ছুটি শক্ত গলায় উত্তর দিল এবারে,
“ আপনি আপনার লিজাকে বিয়ে করুন তাই। ”
আবির রেগে শুধায়,
“ বিয়ে করলে তুই খুশি হবি? ”
ছুটি তাচ্ছিল্য করে বলে,
“ না হওয়ার কি আছে? ”
আবির আবারও বলে,
” শিওর? ”
ছুটি হেসে বলে,
“ হ্যাঁ। অবশ্য আমার তো মনে হয় আপনারা ইতোমধ্যেই শুভকাজটা সেরে ফেলেছেন আবির ভাই। নাহলে আপনাকে কল দিলে তাকে পাই, তাকে কল দিলে আপনাকে পাই। সুন্দর না বিষয়টা? ”
আবির দাঁতে দাঁত চাপে। চোয়াল শক্ত হয়। মেয়েটাকে এই মুহুর্তে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিতে পারলে তার ভালো লাগত। সবসময় আগেভাগেই এক চামচ বেশি বুঝে।মুহুর্তেই ত্যাড়া স্বরে বলে উঠে আবির,
“ তো এই সুন্দর বিষয়টা দেখে কি তোর কষ্ট হচ্ছে? ”
ছুটি হাসে। উত্তর দেয়,
“ কষ্টরা আজকাল আর আমার হৃদয়ে নাম লিখায় না আবির ভাই। অবশ্য এর জন্য আপনার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ আমি। কারণ আপনার কারণেই আজকাল কষ্টদের হজম করতে শিখেছি। ”
আবির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর করে,
“ আমার কারণে কেন কষ্ট পেয়েছিস এটুকু এক্সপ্লেইন করার সুযোগটা হলেও আমায় দিতে হয়। কিন্তু তার আগেই উল্টোপাল্ট ভেবে রেখেছিস৷ এর পেছনে কোন কারণ থাকতে পারে এটাও তো ভাবতে পারিস ছুটি। সারাজীবন এতোটা বোকা কেন থেকে গেলি। ”
ছুটি উত্তরে বলে,
“ একটা মেয়ে আপনার ঘরে থাকছে, নির্দ্বিধায় ফোন রিসিভড করছে এসব জানার পরও আমি উল্টোপাল্টা ভাবছি আবির ভাই? ঠিক বলেছেন৷ কারণ তো ছিলই এতগুলো মাস অবহেলা করার। এবং কারণটা হলো আপনার প্রয়তমা লিজা, রাইট?”
আবিরের এই পর্যায়ে নিজের মাথা নিজে ফাটাতে ইচ্ছে হচ্ছে। রাগ হচ্ছে, গা জ্বলছে তার। শক্তস্বরেই বলে,
“ ফোন রাখ, মেজাজ খারাপ হচ্ছে তোর সাথে কথা বলে। ”
বোকা ছুটি আবারও আবিরকে রাগিয়ে দেওয়ার মতো কয়েকটা শব্দ ব্যবহার করল,
“ ফোন করে আপনাদের বিরক্ত করে ফেললাম বোধহয়। আচ্ছা, রাখলাম। আপনাদের একান্ত মুহুর্তগুলো এঞ্জয় করুন। ”
আবির যদি সামনে থাকত নির্ঘাত আজ ছুটি চড় খেতে খেতে অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। আবির মুঠো শক্ত করে। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,
“ হ্যাঁ, মহাবিরক্ত করে ফেলেছিস আমায়। ”
#চলবে….