প্রেমে ডুবি পর্ব-০১

0
71

#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#সূচনা_পর্ব

পাত্রী দেখতে এসে পাত্রীর জায়গায় পাত্রী হিসেবে দুজনকে দেখে অবাক হন ছেলে পক্ষ। ছেলে রাগি দৃষ্টিতে তাঁর বাবা’র দিকে তাকান। ইশারায় জিজ্ঞেস করেন, এসব কি বাবা? ছেলের বাবা রফিক মির্জা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলেন। তিনিও কিছু বুঝতে পারছেন না। এসব কি হচ্ছে। পাশে ঘটক সাহেব কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। সামনে দুটো মেয়ে শাড়ি পরে সুন্দর করে সেজেগুজে বসে আছে। অনেক্ক্ষণ ধরে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে রেখেছে সেহরিশ মির্জা। কিন্তু আর পারল না। ক্রুদ্ধ কন্ঠে চেচিয়ে বলে,

” হোয়াট ইট দিস। এসব হচ্ছে কি? আপনারা কি আমাদের সাথে মসকারা করছেন? এভাবে ডেকে এনে অপমান না করলেও পারতেন বলে জোরে জোরে শ্বাস নেয় ।

পাত্র সেহেরিশ মির্জা’র কথা শুনে মেয়ের বাবা বলেন, আপনারা একটু শান্ত হয়ে বসুন প্লিজ । এখানে মিসআন্ডারেস্টটিং হয়েছে। বাবা তুমি প্লিজ চেচামেচি করো না। আমি ব্যাপারটা দেখছি।

” আপনাকে আর কিছু দেখতে হবে না আঙ্কেল। আমরা চলে যাচ্ছি। এখানে আর এক মুহূর্তও থাকতে চাই না। মা বাবা চলে এসো বলে গটগট পা’য়ে হেঁটে বেড়িয়ে যায় সেহরিশ মির্জা। তার যাওয়া’র পানে মেয়ে’র বাবা করুন চোখে তাকিয়ে আছে। তিনি রাগি দৃষ্টিতে মেয়েদের দিকে তাকায়। মেয়ে দুটো ভয়ে চুপসে যায়।

পাত্রের বাবা রফিক মির্জা বলেন, ভাই সাহেব আপনাদের থেকে অন্তত এটা আশা করি নি। ব্যাপার টা ভালো হলো না। তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে রফিক মির্জা ও তার স্ত্রী সরলতা মির্জা।

*****

মেহমান বাসা থেকে বের হতেই লোকটা গিয়ে দু’জনের ভিতর থেকে একটা মেয়ে’র মাথা’র চুলের মুঠি ধরে বলে,

” হারামজাদি তুই কেন রুম থেকে বেড়িয়েছিস। তোকে না আমি রুমের বাইরে আসতে নিষেধ করেছি। তুই কোন সাহসে রুমে’র বাইরে এসেছিস হ্যাঁ। মেয়েটা ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরে। কিছু বলা’র সাহস পাচ্ছে না মেয়েটা। এখানে যে তার কোনো দোষ নেই সেটা দেখছে না তারা। মেয়েটা অনেক সাহস জুগিয়ে বলে,

” চা-চা আ-মার কো-নো দোষ নেই। আপু আমাকে এখানে আনছে। আমি আসতে চাইনি। আপু আমাকে জোর করে নিয়ে আসছে।

” চুপ কর। তোর সাহস দেখছি বেড়ে গেছে। তোর জন্য আজ আমাকে অপমানিত হতে হলো। তোর জন্য নিধি’র বিয়ে ভেঙে গেলো। নিজের নামে এত বড় অপবাদ শুনে চমকে যায় শায়রা। কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে মেয়েটা।

নিধি ভয়ে গুটিশুটি হয়ে এক পাশে দাড়িয়ে আছে। সে জানতো না শায়রা কে এখানে আনলে এমন সিনক্রিয়েট হতে পারে। বিষয় টা যদি একটু আচ করতে পারতো তাহলে কখনোই আনতো না। আর না মেয়েটা এভাবে কষ্ট পেতো। নিজের ভয় কাটানোর জন্য শায়রা কে সাথে নিয়ে আসছে।

শায়রা’র চাচি জেসমিন বেগম এসে বলেন, এই অপয়া,অলক্ষী মেয়ে ঘরে থাকলে কি কিছু ভালো হয়। যত নষ্টের মুলে আছে এই মাইয়া।। বাবা মা মরছে ওর লাইগা। এখন আমাদের জীবনডাও নষ্ট করবার জন্য উইঠা পইড়া লাগছে। অলক্ষী মাইয়া বাপ মা’র মতো মরতে পারিস না। মায়ে’র তিক্ত কথা শুনে জ্বলে ওঠে নিধি। প্রতিবাদের সুরে বলে,

” মা কিসব কথা বলছো তুমি। শায়রা কষ্ট পাচ্ছে তুমি বুঝতে পারছো না। তাচ্ছিল্যের হেসে বলে, ওহ তুমি কিভাবে বুঝবে তুমি তো ওকে দু চোখে সহ্য করতে পারো না। আমার মতো ও কে একটু নিজের মেয়ে’র চোখে দেখতে পারো না। কেন শুধু শুধু ওর সাথে দুর্ব্যবহার করো তোমরা?

” তুই চুপ কর। ভালোই তো দেখছি শায়রা’র চামচা গিরি করছিস। মনে রাখিস তোকে খাইয়ে পইড়ে মানুষ করছি আমরা।

শায়রা’র চুলের মুঠি ছেড়ে দিতেই দৌড়ে রুমে চলে যায় । শায়রা’র পিছু পিছু নিধি ও দৌড় লাগায়। শায়রা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। নিধি আর ভিতরে ঢুকতে পারে না। নিধি দরজা ধাক্কা দিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। নিধি’র খুব খারাপ লাগছে। তার জন্য মেয়েটা অনেক কথা শুনলো।

বদ্ধ রুমের ভিতর অঝোরে কান্না করছে শায়রা। জীবনে কি এমন পাপ করেছে যার জন্য এত অবহেলিত নির্যাতিত লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে তাঁকে। বাবা মা ছাড়া এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বেঁচে থাকা অসম্ভব। বাবা মা না থাকলে সবাই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। ড্রয়ার থেকে বাবা মা’র ছবি বের করে সেটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

” মা বাবা তোমরা কেন আমাকে একা করে চলে গেলে? কি দোষ করেছি আমি। আমাকে কেন এত কষ্ট দেয় বলতে পারো। তোমাদের সাথে আমাকেও নিয়ে যেতে পারতে তাহলে আর এত যাতনা সহ্য করতে হতো না আমাকে। এই পৃথিবীতে আমাকে দেখার মতো কেউ নেই জানো। আমাকেও তোমাদের কাছে নিয়ে চলো না! আমি আর সহ্য করতে পারছি না বাবা।

একটু দম নিয়ে বলে,
এই দুইটা বছর অনেক সহ্য করেছি কিন্তু আর না। শুধু মাত্র তোমাদের কথা ভেবে মুখ দিয়ে টু শব্দ বের করেনি। কিন্তু তারা তো তো আমাকে শান্ত হয়ে থাকতে দিচ্ছে না। আমি কিভাবে শান্ত থাকব বলো। তোমরা যদি বেঁচে থাকতে তাহলে আমি রাজকন্যা’র মতো জীবনযাপন করতে পারতাম কিন্তু কি হলো! আমার কপালে তো সুখ সয় না। একটু সুখের মুখ দেখার আগেই সব এলোমেলো হয়ে যায়।
কেন হয় বলতে পারো?

আমি আর সহ্য করব না মা। অনেক হয়েছে আর নয়। কাল থেকে এক নতুন শায়রা কে দেখবে সবাই। তারা যে শায়রা কে চিনতো সে শায়রা আজ মরে গেছে। সে বেঁচে নেয়। মরে গেছে বাবা, মরে গেছে মা! বলে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে শায়রা।

**************

সেহরিশ মির্জা বাবা মা’র একমাত্র সন্তান। প্রচন্ড রাগি স্বভাবের, একবার রেগে গেলে আর রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। একবার যা বলে তাই করে। তার জেদের কাছে সব তুচ্ছ। এবার মাস্টার্সের স্টুডেন্ট। দেখতে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মুখে খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়ি। দেখতে কোনো হিরোর থেকে কোনো অংশে কম না৷ সেহরিশ মির্জা মেয়েদের ধারের কাছেও যায় না। মেয়েদের কে সে ঘৃণা করে ঘৃণা। দু-চোখে সহ্য করতে পারে না। কেন পারে না সেটা গল্পের ভিতর জানতে পারবেন।

তাহলে আপনারা বলবেন যদি সহ্য করতে না পারে তাহলে পাত্রী দেখতে গেল কেন? তাহলে শুনুন, সেহরিশ মির্জা’র সবচেয়ে দুর্বল জায়গা তার মা। মা’য়ের কোনো কথা ফেলতে পারে না সেহরিশ। মা’য়ের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের জন্য একপ্রকার বাধ্য হয়ে পাত্রী দেখতে গিছিল সে। সেখানে গিয়ে আরেক ঝামেলা সব মিলিয়ে প্রচন্ড রেগে আছে সেহেরিশ।

সেখান থেকে সোজা শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। পাক্কা ত্রিশ মিনিট পর বের হয় গোসল করে। সেহরিশের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। অনেক্ক্ষণ শাওয়ার নেওয়ার ফলে এমন হয়েছে।

বিকাল চারটা। সেহরিশ কিছু না খেয়েই বাসা থেকে বের হয়েছে। বাবা মা’র সাথে ঠিক করে কথাও বলেনি। তাদের উপর রেগে আছে খুব। বাসা থেকে বেড়িয়ে সোজা চলে যায় নিজের পছন্দের জায়গায়। যেখানে গেলে তার সমস্ত কষ্ট রাগ নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়। অতি প্রিয় একটি জায়গা এটা। জায়গাটা নিরিবিলি। নেই কোনো মানুষের আনাগোনা। মেইন রাস্তা থেকে একটু এগিয়ে গেলেই জায়গাটা পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে ঘাসের উপর বসে পরে সেহরিশ।

দুর আকাশে দেখা যায়। এক ঝাঁক পাখি উড়ে উড়ে নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। পিছনে দুই টা পাখি একা পরে গেছে । সামনে থেকে কয়েকটা পাখি ফিরে এসে সেই দুইটা পাখিকে নিজের ঝাঁকে নিয়ে নেয়। বিষয় টা দেখে মনটা ভালো হয়ে যায়। এটা ভেবে যে পাখিদের ভিতরে যে মানবতা আছে সেটা মানুষের ভিতরে নেই। মানুষ বড্ড স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে পারে। সবকিছু। চোখ দিয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পরে। সেটা হাতের আঙুল দিয়ে মুছে নেয়। পানির কিছু অংশ চোখের সামনে ধরে বলে,

❝ আমি হারিয়ে যাবো কোনো এক সন্ধ্যা বেলায়,,,,, যেমন করে সন্ধ্যা নেমে এলে সূর্য হারায় ❞

পিছন থেকে কেউ একজন সেহরিশের কাঁধে হাত রাখে। সেহরিশ চমকে পিছনে তাকায়।

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]