#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২
পিছন থেকে কেউ একজন সেহরিশে’র কাঁধে হাত রাখে। সেহরিশ চমকে পিছনে ফিরে তাকায়। পিছনের মানুষ টাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” তুই।
পিছনের মানুষ টা মুচকি হেসে বলে, তুই এখানে আর আমি তোকে সব জায়গা খুজে খুঁজে হয়রান হয়ে গেছি। পরে মনে পড়ল তুই এখানেই আছিস। তাই তো চলে আসলাম বন্ধু’র কাছে। আমার বন্ধু কি কারণে রেগে আছে সেটা জানার জন্য। ।
সেহরিশ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, আমি রেগে আছি এই কথা তোকে কে বলল?
” সেটা তোর জানতে হবে না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে বাসায় চল। আন্টি দুশ্চিন্তা করছেন।
” ওহ এবার বুঝতে পারছি তোকে কে বলেছে এসব। আমি সিউর আমার মা বলেছে।
” হ্যাঁ। তো কি হয়েছে।
” জানিস রাফি মেয়েদের কে আমার সহ্য হয় না৷ আমি জানি সবাই এক না কিন্তু। একটা মেয়ে’র জন্য আমরা আর পাঁচ টা মেয়েদের ঘৃণা করি সেটাও জানি। কেন এমন হয় জানিস?
” দোস্ত নিজেকে এবার গুছিয়ে নে। একজনের জন্য কেন তুই এভাবে দিনের পর দিন কষ্ট পাবি বলতে পারিস। তোর কষ্ট যে আমার সহ্য হয় না রে। নিজেকে নিয়ে ভাব। সময় থেমে থাকে না। তুই ভালো নেই কিন্তু সে তো ভালো আছে তাহলে কেন নিজেকে শেষ করছিস হ্যাঁ। আর আজ যে মেয়ে দেখতে গেলি সেখানে কি এমন হয়েছে যার জন্য রেগে গেলি।
সেহরিশ বসা থেকে উঠে দাড়ায়। রাফি’র দিকে তাকিয়ে বলে, ভার্সিটিতে গিয়ে বলব। এখন বাসায় চল। রাফি ও সায় দেয়। দুজনে উঠে পরে বাইকে। সেহরিশ বাইক আনেনি। রাফি’র বাইকে করে বাসায় ফিরবে।
_______________
সেদিন আর শায়রা রুমের বাইরে বের হয়নি। বদ্ধ ঘরের ভিতরে নিজেকে বন্দী করে রাখছে। নিধি এসে অনেক বার ডেকে গেছে কিন্তু শায়রা দরজা খুলে নি। এই বাড়ির একটা মানুষই আছে যে শায়রা কে কেয়ার করে। শায়রা’র কষ্টে কষ্ট পায়, শায়রা’র দুঃখে দুঃখ পায়। সে হলো নিধি। নিধি ছোট বোনের মতো ভালোবাসে শায়রা কে। বাবা মা’র হাত থেকে প্রটেক্ট করে। কিন্তু সবসময় করতে পারে না। যেমন আজ পারল না৷ তার বাবা খুব রাগি। রাগের মাথায় সব করতে পারে। ভয়ে কিছু বলতে পারল না সে।
সারাটা রাত ফ্লোরে ঘুমিয়ে কাটায় শায়রা।
*********
ঘুম ভাঙে ফজরের আযানে। ঘাড়ে ব্যথা পেতেই চোখ মুখ কুঁচকে আহ শব্দ করে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সে ফ্লোরে। পড়নে’র দিকে চোখ যেতেই মনে পরে যায় কালকে’র কথা। মুহূর্তেই চোখ ভিজে ওঠে শায়রা’র। কালকে বাড়ি’র বাইরে থাকাই উচিত ছিল তার। কেন বাড়ি আসতে গেলো সেই জন্য এখন আফসোস হচ্ছে নিজের।
কালকে শায়রা’র ফ্রেন্ডস রা মিলে ঘুরতে বের হয়েছিল। চার বান্ধবী মিলে ঠিক করেছিল তারা একই রকম শাড়ি পড়বে, একই রকম সাজবে। শায়রা এতে দ্বিমত পোষণ করে। সে এসব করতে পারবে না,
পরতে পারবে না সাফ জানিয়ে দেয়। এও বলে যে তার চাচা চাচি তাকে শাড়ি পরে বাসা থেকে বের হতে দেবে না। কিন্তু তার বান্ধবীরা শোনে না তার কথা। তারা বলে আঙ্কেল কে সে রাজি করাবে। আঙ্কেল তার বাবা’র বন্ধু নিশ্চয় তাকে না করতে পারবে না। সেই কথা অনুযায়ী শায়রা’র ফ্রেন্ড হিরা শায়রা’র চাচা আতিয়ার রহমান কে ফোন দিয়ে বললে, তিনি না করেন না। নিজের সম্মানের কথা ভেবে।
চার বান্ধবী মিলে ঘুরতে বের হয়েছিল। সেখান থেকে বাসায় ফিরে শোনে পাত্রপক্ষ নিধি কে দেখতে আসবে। শায়রা নিজের ড্রেস চেঞ্জ করার সময় পায় না। চাচি কে হাতে হাতে সব গুছিয়ে দেয়। কাজ শেষ হতেই পাত্র পক্ষ চলে আসে। নিধি শায়রা কে জোর করে ওই অবস্থাতেই নিয়ে যায় ড্রয়িংরুমে। নিজের পাশেও বসায়। প্রথম বার নিধি কে দেখতে আসায় নিধি অনেক নার্ভাস ফিল করে সেজন্য। আর বাকিটা তো জানেন আপনারা।
*********
শায়রা ফ্লোর থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামাজ শেষ করে রুম থেকে বের হয় শায়রা। নিজের জন্য কফি করে ফের রুমে চলে আসে।
শায়রা’র রুমের দরজা খোলা দেখে নিধি দৌড়ে শায়রা’র রুমে আসে। রুমে দেখতে না পেয়ে বেলকনিতে চলে যায়। শায়রা কে বেলকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আচমকা এমন হওয়ায় ভড়কে যায় শায়রা। কান্নার শব্দ শুনে বুঝতে দেড়ি হয় না পিছনের মানুষ টা কে?
শায়রা পিছনে ঘুরে নিজের থেকে নিধিকে ছাড়িয়ে বলে,
” এই আপু তুমি কাঁদছো কেন? কি হয়েছে তোমার?
নিধি কান্নার সুরে বলে, আমার জন্য তোকে কাল অপদস্ত হতে হলো। বাবা মা সবাই তোকে যা নয় তাই বলে গালাগালি করল। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে বোন। আমি সত্যি বুঝতে পারি নি এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আমাদের। পাত্রপক্ষ ভুল বুঝলো। আমাকে ক্ষমা করে দিস বোন।
নিধি’র কথা শুনে শায়রা মুচকি হেসে ভ্রু কুচকে বলে, আমাকে বোন বলছো আবার ক্ষমা চাইছো। এটা কেমন নিয়ম উহু । যদি মন থেকে বোন ভেবে থাকো তাহলে ক্ষমা চেয়ে আমাকে ছোট করো না আপু। এখানে তো তোমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার কপালের।
” আহ এভাবে বলছিস কেন তুই? তোর কপালটা খুব ভালো। দেখিস একদিন তুই খুব সুখী হবি।
” শায়রা তাচ্ছিল্যের হেসে বলে, আমার কপাল ভালো বলছো তুমি। হাসালে আমাকে।
” তুই এমন করে বলছিস কেন হ্যা? আমার কথা মিলিয়ে নিস।
আচ্ছা সেসব কথা বাদ দে। মন খারাপ করে থাকিস না বোন। ভার্সিটিতে যাবি না আজ।
” না আজ যাব না। ভার্সিটিতে যাওয়ার মুড নাই আমার।
” তাহলে আমিও যাব না আজ।
” কেন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে শায়রা ?
” আমারও যেতে ইচ্ছে করছে না।
শায়রা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। আর নিধি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। নিধি’ অনেক চেষ্টা করেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়নি।
” আচ্ছা আপু তাহলে আমার সাথে এক জায়গা’য় যেতে পারবা। নিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাবি?
” এতিমখানায় যাবো। যাবে আমার সাথে।
” তা না হয় গেলাম বাট বাবা কি আমাদের যেতে দেবে।
” সেটা আমার উপরে ছেড়ে দাও। তুমি গিয়ে ঝটপট তৈরি হয়ে নাও তো বলে রহস্যময় হাসে শায়রা ।
নিধি’র কাছে শায়রা’র হাবভাব ভালো ঠেকছে না। তবুও মুখে কিছু না বলে নিজের রুমে রেডি হতে চলে যায়।
নিধি চলে যেতেই শায়রা ঝটপট নিজে তৈরি হয়ে নেয়। সুতি একটা কালো রঙের থ্রি পিস পড়ে। মাথায় হিজাব বেধে হাতে পার্স নিয়ে রুম থেকে বের হয়। ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা দিয়ে বসে।
রান্না ঘর থেকে জেসমিন বেগম শায়রা কে পায়ের উপর পা দিয়ে বসতে দেখে রেগে চিল্লিয়ে বলে ওঠেন, কিরে নবাবজাদি কোথায় বের হচ্ছিস তুই? কাছে তো ভার্সিটির ব্যাগটাও নেই তাহলে,
” সেটা তোমাকে বলতে ইচ্ছুক নয় আমি। শায়রা’র কথা শুনে জেসমিন বেগম চমকে ওঠেন। শায়রা আগে কখনো এমন করে কথা বলেনি। তিনি তেজি গলায় বলেন,
” মুখে কি খই ফুটেছে হ্যা। কালকের কথা কি ভুলে গেছোস। তোর চাচা জানলে তোকে আস্ত রাখবেনানে সেটা কি ভুলে গেছোস।
আতিয়ার রহমান চেচামেচির শব্দ শুনে রুম থেকে বেড়িয়ে আসেন। তিনি বলেন, কি গো নিধি’র মা কি হয়েছে এত জোরে কথা বলছো কেন? স্বামী কে দেখে ন্যাকা সুরে বলেন, জানো তোমার ভাইজি কি বলছে। আমি শুধু শুনেছি তুই কোথায় যাবি। সে আমাকে কি বলেছে জানো?
” কি বলেছে স্বাভাবিক কন্ঠে বলেন।
” সে বলতে ইচ্ছুক নয়। এতবড় কথা কিভাবে কয়। এর বিচার কইরা তুমি বাড়ি থেকে বাইর হইবা। স্ত্রী’র কথা শুনে রেগে যান তিনি। তীব্র গতিতে শায়রা’র দিকে ছুটে যান। তিনি থাপ্পড় মারতে গেলে শায়রা হাত ধরে ফেলে। আতিয়ার রহমান হতবাক হয়ে যায় শায়রা’র কাজে। এমন দুঃসাহস শায়রা আগে কখনো দেখানি। তিনি অবাক কন্ঠে বলেন,
” শায়রা
” শায়রা চাচা’র হাত সরিয়ে দিয়ে জোরে চেচিয়ে বলে, খবরদার চাচা ভুলেও এই কাজ দ্বিতীয় বার করবেন না। যদি ভুলেও এই কাজ করেন তাহলে আমি ভুলে যাব আপনি আমার চাচা হন। আপনারা যদি আমাকে নরম ভেবে থাকেন তাহলে চরম ভুল করছেন। আমাকে দেখতে যতটা নরম দেখাই ঠিক ততটাই আমি ভয়ংকর। আমাকে রাগাতে আসবেন না। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন, চলতে দিন। আমার কোনো কাজে বাধা দিতে আসবেন না বলে দম নেয় শায়রা।
নিধি নিচে এসে এনন একটা দৃশ্য দেখতে পাবে কস্মিনকালেও ভাবেনি। মুখে তার হাসি। শায়রা কে প্রতিবাদ করতে দেখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে তার।
আতিয়ার রহমান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে শায়রা’র দিকে। শায়রা অচেনা লাগছে তাঁর কাছে। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
শায়রা কিছু না বলে নিধি’র হাত ধরে তাদের চোখের সামনে দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আতিয়ার রহমান ও জেসমিন বেগম এখনো অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
ঠান্ডা জ্বর মাথা ব্যথা সবকিছু মিলে আমার অবস্থা খুব খারাপ। অনেক কষ্টে লিখছি।
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]