#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৩
বেলা এগারোটা। শায়রা আর নিধি দু’জনে এতিমখানায় এসেছে এক ঘন্টা মতো হয়েছে। এই এতিমখানা টা করেছে শায়রা’র বাবা মাহমুদ রহমান। ছোট বাচ্চারা যেন কষ্ট না পায় সেজন্য নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে মনের মতো করে সাজিয়েছে এতিমখানা । শায়রা আদো জানে না শায়রা বাবা মা মারা গেছে নাকি বেঁচে আছে। বাবা মা’র লাশ’টাও দেখেনি শায়রা। সবটা এখনো অজানায় থেকে গেছে তার৷
এতিমখানায় আসলেই শায়রা’র মনটা ভালো হয়ে যায়। ছোট ছোট বাচ্চারা তাকে ঘিরে ধরে বসে আছে। বাচ্চাদের জন্য চকলেট এনে সেগুলো নিজ হাতে দিয়েছে শায়রা। নিধি দুরের বেঞ্চে বসে সবটা লক্ষ্য করছে। ছোট বাচ্চাদের আবদার ফেলতে পারে না। এখানে আসলেই তাদের কে গান শোনাতে হয়। ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে দৌড়ে এসে শায়রা’র গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে স্বরে বলে,
” শায়রাপু আমাদের সব্বাইকে একটা গান শোনাও । অনেক দিন হলো তুমি আমাদের গান শোনাও না। শায়রা মুচকি হেসে বলে,
” ওকে বাবু। কিন্তু আমি তো আজ গিটার আনিনি।
তুমি আনোনি তো কি হয়েছে আমাদের এতিমখানা’য় যে গিটার আছে সেটা নিয়ে গাইতে পারো। পিছন থেকে কথার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকায় শায়রা। পিছনের মানুষটাকে দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। মৃদু স্বরে বলে,
” আন্টি মনি।
” কেমন আছিস মা?
” আলহামদুলিল্লাহ আন্টি মনি। তুমি কেমন আছো?
” এই তো বাচ্চাদের নিয়ে ভালোই আছি। তোর চাচা কি তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে মা। আন্টি মনির কথা শুনে মুখে আধার ঘনিয়ে আসে শায়রা’র।
শায়রা কে চুপ হয়ে যেতে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করেন, কি রে মা কি হয়েছে?
” শায়রা হালকা হেঁসে বলে, কিছু না আন্টি মনি। সব ঠিক ঠাক আছে। তুমি অযথা টেনশন করছো।
” ঠিক থাকলেই ভালো মা।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
শায়রা নিধি বাসায় ফেরে দুপুর দুইটায়। বাসায় ফেরার পর শায়রা’র সাথে তার চাচা চাচি কেউ কথা বলেনি। শায়রা নিজেও কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। শায়রা’র ব্যবহারে আতিয়ার রহমান বারবার অবাক হচ্ছেন। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না হঠাৎ করে শায়রা’র কি হলো। যে শায়রা মুখ বুজে সব সহ্য করে। একটা কথা বলে না। এই নিয়ে তিনি বড্ড দুশ্চিন্তা করছেন।
শায়রা ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। দেখে চাচা চাচি দুজনে বসে কিছু একটা বলছেন। শায়রা কে দেখে চুপ হয়ে যান দু’জনে। শায়রা চাচি কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
” ছোট চাচি খেতে দাও খুব খুদা লেগেছে। জেসমিন বেগম শায়রা’র কথা শুনে চুপচাপ সোফা থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলে যায় খাবার দিতে। নিধি আর শায়রা’র জন্য প্লেটে ভাত দিয়ে তরকারি দিয়ে আবার চলে যান। মুখ দিয়ে টু শব্দ পর্যন্ত করেন না।
চাচি’র কাজে শায়রা মনে মনে হেসে বলে, একদিনের ডোজে এত কাজ করবে সেটা তো ভাবিনি। যাক ভালোই হয়েছে।
নিধি আসলে দু’জনে খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়।
*******
সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসে আছে শায়রা। কিছুতেই পড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না। চাচা চাচি’র এত ভালো ব্যবহার তার হজম হচ্ছে না। তারা কিছু একটা ঝামেলা করবে এটা শায়রা নিশ্চিত। শায়রা টেবিল থেকে উঠে বেলকনিতে চলে যায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
” মা বাবা আমি কি ঠিক করছি আজ। চাচা চাচি’র সাথে খারাপ ব্যবহার করতে চাইনি। কিন্তু আমি বড্ড অসহায়। নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমাকে শক্ত হতেই হবে। তাই ছাড়া কোনো উপায় নেয়। তোমরা যেখানেই থাকো আমার জন্য দোয়া করো। চোখ থেকে এক ফোটা নোনা পানি গড়িয়ে পরে। রাতে আর খাওয়া হয় না। না খেয়েই রাত পাড় করে দেয় শায়রা। বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
__________________
আঁধার পেড়িয়ে একটি নতুন সকালের সূচনা হয়। হালকা কুয়াশার অবসান ঘটিয়ে পূর্ব দিগন্তে সূর্য উদিত হয়।যার মিষ্টি কিরণ চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ধরণীর বুক জুড়ে আলো ছড়িয়ে পড়ে।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গোসল করে তৈরি হয়ে নেয় ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। একেবারে ব্যাগ নিয়ে নিচে নামে শায়রা। খাবার টেবিলে সবাইকে খেতে দেখে নিজেও এগিয়ে যায়। বিনা বাক্যে খাবার খেতে বসে শায়রা। খাওয়া শেষ হতেই শায়রা ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে একটা রিকশা বা অটোগাড়ির জন্য। প্রতিদিন স্কুটি করে ভার্সিটিতে যায় কিন্তু হঠাৎ করে স্কুটিটা নষ্ট হয়ে গেছে। সেটা মেকানিকের কাছে নিতে হবে তার সারিয়ে চালাতে পারবে। আজ আর সময় নেই সেজন্য গেরেজে নিতে পারছে না। ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে তারপর নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
ভার্সিটিতে পৌঁছায় নয়টায়। চারদিকে কতশত মানুষ। সব তার অজানা। একমাস হয়েছে ভার্সিটির যাত্রা। ধীরে ধীরে হেটে চলেছে সামনে। পিছন থেকে কেউ হাত টান দেওয়ায় চমকে যায় শায়রা। পিছনে তাকিয়ে পিছনের মানুষ টাকে দেখে অধর জুড়ে হাসি ফুটে ওঠে শায়রা’র। প্রাণ প্রিয় বান্ধবী কে দেখে জড়িয়ে ধরে। নিজের সুখ দুঃখের সব কথা যাকে বলতে পারে সে হলো শিলা।তার জীবনের এমন কিছু নেই যে তাই জানে না শিলা। সব কথা শেয়ার করে তার সাথে।
শায়রা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে সোজা করে দাড় করিয়ে কিছুক্ষণ পরোখ করে নেয়। শায়রা’র মুখে গম্ভীরতা দেখে বলে,
” তোর কিছু হয়েছে শায়ু বেবি।
শায়রা মৃদু হেসে বলে, তেমন কিছু না রে।
” আমার থেকে কিছু লুকাতে পারবি না জেনেও কেন লুকাতে যাস বলতো। আমি তোর মুখ দেখেই বলতে পারি তোর কিছু হয়েছে। তোর চাচা চাচি আবার কিছু করেছে তাই না।
শায়রা নিরবে চোখের পানি ফেলে। শায়রা’র চোখের পানি আলতো হাতে মুছিয়ে বলে,
” প্লিজ শায়ুবেবি কান্না করিস না। তোকে কাঁদলে মানায় না৷ সবসময় তোকে হাসলে খুব ভালো মানায়। কি হয়েছে আমাকে বল। তাহলে তোর অনেক হালকা লাগবে। নিজের ভিতরে দমিয়ে রেখে কেন খামাকা নিজে কষ্ট পাবি হ্যা। চল ক্যান্টিনে গিয়ে বসি তারপর সব শোনব।
” হিরা রিপা ওরা দুজন কোথায়?
” এখনো আসেনি। তবে চলে আসবে তুই চল তো। বলে হাত টেনে ধরে নিয়ে যায় শিলা।
ক্যান্টিনে পাশাপাশি বসে আছে শায়রা শিলা। সেদিনের সব ঘটনা খুলে বলে। কালকে চাচা চাচির সাথে যেটা করেছে সেটা বলছে। তাই শুনে শায়রা হাসি মুখে বলে,
” বাহ আমার শায়ুবেবি খুব ভালো কাজ করেছে। আমি তো এটাই চাই। তুই নিজেকে শক্ত কর। কোনো আঘাত তোকে ছুতে পারবে না। অন্যায় কে কখনো প্রশ্রয় দিবি না। তোর পাশে কেউ না থাকলেও আমি সব সময় আছি। তোর কাজে আঙ্কেল আন্টি খুব খুশি হবে জানিস। তারা কখনোই চাইবে না তাদের মেয়ে কষ্ট পাক।
শিলার কথায় শায়রা মৃদু হাসে। তারপর হিরা আর রিপা চলে আসলে চারজনে ক্লাসে চলে যায়।
পরপর তিনটা ক্লাস হয়। তারপর একঘন্টা ব্রেক দেয় তাদের। এখন কোনো ক্লাস নেয় তাদের। সেজন্য শিলা ঠিক করে ভার্সিটির সামনে যে ফুসকার স্টল আছে সেখানে যাবে গিয়ে চারজনে ফুসকা খাবে।
কথা অনুযায়ী চার বান্ধবী ক্লাস থেকে বের হয়। চারজনে কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসে আসে। অনেকেই ক্যাম্পাসে বসে আছে। কেউ বা দাঁড়িয়ে আছে। কেউ বই পড়ছে। সব মিলিয়ে শীতের দিনে এই বিষয় গুলো সবার মন কেড়ে নেয়। ক্যাম্পাসটা দেখতে সুন্দর লাগে।
শায়রা আনমনা হয়ে হেঁটে যাচ্ছে। হঠাৎ সামনের মানুষ টা কে দেখে পা থেমে যায় শায়রা’র। শায়রা পা উঠিয়ে সামনে আগাতে পারে না। শায়রা কে থেমে যেতে দেখে তিনজনেও থেমে যায়। শায়রা’র থমকে যাওয়া মুখ দেখে অবাক হয় তারা!
চলবে ইনশা আল্লাহ
রিচেক দেওয়া হয়নি
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]