#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৪
শায়রা আনমনে সামনে হেঁটে চলছে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে থেমে যায় শায়রা। শায়রা পা উঠিয়ে আর সামনে আগাতে পারে না। শায়রা কে থেমে যেতে দেখে তিনজনেও থেমে যায়। শায়রা’র থমকে যাওয়া মুখ দেখে অবাক হয় তারা। শায়রা’র দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকায় তারা। সামনে দুটো ছেলেকে দেখে আসতে। শিলা অস্ফুট স্বরে বলে সেহরিশ ভাইয়া।
শিলা বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” এই শায়ু কি হয়েছে? থেমে গেলি কেন?
শায়রা’র হুশ আসতে দ্রুত সামনে থেকে সরে আসে। দ্রুত লুকিয়ে পরে হিরার পিছনে। শায়রা’র কাজে হতবাক হয়ে যায় সকলে। শিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই পাশ থেকে কেউ একজন বলে,
” ক্লাস না করে এখানে কি করছিস তুই। শিলা চমকে ওঠে, নিজেকে সামলে হালকা হেঁসে বলে,
” তেমন কিছু না ভাইয়া। আসলে এখন আমাদের ক্লাস নেয় তাই আর কি।
” ওহ আচ্ছা। কোনো সমস্যা হলে বলবি আমাকে। আমাকে না পেলে রাফি কে বলিস।
” ওকেহ ভাইয়া।
সেহরিশ বাকি তিনজনের দিকে এক নজর তাকায়। সেহরিশ এদের কাউকে চেনে না। শিলার ফ্রেন্ড হবে ভেবে কিছু বলে না। একটা মেয়ের পিছনে আরেকটা মেয়েকে লুকিয়ে থাকতে দেখে আশ্চর্য হয় সেহরিশ। কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় কি দরকার।
সেহরিশ চলে যেতেই হাফ ছেড়ে বাঁচে শায়রা। হিরার পিছন থেকে বেড়িয়ে আসে। শায়রা’র কাজে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রয় কিছুক্ষণ। হিরা চোখ ছোট করে বলে,
” শায়রা তুই ছেলে টাকে দেখে এমন করে লুকিয়ে পড়লি কেন? ছেলে টাকে কি তুই চিনিস।
হিরার কথায় চমকে ওঠে শায়রা। আমতাআমতা করে বলে, আরেহ না। ছেলে টাকে দেখে আমার কেমন যেন লাগছিল তাই আর কি বলে বোকা হাসে শায়রা।
শায়রা’ কে দেখে শিলা’র খটকা লাগে। কিছু একটা হয়েছে যার জন্য শায়রা এমন করছে। কিন্তু কি সেটা। শায়রা আমাদের কে বলতে চাইছে না। কথাটা লুকাতে চেষ্টা করছে। নিজের মনে মনে কথা গুলো বলে শিলা । এই টপিক বাদ দেওয়ার জন্য সবার উদ্দেশ্য বলে,
” আমরা যে কাজে যাচ্ছিলাম সেই কাজে চলতো। খামাকা সময় নষ্ট হলো।
তারপর চারজনে চলে গেলো ভার্সিটির ফুসকা স্টলের সামনে। চার প্লেট ফুসকা অর্ডার দেয় শিলা। সবাইকে আজ ট্রিট দেবে সে। কেন দেবে সেটা কাউকে বলেনি। বলছে এমনি তোদেরকে খাওয়াতে মন চাইলো তাই ট্রিট দিচ্ছি। এই বিষয় নিয়ে কেউ আর তেমন কথা বাড়ায় নি। ফুসকা খেয়ে বাকি ক্লাস করতে চলে যায় সকলে।
**************
ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে চারটা বেজে যায়। কারোর সাথে কোনো প্রকার না কথা বলে নিজের রুমে চলে যায়। ব্যাগ টা রেখে চলে যায় ওয়াশরুমে। হাত মুখ ধুয়ে বেড়িয়ে আসে। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেলকনিতে দাড়ায়। বেলকনির দড়িতে টাওয়াল মেলে রুমে আসে। প্রচুর খুদা লেগেছে তার। সেজন্য ডাইনিং এ আসে।
ডাকনা উঠিয়ে দেখে সব ফাঁকা। কোথাও খাবার জন্য কিছু নেয়। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে শায়রা’র। জোরে চেচিয়ে ডাকে। ছোট চাচি আমার খাবার কই? টেবিলে তো কিছুই নেয়।
জেসমিন বেগম ঘর থেকে বেড়িয়ে আসতে আসতে বলেন, তোর আসতে দেড়ি হচ্ছিল বলে ভাত গুলো খেয়ে ফেলছি। আমি ভাবছি হয়তো বাইরে থেকে খেয়ে আসবি।
চাচি’র কথা শুনে রাগি দৃষ্টিতে তাকায় শায়রা। শায়রা’র তাকানো দেখে ভড়কে যায় জেসমিন বেগম। আমতাআমতা করে বলেন, এমন করে তাকাস ক্যান। আমি কি ইচ্ছা কইরা করছি। খুদা লাগলে নিজে রেধে খা না। আমাকে জালাস না বাপু।
শায়রা খুব করে বুঝতে পারছে তার চাচি ইচ্ছে করে সব করছে। শুধু মাত্র আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। শায়রা কিছু না বলে কিচেনে চলে যায়। নুডলস রান্না করে খাবে তাই ছাড়া কোনো উপায় দেখছে না। ফ্রিজ থেকে ডিম বের আনে। নুডলস চুলায় বসিয়ে দেয়। সেটা রান্না করে বাটিতে ভরে নিজের রুমে চলে যায় শায়রা।
শায়রা’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসে জেসমিন বেগম। মনে মনে আরও প্ল্যান করে রাখে।
********
ভার্সিটি থেকে এসে ঘুমিয়েছিল নিধি। ঘুম থেকে উঠে শায়রা’র কাছে চলে আসে। দেখে শায়রা বেলকনির চেয়ারে বসে বই পড়ছে। বই পড়ায় এতটাই ডুবে আছে যে পাশে কারোর অস্তিত্ব বুঝতে পারে নি শায়রা।
নিধি দরজায় হেলান দিয়ে দু হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। এক মনে শায়রা’র দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা মনে কত কষ্ট নিয়ে ঘোরে সেটা কেউ বুঝতে পারে না। শায়রা কাউকে বুঝতে দেয় না। লুকিয়ে রাখে নিজের ভিতরে। নিধি হালকা কেশে বলে,
” কি ব্যাপার ম্যাডাম কি পড়ছেন আপনি? নিধির কথায় নিধির দিকে তাকায় শায়রা। মৃদু হেসে বলে,
” আপু তুমি কখন আসলে।
” আসছি তো অনেক্ক্ষণ হলো। আপনি যখন পড়ায় মগ্ন হয়ে ছিলেন। তা কি এমন পড়ছিলেন শুনি।
” শুনবে কি পড়ছিলাম।
” তাহলে শোনো।
❝ জীবনে চলার পথে বাঁধা আসতেই পারে তাই বলে থেমে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যেখানে বাধা আসবে সেখান থেকেই আবার শুরু করতে হবে ❞
লেখা গুলো খুব সুন্দর তাই না আপু।
” হ্যা। ভার্সিটি কেমন কাটলো আজ।
নিধির কথায় গম্ভীর হয়ে যায় শায়রা। মনে পরে যায় ভার্সিটির কথা। মনে মনে ভাবে আপু কে কিছু না বলায় ঠিক। আপু শুনলে দুশ্চিন্তা করবে। শায়রা স্বাভাবিক কন্ঠে বলে, আলহামদুলিল্লাহ আপু।
” আচ্ছা তাহলে বই পড়তে বোস। খাবার সময় তুই আর আমি এক সাথে খাবো বলে নিধি নিজের রুমে চলে যায়।
*******
শীতকালের সময় গুলো খুব দ্রুত কেটে যায়। সকাল হলে দেখতে দেখতে সারাটা দিন পার হয়ে যায়। আর রাত, রাতের সময়টা যেন কাটতে চাই না। প্রহর গুনতে হয় কখন ভোর হবে। তেমনি নিজের রুম অন্ধকার করে শুয়ে আছে শায়রা। ঘুম আসছে না তার। বাবা মা কে খুব মনে পড়ছে। তাদেরকে ছাড়া শায়রা ভালো নেয়। নিজের একমাত্র ভাইটাও তার কাছে নেয়। কোথায় আছে শায়রা জানে না। বড়ো ভাইয়ের সাথে নেই কোনো যোগাযোগ। অভিমান করে সবার থেকে সেই যে দুরে সরে গেলো আর ফিরে এলো না। কি নিয়ে অভিমান হয়েছিল সেটা জানে না শায়রা। তখন শায়রা ছোট ছিল। খুব কম বুঝতো। সবে জেএসসি পরীক্ষা দিছিল সেবার। কত হাসিখুশি পারিবার ছিল তার। তাদের পরিবারে কার কু নজর পড়ল আর সব শেষ হয়ে গেলো।। চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরে বালিশে। শায়রা ডুকরে কেঁদে ওঠে বলে,
” ভাইয়া প্লিজ কাম ব্যাক। তোমার বোনটা যে ভালো নেই। আমাকেও তোমার কাছে নিয়ে চলে। এখানে আমার খুব কষ্ট হয় ভাইয়া। খুব কষ্ট হয়, খুব।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]