প্রেমে ডুবি পর্ব-০৫

0
47

#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৫

প্রকৃতি তার নিজ নিয়মে চলছে। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয় মানুষের ও। কারোর জীবনই থেমে থাকে না। দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেছে। শায়রা নিজের মতো থাকে। প্রয়োজন ছাড়া খুব কম কথা বলে। প্রতি দিন ভার্সিটিতে আসে যায়। পড়ালেখার প্রতি খুব সেন্সিটিব শায়রা। পড়ালেখা তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য। সবার উর্ধে তার পড়াশোনা। নিজের জন্য সে পড়ালেখার ক্ষতি করতে পারবে না। বাবা মা’র ইচ্ছে পূরণ করতে হবে।

********

খাটে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে সেহরিশ। কখন থেকে তার ফোন বেজেই চলেছে সেদিকে তার খেয়াল নেয়।এক প্রকার বিরক্তি হয়ে ফোন রিসিভ করে সেহরিশ। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

” কোন শা*লা রে তুই ফোন দেওয়ার সময় পাস না। তোর জন্য আমার ঘুমের বারোটা বাজলো।

সেহরিশের কথা শুনে কান ফোন সরিয়ে নেয় রাফি। একটু পর কান নেয় আবার। ফোনের ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে বলে,

” কয়টা বাজে তোর খেয়াল আছে সেহরিশ। তোকে কখন থেকে ফোন করছি তোর তো তাতে মাথা ব্যথা নেই । যত জ্বালা সব আমার ফোন রাখলাম।

রাফির কথা শুনে সেহরিশ বলে, এই না কল কাটিস না। শোন আমি দ্রুত ভার্সিটিতে আসছি তুই ওয়েট কর।

” আচ্ছা জলদি আসিস।

” ওকে।

সেহরিশ ফোন কেটে দিয়ে দেখে ঘড়িতে আটটা বিশ বাজে। সময় দেখে সেহরিশের মাথায় হাত। এত বেলা হয়ে গেছে আর সে টের পেলো না। এত বেলা পর্যন্ত সে তো ঘুমোই না। কিছু না ভেবেই তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে দৌড় দেয়। ব্রাশ করে গোসল সেরে বের হয় বাইরে।

কালো রঙের শার্ট, কালো প্যান্ট পড়ে সেহরিশ। শ্যাম্পু করা চুল গুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দেয়। সাধারণত সে চুল গুলো চিরুনি করে না। সব সময় এলোমেলো থাকে। তার জীবনটায় তো অগোছালো।

**********

ড্রয়িংরুমে বসে আছেন রফিক মির্জা ও তার স্ত্রী সরলতা মির্জা। সকালের নাস্তা এখনো করেননি। ছেলে কে ছাড়া কখনো নাস্তা করেন না। একমাত্র সন্তান কে রেখে কোনো বাবা মা’য় খেতে পারেন না। সেহরিশ সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে,

” মা জলদি খেতে দাও। অনেক লেট হয়ে গেছে। সরলতা মির্জা ছেলের কথা শুনে দ্রুত সোফা থেকে উঠে ডাইনিং টেবিলে যান। স্বামী ‘র প্লেটে আর ছেলের প্লেটে খাবার বেড়ে দেন। নিজেও বসে পরেন তাদের সাথে। সেহরিশের খাওয়া শেষ হলে বলে,

” বাবা তুমি অফিসে যাবে না।

” হ্যাঁ, একটু পর যাবো। তুই এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছিস।

” হ্যাঁ বাবা। তাহলে থাকো আমি যাই। মা সাবধানে থেকো আসি আমি।

সেহরিশ ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।

******—********

রাফি’দের বাসার সামনে বাইক নিয়ে থামায় সেহরিশ। রাফি এখনো বের হয়নি। সেহরিশ দুমিনিট দাড়ানোর পরেই রাফি বাইক নিয়ে বের হয়। দুই বন্ধু বাইক নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে।


















শায়রা আজ বোরকা পড়ে ভার্সিটিতে যাচ্ছে। হিজাব দিয়ে মুখ ডেকে নিয়েছে। তাকে চেনার উপায় নাই। সেহরিশ তাকে দেখলেও চিনতে পারবে না ভেবে হেঁসে ওঠে।

ভার্সিটির গেইট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পরে সেহরিশ কে। শায়রা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলেই সেহরিশের পাশ থেকে একটা ছেলে বলে,

” কি গো মেয়ে, তোমার কি কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই। এখানে সিনিয়র ভাইয়েরা আছে আর তুমি তাদের সালাম না দিয়েই চলে যাচ্ছো।

ছেলেটার কথা শুনে ভয়ে কেঁপে ওঠে শায়রা। শায়রা’র মাথায় এখন একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,
❝ যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়❞

কথাটার মানে আজ বুঝলো শায়রা। যার সামনে পড়তে চায় না সেই তার সামনে হাজির হলো। শায়রা দাড়িয়ে যায়। শায়রা থামতে দেখে আবারও বলে,

” কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না।

পাশে সেহরিশ চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে ফোন দেখছে। রাফি বলে, বাদ দে রাহাত। তুই জানিস না সেহরিশ এগুলো পছন্দ করে না। রাফির কথার পরিপ্রেক্ষিতে রাহাত বলে,

” তাই বলে ছেড়ে দিতে বলছিস হ্যা। আমাদের কে সম্মান না করেই চলে যাবে এটা তো হতে পারে না দোস্ত।

” রাফি রাহাতারের কানের কাছে এসে বলে , সেহরিশ রাগায় আগায় ঝামেলা শেষ করবি। রেগে গেলে কিন্তু খবর করে ছাড়বে।

” আচ্ছা ঠিক আছে।

শায়রা আড়চোখে সেহেরিশের দিকে তাকায়। শায়রা ভাবে, ছেলেটা ফোনে এত মনোযোগ দিয়ে কি এমন দেখছে। তার সামনে দিয়ে ট্রেন চলে গেলেও কিছু টের পাবে না। শায়রা’র ভাবনার মাঝেই রাহাত বলে,

” এই মেয়ে। শায়রা ভয়ে চমকে ওঠে বলে,

” ক- কি।

” তোমার নাম কি?

” মাথা নিচু করে বলে, শায়রা রহমান।

” ফাস্ট ইয়ার রাইট।

” জ্বি।

” এখনকার যুগের মেয়ে হয়ে ভার্সিটিতে বোরকা পড়ে আসছো।

” কেউ না আসলে আমি আসি।

” বাহ মুখে মুখে ভালো কথা বলতে জানো।

” আর কিছু বলবেন নাকি আমি যাবো। এমনিতেই আমার দেড়ি হয়ে গেছে।

” সিনিয়র দের দেখলে সালাম দিয়ে কথা বলবে। আজকের মতো যাও।

শায়রা দ্রুত কেটে পরে। ঝামেলায় পড়া একদম পছন্দ না তার। কিন্তু ঘুরেফিরে সেই ঝামেলায় তার সাথে হয়। যেতে যেতে পিছনে ফিরে এক নজর সেহরিশের দিকে তাকায় শায়রা। খুব অবাক হয় একটা বারও তার দিকে তাকালো না লোকটা ।

শায়রা ক্যাম্পাস থেকে সোজা ক্লাস রুমে চলে যায়।

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]