#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৬
শায়রা ক্লাস রুমে গিয়ে সোজা নিজের সিটে বসে পরে। সিটে হিরা শিলা রিপা তিনজনে বসে শায়রা’র জন্য অপেক্ষা করছে। হঠাৎ করে বোরকা পড়া কোনো মেয়েকে শায়রা’র সিটে বসতে দেখে শিলা চিল্লিয়ে বলে,
” এই তুমি কেন এখানে বসছো? তুমি জানো না এখানে শায়রা বসে। শিলার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় শায়রা। খানিকটা অবাক সুরে বলে,
” আরে,,
বাকিটুকু শায়রা বলতে পারলো না। হিরা বলে, ভালোয় ভালোয় এখান থেকে উঠে পড়ো নইলে খবর আছে।
হ্যাঁ তুমি জেনে শুনে এখানে কেন বসছো? রিপা বলে।
শায়রা তিনজনের কথা শুনে তব্দা খেয়ে যায়। শায়রা ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,
” লেকচার শেষ হলে থামবি এবার। আমি আর টলারেট করতে পারছি না। ডং বাদ দে।
শায়রা কন্ঠ পেয়ে একে অপরের সুখ চাওয়াচাওয়ি করে। কিছুক্ষণ পর উচ্চ স্বরে হেসে ওঠে তিনজনে। তিনজন কে এভাবে পাগলের মতো হাসতে দেখে শায়রা তব্দা খায়। ক্লাসের সকল স্টুডেন্ট তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
সবাইকে এভাবে নিজেদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে শিলা চুপ হয়ে যায়। শিলার দেখা দেখি হিরা রিপাও থেমে যায়। শিলা স্বাভাবিক ভাবে বলে,
” শায়ু বেবি তুই বোরকা পড়ে আসছিস কেন? আসবি ভালো কথা আমাদেরকে ও তো একবার বললি না? এভাবে বোরকা পড়ে আসার মানে কি?
” কেন আমাকে ভালো লাগছে না বোরকা পড়ে। এভাবে বলছিস কেন?
” আরে তোকে আগে কখনো বোরকা পড়তে দেখিনি তাই বলছি। ।
” হ্যা রে আমারও সেম প্রশ্ন তুই তাও আবার বোরকা অবাক করা বিষয়।
” এখন থেকে বোরকা পড়ে ভার্সিটিতে আসব। তোরা চাইলে তোরাও পড়তে পারিস। এখন আর প্রশ্ন করিস না। মেজাজ খারাপ।
শায়রা’র কথায় কেউ আর কিছু বলে না। একটু পর ক্লাসে স্যার আসলে চুপ হয়ে যায় সকলে। টানা দুই ঘন্টা ক্লাস হাওয়ার পর ক্লাসরুম থেকে বের হয় চারজনে।
এখন আর কোনো ক্লাস করবে না কেউ। শায়রা’র ও কিছু ভালো লাগছে না বিধায় বাসায় যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই সকল কে উদ্দেশ্য করে বলে,
” এই তোরা থাক সবাই আমি বাসায় যাচ্ছি।
হঠাৎ শায়রা’র বাসায় ফেরার কথা শুনে মুখ গোমড়া হয়ে যায় তিনজনের।শিলা কিছু একটা আন্দাজ করে বলে,
” আচ্ছা সাবধানে যাস। বাসায় ফিরে কল দিস। শায়রা হ্যা বলে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যায়।
******
সন্ধ্যা সাতটা। ড্রয়িংরুমে বসে আছে সেহরিশ, তার বাবা রফিক মির্জা, মা সরলতা মির্জা। রফিক মির্জা ছেলেকে কিছু বলতে চান সেজন্য ড্রয়িংরুমে বসে আছেন। সেহরিশ বাবা’র দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
” বাবা কি বলবে বলছো না কেন?
রফিক মির্জা এতক্ষণ নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলেন, সেহরিশ বাবা তোকে একটা কথা বলতে চাই। জানি না তুই কেমন রিয়াক্ট করবি। আমি অনেক দিন ধরে বলব বলব করেও বলতে পারিনি। মেইন কথা সময় হয়ে ওঠে নি।
” হ্যাঁ বলো তা সমস্যা কোথায়?
” আসলে আমি চাইছি তুই আমার জায়গায় মানে এবার নির্বাচনে তুই দাড়াবি।
” হোয়াট,,, কি বলছো তুমি?
” এভাবে বলছিস কেন? আমার জায়গা তোকে নিতে হবে। আমি আর ক’দিন ই বা বাঁচব বল।
” রাজনীতি খুব বাজে জিনিস বাবা। একবার জড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে বের হওয়া খুব টাপ ব্যাপার। রাজনীতি তে ঢুকতে খুব ভয় লাগে।
” সব ভয় কেটে যাবে। নো টেনশন ব্যাটা।
” আমি ভেবে বলব বাবা।
” আচ্ছা বেশ।
রাতের ডিনার শেষ করে সেহরিশ নিজের রুমে চলে যায়। সেহরিশের বাবা একজন পলিটিশিয়ান। পরপর তিন বার তিনি এমপি পদে জয়ী হয়েছেন। সেহেরিশের বাবা রা তিন ভাই। সেহরিশের বাবা বড়। সেহরিশ রা সবাই আলাদা আলাদা থাকে। সেহরিশের মেজো চাচা ছোট খাটো একটা ব্যবসা করেন। তার এক ছেলে এক মেয়ে। আর সেহরিশের ছোট চাচা পেশায় একজন আইনজীবী। তার একটাই মেয়ে। আর কোনো সন্তান নেই।
সেহরিশ বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন স্কল করছে। হঠাৎ করে নজর আটকে যায় একটা আইডির উপর। অনেক দিন পর শখের মানুষ টাকে দেখে চোখ টলমল করে ওঠে। কিছুক্ষণ খুব মগ্ন হয়ে দেখে মানুষ টা কে। পরমুহূর্তে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
” মেয়ে তুমি বড্ড স্বার্থপর! নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে ছেড়ে দিলে। কেন এমন করলে এর জবাব তোমাকে দিতে হবে একদিন। সেদিন তোমাকে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
আইডি টা ব্লক করে দেয়। যে তার ভালোবাসা বুঝলো না। খামাকা তার আইডি কেন রাখবে। রাখাটা নেহাত বোকামি ছাড়া কিছু নয়।
******
শায়রা এখনো জেগে আছে। চোখে তার ঘুম নেই। ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শায়রা ভাবে জীবন কি এভাবে চলে। তার জীবনে ঝামেলার কোনো শেষ নেই। ইদানীং চাচা চাচি কে কেমন একটা লাগে তার কাছে। কিছুই ঠিক লাগছে না তার কাছে। মনে হচ্ছে কোনো খারাপ কিছু হতে পারে। কিন্তু কি হতে পারে সেটাই বুঝতে পারছে না। তার সাথে খারাপ হওয়া মতো কিছুই নেই। শুধু তাকে কষ্ট ছাড়া আর কি দিতে পারবে।
অনেক রাত হওয়াই ছাদ থেকে নেমে আসে শায়রা। গা’য়ে তার একটা সুতি থ্রি পিস পড়া। শীতে খনখন করে কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে নিজের রুমে যেতে থাকে। হুট করে থেমে যায় শায়রা। নিধি’র ঘরের সামনে আবছা কারোর ছায়া দেখা যায়। শায়রা’র ভয়ে আড়ালে দাঁড়ায়। অনেক ভয় হওয়া শর্তে ও এখানে কে আছে দেখার জন্য অপেক্ষা করে।
ছায়ামানব অন্ধকারে নিধি’র ঘরে ঢুকে পরে। শায়রা খুব অবাক হয়। এত রাতে কাউকে নিধির ঘরে যেতে দেখে শায়রা পা চালিয়ে নিধির রুমের সামনে দাঁড়ায়। ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না দ্বিধায় পরে যায়। অনেক ভেবে ফোনের ফ্লাস অন করে ভিতরে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেয়।
রুমের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে ছায়াটা। শায়রা কিছু না ভেবেই ভেবে পিছন থেকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এমন হওয়ায় দমন আঁটকে যায় তার। ভয়ে হালকা চেচিয়ে বলে,
” এই কে রে।
নিধির কন্ঠ পেয়ে চমকে ওঠে শায়রা। দ্রুত ছেড়ে দেয় নিধি কে। ছাড়া পেতেই ঘরের লাইট অন করে নিধি। শায়রা কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে বলে, তুই? শায়রা নিধির রিয়াকশন দেখে বোকা হাসে। হেঁসে হেসে বলে আমি যাই। ঝড়ের বেগে ছুটে পালায় শায়রা। নিধি র বুঝে উঠতে কিছুক্ষণ সময় লাগে। শায়রা’কে পড়ে দেখবে ভেবে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে। অনেক ভয় পাওয়ায় এখনো কাপছে নিধি।
*****
শায়রা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নিজের জন্য খাবার বানাতে যায়। আগের মতো সবার জন্য রান্না করে না। মাঝে মাঝে নিধির জন্য বেশি করে রান্না ঘরে। হালকা পাতলা কিছু রান্না করে শায়রা। ভার্সিটিতে যাবে সেজন্য গোসল করবে বলে নিজের রুমে যেতে থাকে। হঠাৎ করে বাইরে থেকে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে সেদিকে যায় শায়রা। বাসায় তো সবাই আছে তাহলে এখন কে আসলো ভেবে পায় না শায়রা।
কলিংবেল বেজেই যাচ্ছে থামার নাম নেই। শায়রা দ্রুত পায়ে গিয়ে দরজা খুলে। সামনে’র মানুষ টাকে দেখে থমকে যায় শায়রা। চোখে পানি এসে ভড় করে। দু’কদম পিছিয়ে যায়। সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে শায়রা’র কাছে। মুখে হাসি চোখে জল।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]