#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৭
সদর দরজায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টা কে দেখে থমকে যায় শায়রা। চোখে পানি এসে ভিড় করে। শায়রা দুকদম পিছিয়ে যায়। তার কাছে সব স্বপ্নের মতো লাগছে। যেন ঘুম ভাঙলেই সব মিথ্যা হয়ে যাবে।মুখে হাসি চোখে জল শায়রা’র। শায়রা অশ্রু সিক্ত নয়নে সামনে তাকিয়ে আছে। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। শায়রা খুব কষ্টে কাপাকাপা কন্ঠে বলে,
” ভা-ই-য়া!
শায়রা’র আবেগ মাখা কন্ঠে ভাইয়া বলে ডেকে ওঠায় এগিয়ে এসে বোনকে আগলে নেয় সিফাত। এত গুলো দিন পর নিজের কলিজার টুকরা ছোট বোন কে কাছে পেয়ে আবেগউৎফুল্ল হয়ে যায় সিফাত। বোন কে জড়িয়ে ধরে দুচোখের পানি ফেলে। কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে সিফাত জিজ্ঞেস করে,
” আব্বু আম্মু কোথায় বনু?
হঠাৎ করে শায়রা ছিটকে দুরে সরে যায়। হঠাৎ এমন করায় অবাক সিফাত। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” বনু কি হয়েছে? তুই দুরে সরে গেলি কেন? আব্বু আম্মু আমার উপর এখনো রেগে আছে তাই না। টাস্ট মি আমি সব ঠিক করে দেব। আব্বু আম্মুর রাগ ভাঙাবো। সবাই এক সাথে থাকব।
ভাইয়ের কথায় শায়রা’র কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। ভাই কে সে কি ভাবে বলবে আব্বু আম্মু আর নেই। আমাদের ছেড়ে চিরদিনের মতো চলে গেছে। শায়রা ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে। চিৎকার করে কান্না করে দেয়। বোনের কান্না দেখে সিফাতের বুক ফেটে যাচ্ছে কিন্তু সে কান্না করতে পারছে না। কারণ সে পুরুষ মানুষ। সিফাত দৌড়ে বোনকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। সান্ত্বনা’র সুরে বলে,
” বনু কি হয়েছে আমাকে বল এভাবে কাঁদছিস কেন? আমাকে না বললে আমি কি করে জানব বল। আমার যে খুব কষ্ট হয় তোদের জন্য।
ড্রয়িংরুমে এত চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনে রুমে থেকে বেড়িয়ে আসেন আতিশার রহমান তার স্ত্রী আর নিধি। এসে সামনে সিফাত কে দেখে চমকে যান আতিয়ার রহমান। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে স্ত্রীর দিকে তাকান। দুজনই ভয় পেয়ে যান।
নিধি খুশি হয়ে বলে, ভাইয়া তুমি এসেছো। আমি জানতাম তুমি ঠিকই আসবে। কিন্তু শায়রা নিচে বসে কাঁদছে কেন? কি হয়েছে ওর।
সিফাত ড্রয়িংরুমে সবাইকে দেখে নিধি বলে, নিধি আব্বু আম্মু কোথায়? তোরা সবাই এখানে আর আব্বু আম্মু এখানে নেই কেন? কোথাও কি বেড়াতে গেছে?
সিফাতের কথা শুনে চুপ হয়ে যায় নিধি। নিধি চুপ থাকতে দেখে সিফাত উঠে দাড়ায় এবং বোনকেও দাড় করায়। সিফাত সোজা চাচা চাচির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। চাচা চাচি কে উদ্দেশ্য করে বলে,
” চাচা আমার আব্বু আম্মু কোথায়? তোমরা কেউ কিছু বলছো না কেন? কি হয়েছে ক্লিয়ারলি বলবে আমায়? আমি কিন্তু অনেক্ক্ষণ ধরে চুপ করে আছি আর পারছি না।
আতিয়ার রহমান চুপ করে সিফাতের কথা গুলো শোনেন। তারপর বলেন, কি ভাবে যে বলবো বুঝতে পারছি না। তোরও তো অধিকার আছে নিজের বাবা মার সম্পর্কে জানার। তিনি কিছুক্ষণ দম নিয়ে বলেন, সিফাত তো বাবা মা আর বেঁচে নেয়। আমাদের সবাইকে ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন বলে কান্নার ভান করেন।
চাচার কথা শুনে থমকে যায় সিফাত। দুকদম পিছিয়ে যায়। মাথায় আসমান ভেঙে পড়ে তার মাথায়। পুরো দুনিয়া তার কাছে অন্ধকার মনে হচ্ছে। সিফাত ধপ করে নিচে বসে পরে।
শায়রা ভাইয়া বলে চেচিয়ে ওঠে। দৌড়ে গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। সিফাতের মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। যেন সে বোবা। কথা বলতে পারে না।
যেকোনো সন্তানই তার বাবা মায়ের মৃত্যুর সংবাদ মেনে নিতে পারে না। এত গুলো দিন পর বাসায় ফিরে যখন মৃত্যুর সংবাদ শোনে সেটা কখনই মেনে নিতে পারে না। সিফাতের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়তে থাকে। সিফাতের চুপ থাকা মেনে নিতে পারছে না শায়রা। ঢুকরে কেঁদে ওঠে শায়রা। বোনের কান্নার আওয়াজ পেয়ে সিফাত শায়রা’র দিকে তাকায়। বোনকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। দুই ভাই বোনের কান্না দেখে নিধিও কাঁদছে। কাদছে না শুধু নিধির বাবা মা।
সিফাত কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। সব কিছু তার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। নিজেকে সামলে স্বাভাবিক ভাবে চাচার দিকে তাকায়। সিফাতের তাকানো দেখে আতিয়ার রহমান শুকনো ঢোক গিলেন। তিনি বলেন, এভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছিস কেন? আমি কি করেছি? দেখ যার যে পর্যন্ত হায়াত সে সে পর্যন্ত বাঁচবে। এখানে আমাদের কারোর হাত নেই। আল্লাহ যাকে যে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখবে সে পর্যন্ত ই আমরা বাঁচব। এই সত্য আমাদের সবাইকে মেনে নিতেই হবে।
সিফাত নিরবে দাড়িয়ে শুনল। সিফাত গম্ভীর স্বরে বলে,
” আব্বু আম্মু দু’জনে কিভাবে মারা গেলো। তোমরা আমাকে সবটা বলো?
আতিয়ার রহমান ইশারায় স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কিছু বলেন। জেসমিন বেগম সিফাতের কাছে এগিয়ে এসে কাঁধে হাত রেখে ন্যাকা কান্না করে বলে, গাড়ি এক্সিডেন্ট করছিল ভাইজান রা। একটা খাদে পড়ে তারা। খাদটা খুব গভির ছিল। পুলিশ তদন্ত করে ও কোনো কিছুর হদিস পায়নি। বাবা রে তুই কষ্ট পাস না। আমরা এখনো বেঁচে আছি। আমরাই এখন তোদের আপনজন।
শায়রা তাচ্ছিল্যের হেসে বলে, আপনজন। আপনজনের মানে বোঝেন চাচি। শায়রা’র কথায় জেসমিন বেগম কিছুটা ঘাবড়ে যায়। ফের নিজেকে সামলে হেঁসে বলে, দেখো মেয়ের কথা। আমরাই তো তোদের আপনজন মা। জেসমিন বেগমের কথা শুনে গা পিত্তি জ্বলে ওঠে শায়রা’র তবুও কিছু বলে না। এতদিন পর ভাইকে পেয়ে সে খুব খুশী।
সিফাত এতক্ষণ নিরব হয়ে সবার কথা শুনলেও তার মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে। এখানে নিশ্চয়ই কিছু রহস্য আছে যা তাকে বের করতে হবে খুব গোপনে। কাউকে জানতে দেওয়া যাবে না। নিজেকে শক্ত হতে হবে। ভেঙে পড়লে চলবে না। মনে মনে নিজের মনোবল শক্ত করে নেয় সিফাত।
গম্ভীর কণ্ঠে বলে, বনু তুই একটু আমার রুমে আই তো। শায়রা মাথা নেড়ে সায় দেয়। সিফাত হনহন করে নিজের রুমে চলে যায়।
‘
‘
‘
‘
‘
‘
‘
আতিয়ার রহমান সারা রুম জুড়ে পায়চারি করছেন। টেনশনে তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছেন। কি করবেন না করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। জেসমিন বেগম রুমে এসে স্বামী কে অস্থির হয়ে পায়চারি করতে দেখে বলে, কি গো এমন কইরা পায়চারি করছো ক্যান?
আতিয়ার রহমান থেমে যান। স্ত্রী র দিকে এগিয়ে এসে বলল, সব এলোমেলো হয়ে যাবে জেসমিন। এত দিনের সাজানো গোছানো সব কিছু শেষ করে দেবে সিফাত। ইদানীং শায়রাও পাল্টে গেছে। অদ্ভুত ব্যবহার করে। আমার কাছে সব কেমন গোলাটে লাগছে। আর সিফাত যে ছেলে ও তো এর শেষ দেখে ছাড়বে। এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না জেসমিন। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। না হলে সব শেষ হয়ে যাবে। সেটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারব না।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]