#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_৮
দুপুর দুইটা। নিজ রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে সিফাত। তার মনে হাজারো প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর সে কোথায় পাবে জানে না। কিন্তু তাকে সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।
শায়রা আজ ভার্সিটিতে যায় নি। শায়রা সিফাতের রুমের সামনে এসে দরজা নক করে। শায়রা ভাইয়া বলে ডেকে ওঠে। সিফাত ভাবনা থেকে বেড়িয়ে বলে, ভিতরে আই বনু। শায়রা নিরিবিলি হেঁটে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। রুমে ঢুকে চারপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। শায়রা এ রুমে অনেক দিন আসে না। মূলত ভাই নেই বলে এখানে আসে না। চোখ ভিজে ওঠে শায়রা’র। নিজেকে সামলে বেলকনিতে যায়। দেখে তার ভাই বেলকনির রেলিং ধরে দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। শায়রা গিয়ে ভাইয়ের পাশে দাঁড়ায়। সিফাত গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
” বনু কি হয়েছিল সেদিন আমাকে সবটা বল। কিচ্ছু লুকাবি না আমার থেকে। তুই যা যা জানিস আমাকে সব বল।
ভাইয়ের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে শায়রা আঁতকে ওঠে। শায়রা খুব করে বুঝতে পারছে সামনে অনেক ঝড় আসতে চলেছে। শায়রা কে চুপ থাকতে দেখে শায়রা’র দিকে তাকিয়ে বলে, কি হলো বনু তুই চুপ করে আছিস কেন?
শায়রা চমকে ভাইয়ের দিকে তাকায়। শায়রা স্বাভাবিক ভাবে বলে, ভাইয়া আমি যা যা জানি তোমাকে সব বলবো। একটা বিষয় কি জানো?
” কি?
” আমাদের অজানা অনেক সত্য লুকিয়ে আছে। যে গুলো আমি তুমি কেউই জানিনা আমরা। আমাদের সেই সব খুজে বের করতে হবে। বোনের কথায় সিফাত অবাক হলেও সেটা প্রকাশ করে না। শায়রা আবারও বলতে শুরু করে,
“সময়টা ২২ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ। আব্বু আম্মু দু’জনে একটা কাজে বের হয়েছিল। সেটা কি কাজ আমি জানি না। মূলত আমাকে বলেনি। আমি ভাবছি আব্বু একজন জার্নালিস্ট সে জন্য কোনো ইম্পরট্যান্ট কাজে গেছে। আম্মু কেও সাথে নিয়েছে আমি যেতে চাইলেও আমাকে নেয়নি। নিলে হয়তো তাদের মতো আমি সেদিন মা**
সিফাত শায়রা’র মুখ চেপে ধরে বলে, খবরদার বনু। আজ যা বলছিস আর কখনো মুখেও আনবি না। এই পৃথিবীতে তুই ছাড়া যে আমার কেউ নেই। আমরা দুভাইবোন এক সাথে বাঁচব। শায়রা ডুকরে কেঁদে ওঠে। সিফাত বোনকে বুকের সাথে চেপে ধরে। শায়রা কান্না থামালে সিফাত ফের বলে, তারপর কি হয়েছিল বনু?
শায়রা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে, তখন সন্ধ্যা ছয়টা বাজে। আমি ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলাম। চাচা চাচি দুজনে রুমেই ছিল। নিধি নুডলস রান্না করতে কিচেনে গিয়েছিল। তখন কলিংবেলের শব্দ হয়। আমি রিমোট রেখে গিয়ে দরজা খুলি। দরজার সামনে পুলিশ দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমি চমকে যায়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, আপনারা?
” জ্বি মেডাম। এটা কি জার্নালিস্ট মাহমুদ রহমানের বাড়ি।
” হ্যাঁ। কেন কি হয়েছে?
জোরে জোরে কথার আওয়াজ পেয়ে চাচা চাচি দুজনে বাইরে বেড়িয়ে আসে। দরজায় পুলিশ দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে বলেন, অফিসার আপনারা এখানে। কিছু কি হয়েছে। পুলিশ অফিসার বলে, জ্বি আমরা। মাহমুদ রহমানের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে। পুলিশ অফিসারের কথা শুনে আমি চিৎকার করে উঠি। সেখানেই আমি জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি আব্বু আম্মুর ডেড বডি খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুলিশ তদন্ত করে বলেন, যেখানে এক্সিডেন্ট টা হয়েছে সেখানে আমাদের গাড়ি ছিল। গাড়ি টা খাদে আটকে ছিল। তার ভিত্তি তে পুলিশে অনুমান করেন আব্বু আম্মু আর বেঁচে নেয় বলে শায়রা কেঁদে ওঠে৷ সিফাতও কাঁদছে তবে শব্দ বিহীন।
*****
সেহরিশ ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবারও বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরে সেহরিশ।
ড্রয়িংরুমে বসে আছেন রফিক মির্জা ও সরলতা মির্জা। সেহরিশ আসলে সরলতা মির্জা বলেন,
” আয় বাবা, এখানে এসে বোস। সেহরিশ মায়ের কথা অনুযায়ী মায়ের পাশে বসে সেহরিশ। রফিক মির্জা ছেলের পানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
” সেহরিশ তুই কি সিদ্ধান্ত নিলি বাবা। বাবার কথায় সেহরিশ তার দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে, তুমি যা বলবে তাই হবে বাবা। আমি নির্বাচনে দাড়াবো। ছেলের কথায় মুখে হাসি ফুটে ওঠে রফিক মির্জার।
রাতের ডিনার শেষ করে নিজের রুমে যায় সেহরিশ। ক্লাসের কিছু পড়া আছে সে গুলো শেষ করার জন্য টেবিলে বসে।
***
অনেক দিন পর নিজের বাসার খাবার টেবিলে খেতে বসেছে সিফাত। তার পাশে শায়রা বসেছে। নিধি ও আতিয়ার রহমান খেতে বসেছে। জেসমিন বেগম নিজ হাতে আজ রান্না করেছেন সিফাতের পছন্দ মতো। শায়রা সব কিছু দেখে মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসে। কিন্তু মুখে প্রকাশ করে না। জেসমিন বেগম সবার প্লেটে খাবার বেড়ে দিলে যে যার মতো খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পরে। সিফাত খাবার টেবিলে একটা কথাও বলেনি। মুখ বুঁজে খাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। একে একে সবাই খাবার টেবিল থেকে উঠে পরে।
****
শায়রা সকালে ঘুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। নিজের জন্য আর ভাইয়ের জন্য চা করে আবার উপরে চলে আসে। সিফাত বিছানায় শুয়ে আছে। দরজা ভিড়ানো ছিল বিধায় দরজা নক না করেই শায়রা রুমে প্রবেশ করে বলে,
“ভাইয়া তুমি কি জেগে আছো নাকি ঘুমিয়ে আছো? বোনের ডাক শুনে বলে,
” জেগে আছি বনু বলে উঠে বসে। শায়রা ভাইয়ের দিকে চা’য়ের কাপ এগিয়ে দেয়। দু’ভাইবোন চা শেষ করে। শায়রা আবদারের সুরে বলে,
” ভাইয়া আজ তুমি আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসবে। বোনের আবদার শুনে সিফাত মৃদু হেসে বলে, আচ্ছা দিয়ে আসবো। ভাইয়ের কথা শুনে শায়রা খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে। বোনের হাসি মুখ দেখে সিফাত হালকা হাসে।
**
সকাল নয়টা। শায়রা ভার্সিটিতে যাবার জন্য তৈরি হয়েছে। নিধি আগেই চলে গেছে। সিফাত আর শায়রা দু’জনে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা হয়। সিফাত বাইক নিয়ে বেড়িয়েছে। টানা ত্রিশ মিনিট পর নির্ধারিত গন্তব্য পৌঁছায় দু’জন। সিফাত বাইক পার্ক করতে যায়। শায়রা ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পর সিফাত ফিরে আসে কিন্তু সিফাতের পাশের ব্যক্তিকে দেখে শায়রা চমকে ওঠে। দু’জনে গল্প করতে করতে শায়রা’র দিকে এগিয়ে আসছে। যত শায়রা’র দিকে এগিয়ে আসছে তত শায়রা’র ভয়ে বারবার শুকনো ঢোক গিলছে।
চলবে ইনশা আল্লাহ