#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১০
কুয়াশা মাখা ভোর। ঘড়ির কাটার টিকটক শব্দে জানান দিচ্ছে ভোর পাঁচ টা বাজে। চারদিকে আযানের শব্দে মুখরিত। মধুর কন্ঠে মসজিদের মুয়াজ্জিন আযান দিচ্ছেন। প্রতিদিনের মতো আজও সেহরিশ ঘুম থেকে উঠে পরে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে মসজিদের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে।
***
অন্য দিনের মতো আজও কুয়াশায় চারপাশ ঢেকে আছে। কিন্তু অন্য দিনের মতো চারপাশ অন্ধকার হয়ে নেই। সূর্য্যি মামা তার কিরণে চারপাশ আলোকিত করে রেখেছে। শীতের সকালে মিষ্টি মিষ্টি রোদ খুব ভালো লাগে সকলের। শায়রা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বই নিয়ে ছাদে চলে আসে। আজ থেকে ভার্সিটি শীতের বন্ধ দেবে। বর পয়েলা জানুয়ারি থেকে যেতে হবে। আর ক’দিন পরেই নতুন ইয়ার। চারদিকে উৎসবের আমেজ। বর্তমানে ফেসবুকে ঢুকার অবস্থা নেয়। সবাই থার্টি ফার্স্ট নাইট নিয়ে খুব এক্সাইটেড। বাট এসবের কিছুতেই মাথা ব্যথা নেই শায়রা’র। শায়রা এসব একদম পছন্দ করে না। বাট দুরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া খুব শখের। গত কয়েক বছর হলো কোথাও ঘুরতে যায় না। সবকিছু সাইডে ফেলে পড়ায় মনোযোগ দেয় শায়রা।
শায়রা পড়ায় এতোটাই বিভোর যে তার পাশে এসে কেউ একজন দাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতে পারে নি। সিফাত দাঁড়িয়ে বোনের পড়া দেখছে। শায়রা পড়তে পড়তে হঠাৎ নজর পরে সিফাতের উপর। শায়রা পড়া বাদ দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” ভাইয়া তুমি কখন আসলে? সিফাত মুচকি হেসে বলে,
” মিনিট পাচেক হবে।
” ওহ। কিছু কি বলবে?
” না দেখতে আসলাম আমার বোনটা কি করছে।
” আচ্ছা। ভাইয়া কাল রাতে তুমি কোথায় ছিলে তোমার রুমে গিছিলাম বাট তোমাকে পাইলাম না। শায়রা’র কথায় সিফাত গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
” কিছু কাজ ছিল সেটা করতে গিয়েছিলাম।
” ও। শায়রা তেমন কিছু বলেনা। শায়রা এখন বুঝতে শিখেছে। সেজন্য ব্যাপারটা আর ঘাটেনা। সময় হলে তার ভাই তাকে সব বলবে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সিফাত ফের বলে, বনু আটটা বাজতে চলল। তুই ভার্সিটি যাবি না।
” হ্যা ভাইয়া যাব। পড়তে পড়তে খেয়াল ছিল না কয়টা বাজে। শায়রা আসি বলে ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে যায়। সকালের খাবার খেয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে। আজও সিফাত শায়রা কে ভার্সিটি পৌঁছে দিচ্ছে। সিফাত বাইক চালাতে চালাতে শায়রা কে প্রশ্ন করে,
” বনু তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?
” হ্যাঁ ভাইয়া বলো।
” তুই আগে কখনো বোরকা পড়তি না তো। হঠাৎ করে বোরকা পড়ছিস বিষয়টা অন্য রকম লাগছে না। কিছু কি হয়েছে।
” শায়রা আমতাআমতা করে বলে, তেমন কিছু না ভাইয়া। হঠাৎ করে মন চাইল তাই পড়লাম। এর বেশি কিছু না।
সিফাত আর কথা বাড়ায় না।
______________________
চার বান্ধবী ক্যাম্পাসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। শায়রার হঠাৎ করে এমন বোরকা পড়ে আসায় বিষয় টা অনেকেই কেমন একটা দৃষ্টিতে দেখছে শায়রা কে। সে সবে পাত্তা দেয় না শায়রা। লোকে কি বলল তাতে কিচ্ছু যায় আসে না শায়রা’র। ক্লাসের সময় হয়ে যাওয়ায় ক্লাসে চলে যায় সবাই। আজ তেমন ক্লাস হয় না। শুধু মাত্র প্রথম ক্লাসটাই হয়েছে। যে যার মতো চলে যাচ্ছে। শায়রা রা চার বান্ধবী মিলে ঠিক করে আজ ঘুরতে বের হবে। আর কবে হবে ঠিক নেয়। নতুন বছরে সবার দেখা হবে সবার। সারা দিন ঘুরে ফিরে বাসায় ফেরে দুপুর দুইটায়।।
***
আতিয়ার রহমানের ছোটো খাটো একটা বিজনেস আছে। সেটা কিসের বিজনেস সিফাত জানে। শুনলে বলে, তোর না জানলেও চলবে। বাট আজকে সিফাত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ যে করেই হোক জেনেই ছাড়বে।
সন্ধ্যায় ড্রয়িংরুমে বসে পেপার পড়ছেন আতিয়ার রহমান। সিফাত হেঁটে এসে চাচার অপজিট সোফায় বসে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হালকা কেশে বলে, চাচা। হঠাৎ কারোর কথা শুনে চমকে ওঠেন আতিয়ার রহমান। সামনে সিফাত কে দেখে বলে, ক-কিছু বলবি?
চাচা’র চমকানো মুখ দেখে মনে মনে হাসে সিফাত। সেটা বাইরে প্রকাশ করে না। গম্ভীর স্বরে বলে, চাচা আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
” হ্যা বল।
” আমি যা যা শুনব তার সঠিক উত্তর দিবেন। কোনো ভনিতা ছাড়াই। সিফাতের কথা ভড়কে যান আতিয়ার রহমান। তিনি আমতা আমতা করে বলেন,
” আমি মিথ্যা কেন বলব তোকে?
” আচ্ছা বেশ। চাচা আপনার কিসের বিজনেস আছে। সিফাতের কথায় যেন আকাশ থেকে পড়েন আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, হঠাৎ এই কথা শুনছিস যে। কিছু কি হয়েছে।
” আমি বলছি না কোনো ভনিতা ছাড়াই বলবেন। যেটা বলছি তার উত্তর দেন।
” আমার ব্যাপারে নাক গলাতে হবে না তোর। তুই তোর ব্যাপার নিয়ে ভাব। আমার টা না ভাবলেও চলবে তোর।
” চাচা আপনি হঠাৎ রুক্ষ ভাবে কথা বলছেন কেন? আর আমার কথাটা এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন? আপনি কি খারাপ কোনো কাজ করেন চাচা। সিফাতের কথায় শুকনো ঢোক গিলেন তিনি। ঘামতে শুরু করেন। সিফাত রহস্যময়ী হেঁসে বলেন,
” চাচা আপনি ঘামছেন কেন? কি হয়েছে। শরীর খারাপ লাগছে নাকি।
” আতিয়ার রহমান শরীর থেকে ঘাম মুছে হালকা হেঁসে বলে, তেমন কিছু না সিফাত আসলে হঠাৎ করে বুকে ব্যথা করছে। আমি এখন রুমে যাচ্ছি। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে বলে সোফা থেকে উঠে নিজের রুমে চলে যান। চাচার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আবার হেঁসে ওঠে। তার যা বোঝার বুঝা হয়ে গেছে। তার ধারণাটায় ঠিক। অনেক বড় রহস্য সামনে আসতে চলেছে।
*****
সেহরিশের খালাতো ভাই বোনেরা এসেছে বেড়াতে। শীতের ছুটিতে সবাই অনেক মজা মাসতি করে। এই সময়টা অন্য সময়ের থেকে খুব আলাদা। এই ডিসেম্বর মাসে সকলে এক জায়গায় হয়। সেহরিশের চাচাতো ভাইবোনেরা এক সাথে হয়েছে। শুধু তার ফুপিমণির দুই ছেলে মেয়ে এখনো আসেনি। দুদিন পর আসবে তারা।
****
শায়রা পা টিপে টিপে নিধির রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিধির রুমের ভিতর ফিসফিস করে কথা বলার শব্দ শোনা যায়। শায়রা খুব সতর্কতা অবলম্বন করে রুমের ভিতরে ঢোকে। কথার আওয়াজ টা বেলকনি থেকে আসে। শায়রা গুটি গুটি পায়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। সামনে নিধির মতো কাউকে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে দেখে তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। পিছন থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলে,
” বাহ আপু বাহ! তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করছো অথচ আমাকে বলোনি। এতটা খারাপ তুমি বলে গাল ফুলিয়ে দাঁড়ায়।
হঠাৎ কেউ ফোন নেওয়ায় চমকে ওঠে মেয়েটা। ঘুরে দাড়ায় সে। সামনে শায়রা কে দেখে চুপ হয়ে যায় মেয়েটা। শায়রা ভুত দেখার মতো চমকে ছিটকে দুরে সরে যায়। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেড়িয়ে যায়, নিশাত আপু তুমি??
” হ্যা।
শায়রা কি করছে ভেবে নিজের কাজের জন্য লজ্জিত হয়। মুখ টা ইনোসেন্ট ফেস করে বলে, সরি নিশাত আপু। আমি আসলে বুঝতে পারি নি। তুমি কখন আসলে এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে থামে শায়রা।
নিশাত বিষয় টা বুঝতে পেরে মৃদু হেসে বলে, ইট’স ওকে শায়রা। ভুল তো সবাই করে। কেউ জেনে করে আর কেউ না জেনে। আমি কিছু মনে করিনি।
শায়রা নিশাতের ফোন দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
নিশাত হলো নিধির বেস্টফ্রেন্ড। নিধির সাথে এসেছে একটা কাজে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় বাসায় ফিরতে পারে নি। শায়রা ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে আসে। একটু আগে কি করছে সেটা ভেবেই হেসে ওঠে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]