#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১২
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছে শায়রা। তখন শায়রা’র ফোনে একটা এসএমএস এর নোটিফিকেশন আসে। শায়রা নোটিফিকেশনে চাপ দিয়ে দেখে শিলা এসএমএস দিছে। শায়রা মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি নিয়ে এসএমএস সিন করে। শিলার এসএমএস দেখে শায়রা আরও বেশি টাস্কি খায়। সে মনে মনে যা যা ভাবছিল আর সেটাই হয়ে গেলো। শিলা এসএমএস দিছে,
” শায়ুবেবি কালকে আমাদের বাসায় একটু আসবি। আমাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে। আম্মু বারবার করে তোকে আসতে বলছে। প্লিস না করবি না বেবি।
শিলা কে পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে কথা। কিন্তু সে যেতে পারবে না। সেদিনের সেই ঘটনাটা আজও শায়রা’র মনে গেথে আছে। সেটা ভুলতে পারেনি। শায়রা’র রিপলে না পেয়ে শিলা এবার কল করে। ফোনের রিংটোনের শব্দে ভাবনার ছেদ পড়ে শায়রা’র। কলটা রিসিভ করে কানে নেয় ফোন। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে শিলার কথা,
” শায়ুবেবি কিছু বলছিস না কেন? তুই কি আসবি না। শিলার কথায় জবাব দেয়।
” দোস্ত কিছু মনে করিস না প্লিজ। আমি যেতে পারব না। সেদিনের কথা তো তুই জানিসই। এসবের মাঝে নিজেকে আর জড়াতে চাই না।
” প্লিজ শায়ুবেবি না করিস না। আমি সবটাই তো জানি। তোকে তো সামনে যেতে বলছিনা। শুধুমাত্র আমাকে একটু সাহস দেওয়ার জন্য আয় প্লিজ। আমাকে তৈরি করে দিবি এতেই হবে জানু।
” শায়রা অনেক ভেবে বলে, আচ্ছা আসব। বাট পাত্রপক্ষ আসার আগেই আমি চলে আসব।।
শিলা খুশি হয়ে বলে, ওকে ডিয়ার শায়ুবেবি। আপনি যা বলবেন তাই হবে।শিলা হাসি মুখে কল কেটে দেয়। ৷ শায়রা ঘুমোনোর জন্য প্রস্তুতি নেয়।
___________________________
সকাল সাতটা। শায়রা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের হালকা পাতলা নাস্তা করে বের শিলাদের বাসার উদ্দেশ্য। সিফাত বলছিল ড্রপ করে দেবে কিন্তু শায়রা না করে। সে রিকশা বা সিএনজি নিয়ে যেতে পাড়বে। সিফাতের তাড়া থাকায় আর জোর করে না। বোনকে সাবধানে যেতে বলে নিজেও চলে যায়।
**
শায়রা আগে দুবার শিলাদের বাসায় এসেছে। সেজন্য আসতে আর কোনো অসুবিধা হয়নি। রিকশা নিয়ে সোজা এখানে চলে এসেছে। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়। বাড়িটা একতলা বিশিষ্ট। বেশ বড়োসড়োই। শিলার কোনো ভাই না থাকায় বাড়িটা আর বড় করেনি। ভাবতে ভাবতে শায়রা কলিং বেল বাজায়। দরজা খুলছে না দেখে শায়রা আবারও বেল বাজাতে যায় ঠিক তখনই দরজা খুলে যায়। শায়রা হাসি মুখে কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়। কারণ তার সামনে আর কেউ নয় স্বয়ং সেহরিশ দাঁড়িয়ে আছে। দরজায় সেহরিশ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে যায় শায়রা। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেড়িয়ে আসে,
” আপনিিিি?
সেহরিশেরও সেম অবস্থা। সেহরিশ ও বিস্ময়ে বলে,
” তুমিিি?
দুজন দু’জনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। শায়রা ফের বলে, আমারও সেম প্রশ্ন, আপনি এখানে কেন? বাই এনি চান্স আজকেও কি পাত্রি দেখতে আসছেন। সেহরিশ এতক্ষণ অবাক হলেও শায়রা’র শেষের কথায় রেগে যায়। রেগে গিয়ে বলে,
” স্টপ ইট। সেহরিশের কথায় চুপসে যায় শায়রা। দরজা খুলতে গিয়ে এত দেড়ি হচ্ছে দেখে শিলাও চলে আসে সদর দরজায়। এসে দুজনকে কথা বলতে দেখে বলে,
” ভাইয়া তুমি কি শায়রা কে চেনো?
শিলার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে জিভে কামড় খায় শায়রা। আমতাআমতা করে সেহরিশের দিকে তাকিয়ে বলে, সরি ভাইয়া। শায়রা শিলার হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে যায়। কিচিনে গিয়ে শিলার আম্মুর সাথে কথা বলে। শিলার আম্মু শিলাকে ওর রুমে নিয়ে যেতে বলে। শায়রা কে নিয়ে ওর রুমে যায় শিলা। রুমে এসে টেবিলের উপর ব্যাগ রেখে শিলাকে বলে,
” এই শিলুবেবি সেহরিশ ভাইয়া তোর কি হয় রে? শিলা মৃদু হেসে বলে,
” সেহরিশ ভাইয়া আমার বড় কাকুর ছেলে। আমাদের সবার সিনিয়র বড় ভাই। তুই ভাইয়া কে কিভাবে চিনিস অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে শিলা।
” শায়রা বলে, সেদিন যে পাত্রপক্ষ নিধি আপুকে দেখতে গিছিল। পরে সেখানে আমাকে আর আপুকে দেখে সিনক্রিয়েট হয়েছিল। সেই পাত্রপক্ষই হলো সেহরিশ ভাইয়ারা। সব শুনে শিলা অবাক হয়। শায়রা আবারও বলে,
” আরেকটা কথা শুনবি।
” কি?
” আমার ভাইয়ার বন্ধু সেহরিশ ভাইয়া।
” তোর ভাইয়া মানে? নাম কি ভাইয়ার?
” সিফাত।
” কি বলিশ। তোর ভাই সিফাত। ওহ নো। সব দেখছি গড়ভড় লাগছে আমার কাছে। তাহলে বড় কাকি তোকে দেখলে তো বিষয়টা অন্য দিকে চলে যাবেনে।
” বাদ দে। সময়ের টা সময়ে দেখা যাবে। আয় তোকে আগে গুছিয়ে সাজিয়ে দেয়। এমন করে সাজাবো দুলাভাই চোখ সরাতে পারবে না। শিলা লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয়।
****
শিলার আম্মু পারভীনা বেগম শায়রা কে নিচ থেকে ডাক দেন। ডাক শুনে শায়রা নিচে নেমে আসে। প্রথমেই শায়রা’র সোফায় নজর পরে। সেখানে দুজন মহিলা বসে আছেন। একজন কে শায়রা চেনে। তিনি সেহরিশের মা। আরেকজন কে শায়রা চেনে না। শায়রা হেঁটে কিচেনে চলে যায়। শায়রা কে দেখে পারভীনা বেগম মুচকি হেসে বলে,
” এসেছিস মা। শায়রা’র হাতে কিছু নাস্তা দিয়ে বলে, শায়রা মা এগুলো তুই আর শিলা মিলে খাস। আর এই দুকাপ চা তোর ওই আন্টিদের দিয়ে দে তো মা। শায়রা ইতস্তত বোধ করে বলে,
” আন্টি ওনারা কারা?
” আমার দুই জা মা। সম্পর্কে তোর আন্টি হয় বুঝেছিস।
” শায়রা মুচকি হেসে বলে, জ্বি আন্টি।
শিলা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে শায়রা’র দিকে নজর রাখছে। শিলা জানে যে কোনো সময় তার বড় আম্মুর সাথে দেখা হতে পারে। শায়রা কিচেন থেকে দু কাপ চা নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে। এসে চায়ের কাপ এগিয়ে দেয় তাদের দিকে। সেহরিশের মা শায়রা কে দেখে দাঁড়িয়ে যান। আঙুল তাক করে বলে,
” তুমি এখানে ?
শায়রা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। শিলা ঠিক এই মুহূর্ত র অপেক্ষায় ছিল। শিলা ছুটে চলে আসে ড্রয়িংরুমে। শিলা বোকা বোকা হেসে বলে,
” বড় আম্মু শায়রা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। সরলতা মির্জা অবাক হয়ে বলে,
” কি বলছিস তুই? এই মেয়েটা তোর ফ্রেন্ড।
” হ্যা বড় আম্মু। শায়রা’র আরেকটা পরিচয়ও আছে।
” কি?
” সেহরিশ ভাইয়ার বন্ধু সিফাত ভাইয়া আছে না।
” হ্যা। তো তার সাথে এই মেয়েটার কি সম্পর্ক।
” আরে আছে আছে। সিফাত ভাইয়ার একমাত্র বোন শায়রা।
” কিহহহ। তুই কিভাবে জানিস এতকিছু।
” আমি একটু আগেই জানতে পারলাম। ভাইয়া আর শায়ু বলল আমাকে।
” ওহ।
সরলতা মির্জা শায়রা’র দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। সেদিন ভালো করে মেয়েটাকে দেখে নি। দেখতে গিছিল নিধি কে। শায়রা’র মুখে মায়াবী মায়াবী ভাব আছে। দেখতে মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর। মেয়েটা ফর্সা তবে ফর্সার ভিতরেও অনেক তফাৎ আছে। গোলগাল মুখে হাসলে টোল পরে। মহিলার তাকানো দেখে শায়রা’র অস্বস্তি ফিল হয়। ইশারায় শিলা কে কিছু বললে, শিলা হেঁসে বলে,
” বড় আম্মু তোমরা গল্প করো আর চা খাও। আমরা তাহলে আসি।
শিলা শায়রা’র হাত ধরে রুমে চলে যায়। রুমে এসে শায়রা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। শিলা তাকে বড়ো বাচান বাচিয়ে দিয়েছে। শায়রা শিলা কে জড়িয়ে ধরে টপাটপ মুখে কয়েকটা চুমু দেয়। শিলা মুখে হাত দিয়ে শায়রা’র দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
” কি হলো এটা?
শায়রা মুচকি হেসে বলে, তুমি বোঝোনি বেবি। তোমাকে চুমু দিলাম বলে খিলখিল করে হেসে ওঠে। শায়রা’র দেখাদেখি শিলাও হেঁসে ওঠে। দুই বান্ধবী মিলে উচ্চ স্বরে হেসে ওঠে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]