#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৩
__________
শীতের রাতে চারপাশ ঝাপসা হয়ে আছে। মানুষজন খুব কম দেখা যাচ্ছে। গভীর রাত। চারপাশ সু-শ্মশান। রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে শা শা করে। রাস্তার উপর এক যুবক দাঁড়িয়ে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। মুখে তার বাঁকা হাসি। কালো কোর্ট দ্বারা পুরো শরীর ঢাকা। ফোনে কথা বলা শেষ করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর যুকবটার সামনে একটা কালো রঙের কার এসে দাড়ায়। কার থেকে একটা ছেলে নেমে এসে দরজা খুলে দিলে যুবক টা গাড়িতে উঠে বসে। গাড়িটা শা শা করে চলে যায়। চোখের পলকেই আড়াল হয়ে গেলো।
________
একটা গোডাউনের ভিতরে একটা লোকটা চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোকটা ছোটার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে বাট তার চেষ্টা প্রতি বারই বিফলে যাচ্ছে। লোকটার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। অজানা ভয়ে কেঁপে উঠছে বারবার। বদ্ধ ঘরে শীতের মাঝেও ঘামছে লোকটা। এক ফোটা পানি খাওয়ার জন্য কলিজা ফেটে যাচ্ছে। ঘরের ভিতরে সে ছাড়া আর কেউ নেয়। কারোর কাছে যে পানি চাইবে সেটাও পারছে না। ঘরের ভিতরে নীল রঙা আলো জ্বলছে। তাতে বোঝা যাচ্ছে ঘরটা অনেকদিনের। এখানে কেউ থাকে বলে মনে হচ্ছে না। চারপাশটা ঘুদঘুটে অন্ধকার। ঘরের দেয়ালে সবুজ শেউলা পড়ে গেছে। অনেক পুরাতন দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। লোকটার ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার আওয়াজ কানে আসে। এক ফালি আশা নিয়ে লোকটা বলে,
” কে? কে আপনি? আমাকে এখানে কেন আনছেন? আমি কি করেছি? আমাকে ছেড়ে দেন বলছি?
দরজা খুলে ছেলেটা ধীর পায়ে হেঁটে আসে। এসে সোজা লোকটার সামনে দাঁড়ায়। মুখে হাসির রেখা ধরে বলে,
” এত তাড়া কিসের মুরব্বি? একটু সবুর করুন? আপনাদের জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে?
ছেলেটার মুখে হাসি থাকলেও সেটা কেউ দেখতে পারছে না। কেন না ছেলেটার মুখে মাক্স পড়া।
চেয়ারে বাঁধা লোকটা আকুতি মিনতির স্বরে বলে,
” আমাকে এক গ্লাস পানি দেন না প্লিজ। আমার খুব পানি পিপাসা পেয়েছে। লোকটার আকুতিভরা কন্ঠ ছেলেটার মন গলাতে পারে না। ছেলেটা রুক্ষ কন্ঠে বলে,
” স্যার না আসা পর্যন্ত এক গ্লাস কেন এক ফোটা পানি ও দিতে পারব না?
লোকটা চুপসে যায়। মুখ বুজে চুপ থাকে।
*****
রাত দুইটা। বদ্ধ ঘরে বাধা চেয়ারে ঘুমিয়ে আছে লোকটা। বেঘোরে ঘুমানোয় হঠাৎ মুখে ঠান্ডা পানি পড়ায় ধড়ফড়িয়ে উঠে লোকটা। লোকটা তুতলিয়ে বলে ওঠে,
” কে? কে পানি ঢাললো। লোকটা চোখ বুজে ফের চোখ খুলে সামনে অচেনা এক যুবক কে দেখে বলে,
” কে রে তুই? আমাকে এখানে কেন এনেছিস? আমি তোর কি ক্ষতি করেছি হ্যা কিছুটা তেজ দেখিয়ে বলে। লোকটার কথা শুনে মৃদু হাসে যুবক।। পাশের ছেলে টাকে ইশারায় কিছু বললে, ছেলেটা লোকটার একদম কাছে কানের কাছে কিছু একটা বলে, যা শুনে লোকটা ভয়ে কাঁপতে থাকে।
ছেলেটা একটা চেয়ার এনে বলে,
” স্যার এখানে বসুন আপনি? ছেলেটা পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
” ইয়াশ?
” জ্বী স্যার বলুন।
” বসে আছো কেন শুরু করো?
” ইয়েস স্যার বলে স্যার বলা ছেলেটা লোকটাকে ধরে আরেক টা রুমে নিয়ে যায়। বৃদ্ধ লোকটা এতটাই আতঙ্কে আছে যে কিছু বলবে তার ভাষা খুজে পাচ্ছে না। লোকটা এটা বুঝতে পারছে এখানে ভালো কিছু হবে না। তার জন্য খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে।
____________________
চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় শায়রা’র। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে প্রতিদিনের মতো আজও নিজের জন্য চা বানাতে চলে যায়। বানানো শেষ হলে নিজের রুমে চলে যায়। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া ওঠা চা খেতে থাকে। গরম কাপে আস্তে আস্তে চম্বুক দেয়। এভাবেই পুরো চা টা শেষ করে শায়রা। কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে শায়রা। তারপর চলে যায় ভাইয়ের কাছে।
সিফাত বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। দরজা ভিড়ানো। শায়রা গুটি গুটি পায়ে সিফাতের কাছে আসে। কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে সিফাত। শায়রা’র মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এসে ভড় করে। শায়রা মাথা চুলকে হেঁসে একদম পায়ের কাছে চলে যায়। ধীরে ধীরে পায়ের উপর থেকে কম্বল টা সরিয়ে দেয়। তারপর পায়ের নিচে সুরসুরি দেয়। সিফাত লাফ দিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে বলে,
” এই কে রে। আমার রুমে আসার সাহস তোকে কে দিয়েছে। সিফাত না দেখেই নিজের মতো করে বলতে থাকে।
সিফাতের কান্ড দেখে শায়রা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে। চোখ দিয়ে পানি পড়ে। শায়রা কে এভাবে হাসতে দেখে সিফাত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বোনের দিকে। সিফাত নিজের ভাবনা সাইডে রেখে বলে,
” বনু তুই আমাকে সুরসুরি দিচ্ছিলি। সবে একটু ঘুম আসছিল। তোর জন্য ঠিক করে ঘুমাতেও পারলাম না পরের কথা টা আস্তে বলায় শুনতে পায়নি শায়রা।
” ভাইয়া তুমি কি বিড়বিড় করছো?
” কিছু না। তুই আমার রুমে কেন? আর এত সকালে উঠেছিস কেন ঠান্ডা লেগে যাবে তো? এখনকার সময় ঠান্ডা লাগলে সারতে অনেক সময় লাগবে। শায়রা হালকা হেঁসে বলে,
” উফসসস ভাইয়া তুমি থামবে। আমার কিচ্ছু হবে না।
” না হলেই ভালো বনু। তুই ছাড়া আমার কে আছে বলতো।
” ভাইয়া তুমি এমন করে বলছো কেন? আমার খুব কষ্টে হবে কিন্তু? কোমড়ে এক হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে।
” সিফাত মৃদু স্বরে বলে, আচ্ছা বাদ দে। কেন আসছিস সেটা বল?
” ভাইয়া আজকে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে। অনেক দিন না কোথাও ঘুরা হয় না। তোমার মনে আছে লাস্ট কবে আমরা সবাই একসাথে কোথাও বের হয়েছেি বলতে বলতে শায়রা’র চোখে অশ্রু এসে জমা হয়।
সিফাত বিছানা থেকে নেমে এসে বোনের চোখের পানি মুছে বলে,
” কাঁদিস না বনু। তুই বল তুই কোথায় যেতে চাস। তোকে নিয়ে যাব সেখানে। শায়রা বলে,
” বেশি দুরে নয় ভাইয়া। কাছে কোথাও গেলেই হবে।
” ওকে মাই ডিয়ায় লিটিল সিস্টার। আপনি যা বলবেন তাই হবে মহারানি।
****
শায়রা’র আবদারে শায়রা কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে সিফাত। শায়রা মনের আনন্দে আজ ঘুরবে। নতুন বছরে নতুন শায়রা তৈরি হবে। সিফাতের বাইকের পিছনে বসে আছে শায়রা। অনেক্ষণ চলার পর শায়রা খেয়াল করে তাদের বাইকের পিছনে একটা বাইক আর তার পিছনে দুইটা গাড়ি। সেটা দেখে ঘাবড়ে যায় শায়রা। সিফাত বাইকের আয়নায় শায়রা’র ফেস দেখে বলে,
” বনু আর ইউ ওকে।
” হ্যাঁ ভাইয়া। বাট তোমাকে একটা কথা বলব।
” হ্যাঁ বল।
” আমি অনেক্ক্ষণ ধরে খেয়াল করছি আমরা যে দিকেই যাচ্ছি সেদিকেই ওই বাইক আর কার দুটো যাচ্ছে। আমার কেমন খটকা লাগছে ভাইয়া। সাথে খুব ভয় ও হচ্ছে।
” ধুর পাগলী। ভয় কিসের আমি আছি না। আমি থাকতে তোর কিচ্ছু হবে না। আর তুই যেটার কথা বলছিস। এমন তো হয়েই থাকে। রাস্তা ঘাটে এমনই হয়। হয়তো আমরা যেখানে যাচ্ছি তারাও সেখানে যাচ্ছে। নো প্যানিক বনু।
ভাইয়ের কথায় কিছুটা স্বস্তি বোধ করে শায়রা। মৃদু হেসে বলে, হ্যাঁ ভাইয়া তুমি ঠিকই বলছো।
_________
মিনিট দশেক পর পৌঁছে যায় নির্ধারিত জায়গায়। সুন্দর একটা পার্ক। পার্ক বললে ভুল হবে। জায়গাটা ফুলে ভরা। হরেকরকম ফুল। ফুল কে না ভালোবাসে! শায়রা’র গোলাপ ফুল খুব পছন্দ। এখানে সাদা কালো গোলাপি রঙের গোলাপ ফুল। শায়রা কয়েকটা ফুল ছিড়ে কানে গুজে নেয়। সেটা দেখে বলে,
” বনু ফুল গুলো ছিড়লি কেন? আমরা অন্য কোথা থেকে কিনতাম। গাছের মালিক কে না জানিয়ে ফুল ছেড়া ঠিক না।
” শায়রা নিজের ফুল বুজতে পেরে সরি বলে। আর ফুল গুলো ব্যাগে লুকিয়ে নেয়।
সারা বিকেল সন্ধ্যা ভাইয়ের সাথে ঘুরে। সন্ধ্যা সাতটায় বাসার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে সেখান থেকে।। পথে এসে দেখা হয় সেহরিশের সাথে। সিফাত বাইক থামিয়ে সেহরিশের কাছে যায়। দুজনে কিছু গোপন একটা আলোচনা করে। শায়রা শুনতে চাইলেও পারে না। কারণ কথা গুলো খুব আস্তে বলায় শুনতে পায়নি। শায়রা অতি আগ্রহ নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
চলবে ইনশা আল্লাহ
দেড়ি হওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমি খুব ব্যস্ত। ফোন ধরার সময় পর্যন্ত পাচ্ছি না।
রিচেক দেওয়া হয়নি।
[ ভুল ত্রুটির ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]