#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৪ ( রহস্য উন্মোচন )
সময় অদ্ভুত জিনিস। দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেছে। কিভাবে যে চোখের নিমিষেই মানুষ বদলে যায় বলা মুশকিল। আপনজনের বদলে যাওয়া মেনে নেওয়া খুব কঠিন। চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পরে সিফাতের। সিফাত হাতে কতগুলো ফাইল নিয়ে বসে আছে। তার পাশে একটা ছেলে নিশ্চুপ হয়ে সিফাতের দিকে তাকিয়ে আছে। সিফাত বিস্মিত হয়ে এখনো চেয়ে আছে একটা সাদা কাগজের দিকে। টাকা এমন একটা শব্দ যার জন্য মানুষ কিনা করছে। টাকার জন্য খারাপ পথ কেই বা কেন বেছে নেয় মানুষ? সৎ পথে কি টাকা উপার্জন করা যায় না। নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে সিফাত। চোখ মুখ শক্ত করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। কয়েক মিনিট অতিবাহিত হওয়ায় পর নিজেকে স্বাভাবিক করে উঠে দাড়ায় সিফাত। সিফাতের দাঁড়ানো দেখে সিফাতের পাশের ছেলেটা রকি তার নাম সে বলে,
” স্যার এখন কি করবেন?
সিফাত রকির দিকে তাকিয়ে ফের উপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
” যা করার তাই করতে হবে। অনেক হয়েছে আর না। এতদিন যা যা করছে তার মাশুল তো সবাইকে দিতেই হবে। কেউ ছাড় পাবে না। এতদিন আমার অপরিবর্তে যা ইচ্ছে নয় তাই করছে। আমি কখনো অন্যায় কে প্রশ্রয় দেই নাই আর দেবোও না। সিফাতের ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি। সিফাতে হাসে সমস্ত প্রমাণ সেগুলো রকির হাতে দিয়ে দেয়।
____________________________
শায়রা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেদিনের কথা ভাবছে। শায়রা চলে যায় সেদিনের সেই ঘটনায়।
ফ্লাশব্যাক~
সিফাত রাত একটাই বাসা থেকে বের হয়। অনেক রাত হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে পরছে। সেজন্য কোনো প্যারা না নিয়েই নিজের মতো আজও রুম থেকে বেড়িয়ে আসে। বাসা থেকে সোজা রাস্তায় চলে আসে।
শায়রা বেশ কয়েকদিন ধরে তার ভাই কে লক্ষ্য করে। ভাইয়ের অদ্ভুত আচরণ তার দৃষ্টিগোচর হয় না। আজ অনেক ভেবে চিন্তে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে শায়রা। আজ ভাইয়ের পিছু পিছু যানে। ভাই কি করে সেটা জানেই ছাড়বে। অতঃপর শায়রা বাসা থেকে টিপি সাড়ে বের হয়। শায়রা বাসার গেরেজ থেকে বাইক বের করে। সবাই গভীর ঘুমে আছে বিধায় বাইক বের করতে পারছে।। শায়রা আগে থেকেই বাইক চালাতে পারে। সিফাতই শায়রা কে বাইক চালানো শিখিয়েছে।
একটা কালো রঙের মাইক্রোগাড়ি এসে থামলে সিফাত সেটাই উঠে পরে। গাড়ি স্ট্যার্ট দিয়ে চলে যায়। শায়রা গাড়ির পিছু পিছু যেতে থাকে।
সিফাত গাড়িতে বসেই বাইক টাকে দেখে মুচকি হাসে। বাইক দেখেই সে চিনতে পারছে বাইকটা তার। তার থেকে তার বোনও কম যায় না। তার থেকে এক কাটি উপরে।
রকি লুকিং গ্লাসে তাদের গাড়িকে এক বাইক ফলো করছে দেখে বলে,
” স্যার একটা বাইক আমাদের কে ফলো করছে। বাইক টাকে উড়িয়ে দপব স্যার।
রকির কথা শুনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় সিফাত। সিফাতের তাকানো দেখে রকি শুকনো ঢোক গিলে আমতাআমতা করে বলে,
” স্যার।
” চুপ করো রকি। বাইকটাকে আসতে দাও। ওদিকে তোমার নজর না দিলেও চলবে। তোমার কাজ তুমি করো।
সিফাতের কথায় চুপসে যায় রকি। মিনিট কয়েক অতিবাহিত হওয়ার পর তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায়। সিফাত গাড়ি থেকে নেমে সোজা গোডাউনের ভিতরে ঢুকে পড়ে।
গোডাউন থেকে খানিকটা দুরে বাইক থামায় শায়রা। বাইকটা সাইড করে সামনে আগাতে থাকে। শায়রার পড়নে ব্ল্যাক টিশার্ট আর ব্ল্যাক জ্যাকেট। দুদিন আগে এটা কিনে আনছে। ভেবে মুচকি হাসে শায়রা। মুখে কালো মাক্স যাতে কেউ চিনতে না পারে। কিন্তু শায়রা তো আর জানে না সে যেভাবেই আসুক না কেন শায়রা কে চিনতে সিফাতের ভুল হয় না। শায়রা গোডাউনের সামনে এসে দাঁড়ায়।
এতটা পথ সাহস নিয়ে আসলেও এখন ভয় লাগছে শায়রার। তবুও ভয় কে জয় করতে হবে শায়রার। ভয় কে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ভিতরে ঢোকার জন্য অগ্রসর হয়।
গোডাউনের সামনে দুটো গার্ড পাহারা দিচ্ছে। শায়রা ভিতরে প্রবেশ করবে কিভাবে সেটাই ভাবছে। দাত দিয়ে নক কামড়াতে কামড়াতে একটা উপায় মাথায় আসে। শায়রা গোডাউনের সামনে থেকে সরে গিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে দাঁড়ায়। তারপর একটা ইট খুজে সেটা সামনে ছুড়ে মারে। পাহারায় থাকা গার্ড দুটো দৌড়ে সেখানে চলে যায়। শায়রা হেসে উঠে গোডাউনের ভিতরে ঢুকে পড়ে। প্রতিটা জায়গায় গার্ড দিচ্ছে। শায়রা ভেবে পাচ্ছে না তার ভাই কি করে। শায়রা বুদ্ধি খাটিয়ে প্রতিটা পদক্ষেপ খুব সাবধানে নেয়। প্রতিটা গার্ড কে বোকা বানিয়ে নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে যায় শায়রা।
সিফাত একটা চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। সামনের লোকটার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লোকটা মুখ বুঁজে আছে। সিফাত যা শুনছে তার একটা উত্তর ও দিচ্ছে না। সিফাত অনেক্ক্ষণ ধৈর্য ধরে থাকলের আর পারল না। রেগে রকি কে ইশারায় কিছু আনতে বলে। রকি সিফাতের ইশারা অনুযায়ী কিছু একটা নিয়ে আসে। সিফাতের ঠোঁটের কোনো হাসি। রকি একটা প্লাস নিয়ে এসে সিফাতের হাতে দেয়। সিফাত সেটা নিয়ে লোকটার হাতের একটা আঙুলের নক টান দিয়ে উপড়ে ফেলে। লোকটা গগনবিদারী চিৎকার করে ওঠে। রকি একটা রোমাল লোকটার মুখে পুরে দেয় যাতে বাইরে শব্দ বের না হয়।
শায়রার চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। মুখ চেপে ধরে আছে সে। ভাইয়ের একটা কথাও কানে আসছে না শায়রার।
সিফাত বলে, কি রে বলবি না। আমি যা বলছি তাই যদি না শুনিস তাহলে তোর যেটুকু বাঁচার চান্স ছিল সেটাও আর থাকবে না। এমন যন্ত্রণা দিয়ে মারব না জীবনে ভুলতে পারবি না। লোকটা ভয়ে কুকড়িয়ে যায়। দুচোখে পানি। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
” আমি সব বলব। তবুও আমাকে জানে মেরো না। আমি বাঁচতে চাই। পরিবারের সঙ্গে বাঁচতে চাই।
” এবার লাইনে আসেন। এতক্ষণ সহজ কথা বুঝতে পারছিলেন না। আমার কথা আগেই শুনলে এতটুকু কষ্ট পেতেন না। খামাকা তাচ্ছিল্যের হেসে। যাই হোক আমার হাতে সময় নেই। দ্রুত সব সত্যি বলে ফেলুন। লোকটা বলতে শুরু করে,
” আপনার বাবা মা কে মার্ডার করা হয়েছে? পরিকল্পিত ভাবে গাড়ি এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে। গাড়ি এক্সিডেন্টের পরও তারা দুজন বেচে ছিলেন বলে থেমে যান।
” তারপর কি হয়েছিল সবটা বলুন।
” তারপর গুন্ডা ভাড়া করে তাদেরকে জানে মেরে ফেলা হয়। লাশ গুম করে দেওয়া হয়।
” মার্ডার করছে কে? কে কে জড়িয়ে আছে এর সাথে।
” শুনলে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবে না তুমি। তোমার আপনজনেরই এই কাজ।
” সিফাত চোখ মুখ শক্ত করে বলে, আমি প্রস্তুত আছি আপনি বলুন। নিজেকে সব দিক থেকে তৈরি করে রেখেছি।
” তোমার চাচা আতিয়ার রহমান মেইন কার্লপিট। বলতে গেলে তিনিই এসবের মাস্টারমাইন্ড। তার বুদ্ধি তেই এসব করা হয়েছে।
” এর সাথে আর কে কে জড়িয়ে আছে।
” চেয়ারম্যান।
” কিসের জন্য এতকিছু।
” তোমার বাবা যেহেতু পেশায় সাংবাদিক ছিল। তিনি কিছু ডকুমেন্ট পেয়ে গিছিলেন। তোমার চাচা এসবের সাথে জড়িত আগে থেকেই। আমরা তো কয়েক বছর এসবের সাথে জড়িত হয়েছি। আগে জানলে কখনো এই পথে আসতাম। একবার যে এই কালো পথে আসবে সে চাইলে কখনো বের হতে পারবে না বলে ডুকরে কেঁদে উঠেন তিনি।
কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলেন, তিনি এমন অনেক ধরনের কাজ করেন। যেগুলো সবারই অজানা।
” যেমন-
” এমনকি মেয়ে পাচারের কাজ করেন। বিভিন্ন ড্রাকস পাচার করেন।
” আপনিও তো এর সাথে জড়িত আছেন।
লোকটা মাথা নিচু করে নেয়। ফের সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
” আমি করতে চাইনি। কিন্তু আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে, আমার পরিবারের ভয় দেখিয়ে আমাকে দিয়ে খারাপ কাজ করিয়েছে।
দুর থেকে লোকটা আর সিফাতের কথা স্পর্শ শুনতে পেয়ে ছুটে আসে শায়রা। এসে লোকটা কে এলোপাতাড়ি ভাবে থাপ্পড় মারতে থাকে।
হঠাৎ আকস্মিক আক্রমণে হতভম্ব হয়ে যায় সকলে। গোপন জায়গায় একটা মেয়েকে দেখে দুটো গার্ড এসে শায়রা কে ধরতে যায়। সিফাতের চিৎকারে ছিটকে দুরে সরে আসে তারা।
” স্টপ ইট। আর এক পাও আগাবে না। ও যা করছে তাই করতে দাও। গার্ড দুটো দুরে সরে দাড়ায়।
শায়রা থাপ্পড় মেরে মেরে ক্লান্ত হয়ে ধপ করে নিচে বসে হাউমাউ করে কান্না করে দেয়। সিফাত চেয়ার থেকে উঠে বোনকে আগলে নেয়। শায়রা কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হলে বলে,
” বনু বাসায় চল।
” শায়রা সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে, ভাইয়া চাচা আমাদের বাবা মা কে মেরে ফেলল। আমি তাদের কাউকে ছাড়ব না। সবাই নিজ হাতে শেষ করব।
” শান্ত হ বনু। তোকে কিছু করতে হবে না। যা করার আমি করব।
” ভাইয়া তুমি আসলে কে? এরা সবাই তোমাকে স্যার বলছে। তুমি কি কাজ করো?
শায়রার প্রশ্নে কিছুক্ষণ চুপ থেকে সিফাত বলে, বনু আমি যেটা করি সেটা কোনো খারাপ বা বেআইনি কাজ না। তুই নিশ্চিন্তে থাক। তোর ভাই এমন কোনো কাজ করবে না। যার জন্য পশ্তাতে হবে। আমার কথা না হয় সবার অজানায় থাক।
সিফাত গার্ডদের এখানে থাকতে বলে রুম থেকে শায়রা কে নিয়ে বেড়িয়ে আসে।
চলবে ইন শা আল্লাহ
রিচেক দেওয়া হয়নি।
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]