প্রেমে ডুবি পর্ব-১৫

0
27

#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৫

সকাল আটটা। ড্রয়িংরুমে বসে চা পান করছেন আতিয়ার রহমান। তখন কলিংবেলের শব্দ হয়। নিধি বাবার পাশে বসে নুডলস খাচ্ছিল। এই সকালে কে আসতে পারে ভেবে পায়না কেউ। আতিয়ার রহমান নিধিকে দরজা খুলতে বলে। নিধি বাবার কথায় দরজা খুলতে চলে যায়। দরজা খুলে দরজার সামনে পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যায়। পুলিশ কেন আসছে তাদের বাসায়। নিধির ভাবনার মাঝেই পুলিশ অফিসার বলে,

” ম্যাম আতিয়ার রহমান বাসায় আছেন।

” জ্বি স্যার। বাট আপনারা আমাদের বাসায় আসছেন কেন? কিছু কি হয়েছে?

” আমরা আতিয়ার রহমানের সাথে দেখা করতে চাই।

” আচ্ছা ভিতরে আসুন। নিধি দরজার সামনে থেকে সরে পুলিশ দের আসার সুযোগ করে দেয়। পুলিশ অফিসার ড্রয়িংরুমে এসে আতিয়ার রহমান কে সোফায় পান। নিজের বাড়িতে পুলিশ দেখে ঘাবড়ে যান তিনি। আমতাআমতা করে বলেন,

” স্যার আপনারা এখন এই সময়ে।

” জ্বি আমরা। আপনার নামে মামলা করা হয়েছে। ইউ আর আন্ডার এরেস্ট মিস্টার আতিয়ার রহমান। পুলিশের অভিযোগ শুনে আঁতকে ওঠেন আতিয়ার রহমান। তিনি অবাক হয়ে বলেন,

” এসব আপনি কি বলছেন অফিসার। আমার নামে কে মামলা করবে।

~ আমি করেছি মিস্টার আতিয়ার রহমান। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে সিফাত। সিফাতের পিছনে শায়রাও আছে। সিফাত ধীরে সুস্থে নিচে নেমে এসে চাচার সামনে দাঁড়ায়। আতিয়ার রহমান সিফাতের দিকে বিস্ময় নিয়ে এখনো তাকিয়ে আছে। তিনি বলেন,

” সিফাত বাবা তুই আমার নামে মামলা করছিস?

” শুধু আপনি নয় চাচা। আপনার সাথে কে বা কারা আছে তাদের সবার নামে।

” কিন্তু কেন করেছিস? কি করেছি আমি?

সিফাত তাচ্ছিল্যের হেসে বলে, সব ভুলে গেছেন চাচা নাকি ভুলে যাওয়ার অভিনয় করেছেন কোনটা হ্যা?

আতিয়ার রহমান শীতের মাঝেও ঘামছেন। তার কাছে সব কেমন ধোয়াশা লাগছে। তিনি ফের বলেন,

” আমি কিছুই বুঝতে পারছি না সিফাত। তুই কিসের কথা বলছিস।

” এনাফ ইজ এনাফ চাচা। আপনি আমার মা বাবা কে খু’ন করছেন। আমাদের দুই ভাই বোনকে এতিম বানিয়ে দিয়েছেন আপনি। আপনি মানুষ নন। আপনি একটা জানো’য়ার। আপনাকে চাচা বলে ডাকতেও ঘৃণা করে ঘৃণা। অফিসার আপনি ইনাকে নিয়ে যায়। সময় মতো সমস্ত এভিডেন্টস পেয়ে যাবেন।

শায়রা আতিয়ার রহমানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,

” আপনি আমাকে কম যন্ত্রণা দেননি চাচা। শুধু আপনি নন চাচিও কম যায় না। দিনের পর দিন আপনারা আমার উপর যে অত্যাচার করছেন সেটা আল্লাহ মেনে নেননি। আপনার পাপের ঘর পূর্ণ হয়ে গেছে। এবার বাকিটা জীবন জেলে পঁচে মরুন। আর হ্যা আরেকটা কথা নিধি আপু কে নিয়ে ভাববেন না। আপুর কোনো ক্ষতি আমরা হতে দেবো না। তবে আপনার স্ত্রী ‘র কথা বলতে পারছি না। অফিসার নিয়ে যান ইনাকে।

পুলিশ অফিসার আতিয়ার রহমানের হাতে হ্যান্ডক্যাপ পড়িয়ে তাকে নিয়ে চলে যান। তিনি যাওয়ার সময় অপলক ভাবে তাকিয়ে ছিলেন। নিধি ঘোরের মধ্যে চলে গেছে। মুখ দিয়ে টু শব্দ পর্যন্ত করেনি। জেসমিন বেগম শুধু কান্না করছেন। তিনিও কিছু বলতে পারছেন না।

________________________________

সেই ঘটনার আজ তিন দিন হয়ে গেছে। নিধি স্বাভাবিক হলেও জেসমিন বেগম স্বাভাবিক হতে পারেননি। তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে তবুও কিছু হচ্ছে না। দিন দিন তার পাগলামি বাড়ছে বই কমছে না। তাকে রুমের ভিতর বন্দি করে রাখা হয়েছে। মায়ের অবস্থা শোচনীয় দেখে নিধি আবার ভেঙে পড়েছে।

****

দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে শায়রা। মনটা বড্ড খারাপ তার। বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে।

শায়রা চোখ বুজে বলে ওঠে,

❝#প্রেমে_ডুবি রাত পার হয়ে,
স্বপ্নের স্রোতে ভেসে যাই দূরে,
তারার মিছিলে খুঁজি তোমাকে
হারিয়ে যাই এক নিরব আলোড়নে❞

শায়রা’র চোখের কার্নিশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে। শায়রা বিড়বিড় করে বলতে থাকে,

” আমার ভালোবাসার মানুষ গুলো কেন হারিয়ে যায় আল্লাহ। যাদেরকে আমি আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই তারাই আমার থেকে হারিয়ে যায়। ভালোবাসতে এখন ভয় লাগে আল্লাহ। তুমি আমার থেকে আমার প্রিয় মানুষ গুলো কে আর কেড়ে নিও না প্লিজ।

*****

সেহরিশ আর সিফাত দুজনে পাশাপাশি বসে আছে। সিফাত সামনের পুকুরের দিকে তাকিয়ে একটা ডিল ছুড়ে মেরে বলে,

” থ্যাঙ্কুউ সেহরিশ। তুই আমাকে অনেক সাহায্য করেছিস। তোর জন্য কাজটা আমার আরও সহজ হয়েছে। তুই যেভাবে লোক লাগিয়ে খুজতে সাহায্য করলি।

সেহরিশ মুচকি হেসে বলে,

” বন্ধুর বিপদে যদি সাহায্য না করতে পারি তাহলে আর বন্ধু হলাম কিভাবে উহু।

সিফাত সেহরিশ কে জড়িয়ে ধরে। সেহরিশ সিফাতের পিঠে হাত রেখে আসস্ত করে। সিফাত নিরবে চোখের পানি ফেলে। পুরুষ দের তো জোরে কাদতে হয় না। সেহরিশ বুজতে পারে সিফাতের খুব কষ্ট হচ্ছে। কিছুক্ষণ কাঁদলে সিফাতের হালকা লাগবে ভেবে কিছু বলে না।
সিফাত ডুকরে কেঁদে ওঠে বলে,

” তুই তো জানিস সেহরিশ তিন বছর আগে বাবা মায়ের সাথে অভিমান করে বাসা থেকে বেড়িয়ে আসছি। ঠিক তিন বছর পর বাসায় ফিরে যখন শুনি আমার বাবা মা আর পৃথিবীতে নেই। তখন একটা সন্তানের মধ্যে কি বয়ে যেতে পারে বল। তার দুনিয়া থমকে যায়। মাথার উপর থেকে বটগাছের মতো ছায়াটা সরে গেছে রে। আমি কিভাবে এই বোঝা নিয়ে বাচব বল। আমার যে বুক ফেটে যাচ্ছে। না কাউকে বলতে পারছি আর না নিজের ভিতরে চেপে রাখতে পারছি।

” নিজেকে শক্ত করে তোল এভাবে ভেঙে পড়লে তোর চলবে না। সামনে অনেক পথ যেতে হবে।

” হ্যা তুই ঠিক বলছিস। আমাকে ভেঙে পড়লে চলবে না। আমাকে বাঁচতে হবে। আমার বোনের জন্য। আমি ছাড়া যে আমার বোনের আর কেউ নেই।

” হ্যা শায়রা’র কথা ভেবে নিজেকে সামলা।

সেহরিশের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় সিফাত। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়। সিফাতকে বোঝাতে পেরে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে সেহরিশের।

মিনিট কয়েক দুজন চুপচাপ আছে। একটুপর সেহরিশ বলে,

” যাহ আমি তো বেমালুম ভুলে বসেছিলাম।

” কি?

” আরে মা তোকে আর শায়রা কে কাল যেতে বলছে।

” হঠাৎ কেন কিছু কি হয়েছে আন্টির কিংবা আঙ্কেলের।

” মা একদম ঠিক আছে আর বাবাও। কেন যেতে বলছে সেটা ভাই জানি না আমি। শুধু জানি যেতে বলছে মানে যেতে হবে। কোনো কথা নয় বন্ধু।

” ইন শা আল্লাহ আমি যাব। বাট বনুর কথা কিছু বলতে পারছি না। বনু হয়তো যেতে চাইবে না।

” কেন?

” আরে ওই ঘটনার জন্য। আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলতো।

” কি,

” পাত্রীর জায়গায় দুজন তো থাকতেই পারে এমন রিয়াক্ট করলি কেন? একজনের জায়গায় দুজন এখানে সমস্যা টা কোথায় বুঝলাম না ভাই। একটু খুলে বলবি আমাকে?

” আসলে সেদিনের ব্যাপারটার জন্য সরি। আমি বুঝতে পারি এমন রিয়াক্ট করে ফেলব। তুই তো জানিস মেয়েদের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। মা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে নিয়ে গেছে। অটোমেটিক মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি আর কন্ট্রোল করতে পারিনি। আর দেখে যেখানে পাত্রী দেখতে গেলাম সেটাই নাকি তোর বাড়ি। আর বোন দুটো তোরই। বিষয়টা ইন্টারেস্টিং তাই না বল।

” হ্যা বিষয় টা অন্যরকম।

” আচ্ছা বাসায় চল। সন্ধ্যা হয়ে আসলো।

” হ্যাঁ চল।

সিফাত সেহরিশ দু’জনে দুজনের বাসার উদ্দেশ্য রওনা হয়।

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]