#প্রেমে_ডুবি
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৬
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায় শায়রা’র । আড়মোড়া ছেড়ে বিছানা থেকে উঠে পরে। সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়। সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে এসে নামাজে দাঁড়ায়। ফজরের নামাজ শেষ করে আবারও কম্বলের নিচে চলে যায়। শায়রা নিয়ম মাফিক ফজরের আর ইশার নামাজ পরে। বাকি গুলোও পরে তবে সেগুলো মাঝে মাঝে কায়জা যায়। বাইরে প্রচুর কুয়াশা পড়ায় রুম থেকে বের হয়না। কম্বলের নিচে শুয়ে ফোন ঘাটতে থাকে।
***
সকাল গড়িয়ে বেলা দশটা বেজে গেছে। সিফাত শায়রা’র রুমে এসেছে। দেখে শায়রা ফোন স্কল করছে। সিফাত হালকা কেশে ওঠে বলে,
” বনু তোকে একটা কথা বলার ছিল।
শায়রা ফোনটা বিছানায় রেখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
” জ্বি ভাইয়া বলো।
” আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে পারবি।
” এমন করে বলছো কেন ভাইয়া? তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানেই যাব। বলো কোথায় যাবে।
” সেহরিশদের বাসায়। যাবি আমার সাথে। সিফাত কথাটা বলে শায়রার দিকে তাকিয়ে থাকে। সিফাতের কথায় শায়রা চুপ হয়ে যায়। ভেবে পায় না কি করবে। শায়রা কে নিশ্চুপ দেখে ফের বলে,
” বনু যাবি না।
শায়রা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে এখনো। তার ভাইটা যে অনেক আশা নিয়ে এসেছে ।
” ভাইয়া আসলে তুমি তো জানোই। ওখানে গেলে আমার অনেক অস্বস্তি হবে। ওনাদের সামনে নিজেকে অনেক ছোট মনে হবে। আর আঙ্কেল আন্টিই বা কি মনে করবেন বলো করুন কন্ঠে বলে।
” বনু আন্টিই তোকে নিয়ে যেতে বলছে। আর আগে যা হয়েছে সেটা ভুলে যা। অতিত কখনো মনে রাখতে নেই। বর্তমানে ফোকাস কর এতে তোর ভালো হবে ইন শা আল্লাহ ।
” ভাইয়া আন্টি আমাকে নিয়ে যেতে বলছে অবাক হয়ে।
” হ্যাঁ, সেহরিশ আমাকে তো তা-ই বলল।
” আচ্ছা আমি যাবো।
” ওকেহ তাহলে তৈরি হয়ে নে আমরা এখনই বের হবো।
” কি বলো ভাইয়া এখনই।
” হ্যা।
” কিন্তু নিধি আপু।
” ওকে নিয়ে ভাবিস না। আমি নিশাত কে আসতে বলছি।
” আচ্ছা ভাইয়া।
_______________________________
মির্জা ভিলা’র ড্রয়িংরুমে সোফায় গুটিশুটি মেরে চুপটি করে বসে আছে শায়রা। মিনিট পাচেক হয়েছে তারা এখানে এসেছে। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে সোফায় বসেছে তো বসেছেই। শায়রা’র আর নড়চড় নেই।
শায়রা’র পাশেই সিফাত বসে রফিক মির্জা’র সাথে কথা বলছে। অথচ এই অচেনা পরিবেশে শায়রা’র খুব আনইজি হচ্ছে।
সেহরিশ নিজের মতো ফোন দেখতে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে দু একটা কথায় হু হ্যা করে।
***
সরলতা মির্জা ট্রেতে করে নাস্তা নিয়ে আসে। শায়রা কে চুপ করে বসে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলে,
” শায়রা মা তুমি চুপ করে আছো কেন? এখানে থাকতে কি তোমার খারাপ লাগছে।
সরলতা মির্জা ‘র কথায় সকলে শায়রা’র দিকে তাকায়।
শায়রা মৃদু হেসে বলে, না না আন্টি আমি ঠিক আছি। আসলে,,
” বুঝতে পারছি মা। অচেনা পরিবেশে তোমার অস্বস্তি হচ্ছে।
” আসলে,
” থাক বলতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি। এগুলো খেয়ে নাও সবাই। শায়রা এক টুকরা আপেল নিয়ে খায়।
শায়রা এসেছে ঘন্টা দুয়েক হয়েছে। সরলতা মির্জা দুপুরের খাবার না খাইয়ে তাদের যেতে দিবেন না। দুপুরের খাবার খেয়ে শায়রা ছাদে চলে যায়। এক জায়গায় বসে থাকা তার দ্বারা সম্ভব না। তাই তো খাওয়া শেষ করেই সে ছাদে চলে এসেছে।
ছাদে এসে শায়রা পুরাই টাস্কি খেয়ে যায়। ছাদ জুড়ে হরেক রকম ফুল। এই বাড়িতে তো কোনো মেয়ে নেই তাহলে কে করতে পারে। সেহরিশ না তাকে দেখে তো মনেই হয় না সে ফুল চাষ করবে। আর আন্টি তার তো সংসারের কাজ করে এটার যত্ন নেওয়ার সময় পাবে না। আর থাকলো আঙ্কেল, আঙ্কেল তো অনেক বিজি মানুষ তার দ্বারা এটা সম্ভব নয়। তাহলে ধুর বা**ল সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। যে করে করুক গে আমার কি তাতে। আমার গোলাপ ফুল পছন্দ এখান থেকে কয়েকটা নি। শায়রা’র ফুল ছিড়তে গিয়ে মনে পরে ভাইয়ের কথা। গাছের মালিকের থেকে অনুমতি না নিয়ে ফুল ছেড়া অন্যায়। ধুর গোলাপ ফুল দেখলেই সেটা ছিড়ে কানে না গুজতে পারলে আমার ভাল্লাগে না। শায়রা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
” হে আল্লাহ এবারের মতো মাফ করে দিও।এমন আর হবে না। এটাই শেষ। বলে দুইটা গোলাপ ছিঁড়ে কানে গুজে নেয়। তারপরে আরও দুটো নেয় সেগুলো হাতে নিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসে।
শায়রা ফুলের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে নিচে নামে। শায়রা’র ফুলের দিকে এতটাই মগ্ন হয়ে আছে যে সামনে দিয়ে যে মানুষ যাচ্ছে সেটাও খেয়াল করে না। শায়রা সিড়ি থেকে নাচতে নাচতে নেমে এসে ধাক্কা খায় সেহরিশের সাথে। শায়রা আহহ করে শব্দ করে বলে,
” ওরে আল্লাহ রে আমার কোমড়টা গেলো রে। আমি আর হাটতে পারব না বলে গলা ছেড়ে কাদতে থাকে।
সেহরিশ নিচে পরে খুব ব্যথা পেয়েছে। তবে তার ব্যথার কথা বেমালুম ভুলে গেছে শায়রা’র কান্ড দেখে। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে শায়রা’র দিকে। সেহরিশের হুশ হতেই বলে,
” জাস্ট শাট আপ শায়রা। এভাবে শাড়ের মতো চেঁচাচ্ছো কেন? ব্যথা তো আমিও পেয়েছি।
” আমি কেন চুপ করব হ্যা। আপনার জন্য আমার কোমড়টা গেলো। চোখ কি কপালে নিয়ে হাটেন মশাই।
” সেহরিশ চোখ রাঙিয়ে শায়রা’র দিকে তাকায়। শায়রা চুপসে যায়। কোনো কথা না বলে ফ্লোর থেকে উঠে নিচে চলে যায়। কোমড়ে খুব ব্যথা পেয়েছে। শায়রা কোমড়ে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ড্রয়িংরুমে এসে সোফায় বসে। শায়রা কে খুরিয়ে খুরিয়ে আসতে দেখে বলে,
” শায়রা মা তোমার কি হয়েছে? তুমি এভাবে খুড়িয়ে হাটছো কেন?
” আসলে আন্টি খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে একটু ব্যথা পেয়েছি।
” তুই খাম্বা কোথায় পেলি বনু। এখানে তো কোথাও খাম্বা দেখতে পারছি না। সামনে সেহরিশকে দেখে সিফাত বলে, সেহরিশ তোদের বাসায় খাম্বা কোথা থেকে আসলো আগে তো কখনো দেখিনি।
” শায়রা মা তুমি এসব কি বলছো? আমাদের বাসায় খাম্বা আসলে কবে থেকে।
পরিস্থিতি অন্য দিকে চলে যাচ্ছে দেখে শায়রা বোকা হেসে বলে,
” আন্টি আমি মজা করছিলাম। আমাদের বাসায় খাম্বা কোথা থেকে আসবে বলুন। খাম্বা তো আমাদের সামনেই আছে সেটা শুধু আমি দেখতে পারছি আর কেউ না।
” বনু তোর মাথা ঠিক আছে। তুই কি বলছিস ভেবে বলছিস তো।
শায়রা জিভে কামড় খেয়ে বলে,
” সরি আবার মজা হয়ে গেলো। আমার কিছু হয়নি।
” তুমিও না মাখুব মজার মানুষ হেসে উঠে বলে সরলতা মির্জা।
সেহরিশ রেগে বোম হয়ে আছে। কিছু বলতেও পারছে না গা’র বিষ গায়ে সয়ে যাচ্ছে। সিফাত সেহরিশের দিকে তাকিয়ে বলে,
,” কি রে তোর আবার কি হলো তুই খাম্বার মতো দাড়ায় আছোস ক্যান।
সেহরিশ কে খাম্বা বলতে দেখে হেসে ওঠে শায়রা। পরমুহূর্তে সেহরিশের তাকানো দেখে চুপসে যায়।
সেহরিশ রাগি গলায় বলে,
” তুই ও খাম্বা বলছিস।
” চিল বন্ধু এভাবে রেগে যাস না। তোকে আবার কে খাম্বা বলছে রে।
কেউ না বলে সেহরিশ শব্দ করে সোফায় বসে পরে।
সিফাত বলে,
” আন্টি কি বলবেন বলছিলেন বলুন। এখন তো সবাই চলে আসছে।
” হ্যা বলছু। সরলতা মির্জা স্বামীর দিকে তাকান। রফিক মির্জা মাথা নেড়ে বলতে বলে। সরলতা মির্জা বলেন,
“সিফাত বাবা আমি একটস ডিসিশন নিয়েছি।
” কি ডিসিশন আন্টি কিছুটা অবাক হয়ে।
” আসলে সিফাত আমি চাই শায়রা কে আমার সেহরিশের বউ করতে। শুধু আমি না তোর আঙ্কেল ও এতে রাজি।
সেহরিশ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে,
” অসম্ভব!
মির্জা ভিলা’য় বিস্ফোরণের ন্যায় সরলতা মির্জার কথা ফেটে পরে। সিফাত নিজেও বিস্মিত হয়ে গেছে। শায়রা সেহরিশের দিকে তাকিয়ে আবার সরলতা মির্জার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।
চলবে ইন শা আল্লাহ
[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]