প্রেমে পরা বারণ পর্ব-০৯

0
37

#প্রেমে_পরা_বারণ
পর্ব -৯
#Nosrat_Monisha

নিজের বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর আজ আস্থা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেললো অর্ক। বাবার কাছে পাত্তা না পেয়ে বাড়ির সাথে লাগানো আমগাছ বেয়ে তিনতলায় নির্জনার ঘরের বেলকনিতে প্রবেশ করে। ঘটনাটা অতি সহজে কারও নজরে পরা ছাড়াই ঘটিয়ে ফেলে।সেই জন্যই ভাবনায় পরে যায়।
–আমি যদি এত সহজে এখানে চলে আসতে পারি তাহলে তো অন্য যে কেউই এখানে আসতে পারবে। না আমার বউ এখানে অনিরাপদ । তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের ঘরে ফেরত নিয়ে যেতে হবে।
এরপর সে ধীরে পায়ে ঘরে দিকে এগিয়ে যেতেই রেহানা আর নির্জনার কথোপকথন শুনতে পায়। রেহানার সাথে এ কয়দিনে নির্জনার সম্পর্কটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।
–আহা বউমা মন খারাপ করো না। আমি বলছি তো অর্ক স্যারকে বড় স্যার আসতে না করেছে তাই সে আসে নি।
নির্জনা মন খারাপ করে বলে,
–না আন্টি! আমার কেন জানি মনে হয় দস্যি ছেলে আমাকে পছন্দই করে না। নাহলে উনার যা দুষ্টু বুদ্ধি কোন না কোন উপায়ে এতক্ষণে চলে আসতো।

নির্জনার এই কথাতে অর্কর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে মনে মনে বলে,
–তার মানে আমার বউ এই কয়েকদিনেই আমাকে চিনে গেছে।
এদিকে রেহানা নির্জনাকে বুঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বলে,
–না গো মেয়ে তোমাকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। আমি যাই তোমার খাবারটা নিয়ে আসি।
–আমি খাবো না।
–রাতেও ভালো করে খাও নি এতো রক্ত ঝরেছে এখন যদি না খাও তবে পিটিয়ে খাওয়াবো।
বলে রেহানা বের হয়ে যায়। এদিকে নির্জনা মন খারাপ করে বলে,
–আমার দম বন্ধ লাগছে ।
এরপর সে একটু খোলা হাওয়ার জন্য বেলকুনির দিকে এগিয়ে যায় । দরজার কাছে যেতেই তার মাথাটা হালকা চক্কর দেয় অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে সামলাতে না পেরে সে মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে ধরে কিন্তু কেউ তাকে দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে নেয়। নির্জনা আবার পরে গিয়ে ব্যাথা পাবে এই ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয় কিন্তু নিজের কোমড়ে পুরুষালি শক্ত হাতের স্পর্শে চোখ খোলে দেখে অর্ক তার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। এমন দৃষ্টি যার কোন অতল নির্জন শত চেষ্টা করেও খুঁজে পাচ্ছে না।


তমিজউদদীন খন্দকার জাফর সিদ্দিকীকে ফোন করেছন। তিনি কোন প্রকার ভনিতা ছাড়াই বলেন,
–জাফর সাহেব। আমার ছেলে আপনার পুত্র বধূর সাথে একবার দেখা করতে চায়।
–ইম্পোসিবল।
–আমি সেটা জানি কিন্তু আমার ছেলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ছেলের বউয়ের সাথে দেখা করবে। তাই তাকে সাবধানে রাখবেন। সবচেয়ে ভালো হয় তার জন্য একটা বডিগার্ড রেখে দিন। আমি আমার ছেলেকে আর আটকাতে পারছি না।
–কিন্তু আপনি কথা দিয়েছিলেন খন্দকার সাহেব।
–আমার মনে আছে বলেই আমিও আপনাকে সাবধান করতে ফোন দিচ্ছি।
–কিন্তু এমনটাতো আপনার সাথে কথা ছিলো না।
–কথাতো অনেক কিছুই ছিলো না। এই যেমন মেয়েটার আপনার বাড়ির বউ হওয়ার কথা ছিলো না কিন্তু হয়েছে তো?

–দুটো ঘটনা এক নয় খন্দকার সাহেব। আমি আপনাকে বুঝয়িয়ে বলছি কেন আমি অর্কর সাথে নির্জনার বিয়ে দিয়েছি।

–প্রয়োজন নেই। আর আপনার সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করার জন্য আমি ফোনও করি নি। আপনি বলেছিলেন, পুলিশ কেস তুলে নিয়ে মেয়েটাকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিবেন, বিনিময়ে আপনার পার্টিকে আমি ইলেকশনে ফান্ড দিবো। ফান্ডতো আপনি পেয়েছেন কিন্তু মেয়েটা দূরে কোথাও সরে যায় নি বরং এতোটা কাছে আছে যে, আমার ছেলে যেকোনো মুহূর্তে তাকে কিডন্যাপ করতে পারে। তাই আপনাকে ফোন দেওয়া। রুহান এইটা করবেই কিন্তু সেটা আপনাকে এমনভাবে সামলাতে হবে যাতে লায়ন বা খন্দকারদের নাম খারাপ না হয়। আর যদি এমন হয় তবে ইলেকশনের আগে আপনাদের পার্টির এসব অবৈধ ফান্ডিংয়ের খোলাশা হয়ে যাবে। সেটা আপনার আর আপনাদের দলের জন্য খুব সুখকর হবে না।
বলে জাফর সিদ্দিকীকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তমিজউদদীন খন্দকার ফোন রেখে দেয়।
ফোন রেখে জাফর সিদ্দিকী তার পি. এস এর দিকে তাকিয়ে বলে,
–এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করো বেস্ট বডিগার্ড হায়ার করো, এজ সোন এজ পসিবল।


খাবার টেবিলে লাঞ্চ করতে এসে অর্ণব দেখে সেখানে শুধু ডা.প্রীতি বসে মনের সুখে লেগপিসের হাড্ডি চিবুচ্ছে। সে একজন মেইডকে জিজ্ঞেস করে বাকি সব কোথায়? মেইড উত্তর দেয় জাফর সিদ্দিকী পার্টি মেম্বারদের সাথে বাহিরে খাবে, আরশি সকালে বের হয়েছে এখনো ফিরে নি, নির্জনার খাবার রেহানা তৈরি করে রুমে নিয়ে যাবে আর অর্ক খাবে না বলে দিয়েছে।
সব শুনে অর্ণব বিরক্ত হয়ে টেবিলে বসে পরে। এদিকে ডা.প্রীতি একদম ভ্রূক্ষেপহীন হয়ে তখনো মনের সুখে হাড্ডি চিবুচ্ছে।
এবার অর্ণব দাঁত কটমট করে বলে,
– কারও সামনে বসে এভাবে রাক্ষুসের মতো হাড় চিবুতে হয় না আপনার কি বেসিক ম্যানারিজমটুকু নেই?
প্রীতি তার কথার কোন জবাব না দি বাটি থেকে আরেকটা লেগপিস তুলে সেটাতে কামড় বসায়।
–ম্যানারলেস আনওয়ান্টেড ফাউল পিপল।
কিন্তু তারপরও ডা.প্রীতি থেকে কোন জবাব না পেয়ে সে একটু অবাক হয়ে বলে,
–ডা. প্রীতি আমি আপনাকে কিছু বলছি।
এবার প্রীতি তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয় কিন্তু কোন প্রতিত্তোর করে না। এতে রাগে অর্ণবের গা জ্বলে যায়।
–কি হলো আেনি আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিচ্ছেন না কেন?

ডা. প্রীতি নির্লিপ্তভাবে একইভাবে লেগপিসটা খাওয়া শেষ করে চেয়ার থেকে উঠে অর্ণবকে কোনকিছু না বলে গেস্ট রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। সে যে অর্ণবকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে তা মাত্র বুঝতে পারলো অর্ণব। রাগে কটমট করে সে বলে,
–এম আই ইনভিজিবল টু হার? হাউ ডেয়ার সি ইগনোর মি লাইক দ্যাট।
–চলবে?