প্রেমে পরা বারণ পর্ব-১১+১২

0
149

#প্রেমে_পরা_বারণ
পর্ব -১১
#Nosrat_Monisha

–অর্ক!!
একরাশ বিষ্ময়ে রুহান সামনে থাকা মানুষটির দিকে তাকিয়ে থাকে।
অর্ক ঠোঁটের কোণের কৃত্রিম হাসিটা প্রসারিত করে বলে,,
–যাক চিনতে পেরেছো। আমি ভেবেছিলাম দশ বছর আগের কথা আমাকে মনে থাকবে না।

রুহান নিজের চোখ-মুখ শক্ত করে বলে,
–তুমি এখানে কি করছো?
–বলছি তার আগে এক মিনিট সময় দাও
বলে অর্ক নির্জনাকে রুহানের হাত থেকে হেঁচকা টানে নিজের দিকে এনে সে যেই চেয়ারে বসেছিলো সেখানে বসায়। সবকিছু এতো দ্রুততার সাথে ঘটে যে রুহান কিছু বুঝে উঠতে পারে না।

–নিজের বউকে পরপুরুষের বাহুতে দেখতে একদমই ভালো লাগছিলো না, শত হোক পুরুষ মানুষ বলে কথা। তাই বসিয়ে দিলাম। এবার ঠিক আছে।

রুহানের বিষ্ময় এখনো কাটছে না। অর্ক নির্জনাকে বউ বলায় সে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
– কে তোমার বউ?

অর্ক মাথা দুদিকে নাড়িয়ে মিথ্যা হতাশা হওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
–এই ব্রেইন নিয়ে তুমি লায়ন্স কি করে চালাও? আমার তো মনে হয় আমি এস.এস.সি পাশ না করেও আমার আইকিউ তোমার উপরে। ফর এক্সামপল তেমার গলা শুনেই আমি বুঝে গেছি, তুমিই আমার বউয়ের পিছনে পরে থাকা ওয়ান সাইডেড সাইকো লাভার, আর আমি এটাও বুঝতে পেরে গেছি আমার বাবা সত্য গোপন করেছেন আমাদের মিথ্যা বলেছেন সেই সাইকোটাকে তিনি জেলে পাঠিয়েছেন।
রুহান বুঝতে পারলেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
–তুমি নির্জনার হাসবেন্ড?
–বিংগ্যো।
–তুমি মিনিস্টার জাফর সিদ্দিকীর ছেলে?
–ইয়েস।
–আআআআ।
বলে হতাশায় নিজের চুলগুলো টেনে ধরে নিচে বসে পরলো রুহান।
অর্ক রুহানের এই হতাশা দেখে বেশ আনন্দ পাচ্ছে। তার পাশে খুব আয়েশ করে বসে খুব স্বাভাবিক গলায় বলে,
–এখনো স্মোক করো?
রুহান কোন কথা না বলে পকেট থেকে একটা বিদেশি সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার বের করে অর্কর দিকে এগিয়ে দেয়।
–এখনো ব্রান্ড চেঞ্জ করো নি দেখছি।
অর্ক একটা সিগারেট নিয়ে তাতে আগুন ধরায় আর রুহানও তাই করে। এরপর দুজনেই একসাথে সুখটান দেয়।
অর্ক ধোঁয়া ছেড়ে আপন মনে বলে,
–থ্যাংকস দশ বছর পর তোমার জন্য আবার স্মোক করছি। ভাইয়ার কাছে ধরা পরে যাবো সেই ভয়ে স্মোক বাদ দিতে হয়েছে।

এদিকো রুহানের লোকলস্কর অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এর মধ্যে দুটো অপেক্ষাকৃত কম বয়সী ছেলে ফিসফিস করছে। এদের মধ্যে একজন বলে,
–স্যার কি বিড়ি খাওয়ার জন্য এদের কিডন্যাপ করাইছে।
অন্য ছেলেটিও ফিসফিস করে জবাব দেয়,
–কি জানি?করতেও পারে। বড়লোকদের বড়লোকি কাম-কাজ। এমন হইতেই পারে একা একা বিড়ি খাইতে ভালল্লাগতে ছিলো না তাই কিডন্যাপ করে সঙ্গী আনছে। একা একা বিড়ি খাওয়া অনেক কষ্টের, যখন ইদে বাড়ি যাই তখন বুঝতে পারি।

এদিকে সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কিছুক্ষণ পরই রুহানের হতাশাগ্রস্থ চাহনি বদলে যায়। সে নিজের চোখ-মুখ শয়তানি প্রকাশ করে বলে,
–তারমানে তুমি এখনো পাগল সেজে আছো?
চোখে ইশারা করে অর্ক হ্যাঁ বলে।
রুহান এবার ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করে বলে,
– লন্ডনের মেন্টাল হসপিটালের দিনগুলো অনেক মিস করতাম বলে। তাই লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষ করে ফিরে তোমাকে অনেক খুঁজেছি।কিন্তু ভাবিনি দশ বছর পর এভাবে তোমার দেখা পাবো।
–আমিও ভাবি নি, নিজের যে বন্ধুকে নিয়ে আমার এতো গর্ব ছিলো সে আজ সম্পূর্ণ সাইকোপ্যাথ। তোমার কাছে তো সবই ছিলো রুহান তবে নিজের জীবনটা এভাবে কেন নষ্ট করলে?
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নির্জনার দিকে ইশারা করে রুহান বলে,
–এই মেয়েটার জন্য। তুমি জানো, আমি এই সাতাশ বছরের জীবনে শুধু এই মেয়েটার কাছে একটু ভালবাসা চেয়েছিলাম কিন্তু সে আমাকে শুধু ভয় পেয়ে গেছে আর ঘৃণা করে গেছে।

হতাশ হয়ে অর্ক বলে,
–রুহান তুমি ভাবতেও পারবে না , আমি গতরাতেই আমি ভাবছিলাম নির্জনার সাথে তোমার মতো পারফেক্ট কাউকে মানাবে। তাই-তো তোমার সাথে নির্জনাকে সেটেল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আয়রনি দেখো, নির্জনা তোমাকে বিয়ে করবে না বলে, আমি কখনো সুস্থ হবো না জেনেও আমার মতো পাগলকে বিয়ে নিলো।

অর্কর কথা শুনে রুহানের চোখ-মুখে আনন্দের ঝলক দেখা যায়,
–সত্যি তুমি নির্জনার সাথে আমাকে সেটেল করবে?
সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে অর্ক বলে,
–কথা ভালো করে সম্পূর্ণটা শুনে তারপর হ্যাপি হও। আমি বলেছি আমি করতে চেয়েছিলাম। করবো বলি নি।
ভ্রুকুঞ্চন করে রুহান বলে,
–মানে?
আর ভ্রুক্ষেপহীন হয়ে অর্ক বলে,
–মানে সিম্পল, আমি আমার আগের বন্ধু মি.পারফেক্ট রুহান খন্দকারকে নির্জনার সঙ্গী হিসেবে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তো সাইকোপ্যাথ। আর যাই হোক জেনেশুনে তোমার মতো পাগলের হাতে নির্জনার মতো ভালো মেয়েকে তুলে দিতে পারি না।

–পাগল হা হা হা। (রুম কাঁপিয়ে হাসে ) হ্যাঁ আমি পাগল কিন্তু এর জন্য কে দায়ী? এই মেয়েটা। কি নেই আমার মাঝে? একটু ভালোবাসলে কি হতো?

অর্ক খুব স্বাভাবিক গলায় বলে,
–তোমার মধ্যে সবই আছে শুধু ভালোবাসার মানে বুঝার ক্ষমতা নেই। ভালোবাসা মানে কাউকে কোর করে নিজের অধীনে রাখা না, কারও উপর অধিকার খাটানো না, জবরদস্তি করা না, ভালবাসা একটা সাধনা। ভালবাসার মানুষকে সুখে দেখে নিজে সুখে থাকা। তাকে হাসতে দেখে নিজের প্রাণ জুড়িয়ে নেওয়া, তাকে কাঁদতে দেখে নিজের অন্তরাত্মাকে বিষাদে ভরিয়ে তোলা।
তুমি ভালোবাসতে জানো না৷ যদি জানতে তবে আজ নির্জনা এখানে অজ্ঞান হয়ে পরে থাকতো না, সে থাকতো তার সেই প্রেমিকের সাথে। সুখের সংসার করতো।

তীব্র প্রতিবাদ করে রুহান বলে,
–আমার ভালোবাসা রিজেক্ট করে একটা ভেগাব্যান্ডকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলো আমি সেটা কি করে হতে দিতাম?

–কারণ সে তাকে ভালবাসতো (কথাটা বলতে খারাপ লাগলেও অর্ক বলে) ইনফ্যাক্ট এখনও বাসে। তুমি দুটো ভালোবাসার মানুষকে আলাদা করে দিয়েছো।

দাঁত কটমট করে বলে,
–হ্যাঁ দিয়েছি। কারণ এসব স্যাকরিফাইস, মহানতার মতো ন্যাকামি আমার দ্বারা হয় না। তাই আমি যাকে আমি ভালবেসেছি তাকে পেতে চেয়েছি। এটা কি অন্যায়?

–সেটা কি তুমি জানো না?নির্জনাকে পাওয়ার নেশাতে তুমি অনেকগুলো জীবন নষ্ট করেছো সাথে সাথে নিজের জীবনও।

–ইউ আর রাইট আমার সাজানো জীবনটা নির্জনার ভালবাসার জন্য আমি তছনছ করে দিয়েছি। এখন আমার তাকে চাই। যেকোন মূল্যে। তুমি আমার বন্ধু তাই তোমাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি নির্জনাকে আমার হাতে তুলে দিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে নাও।
এবার অর্ক সিগারেটের আগুনটা নিভিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলে,
– বন্ধু বলেই বলছি,নির্জনাকে ভুলে যাও। এখনো সময় আছে নিজের জীবনটা গুছিয়ে নাও।

–ভুলে যাওয়ার কথা তারাই বলে যারা ভালবাসতে জানে না। নির্জনা আমার রক্তবিন্দুতে মিশে আছে। তাই তাকে তো আমি কিছুতেই ভুলতে পারবো না। বরং আমি এটা ভুলে যাই তুমি আমার বন্ধু।
তাচ্ছিল্যের সাথে কথাগুলো বলে সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে রুহানও উঠে দাঁড়ায়।

–এজ ইউ উইশ।
বলে অর্কও এবার রুহানের মুখোমুখি আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দাঁড়ায়।


আরশি আর ডা. প্রীতি জেহরা মঞ্জিলের দ্বারে পা রাখতে না রাখতেই অর্ণবের হুংকার শুনতে পায়। সে মেইডদের সাথে চিৎকার করছে।
–এতোগুলো লোক আমি ঘাস খাওয়ানোর জন্য রাখছি। সবগুলোকে আজই ফায়ার করে দিবো। (রেহানাকে উদ্দেশ্য করে) এই যে আপনি শুনেছিলাম বয়সের সাথে সাথে জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়ে কিন্তু আপনার তো সেগুলো লোপ পেয়েছে। দয়া করে কাজে রেখেছি, সম্মান দিয়েছি আর আপনিই আমাদের এতো বড়ো ক্ষতি করেছেন? সত্যি করে বলুন তো এসবে আপনার হাত নেই তো?

রেহানার চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরছে। তার হাতেই সিদ্দিক বাড়ির তিন ছেলেমেয়ে বড়ো হয়েছে, ভুল-ত্রুটি যে একে বারেই হয়নি তা নয়। কিন্তু তিনি কখনোই তাদের খারাপ চান নি। জাফর সিদ্দিকী আজ অব্দি তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলেন নি। সেখানে অর্ণব; না, সেই জন্য তিনি কাঁদছেন না, তিনি তো কাঁদছেন অর্ক আর নির্জনার জন্য। এক অজানা আশঙ্কা তাকে ঘিরে ধরেছে, তাঁর একটা ছোট্ট ভুলে না জানি ছেলে-মেয়ে দুটো কোন বিপদে পরেছে।

ডা.প্রীতি এসে একরকম আগলে ধরে রেহানাকে। অর্ণবকে ধমকের স্বরে বলে,
–আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? মায়ের বয়সী একজন ভদ্রমহিলার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানেন না? গতদিন তো আমাকে খুব ম্যানারিজম শিখাচ্ছেলেন, এখন নিজের ম্যানার্স কি কোথাও বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন?

ডা.প্রীতির কথায় হুংকার দিয়ে উঠে অর্ণব,
–ডোন্ট ইউ ডেয়ার ডা.প্রীতি! আমার ফ্যামিলি ম্যাটারে একদম ইন্টারফেয়ার করবেন না। আমার ধারণাই ঠিক ছিলো, আপনি ডা. হিসেবে দায়িত্ব জ্ঞানহীন। আজকের জন্য আপনিও দায়ী। আপনাকে রাখা হয়েছে চব্বিশ ঘণ্টা আমার ভাইয়ের দেখভাল করার জন্য। কিন্তু সেটা না করে আপনি কোন সাহসে শপিং করতে গেছেন? এর নাহয় দায়িত্ববোধ নেই(আরশিকে উদ্দেশ্য করে) তোমার কি হয়েছে? নিজের ভাইকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলে।

অর্ণবের হুংকারে আরশি এতোটাই ভয় পেয়ে গেছে যে সে কোন আওয়াজে বের করতে পারছে না। এদিকে ডা. প্রীতি অর্ণবের এমন ব্যবহারের পরও শান্ত থাকার চেষ্টা করছে। সে চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা বোঝার চেষ্টা করলো। কিন্তু সবার চিন্তিত মুখ আর জাফর সিদ্দিকীর অস্থির হয়ে কাউকে ফোন করা ব্যাতীত আর কোন কিছুই চোখে পরলো না। সে জাফর সিদ্দিকীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
–আঙ্কেল কি হয়েছে?

জাফর সিদ্দিকী হতাশ গলায় বলেন,
–তোমার উপর ভরসা করা আমার ভুল হয়েছে। আমার ছেলে শেকলে বন্দি ছিলো তবুও আমার চোখের সামনে ছিলো। কিন্তু তুমি তো তাকে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করলে। আমারই ভুল সেদিন যদি অর্ণবের কথা শুনে তোমাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতাম তবে আজ আমার এই দিন দেখতে হতো না।

যত কিছুই হয়ে যাক না কেন জাফর সিদ্দিকী কখনোই ডা.প্রীতির উপর থেকে ভরসা হারায় না কিন্তু আজ তার এমন কথায় ডা.প্রীতি আঘাত পেলো। তবে আঘাতের চেয়ে বেশি ভয় পেয়েছে অর্ক ঠিক আছে তো? আর নির্জনা সে-ই বা কোথায়?

তখনই একজন পুলিশ অফিসার বাড়িতে প্রবেশ করে বলে,
–স্যার কিডন্যাপ হয়েছে এটা কনফার্ম কিন্তু কে বা কারা কেন করেছে সেটা জানা যাচ্ছে না। এমনকি গাড়িরও কোন হদিস নেই। তবে স্যার আমার ধারণা

পুলিশ অফিসারকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে অর্ণব চিৎকার করে উঠে,
–আপনার ধারণা দিয়ে আমি কি করবো? আমার ভাই, ভাইয়ের বউ কিডন্যাপ হয়েছে দু’ঘন্টা হতে চললো আর এখনো আপনারা গাড়িটা খুঁজে বার করতে পারেন নি। এসেছেন স্টুপিডের মতো নিজের পারসনাল মতামত দিতে। ব্লাডি ইউজলেস ফুল সব। আমার ভাইকে আমি নিজেই খুঁজে বের করবো।
বলে সে তার সাথে থাকা তার দলের একটা ছেলেকে ইশারা করে,
–যা মিরাজকে গিয়ে বল সব সিসিটিভি গুলো দেখে গাড়ির লোকেশন ট্রেস করতে।

সেই মুহূর্তে জাফর সিদ্দিকীর ফোনে একটা এসএমএস আসে। তিনি অর্ণবকে থামিয়ে বলেন,
–কাউকে কোথাও যেতে হবে না। অর্ক আর নির্জনাকে আমি ফিরিয়ে আনছি।

অর্ণব উত্তেজিত হয়ে বলে,
–বাবা রেন্ডস্যাম কল কি চলে এসেছে? তুমি লোকেশনটা আমাকে দাও। আজ সব কয়টাকে খুন করবো। ইফতেখার অর্ণব সিদ্দিকীর পরিবারের দিকে হাত বাড়ানোর কি ভয়াবহ পরিণাম হতে পারে তা আমি ওদের বুঝিয়ে দিবো।

এই ভয়টাই জাফর সিদ্দিকী পাচ্ছেন তার বড় ছেলে যদি জানতে পারে রুহান এই কাজ করেছে তবে খন্দকারদের বিরুদ্ধে যাবে। যার ফলস্বরূপ তিনি সন্তান, সম্মান, ক্ষমতা সবই হারাবেন। তাই তিনি অর্ণবকে ধমকের স্বরে বলেন,
–কাউকে কিচ্ছু বোঝাতে হবে না তোমার। আমি যখন বলেছি আমিই যাবো।
এরপর তিনি বের হয়ে দরজার কাছাকাছি পৌঁছে ঘুরে দাঁড়িয়ে অর্ণবকে সতর্ক করে বলেন,
–ডোন্ট ফলো মি। আমি যদি জানতে পারি তুমি বা তোমার কোন সাঙ্গ-পাঙ্গ আমাকে ফলো করছে তবে নিজের বাবাকে তুমি চিরদিনের জন্য হারাবে।

জাফর সিদ্দিকী বেরিয়ে যেতেই ডা.প্রীতি অর্ণবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে,
–বয়স্ক মানুষটার সাথে খারাপ ব্যবহারের আগে, আমাকে প্রশ্ন করার আগে, নিজের বাবার সাথে কথা বলুন। উনাকে জিজ্ঞেস করুন তিনি কি লুকাচ্ছেন ?

–চলবে

#প্রেমে_পরা_বারণ
পর্ব -১২
#Nosrat_Monisha

–নিজের বাবার সাথে কথা বলুন। উনাকে জিজ্ঞেস করুন তিনি কি লুকাচ্ছেন ?
ডা. প্রীতির কথা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে অর্ণব।
–আপনি কি বলতে চাইছেন?
ডা.প্রীতি ঠোঁটের কোণে একটা বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলে,
–আপনার ভাই আর ভাইয়ের বউ কিডন্যাপ হয়েছে। তাদের খোঁজ পাওয়া গেছে। কিন্তু আপনার বাবা সেই ব্যাপারে, না পুলিশকে জানিয়েছেন, না আপনাকে কিছু বলতে চাইছেন। আপনার কাছে এই ব্যাপারটা খটকা লাগছে না?
অর্ণব নিশ্চুপ।
ডা.প্রীতি আবার বলে,
–আমি শপিং করতে যাই নি আই হোপ আপনার মনে আছে কন্ট্রাক্টে লেখা ছিলো আমি এভরি মান্থের সাত তারিখ বাড়ি যাবো। সেদিন আপনি বা বাড়ির যে কেউ পেশেন্টের সাথে থাকবেন। আজ আরশির মাস্টার্স ভর্তি লাস্ট ডেট ছিলো। গত দুই দিন যাবত আপনাকে বলে বলে সে টায়ার্ড তাই আজ আমাকে বলেছে একটু সাথে যেতে । আমি নিজের বাড়ি যাওয়া রেখে তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আপনার দায়িত্ব জ্ঞান অনেক বেশি তাই একটা দিন নিজের ভাইকে সামলে নিবেন। কিন্তু(তাচ্ছিল্যের সাথে) আপনি তো মেয়েদের সাথে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। আর একটা কথা, যাইহোক না কেন অর্ক সুস্থ না হওয়া অব্দি আমি কোথাও যাবো না৷
কথাগুলো বলে ধুপধাপ পা ফেলে গেস্ট রুমে চলে যায়।
অর্ণব রাগে গমগম করে আরশির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–আজকে লাস্ট ডেট ছিলো?
আরশি মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাতেই অর্ণবের মেজাজটা আরও খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কোন বাক্যব্যয় না করে সে নিজের রুমে চলে যায়। আরশি সেখানে দাঁড়িয়েই রেহানার কাছে সম্পূর্ণ ঘটনার বর্ণনা শুনতে থাকে।

অর্ণব ঘরে গিয়ে তার সাথের এক ছেলেকে ফোন দিয়ে বলে,
–তোদের বলেছিলাম না? কোন ছবি যাতে কেউ পোস্ট না করে, সেই খেয়াল রাখতে। তাহলে আজকের ছবি কি করে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলো?

–ভাই আমি তো চেষ্টা করেছি, কিন্তু ঐ মেয়েটা আপনার সাথে তোলা একটা সেলফি কোন ফাঁকে তার বান্ধবীকে দিয়ে দেয়, আমরা কেউ তা বুঝতে পারি নি। আর সেই বান্ধবীই ছবিটা আপলোড করে। ছবিতে আপনি থাকায় মুহূর্তে সেটা ভাইরাল হয়ে যায় । ভাই আমাদের কোন দোষ নেই । আমি ছবিটা সোস্যাল মিডিয়া থেকে নামানোর চেষ্টা করছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজ হয়ে যাবে।
–আজকের পর যদি এমন কিছু ঘটে তোদের একেকটাকে ধরে আমি কুরবানি করে দিবো।
অপর পাশ থেকে ছেলেটি ভয়ে ভয়ে বলে,
–ভাই আপনি নিশ্চিত থাকেন, এই ভুল আর কখনো হবে না।


–তোমার কেন মনে হলো আমি তোমার সাথে ফাইটের মুডে আছি?
রুহানের প্রশ্নে কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায় অর্ক। সে ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করবে তার আগেই রুহান তার লোকজনদের দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত ভারী গলায় বলে,
–কিরে তোদের কি দাওয়াত দিতে হবে? এটাকে ঠিক মতো সাইজ কর।

তখন সেই কমবয়সী ছেলে দুটো আবার ফিসফিস করে। প্রথম ছেলেটা আশাহত গলায় বলে উঠে,
–কই ভাবলাম বন্ধু যখন শত্রু সিনেমার মতো দুই বন্ধুর মারামারি দেখবো এখন দেখি নিজেদের যাইতে হবে।
দ্বিতীয় ছেলেটা বলে,
–তা-যা বলেছিস দু-দন্ড শান্তি নেই। (নির্জনার দিকে তাকিয়ে) আরে ঐদিকে ম্যাডামকে দেখ। কি সুন্দর সেই যে জ্ঞান হারালো এখনো উঠছে না।

তাদের কথার মাঝখানে আরেকজন এসে বলে,
–আরে উনি স্লিপিং বিউটি। হিরো এসে না জাগালে, ভূমিকম্প হয়ে গেলেও অজ্ঞান থাকবে। এখন গপ্প বন্ধ করে কাজে চল।

অর্ককে চারিদিক থেকে সবাই ঘিরে ফেলেছে। প্রথমে অর্ক লড়াইটা ভালো করলেও পরবর্তীতে এতোজনের সাথে একা কিছুতেই পেরে উঠে না। একসময় রুহান নির্জনার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে অর্ক চিৎকার করে বলে,
–রুহান ডোন্ট ইউ ডেয়ার টাচ হার। তুমি নির্জনাকে ডিজার্ভ করো না।
এই কথা শুনে রুহানও পাল্টা চিৎকার করে বলে,
–তাহলে কে ওকে ডিজার্ভ করে? বিহানের মতো ভ্যাগাবন্ড নাকি তোমার মতো টেন ফেইল মিনিস্টারের ছেলে?এই পৃথিবীতে নির্জনাকে যদি সত্যি কেউ ডিজার্ভ করে তবে সেটা হলাম আমি রুহান খন্দকার। এই তোরা এটাকে ভালো করে মেরে বস্তায় প্যাকেট কর।

এবার রুহানের লোকজন তাদের গতি বাড়িয়ে দেয়।
অর্কর ফর্সা দেহটা নিমিষে রক্তাক্ত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে তার লালচে চুলগুলোও রক্তে ভিজে উঠে। অর্ক অজ্ঞান হয়ে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে সুঠামদেহী সুদর্শন এক শ্যাম পুরুষের আবির্ভাব ঘটে। সে এতো দ্রুত রুহানের সকল সাঙ্গ-পাঙ্গকে ধরাশায়ী করে যে রুহান কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। আগন্তুক রুহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার উপর একটা কিছু স্প্রে করতেই সে মাটিতে লুটিয়ে পরে।
অতঃপর আগন্তুকটি অর্ককে তুলে এককোণায় নির্জনার পাশে বসায় এবং সে নির্জনার চোখেমুখে পানির ঝাপটা দেয়। সাথে সাথে নির্জনা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়।
নির্জনাকে চোখ মেলতে দেখেই শ্যাম পুরুষটি বলে উঠে,
–হ্যালো, ম্যাম। আমি মাহের হুদা আপনার বডিগার্ড।

–চলবে?

বিঃদ্রঃ বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।