#প্রেমে_পরা_বারণ
#Nosrat_Monisha
পর্ব-২২
প্রচন্ড ক্রোধে অর্ক চিৎকার করে বলে যাকে,
– তুমি যাকে বিহান সাজিয়ে আমার আর নির্জনার মাঝখানে পাঠিয়েছো।
অর্কর চিৎকারে হা হা করে ঘর কাঁপিয়ে হাসলো রুহান। রুহানের এই হাসি অর্কর অন্তর কাঁপয়ে দিলো।
– হি ইজ বিহান। নির্জনার প্রেমিক । এটাই একমাত্র সত্য।
রুহানের জবাবে অর্ক চুপ হয়ে গেলো। কারণ সে এটা বুঝতে পারছে রুহান এ ব্যাপারে সত্যি বলছে।
অর্ককে চুপ থাকতে দেখে রুহান প্রশ্ন করে,
–আর কিছু জানার আছে?
–কি চাও তুমি?
খুব স্বাভাবিক গলায় রুহান উত্তর দেয়,
–আগে যা চাইতাম এখনো তা-ই চাই। নির্জনা!
–রুহান! মুখ সামলে কথা বলো সি ইজ মাই ওয়াইফ।
–কিন্তু বিয়েটা তো জোর করে হয়েছে তাই না? অর্ক লেট মি ক্লিয়ার মাই সেলফ, নির্জনা যদি বিহানের কাছে ফিরে যেতে চায় তাহলে আমি কখনোই তার দিকে ফিরে তাকাবো না। কিন্তু সে যদি তোমার সাথে সংসার করতে চায়
রুহানের কথার মাঝখানে অর্ক জিজ্ঞেস করে,
–তাহলে কি করবে তুমি?
ডান হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটা হাতের মুষ্টিতে মুচরে ধরে রুহান বলে,
– তাহলে এতদিন যা করিনি সেটাই করব। আই উইল ফোর্স হার। বিহানের কাছে ফিরে গেলে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু বিহানকে ভুলে যদি সে তোমাকে ভালবাসতে পারে তবে সে তোমাকে ভুলে আমাকেও ভালবাসতে পারবে। আমি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। এ্যাট এনি কস্ট।
অর্ক চোখের সামনে কিছুক্ষণ আগের দৃশ্য ভেসে ওঠে। যখন সে পানি খাওয়ার জন্য ঘরের বাইরে গিয়ে দেখে বিহান আর নির্জনা একে অপরের সাথে হেসে কথা বলছে। শুধু তাই নয় বিহান নির্জনার এলোমেলো চুলগুলো আলতোভাবে সরিয়ে দিচ্ছে।
তাচ্ছিল্যের সাথে অর্ক বলে,
–Nirjona doesn’t love me. She still loves him.
–Are you hurt Orko?
রুহানের প্রশ্নে অর্ক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
–না আমি হার্ট কেন হবো? আমার বউ এখনো তার প্রেমিককে ভালোবাসে, তা নিয়ে বউয়ের সাইকো ওয়ান সাইডেড লাভারের সাথে মাঝরাতে ডিসকাস করছি, আমার কতো আনন্দের দিন। বিশ্বাস করো খুশিতে আমার ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছা করতেছে।
রুহান অর্কর কষ্টটা বুঝতে পারে।
–আই ক্যান ফিল ইউ ব্রো। ভালোবাসার জন্য ত্যাগ, অন্যের হাতে তুলে দেওয়া এগুলো বলা যত সহজ রিয়েলিটি ততটাই কঠিন। ভালবাসার মানুষের ভালোর জন্য কেউ নিজের ভালবাসাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারেনা।
–আমি যদি তোমাকে ভুল প্রমাণ করতে পারি?
–তাহলে আমি নির্জনার জীবন থেকে সরে যাবো।
–কথা দিচ্ছো?
–হ্যাঁ কথা দিলাম নিজের ভালোবাসাকে ভুলে নির্জনাকে বিহানের হাতে তুলে দাও তবে আমি রুহান খন্দকার কোনদিন নির্জনার ভাল থাকায় বাঁধা হয়ে দাড়াবো না। কিন্তু তুমি যদি ভাবো নির্জনার সাথে তুমি সুখে সংসার করবে তবে আমি শুধু তোমাকে আর নির্জনাকে না তোমার পুরো ফ্যামিলিকে ধ্বংস করে দিবো। যে ফ্যামিলির ভালোর জন্য তুমি পনের বছর পাগল সেজে ছিলে তুমি ভাবতেও পারবে না তোমার সেই ফ্যামিলর আমি কি হাল করবো। তোমার ফ্যামিলির এক একেকটা পারসন একটু ভালো থাকার জন্য ছটফট করবে কিন্তু পারবে না। তাই নির্জনাকে নিজের করে নেওয়ার আগে দুবার ভাববে।
অর্ক খুব স্বাভাবিক গলায় বলে,
–তোমার কোন হুমকি কে আমি ভয় পাই না। নির্জনা যদি আমাকে ভালবাসতো তাহলে তোমার এই হুমকি-ধমকিতে আমি পিছিয়ে যেতাম না, কিন্তু ব্রো আমার কপাল খারাপ। আর একটা কথা তুমি প্রীতির জীবনটা কেন নষ্ট করতে চাইছো?
রুহান তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
–ওহ..হো ডা.প্রীতি তার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। বিয়ে করছি কারণ আমার মা চায়। শোন প্রীতির মত একটা মিডল ক্লাস মেয়ে আমার মত একজনকে বিয়ে করবে, মহলে থাকবে, দামি গয়না -কাপড় পরবে, দু’হাতে ইচ্ছেমতো টাকা খরচ করবে এতে যদি তোমার মনে হয় ওর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে তাহলে তুমি ভুল করছো।
অর্ক জোরালো গলায় বলে,
–আমি প্রীতিকে চিনি সে ওরকম মেয়ের নয়। প্লিজ ওর জীবনটা নষ্ট করো না, তুমি যদি ওকে ভালোবাসতে না পারো তাহলে ওকে বিয়ে কোরো না এই। একটা অনুরোধ রাখো।
থমথমে গলায় রুহান বলে,
–রুহান খন্দকার জীবনে একজনকে ভালোবেসেছে, ভালবাসবে সেটা হলো নির্জনা। সত্যি বলতে ঐ মেয়েটাকে আমিও বিয়ে করতে চাই না। বেশ লেটস মেইক এ্যা ডিল, তুমি নির্জনাকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডিভোর্স দিয়ে বিহানের হাতে তুলে দিবে। বিয়ের দিন আমি বিয়ে আটকে দেবো। আর যদি তা না-করো তবে আমি ঠিক কতটা ভয়ংকর হবো তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
অর্ক ঠান্ডা স্বরে বলে,
–আমি আগেই বলেছি তোমাকে আমি ভয় পাই না। যাই হোক ডিল।
ফোনের লাইনটা কেটে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলে রুহান আধশোয়া হয়ে বিনব্যাগের উপর বসে বলে,
– You are wrong Orko.. নির্জনা তোমাকে ভালোবেসে। ওর চোখ আমি তোমার জন্য যে ভালোবাসা দেখেছি তা বিহানের জন্য দেখি নি, তাই সে বেঁচে ছিলো। যদি বিয়ের কবুলে এতো জোর থাকে তবে তাই হবে। তুমি ডিভোর্স না দিলে তোমাকে খুন করে হলেও নির্জনাকে বিয়ে করবো। তোমাকে বেঁচে থাকার একটা সুযোগ দিলাম। তবে তুমি যদি আমার সাথে ডাবল গেম খেলো তবে আমি এমন কিছু করবো বাধ্য হয়ে তুমি নিজে নির্জনাকে আমার হাতে তুলে দিবে। প্রীতির উপর তোমার অনেক টান বেশ তাহলে সে-ই হোক আমার ট্রাম্প কার্ড।
।
।
নির্জনার মাথায় পাপিয়া আক্তার হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
–বিহানের সাথে কথা হলো?
–হুম।
–কাল জাফর সিদ্দিকী এলে আমরা চলে যাবো।
নির্জনা ভাবে পাপিয়া আক্তার আমরা বলতে বিহান আর নিজেকে বুঝিয়েছে তাই সে বলে,
–আচ্ছা।
।
।
ফজরের নামাজ আদায় করে নির্জনা নিজের ঘরে এসে দেখে অর্ক কাঁপছে। সে অর্কর মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বরে তার গা পুড়ে যাচ্ছে ।
–এতো জ্বর কি করে এলো? ঐ ছুরিটাতে আবার সমস্যা ছিল না তো? আল্লাহ সপ্টিক যাতে না হয়। সকাল হলেই ডাক্তার দেখিয়ে আগে টিটেনাস দিতে হবে।
বলে সে জলপট্টি দেওয়া শুরু করে। জ্বরে ঘোরে অর্ক বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
–আমাকে কেন ভালোবাসলে না, ওয়াইফি।
কিন্তু নির্জনা তা বুঝতে পারে না অর্ক কি বলছে। জ্বর খানিক কমলে অর্ক আধো চোখে নির্জনার দিকে তাকায়।
নির্জনা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
–কিছু লাগবে?
অর্ক বিড়বিড় করে বলে,
–তোমাকে লাগবে, ওয়াইফি।
–কি বলছো আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
অর্ক আর কোন কথা না বলে নির্জনাকে হেঁচকা টানে নিজের বুকে মিশিয়ে নেয়। নির্জনাও নড়চড় না করে বেড়াল ছানার মতো গুটিয়ে অর্কর বুকে ঘুমিয়ে যায়।
কিছু সময় পর সূর্যের কিরণ জানলা ভেদ করে ঘরে প্রবেশ করতেই নির্জনার ঘুম ভেঙে যায়।
নিজেকে অর্কর বুকে আবিষ্কার করতেই লজ্জায় গুটিয়ে যায়। অতি সাবধানে অর্কর বুক থেকে উঠে কপালে হাত দিয়ে দেখে তার জ্বর নেমে গেছে। একটু নিশ্চিত হয়ে ঘর থেকে বের হয়।
কিছুক্ষণ পর অর্ক ঘুম ভেঙ্গে চোখ মেলে তাকিয়ে বলে,
–তুমি আমার বুক ঘুমিয়ে ছিলে, তোমার চুলের সুবাস এখনো আমার শরীর থেকে পাচ্ছি, ওয়াইফি। স্বপ্ন বুঝি এতোটা বাস্তব হয়। ইয়া আল্লাহ এই স্বপ্নটা যদি সত্যি হতো!! সত্যি যদি নির্জনা আমার বুকে ঘুমাতো তবে রুহান যাই বলুক নির্জনাকে কখনো নিজের থেকে দূরে যেতে দিতাম না ।
।
।
জোহরা মঞ্জিলের ড্রয়িং রুমে বৈঠক বসেছে। অর্ণব ও অর্ক এখনো ঘুম থেকে উঠে নি। আরশি বাবার পাশে এককোনায় চুপচাপ বসে আছে। জাফর সিদ্দিকী এবং পাপিয়া আক্তার মুখোমুখি।
–ঘুরিয়ে ফিরে কথা বলার অভ্যাস আমার নেই স্যার। তাই সোজাসুজি বলি আমি চাই নির্জনার সাথে আপনার ছেলের ডিভোর্সটা আজ বা কালের মধ্যেই হয়েছে।
মায়ের কথায় চমকে উঠে নির্জনা।
জাফর সিদ্দিকী বেশ আয়েশী ভঙ্গিতে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,
–কিসের ডিভোর্স?
পাপিয়া আক্তার আগেই জানত এই লোক এত সহজে নির্জনাকে ছাড়বে না তাই সেও পুরো দমে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।
–একটা পাগলের সাথে আমি আমার মেয়েকে সংসার করতে দিতে পারি না। তখন আমি রাজি হয়ে ছিলাম শুধুমাত্র বিহান নেই বলে কিন্তু এখন বিহান ফিরে এসেছে। আর তাছাড়া রুহান খন্দকারও এখন আর কোন ঝামেলা করবে না। তাই যত তাড়াতাড়ি ডিভোর্স টা হয়ে যাবে ততই ভালো।
–মা এসব তুমি কি বলছো? এ নিয়ে আমি তোমাকে সকালেই আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি
অবাক হয়ে নির্জনা নিজের মাকে প্রশ্নটা করে।
পাপিয়া আক্তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
–আমি ঠিকই বলেছি অনেক হয়েছে। স্বাধীনতা পেয়ে যা খুশি তা করেছ তুমি। পাগলের সাথে সারা জীবন নষ্ট করবে তা আমি হতে দিতে পারি না। এত আবেগ দেখানোর দরকার নেই। তোমার ডিভোর্স হবে এটাই আমার শেষ কথা।
–মা তুমি
কিন্তু নির্জনাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বিহান তার হাত ধরে বলে,
–আমি জানি তুমি বিয়েটা কেন করেছ। কিন্তু রুহান খন্দকার আমাকে কথা দিয়েছে সে আর কখনোই আমাদের মাঝখানে আসবে না। তাই আমাদের আর ভয়ের কিছু নেই।
নির্জনা বিহানের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিবে তখনই খেই খেই উঠে জাফর সিদ্দিকী।
–বেয়াদব, ওর হাতটা ছাড়।
বিহান আরো জোরে হাতের চাপ দিয়ে ধরে বলে,
–যদি না ছাড়ি তাহলে কি করবেন? আমি নির্জনাকে ভালবাসি, নির্জনাও আমাকে ভালোবাসে। আমাদের আলাদা করার আপনি কে?
–নির্জনা আমার ছেলের বউ। এই মুহূর্তে যদি তুই তার হাত না ছাড়িস, তাহলে তোকে জবাই করে তোর মাংস কুকুরকে খাওয়াবো।
নির্জনে এক ঝটকায় বিহানের কাছ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে জাফর সিদ্দিককে উদ্দেশ্য করে বলে,
–স্যার প্লিজ আপনি শান্ত হন, মাথা গরম করবেন না। আমি বিহানকে বোঝাচ্ছি।
আরশিও নিজের বাবাকে সামলানোর চেষ্টা করে,
–বাবা, শান্ত হও। এভাবে চেঁচামেচি করলে, তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে।
এদিকে বিহানও কম যায় না সে নির্জনার কোন কথা না শুনেই নির্জনাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– ভয় পাওয়ার কিছু নেই,আমি আছিতো। এই লোক মন্ত্রী হয়েছে বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে? আর এই যে মিস্টার সিদ্দিকী আপনি যাই করুন না কেন নির্জনা কিন্তু আটকে রাখতে পারবেন না।
জাফর সিদ্দিকী আগের তুলনায় অনেক বেশি গর্জে ওঠে বলে,
–তবে রে যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা। আমিও দেখি আমার ছেলের বউকে তুই কিভাবে আমার বাড়ি থেকে নিয়ে যাস।
পাপিয়া আক্তারও কর্কশ গলায় চিৎকার করে বলে,
–আমরা কোর্টে যাব অর্ক পাগল তাই বিয়েটা খারিজ হয়ে যাবে। এতে আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বলছি স্যার ভালোয় ভালোয় ডিভোর্সটা হতে দিন।
আরশি জাফর সিদ্দিকীকে কোনভাবেই শান্ত করতে পারছে না।
এর মধ্যে কেউ নির্জনার কোন মতামতই শুনছে না।
জাফর সিদ্দিকী আর পাপিয়া আক্তারের মধ্যে বেশ জোরালো তর্ক-বিবাদ চলছে। একপর্যায়ে জাফর সিদ্দিকী বলে ওঠে,
–আপনারা যা খুশি তাই করুন আমার ছেলে সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্জনা এ বাড়ি থেকে কোথাও যেতে পারবে না।
অর্ক এতক্ষণ একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে সবই শুনছিল। জাফর সিদ্দিকীর এমন কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের বাবাকে ডাক দেয়,
–বাবা!
অর্কর ডাক শুনে সমস্ত কোলাহল থেমে যায়। নির্জনার দৌড়ে অর্কের কাছে গিয়ে বলে,
–একি তুমি উঠে এলে যে, তোমার না জ্বর।
কিন্তু অর্ক নির্জনার সম্পূর্ণ কথা না শুনে তাকে এড়িয়ে নিজের বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক গলায় বলে,
– বাবা, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
অর্কর গলা এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে, উপস্থিত সবাই বুঝতে পারে সে সুস্থ হয়ে গেছে। আরশিও খুশিতে গদগদ হয়ে যায় কারণ এতদিন পর অর্ক নিজের স্বাভাবিক গলায় সবার সামনে কথা বলছে। তারমানে অর্ক সিদ্ধান্ত নিয়েছে,সে আর পাগল সেজে থাকবে না। আর এমন হলে নির্জনাকে কেউ এ বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে পারবে না।
জাফর সিদ্দিকী আপ্লূত হয়ে নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,
–তুমি ভালো হয়ে গেছো?
অর্ক তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
–হ্যাঁ, ভাগ্যিস ভালো হয়েছি নাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না, বাবা হয়ে তুমি কিভাবে আমাকে ঠকিয়েছো।
জাফর সিদ্দিকী অবাক হয়ে বলেন,
–আমি তোমাকে ঠকিয়েছি, কিভাবে?
চোখ-মুখ শক্ত করে অর্ক বলে,
–পাগল ছিলাম বলে, একটা লো স্ট্যান্ডার্ডের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে, তাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছো । এটা ঠকানো নয়? আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।
।
–চলবে?
#প্রেমে_পরা_বারণ
#Nosrat_Monisha
পর্ব-২৩+২৪
–আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।
অর্কর মুখে এই কথা শুনে সবচেয়ে বেশি মর্মাহত হয় নির্জনা।
সে অনুভূতিশূন্য নির্বাক হয়ে যায়।
জাফর সিদ্দিকী কিছু বলার আগেই আরশি বলে উঠে,
–এসব তুমি কি বলছো? তুমিতো ভাবিকে
কিন্তু আরশিকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে অর্ক বলে,
–আমি কারও অপিনিয়ন জানতে চাই নি। আমি আমার ডিসিশন জানিয়েছি।
দু’হাতে তালি দিয়ে উঠে পাপিয়া আক্তার।
–বাহ!বাহ! এই না হলে রাজনীতিবিদের ছেলে ।
নির্জনার কাঁধ ঝাঁকিয়ে,
–এবার নিজের চোখ খোলো। কি বলছিলে সকালে? অর্ককে ডিভোর্স দিয়ে বিহানকে বিয়ে করা তোমার পক্ষে সম্ভব না। কারণ তুমি নিজের স্বামীকে ভালোবাসো। এখন দেখো তোমার এই ভালোবাসার স্বামী নিজেই তোমাকে ছেড়ে দিতে চাইছে।
ঝরঝর করে চোখের পানি ঝরে পরছে নির্জনার চোখ দিয়ে।
কিন্তু পাপিয়া আক্তারের এমন কথায় সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে বিহান আর অর্ক বিহানের তো পুরো দুনিয়াটাই উলট-পালট হয়ে গেছে। তবে অর্কর হতাশা ভরা দুনিয়াতে আবারও আশার আলো দেখা দিয়েছে।
সে অস্থির হয়ে নির্জনাকে জিজ্ঞেস করে,
–তোমার মা এসব কি বলছে? তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাসো?
কিন্তু নির্জনা কোন উত্তর দেওয়ার আগেই পাপিয়া আক্তার অর্ককে নির্জনা থেকে দূরে সরিয়ে কর্কশ গলায় বলে ওঠে,
–একদম দূরে থাকবে আমার মেয়ের থেকে। হ্যাঁ এই গাধীটা তোমাকে ভালোবাসে। তাতে তোমার কি? এই পোড়াকপালি তোমাকে এতটাই ভালোবাসা যে আর কি আর বলবো? আজকের কথাই ধরো , তোমার জ্বর এসেছে বলে সকাল থেকে তোমার জন্য রান্না করছে যাতে জ্বর মুখে তোমার অরুচি না হয়।
অর্কর এবার তার নির্জনার জলপট্টি দেওয়ার স্মৃতি আবছা আবছা মনে পরে।যা সে ঘুম ভাঙ্গার পর স্বপ্ন বলে মনে করেছিল।
অস্থির হয়ে নির্জনাকে জিজ্ঞেস করে,
–তুমি কি করে জানলে আমার জ্বর হয়েছে?
নির্জনা অনুভূতিশূণ্য গলায় বলে,
–ফজরের সময় রুমে গিয়ে দেখিছি তোমার জ্বর।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে প্রচন্ড আক্রোশের নিচে চুল টেনে ধরে। এদিকে পাপিয়া আক্তার এর গলা থেমে নেই তিনি ক্রমাগত অর্ককে কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন। অর্ককে কিছু বলার সুযোগই দিচ্ছেন না। পর্যায়ের নির্জনাকে জিজ্ঞেস করে,
–তুমি কি এখনো এখানে থাকতে চাও?
নির্জন নির্লিপ্ত গলায় বলে ,
–না মা আমি আর এখানে থাকবো না। তবে তোমাকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলি,সকালেও আমি একই কথা বলেছি, আমি কোনদিনও বিহানকে বিয়ে করতে পারবোনা কারণ বিহানের প্রতি আমার যে আবেগ অনুভূতি ছিল সেটা আর নেই।
নির্জনার কথাগুলো বিহানের বুকের ছুরি আঘাত করলো কিন্তু এদিকে অর্ক অনুশোচনার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।
নির্জনা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অর্কর সামনে গিয়ে বলে,
–আমার বাড়ি থেকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবেন আমি সই করে দেবো। ভয় নেই এই লো স্ট্যান্ডার্ডের মেয়ে কখনোই আর আপনার সামনে পড়বে না।
অর্ক মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে এবার নির্জনার পা ধরে মাফ চাইবে। যা খুশি তাই হয়ে যাক নির্জনাকে সে কোনমতেই যেতে দেবে না।সে পা ধরতে যাবে ঠিক তখনই অর্ণবের গম্ভীর গলার স্বর ড্রইং রুমে ভেসে আসে,
–কে কোথায় যাচ্ছে?
আরশি দৌড়ে নিজের বড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে অভিযোগ করে,
–দেখো না ভাইয়া,ভাবি বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
অর্ণব বোনের মাথায় হাত রেখে বলে,
–হ্যাঁ, তখন থেকে তো সেগুলোই দেখে যাচ্ছি বাড়িটাকে একদম চিড়িয়াখানা বানিয়ে রেখেছে সবাই মিলে।
অর্ণব সোজা নির্জনার সামনে এসে বলে,
–আই এম রিয়েলি সরি। আমার ভাইয়ের পক্ষ থেকে আমি মাফ চাইছি।তুমি গাধার কথায় বিশেষ পাত্তা দিও না। এটা তোমার বাড়ি। (অর্ককে লক্ষ্য করে) আর আপনি আপনি হয়তো ভুলে গেছেন তাই মনে করিয়ে দেই, এ বাড়ির ছেলে মেয়েদের জীবনে একবারই বিয়ে হয়। তাই ডিভোর্সের কথা ভুলে নিজেকে প্রস্তুত করুন। নির্জনার সাথে আপনার আবার বিয়ে হবে।
অর্ক মাথা নিচু করে থাকে কিন্তু নির্জনা পরক্ষণে প্রতিবাদ করে বলে,
– না ভাইয়া ওকে জোর করবেন না। আমি চাইনা সারাটা জীবন
কিন্তু অর্ণব নির্জনাকে তার কথা সম্পূর্ণ না করতে দিয়েই বলে,
–আমি যা বলে দিয়েছি তাই হবে এর বাইরে আর কারো কোন কথা শুনতে চাই না আর বাবা(জাফর সিদ্দিকীকে লক্ষ্য করে) আমি জানি এখন তোমার এই ডিভোর্সে কোন আপত্তি থাকবে না কারণ তোমার ছেলে ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে এটা হতে দেবো না।(পাপিয়া আক্তারকে উদ্দেশ্য করে) আর আন্টি যখন আপনার বিপদ ছিল তখন পাগল ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিতে কোন সমস্যা ছিল না এখন বিপদ কেটে গেছে বলে মেয়েকে নিয়ে যাবেন সেটা হতে পারে না।
এটা আপনার মেয়ের বাড়ি আপনি যখন ইচ্ছা আসবেন যতদিন ইচ্ছা থাকবেন, প্রয়োজনে সারা জীবন থাকবেন এখানে তাতে আমার কিংবা এ বাড়ির কারো কোন সমস্যা নেই।কিন্তু সংসার ভাঙ্গা অথবা ডিভোর্সের কুবুদ্ধি মেয়েকে দেবেন না, এটা আমি সহ্য করব না।
সবশেষে বিহানকে উদ্দেশ্য করে অর্ণব বলে,
–আই এম রিয়েলি সরি। সত্যি বলতে তোমার জন্য আমার অনেক খারাপ লাগছে কিন্তু ভাগ্যের উপর কারো হাত নেই, নির্জনা তোমার ভাগ্যে ছিল না এটা মেনে নাও।
অর্ণবের গরুগম্ভীর কন্ঠস্বর আর শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের উপর
কেউ কোন কথা বলার সাহসই পায় না।
পাপিয়া আক্তার একটু তর্ক করতে চাইলেও পারেনা পরিশেষে পরাজিত সৈনিকের ন্যায় তিনি বিহানকে নিয়ে জহুরা মঞ্জিল ত্যাগ করেন ।
তারা চলে যেতে অর্ণব একটা মেইডকে ডেকে বলে,
–তোমাদের ভাবির যত জিনিস আছে অর্কর ঘর থেকে গেস্ট রুমে শিফট করে দাও।
যা শুনে অর্ক চেঁচিয়ে বলে,
–কেন ওই গেস্ট রুমে কেন? আমার রুমে কি হয়েছে?
অর্নব চোখ লাল করে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
–আজ থেকে তুমি নির্জনার সাথে কোন কথা বলবে না,তার থেকে দূরে থাকবে, একা থাকবে আর নিজের মনকে স্থির করবে।একটু আগে কি যেন বলছিলেন নির্জনা তোমার স্ট্যান্ডার্ডের নয় ভুল তুমি নির্জনার যোগ্য না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুমি আগে নিজেকে নির্জনার যোগ্য করে তুলবে। তারপর তোমাদের ধুমধাম করে বিয়ে দেব। তৈরি হও আমি তোমার পড়াশোনার ব্যবস্থা করছি।
অল্প অসহায় ভঙ্গিতে বলে,
–কিন্তু ভাইয়া
–আমি কোন কিন্তু শুনতে চাই না।
বলেই অর্ণব সে স্থান ত্যাগ করে ।
।
।
নিজের ঘরে অসহায়ের মতে বসে আছে অর্ক। নির্জনার সাথে দেখা করার জন্য তার মনটা আকঁপাকু করছে কিন্তু অর্ণব নির্জনার চারপাশে দু-তিনটা মেইড লাগিয়ে দিয়েছে যাতে অর্ক নির্জনার সাথে দেখা করতে পারছে না ।
সন্ধ্যার দিকে সাজুগুজু করে আরশি অর্কর রুমে আসে।
–এই অর্ক আমাকে কেমন লাগছে?
অর্ক মন খারাপ করে বলে,
–বরাবরের মতো পেত্নী।
আরশি মুখটা বিকৃত করে বলে,
–আমি জানি আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।
– তো সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
আরশি উচ্ছাসিত কন্ঠে বলে,
– প্রীতির এনগেজমেন্ট পার্টিতে।
এতো কিছুর মধ্যে প্রীতির ব্যাপারটা অর্কর মাথা থেকেই বের হয়ে গিয়েছিল।
প্রীতির সাথে কথা বলা জরুরি। তাই সে আরশিকে বলে,
–তুমি দাঁড়াও আমিও রেডি হয়ে নিচ্ছি।
আরশি বাঁধা দিয়ে বলে,
–আমি তো সেটাই বলতে এসেছি বাবা তোমাকে আর ভাবিকে পার্টিতে যেতে না করেছে। আমি, বাবা আর ভাইয়া যাবো।
এরপরই বাইরে থেকে জাফর সিদ্দিকীর গলা শোনা যায় আর সে বিদায় নিয়ে জলদি করে বের হয়ে যায়।
অর্ক প্রীতিকে ফোন করে রুহানের ব্যাপারে বলতে চায় কিন্তু সে রুহান সম্পর্কে বাজে কোন কথাই শুনতে রাজি না।
হঠাৎই অর্কর ফোনে রুহানের কল আসে ফোন রিসিভ করতেই রুহান বলে,
– কি সিদ্ধান্ত নিলে? কবে ডিভোর্স দিচ্ছো? আজ না কাল?
দৃঢ় কন্ঠে অর্ক বলে,
–আমি আমার ওয়াইফকে ছাড়বো না। তোমার যা করার তুমি তাই করতে পারো।
রাগে কটমট করে রুহান বলে,
– আর প্রীতি তাকে বাঁচানোর আশা ছেড়ে দিলে?
–মোটেও না।
–তাহলে তো তোমার ডিভোর্স দেওয়া উচিত ছিলো।
–উচিত অনুচিতের কথা তোমার মুখে মানায় না রুহান খন্দকার।
রুহান খুব স্বাভাবিক গলায় বলে,
–ঠিক আছে বললাম, না উচিত অনুচিতের কথা। পরশু বিয়ে সবাইকে নিয়ে এসো আরো একবার ইনভাইট করলাম।
অর্ক রেগে কর্কশ বল গলায় বলে,
– তোমার বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দেবো না। এট্ এনি কস্ট আমি বিয়ে আটকাবোই।
রুহান শান্ত গলায় বলে,
–চ্যালেঞ্জ একসেপ্টড। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করো। তবে একটা কথা বলছি মিলিয়ে নিও, আমি পরশুই বিয়ে করছি।
।
।
এনগেজমেন্টের পর প্রীতির সাথে দেখা করার জন্য আরশি তাকে খুঁজছিলো। তখন সে প্রীতি আর অর্ণবকে কাছাকাছি দেখতে পায়।
অর্ণব একহাতে প্রীতির কোমড় জড়িয়ে ধরে আছে আর অন্য হাতে প্রীতির বাঁহাতের অনামিকায় জ্বলজ্বল করে পরে থাকা হিরের আংটিটা ছুঁয়ে দিচ্ছে।
–আর কখনো দেখা হবে না প্রেয়সী। আজ থেকে তুমি অন্য কারও এই তার প্রমাণ।
আরশি অবাক হয়ে যায়। নিজের ভাই আর প্রীতিকে প্রশ্ন করবে বলে সেদিকে এগিয়ে যেতে ধরে কিন্তু কেউ তাকে হেঁচকা টানে সেখান থেকে সরিয়ে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলে,
–কারও প্রাইভেট মোমেন্টে নাকগলানো ব্যাড ম্যানার্স।
।
।
প্রীতির গায়ে হলুদে সিদ্দিক বাড়ি থেকে কেউ গেল না।
অর্ক ক্রমাগত প্রীতির সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না। এক পর্যায়ে রেগে চিৎকার করে বলে,
–হে আল্লাহ কি করলে এই বিয়েটা ভাঙবে? আমি আর পারছি না, একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
–তাকে কিডন্যাপ করে নিজের বড় ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দাও তাহলেই তো হয়।
।।
।।
#পর্ব_২৩
আরশি মুখে অর্ণব আর প্রীতির অন্তরঙ্গতার কথা শুনে অবাক হয় অর্ক। সে বিষ্ময়ে আরশিকে প্রশ্ন করে,
–তাহলে প্রীতি এই বিয়েটা কেন করছে আর ভাইয়াই-বা কেন বিয়েটা হতে দিচ্ছে।
আরশি অর্ক মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে বলে,
–সাধে কি আর ভাইয়া তোমাকে গাধা বলে। আরে প্রীতি নিজের ভালবাসা অনেক পরে রিয়েলাইজ করেছে, এখন যদি বিয়ে ভেঙে যায় তবে ওর মা-বাবার অনেক বদনাম হবে। তাছাড়া রুহান খন্দকার কি এতো সহজে এটা মেনে নিবে। তুমি ভালো করেই জানো, ভালবাসার মানুষের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে বিয়ের জন্য তুলে আনবে এমন খারাপ আমার ভাইয়া না। তাই নিরবে নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করছে।
আরশির এই কথা যৌক্তিক মনে হয় অর্কর কাছে।
–তাহলে প্ল্যান কি?
আরশি বলা শুরু করে,
–প্ল্যান সিম্পল ভাইয়া আর প্রীতিকে কিডন্যাপ করে অজ্ঞান অবস্থায় আমার ফ্রেন্ডের গেস্ট হাউজে লক করে দিবে। সকালে আমার কিছু ফ্রেন্ড এলাকার মানুষ নিয়ে সেখানে দরজা খুলে গিয়ে ঝামেলা করবে। তুমি গিয়ে বলবে এরা আমার ভাই-ভাবি গোপনে আগেই বিয়ে ছিলো কিন্তু ওরা মানবে না। তখন তুমি বলবে তাহলে চলুন এক্ষুনি মসজিদে বিয়ে পড়িয়ে দেন। শেষ। বিয়ে হয়ে যাবে।
অর্ক আরশির মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে বলে,
– এসব অদ্ভুত বুদ্ধি তোমার মাথায় কোত্থেকে আসে? আরে বললেই কিডন্যাপ হয়ে যাবে?দুটো মানুষকে এত সহজ গাড়িতে তোলা যায় এটা কি চাট্টিখানি কথা? ভাইয়ার কথা বাদ দিলাম কিন্তু প্রীতিকে কি করে সেইফলি বের করে আনবো? আর সকাল পর্যন্ত অজ্ঞান থাকবে কিন্তু কোন ক্ষতি হবে না এমন মেডিসিন কোথায় পাবো?
আরশি কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,
–তোমার সব প্রশ্ন উত্তর একটাই।
কৌতুহলী হয়ে অর্ক প্রশ্ন করে,
–কি?
বিজয়ী হাসি দিয়ে আরশি বলে,
–কি নয় বলে কে?
।
।
আরশি আর অর্ক মাহেরকে নিজেদের প্ল্যান বুঝাচ্ছে।
এদের কথা শুনে মাহের আজ নিশ্চিত বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে মানসিক রোগের চিকিৎসা করা প্রয়োজন । নাহলে কিডন্যাপ তারপর ফাঁদে ফেলে বিয়ে এগুলো কোন সুস্থ মানুষের মাথায় আসতে পারে না।
মাহের তাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–অসম্ভব।
অর্ক অনুরোধের স্বরে বলে,
– প্লিজ মিস্টার মাহের রাজি হয়ে যান। দুটো জীবন বেঁচে যাবে। আপনি ভাবতে পারছেন না ঐ সাইকোটার সাথে যদি প্রীতির বিয়ে হয় তবে সে প্রীতির জীবনটা নষ্ট করে দেবে। এ কথা রুহান আমাকে নিজে বলেছে। আপনি ছাড়া এই প্ল্যান এক্সিকিউট করা অসম্ভব। আপনি এক্স কমান্ডো এসব আপনার বাঁহাতের খেলা। তাছাড়া আপনার কাছে সেই স্প্রে আছে যাতে ভাইয়া আর প্রীতিকে সকাল পর্যন্ত অজ্ঞান রাখা যাবে।
মাহের খুব সোজা সাপ্টা ভাবে বলে,
–আপনি ডক্টর প্রীতির সাথে কথা বলুন। উনাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলুন, তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে আমি নিশ্চিত সে বুঝতে পারবে।
হতাশ হয়ে অর্ক বলে,
–আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু প্রীতি এই নিয়ে আমার সাথে কোন কথা বলতেই রাজি নয়। হাজারটা উপায়ে চিন্তা করেছি কিন্তু বিশ্বাস করুন এর চেয়ে ভালো রাস্তা আর আমার মাথায় আসছে না।
মাহের আবারও তাদের দুই ভাই বোনকে বোঝানোর চেষ্টা করে,
–দেখুন বিয়ে বন্ধ করা পর্যন্ত ঠিক আছে কিন্তু দুজন মানুষ যারা একজন আরেকজনকে ভালোবাসে না তাদের একটা ফাঁদে ফেলে বিয়ে দিয়ে দেওয়া, এটা এথিক্যাল না। আমি এইসব বিষয়ে আপনাদের সাথে থাকতে পারবো না। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।
অর্ক বলে,
–ভাইয়া প্রীতিকে ভালোবাসে।
মাহের বিরোধিতা করে বলে,
–কিন্তু ডক্টর প্রীতি আপনার ভাইকে ভালোবাসে না।
তখনই আরশি বলে,
–আপনি ভুল ভাবছেন মিস্টার মাহের প্রীতিও আমার ভাইয়াকে ভালোবাসে।
মাহের ভ্রুকুটি করে বলে,
–আর সেটা আপনাকে কে বলেছে?
এই মুহূর্তে আঙুলগুলো মুষ্টি করে মনে মনে বলে,
–হে আল্লাহ মাফ করে দাও, শুধুমাত্র প্রীতি আর ভাইয়া ভালো থাকার জন্য এই মিথ্যাটা বলছি।
আর মাহেরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–গতকাল প্রীতি নিজে আমাকে বলেছে।
মাহের অবাক হয়ে বলে,
– তাহলে উনি নিজে কেন বিয়েটা ভেঙে দিচ্ছেন না?
একটা দম নিয়ে আরশি বলে,
–কারণ প্রীতি একটা মেয়ে আর একটা মেয়ে কখনোই বিয়ের দিন পালিয়ে নিজের বাবা-মার অসম্মান করতে চাইবে না। আপনি নিজেই ভেবে দেখুন না প্রীতি এতদিন পর্যন্ত বলে এসেছে তার কোন বয়-ফ্রেন্ড নেই,সে কাউকে ভালোবাসা না, হুট করে যদি বিয়ের দিন বলে সে অন্য একজনকে ভালোবাসে তাহলে কি তার মা-বাবা মেনে নেবে? একটা মেয়ের অনেক জায়গায় হাত-পা বাঁধা থাকে মিস্টার মাহের আপনি সেসব বুঝবেন না।
অর্ক আরশির কথায় তাল মিলিয়ে বলে,
–আরশি একদম ঠিক বলছে আমিও খেয়াল করেছি প্রীতির কোন একটা বিষয়ে একটা খটকা আছে। মানে আমি বলতে চাইছি সামথিং ইজ স্টপিং হার। বলা তো উচিত না কিন্তু আমার মনে হয় আমর মনে হয় কেউ এমন কিছু বলেছে প্রীতিকে যার কারণে সে ভাইয়াকে এতদিন রিজেক্ট করেছে।
অর্কর কথাগুলো শুনে মাহেরের নিজের অতীতের একটা কথা মনে পরে যায় আর সে চুপ হয়ে যায়।
আরশি কাঁদো কাঁদো চেহারায় মায়া ভরা মুখ নিয়ে মাহেরকে অনুরোধ করে,
–প্লিজ রাজি হয়ে যান না।
মাহের খুব বুঝতে পারে যে আরশি মিছে কান্নার অভিনয় করছে। যা দেখে মনে মনে বলে,
–এতো কিউট করে অনুরোধ করলে রাজি না হয়ে উপায় আছে?
তারপর গলা ঝাড়া দিয়ে নিজের গম্ভীর গলায় বলে,
–ঠিক আছে আমি রাজি।
–থ্যাংক ইউ
বলে অর্ক মাহেরকে জড়িয়ে ধরে।
–আরে কি করছেন ছাড়ুন। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
অর্ক আর আরশি একত্রে প্রশ্ন করে,
–কি শর্ত?
–ডা.প্রীতিকে কিডন্যাপ পরে করা হবে। আগে তাকে বলা হবে অর্ণব স্যার এক্সিডেন্ট করেছেন তার অবস্থা ভালো না। ডা.প্রীতি যদি এই খবর শুনে ঘর থেকে বের হয়ে আসে তবেই আমি এই প্ল্যানের অংশ নয়তো না।
অর্ক বিনাবাক্য ব্যয়ে রাজি হয়ে যায়।
আরশি মনে মনে বলে,
–আল্লাহ এইটুকু সাহায্য করো।
–কি হলো ম্যাম আপনি রাজি তো?
মাহেরের কথায় আরশি বলে,
–হ্যাঁ রাজি, তবে প্রীতিকে আমি ফোন দিবো কারণ অন্য কারও কথা সে হয়তো বিশ্বাস করবে না।
মাহের এতে রাজি হয়।
মাহেরের ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আরশি অর্ককে ইশারা করে বলে,
–তুমি যাও আমি আসছি।
অর্ক আরশির মনের কথা জানে তাই সে চুপচাপ বের হয়ে যায়।
আরশিকে থেমে যেতে দেখে মাহের বলে,
–কিছু বলবেন ম্যাম?
–একটা সত্যি কথা বলবেন? আমি দেখতে খারাপ আর মোটা বলেই কি আপনি আমাকে ভালোবাসেন না? না-কি অন্য কোন কারণ আছে?
হঠাৎ আরশির কথার কোন প্রতিত্তোর করতে পারে না মাহের। তখনই মাহেরের ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। আর স্ক্রিনে ভেসে উঠে ‘Life’ লেখা। আরশির নজরে সেটা পরতেই সে বলে,
–আমাকে রিজেক্ট করার কারণ তাহলে এই?
অর্ক কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকে।
–প্লিজ মাহের এখনো সময় আছে একবার বলুন আমাকে আপনি ভালোবাসেন।
মাহের নিজের চোখ-মুখ শক্ত করে বলে,
–আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি আপনাকে ভালোবাসি না। (ফোনে ঐ নম্বরটা দেখিয়ে) এখন যে কল দিয়েছিলো সে হলো আমার একমাত্র প্রায়োরিটি।
যা শুনে আরও একবার আরশির মন ভেঙে যায়।
–সরি।
বলে বিষন্ন হেসে সেখান থেকে বের হয়ে যায়।
আরশি বের হতেই মাহের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
–আমার ছোট বোনের জন্য তোমার ভালবাসাকে অস্বীকার করছি, আমাকে মাফ করে দিও৷
এরপর ফোনটা রিসিভ করে বলে,
–হ্যাঁ বল….আমি পরশু আসছি।… আচ্ছা তোর জন্য নতুন বইটা নিয়ে আসবো…
।
।
রাত ১১.২৫ মিনিট।
রুহানের গেস্ট হাউজের সামনে পরিকল্পনা মাফিক তিনজন দাঁড়ায়। আরশি বিসমিল্লাহ বলে ফোন করে ডা. প্রীতির নম্বরে।
পরদিন বিয়ে বলে প্রীতির মা তাকে আজ আগেই ঘুমাতে বলেছে, প্রীতিও বাধ্য মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরে।
তাই আরশির ফোন আসতে সে খানিকটা দেরিতে ঘুম ঘুম চোখে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে কান্নায় ভেঙ্গে পরে আরশি,
–প্রীতি, প্রীতি।
মুহূর্তেই আরশির ঘুম উবে যায়। সে চোখে চশমা লাগিয়ে নম্বর দেখে বলে,
–আরশি কি হয়েছে? কাঁদছো কেন? সব ঠিক আছে?
আরশি নাক টেনে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–অর্ণব ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে। অবস্থা ভালো না। শুধু তোমার কথা বলছে।
প্রীতির বুকের ভেতরে হঠাৎই ধুক করে উঠে। সে কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে,
–কোন হাসপাতাল?
–এ্যাপোলো।
বলেই আরশি ফোনের লাইনটা কেটে দেয়।
অর্ক নিজের বোনের দিকে অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলে,
–সিস্ ইউ আর ওসাম।
একটা গর্বিত হাসি দিয়ে আরশি বলে,
–আই নো।
কিন্তু মাহের দুই ভাই-বোনকে সাবধান করে বলে,
–ডা.প্রীতি না এলে কিন্তু এসবে কোন লাভ নেই ।
এতে অর্ক আর আরশি চুপ হয়ে যায়।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরই গেস্ট হাউজের গেট খুলে প্রীতি বের হয়ে আসে।
মাহের চোখের পলকে প্রীতির সামনে গিয়ে একটা স্প্রে ছড়িয়ে দেয়। মুহূর্তেই প্রীতি মাটিতে লুটিয়ে পরে।
আরশি আর অর্ক সেখানে এসে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আরশি আফসোসের সাথে বলে,
–বেচারি তাড়াহুড়োয় দু’পায়ে দু-রঙয়ের জুতা পরে চলে এসেছে।
মাহের প্রীতিকে পাঁজা কোলে করে বলে,
–জলদি গাড়িতে বসুন কারও চোখে পরার আগে আমাদের বের হতে হবে।
জহুরা মঞ্জিলের সামনে গাড়ি থামে। কথামত অর্ক অর্ণবকে আনার জন্য যায়। গাড়ি থেকে আরশি আর মাহের নেমে দাঁড়ায়।
আরশি মাহেরের খুব কাছাকাছি চলে আসে। এতো কাছাকাছি যে মাহেরের নিঃশ্বাস আরশির মুখের উপর পরছে।
মাহের ভয় পেয়ে পিছিয়ে বলে,
–ক..কি করছেন আপনি?
আরশি মিষ্টি হেসে বলে,
–ভয় নেই, আমি শুধু আপনাকে একটু কাছ থেকে দেখছি। এরপর আর কখনো সুযোগ হয় কি -না কে জানে?
মাহের হঠাৎই আরশির মিষ্টি হাসির আড়ালে কণ্ঠে বিষাদ অনুভব করতে পারে। সে অস্থির হয়ে বলে,
–আপনার কি কিছু হয়েছে?
আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
–না
–তাহলে এভাবে কেন বলছেন?
–কারণ আগামীকাল ওহ ১২টা বেজে গেছে তাহলে তো বলতে হয় আজকেই আপনি চলে যাচ্ছেন।
মাহেরের মনে পরে জাফর সিদ্দিকী তার সমস্ত টাকা মিটিয়ে আজকে সন্ধ্যায় জহুরা মঞ্জিল ত্যাগ করতে বলেছেন।
মাহের কিছু বলবে তখনই সেখানে অর্ণবকে নিয়ে অর্ক হাজির হয়।
অর্ণব তাদের দুজনকে দেখে প্রচন্ড রেগে বলতে শুরু করে,
–কি হচ্ছে এখানে?
তারপর মাহেরের গলা চেপে ধরে বলে,
–তোকে বলেছিলাম না আমার বোনের থেকে দূরে থাকবি। অবস্থা বেগতিক দেখে আরশি জলদি করে গাড়িতে থাকা স্প্রে এনে অর্ণবের উপর ছড়িয়ে দেয়। অর্ণব জ্ঞান হারায়।
আরশি রেগে অর্ককে জিজ্ঞেস করে,
–ভাইয়াকে কি বলেছিলে তুমি?
অর্ক নির্লিপ্ত গলায় বলে,
–আমি শুধু এই টুকু বলেছি আরশি নির্জনার বডিগার্ডের সাথে পালিয়ে যাচ্ছে।
এবার মাহের দুই ভাই বোনের কান্ডে এখন আর অবাক হয় না। কারণ সে বুঝতে পেরেছে এদের দুজনেরই মাথার তার ছেঁড়া। তাই সে অর্ণবকে গাড়িতে তুলে বলে চলুন।
কিন্তু আরশি বলে,
সবাই একসাথে গেলে বাবা সন্দেহ করবে। তাছাড়া ভাবিকে যাতে রুহান খন্দকার কোনভাবে ট্র্যাপে ফেলতে না পারে সেটাও তো দেখতে হবে। আপনারা দুজন যান আমি ভাবির সাথে থাকি।
আরশির কথায় সম্মতি দিয়ে মাহের আর অর্ক প্রীতি এবং অর্ণবকে নিয়ে বের হয়ে যায়।
।
।
তারপর সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়।
অর্ণব আর প্রীতি একসাথে আরশির বান্ধবীর গেস্ট হাউজে ধরা পরে। তারা দুজনেই অজ্ঞান থাকায় কেউ কারও সাথে কথা বলার সময় পায় না। একপ্রকার ঘোরের মধ্যেই স্থানীয় মসজিদে আরশির বান্ধবীর ঠিক করা লোকজন এলাকাবাসীর সাথে মিলে অর্ণব ও প্রীতির বিয়ে পড়িয়ে দেয়।।
পূর্ব নির্ধারিত সময়ে মাহের আর অর্কও সেখানে উপস্থিত থাকে। অর্ণব তাদের দুজনেকে দেখা মাত্রাই বুঝে যায় এসব তার ছোট ভাই বোনের প্ল্যান কিন্তু প্রীতি ভাবে অর্ণব তাকে ইচ্ছে করে ফাঁদে ফেলে বিয়ে করছে। তাই কাবিননামায় সই করার আগ মুহূর্তে প্রীতি বলে,
–পুতুলখেলার এই বিয়ে আমি কখনোই মেনে নেবো না মি.সিদ্দিকী।
এরমধ্যে রুহান অর্ককে ফোন দিয়ে প্রীতি কোথায় জানতে চায় কিন্তু অর্ক কিছু না বলে ফোন কেটে দেয়।
বিয়ে শেষ হবার সবাই চলে গেলে অর্ক তার ভাই-ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–আমি বাড়ি গিয়ে সব বলবো।
।
।
যুবনেতা অর্ণব ইর্তেজা সিদ্দিকী সাতসকালে মসজিদে বিয়ে করেছেন এমন সংবাদ সবখানে ভাইরাল।
বিজয়ী বেশে অর্ক মাহেরের সাথে বড় ভাই-ভাবিকে নিয়ে জহুরা মঞ্জিলে প্রবেশ করে দেখে একরাশ হতাশা নিয়ে জাফর সিদ্দিকী সোফায় বসে আছে। নির্জনা জাফর সিদ্দিকীর পাশে আতঙ্কিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু সোফার অপর প্রান্তে নীল শেরওয়ানি পরিহিত রুহানকে দেখতে পেয়ে অর্ক তার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায় । সে দ্রুত নির্জনার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে জিজ্ঞেস করে,
–বদমাইশটা তোমাকে কিছু করে নি তো?
নির্জনা মাথা নাড়িয়ে না করতেই অর্ক সেখান থেকে সোজা গিয়ে রুহানের শেরওয়ানি ধরে দাঁড় করায়।
–এখানে কেন এসেছিস?
রুহান অর্কর হাতটা সরিয়ে প্রীতির দিকে তাকিয় বলে,
–কাজটা ঠিক করো নি তোমরা। এর ফল কিন্তু সবাইকে ভোগ করতে হবে।
গর্বিত ভংগিমায় অর্ক বলে,
–তাই না-কি? তোর এই ফাঁকা বুলিকে আমি ভয় পাই না। বলেছিলাম না এ বিয়ে আমি হতে দেবো না। এখন যা খুশি কর আমার কিচ্ছু যায় আসে না।
নিজের দু’হাত বুকে ভাঁজ করে রুহান বলে,
–ভেবে বলছো তো?
নির্জনা অর্ককে বাঁধা দিতে চাইলে অর্ক তার কথা না শুনেই দৃঢ় কন্ঠে বলে,
–হ্যাঁ, তোর যা খুশি কর।
রুহান ঠোঁটের কোনে একটা কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলে,
–ভুল করলে। বাই দ্য ওয়ে, আমিও বলেছিলাম বিয়ে তো আমি আজকেই করবো।
অর্ক তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
–তাহলে যা বিয়ে কর আমার বাড়িতে কি?
বাঁকা চোখে নির্জনার দিকে একবার তাকিয়ে রুহান বলে,
–জাস্ট এ্য মোমেন্ট।
এরপর হাতঘড়ি দিকে তাকিয়ে জোহরা মঞ্জিলের অন্দরমহলের সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
–তোমার ভাইয়ের বিয়ের আধঘন্টা আগে ঐ একই মসজিদে আমি বিয়ে করেছি।
এরপর অর্ককে পাশ কাটিয়ে অর্কর পিছন থেকে নীল বেনারসি পরিহিত এক রমনীকে সবার সামনে এনে দাঁড় করায়। যাকে দেখে অর্ক, অর্ণব, প্রীতি এবং মাহেরের উপর বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়। রুহান শয়তানি হাসি দিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বলে,
– মিট মাই ওয়াইফ আরশি সিদ্দিকী। ওপস নামে একটু ভুল হয়ে গেলো আরশি রুহান খন্দকার।
আরশিকে রুহানের স্ত্রীরূপে দেখে অর্কর মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তার মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের হয় না। অর্কর মনোভাব বুঝতে পেরে রুহান বলে,
–তুমি ভেবেছিলে, তুমি জিতে যাবে But from the beginning game was mine. তোমরা সবাই আমার পাপেট ছিলে যাদের প্রত্যেকটা মুভমেন্ট আমি কন্ট্রোল করছিলাম।
–চলবে?