প্রেমে পরা বারণ পর্ব-৩১

0
40

#প্রেমে_পরা_বারণ
#Nosrat_Monisha
পর্ব-৩১

–আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না?
এই মুহূর্তে মাহেরের এই প্রশ্নটা আরশির কাছে সবচেয়ে বড় কৌতুক বলে মনে হলো। রুহানের সাথে বিয়ের সময় কবুল বলার সাথে সাথে সে মাহের নামক অধ্যায়টিকে নিজের জীবন থেকে মুছে ফেলেছে।
খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে আরশি বলে,
–আপনি কি রকম সুযোগ চাইছেন মিস্টার হুদা? বাই এনি চান্স আপনি কি আমার সাথে এক্সট্রিমেরেটাল অ্যাফেয়ার করার সুযোগ চাইছেন?

পরকীয়া শব্দটা শুনে মাহেরের গরম হয়ে গেল নিজের ভালোবাসাকে এতটা ছোট করতে পারলো আরশি? সমস্ত কথা খুলে বলার পরেও সে কি করে এতটা নির্দয় হতে পারছে ? মাহের ভেবেছিল ছোট বোনের চিকিৎসা নিয়ে জাফর সিদ্দিকীর করা ব্ল্যাকমেলিং এর কথা শুনলে আরশি তাকে ক্ষমা করে দিবে।

–আরশি প্লিজ সবটা জেনে তারপর তুমি একথা কেন বলছ? আই লাভ ইউ, আর তুমিও তো আমাকে ভালোবাসো।
–কারেকশন ভালবাসতাম কিন্তু এখন আমি বিবাহিত। আর আপনার জানা উচিত একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য তার স্বামী ছাড়া বাকি সবাই নিষিদ্ধ। মিস্টার হুদা আপনি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসতেন তবে আমাকে তো এটুকু চিনতে পারতেন যে, ভালোবাসার দোহাই দিয়ে বিয়ের মতো একটা পবিত্র বন্ধন ভেঙে পুরাতন প্রেমিকের কাছে চলে যাবো কিংবা পরকীয়াতে জড়াবো এতটা নোংরা মন মানসিকতার মেয়ে আমি নই ।
–কিন্তু রুহান তোমাকে ভালোবাসে না সে তোমার জীবনটা নরক করে দেবে।
–সেটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই ব্যাপার নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। ওহ ওয়ান মোর থিং, আমি কোনদিনও আপনার কাছে যাবো না তাই, ভবিষ্যতে এসব নিয়ে আমাকে বিরক্ত না করলে আমি খুশি হবো।
কথাগুলো বলে আরশি ধীর পায়ে মাহেরকে পেছনে নিজের ঘরের দিকে যেতে লাগল।
মাহের মাথা নিচু করে বাগানেই দাঁড়িয়ে রইল। একটু যদি দৌড়ে আরশির সামনে পথ আগলে দাঁড়াতো তাহলে দেখতে পেত আরশির চোখ থেকে কেমন শ্রাবণ ধারা বেয়ে পরছে ।
আরশি ঘরমুখ হচ্ছে আর ভাবছে,
–না আরশি ভুলেও পেছনে ফিরে তাকাবি না। তুই আজ মাহেরের দিকে তাকালে সে তোকে পাওয়ার আশায় জীবটা নষ্ট করে দিবে, যেমন অর্ণব ভাইয়ার বায়োলজিকাল ফাদার করেছিলো। আমার মায়ের একটা ভুলের কারণে আমাদের তিন ভাই-বোনের শৈশব-কৈশোর নষ্ট হয়ে গেছে। তুই সেই একই ভুল করে আবার সবার জীবন নষ্ট করতে পারিস না।

হ্যাঁ আরশি জানে অর্ণব তার বাবার ঔরসজাত সন্তান না। মায়ের মৃত্যুর পর আরশি একবার নানির বাড়ি গিয়েছিলো। সেখানে নানি যখন তার মামার সাথে এসব নিয়ে কথা বলছিলো তখন সে ঐ ঘরে আলমারির পিছনে লুকিয়ে সব শুনেছিলো। ইচ্ছা থাকলেও বাবাকে কিছু বলতে পারে নি এই ভয়ে যদি তার বাবা রাগের বশে অর্ণবের কোন ক্ষতি করে। তখন থেকেই নিজের মায়ের উপর এক অদ্ভুত ঘৃণা জন্মে তার আর প্রতিজ্ঞা করে জীবনে আর যাই হোক মায়ের মতো হবে না। যত যাইহোক একজনের সংসারে থেকে আরেকজনকে ভালবাসে সবকিছু নষ্ট করবে না।


রুহান পাগলের মতো করছে। সে সত্যি টেবিলের ড্রয়ারে মেরুন রংয়ের ডায়েরি পেয়েছে যেখানে অর্কর কথামতো বাকেট লিস্টে রুহানকে বিয়ে করার কথা লেখা আছে।
আরশি রুমের মধ্যে প্রবেশ করতেই রুহান তার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ডায়েরিটা হাতে নিয়ে সেই পৃষ্ঠাটা খুলে প্রশ্ন করল,
–এটা কার লেখা।
আরশি নির্লিপ্ত গলায় বলে,
–আমার।
অর্কর কথাগুলোকে প্রথমে মিথ্যে বলে মনে হলেও এখন আর তা মনে হচ্ছে না রুহানের। তার বার বার মনে হচ্ছে আরশি তাকে ঠকিয়েছে ।
সে রাগে দুঃখে আশির গলা চেপে ধরে।
–তোরা সবাই আমাকে ঠকিয়েছেস। তোদের সবকয়টাকে আমি দেখে নেব, কাউকে ছাড়বো না। সবগুলোর জীবন নরক বানিয়ে দেবো । আর তুই আজ থেকে এখানেই পরে থাকবি। আমাকে বিয়ে করার খুব শখ ছিল তাই-না? তোর শখ আমি মেটাবো। আজ থেকে তুই আর কোনদিন শ্বশুর বাড়ি যেতে পারবি না। বিবাহিত হয়েও বিধবার মতো জীবন কাটাবি।
কথাগুলো বলে রোহান আরশিকে ছেড়ে দ্রুত পাও ফেলে জহুরা মঞ্জিল থেকে বের হয়ে যায়। রুহানের যাওয়া পথে তাকিয়ে আরশি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কারণ এই জীবনটা সে নিজে বেছে নিয়েছে।


অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোন স্পর্শ নারীর কাছে বিষ কাঁটার মতো। আর স্পর্শ যদি হয় জোরপূর্বক তবে তা মৃত্যু যন্ত্রণাসম। রুহানের স্পর্শে নির্জনার নিজের উপর ঘৃণা সৃষ্টি হয়। সে ঝর্ণার পানিতে সাবান দিয়ে সে স্পর্শগুলো তুলে ফেলার চেষ্টা করছে।
অর্ক রুমে প্রবেশ করে বুঝতে পারে সে ওয়াশরুমে তাই বিছানায় বসে চুপচাপ অপেক্ষা করতে থাকে।
কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে অর্কর দুশ্চিন্তা হয়। আলতো করে ওয়াশরুমের দরজায় কড়া নারে। কিন্তু নির্জনার কোন সারা শব্দ পাওয়া যায় না। খানিকটা অপেক্ষা করেও কোন লাভ হয় না।
কোন উপায় না পেয়ে দরজা ভেঙে ফেলবে বলে প্রস্তুত হয় কিন্তু তখনই দরজা খুলে বেরিয়ে আসে নির্জনা। দীর্ঘ সময় পানিতে ভেজা আর অতিরিক্ত সাবান দিয়ে শরীর মাজার ফলে তার শরীরটা রক্তশূন্য হয়ে গেছে আর বিভিন্ন জায়গায় কেটে গেছে।
– নির্জনা!
বলে অর্ক এক ঝটকায় নির্জনাকে জড়িয়ে ধরে। সাথে সাথে নির্জনা অঝোরে কান্না শুরু করে আর বলতে থাকে,
–শয়তানটা স্পর্শ করেছে, আমি অপবিত্র হয়ে গেছি। এতো চেষ্টা করলাম তাও ওর নোংরা স্পর্শগুলো ধুতে পারছি না। আমি কি করবো অর্ক? নিজের উপর আমার প্রচন্ড ঘেন্না হচ্ছে। আজ আমি সুন্দর বলে আজকে এই সমস্যা হয়েছে। আজ যদি আমি কুৎসিত থাকতাম তাহলে রুহান আমার সাথে এরকম করত না।তুমি এক কাজ করো এসিড এনে আমার মুখে ঠেলে দাও, আমার মুখটা কুৎসিত হয়ে যাক।
–হুস..কান্না করে না। তুমি শান্ত হও, আমার কথা শোন।
অর্ক নির্জনাকে থামানোর প্রচুর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু লাভ হয় না। নির্জনা আরও অস্থির হয়ে বলতে থাকে,
–না আমি আর বাঁচতে চাই না। ছাড়ো আমাকে আমি অপবিত্র। ঐ অমানুষটা আমাকে আর বাঁচতে দেবে । আমি মরে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সাথে সাথে অর্ক নির্জনার উপর চিৎকার করে উঠে।
–সাট আপ। জাস্ট সাট আপ।
প্রচন্ড রাগ আর ক্রোধের অর্ক ফুঁসে ওঠেছে।
নির্জনা ভয় পেয়ে যায় কারণ অর্ককে এমন রূপ সে আগে কখনো দেখেনি। সে অর্ককে কখনো বাচ্চারুপে কখনো রোমান্টিক স্বামীরূপে, কখনো বা ভাই হিসেবে দেখেছে। ক্রোধের আগুনে পোড়া অর্ককে এর আগে কখনোই সে দেখেনি ।
–কি বললে মরে গেলে সব সমাধান হয়ে যাবে?মরে গেলে যদি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত তাহলে আমি কবে মরে যেতাম, এত বছর পাগল সেজে থাকতাম না। আর কি বলছো তোমার রূপের জন্য রুহান পাগল হয়েছে। তোমার যদি এটা ধারণা হয়ে থাকে তাহলে জেনে রাখ তোমার চেয়ে হাজার গুন সুন্দর মেয়েরা রুহানের জন্য পাগল কিন্তু রুহান তাদের পাত্তা দেয় না। নির্জনা বোঝার চেষ্টা করো, সমস্যাটা তুমি সুন্দর বলে হচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে কারণ রুহান মানসিকভাবে অসুস্থ । তুমি রিজেক্ট করায় সে তোমার প্রতি অবসেস্ট হয়ে গেছে। সত্যি বলতে এতে দোষ সম্পূর্ণ রোহানের না। তার মা-বাবাও এর জন্য যথেষ্ট দায়ী। উনারা ছোটবেলা থেকে ছেলে যা চেয়েছে তাই দিয়েছে, ছেলেকে শেখায়নি কিভাবে মানুষকে সম্মান করতে হয় বিশেষ করে মেয়েদের। যদি শেখাতো তাহলে এটা সে বুঝতো যে কাউকে প্রপোজ করার অধিকার যেমন তার আছে, তেমনই তাকে রিজেক্ট করার অধিকারও অন্য কারো আছে। ঠিক সেই কারণে রুহান মেয়েদের পণ্য হিসেবে মনে করে, সে ভাবতেই পারে না কোন মেয়ে তাকে রিজেক্ট করবে। এতে তোমার বিন্দুমাত্র দোষ নেই।
অর্কর কথায় নির্জনা কিছুটা শান্ত হলো।
অর্ক নির্জনাকে আরও আবেশে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–আর কি বলছিলে যেন অপবিত্র হয়ে গেছো? রুহানের স্পর্শে যদি তুমি অপবিত্র হয়ে যাও তাহলেতো পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি নারীর অপবিত্র। কারণ আমরা পুরুষেরা এতটা নিচে নেমে গেছি যে, ঘরে কিংবা বাইরে বাচ্চা কিংবা বয়স্কা সব নারীই জীবনের কোন না কোন সময় এমন অনিচ্ছুক আর অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ পায়। ৯০% ক্ষেত্রে তো নারীরা এটা বুঝতেই পারে না কে তাকে স্পর্শ করল। তোমাকে ছোট্ট একটা ঘটনা বলি, আমার ছোটবেলার। একদিন আরশিকে নিয়ে দোকানে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় মিছিল হচ্ছিল। মিছিলে মজা হবে ভেবে আমরা দু’জন মিছিলের মধ্য দিয়ে যাওয়া শুরু করি কিন্তু মাঝপথে আরশির হাতটা ছুটে যায়। এরপর বহু কষ্টে ওকে আবার খুঁজে পাই ।(অর্ক নিজের কন্ঠে আরেকটু তাচ্ছিল্য আনে) ভিড় কাটিয়ে দোকানে যাওয়ার পর আরশি কান্না দেখে কারণ জিজ্ঞেস করতে সে নিজের জামাটা উঠিয়ে দেখায়। বিশ্বাস করো নির্জনা আমি একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ হয়ে আমি আজও বুঝতে পারিনি যে আট বছরের একটা বাচ্চার বুকে ওই অমানুষ গুলো কি এমন সুখ খুঁজছিলো? যে বাচ্চাটার বুকে আঁচড়ের দাগে ভরে গিয়েছিলো আর সেখান থেকে রক্ত বের হচ্ছিলো।

–চলবে?

#প্রেমে_পরা_বারণ
#Nosrat_Monisha
#পর্ব_বোনাস(ক্ষতিপূরণ)

স্বপ্নপুরুষ কেমন হওয়া উচিত? লম্বা, চওড়া, ফর্সা, ধনী এইতো এসব কিছুই তো রুহান খন্দকারের আছে তবে নির্জনা কেন তাকে ভালবাসতে পারে নি? এই প্রশ্নটা নির্জনার পরিচিত সবার ছিলো। তখন সে এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যেতো। একটা সময় তো তার মনেই হচ্ছিল যে রুহানকে প্রত্যাখ্যান করার অধিকার কিংবা যোগ্যতা কোনটাই তার নেই।। তবে তার আজ সেসব মানুষদের ধরে এনে চোখে আঙুল দিয়ে অর্ককে দেখিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে , স্বপ্নপুরুষের লম্বা, চওড়া, ফর্সা, ধনী হওয়া জরুরি না বরং অর্ক মতো বিচক্ষণ ও ধৈর্য্যশীল হওয়া জরুরি। নির্জনা আজ বুঝতে পারছে কেন সে রুহানকে কখনোই ভালোবাসতে পারেনি, কারণ তার নারীমন সর্বদা অর্কর মতো পুরুষের কল্পনা করেছে। পুরুষ যার কাছে আত্মঅহংকারের চেয়ে তার প্রেয়সীর চোখের পানির মূল্য বেশি থাকবে, পুরুষ যে ক্রোধের আগ্নেয়গিরিতে দাঁড়িয়েও প্রিয়ার গায়ে আঁচড় কাটবে না, পুরুষ যার কাছে তার জেদের চেয়ে শখের নারীর ইচ্ছের বেশি মূল্য থাকবে। নির্জনার আজ মনে হচ্ছে এমন চরিত্রের পুরুষ পেলে নারী তার স্বামীর চেহারার কদর্যতাও মেনে নিবে।
–কি এতো ভাবছো ওয়াইফি?
অর্কর ডাকে ঘোর কাটে নির্জনার।
–কিছু না
বলতেই অর্ক তাকে বক্ষপিঞ্জরে আবদ্ধ করে নেয়।
–এখনও মন খারাপ?
–উঁহু।
–তাহলে?
–ঘুম আসছে না।
–তাহলে চোখ বন্ধ করো, আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ আগেও নির্জনা ভেবেছিলো অর্ক এখন তার সাথে মিলিত হওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করবে। কারণ সে তার বিবাহিত সমবয়সী মেয়েদের কাছ থেকে শুনেছিলো, স্ত্রীর মন ভালো করার জন্য স্বামীদের কাছে একমাত্র উপায় সঙ্গম। তবে আজ যখন অর্ক তাকে কথার জালে আবদ্ধ করে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, যা হয়েছে তাতে তার কোন দোষ নেই তখনও সে ভেবেছিল একবার সে শান্ত হলেই অর্ক এমন কিছু করবে।
সরাসরি না বললেও আকার ইঙ্গিতে নির্জনা অর্ক সেই প্রশ্ন করেছিল, রুহানের স্পর্শগুলো ভুলিয়ে দিতে এখন অর্ক তাকে কাছে টানবে কি-না?
কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে অর্ক বলে ,
–তোমার শরীরে আমার যে স্পর্শ সেটাই চিরন্তন আর বাকি কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। তোমার শরীর থেকে কারো স্পর্শ ভুলিয়ে দেওয়া বা মন ভালো করার জন্য ফিজিক্যাল রিলেশনের দরকার নেই। একটা কথা মনে রাখবে, শারিরীক চাহিদা, উন্মত্ততা, কামনা প্রতিটি নারী-পুরুষের অংশ কিন্তু সব সময় শরীরকে স্পর্শ করলে হয় না (নির্জনার হাতটা অর্ক নিজের বুকের বাঁ পাশে হৃদপিন্ডের উপর রেখে) কিছু কিছু সময় এই যন্ত্রটাও ছুঁয়ে দেখতে হয়।


অনেক কিছু ভেবে অবশেষে আরশি স্থির করে সে খন্দকার বাড়িতে ফেরত যাবে। জাফর সিদ্দিকী মেয়ের সিদ্ধান্তে সহমত।
মাহের অর্কর কাছে নিজের অপারগতা স্বীকার করে সকালেই চলে গেছে তবে যাবার আগে জানিয়ে গেছে, আরশির জন্য সে অপেক্ষা করবে, আরশি যদি কখনো রুহানের বাচ্চা নিয়েও তার কাছে আসতে চায় তবুও সে আরশিকে নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দিতে দু’বার ভাববে না।
অন্যদিকে অর্ক আর নির্জনা আরশিকে বাঁধা দিয়ে বাড়িতে রাখতে চাইছে।অর্ক এক পর্যায়ে আরশিকে গতরাতে তার আর রুহানের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দেয়।
–এরপরও তুমি ওই পাগলটার সংসার করতে চাও?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরশি বলে,
–এটা আমার নিয়তি, আমি মেনে নিয়েছি। তোমরা যত তাড়াতাড়ি মেনে নিবে তত তাড়াতাড়ি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু মনে মনে বলে,
–আমি যদি ফিরে যাই তবে রুহানের সমস্ত রাগ আমার উপর পরবে আমি ফলভোগ করবো। কিন্তু যদি ফিরে না যায় তাহলে আমার পুরো পরিবার এর ভুক্তভোগী হবে। এটা আমি কিছুতেই হতে দিতে পারি না।


আজ প্রীতির ভাইয়ের কুলখানি। আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসী সবাই এসেছে ফরিদ রহমান আর তার পরিবারের দুঃখের শামিল হতে। কিন্তু তারা এখানে এসে হাসিবের মৃত্যুর কথা ভুলে প্রীতির বিয়ে নিয়ে সমালোচনা করতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
এক জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়েছিল আর মেয়ে বিয়ের আগের দিন পালিয়ে গিয়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করেছে। এমন মেয়ে যদি আমার হতো তাহলে হয় মেয়েকে খুন করতাম নাহয় নিজে গলায় দড়ি দিতাম, মেয়ের চরিত্রের ঠিক নেই ইত্যাদি আরো কত মুখরোচক আলোচনা-সমালোচনা। সবটাই প্রীতি ও তার পরিবারের কানে আসছে, কিন্তু কেউ কোন প্রতিবাদ করতে করছে না। তবে প্রীতির ভয় হচ্ছে অন্য জায়গায় তা হলো অর্ণব। মানুষটাকে সে এতোদিনে যা চিনেছে, তাতে সে জানে এসব কিছু অর্ণবের কানে গেলে সে চুপ করে থাকবে না। তাই বড় বোন পাঁপড়ির স্বামীকে বলে অর্ণবকে চোখে চোখে রাখার ব্যবস্থা করেছে।
কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। অর্ণবের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
প্রীতি, তার মা ও বড় দুই বোন মিলে ভাইয়ের জন্য তশবীহি খতম পড়ছিলো তখনই পাঁপড়ির স্বামী হন্তদন্ত হয়ে এসে রুমে এসে জানায়, অর্ণব পাড়ার এক ছেলেকে বেদম পেটাচ্ছে কারণ সে প্রীতর নামে বাজে কথা বলেছে।
সবাই দৌড়ে সেখানে যায়। ততক্ষণে গ্রামের মুরুব্বিসহ সবাই সেখানে জড়ো হয়েছে। অর্ণবকে গ্রামের ছোট-বড় মোটামুটি সবাই চেনে, একে তো যুবনেতা তার উপর মন্ত্রী ছেলে তাই কেউ তাকে বাধা দিচ্ছে না।
প্রীতির মেজো বোন প্রিমা ছেলেটাকে দেখেই মুখ বিকৃত করে প্রীতিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–আরে এটা তো শমীনইন্যা। তোকে বিয়ে করার জন্য কত কি করলো, শেষমেশ না পেরে তোর নামে গ্রামে খারাপ খারাপ কথা ছড়ালো। আজকেও নিশ্চয়ই এমন কিছুই বলেছে আর তোর জামাইয়ের কানে গেছে, তাই সাইজ করতেছে। উচিত বিচার।

প্রিমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে প্রীতি সামনে এগিয়ে গিয়ে যায়। অর্ণবের হাতের লাঠিটা ধরে শান্ত গলায় বলে,
–অনেক হয়েছে, মরা বাড়িতে আর তামাশা করবেন না। ঘরে চলুন।
রগচটা গলায় অর্ণব বলে,
–আমি তামাশা করছি? আর এরা তখন থেকে তোমার নামে যা-তা উল্টো-পাল্টা কথা বলছে তার বেলায়?

–এসব নিয়ে পরে কথা হবে। এখন ভেতরে চলুন।
অর্ণব এক হাতে প্রীতির কোমড় জড়িয়ে নিজের দিকে হেঁচকা টান দিয়ে কর্কশ গলায় বলে,
–ডা.প্রীতি রহমান আমার বিবাহিতা স্ত্রী। বিয়েটা যেভাবেই হোক সেটা আমাদের এবং আমাদের পরিবারের ব্যাপার। ভবিষ্যতে এই নিয়ে কোন বাজে কথা যদি আমার কানে আসে তবে তার অবস্থা (শামীম নামে ছেলেটার দিকে আঙুল তুলে) এই ছেলের চাইতেও খারাপ হবে। আপনারা ভুলেও এটা ভাববেন না যে, আমি নেতা কিংবা মন্ত্রীর ছেলের পাওয়ারের জন্য এসব বলছি। আমি এসব বলছি কারণ আমি প্রীতির স্বামী । ভবিষ্যতে যদি আমার কাছে কোন রাজনৈতিক ক্ষমতা না-ও থাকে তবুও আমি একই কথা বলবো। আর এটা অর্ণব ইর্তেজা সিদ্দিকীর ওয়াদা।
একটা নিশ্বাস নিয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে,
–এবার চলো।


রুহান গতদিন বাড়ি ফেরে নি। এ নিয়ে বাড়ির সবাই দুশ্চিন্তা করছে বিশেষ করে মাইমুনা খন্দকার।
তিনি আরশিকে যা নয় তাই বলে অপমান করছেন। তার ভাষ্যমতে, আরশি তার ছেলেকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ, তাই রুহান বাড়ি ফিরছে না।
মাঝরাতে মদ্যপ রুহান বাড়ি ফিরে আসে। আরশি তখন গভীর ঘুম মগ্ন। ঘুমের মধ্যেই সে রুহানের স্পর্শ অনুভব করে।
–আই লাভ ইউ নির্জনা
বলে আরশির উপর একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পরে রুহান। আরশি
প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু রুহানের পুরুষালী দানবীয় স্পর্শ আর শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে এক পর্যায়ে হার মানতে বাধ্য হয় সে। অন্যদিকে রুহান নির্জনা, নির্জনা বলে আরশির কাছ থেকে নিজের স্বামীর অধিকার আদায় করে নেয়।
ভোরের আলো জানলার কাঁচ ভেদ করে রুমে আসতেই বিরক্ত হয়ে চোখ মেলে রুহান। তার পাশে বিধস্ত আরশিকে দেখে গতরাতে কথা মনে করার চেষ্টা করে। আরশি গতরাত থেকে আর ঘুমায় নি। সবকথা মনে পরতেই একটা অপরাধ রুহানের মনে ভর করে।সে আরশি কে উদ্দেশ্য করে বলে,
–একচুয়েলি সামওয়ান ড্রা….
কিন্তু তাকে থামিয়ে আরশি সম্পূর্ণ নীরুত্তাপ গলায় বলে,
–ভবিষ্যতে আমার সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করার সময় মনে রাখবেন আমার নাম নির্জনা না আরশি, তাই দয়া করে সেই সময়টা অন্তত আমাকে নিজের নামে ডাকবেন।
এরপর রুহানকে প্রতিত্তোর করার সুযোগ না দিয়েই ওয়াশরুমে চলে যায়।

–চলবে?