#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব বিশ
২০.
একটু বেলা করে ঘুমাতে চেয়েছিল ফায়াদ। কিন্তু তা আর পারলো কোথায়। সাত সকাল বেলা মা কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে।তাও আবার বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কান্না করছে। ফায়াদ বিরক্ত হয়ে তার সামনে বসা ফারাজের দিকে তাকালো। ফারাজ নির্বোধ বালকের মতো একটা লুক দিল।
ফারাজ এসেছে সকাল বেলা।দরজা খুলেই ফারাজের দেখে এক মুহূর্তের জন্য ভেবেছিলেন ফায়াদ এটা। পরক্ষনেই হাসি দেখে বুঝে গেলেন এটা ফারাজ৷ খুশিতে কান্না করে দিয়েছেন তিনি। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে এক দফা কাদলেন।তারপর ফায়াদকে জানাতে এসে তার রুমে আবার কাদছেন। ফারাজের আসার খুশিতে আখি বেগম ভুলেই গেছেন যে ফায়াদ তাকে গত রাতে বলেছিল যে সে আজ বেলা করে ঘুমাবে।তাকে যেন না ডাকে। অথচ আখি বেগম তাকে ডেকে কান্না করায় ব্যস্ত।
ফায়াদ এবার অতিষ্ঠ হয়ে বলল,
‘মা! আর কতোক্ষণ?’
আখি বেগম ফোপাতে ফোপাতে বললেন,
‘কতোবছর পর মায়ের কথা মনে পড়ছে এর! এবার আর যেতে দিব না। আমার জোড়া বাচ্চা দুটো আর আলাদা হতে দিব না।’
ফারাজ এসে মাকে সাইড থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘যাবো না আর। এবার তো থামো!’
ফায়াদ বলল,
‘মা কান্নাকাটি থামাও।আর আমাকে একটা কফি এনে দাও। বলছিলাম ডাকতে না। এখন মাথা ধরে গেছে আমার।’
আখি বেগম উড়না দিয়ে মুখ মুছে বললেন,
‘যাচ্ছি। আর ফারাজ বাবা তুই এই রুমেই থাক আপাতত। তোর রুমটা পরিষ্কার করা হয় নি। বলে আসবি তো ফাজিল!’
ফারাজ ফাজলামো করে বলল,
‘বলে আসলে তো আর তোমাকে কাদাতে পারতাম না!’
‘বদ’মাশ বদ’মাশই থাকবি তুই!’
বলে উঠলেন তিনি রান্না ঘরে যাওয়ার জন্য। অনেক কাজ। এতো বছর পর তার ছেলে এসেছে অনেক রান্না করতে হবে। সব আজ একসাথে খাইয়ে শোধ নিবেন তিনি। যাওয়ার পথে নীতিকে চোখে পড়লো তার। নীতিকে দেখেই ভ্রু কুচকে তাকালেন তিনি।
নীতি এতোক্ষণ এক কিনারে দাঁড়িয়ে মা ছেলেদের কীর্তি দেখছিল। ফায়াদ আর ফারাজকে দেখে অবাক সে। দুজনের মধ্যে এতো মিল! আলাদা করা মুশকিল। এদেরকে শুধু কাছের মানুষই আলাদা করতে পারবে।
আখি বেগম ফারাজের দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো।ফারাজ উত্তর দিল,
‘নীতির কথা বলেছিলাম না?’
আখি বেগম এর মুখে এবার হাসি ফুটলো। তিনি নীতির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে বলে উঠলেন,
‘গল্প করার সঙ্গি পেয়ে গেছি। এখন আর আমাকে পুরো বাড়িতে একা একটা মেয়ে থাকতে হবে না।’
নীতি অবাক হলো আখি বেগমের সাবলীল ব্যাবহার দেখে। ফারাজ হেসে দিল মায়ের কান্ডে।আখি বেগম এবার নীতি কে বললেন,
‘তুমি আমার সাথে আসো। এদের সাথে থেকে মারামারি ছাড়া কিছু দেখতে পাবা না। চলো!’
বলে তিনি আগে চলে গেলেন ফায়াদের রুম থেকে।
নীতি ফারাজের দিকে তাকালো। ফারাজ তাকে মায়ের সাথে যেতে বলল ইশারায়। নীতি বেরিয়ে গেল আখি বেগমের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
নীতি রুম থেকে বের হতেই ফায়াদ ফারাজের পিঠে ধুম করে দিল এক কিল। ফারাজ শব্দ করে উঠলো,
‘উফফ! মারিস কেন?’
ফায়াদ বিরক্ত নিয়ে বলল,
‘এতো সকালে আসছিস কেন?’
ফারাজ বাচ্চাদের মতো করে বলল,
‘ভাই! আমি বাংলাদেশ এসে পড়ছি।’
ফায়াদ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো।পরক্ষণেই হেসে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো ভাইকে। পিঠ চাপড়ে বলল,
‘ওয়েলকাল ব্যাক, ফারাজ!’
আখি বেগম কফি বানিয়ে কাপে ঢালছেন৷ সেটাই দাড়িয়ে দেখছে নীতি। আখি বেগম প্রশ্ন করলেন,
‘তুমি ফারাজের অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলে তাই না?’
‘জি’
আখি বেগম নীচু স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘ফারাজ কি কোনো কিছুতে জড়িয়ে গিয়েছে সেখানে? মানে খারাপ কিছু?’
আখি বেগমকে চিন্তিত দেখাচ্ছে। নীতি উনার চিন্তা কমাতে বলল,
‘না আন্টি। স্যার বেশির ভাগ কাজেই ডুবে থাকতো৷ আর মন খারাপ থাকলে গানে ডুবে যেত৷ কিন্তু খারাপ কিছুতে দেখি নি উনাকে।’
আখি বেগম স্বস্থির নিশ্বাস ত্যাগ করলেন।ফারাজকে নিয়ে তার বড্ড চিন্তা হতো।যাক ছেলেটা খারাপ কিছুতে জড়ায় নি। আখি বেগম তিন কাপ কফি ট্রে তে করে ধরায় দিলেন নীতির হাতে।বললেন কফি নিয়ে ফায়াদ আর ফারাজকে দিতে আর নিজেও খেতে।আখি বেগম ব্যস্ত হয়ে গেলেন মহা আয়োজন করতে। দুইমাত্র ছেলে তার ফিরে এসেছে।খুশি খুশি সব কাজ করছেন তিনি। আখি বেগমের মুখে হাসি দেখে নীতির ভালো লাগলো।
নীতি কফি নিয়ে রুমে নক করতে গিয়ে তার চোখ কপালে। ফায়াদ ফারাজকে বিছানার সাথে উলটো করে চেপে তার হাত পিছন দিকে মুচরে ধরেছে৷ ফারাজ ছুটার জন্য চেচামেচি করছে।ফায়াদ বলছে,
‘এখন বল ডাক্তারদের শক্তি কম কিনা?’
ফারাজ ব্যাথায় অস্থির হয়ে বলল,
‘না না ভুল হয়ে গেছে। অনেক বেশি শক্তি।ছাড় ভাই!’
ফায়াদ আরো কিছু বলতে যাবে কিন্তু দরজায় নীতি কে দেখে ফারাজকে ছেড়ে দিল। নীতির উদ্দেশ্যে বলল,
‘ভিতরে আসো নীতি।’
নীতি এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সে জানতো ফারাজ অনেক শক্তিশালী কারন সে ফারাজকে ওয়ার্কআউট করতে দেখেছে অনেকবার। তাকে এভাবে পরাজয় স্বীকার করতে দেখে অবাক হলো।ফায়াদ নীতি কে জিজ্ঞাসা করলো,
‘কেমন আছো?’
নীতির মুখে এখনো অবাকের রেশ। সে নিজেকে সামলে বলল,
‘এইতো ভালো।’
কফি দিতে দিতে কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে নীতি জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
‘স্যারকে এভাবে মারছিলেন কেন?’
ফায়াদ উত্তর দেওয়ার আগেই ফারাজ বিচার দেওয়ার মতো করে উত্তর দিল,
‘কারন আমি বলেছি ডাক্তারদের শক্তি থাকে না৷ তারা বসে বসে রোগী দেখতে দেখতে দুর্বল হয়ে যায়। এখানে আমাকে মারার কি আছে বলেন তো!’
ফায়াদ বাকা হেসে বলল,
‘প্রমাণ এখনো হয় নি মনে হয়? আরো কিছু উদাহরণ লাগবে নাকি ডাক্তার শক্তিশালী হয় কিনা!’
ফারাজ ঢোক গিলে বলল,
‘না’
নীতি খিল খিল করে হেসে উঠলো।হেসে বলল,
‘আপনি জোস তো ভাইয়া!’
ফারাজ গাল ফুলালো নীতির কথায়। ফায়াদ হেসে দিল। সেই মুহুর্তে ফায়াদের ফোন বেজে উঠলো। ফায়াদ তাকিয়ে আছে স্ক্রিন এর দিকে।রিসিভ করলে এদের সামনে কথা বলা মুশকিল। ফায়াদকে এভাবে স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারাজ বলল,
‘রিসিভ করিস না কেন?’
ফায়াদ ফোন রেখে দিয়ে বলল,
‘পরে করবো।’
বলতে বলতে ফোনটা আবার বেজে উঠলো। ফারাজ ফায়াদের ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
‘পরে করবি কেন এখন কর।’
ফোনের নাম্বার দেখে বলল,
‘আচ্ছা!! তো এই ব্যাপার।’
বলে ফোনটা রিসিভ করে ফেলল।লাউড স্পিকারে দিয়ে ফায়াদকে ইশারায় বলল কথা বলতে। ফায়াদ রাগীভাবে তাকালো ফারাজের দিকে। ফারাজ পাত্তা দিল না।নীতি দেখছে কি হয়!
অপরাজিতা ফোনের ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করছে।ফায়াদ এবার বলল,
‘হুম বলো।’
অপরাজিতা বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘কখন থেকে হ্যালো হ্যালো বলছি!’
ফায়াদ একবার ফারাজ ও নীতির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ঘুমোচ্ছিলাম!’
এবার অপরাজিতা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
‘জ্বর কমেছে?’
ফায়াদ স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘জ্বর নেই।’
জ্বর নেই শুনে অপরাজিতা জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনি কি হাস্পাতালের গিয়েছেন?’
‘না’
‘হুম ভালো করেছেন। আজ রেস্ট করেন। জ্বর থাকলে আরেকটা মিডিসিন নেন।আমি ক্লাস করতে যাচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ’
ফায়াদ মুচকি হেসে বলল,
‘আল্লাহ হাফেজ’
ফোন কাটতেই ফারাজ বলে উঠলো,
‘ডাক্তারকে মিডিসিন নেওয়া শিখাচ্ছে বাহ! এই তাহলে তোর পুচকি ফুল!’
ফায়াদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার সঠিক করে বলল,
‘অপরাজিতা নাম তার!’
ফারাজ বলল,
‘আচ্ছা যাই হোক দেখা করবো তার সাথে। সে নিশ্চয়ই জানে না তোর মতো দেখতে হুবহু একটা ভাই আছে?’
ফায়াদ কপালে ভাজ ফেলে প্রশ্ন করলো,
‘তো?’
ফায়াদ উত্তর দিল না।বাকা হাসলো।নীতি বোঝার চেষ্টা করছে ফারাজ আসলে কি করবে। কারন ফারাজকে এতো চঞ্চল সে কখনো দেখে নি তাই কি করবে তার জানা নেই। তবে মুখ দেখে মনে হচ্ছে কোনো শয়তা’নি বুদ্ধি পাকছে তার মাথায়।
দুপুরের একটু আগে ফায়াদকে নিয়ে টানাটানি করছে ফারাজ।
‘আরে একবারই তো। চল ভাই!’
ফায়াদ বলল,
‘কোনো লাভ হবে না।ওর মাথায় শয়তান তোর থেকে বেশি ঘুরে। সে বুঝে যাবে।’
‘বুঝবে না চল তুই!’
ফায়াদ শ্বাস ফেলে বলল,
‘চল!অল দ্যা বেস্ট’
ফারাজ নীতিকে বলল,
‘আপনিও চলেন নীতি।ঘুরাবো।’
দুপুরবেলা ক্লাস শেষ হতেই অপরাজিতা দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য। রিকশা যেন একটাও নেই রাস্তায়। হঠাৎ তার সামনে এসে দাড়ালো ফায়াদ। ফায়াদকে দেখে অবাক হলো অপরাজিতা।
‘ আপনি কেন এসেছেন! বাসায় না রেস্ট নিতে বললাম!’
ফায়াদ একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
‘একটা কাজে এসেছিলাম। তাই ভাবলাম দেখা করে যাই। ‘
‘ওহ। আমি কতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। একটা রিকশাও পাচ্ছি না। ‘
ফায়াদ বলল,
‘আসেন পার্কে যাই পাশের। বাসায় একটু পরে যেয়েন।’
অপরাজিতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
‘ এভাবে আপনি সম্বোধন করছেন কেন?’
ফায়াদ ভুল ঠিক করার মতো করে বলল,
‘অহ স্যরি। চলো।’
অপরাজিতা বলল,
‘চলেন!’
তারা পার্কে একটা বেঞ্চে বসলো।অপরাজিতা বলল,
‘আপনাকে আজ দেখবো ভাবি নি৷’
ফায়াদ দাত বের করে হেসে বলল,
‘মিস করছিলেন?’
অপরাজিতা কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে ফায়াদের দিকে। বলল,
‘মিস তো করেছি কিন্তু…’
‘কিন্তু?’
অপরাজিতা চুল টেনে ধরলো সামনের ব্যাক্তির।চুলে টান দিয়ে বলল,
‘আপনি কে?আমার ডাক্তার কোথায়?’
‘আ আয়া ছাড়েন।আমিই তো ফায়াদ ‘
অপরাজিতা ভয় পাচ্ছে। তবুও সে বলল,
‘না। মিথ্যা!.ফায়াদ এরকম না।’
সে আরো জোরে টান দিল চুল। ব্যাথায় চিল্লিয়ে ডাকলো,
‘ভাইই বাচা! তোর ফুল আমার মাথা ছিড়ে ফেলল।’
ফায়াদ পিছন থেকে এসে বলল,
‘আগেই বলেছিলাম এই প্ল্যান কাজে আসবে না।’
অপরাজিতা একবার তার পিছনে ফায়াদের দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার হাতের মধ্যে যার চুল ধরে আছে তার দিকে তাকাচ্ছে।কি হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। ফায়াদের সাথে আবার একটা মেয়েও দাঁড়িয়ে আছে।
ফায়াদ অপরাজিতাকে তার সেই স্বভাবসুলভ গম্ভির কন্ঠে আদেশের মতো করে বলল,
‘ছেড়ে দাও। ‘
শুনে অপরাজিতা সাথে সাথে ছেড়ে দিল।ছাড়া পেয়ে ফারাজ গিয়ে তার ভাইয়ের পাশে দাড়ালো। অপরাজিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে পাশাপাশি দুজন একইরকম দেখতে মানুষের দিকে। নীতি ফায়াদের পাশে দাড়ানো ছিল। সে এবার অপরাজিতার পাশে দাড়ালো। অপরাজিতা তীক্ষ্ণ চোখে একবার নীতির দিকে তাকিয়ে আবার দুজনের দিকে তাকালো।
অপরাজিতা কিছু সেকেন্ড ভাবনায় ব্যায় করে ফায়াদের উদ্দেশ্যে রাগী সুরে বলল,
‘আপনার ভাই আছে বলছিলেন কিন্তু জমজ সেটা তো বলেন নাই।’
ফায়াদ মাথা চুলকে বলল,
‘খেয়াল ছিল না!’
ফারাজ এর মধ্যে বলে উঠলো,
‘আপনার এতো শক্তি কেন বলেন তো! মাথা ব্যাথা বানিয়ে দিলেন!এতো তাড়াতাড়ি বুঝলেন কিভাবে।কথা ই তো শুরু করি নি ভালোভাবে।’
অপরাজিতা দুঃখিত হয়ে বলল,
‘স্যরি আপনি আসলে উনি সাজছেন ভেবে রাগ লাগছিল সাথে ভয়ও। আপনাদের চেহারা এক হলেও স্বভাব মিলে না।আপনার কথার স্টাইল, এক্সপ্রেশন উনার থেকে ভিন্ন।তার থেকে বড় কথা আপনার এক কান ফুটো করা। আর..’
নীতি এবার কৌতুহল বশত জিজ্ঞেস করলো,
‘আর?’
অপরাজিতা অন্যদিকে তাকিয়ে কিছুটা লজ্জামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
‘ফা ফায়াদের আমার প্রতি চাহনী অন্য রকম।’
ফারাজ অবাক হয়ে ফায়াদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘এই বুদ্ধির ডিব্বা কোথায় পাইলি তুই?ভাবছিলাম একটু বোকা বানাবো কিন্তু উনি উলটা আমার চুল টেনে দিল।’
অপরাজিতা লজ্জিত হলো।ফায়াদ অপরাজিতার অবস্থা বুঝতে পেরে ফারাজকে বলল,
‘পাশে একটা ক্যাফ আছে। নীতিকে নিয়ে গিয়ে বস। আমি আসছি।’
ফারাজ আর নীতি যেতেই ফায়াদ অপরাজিতার কাছে এসে বলল,
‘be easy!’
অপরাজিতা অভিযোগের সুরে বলল,
‘আপনি কেন রাজি হলেন এই ফালতু প্র্যাংকে?উনি এখন কি ভাব্বে। ‘
ফায়াদ অপরাজিতা গালে হাত বুলিয়ে বলল,
‘কিছুই ভাবে না।এখন হয়তো বুঝে গিয়েছে তুমি আমাকে কত ভালোভাবে চেনো। ‘
অপরাজিতা ফায়াদের শার্টের এক কোনায় ধরে নিচু স্বরে বলল,
‘আমি ভয় পেয়েছিলাম ভেবেছিলাম কে না কে।যখন ভাই ডাকলো তখন হিসাব মিলাতে পারলাম’
ফায়াদ হেসে দিল। সে অপরাজিতার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাটা শুরু করলো।ফলে অপরাজিতাকেও পা মিলাতে হলো।হাটতে হাটতে ফায়াদ অপরাজিতাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘এখন লাগছে ভয়? আমি যদি ফায়াদ না হই?’
অপরাজিতা ফায়াদের দিকে তাকিয়ে চমৎকার এক হাসি দিয়ে বলল,
‘আমার আপনাকে চিনতে কখনো ভুল হবে না।’
ফায়াদ অপরাজিতা হাতে আরো শক্ত করে আকড়ে ধরলো। অপরাজিতা হাটতে হাটতে গানের মতো করে বলল,
‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো বলেন তো!’
ফায়াদ সামনের দিকে চোখ রেখেই তার স্বভাবসুলভ কন্ঠে বলল,
‘মোটেও ভালো হতো না। বিয়ের বরযাত্রী দেখতে চাইলে এই পথ শেষ করে তোমার বাড়ির পথ ধরতে হবে।’
অপরাজিতা খিল খিল করে হেসে উঠলো। সেই হাসির শব্দ মন দিয়ে শুনলো ফায়াদ।এই বাচ্চা মেয়েটাকে সে ভালোবেসে ফেলেছে ভাবতেই মনে শিতল হাওয়া বয়ে যায়। ভালোবাসার অনুভূতি এতো সুন্দর কেন?
ফায়াদ হাটা থামালো। অপরাজিতা ফায়াদের দিকে তাকালো হাসি মুখে। ফায়াদ অপরাজিতার দিকে এক কদম এগিয়ে তার দিকে কিছুটা ঝুকে সোজা অপরাজিতার চোখে তাকিয়ে ধীর স্বরে তার গম্ভির পুরুষালি কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘তোমার প্রতি আমার চাহনী কেমন?’
(চলবে)
#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব একুশ
২১.
‘তোমার প্রতি আমার চাহনী কেমন?’
অপরাজিতার গা শিরশির করে উঠলো। আবারো এই দৃষ্টি! অপরাজিতা চোখ সরিয়ে ফেলল চোখ থেকে। উত্তর দিতে পারছে না সে। কিভাবে উত্তর দিবে ওই চোখে চেয়ে উত্তর দেওয়ার আগেই চোখের মাঝে ডুবে যায় সে। অনুভূতিরা যেনো ডানা মেলে উড়তে যায়। ভীষণ ভয়ানক কিছু করে ফেলতে ইচ্ছে করে। মন চায় একটু ছুয়ে দি প্রেমিক পুরুষকে। কিন্তু তার তো লজ্জা করে।
ফায়াদ অপরাজিতাকে অন্য দিকে তাকাতে দেখে আবার প্রশ্ন করলো,
‘বলো!’
অপরাজিতা তাকালো। জিব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে নিবে আর তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। ফায়াদ অপরাজিতাকে ইশারায় ফোন রিসিভ করতে বলল।ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রামিসা বেগম বলে উঠলেন,
‘ কোথায় তুই! বাসায় আয়।’
রামিসা বেগম তাড়া দিচ্ছেন। অপরাজিতা বলল,
‘আসছি মা।’
ফোন রাখতেই ফায়াদ বলল,
‘বাসা থেকে?’
অপরাজিতা মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বলল।ফায়াদ বলল,
‘আসো আমি পৌছে দেই।’
অপরাজিতা মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘না আপনি আপনার ভাইকে সময় দিন। আমি যেতে পারবো।’
ফায়াদ অপরাজিতা দিকে তাকিয়ে থেকে তার হাত ধরে রাস্তার দিকে হাটা শুরু করলো।অপরাজিতা হাটতে হাটতে বলল,
‘আমি যেতে পারবো তো।আপনাকে কষ্ট করে –‘
ফায়াদ হাতে চাপ দিয়ে বলল,
‘মুখ বন্ধ!রিকশা তে উঠায় দিচ্ছি আমি। বাসায় গিয়ে ম্যাসেজ করবে আমাকে।’
অপরাজিতা চুপ হয়ে গিয়ে বাধ্য মেয়ের মতো মাথা হেলালো। বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে একটা রিকশা পেল তারা। রিকশায় বসতেই ফায়াদ রিকশাওয়ালা কে ভাড়া দিতে নিলে অপরাজিতা বলল,
‘আমার কাছে আছে তো’
ফায়াদ একপলক তাকিয়ে ভাড়া মিটাতে মিটাতে বলল,
‘তা আমি জানি। আর আমার মানেই তোমার।’
অপরাজিতা মিষ্টি এক হাসি দিয়ে মিষ্টি কন্ঠে শুধালো,
‘আপনি পুরো মানুষটাই তো আমার।’
শুনে ফায়াদ কিছু বলল না। তবে তার অধর কোণে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠলো। সে রিকশা ওয়ালার উদ্দেশ্যে বলল,
‘মামা সাবধানে নিয়ে যেয়েন।’
তার পর অপরাজিতার উদ্দেশ্যে বলল,
‘আল্লাহ হাফেজ’
অপরাজিতাও বলল,
‘হুম আল্লাহ হাফেজ।’
রিকশা চলা শুরু করেছে। ফায়াদ তাকিয়ে আছে অপরাজিতার যাওয়ার পানে। হঠাৎ অপরাজিতার কিছু মনে পড়ায় সামান্য একটু গিয়েই রিকশা থামাতে বলল।রিকশা থামতে দেখে ফায়াদ ভ্রু কুচকে তাকালো। অপরাজিতা পিছে ঘুরে ফায়াদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘ওই মেয়েটা থেকে দূরে থাকবেন।তাকে আমি চিনি না।আগে আমি জেনে নেই তারপর কথা বলবেন।’
বলেই রিকশাওয়ালাকে বলল,
‘চলেন।
রিকশা চলে গেল।ফায়াদ তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলল,
‘পাগল মেয়ে’
~~~~~~
‘স্যার বেশি ব্যথা পেয়েছেন?’
ফায়াজ নাটকীয় ভাবে বলল,
‘আপনার কি মনে হয় যে অনেক আস্তে ধরেছে!’
নীতি মুখ টিপে হেসে দিল। ফারাজ কফি খাচ্ছে। মাথা ধরে গেছে তার। ছোট্ট একটা মেয়ে এতো শক্তি পায় কিভাবে! তার ভাই যে কারে ভালোবাসল!
নীতির পড়নে একটা লেডিস শার্ট এবং জিন্স। আশে পাশে যে কয়েকজন মেয়ে উপস্থিত আছে তার মধ্যে নীতিই একটু আধুনিকতায় মোড়ানো। পাশের টেবিলে বসা কিছু ছেলে বার বার তাকাচ্ছে। নীতি বিষয় টা খেয়াল করেছে বেশ কিছুক্ষন। তার ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। এমন ভাবে তাকানোর কি আছে! সে কি জোকার?
ফারাজ বিষয়টা লক্ষ্য করে নি। সে বসে আছে উল্টো করে। তাই সে দেখছে। ফায়াদ কেফে আসতেই বিষয়টা লক্ষ্য করলো।সে এসেই ফারাজের পাশে বসতে বসতে তার মাথায় একটা থাপ্পড় মেরে গম্ভীর ভাবে সুধালো,
‘একদিকে খেয়াল থাকলেই হয় না। আশে পাশেও নজর রাখা লাগে যে কি ঘটছে।’
ফায়াদকে সিরিয়াস শোনাচ্ছে তাই ফারাজ বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলো।বেশ কিছুক্ষণ পর বুঝে এলো তার। সে তো ভুলেই গিয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের স্বভাব। তাই খেয়াল ছিল না। পিছে ঘুরে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো পাশের টেবিলের দিকে। ফারাজের দৃষ্টি দেখে ভরকে গেল ছেলে গুলো। ফারাজ তারপর নীতির দিকে তাকিয়ে রাগীভাবে বলল,
‘ আপনার প্রব্লেম হচ্ছিল আমাকে বলেন নি কেন?’
নীতি মিন মিন করে বলল,
‘প্রবলেম না।আসলে—‘
ফায়াদ এবার বুঝানোর ভঙ্গিতে বলল,
‘শুনো নীতি৷ এখানের মানুষগুলো ভিন্ন। কিছু মানুষ আছে তুমি যদি তাদের সামনে অস্বস্তি অনুভব করো তারা তোমাকে আরো অস্বস্তি অনুভব করাবে। তুমি তাদের দৃষ্টি দেখে বারবার সংকোচে ভুগছিলে বলেই তাকাচ্ছিল। এটাই তাদের আনন্দ। তুমি ইগনোর করো দেখবে কেউ আর তাকাবে না। Be comfortable. হুম?’
নীতি মাথা ঝাকিয়ে বলল,
‘হুম’
নীতি বুঝ হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ আসে নি। তাই একটু অস্বস্তি লাগছিল৷ এখন সে সহজ হওয়ার চেষ্টা করছে।
ফায়াদ এবার নিজের জন্য অর্ডার করা কফি খেতে খেতে বলল,
‘আজ এসেছিস রেস্ট করবি। তা না করে তুই বাহিরে বাহিরে ঘুরছিস। টায়ার্ড লাগে না?’
ফারাজ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,
‘কেন তোর টায়ার্ড লাগে? শক্তি শেষ? ‘
ফায়াদ একপলক ভ্রু কুচকে তাকালো ফারাজের দিকে। পরক্ষণেই শার্টের হাতা উপরে তুলে বাকা হেসে বলল,
‘শক্তির প্রমাণ হয় নি মনে হয়।পাবলিক প্লেসে আরেকবার প্রমাণ দেই। কি বলিস?’
ফারাজ ঢোক গিলে বলল,
‘তোরা প্রেমিক প্রেমিকা দুইটা শুধু মারার ধ্যানে থাকিস নাকি?’
ফায়াদ উত্তর দিল না। এক গাল হেসে কফিতে চুমুক বসালো।ফারাজ এবার বলল,
‘ভাই তোর পুচকি ফুল দেখি অনেক ছোট।’
ফায়াদ দাতে দাত চেপে বলল,
‘she has a name!’
ফায়াদ রেগে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ফারাজ থেমে গিয়ে বলল,
‘হ্যা হ্যা অপরাজিতা। সে তো অনেক ছোট আমাদের থেকে। নীতির থেকেও হয়তো ৫/৬ বছরের ছোট হবে।’
ফায়াদ স্বাভাবিক ভাবে বলল,
‘১২ বছরের গ্যাপ!’
ফারাজ চোখ বড় বড় করে তাকালো।ফায়াদ যে এমন একটা ছোট মেয়েতে আটকে যাবে তা ভাবে নি ফারাজ। কারন ফায়াদের সবসময় ম্যাচুর মেয়ে পছন্দ ছিল। যাদেরকে আলাদা করে সামলাতে হবে না।কিন্তু অপরাজিতা তো পুরোটাই বাচ্চামিতে ভরপুর!
ফারাজ বলল,
‘কিন্তু তোর পছন্দ তো–‘
ফায়াদ জানে ফারাজ কি বলবে। কথা শেষ হওয়ার আগেই সে উত্তর দিল,
‘আমার তাকেই পছন্দ।তাকেই লাগবে।’
তারপর হালকা হেসে দিয়ে বলল,
‘I’m actually in love with her immaturity!’
ফারাজকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না। ফারাজ বুঝে গেছে তার মাত্রাতিরিক্ত জীবন নিয়ে সিরিয়াস থাকা ভাইটা একটা বাচ্চা ফুলের সুভাসে ডুবে গিয়েছে। ফারাজ খুশি হলো। ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে। তবে কোথাও একটা ব্যথাও লাগে। ফারাজ ব্যথা টাকে পাত্তা দিল না।
নীতি ফায়াদের কথা শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল,
‘ইশ কি সুইট!’
ফারাজ মুচকি হেসে বলল,
‘হুম ঠিক বলেছেন। ভালোবাসা জিনিসটা খুবই সুইট।’
ফায়াদ তাকালো ফারাজের দিকে।ফারাজ চোখের ইশারায় বোজালো সে ঠিক আছে।কফি শেষ করে ফারাজ বলল,
‘এখন বাসায় ফেরা যাক! ভাইয়ের ফুল কে তো দেখা হলোই। এখন আমার ঘুম দরকার একটা। ‘
নীতিও বাচ্চাদের মতো বলল,
‘হ্যা আমিও ঘুমাবো।’
তা শুনে ফায়াদ এবং ফারাজ উভয়েই হেসে দিল। নীতি তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে হাসে কেন?
ফারাজ বলল,
‘হ্যা চলেন।’
অপরাজিতা বাসায় পৌছাতেই দেখলো তার মা বিরক্তি মুখ দিয়ে কাজ করছে। মা কে৷ জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বিরক্তি নিয়ে বলল,
‘তোর রুমে গিয়ে দেখ। আর ওটারে বিদায় কর তাড়াতাড়ি। মেজাজ খারাপ লাগতেছে আমার।’
মায়ের কথা শুনেই বুঝলো মা খুব রেগে আছে। রুমে গিয়ে তার মেজাজ ও নষ্ট হয়ে গেল। ফায়াদের সাথে দেখা করে যে ভালো মুডটা ছিল তা রুমের ভিতরে থাকা ব্যক্তিকে দেখে ১৩ টা বেজে গেল।
রুমে প্রবেশ করেই দেখলো তার বিছানায় পা উঠিয়ে বসে আছে তার খালাতো বোন ইয়ানা।মেয়েটারে দেখলেই ব’মি করতে মন চায় অপরাজিতার। একে অপছন্দ করার কারন হচ্ছে পড়নে ছোট একটা ড্রেস।শরী’রের প্রায় সবই খোলামেলা। মেয়েটা ছেলে’বাজ। বেশ কয়েকবার ছেলেদের সাথে কু’কর্মে ধরা খেয়েছে। তবুও তার আফসোস নেই। নেশায়ও জড়িত। এসব কারনে রামিসা বেগম একে দেখতেই পারেন না। বোনের মেয়ে বলে বাড়ি থেকে সরাসরি বের করতে পারছেন না।। তাহলে থাপ’ড়িয়ে বাড়ির বাহিরে রেখে আসতেন। ইয়ানা মেয়েটার কথা বার্তা শুনলে যে কারো মেজাজ খারাপ হবে।
অপরাজিতা নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল,
‘তুমি এখানে কি করছো আপু?’
ইয়ানা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মাথা বাকিয়ে ঢং মিশিয়ে বলল,
‘তোকে দেখতে আসলাম। শুনলাম তোর নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে। কয়েকদিন পর আংটি পড়াবে। ‘
অপরাজিতা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
‘কে বলেছে তোমাকে?’
ইয়ানা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
‘রিল্যাক্স মা বলে নি। মা ইয়াসিনকে বলছিল তখন শুনেছি।কেন আমাকে দাওয়াত করতি না?’
অপরাজিতা মুখের উপর বলল,
‘না। আমি অবশ্য চাইবো না আমার জামাই নিয়ে তুমি উলটা পালটা কিছু করার কথা ভাবো।’
ইয়ানা বাকা হেসে বলল,
‘তোর টেবিলের উপর কতোগুলো ছবি পেয়েছি। ছেলেটা ড্যাম হ্যান্ডসাম!’
ইয়ানার কথা শুনে অপরাজিতার গায়ে আগুন ধরে গেল।সে ইয়ানার হাত খামচে ধরে বলল,
‘তোর সাহস তো কম না। তুই আমার টেবিলে হাত দিস কেন৷ আবার আমার জামাইয়ের দিকেও নজর দিস৷ বের হো তুই আমার বাসা থেকে!’
বলে সে ইয়ানাকে বাসার বাহিরে নিয়ে আসলো।ইয়ানা হাতে ব্যথা পেল।তবুও হেসে হেসে বলল,
‘আগে আগে দেখো কি হয়!’
অপরাজিতা রাগে চেচিয়ে উঠলো,
‘তুই যাবি?’
বলেই সে বাসার ভিতর ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
‘মা তোমার বোনের মেয়ে যেন আমার বিয়ের কোনো ফাংশনে না আসে।’
রামিসা বেগম বললেন,
‘তোর খালু রাজনীতি করে ভুলে গেছিস! এর বেশি কিছু করলে রাস্তায় নামাবে আমাদের। মেয়েটা তার জন্যই খারাপ হইসে। আমার বোনটার জীবন নষ্ট!’
অপরাজিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমে ফেরত গেল।টেবিলের উপর ফায়াদের ছবি গুলো গুছিয়ে রাখলো।একটু খেয়াল করে গুছালে হয়তো টের পেতো সেখানে একটা ছবি কম আছে।অপরাজিতা ভাবছে এই মেয়েটা আবার কি করে কে জানে!কিন্তু তার ডাক্তারের দিকে হাত বাড়ালে হাত ভেঙে ফেলবে সে।
~~~~~~~~~~
দুপুরে ঘুমিয়ে সন্ধ্যা বেলা উঠলো ফারাজ৷ ফায়াদ ল্যাপটপে কিছু পেসেন্ট এর ফাইল দেখছিল। ফায়াদকে দেখে ফারাজ মুচকি হেসে বলল,
‘গুড মর্নিং ‘
ফায়াদ ল্যাপটপ এর দিকে নজর রেখেই বলল,
‘গুড ইভিনিং!’
তারপর ল্যাপটপ বন্ধ করে ফারাজকে বলল,
‘বাবা এসেছে অফিস থেকে।চল’
বসার ঘরে আসতেই ফারাজ দেখলো ফারদিন আহমেদ গম্ভীর ভাবে বসে আছে। ফায়াদ বসলো সিঙ্গেল সোফায়।ফারাজ গিয়ে বাবার পাশে বসে বলল,
‘পার্টনার?’
ফারদিন আহমেদ গম্ভীরমুখে তাকালেন ফারাজের দিকে৷ পরক্ষণেই হেসে দিয়ে বললেন,
‘হেই চ্যাম্প!’
জড়িয়ে নিলেন ছেলেকে।ফারাজ এবং ফারদিন আহমেদ একসাথে কাজ করেছে অফিসে আগে। তখন ফারাজ তার বাবাকে পার্টনার বলতো। দুজনের স্বভাব আচরণ খুব মিলে।
ফায়াদ তার মা কে বলল,
‘ঘরটা আবার মাছের বাজার হয়ে যাবে মা’
আখি বেগম জোরে হেসে দিলেন। ফারাজ এবং ফারদিন আহমেদ পাত্তা দিলেন না।ফারাজ জিজ্ঞেস করল,
‘নীতি কই মা?’
‘ঘুমায়।’
‘ওহ আচ্ছা ঘুমাক তাহলে’
ফারদিন আহমেদ এবার বললেন,
‘আমি আর এখন থেকে অফিস যাবো না। তুমি সামলাও এখন থেকে এটা। ‘
ফারাজ ভ্রু নাচিয়ে বলল,
‘কেন? বাসায় থেকে বউকে সময় দিবে নাকি?’
ফারদিন আহমেদ ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,
‘তা না হয় দিলাম!’
ফারাজ দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘হুম হুম তোমারই তো সময়।’
ফারদিন আহমেদ ভাব নিয়ে বললেন,
‘আমার এতো সুন্দর বউকে সময় না দিয়ে অফিসে পড়ে থাকবো নাকি!’
আখি বেগম চোখ বড় বড় করে বললেন,
‘তোমরা বাপ ছেলেরা এতো নির্লজ্জ কেন বলো তো?’
ফায়াদ মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কারন তাদের মধ্যে —‘
আখি বেগম ফায়াদের দিকে ঘুরে শাসিয়ে বললেন,
‘এই চুপ! সব কিছুতে ডাক্তারি ঝারবি না’
ফায়াদ, ফারাজ এবং ফারদিন আহমেদ একে অপরের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেসে দিলেন৷ তাদের হাসি দেখে আখি বেগমের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করলো। বাপও ফাজিল সাথে ছেলে গুলোও।
(চলবে)