#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব চৌত্রিশ
৩৪.
ফায়াদ বাসায় আসতে আসতে বেশ রাত হলো।বাসায় চাবি দিয়ে প্রবেশ করলো। বাকিরা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে।নিশব্দে গিয়ে ফারাজের রুমের বাহিরে দাড়ালো।রুমের দরজা ভিড়িয়ে রাখা। ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলো রুম অন্ধকার করা। ভ্যাপসা একটা সিগারেটের গন্ধ আসছে। ফারাজ বসে আছে বিছানার এক কোণায়। মাথা নিচু করে। ফায়াদ ফারাজের কাধে গিয়ে হাত রাখতেই ফারাজ ফায়াদকে ঝাপটে ধরে কান্না শুরু করলো।ফায়াদ পিঠ চাপড়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
ফারাজ বলতে লাগলো,
‘ভাই আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। কি করবো বুঝতেছি না। আমাকে সাহায্য কর ভাই।তুই ছাড়া কেউ বুঝে না আমায়’
ফায়াদ কিছুই বলছে না৷ আগে শান্ত করা দরকার ফারাজকে।ফারাজ আবার বলল,
‘ভাই আমি কি করবো?’
ফায়াদ হয়তো জানে ফারাজ কি কারনে অস্থির কিন্তু সে ফারাজের মুখ থেকে শুনতে চায়। ফারাজ কিছুটা শান্ত হলে ফায়াদ তাকে বেডসাইড টেবিল থেকে পানি নিয়ে খাওয়ালো। রুমে সিগারেটের গন্ধে টিকতে পারা যাচ্ছে না। সে ফারাজকে নিয়ে ফারাজের বারান্দায় গেল। সেখানে দুভাই পাশাপাশি ফ্লোরে বসে পড়লো।
ফায়াদ তাকিয়ে আছে ফারাজ কখন বলা শুরু করবে।
ফারাজ বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করলো।
একে একে সব কিছু বলে সে দম নিল। ফায়াদ সব মন দিয়ে শুনলো। শুনার পর তার প্রশ্ন ছিল,
‘তুই কি চাচ্ছিস?’
ফারাজ বলল,
‘আমি বুঝতে পারছি না।’
‘এটা কোনো ছোট খাটো বিষয় না৷ একটা মেয়ে দিনের পর দিন তোকে ভালোবেসেছে। তুই কষ্ট পাবি বলে কখনো প্রকাশ করে নি। তাকে গ্রহণ না করলে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ। তার লাইফে তার এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। তুই তাকে নিজের লাইফে আগলে না নিলে তাকে বাধা দেওয়ার অধিকার তোর নেই।’
ফারাজ মাথা নিচু করে বসে আছে। মিন মিন করে বলল,
‘হারাতে চাই না। বাহিরে প্রত্যেকটা কাজে আমাকে সাথ দিয়েছে। বন্ধুর মতো পাশে থেকেছে। হারাতে চাচ্ছি না।’
ফায়াদ মৃদু হেসে বলল,
‘তাহলে বন্ধুকে সারাজীবন রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা নে।’
ফারাজ মাথা তুলে ফায়াদের দিকে তাকালো। বলল,
‘দ্বিতীয় বার ভালোবাসা যায়?’
‘যার সাথে স্বস্থি মিলে তাকে ভালোবাসা যায়’
ফারাজ ভাবলো।ফায়াদ তার কাধে হাত রেখে বলল,
‘আমি জানি তুই ভাবছিস এটা মাহিয়ার প্রতি অন্যায়। কিন্তু ভুল ভাবছিস। মাহিয়া নেই। মাহিয়া তোর প্রথম ভালোবাসা। নীতিকে শেষ ভালোবাসা হিসেবে রেখে দে। একাকীত্ব খুবই খারাপ। মাহিয়া নিশ্চয়ই চাইবে না ফারাজ বৃদ্ধ বয়সে একাকিত্বে ধুকে ধুকে জীবন কাটাক।মাহিয়াকে ভুলতে বলছি না আমি। সে থাকুক মনে। কিন্তু জীবনেও তো কাউকে দরকার৷ আর আমার মনে হয় নীতি মনের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিতে পারবে।’
ফারাজ ভাবছে। ফায়াদের কথা ভাবাচ্ছে। ফারাজ যতবার ভেঙে পড়েছে ততবার ফায়াদ তাকে টেনে তুলেছে। তাই পরিস্থিতি নিজের মতো না হলে ফায়াদকে আগে মনে পড়ে ফারাজের।
ফারাজ বলল,
‘নীতি এখন যদি না মানে? ‘
ফায়াদ কাধ চাপড়ে বলল,
‘আরো একবার ভার্সিটি লাইফের রোমিও ফারাজ হয়ে যাবি।’
ফারাজ হেসে দিল। ফায়াদ বলল,
‘লাইফ তোকে আরেকটা সুযোগ দিচ্ছে। কাজে লাগা’
‘হুম’
দুভাই অনেকটা সময় কথা বলল।ফারাজের মন হালকা হলো।
ফায়াদ উঠে দাড়ালো। বলল,
‘ঘুমাতে গেলাম। রুম সাফ কর। গন্ধে টিকা যাচ্ছে না।’
ফারাজও উঠে দাড়ালো। ফায়াদের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘থ্যাংক ইউ ভাই’
ফায়াদ ফারাজের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর বাকা হেসে ফারাজের পেটে ঘুষি মেরে বলল,
‘তোর থ্যাংক ইউ তুই ধুয়ে পানি খা। তোর জন্য আমার কোয়ালিটি টাইম নষ্ট হয়ে গেছে।শা’লা সিগারেট কম খাবি। বমি আসতেছে।’
বলে সে বেরিয়ে গেল ফারাজের রুম থেকে। ফারাজ পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে আবারো বসে পড়লো বারান্দার ফ্লোরে।
মোবাইল বের করে লাস্ট ম্যাসেজ টা আবার দেখলো যেখানে নীতি লিখেছে,
‘আমি আজ হোটেলে থাকবো। কিছুটা টাইম দরকার আমার। কাল অফিসে টাইমলি এসে পড়বো স্যার। আপনি টেনশন করবেন না।’
ফারাজ ম্যাসেজ টা দেখে বিরবির করলো,
‘হুম কাল থেকে নতুন কিছু হবে আপনার লাইফে।টাইম তো দরকারই।’
——————–
সকালে ঘুম ভাঙলেও অপরাজিতা বিছানা থেকে উঠলো না। কাল রাতের কথা ভাবছে আর লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে। ফায়াদ চলে না গেলে হয়তো কাল এক অন্যরকম রাত কাটতো তাদের।
ভাবতে ভাবতেই বাক্সের কথা মনে পড়লো। উঠে বাক্সটা নিয়ে আবার খুললো।
বাক্সটার মধ্যে ছোট ছোট চিরকুট আছে অনেকগুলো।ফায়াদ লিখেছে। চিরকুট গুলো তখন থেকে লিখা যখন থেকে ফায়াদের অনুভূতি শুরু।আবার পড়তে শুরু করলো সে চিরকুট গুলো।
‘আজকাল বড্ড বেড়ে গিয়েছো।এভাবে হুটহাট মনে মধ্যে হানা দিচ্ছ কেন?’
‘তোমাকে আমি ভাবতে চাই না কিন্তু তুমি আমাকে ভাবাচ্ছো।ভীষণ করে ভাবাচ্ছো।আমি কি নিজেকে ধরে রাখতে পারবো?’
‘পুচকি ফুল! এতো ভালোবাসো কিভাবে? আমি তো অনুভূতিতে হারিয়ে যাচ্ছি।’
‘আমি বোধ হয় ভালোবাসায় আটকে যাচ্ছি।’
‘তোমাকে মনে পড়ে।তুমি এতো ছোট কেন?আরেকটু বড় হতে।’
এটা পড়ে হেসে দিল। বুঝাই যাচ্ছে যখন যা মন চেয়েছে লিখেছে সে। এরকম অনেকগুলো।সর্বশেষ যেটা লিখা হয়েছে তা হলো,
‘তোমায় আমি ছাড়ছি না।পা’গল করে দিচ্ছো। প্রেম প্রেম অনুভূতির তাড়নায় পা’গল হয়ে যাচ্ছি।’
সবগুলো পড়ে অপরাজিতা বাক্সটা বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো আবার। ফায়াদের ফোনে ভয়েস ম্যাসেজ পাঠালো,
‘পা’গল হয়ে যান ডাক্তার সাহেব।আমার জন্য। এজীবনে শুধু আমারই রয়ে যান।’
‘কিরে এ+ পেয়েছিস বলে কি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিস?উঠিস না কেন? ক্লাস আছে না?’
মায়ের ডাকে ধ্যান ভাঙলো তার।বলল,
‘আসছি আসছি।’
ফারাজের আজকে ঘুম ভেঙেছে খুব লেটে।অফিসে গেল বেশ বেলা করে। অনেক দিন পর তার আজ অনেক ফুরফুরে লাগছে।অফিসে গিয়ে নিজের কেবিনে ঢুকেই দেখলো নীতি মুখ লটকিয়ে বসে আছে।নীতিকে এভাবে দেখে চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে?’
‘সকালে মিটিং ছিল।আপনি কই ছিলেন?’
ফারাজ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘ঘুমে ছিলাম।’
এরকম ভাবলেশহীন দেখে নীতির রাগ লাগলো।তবুও বলল,আ
‘আচ্ছা।’
নীতি চলে যেতে নিতেই ফারাজ বলল,
‘মিস.নীতি?’
নীতি পিছু ঘুরলো। ফারাজ বলল,
‘এক কাপ কফি প্লিজ!’
নীতি বেরিয়ে গেল কফি আনতে। কফি এনে দিতেই ফারাজ কফিতে চুমুক দিয়ে বলল,
‘চিনি বেশি দিয়েছেন’
নীতি ভ্রু কুচকে বলল,
‘আমি চিনি দেই নি তো’
ফারাজ নীতিকে বলল,
‘আপনি চেক করে দেখেন’
নীতি কফি মগ নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চেক করছে মগের তলায় চিনি আছে নাকি।সে বলল,
‘আমি চিনি নেই নি স্যার।’
ফারাজ সিরিয়াস ভাবে বলল,
‘কিন্তু অনেক মিষ্টি হয়েছে।’
নীতি কপাল কুচকে ভাবছে। সে তো চিনি দেয় নি। তাহলে? ফারাজ তাকিয়ে আছে নীতির ভাবুক চেহারার দিকে। ইশ কি কিউট লাগছে!
নীতি আবার বলল,
‘এটা তো ব্লাক কফি, আমি চিনি কেন দিব বলেন?’
ফারাজ এবার বুঝতে পেরেছে এমনভাবে বলল,
‘ওহ আচ্ছা? এটা ব্লাক কফি ছিল? তার মানে ঠিক আছে। দিন তো’
কফির মগ টা নীতির হাত থেকে নিয়ে আবার চুমুক দিল। বলল,
‘হ্যা ঠিকই বলেছেন।চিনি নেই’
বলে মিটমিট হাসতে লাগলো। নীতি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এটা কি ছিল।উনি কি পাগল হয়ে গেল? নীতিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারাজ খোচা মেরে বলল,
‘আমি জানি আমি সুন্দর।আর কতো দেখবেন?’
নীতি সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলল।পরক্ষণেই আবার চোখ পাকিয়ে তাকালো ফারাজের দিকে। তারপর কিছু না বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল।
নীতিকে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে ফারাজ উচ্চস্বরে হেসে দিল।
ফায়াদ অপরাজিতার ভয়েস ম্যাসেজ শুনলো দুপুরের পর। বুঝলো বাক্স খুলে সব পড়া হয়ে গিয়েছে। সে ফোন করলো অপরাজিতাকে। ফোন রিসিভ করতেই জিজ্ঞেস করলো,
‘কোথায় তুমি?’
‘ক্যাফে’
‘কার সাথে?’
‘একটা ফ্রেন্ড ‘
‘তুমি আবার কবে থেকে ফ্রেন্ডদের সাথে ক্যাফে বসো?’
‘আজকে থেকে জনাব’
ফায়াদ প্রশ্ন করলো,
‘ফ্রেন্ড টা কে?’
অপরাজিতা তার সামনের জনের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একটা মেয়ে। আমার সাথেই পড়ে।’
‘আচ্ছা। তাহলে পরে কল করছি। তোমরা এনজয় করো।’
‘জি’
ফোন রেখেই অপরাজিতা ভ্রু কুচকে তাকালো সামনের জনের দিকে। বলল,
‘আপনি আমাকে মিথ্যা বলালেন ভাইয়া?’
ফারাজ হাসি মুখে বলল,
‘স্যরি গো পুচকি ভাবি। আমার খুবই দরকার ছিল আপনার হেল্প।বাকিদের সারপ্রাইজ দিতে চাই। একাও প্লান করতে পারতাম কিন্তু একা বেশি কিছু মাথায় আসতো না।আপনার মাথা তো আবার এদিকে চলে’
অপরাজিতা গাল ফুলিয়ে বলল,
‘তবুও!’
ফারাজ বলল,
‘ভাইকে আমি পরে বলব। রিল্যাক্স।’
‘হুম’
তারা দুজনে অনেক আলোচনা করে অনেক কিছু প্লান করলো। তারপর ক্যাফে থেকে বেরিয়ে ফারাজ অপরাজিতাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিল।যাওয়ার আগে ফারাজ অপরাজিতাকে দুষ্টুমির স্বরে বলল,
‘ছোট ভাবি। কালকের জন্য স্যরি।’
বলে ফারাজ অপেক্ষা করে নি। সে চলে গিয়েছে।অপরাজিতা ভাবছে স্যরি কিসের জন্য ছিল। কাল কি হয়েছে?অনেকক্ষন ভাবার পরে অপরাজিতার বোধগম্য হলো স্যরি কিসের।অপরাজিতা লজ্জায় পড়ে গেল।মনে মনে ভাবলো,
‘অসভ্য ভাই দুইটা!এগুলো ও শেয়ার করা লাগে? আবার স্যরিও বলছে। হায়হায়!’
(চলবে)
#প্রেম_প্রেম_পায়
#স্বর্ণালী_সন্ধ্যা
পর্ব পয়ত্রিশ
৩৫.
দুদিন পরের ঘটনা।ফারাজ বিকেল বেলা সকলকে জড়ো করেছে অপরাজিতাদের বাসার ড্রয়িং রুমে। যেহেতু অপরাজিতাকে তুলে দেওয়া হয় নি তাই নিজেদের বাসায় ডাকতে পারে নি৷ সবাই বসে আছে কি উপলক্ষে তাদের ডাকা হয়েছে তা শুনার জন্য।
ফায়াদ আর অপরাজিতা পাশাপাশি বসে আছে। অপরাজিতার মুখে কোনো কৌতুহল নেই। আছে শুধু এক্সাইটমেন্ট।ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘আরে বলিস না কেন?’
ফারাজ ঘড়ি দেখে বলল,
‘দাড়াও আরেকটু।’
কলিং বেল বেজে উঠলো। ফারাজ গিয়ে দরজা খুলে একটা বাক্স নিয়ে আসলো। সবাই তাকিয়ে আছে জানার জন্য।ফারাজ বাক্সটা খুলে সেখান থেকে একটা একটা করে কার্ড বের করে সকলের হাতে দিল। সবাই কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে ছিল। কার্ড হাতে পেয়ে অবাক হলো। উলটে পালটে কার্ড দেখছে সকলে। ফায়াদ কার্ড পড়লো,
‘কাজ থেকে ছুটি’
পড়ে ভ্রু কুচকে তাকালো ফারাজের দিকে৷ ফারাজ তা দেখে মাথা নাড়িয়ে বলল,
‘রুকো জারা, সাবার কারো।’
সবাই কার্ড দেখে ফারাজের দিকে তাকিয়ে আছে আসল কাহিনি জানার জন্য। ফারাজ এবার কেশে বলল,
‘একটা ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করেছি। ফুল ফ্যামিলি। কাজ টাজ করতে করতে সবাই নিশ্চয়ই খুব বোর হয়ে আছো। তাই এই ভাবনা।সবাই মিলে কিছুদিন নাহয় ছুটি কাটাই? আর হ্যা এটা পুরোটা আমার পক্ষ থেকে। কারো থেকে না শুনবো না।’
ফায়াদ সব শুনে অপরাজিতার কানের কাছে বলল,
‘তুমি জানতে তাই না?’
অপরাজিতা বলল,
‘কে বলেছে?’
ফায়াদ কার্ডের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কার্ডের আইডিয়া নিশ্চয়ই তোমার!’
অপরাজিতা মিট মিট হাসলো।ফারাদিন আহমেদ বললেন,
‘এটা তো মুখেই বলা যেত।কার্ডের কাহিনি কি?’
ফারাজ অপরাজিতার দিকে তাকালো। অপরাজিতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘কার্ডের নিচে কিছু জায়গা খালি আছে দেখুন। ওখানে হেডলাইন দেওয়া অনুভূতি। ট্রিপ এর শেষদিন এখানে সবাই নিজেদের অনুভুতি লিখবেন। যার যেটা ইচ্ছা।তারপর সেটা নিজের কাছে রেখে দিতে পারেন অথবা প্রিয় মানুষকেও দিতে পারেন।’
নীতি কার্ডটার শেষে তাকিয়ে ভাবলো,
‘অনুভূতি বলা বারণ। লিখা তো যেতেই পারে।’
রামিসা বেগম প্রশ্ন করলেন,
‘তুই জানতি ট্রিপের কথা?’
ফারাজ বলল,
‘আমি বলেছিলাম। আমার কিছু আইডিয়া লাগতো।’
আখি বেগম বললেন,
‘কে কে যাচ্ছি?’
ফারাজ বলল,
‘আমরা সবাই, রিজু, রাফিয়া যাবে মামি যাবে না। বলেছে তাদের নিতে। আর ছোট্ট ভাবির কাজিন সামির-সামিয়া, আমিনা আন্টি তাদের আমি বলি নি।উনার বলার কথা ছিল।’
অপরাজিতা বলল,
‘বলেছি। শুধু সামির যাবে।’
ফায়াদ এবার মুখ খুলল,
‘ট্রিপ কবে?’
ফারাজ মাথা চুলকে বলল,
‘পরশু’
সবাই অবাক হলো।এতো তাড়াতাড়ি। গোছগাছের একটা ব্যাপার আছে তো। আবার আসিফ ইসলাম ব্যবসায়ীক মানুষ তার তো কাজ আছে। নানা জনের নানা সমস্যা। সবাই কে অনেক কসরত করে মানালো ফারাজ। অপরাজিতা বলল,
‘কিছুদিন এর জন্য জীবন থেকে ব্যস্ততা বাদ দিয়ে দিন সবাই।কিছু সময় নিজেদের উপহার দেওয়া যাক।’
চলে আসার সময় ফায়াদ অপরাজিতাকে বলল,
‘তোমার ক্লাস আছে না?এভাবে পড়াশোনা মিস দেওয়া ঠিক হবে?’
‘আমি ম্যানেজ করে নিব। ট্রিপের পর দিন রাত এক করে পড়বো।’
ফায়াদ গম্ভীর ভাবে বলল,
‘হুম’
অপরাজিতা ফায়াদের পেটে চিমটি কেটে বলল,
‘আহা এতো ভাবার কি আছে। শুনুন কি বলি।’
‘কি?’
অপরাজিতা লাজুক মুখে বলল,
‘বিয়ের পর এটা আমাদের প্রথম কোথাও যাওয়া🤭’
ফায়াদ বলল,
‘তো?’
অপরাজিতা ভেঙচি কেটে বলল,
‘ধেত নিরামিষ!’
বলে চলে যাওয়া ধরলে ফায়াদ হাত টেনে বাকা হেসে বলল,
‘এখনো নিরামিষ বলো!’
অপরাজিতা জিবে কামড় দিয়ে আগের দিন গুলো স্মরণ করলো তারপর বলল,
‘ভুলে ভুলে’
——————————
যাত্রার দিন। বিকালে যাত্রা শুরু হবে। এখন দুপুর। সবাই সবকিছু বার বার দেখে নিচ্ছে ঠিক আছে কিনা। দুপুরের খাবার খেতে বসে ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘অনেক দিন পর যাচ্ছি কোথাও। ব্যস্ততার কারনে কিছুই হয়ে উঠে না।’
ফারাজ বলল,
‘হ্যা সে জন্যই তো তোমার আর আম্মুর জন্য ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করেছি।’
আখি বেগম ভ্রু কুচকে বললেন,
‘আমাদের জন্য মানে? ‘
ফারাজ মিট মিট করে হাসছে। ফায়াদ ফারাজের দিকে তাকিয়ে সেও হাসতে হাসতে বলল,
‘তোমার আর বাবার কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড হবে তাই।’
আখি বেগমের ভ্রু আরো কুচকে গেল।সে বুঝার চেষ্টা করছে। রাফিয়া তা বুঝতে পেরে বলল,
‘আরে ফুপি। হানিইইইইমুন!’
আখি বেগম চোখ বড় বড় করে তাকালেন।বললেন,
‘বদ’মাশ ছেলে’
সকলে হেসে দিল। ফারদিন আহমেদও হাসছেন। আখি বেগম তা দেখে বললেন,
‘লজ্জা নাই? আবার ছেলেদের এসব কথা শুনে হাসো?’
ফারদিন আহমেদ বললেন,
‘লজ্জা থাকলে তো আর—কিছু না’
আর বলতে পারলেন না স্ত্রীর চোখ রাঙানিতে।
‘অপরাজিতাদের আনতে যাবে কে?’
ফায়াদ বলল,
‘আমি’
‘আচ্ছা।আমরা ফারাজের সাথে বাসের ওখানে চলে যাবো। তুই তাদের নিয়ে আসিস’
যাত্রার সময় কাছাকাছি চলে এসেছে।ফায়াদ গিয়েছে অপরাজিতাদের আনতে। ফারাজরাও বের হয়েছে। আখি বেগম তালা মারলেন বাসা তে। আজ ফ্যামিলি গাড়ি ভাড়া করেছে। তারা বাসে উঠলে গাড়ি নিয়ে আসবে কে? তাই নিজেদের গাড়ি নেয় নি। গাড়িতে উঠার সময় নীতি অপেক্ষা করলো লাস্ট এ উঠবে তাই। সে ঠাসাঠাসি করে উঠবে না। শেষের দিকে সিট বাকি। পিছনে রিজু আর নীতি বসলো।
ফারাজ উঠতে গিয়ে দেখলো গাড়ি ভরে গিয়েছে। সে এতোক্ষন লাগেজগুলো রাখছিল। শেষে একটা সিট আছে নীতি আর রিজুর পাশে। নীতিকে দেখে ফারাজের মনে লাড্ডু ফুটা শুরু করলো।সে গাড়ির দরজা খুলল।রিজুকে বের করে নিজে বসলো মাঝখানে।
তা দেখে নীতি কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল।সাইডেই বসতে পারতো।যাক গা। যা খুশি করুক। তাতে নীতির কি?
ফারাজ বেশ জায়গা নিয়ে বসেছে। নীতি প্রথমে পাত্তা না দিলেও গাড়ি চলার পর বুঝলো ফারাজ আসলেই অনেক জায়গা নিয়ে বসেছে। নীতি ফারাজকে ডেকে আস্তে করে বলল,
‘এতো জায়গা জুড়ে বসেছেন কেন?’
ফারাজও ফিসফিস করে বলল,
‘আপনি সরে যাওয়া বন্ধ করেন তাহলে আর জায়গা নিয়ে বসবো না।’
ফারাজ বসার পর নীতি সরে গিয়েছিল। তারই শোধ নিল ফারাজ। ফারাজ এবার ঠিকঠাক হয়ে বসলো। নীতিও আর চাপলো না।তবে মনে মনে বকলো ফারাজকে।সকলে নানা কথা বলছে।রাফিয়া তো একেবারে সামনে বসে পটর পটর করতেই আছে।
বাসে এসে জড়ো হলো সবাই। সকলে মিলে বাসে বসলো। বড়রা সামনের দিকে বসেছে।ফায়াদ আর অপরাজিতা শেষের দিকে বসেছে একসাথে। নীতি বাসেও যখন আস্তে ধীরে উঠলো তখন দুটো সিট খালি ছিল। এক হচ্ছে রাফিয়ার পাশে যেটা ফায়াদ আর অপরাজিতার ওইপাশে।আরেক হচ্ছে ফায়াদদের এক সিট সামনে ফারাজের সাথে।নীতি চাইল রাফিয়ার সাথে বসতে। রাফিয়াকে বলল,
‘রাফিয়া আমি তোমার সাথে বসি?’
রাফিয়া হ্যা বলতে নিল।কিন্তু ফায়াদের দিকে চোখ যেতেই দেখলো ফায়াদ ইশারায় না বলতে বলছে। রাফিয়া অন্যদিকে তাকিয়ে আছে দেখে নীতিও সেদিকে তাকালো।দেখলো ফায়াদ অপরাজিতাকে কিছু বলছে। নীতি আবার জিজ্ঞেস করলো,
‘রাফিয়া?’
‘হ্যা?? নায়ায়া’
রাফিয়ার হকচকিয়ে যাওয়ায় নীতি বলল,
‘কি হয়েছে?’
রাফিয়া নিজেকে সামলে বলল,
‘না আসলে আপু। আমার একটু রিল্যাক্স এ যাওয়া চাই। বাসে মাথা ঘুরায়। তাই আমি দুই সিট নিয়ে শুয়ে শুয়ে যেতে চাচ্ছি। তুমি মাইন্ড করবা না তো?’
‘না না সমস্যা নেই।’
নীতি বাধ্য হয়ে গিয়ে ফারাজের পাশে বসলো।ফারাজ নীতিকে বসতে দেখে বলল,
‘আমার সাথে আগেই বসলে কি গায়ে ঠোসা পড়তো?’
নীতি মেকি হেসে বলল,
‘আমার পড়তো না। তবে আপনার পড়তেই পারে।’
রাফিয়া নীতিকে সে কথা বলায় তার পিছনের সিটে বসা রিজু তাকে জিজ্ঞেস করলো,
‘তোর কবে থেকে বাসে বসলে মাথা ঘুরায়?’
রাফিয়া হেসে বলল,
‘আজকে থেকে।’
রিজুর পাশের সামির বসে ছিল।সে বলল,
‘তোমার বোন নাটকও পারে’
রিজু আর সামির ইতিমধ্যে ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে।একই ব্যাচ তারউপর বেয়াইও বটে।
রিজু সামিরের কথা শুনে বলল,
‘তা ভালো পারে।’
রাফিয়া সামনে থেকে বলল,
‘আমি কিন্তু শুনতেছি।’
বাস চলতে শুরু করলো। তারা যাচ্ছে কক্সবাজার। ৫ দিন এর ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করেছে ফারাজ। সারা বছরের ব্যস্ততা থেকে ৫ টা দিন সকলে যাতে মন খুলে আনন্দ করে সেই ব্যবস্থা করেছে সে। হয়তো সেও মন খুলে কিছু বিষয় এই ৫ দিনের মধ্যে উপলব্ধি করবে এবং বিশেষ একজনকে উপলব্ধি করাবে।
ফারাজ ভাবনায় ডুবে আছে। বাস চলছে অনেকটা সময় ধরে। বিকেলটা কেটে আকাশ সন্ধ্যার আভাশ দিচ্ছে।অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকার পরে নীতি গলা খাকারি দিল। ফারাজ ভাবনা থেকে বের হয়ে নীতির দিকে তাকালো।নীতি আস্তে করে জিজ্ঞাসা করলো,
‘উনার কথা ভাবছেন?’
ফারাজ বুঝতে না পেরে বলল,
‘কার?’
‘মা মাহিয়া আপু’
ফারাজ তাকিয়ে রইলো নীতির দিকে। কিছু বলছে না। নীতি এদিকে ওদিক তাকিয়ে বলল,
‘না মানে তার সাথেও ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবছেন কিনা তা জিজ্ঞাসা করলাম।’
ফারাজ এবার দৃষ্টি সরিয়ে বলল,
‘না। তার সাথে ঘুরা হয় নি। সময়টা পাই নি। পড়াশোনা, বিজনেস শিখতে ব্যস্ত ছিলাম।তারপর তো’
নীতি বুঝলো সে ভুল টপিক উঠিয়ে ফেলেছে।সে ভেবেছিল ফারাজ মধুর স্মৃতিচারণ করছে।
নীতি অপরাধী কন্ঠে বলল,
‘স্যরি আমি বুঝি নি’
ফারাজ হেসে দিল। বলল,
‘ইটস ওকে।’
নীতির বুকে চিনচিন ব্যথা করছে। সে আবারো কষ্ট দিল ফারাজকে। নিজেরও খারাপ লাগছে।নীতি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে বারবার। নিজেকে ফারাজের থেকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা।তার মনে হচ্ছে সে বাংলাদেশ এসে ভুল করেছে।এখানে এসে সে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।তার কান্না পাচ্ছে। ফারাজ নীতিকে দেখছে। নীতিকে এমন হাসফাস করতে দেখে ফারাজ আলতো করে নীতির হাতে হাত রাখলো।নীতি তাকাতেই ফারাজ নীতিকে ধীর স্বরে বলল,
‘নীতি!ইটস ফাইন! আই এম ওকে।’
নীতি হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো।ফারাজ এবার আর হাত সরালো না। সে নীতিকে হাত বুলিয়ে শান্তনা দিচ্ছে।
(চলবে)