প্রেয়সী পর্ব-১৮+১৯

0
259

#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখনীতেঃমুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৮

৩৫.

হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই আমার ফোনটা হাতে তুলে নিলাম! কিছুক্ষণ আগে অপরিচিত লোকটার নাম্বার থেকে আসা ম্যাসেজ গুলো পূনরায় স্ক্রল করতে লাগলাম! ভেতরটা ক্রমশই অস্থির হচ্ছে। ম্যাসেজ গুলো স্ক্রল করেও যেন শান্তি হচ্ছে না! তাই উত্তেজিত হয়েই টাইপ করলাম তার নাম্বারে।

—-” আপনার হঠাৎ গান গাইতে কেন ইচ্ছে হলো?”

সেন্ড অপশনে ক্লিক করে আঁড়চোখে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম! এখন শুধু দেখার বাকি উনি ফোনটা হাতে তুলেন কি না! অস্থিরতায় হাসফাস করছে মনের ভেতর। টানা দুই মিনিট পেরিয়ে যেতেও যখন দেখলাম রাহিয়ান ভাইয়া ফোনটা বের করছেন না তখন অধৈর্য্য হয়েই নিজের ফোনটা চেক করলাম! ম্যাসেজ টা গেলো কি গেলো না? নাকি উত্তেজনার বসে অন্য কাউকে সেন্ড করে দিয়েছি! একদম নিখুঁতভাবেই অপরিচিত লোকটার নাম্বার টা চেক করলাম! আর তার সাথে ম্যাসেজ গুলোও। সবই ঠিকঠাক। ম্যাসেজও সময় মতো গিয়েছে তবুও কেন উনি ফোনটা হাতে তুলছেননা! আমার ভাবনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে উনি নিশ্চিত ফোনটা বের করবেন।

আরফান ভাইয়া, রূপ ভাইয়া,অরিন আপু আর রাহিয়ান ভাইয়া চারজন মিলে কোনো এক জরুরী আলাপে ব্যস্ত আছেন দেখা যাচ্ছে। বাকিরা সবাই যে যার মতো করে কথা বলছেন! মনে হচ্ছে না রাহিয়ান ভাইয়া ফোনটা বের করবেন! উনি যদি এই মুহুর্তে ফোন বের নাও করেন অথবা ম্যাসেজের রিপ্লাই নাও দেন তবুও আজ অনেক ধোঁয়াশা কেটে যাবে। হয়তো এটাও হতে পারে যে উনি ফোন বেরই করলেননা অথচ ম্যাসেজের রিপ্লাই ঠিকই আসলো! নিজের ভাবনাকেই যেন ধীরে ধীরে বাস্তবতায় রূপ পেতে দেখছি।

—-” নিধিইইইই ওঠ না এবার! জলদি আমার সাথে রুমে চল! আয়….”

রাইয়ের হাঁকে চমকে উঠলাম। মেয়েটা ঠিক সময় মতো হারিকেনের আলো নিভিয়ে দিতে ওস্তাদ! গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে ওকে ধমক দেওয়ার জন্যই প্রস্তুত হলাম ঠিক এমন সময়ই আমার ফোন ভাইব্রেট করলো। চোখ জোড়া আমার আপনাআপনিই বড় হয়ে গেলো। অপরিচিতর ম্যাসেজ এসেছে। খুশিতে মনটা নেচে উঠতে চাইলেই আমি গলা চেপে ধরে রাহিয়ান ভাইয়ার দিকে তাকালাম। কিন্তু রাহিয়ান ভাইয়া তো এক ভাবেই বসে আছেন। তার নির্বিকার ভঙ্গিতে ক্ষনিকের জন্য হতাশ হলেও পরক্ষণেই আবারও খুশিতে মনটা নাচ পাড়লো। মনে স্বস্তি নিয়েই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম! মনকে শান্তনা দিয়ে বেঝালাম, “অপরিচিত লোকটা তবে উনি নন।”

—-” নিধু উঠবি প্লিজ!”(চিল্লিয়ে)

রাইয়ের চিল্লানিতে লাফ মে/রে দাঁড়িয়ে গেলাম! বাকি সবাইও অবাক চোখে ওর দিকে তাকালো। আমি ওর মুখ চেপে ধরে সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে সোজা রুমে চলে এলাম! রুমে ঢুকেই গেট টা লক করতে করতে অপরিচিতর ম্যাসেজে চোখ বুলালাম!

—-” তুই ভালোবাসা মাখানো শেষ দৃষ্টি,
আমি প্রতিটি ক্ষনে অপেক্ষার প্রহর গুনি ভালোবেসে মাতাবো বলে…..!
ইহা আমার কল্পনা স্রোত শুধু,
তবুও চলতে থাকুক অবিরত।

কি ভাবছো? ছেলেটা ভীষণ পাগলাটে টাইপের? কবিদের মতো শুধু কবিতা শুনিয়েই যাচ্ছে তোমাকে! জানো আমি নিজেই বড্ড বেশি অবাক! এর আগে আমি কখনোই কবিতা আবৃত্তি করিনি! কিন্তু এখন! রোজ…তিনবেলা শুধু কবিতাই লিখে চলেছি! কি এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে আমার মাঝে! আমি তোমাকে তা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছি নীলাদ্রিতা।”

আমি নীরব দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকালাম! আমার সমস্ত অস্থিরতা কেটে গিয়ে পূনরায় সেই অস্থিরতা গুলো আবারও আমার শরীরের মাঝে বিচরণ করে চলেছে! মানুষটা অদ্ভুত। ভীষণ অদ্ভুত!

—-” নিধি!”(চিল্লিয়ে)

মেয়েটা আজ বড্ড বেশি চেঁচাচ্ছে। রে/গে গিয়ে ওর কটমট চোখে তাকাতেই চুপসে গেলো রাই। কাচুমাচু করে বলল,

—-” মা কল দিচ্ছে বারবার। বাবার নাকি প্রেশার বেড়েছে! আমার বাসায় ফিরতে হবে!”

—-” কি বলছিস?”

—-” হ্যাঁ রে! এই যে দেখ.. এখনও কল দিয়ে যাচ্ছে! কি করি বলতো? ভাইয়াও যে বাসায় নেই! মা ভীষণ চিন্তা করছে রে! আমাকে যেতেই হবে!”

আমি করুন চোখে তাকালাম রাইয়ের দিকে। এই মুহুর্তে ওকে আঁটকানো কিছুতেই ঠিক হবে না! কিন্তু এতো রাতে ওকে একাই বা ছেড়ে দেই কি করে? রাই অস্থিরতায় হাস ফাঁস করছে! আমার মুখ চেয়ে কিছু বলছে না পাছে আমি বকে দেই এই ভেবে! বাবার চিন্তা যে কতটা মা/রা/ত্ম/ক তা আমার চেয়ে আর কে ভালো বলতে পারবে!

—-” আচ্ছা তুই এখানে বস আমি তোর যাওয়ার একটা ব্যবস্থা করছি!”

আমি যেতে নিলে রাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমায় কোথাও যেতে বারন করে বলল,

—-” তোর কোনো ব্যবস্থা করতে হবে না! আমি এই সামনে থেকেই একটা সিএনজি ধরে ঠিক চলে যাবো!”

—-” কি বলছিস কি? পাগল হয়ে গেলি নাকি? আমি এই রাতে তোকে একা ছেড়ে দিবো তুই ভাবছিস কি করে বলতো? আবার বলছিস সিএনজি করে চলে যাবি! হাউ ষ্টুপিড!”

রাই বুঝতে পারলো বুঝি! তাই আবারও মাথা নীচু করে নিলো। আমি চটজলদি দরজা খুলে সোজা ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম! কিন্তু ছাদ অব্দি পৌঁছানোর আগেই পেছন থেকে ডাক পড়লো বউমনির। বউমনিকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই আমি একই স্পিডে ফেরত গেলাম তার কাছে। খানিকক্ষণ ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে বউমনির হাত ধরে বললাম,

—-” আমি তোমাকে খুঁজতেই ছাদে যাচ্ছিলাম গো!”

বউমনি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

—-” আমাকে খুঁজতে?”

—-” হু! একটা প্রবলেম হয়েছে গো বউমনি! একটা আর্জেন্ট হেল্প দরকার!”

—-“কি হয়েছে? সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো?”

বউমনি বিচলিত হয়ে উঠতেই আমি তাকে শান্ত করে রাই এর ব্যপারটা খুলে বললাম! বউমনি সবটা শুনে তৎক্ষনাৎ সলিউশনও বের করে দিলো। কিন্তু এই সলিউশনটা আমার প্রথম দফায় পছন্দ না হলেও পরক্ষণে রাইয়ের কথা ভেবে মেনে নিতে হলো। রাহিয়ান ভাইয়ার সাথে রাইকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু রাই বাঁধালো আরেক বিপত্তি! সে বলছে “এতখানি পথ আমি একা রাহিয়ান ভাইয়ার সাথে যেতে পারবো না!আমার প্রচুর আনইজি লাগবে!” তাই বাধ্য হয়ে বাধ্য মেয়ের মতো আমিও উঠে পড়লাম তার গাড়িতে। মেয়েটা সত্যি বড় তার ছিঁড়া। কবে যে একটু বুঝবে কে জানে!

৩৬.

রাইয়ের বাসায় ওকে নামিয়ে দিয়ে ফিরতে ফিরতে আমাদের রাত ২-টা বাজলো। ফিরতে ফিরতে বলতে এখনো মাঝপথেই আছি! বাড়ির গেট দেখার সৌভাগ্য এখনো হয়ে উঠেনি! তখনকার আকাশটা তাঁরাদের মাঝে বেশ ঝকমক করলেও এখন বেশ মেঘলাটে হয়ে আছে! চোখের সামনে দূরবীন রাখলেও একটা তাঁরারও দেখা মিলবে না! সেই সাথে বারে বারে দমকা হাওয়ারও আচ পাচ্ছি। চুপচাপ কোনো কথা না বলেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন মহাশয়। সেই দুপুরের পর থেকে এখনো অব্দি একটা কথাও আওড়ালেন না আমার সাথে! আচ্ছা উনি কি রাগ করে আছেন আমার উপর? একবার জিজ্ঞেস করে দেখবো? ধুর বাবা! আমি জিজ্ঞেস করলেই বা কি? উনি কি ধিতাং ধিতাং ধিন-তানা করে আমাকে বলবেন, “হ্যাঁ নিধি আমি তোমার উপর মা/রা/ত্ম/ক রেগে আছি!ইউ স্যুড এপ্যোলাইজ টু মি”

উফফ! না বললে নাই! উনার কথা বলার ধরন শুনলেই তো আমি আচ করতে পারবো যে উনি রেগে আছেন কি নেই!

—-” উহুম উহুম!”

গলা টা ভালো করে ঝেড়ে নিচ্ছি! আসলে তেমন কিছুই না! এমন করার মানে হলো আমি উনার সাথে কথা বলতে চাই,আর এই মুহুর্তে আমি উনার ফুললি এটেনশনও চাই তাই সংকেত দিচ্ছি! উনি যদি বুঝেন তাহলে তো আর নেক্সট পদক্ষেপ নিতে হবেনা আর যদি না বুঝেন তবে যে নেক্সট পদক্ষে….

—-” কিছু বলবে?”

গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন উনি! আমি তো অবাক। না দেখেও বুঝতে পারলাম অবাক-খুশিতে আমার চোখ জোড়া ডিম্বাকৃতির আকার নিয়েছে। আমি চোখ ঝাপটে উনার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে বললাম,

—-” আ..আপনি কি… না মানে! আ..আমি কি… স..সরি সরি! (ইশশ কি যা তা বকছি! শাটআপ নিধি!) বলছিলাম যে,…”

—-” হোয়াট!”

উনার হোয়াট বলার ভঙ্গি যেন ইট তুলে ছুঁড়ে মা/রা/র মতো লাগলো! আমি চমকে উঠে গাড়ির সিটের সাথে লেপ্টে গেলাম! অকারনেই আবারও ভ/য় পাচ্ছি এই লোকটাকে! কি যে হচ্ছে! যেন নিজের উপর কোনো কন্ট্রোলই নেই! চোখ জোড়া বন্ধ করে নিয়ে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম! নিজের এমন আচরণে যে আমি নিজেই চরম বিরক্ত! বিরক্ত বিরক্ত বিরক্ত!

—-” এনিথিং রঙ?”

আমি ঝড়ের বেগে দু’পাশ করে মাথা ঝাঁকালাম। আমতাআমতা করে বললাম,

—-” এভরিথিং ইজ ফাইন!”

—-” আই থিংক এভরিথিং ইজ নট ফাইন! গলার মধ্যে লাভ বাইট নিয়ে ঘোরাঘুরি করছো দেখছি।”

আমার দম আঁটকে এলো। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে কিছুক্ষণ চুপসে থাকার পর মনে পড়লো হাতটা মুখে নয় গলায় চাপলে বেশি কার্যকর হবে! তৎক্ষনাৎ ফড়িংএর মতো তিড়িং বিড়িং করে ওড়না টা টেনে চেপে ধরলাম গলায়। উনি যেন আর বুঝতেই না পারে তার জন্য চুলগুলোও সব একপাশে নিয়ে এলাম! ভেতরটা ক্রমশই ধড়ফড় ধড়ফড় করে চলেছে! দাগটা আর কারোর চোখে পড়তে পারলো না শুধু এই মানুষটার চোখেই পড়তে হলো! কেন?

—-” ঢেকে কি হবে? কলঙ্ক যদি ঢেকেই মুছে ফেলা যেতো তবে চাঁদ কেন তা করেনি?”

আমার ভেতরটা জ্ব/লেপু/ড়ে যাচ্ছে! “কলঙ্ক”! সত্যিই যে কলঙ্কের দাগ পড়েছে আমার শরীরে।

—-” বয়ফ্রেন্ড এসেছিলো বুঝি?”

উনি কেবল বলেই চলেছেন! কিন্তু একটা কথারও যে জবাব আমি দিতে পারছি না!

—-” বেশ তো! তবে একটুই কেন কলঙ্কিত হলে? পুরোটাই হতে পারতে! জানো-তো এসব মানুষ গুলোই আমার ভীষণ অপছন্দের। বিশেষ করে ছেলেগুলো! মনে করো সম্পর্কের একমাস যেতে না যেতেই শুরু হয়ে যাবে তাদের আসল পরিচয় দেওয়া। মেয়ে গুলোকে এমন ভাবে ব্রেইন ওয়াশ করে ফেলবে যে সে যা-ই বলবে সেটাই মেয়েটার কাছে মধুর স্বাদ লাগবে। এম আই রাইট অর রঙ?”

আমার গলায় কম্পন ধরেছে তা বেশ বুঝতে পারলাম! উনি সামান্য একটা দাগ দেখে আমাকে কোন কাতারে ফেলে দিয়েছেন ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার। হৃদ আর আমার সম্পর্কটা কখনো এমন পর্যায়ে আসেইনি যেখানে এমন কিছু হতে পারে আর….

আর কিছু ভাবতে পারছিনা আমি! গলার মধ্যে ব্যাথা করছে হঠাৎ। কান্নারা সব দলা পাকিয়ে গলাতেই এসে আঁটকে পড়েছে! ক/ষ্ট হচ্ছে! উনার আড়ালেই চোখের জল ফেললাম। সম্পূর্ণ অসহ্য একটা লোক! আমি কিছুতেই আর উনার গাড়িতে উনার সাথে পাশাপাশি বসে যেতে চাই না! কিছুতেই না!

—-” গাড়ি থামান!”

—-” কেন?”

—-” আমি বলেছি তাই! গাড়ি থামান।”

—-” বয়ফ্রেন্ড আসবে বুঝি? রুমডেট নিশ্চয়ই! তুমি কিন্তু সেই বুদ্ধিমতি নিধি! সময়টা কিন্তু একদম পার্ফেক্ট। আব.. তুমি চাইলে আমি তোমাদের জন্য স্পেশাল রুম বুকিং করে দিতে পারি! ধানমন্ডিতে কিন্তু এই সময়ে স্পেশাল রুমের বুকিং হয়! উইথ টুয়েন্টি পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট। কি? করবো নাকি?”

আমি নির্বিকার! আমার কান্না পাচ্ছে কি না সে কথাও ভুলে গিয়েছি আমি। শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে! কেননা, আমি যে কথা বলতেও ভুলে গিয়েছি!

বড় একটা হোটেলের সামনে এসে গাড়ি থামালেন উনি! গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে গাড়ির দরজা খুলে দিলেন। আমি ঘৃ/না/য় তাকাতে পারছিনা উনার দিকে! চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার। এই মানুষটা কে খু/ন করে তার লা/শ/টাকে কুটিকুটি করে কে/টে ফেলতে ইচ্ছে করছে। আমার ভাবতে লজ্জা লাগছে উনি আমার বড়-খালামনি ছেলে!

আমাকে বসে থাকতে দেখে হেঁচকা টেনে বের করে আনলেন উনি! আমি ঘৃ/ণি/ত চোখে উনার দিকে তাকালেও উনি ভ্রুক্ষেপহীন। আমার দিকে একবার তাকানোরও প্রয়োজন মনে করছেন না! কিছুদূর এক ভাবেই টানতে টানতে নিয়ে গেলেন! আমি চেঁচাবো বলে ঠিক করেই ফেলেছি এমন মুহুর্তে উনি বলে উঠলেন,

—-” কি টেনশন হচ্ছে? কেউ জানবে কি না? আরে বোকা মেয়ে যেখানে রাহিয়ান রাফিদ স্বয়ং তোমায় হেল্প করছে সেখানে বারো যুগেও এসব কারোর জানা সম্ভব নয়! কাকপক্ষীতেও টের পাবে না! ট্রাস্ট মি!”

—-” ছাড়ুন আমায়! আপনি যে এতোটা বি/কৃ/ত ম/স্তি/ষ্কে/র মানুষ আমার ধারনাও ছিলো না! আমি আপনার সাথে কোথাও যেতে চাই না! ছেড়ে দিন আমার হাত! আমি এই মুহুর্তে আমার নিজের বাড়ি ফিরে যাবো। আর কখনো আপনার বাড়িতে পা রাখবোনা! আপনার মতো এমন খারাপ মানুষের মুখ আমি আর কখনোই দেখবো না! ছাড়ুন আমায়!”

কাঁদতে কাঁদতে কথা গুলো বলতেই উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে তেড়ে আসলেন আমার দিকে। আমি ভ/য়া/র্ত দৃষ্টিতে উনার র/ক্ত/চক্ষু চোখ জোড়া দেখে লেপ্টে গেলাম দেয়ালের সাথে। উনি আমাকে শক্ত করে চেপে ধরলেন দেয়ালের সাথে। অতঃপর গলার আওয়াজ নীচু করে বললেন,

—-” শশশ! এই হোটেলে কিন্তু কেউ কাঁদতে কাঁদতে ঢোকেনা! সবাই উল্লাস, উনমাদনা নিয়ে আসে! দিনশেষের ক্লান্তি ঝাড়তে এখানেই আসে। এটা কোনো পতিতালয়ের থেকে কিন্তু কম নয়! এভাবে চেঁচামেচি করো না! লোকে কি ভাববে?”

আমি চুপসে গেলাম! আমার হাত-পা সমানে কাঁপতে লাগলো। শরীরটাও যেন অসার হয়ে আসছে। সামনে যা দেখছি কেবল ঘোলাটে আর অন্ধকার।

উনি আবারও আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন। কাউন্টারে এসে ম্যানেজারের সাথে আস্তে আস্তে কিছু কথাও বললেন যা আমার কান অব্দি পৌঁছালো না! ম্যানেজার আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে উনার হাতে একটা চাবি তুলে দিলেন! চাবিটা হাতে নিয়ে উনি বিজয়ের হাসি হাসলেন! আমার দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত নরম সুরে বললেন,

—-” নো টেনশন! আজ যা হবে ভালোর জন্যই হবে! চলো।”

“১৩০৪” নম্বর রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি দু’জনেই! উনি আমার দিকে তাকিয়ে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাবিটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—-” শুভ কাজটা তুমিই করো!”

নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলো না! চোখের জল অঝোরে ঝড়িয়েই স্ব-জোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম উনার গালে! থাপ্পড় খেয়ে উনি দু’পা পিছিয়ে গেলেন! গালে হাত রেখে আমার দিকে তাকাতেই আমি তেড়ে গিয়ে উনার শার্টের কলার চেপে ধরলাম! রাগে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলাম,

—-” অনেকক্ষণ ধরে আপনার বাজে বকবকানি শুনে যাচ্ছি! কি মনে করেন নিজেকে? আপনি যা খুশি তাই বলে যাবেন আর যা খুশি তাই করে যাবেন সেটা আমি চুপচাপ সহ্য করবো? আপনাকে কিছুই বলবো না? আমাকে দেখে আপনার পতিতালয়ের মেয়ে মনে হয়? আমার গলায় একটা সামান্য দাগ দেখে আপনি কিছু না জেনে,না বুঝে সেটাকে তিল থেকে তাল করে ফেললেন? আপনার একটুও মুখে বাঁধলো না! খারাপ লাগলো না? একবারও মনে হলো না আপনার এই থার্ড ক্লাস কথাবার্তায় আমার মনের উপর কতটা আঘাত পরতে পারে? আপনাকে আমি কতটা ভালো এবং সৎ ভেবেছিলাম আর আপনি? আ…আপনি কতটা নীচু মনমানসিকতা পোষণ করেন আমার তো ভাবতেই ক/ষ্ট হচ্ছে!!”

কথা গুলো বলে উনাকে ধাক্কা মে/রে সরিয়ে দিয়ে নিজেই কাঁদতে কাঁদতে ভেঙে পড়লাম! উনি নিজেকে সামলে নিয়েই দৌড়ে এলেন আমার দিকে। আমাকে নীচে পড়তে দেখে আমার দু’বাহু শক্ত করে চেপে ধরে সটান হয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন! রা/গে উনার চোখ দুটো আ/গু/নে/র মতো জ্ব/ল/ছে। তবুও সে নীরব।

আমি আবারও চেতে উঠলাম! কিন্তু এবার আর কিছু বলার সুযোগ হলো না! উনি আমাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলেন। আমি নিজেকে উনার থেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালাতেই আরও শক্ত করে জাতাঁকলে পি/ষে নিলেন আমায়। আমার দম ব/ন্ধ হয়ে যাওয়ার পালা। কিন্তু উনি অনুভূতি শূন্য। আমাকে নিয়েই রুমের দরজার লক খুললেন! লকটা খুলে যেতেই এক লাত্থি মেরে দরজাটা খুলে দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন ভেতরে। আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই চোখ পড়লো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে মুড়িয়ে থাকা বিছানার উপর। আর তারউপর অ/র্ধন/গ্ন হয়ে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা দুজন অপ্রত্যাশিত মানুষের উপর! মুহুর্তেই আমার নিঃশ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেলো। থমকে গেলো আমার সাজানো গোছানো ছোট্ট পৃথিবী টা। সামনে ভেসে থাকা সত্যটাকে মেনে নেওয়ার থেকেও বি/ষপান করা বেশি সুখকর বলে মনে হচ্ছে।

—-” হৃদ!!”

না চাইতেও কাঁপা কাঁপা স্বরে ডেকে উঠলাম তার নামটা! হায় রব! এমন দৃশ্য দেখার পূর্বে আমার চোখ জোড়া পঁচে গেলো না কেন?

#চলবে____________________

#প্রেয়সী♥️🥀
#লেখনীতেঃমুহতারিযাহ্_মৌমিতা
#পর্বঃ১৯

৩৭.

হৃদ মেয়েটাকে ছেড়ে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। একপ্রকার ছিটকে পড়ার মতো! ফ্যাকাসে মুখে কতক্ষণ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আবারও বিদিশা হয়ে শার্ট খুঁজতে লাগলো। শার্ট খুঁজে না পেয়ে আমার দিকে তাকালো। হৃদের চোখ মুখ আ/তং/কে ভ/য়ং/ক/র লাগছে। ওর র/ক্তশূণ্য মুখ খানা দেখতেই ঘৃ/না/য় মুড়িয়ে গেলো আমার গোটা পৃথিবী টা। তেড়ে গিয়ে ঠাসসস করে চড় বসালাম ওর গাল বরাবর। আমার হাতে চড় খাওয়ার দৃশ্য দেখতে মেয়েটাও ছিটকে পড়লো বিছানা থেকে। অবিরত নিজের জামাকাপড় টেনেটুনে লম্বা করার প্রয়াস চালাচ্ছে। রাহিয়ান ভাইয়া এগিয়ে গেলেন মেয়েটার দিকে। বিছানার চাদর টা মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,

—-” জীবনটা খুব সুন্দর বোন! আর সেটাকে উপভোগ করতে শেখো। এভাবে শরীর বিলিয়ে কতদিন? যখন এই শরীর থাকবেনা, তখন যে শেয়াল কুকুরেও ফিরে তাকাবে না!”

মেয়েটা কাঁপা কাঁপা হাতে রাহিয়ান ভাইয়ার থেকে চাদর টা নিয়ে নিজের শরীর পেঁচিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। মেয়েটা বের হয়ে যেতেই হৃদ হুমড়ি খেয়ে পড়লো আমার পায়ের উপর। আমি চমকে উঠে দু’পা পিছিয়ে যেতেই ও হাত জোর করে ক্ষমা চাইতে লাগল,

—-” লক্ষি.. লক্ষি আমায় ক্ষমা করে দাও লক্ষি! আমি এসব মেয়েগুলোর পাল্লায় পড়ে দিন দিন কতটা নীচে নেমে গিয়েছি নিজেই বুঝতে পারিনি! তুমি যদি আরও আগে আমার এসব ব্যাপারে জানতে তাহলে হয়তো আমার এই অধঃপতন কখনোই হতো না! আমি হয়তো নিজেকে শুধরে নিতে পারতাম! প্লিজ নিধু.. লক্ষিটি আমার! আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও!”

—-” ক্ষমা? আর তোমাকে? কেন বলো তো? যে মানুষ টা দিনের পর দিন এই কুকর্মের সাথে লিপ্ত থেকেও আমাকে স্রেফ মিথ্যে দিয়ে ভুলিয়ে আসতে পেরেছে তাকে আমি ক্ষমা করবো? যে কিনা নীচে নামতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে আর শুধু নীচেই নেমেছে তাকে কি করে ক্ষমা করি? তুমি বলছো তোমার এই কুকর্মের কথা আমি আগে জানলে হয়তো তোমার এই অধঃপতন হতো না! অথচ দেখো তোমার এই কুকর্মের কথা ধামাচাপা দিতেই দিনের পর দিন তুমি আমাকে মিথ্যে বলেছো। যদি তোমার এই কুকর্ম ধামাচাপা দিতে মিথ্যে বলার সেন্স থাকে তবে তোমার এই কর্ম থেকে বের হতে আমার সাহায্যের কি দরকার? তবে কি আমি ভেবে নিতে পারি যে তুমি সবটা ইচ্ছে করে,ক্ষনিকের সুখের জন্য, ক্ষনিকের উত্তেজনা থামাতে করেছো? সেদিন যখন তুমি আমার কাছে এই মিথ্যের জন্যই ফেঁসে যাচ্ছিলো জাস্ট কলটা কেটে দিয়ে উধাও হয়ে গেলে! আর সেদিন থেকেই তুমি লাপাত্তা।”

হৃদ দাঁড়িয়ে গেলো! আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরতে নিলে আমি আবারও চেঁচিয়ে উঠি,

—-” খবরদার হৃদ! তোমার ঐ নোংরা হাত দিয়ে আমাকে একদম ছোঁবে না! আমার ঘৃ/না হচ্ছে তোমার মুখ দেখতে! আমার তো ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে যে তোমার মতো এমন একজন নোংরা মানুষের সাথে আমি পুরো একটা বছর সম্পর্কে ছিলাম! ছিহ্…”

—-” নিধু! নিধু তুমি আমায় ভুল বুঝছো। তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছুই নয়! আমি জানি না আমি এখানে কেন এসেছি? আমার ঠিক মনেও নেই! জানো ঐ মেয়েটা জোর করে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে! আমি ইচ্ছে করে…..”

হৃদের কথা সম্পূর্ণ করতে দেওয়ার ধৈর্য্য আমার হয়ে উঠলো না৷ তার পূর্বেই আরও একটা চড়ে ওর কথাদের ইতি টানলাম! হৃদ চড় খেয়ে ঝুঁকে গেলো খানিকটা। গালে হাত চেপে অ/গ্নি/দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে! আমি অবাক হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি! হৃদ এতবড় একটা ঘৃ/ণ্য কাজ করেও কোনো অনুশোচনায় ভুগছেনা! ওর চোখে মুখেও কোনো অনুতাপের আভা দেখা যাচ্ছে না! হৃদ অনুতাপহীন! কিন্তু কি করে? তবে কি ও মানতে চাচ্ছে না যে ও কতবড় বাজে কাজ করেছে?

হৃদ গলার স্বর মোটা করে ঝাঁ/জ মেশানো গলায় বলে উঠলো,

—-” একদম আমার গায়ে হাত তুলবেনা নিধি!”

আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলাম। এ কাকে দেখছি আমি! এই মানুষ টাই কি ছিলো আমার ভালোবাসার মানুষ? নাকি কোথাও ভুল হয়েছিলো তাকে চিনতে! বুঝতে!

—-” সেই তখন থেকে বলছি আমি কিচ্ছু করিনি আমি কিচ্ছু করিনি! তবুও বিশ্বাস করছো না তুমি! কেমন ভালোবাসো হ্যাঁ যে ভালোবাসার মানুষ টার উপর তোমার সামান্য ভরসা টুকু নেই! আমার তো ভাবতে অবাক লাগছে তুমি আমার ভালোবাসার মানুষ? তুমি সত্যিই আমার সেই আগের নিধি তো? নাকি আমি তোমায় চিনতে ভুল করছি?”

হৃদ কথা গুলো শেষ করতেই ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন রাহিয়ান ভাইয়া! আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকালাম! উনি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার দশা! দু’হাতে পেট চেপে হাসতে হাসতে উঠে এলেন আমাদের সামনে। উনি আমার অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে হৃদের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালেন। কোনো মতে হাসির বেগ চেপে বড় বড় নিশ্বাস ফেলে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ালেন। হৃদের দৃষ্টি আমার থেকেও কয়েকগুন বেশি আশ্চর্যাম্বিত। হৃদ কিছু একটা ভেবে উনাকে প্রশ্ন করতে নিলেই উনি হৃদকে থামিয়ে দিলেন। হৃদের কাঁধে হাত রেখে চারপাশে ইশারা করে বলল,

—-” আশেপাশে তো কোনো লুডু বা দাবার কোড দেখছিনা ব্রো! আচ্ছা ছাড়ো… নিধির কথায় মাইন্ড খেয়োনা কেমন? ও বেচারি কি দেখতে কি দেখে ফেলেছে! তবে আমি কিন্তু ঠিকই দেখেছি! আমি জানি, তুমি একদম নির্দোষ! তোমার কোনো দোষ নেই ইভেন তুমি কিছু করোওনি! আমরা যখন রুমে এলাম তখন তো তুমি দাবা খেলছিলে তাই না? ইউ নো হোয়াট? দাবা ইজ মাই ফেভারিট গেম। কোডটা একটু বের করো দেখি, আমিও খেলি তোমার সাথে। বের করো বের করো। এবার খেললে নিশ্চিত নিধিও ঠিক দেখবে! এই নিধি… লুক ও কিন্তু কিছুই করেনি! আর আমি বিশ্বাস করিনা ও কিছু করতে পারে বলে বুঝলে? এই যে এখন আমি আর তোমার হৃদ দাবা খেলবো। এবার অন্তত দেখে বলো যে হৃদ এক্চুয়ালি কিসের প্লেয়ার? দাবার নাকি বেডের! ওহ কামঅন নিধি! ইউ স্যুড ট্রাস্ট অন হিম!”

হৃদ রে/গে গিয়ে ধাক্কা মা/র/লো রাহিয়ানকে! ধাক্কা খেয়ে রাহিয়ান এক’পা পিছিয়ে এলেও চোখের পলকে আবারও হৃদের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। হৃদ হিং/স্র চোখে তাকাতেই রাহিয়ানের হাতে শ/ক্তপো/ক্ত একটা ঘুষি খেয়েই ছিটকে পড়লো বেডের পাশে। ওর পড়ার সাথে সাথে ওর সাথেই বেঁধে পড়লো আরও কিছু আসবাবপত্র। হৃদ কোনোমতে বেড ধরে উঠে বসতে বসতে আমাকে তাচ্ছিল্য করে বলল,

—-” এই মাঝরাতে নিজে পরপুরুষ নিয়ে ঘুরে বেড়াও আর আমাকে খারাপ করে চড় মা/র/তে আসো? ছিহ্!”

হৃদের কথায় আমি হতবাক। কি বলছে ও এসব? পাগল হয়ে গেলো নাকি? নিজের দোষটা ও কেন স্বীকার করতে পারছেনা? কেন ও বুঝতে চাইছে না ও ভুল করেছে!
অ/ন্যায় করেছে!

রাহিয়ান ভ/য়ং/ক/র রে/গে গেলেন। হৃদের দিকে তেড়ে গিয়ে ওকে নীচে ফেলেই মা/র/তে লাগলেন। উনার মা/র দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম! উনি রীতিমতো হিং/স্র হয়ে উঠেছেন। হৃদকে খুব করুন ভাবে মা/র/তে লাগলেন সেই সাথে কিছু বলতেও লাগলেন! কথা গুলো আমার কানের পর্দা ভেদ করতেই আমার পৃথিবী উল্টে গেলো!
নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো আমার!! আমি দাঁড়ানো অবস্থাতেই শরীরের ভার ছেড়ে লুটিয়ে পড়লাম মেঝেতে!

৩৮.

এলার্মের তীক্ষ্ণ আওয়াজে খুব বাজে ভাবে ঘুমটা ভে/ঙে গেলো আমার। মেজাজ তুঙ্গে চড়িয়েই ফোনটা উঠিয়ে ছুঁড়ে মা/র/লা/ম বেডের উল্টো পাশে। ছুঁড়ে ফেলার সাথে সাথেই এলার্ম অফ হয়ে গেলো! আবারও মুখে বালিশ চেপে শান্তির ঘুমে নিমগ্ন হতে নিলাম! কিন্তু শান্তি আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। আচমকাই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম! বিছানা ছেড়ে ঘড়ি খুঁজতে লাগলাম! উফফ! ফোনটাই বা কোথায় পড়লো? ফোন আর পেলাম না তাই বিরক্ত হয়ে ঘরের মধ্যে ওয়াল ঘড়ি খুঁজতে লাগলাম। খুঁজতে খুঁজতে ওয়াল ঘড়ির বদলে ছোট একটা ঘড়ি পেলাম! যা-হোক চলবে। সময় তখন ৯ টা বেজে ৩৫ মিনিট। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ঘড়িটা বিছানায় রেখে নিজের রুম থেকে বের হয়ে রাহিয়ান ভাইয়ার রুমের সামনে এসে হাঁপাতে লাগলাম! দরজাটা লক! ভেতরেই আছেন কিন্তু কি করছেন? ঘুমচ্ছেন নাকি কোনো কাজ? নক করবো কি করবো না? মন সায় দিচ্ছে না নক করতে! কিন্তু না করলেও যে নয়! কাল রাতে যা শুনেছি তাতে করে আমার অনেক গুলো অজানা প্রশ্নের উত্তর জানা বাকি! আর যেগুলোর উত্তর শুধু উনার কাছেই আছে আর উনাকে এর উত্তর আমাকে দিতেই হবে। আমাকে জানতেই হবে সবটা।

মনে মনে সাহস জুগিয়ে ঠকঠক আওয়াজে নক করেই বসলাম! এটা হলো মিনিমাম ভদ্রতা। কিন্তু এটা কি হলো? নক করতেই উনার দরজাটা হাট করে খুলে গেলো। আমি ভ/য় পেয়ে দৌড় দিতেই নিচ্ছিলাম কিন্তু দরজার ওপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবারও দাঁড়িয়ে গেলাম। বুঝলাম দরজাটা চাপানো ছিলো লক করা ছিলো না। কথাটা মনে হতেই নিজের মনে নিজেকে কিছুক্ষণ উরাধুরা বকে উঁকি ঝুঁকি মা/র/লা/ম রুমের ভেতর। উনি রুমে নেই মনে হচ্ছে! ব্যালকনি তে আছেন? এখান থেকেই ডাকবো নাকি ভেতরে ঢুকবো? মনের সাথে যু/দ্ধ বিজয়ী মস্তিষ্ক নিয়ে ঢুকে পড়লাম উনার রুমে! রুমে পা রাখতেই এক অদ্ভুত অনুভূতিতে কেঁপে উঠলাম! পুরো রুম ঠান্ডা হয়ে আছে। বুঝলাম এসি চলছে। বিরক্তিকর!

আশেপাশে নজর দিলাম। এ টু জেড পুরো রুম একদম পরিপাটি সাজানো গোছানো। এ রুমে যে মানুষ একবার পা রাখবে সে নিশ্চিত এখানে থাকার কোনো যৌক্তিক পরিকল্পনা করবেই করবে। তবে আমি করছিনা! সব ঠিক থাকলেও এটা কারোর খুব সখের এবং খুব ব্যক্তিগত শান্তির স্থান। নিজের সামান্য ভালোলাগা থেকে নিশ্চয়ই কোনো যৌক্তিক পরিকল্পনা করা উচিৎ নয়! মানুষ টা একদম পার্ফেক্ট হয়েই জন্মেছে। ঠিক তার ছোট মনির মতো।

ব্যলকনির দিকে পা রাখতেই হঠাৎ থমকে গেলাম! মনে হচ্ছে আমার পেছনের দিকে উনার বড় ড্রেসিং টেবিলের আয়না টা বার বার জ্বলে উঠছে। আমি পেছন মুড়ে তাকালাম। আয়নায় আমাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এর চারপাশ টাও খুব স্বাভাবিক কিন্তু জ্বলজ্বল করছে কিসে? আমি টানা বিশ সেকেন্ড তাকিয়ে থেকেও আর কোনো জ্বলজ্বল করা জিনিস আবিষ্কার করতে পারলাম না! তাই আর বিশেষ পাত্তা না দিয়ে আবারও ব্যলকনির দিকে পা বাড়ালাম! এক ধাপ ফেলতেই আবারও পেছন থেকে কিছু একটা জ্বলজ্বল করে উঠলো। আমার মনের মধ্যে কামড় দিলো! কি হচ্ছে এখানে? কি আছে ঐ আয়নার মধ্যে? আমি এক আকাশ বিষ্ময় আর কৌতুহল নিয়েই এগিয়ে গেলাম ড্রেসিং টেবিলের দিকে। আমার মন বলছে কিছু একটা ব্যাপার আছে এখানে! কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে এভরিথিং ইজ ফাইন নিধি!

মনের কথাই শুনলাম! কয়েক ধাপ ফেলে ঠিল আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। আয়নাতে আমাকে একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কোনো খুঁত নেই একদম নিখুঁত। আমি উৎসাহ নিয়ে আয়নায় হাত রাখতেই অদ্ভুত এক শব্দ করে একটা ফিতে ঝুলে পড়লো! আমি ভ/য় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম! ও মা গো! এ কেমন ভূ/তুড়ে আয়না!! ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে আবারও কতক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম! ভ/য়ও হচ্ছে আবার ভীষণ কৌতুহলও হচ্ছে! কি এমন আছে এখানে? তাই আবারও গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম আয়ানার কাছে। কাঁপা কাঁপা হাতে ঝুলে থাকা ফিতেটা টান দিতেই যা প্রদর্শিত হলো তা দেখার জন্য আমাকে কোটিপতি করে দেওয়ার লোভ দেখালেও রাজি হতাম না কখনো!

এটা যে ভূতকেও হার মানিয়ে দিবে। থ্রিডি পেইন্টিং এর একটা ভূ/তের ছবি ভেসে উঠলো আয়নার মধ্যে। যেটা দেখতেই আমি দুনিয়া কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলাম! উল্টোদিকে দৌড় দিতেই ধরাম করে বারি খেয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভ/য়া/র্ত মনে তাকে ভূ/ত ভেবে আবারও চিৎকার করে আয়নার দিকে দৌড়ে এলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম যে এখানে ঐ ভূ/তে/র ছবি ভাসছিলো! দৌড়ে আসতে আসতে যখন মনে হলো তখন আবারও সেই চিৎকার। আয়নার উপর যত আসবাবপত্র ছিলো সব আমার সাথেই চিৎকার পেড়ে নীচে পড়ে গেলো। আমি আবারও উল্টো পথে তাকালাম! যেটাকে আসলে ভূ/ত ভেবেছিলাম সেটা যে ভূ/ত নয়! উনি হলেন রাহিয়ান! নিজের সমস্ত হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েই দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরলাম তাকে!

ভ/য়ে ভ/য়ে এমন দশা হলো যেন কান্নাই করে ফেলবো এখন! কাঁপা কাঁপা হাত দুটো দিয়ে উনাকে এমন ভাবে ধরলাম যে উনি নড়াচড়াও ঠিকঠাক করতে পারছিলেন না! শুধু হতবিহ্বল হয়ে আমার বোকামিই দেখে যাচ্ছিলেন। মিনিট কয়েক এভাবেই পার হতে হতে আমি শুধু আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম! এ কোন অদ্ভুত আয়ানারে ভাই! রাহিয়ানের কি ভ/য়ডর বলে কিছুই নেই নাকি? উনি কি করে এসব ঘরে রেখেছেন? কি করে?

—-” নিধি! নিধি হোয়াট হ্যাপেন্ড?? কি হয়েছে! কি হয়েছে বলো আমাকে? তুমি এভাবে ভ/য় পেয়ে আছো কেন? আর এভাবে চেঁচালেই বা কেন? নি…”

—-” ভ..ভ…ভূততততত! ওওও..ওঐ আয়নার মধ্যে ভ…ভ..ভূতততত!”

কাঁপা কাঁপা স্বরে এটুকুই বলা সম্ভব হলো! বলতে না বলতেই রাহিয়ান ভাইয়া ফিক করে হেসে দিলো। আমাকে নিজের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল,

—-” আয়নায় ভূত? কোথায় ভূত দেখাও?”

উনি আমাকে নিজের থেকে যতটুকু ছাড়াচ্ছে আমি আরও শক্ত করে তাকে তার চেয়েও বেশি জড়াচ্ছি! ভ/য়ের দরুন মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছে। ভালো মন্দ কোনো কাজই করছে না! রাহিয়ান ভাইয়া আয়নায় চোখ বুলালেন। কিছু দেখতে না পেয়ে আমার মাথায় হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললেন,

—-” নিধি আয়নায় ভূত আসবে কি করে? দেখো…বিশ্বাস না হলে তুমি তাকিয়ে দেখো না আয়নায় কিছু নেই! আয়না তো একদম ঠিক আছে। তোমার হয়তো মনের ভুল হয়েছে! তাকাও একবার এদিকে!”

আমি ভ/য়ে থেকে থেকে কেঁপে উঠছি! মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে উনিও আমার সাথে মজা নিচ্ছেন! মনের ভুল! এতো বড় মনের ভুল কি করে হয়? আমি তো নিজের চোখেই দেখেছি। হঠাৎই আমার ভয়টা উবে গিয়ে তা সংকোচে পরিনত হলো! উনার পিঠ ছাড়িয়ে আমার হাত টা উনার লোমশ বিহীন বুকে পড়তেই টনক নড়লো আমার। আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে আছি মনে হতেই আবারও ছিটকে পড়লাম পেছনের দিকে। কাজটা এত দ্রুত করে ফেললাম যে শেষ অব্দি নিজেকে কন্ট্রোল করাও আমার হাতে বাইরে চলে গেলো। পেছনে পায়ের সাথে কিছু একটা বেঁধে পড়ে যেতেই উনি এসে ধরতে নিলেন আমায়! কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না।
কে/লে/ঙ্কা/রি যা হওয়ার সেটাই হলো। উনার শরীরের ভার নিয়ে আমার উপরই পড়লেন! প্রথমে তো মনে হলো এই বুঝি চ্যাপ্টা লেগে গেলাম! কিন্তু না, পড়তে পড়তে উনার হাত আমার পিঠের নীচে এসে পড়লো। যা ব্যাথা পাওয়ার উনার ঐ হাতটাই পেলো!

ইশশ কি কান্ড! কি যে করি আমি! নীচে পড়ে যেতেই বাঁধলো আরেক বিপত্তি! উনি হাত দিয়ে ঠেকাতে গিয়েই আমার ঘাড়ের উপর উনার ঠোঁটের ছোঁয়া লাগলো! আমি তো কারেন্টের শক খেয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলাম! সেই সাথে নিঃশ্বাসও আঁটকে ধরলাম! আমার পুরো শরীর শিহরণে কেঁপে উঠলো! অবশেষে না পেরে উনার দু’হাত খামচে ধরলাম! তবে চোখ দুটো বন্ধ করা অবস্থাতেই আরও কিছু ভেসে উঠলো মনের মধ্যে। সেদিনকার লাইব্রেরিতে ঠিক এমনই এক কাহিনী ঘটেছিলো যার ছোঁয়া টা অনেকটা এমনই ছিলো! আর গতকালও ঠিক…….

আর কিছু ভাবার সময় না দিয়েই আমার হাত ধরে একটানে উঠিয়ে দিলেন রাহিয়ান ভাইয়া। চোখে মুখে
আ/তং/কে/র ছাপ! ধরা পড়া চোরের মতো বারবার নজর লুকাচ্ছেন! আমি আঁড়চোখে উনাকে দেখতে লাগলাম! মুখ তুলে কিছু বলতে যাবো তার আগেই চোখে পড়লো উনার লোমশ বিহীন বুক! ব্যস, আমার লজ্জায় মাথা কেটে পড়ে যাওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিলো! অস্বস্তির শেষ সীমা লঙ্ঘন করেই উনার ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম! ছিহ্ কি লজ্জা কি লজ্জা!

#চলবে____________________