#ফরগেট_মি_নট
#রক্তিমা(লেখনীতে)
১১.
“সঠিক তদন্ত না করে মা*ল খেয়ে যাকে তাকে জেলে পুরতে চাওয়ার স্বাভাব গেল না আপনাদের।বাই দ্যা ওয়ে এরেস্ট হার!”
শেষ বাক্য দর্শনের গা ছাড়া কথা শুনে চোখ বড় করে তাকায় এসপি সাহেব।খানিক জোরে এই কথাখান উচ্চারণ করায় মৃত্তিকাও শুনেছে।মেয়েটা কেমন করে যেন তাকালো!তবে দর্শন যে হেয়ালি করেই কথাটা বলেছে তা বোধগম্য হলো না তার।এসপি সাহেব দর্শনের দেওয়া ধমকি যেন ভুলে গেল মুহুর্তেই।ওষ্ঠপটে হাসির রেশ ধরে এগোলো মৃত্তিকার দিকে।ঠিক তখনই দরজায় এসে দাড়িয়েছেন দানিশ মির্জা।এসপিকে মৃত্তিকার দিকে এগোতে দেখে মনে মনে ক্রুর হাসেন তিনি।যেন তার বিরাট পরিকল্পনার একাংশ সফল হতে চলেছে।
মৃত্তিকা ঠায় দাঁড়িয়ে দর্শনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে।তারপর দৃষ্টি সরিয়ে নিজের দিকে এগিয়ে আসা এসপির দিকে তাকান তিনি।তাকে বাঁধা দেওয়া চেষ্টা করে না রমনী।যেন তার মধ্যে একবাক্য বলার শক্তিও আর অবশিষ্ট নেই!
“তাকে বন্ধনে আবদ্ধ করার দুঃসাহসও করবেন না এসপি সাহেব!আমি আপনাকে লাস্ট বার বলছি সি ইশ মাই ম্যারিড ওয়াইফ।তাকে বিনাদোষে এরেস্ট করার দুঃসাহস আপনাকে যেই দিক না কেন,তা চূর্ণ করবো আমি।”
দর্শনের শক্ত তেজঃপূর্ণ বাক্য শুনে মুহুর্তেই ভ্যাবাচেকা খায় এসপি।এই বললো এরেস্ট হার!আর এখন তার উল্টো কথা বলছে!
সবচেয়ে বড় আশ্চর্য হলেন চৌকাঠে দাঁড়ানো দানিশ মির্জা।কি শুনলেন তিনি!দর্শনের ওয়াইফ মৃত্তিকা!এইতো নিজ মুখেই গর্বের সহিত উচ্চারণ করলো দর্শন।
মুহুর্তেই ভেরতে প্রবেশ করে দানিশ মির্জা চেঁচিয়ে উঠেন,
“হোয়াট!এসব কি বলছো তুমি দর্শন?”
বাবার কন্ঠ শুনে খানিক অবাক হয়ে দর্শন পেছন ফিরে তাকায়।শুভ্র পাঞ্জাবি-পায়জামা পরিহিত প্রৌঢ়ের বিস্ময় ভরা মুখমন্ডল দেখে আলগোছে হাসে সে।পরপরই অস্বাভাবিক কিছুই করেনি এমন ভঙ্গিতে স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠে,
“যা শুনলেন তাই!অবাক হওয়ার মত তেমন কিছুই করিনি যতটা আপনি আপনার কার্যে আমাকে অবাক করেছিলেন!”
ছেলের বাঁকা জবাবে দৃষ্টি সরান দানিশ মির্জা।কিন্তু মনে মনে একপ্রকার খুশি হয়ে উঠেন তিনি।চোখ জ্বল জ্বল বিপুল আশায়!এসপির দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় তাকে প্রস্থান করতে বলেন তিনি।নতজানু হয়ে প্রস্তাব করে এসপি।তার আর কি করার!অর্থে কেনা পুতুলে যে সে পরিনত।যেদিকে সুতো টানবে সেদিকেই তাকে যেতে হবে।
অদূরেই দাড়িয়ে থাকা মৃত্তিকা সবটা খেয়াল করে শূন্য চোখে।তারপর বড়সড় এক তাচ্ছিল্যের হাসি দৃশ্যমান হয় তার ওষ্ঠপটে।চোখের কোণ চিক চিক করে অশ্রুর দরুন।ডানহাতের তর্জনী দিয়ে তা মুছে নেয় সে।আর অশ্রুপাত নয়!এবার সবটুকু কোমল সত্তা ত্যাগ করার পালা!
পা নাড়িয়ে পিছাতে চায় মৃত্তিকা।কিন্তু হায়!দেহের সমস্ত শক্তি যেন বিলুপ্ত হয়েছে।মস্তিষ্ক হয়েছে ভার!কোমল কায়া যেন লুটিয়ে পরতে চাইছে ভূমিতে।মৃত্তিকা আবছা চোখে তাকায়।কেবল এতটুকুই দৃশ্যমান হয় দর্শন ব্যস্ত চিন্তিত ভাবে তার পানে ছুটে আসছে!আর তারপর?সমস্ত কিছু যেন আঁধার,অনামিশার কবলে!
.
জাকজমকপূর্ণ ড্রয়িংরুম।সর্বত্রই আভিজাত্য ছেঁয়ে!সেখানেই সোভার মধ্যভাগে পায়ের উপর পা তুলে দর্শনের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন দানিশ মির্জা।চোখ মুখ গম্ভীর!তার সহধর্মিণী,দর্শন-দীপনের মা অবাক হয়ে একবার স্বামীর পানে তো একবার ছেলের পানে তাকাচ্ছেন।দর্শনের চেহারায় যথেষ্ট গা ছাড়া ভাব।
বাবার থেকেই কিছুটা দূরে বসে ভ্রু কুঁচকে দর্শনের দিকে তাকিয়ে আছে দীপন।হঠাৎ সমস্ত মৌনতা ভেঙে সে বলে উঠে,
“হোয়াট দ্যা হেল ড্যাড?কি হয়েছে বলবে তুমি?দর্শন মৃত্তিকাকে নিয়ে কেন বাড়িতে ঢুকেছে?”
দানিশ মির্জা একবার ফিরে তাকান বড়ছেলের দিকে।দীপনের মতো তার সহধর্মিণীর চক্ষেও প্রশ্ন ছেয়ে।পরপরই দর্শনের দিকে তাকিয়ে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলার মতো করে বলে উঠেন,
“তোমার ভাই বিয়ে করেছে তাকে!”
কথাখান কর্ণগোচর হতেই যেন দীপনের চোখে বিস্ময় আকাশ ছাড়ালো।মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বের হলো,
“হোয়াট..!”
তারপর দর্শনের দিকে তাকালে দর্শনের ওষ্ঠপটে অনন্য এক হাস্য খেলা করে।যেন সে ওয়ার্ড উইনের মতো কোন কার্য করেছে!
দর্শন এবার পকেটে হাত পুরে বলে উঠে,
“আপনাদের কথা শেষ?আরো কিছু জিজ্ঞেসা করবেন?”
“কীভাবে বিয়ে করলি তুই?নিশ্চয়ই জোর করে?”
“আই গেভ হার অপশনস।এন্ড শী চোজ ম্যারেজ!”
দর্শন গম্ভীর স্বরে কখাখান শেষ করে দীপনের দিকে তাকিয়ে।দীপন দৃষ্টি সরায়।অজানা কারণে নাকের পাটা ফুলে উঠে তার।দর্শন ফের বলে,
“ক্যান আই গো?”
ছেলের গা ছাড়া ভাব দেখে বরাবরের মতো আশ্চর্য হন না দানিশ মির্জা।বরং গম্ভীর স্বরে বলে উঠেন,
“মির্জা বাড়ির বড় ছেলেকে অবিবাহিত রেখে ছোট ছেলে বিয়ে করেছে শুনতে ভালো লাগবে না।আমি জলদি দীপনের বিয়ের ব্যবস্থা করছি,সাথে তোমারও!”
বাবার কথা শুনে দর্শন কাঁধ উচিয়ে বলে,
“এজ ইউর উইশ!”
পরপরই বসার ঘরে তিনজন মানুষকে পেছনে ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজঘরে আসে দর্শন।ভেতরে প্রবেশ করার সময় ওষ্ঠপট তার ভরে উঠে সুক্ষ হাসিতে।
ডার্ক ব্লু কালার বেডসেটে আবৃত বিশাল আভিজাত্যপূর্ণ খাট টার মধ্যভাগে গুটি মেরে অচেতন অবস্থায় শুয়ে রয়েছে এক শুভ্র কানন!
দর্শন ধীরে ধীরে নিকটে আসে। তারপর জল নিয়ে হালকা ভাবে ছিটিয়ে দেয় মৃত্তিকার মুখশ্রীতে।দু তিনবারের মাথায় চোখ মুখ কুঁচকে দৃষ্টি মেলে মৃত্তিকা।চোখের সম্মুখে অচেনা ছাঁদ দেখে তড়িৎ উঠে বসে সে।সামনে তাকাতেই দর্শন দৃশ্যমান হতেই মৃত্তিকার কর্কশ স্বরে বলে উঠে,
“কোথায় নিয়ে এসেছো আমায়?”
“শশুর বাড়ি!বিয়ের পর মেয়েরা যেখানে তার স্বামীর সাথে বসবাস করে।হোয়াই?ডোন্ট ইউ নো?”
কথাখান বলে দর্শন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে পরনের শার্ট খুলে ফেলে।দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে তাকায় মৃত্তিকা।নাকের পাটা তার ফুলে উঠে রাগে,দূঃখে!
তীব্র আক্রোশ নিয়ে সে বলে উঠে,
“তোমার মতো নির্লজ্জ পুরুষ বোধহয় আর নেই!”
“অন্য কারো কাছে নির্লজ্জ হলে ভালো লাগতো তোমার?”
দর্শনের দুষ্টু কথা শুনে তার দিকে তড়িৎ বেগে তাকায় মৃত্তিকা।যুবক তখন সম্পূর্ণ শার্টলেস।বুকের খাঁজ দৃশ্যমান।মৃত্তিকার দৃষ্টি সেথায় আটকায় দু’সেকেণ্ডের জন্য।পরপর দৃষ্টি সরিয়ে বিছানা ছেড়ে দাড়ায় মৃত্তিকা।কথা বললে শব্দের গভীরতা বাড়বে বুঝতে পারে সে।একপ্রকার বিরক্ত মুখশ্রী নিয়ে দর্শনের রুমের লাগোয়া বারান্দার দিকে পা বাড়ায় সে।বাক্যলাপ লোকটা পোশাক পরলে পরে করবে।
দর্শন মৃত্তিকার প্রস্থানের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসে।তারপর নেভি ব্লু কালার শার্ট ও গ্রে কালার প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পরে দর্শন।
অনামিশা ভরা আকাশে তাকায় মৃত্তিকা।অনুভব করে এই কুচকুচে কালো রঙে তার ভাগ্যের সাথে বেশ মিল!
মিনিট পনের পরে দরজায় আওয়াজ হতেই পেছন ঘুরে চায় মৃত্তিকা।রুমে চোখ বুলিয়ে কোথাও দর্শনকে দেখতে পায় না সে।পরিবর্তে মধ্যবয়ষ্কা এক সুন্দরী মহিলা ভেতরে প্রবেশ করে।মৃত্তিকা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রয়।
ভদ্রমহিলা আশেপাশে চোখ বুলায়।বারান্দায় অন্ধকার ছেয়ে থাকায় মৃত্তিকাকে নজরে আসে না তার।
মৃত্তিকা এবার আস্তে আস্তে রুমে আসে।তাকে দেখে ভদ্রমহিলা মুচকি হেসে এগিয়ে আসে।মৃত্তিকার এবার খেয়ালে আসলো ইনিই মিসেস দানিশ,দর্শনের মা!সেইদিন পার্টিতে এক ঝলক দেখেছিলেন।
মহিলার নাম তরী।তিনি মৃত্তিকার মুখশ্রী ছুঁয়ে বলে উঠেন,
“ইশ মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে!”
প্রতিত্তোরে মৃত্তিকা শুধুই উনার দিকপ তাকিয়ে রয়।মিসেস দানিশ ফের বলেন,
“সাথে তো কিছুই আনোনি!আপাতত এই দুটো শাড়ির মধ্যে যেকোন একটা পরে নিচে ডাইনিং এ এসো।”
মিসেস দানিশের হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী বলে দিচ্ছে স্বামী,ছেলের মতো এই হুটহাট বিয়েতে তার কোন আপত্তি নেই।বরং যেন খুশি হয়েছেন।
শাড়িদুটো বিছানায় রেখে ব্যস্ত ভঙ্গিতে প্রস্থান করেন তিনি।মৃত্তিকা উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শাড়ি গুলোর দিকে নির্জীবভাবে তাকায়।একটা হালকা গোলাপি রঙের শাড়ি তাতে লাল কারুকাজ।আরেকটা সম্পূর্ণটায় হলুদ বর্ণের।দুটোয় জর্জেটের!
মৃত্তিকা হলুদ শাড়ি বেছে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে।বেশ সময় নিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে বাইরে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়াতেই দরজায় শব্দ হয়।তড়িৎ পেছন ফিরে তাকায় মৃত্তিকা।দর্শনকে দেখে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকায় সে।চিরুনি খুঁজে তা তার রেশমি পিঠ সমান কেঁশে চালনা করে।দর্শন ধীরে এসে দাড়ায় তার পেছনে।কন্ঠে সুধা মিশিয়ে বলে উঠে,
“হলুদ কখনোই আমার পছন্দের রঙ হতো না।আনলেস ইউ ওয়ার ইট!”
চিরুনি চালাতে থাকা মৃত্তিকা হাত থামে দর্শনের কথায়।চুল আঁছড়ানো শেষ করে দর্শনের পানে ঘুরে তাকায় সে।বলে,
“তবে কি কি তোমার অপছন্দের জিনিস তা জানতে হচ্ছে!”
“সেগুলো অ্যাভোয়েড করবে?”
ক্রুর হাসে মৃত্তিকা।দর্শনের দিকে খানিক ঝুঁকে বলে উঠে,
“নেভার!বরং সেগুলোই বেছে বেছে করবো আমি!”
চলবে….