ফরগেট মি নট পর্ব-১৮

0
10

#ফরগেট_মি_নট
#রক্তিমা(লেখনীতে)
১৮.
মির্জা বাড়ির সমস্ত আলো নিভে যেতেই মৃত্তিকাকে রুম থেকে নিয়ে বের হয় দর্শন।দ্বিতীয়বার বিবাহে আবদ্ধ হওয়া দম্পতির জন্য সাজানো মনোরম বাসর খানা পরে থাকে অবহেলায়।মৃত্তিকার নরম হাতে দর্শনের শক্ত চাপ।মৃত্তিকার মুখশ্রীতে এখনো বিশাল ঘোমটার আবরণ।তার নিচ থেকে মৃত্তিকা বিস্ময় নিয়ে দর্শনের দিকে তাকাচ্ছে।একটু পূর্বেই রুমে প্রবেশ করে দর্শন।তারপর আচমকা মৃত্তিকার হাত ধরে রুম থেকে বাইরে নিয়ে আসে কোন কথাবার্তা ছাড়াই।মৃত্তিকা হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে,

“কি করছো দর্শন?এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে?

দর্শন মৃত্তিকার কথায় এবার থামে।নিস্তব্ধ বাড়িতে সেই সাথে থামে মৃত্তিকার অলংকারের হেতু সৃষ্ট সুক্ষ্ম আওয়াজ।

” তুমি অবশ্যই পাগল হয়ে গেছো!এত রাত্রে আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে যাওয়ার মানে কি?”

মৃত্তিকার কথার পিঠো রহস্যময় হাসে দর্শন।তারপর কিছু না বলে ফের মৃত্তিকাকে টেনে নিয়ে বাড়ির সদর দরজা পার হয়।মৃত্তিকা শুধু অবাক নয়নে দর্শনকে অবলোকন করে।দর্শন মৃত্তিকাকে একপ্রকার জোর করে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে।তারপর গাড়ি স্টার্ট দেয়।মৃত্তিকা রুষ্টচিত্তে চেয়ে রয় দর্শনের পানে।দর্শনের মুখমন্ডল গম্ভীর।
একসময় গাড়ি এসে থামে চেনাপরিচিত সেই বাংলোর সামনে।মৃত্তিকা অবাক নয়নে সামনে চেয়ে।অপ্রিয় স্মৃতি কড়া নাড়ছে মস্তিষ্কে।মিসেস দানিশের তুলে দেওয়া ঘোমটা এখনো তুলেনি মৃত্তিকা।মৃত্তিকা অবাক নয়নে প্রশ্নপূর্ণ মনে দর্শনের পানে তাকায়।তখনই দর্শন গম্ভীর আওয়াজ কানে আসে,

“নামো।”

“এভাবে এখানে নিয়ে আসার কি মানে দর্শন?”

গাড়ির দরজা খুলে নামতে নামতে প্রশ্ন করে মৃত্তিকা।বাইরে নামতেই মধ্যরাতের শীতল বায়ু তার কায়া ঘিরে ধরে।কেঁপে উঠে মৃত্তিকার নারীদেহ।গাড়ির ভেতরে থাকায় এক্কেবারে এই ঠান্ডাটা টের পাইনি সে।মৃত্তিকা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“একটা প্রশ্নের জবাবও দিচ্ছো না কেন?”

দর্শন এই প্রশ্নের উত্তরেও কিছু বলে না।তারবদলে মৃত্তিকার হাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেয়।তারপর বাংলোর সদর দরজার দিকে পা বাড়ায়।
সদর দরজায় একটু ধাক্কা দিতেই সেটা খুলে গেল।অর্থাৎ দরজা পূর্ব থেকেই খোলা ছিল।দরজা পেরোতে গেলেই দর্শন মৃত্তিকার চোখদুটো চেপে ধরে।আচমকা এমন হওয়ায় অস্ফুটস্বরে আর্তনাদ করে উঠে মৃত্তিকা।কিন্তু তারপর যখন দর্শন চোখ থেকে হাত সরায় তখন বিস্ময়ে মৃত্তিকার চক্ষুদ্বয় বিকট হয়। মৃত্তিকার অবিশ্বাস্য ও প্রশ্নাত্নক দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হয় দর্শনের মুখপানে।
ড্রয়িং রুমের সবটাজুড়ে অসংখ্য দীপে আলোকিত।তারমাঝে গোলাপের তৈরি সরু রাস্তা।মৃত্তিকা এখন সেই রাস্তার অগ্রভাগে দাড়িয়ে।সোনালি আলোয় দৃশ্যমান হওয়া সুদর্শনের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে রয় মৃত্তিকা।দর্শনের ওষ্ঠপটে তখন চমৎকার হাসি।মনে আসা আশঙ্কায় ঢোক গিলে দর্শনকে প্রশ্ন করে,

“এসব কিহ!তুমি…”

আচমকা মৃত্তিকার ওষ্ঠ চেপে ধরে দর্শন।তারপর গাঢ় স্বরে বলে,

“নো মোর ওয়ার্ড!জাস্ট ফিল দ্যা বিউটি।”

মৃত্তিকা দর্শনের চোখে দৃষ্টি রাখে।অন্ধকার ঘুচিয়ে মুখে আসা সোনালি আলোয় দর্শনের মুখশ্রী দৃশ্যমান।পরনে বিয়ের শেরওয়ানি।মৃত্তিকার চোখে এই মুহুর্তে সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ দর্শন তা বললে ভুল হবে না!

দর্শনের হঠাৎ চোখে পরে মৃত্তিকার মুখের ঘোমটা এখনো সরানো হয়নি।দর্শন সন্তর্পণে ঘোমটা উঠায় মৃত্তিকার।মৃত্তিকার কোমল কপোলে দর্শনের ছোঁয়া লাগে।দৃষ্টি নত করে মৃত্তিকা। অপরুপার এই বধুরুপ দর্শন করে দর্শনের হৃৎস্পন্দন বাড়ে।তরতরিয়ে বাড়ে বুকের উচাটন।মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে উচ্চারণ করে,

“মাশাল্লাহ!”

মৃত্তিকা চোখ তুলে তাকালে দর্শন সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা করে।মৃত্তিকা নিঃশব্দে এগোয় ফুলের কোমল রাস্তায়।বিস্ময়ে বুক উঠানামা করছে দ্রুত।মৃত্তিকা সিঁড়িতে পা রেখে ধীরে ধীরে তা অতিক্রম করে।রমনীর চঞ্চল দৃষ্টি চারপাশে ঘুরছে।একসময় মৃত্তিকা সেই কক্ষের সম্মুখে এসে থামে যেখানে দর্শন বন্দি করে রেখেছিল তাকে।দরজার নিকটে এসেই থামে মৃত্তিকা।অদৃশ্য কিছু তাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।হঠাৎ দর্শন তার হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করে।আরেকদফা অবাক হয় মৃত্তিকা।কক্ষটা ড্রয়িংরুমের থেকে আরে বেশি উজ্জ্বল।মৃত্তিকার দৃষ্টি আটকায় সুন্দর একটা কেকে।

“হ্যাপি বার্থডে মিসেস দর্শন মৃত্তিকা মেহেরজান!”

দর্শনের কথা কর্ণগোচর হওয়ার পরপরই হৃদযন্ত্র কেঁপে উঠে মৃত্তিকার।ওষ্ঠদ্বয় আপন শক্তিতে একে অপরের থেকে আলগা হয়ে আসে।সবিস্ময়ে প্রশ্ন করে,

“তুমি কি করে জানো আজ আমার জন্মদিন?”

“যেদিন প্রথম তোমার কক্ষে প্রবেশ করেছিলাম সেইদিনই জেনেছি।একটা কিউট বেবির পিকের নিচে ইটালিক অক্ষরে খোদাই করা ছিল ১২ ডিসেম্বর ২০০৩।”

মৃত্তিকার কেকটার সামনে এসে দাড়ায়।আচমকা চোখে অশ্রু জমতে শুরু করে তার।সেটাকে আটকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে মৃত্তিকা।ফলস্বরূপ গলায় জ্বলন শুরু হয়।
কোমড়ে দর্শনের মৃদু স্পর্শে চমকায় মৃত্তিকা। দর্শন একহাত মৃত্তিকার কোমড়ে রেখে আরেকহাতের মৃত্তিকার হাত স্পর্শ করে।মৃত্তিকা চোখ তুলে তাকায় অর্ধাঙ্গের পানে।দর্শন তখন নিচে তাকিয়ে মৃত্তিকার হাত মুঠোয় নিয়ে কেক কাটছে।মৃত্তিকাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,

“আমি খাওয়ার জিনিস নই।খাওয়ার জিনিস সামনে সেদিকে নজর দিন মিসেস।”

সামনে তাকিয়ে চোখ বুঁজে নিঃশব্দ হাসে মৃত্তিকা।দর্শন একপিচ কেক নিয়ে মৃত্তিকার মুখের সামনে ধরে।মৃত্তিকা আলতো কামড় বসায় তাতে।

“এসব করে তুমি আমার মনে জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করছো?”

“একদমই না!একজন হাসবেন্ড হিসেবে ওয়াইফের বার্থডে সেলিব্রেট করা উচিত সো আই ডিড।”

মৃত্তিকা ফ্যালফ্যাল করে তাকায় সামনে দাড়িয়ে দায়ছাড়াভাবে কথা বলা মানুষটির দিকে।মৃত্তিকাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে দর্শন বলে উঠে,

“এভাবে তাকাচ্ছো কেন?ওহ গিফট চাই?সরি জান!তোমার সাথে শূন্য পকেটে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি।বাট নো টেনশন।তোমার বার্থডে গিফট তুমি অবশ্যই পাবে।আর যেহেতু গিফটটা দর্শন মির্জা দিবে সেহেতু সেটা অবশ্যই আনএক্সেপ্টেড কিছু হবে!এই বিষয়ে তুমি শিউর থাকো বউ।”

.
সূর্যরশ্মি চোখের উপর আছড়ে পরতেই মৃত্তিকা নিদ্রা ভঙ্গ হয়।পাশ ফিরে পুনরায় ঘুমানোর চেষ্টা করে সে।কিন্তু তাতে ব্যর্থ হওয়ায় ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায় মৃত্তিকা।দৃশ্যমান হয় এক পুরুষালী অবয়ব।পুরুষটি তার দিকে পেছন ফিরে পকেটে হাত পুরে কানের কাছে ফোন ধরে আছে।পূর্ণ চোখে তাকাতেই অবয়বটি পরিষ্কার হয় মৃত্তিকার নিকট।তখনই কথা বলতে বলতে পেছন ফিরে তাকায় দর্শন।চোখে পরে মৃত্তিকার সদ্য ঘুম ভাঙা শুভ্র মুখশ্রী।একপলক তাকিয়ে দর্শন পুনরায় ফোনে ব্যস্ত হয়।

” ভিডিওটা সমস্ত নিউজ চ্যানেলের কাছে পৌঁছে দাও রাফিন।মিডিয়া,নিউজ চ্যানেলগুলো আরেকবার গরম হোক।শিরোনাম ভাসুক আজকের হট-ব্রেকিং নিউজ!”

অপরপাশ থেকে রাফিন শঙ্কিত কন্ঠে বলে উঠে,

“আপনি শিউর স্যার?আপনি ভেবে বলছেন তো?”

কথার পিঠে মলিন হাসে দর্শন।তারপর বলে,

“ইয়াহ!যা বললাম তা করো কুইক!”

তারপর পকেটে ফোন ভরে মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে হাস্যজ্জল দর্শন বলে উঠে,

“গুড মর্নিং জান!”

“মেকি হাসার প্রয়োজন নেই।”

মৃত্তিকার বিরক্তির সুর শুনে দর্শন আফসোসের শ্বাস ফেলে বলে,

“ওকে!গিভ মি এ লং কিস দ্যান সি মাই রিয়েল স্মাইল।”

চলবে….