ফরগেট মি পর্ব-০৫

0
14

#ফরগেট_মি নট
#রক্তিমা(লেখনীতে)
৫.
কাল রাতে একটা খুন করে এতটা স্বাভাবিক আচরণ কিভাবে করছেন আপনি?”

দর্শন মৃত্তিকাকে পর্যবেক্ষণ করে বলে উঠে,

“বারবার আমার এত নিকটে আসাটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে তোমার? ”

দর্শনের সূঁচালো প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয় মৃত্তিকা।চট করে সরে আসতে নেয় কিন্তু বিধিবাম!শাড়ির সাথে পা বেঁধে দর্শনের বক্ষস্থলে আছড়ে পরে রমনী।আকস্মিক ঘটে যাওয়া ঘটনায় অস্বস্তি ও লজ্জায় হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়ে অতিবেশি।ভারসাম্য রক্ষায় খামচে ধরে দর্শনের বুকের কাছে শার্ট।ভাগ্যিস মৃত্তিকার হাতের নখ ছোট ছোট!নয়ত যে জোরে খামচে ধরেছে তাতে বুকে আঁচড় লেগে রক্তপাত হতে কোন বিলম্ব ছিল না!

দর্শন বিছানায় শক্ত করে হাত রাখে।ওষ্ঠযুগলে কিঞ্চিৎ ফাঁক সৃষ্টি হয়েছে।এমন কোন ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না সে।হৃৎস্পন্দন কি থমকে গেছে?
মৃত্তিকার অবস্থা ভয়াবহ হয় যখন দর্শনের প্রগাঢ় আওয়াজ কর্ণগোচর হয়।

“এখন কি এভাবেই থাকার প্ল্যান মেহের.. জান?”

তড়িৎ বেগে দর্শনের বুক থেকে সরে আসে মৃত্তিকা।অপ্রস্তুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আশেপাশে।তবে দর্শনের দৃষ্টি আটকে রয় দ্বিধাগস্ত রমনীর পানে।লজ্জায় কুঁচকে থাকা ভ্রুযুগল,কিছু মুহুর্ত পূর্বেই ঘুৃম থেকে উঠার দরুন মুখশ্রীতে ফোলা ফোলা ভাব বিদ্যমান।কিছু তো আছেই এই সফেদ মুখশ্রীতে! নয়ত এত এত শুভ্র ত্বক ঘুরে দৃষ্টি কেন এইখানেই আটকাবে?
সময় অতিবাহিত হয়।নিরবতা ভাঙে মৃত্তিকার মিনমিনে স্বরে,

“আমায় যেতে দাও।আই হ্যাভ টু গো হোম!”

“তোমার বাবা জানে তুমি টুরে গিয়েছো।এত চিন্তা করার কিছু নেই।আয়েশ করো এখানে?”

দর্শনের অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বর শুনে মৃত্তিকা স্বাভাবিক থাকতে পারে না।ভ্রু যুগল কুঁচকে আসে বেশ খানিক।তেজি কন্ঠে বলে,

“ভুল জানেন তিনি।তাই উনাকে আর সকলকে সত্যিটা জানানো আবশ্যক।”

কথাটুকু শেষ করে মৃত্তিকা দরজার নিকটে আসতে নিলেই বড় বড় কদম ফেলে এসে বেশ শব্দ করে দরজা লাগায় দর্শন।তারপর দরজায় হেলান দিয়ে ঘুরে তাকায় সে।দৃষ্টি শক্ত কিন্তু শান্ত কন্ঠে বলে উঠে,

“আমি যা বলছি তা করো মৃত্তিকা।”

“কেন শুনবো তোমার কথা?একজন খুনি তুমি!আমার চোখের সামনে তুমি খুন করেছো তৃষাকে!আমার ভাবতেই ঘেন্না লাগছে আমি একজন খুনির সাথে আছি!দরজা থেকে সরো।যেতে দাও আমায়।”

“আমাকে রাগিও না মৃত্তিকা।”

দর্শনের রাগি স্বরেও মৃত্তিকার কোন হেলদোল হয় না।উপরন্তু দৃষ্টি গলার স্বর আরো জোরালো হয় তার।শক্ত,তেজি কন্ঠে প্রশ্নের বাণ ছুঁড়ে,

“কেন?কেন শুনবো তোমার কথা?ভুলে যেও না আমি ইরফান চৌধুরীর মেয়ে।কোন অসহায় পরিবারের মেয়ে নই যে তোমার ধমকাধমকি মুখ বুজে শুনবো।আর এটাও ভেবো না আমি অন্যায়কে সাপোর্ট করবো।তোমার ক্ষমতা থাকলে আমারও ক্ষমতা আছে তোমাকে মোকাবিলা করার।আমার পিএ একে মারার অপরাধে আমি তোমাকে জেলে অবশ্যই পাঠাবো মিস্টার দর্শন মির্জা।”

মৃত্তিকা সব কথা খুব সিরিয়াস হয়ে শোনে দর্শন।ভীষণ গম্ভীর চোখ মুখে আকস্মিক শব্দ করে হেসে উঠে সে।তাকে এভাবে হাসতে দেখে ভরকায় মৃত্তিকা।পরপরই হাসি থামিয়ে ফের গম্ভীর হয়ে আসে দর্শনের মুখশ্রী।শক্ত করে চেপে ধরে মৃত্তিকার বাহু।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,

“তুমি ভুলে যাও তুৃমি কার মেয়ে আর তোমার কতটা ক্ষমতা আছে।কেননা এখন তুমি আমার বন্দি!আমি বাদে আর কেউ তোমার খোঁজ জানে না।সো ইউ হ্যাভ টু লিসেন টু মাই এভরি ওয়ার্ড!”

মৃত্তিকার শূন্য আঁখিতে অশ্রু জমে।অপলক তাকায় দর্শনের মুখশ্রীতে।ক্রোধান্বিত মুখশ্রী তখন সকল অনুভূতির শীর্ষে।মৃত্তিকা অশ্রুসিক্ত নয়নে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই তার।মৃত্তিকা ঢোক গিলে ভেজা কন্ঠে আওড়ায়,

“ইফ আই ওন্ট!”

দর্শনের পাষাণ হৃদয়ের এতে কোন হেলদোল হয় না।নিজের কঠোরতা বজায় রেখে সে বলে উঠে,

“ডোন্ট থিংক সো!”

তারপর বিছানা রাখা প্যাকেট দেখিয়ে বলে,

“ওখানে তোমার জন্য ড্রেস আছে।ফ্রেশ হয়ে নাও।”

দর্শন কথাখান বলে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য উদ্ধত হয়।এবার রাগে ফুঁসে উঠে মৃত্তিকা।বিছানায় থাকা প্যাকেট ছুঁড়ে মারে যা সোজা এসে দর্শনের পিঠ বরাবর লাগে।মৃত্তিকা চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“আমি ড্রেস চাই না!আমি মুক্তি চাই!তোমার মত পাষণ্ডের কাছ থেকে।”

দর্শন এবার ফিরে তাকায় দুষ্ট হাসি পূর্ণ মুখশ্রী নিয়ে।বলে উঠে,

“সত্যিই তোমার ড্রেসের প্রয়োজন নেই?আরেকবার ভাবো মেহের।ততক্ষণে আমি আসছি”

পুনরায় রাগে জ্বলে উঠে মৃত্তিকা।এদিক ওদিক তাকিয়ে ছুঁড়ে মারার মতো বস্তু খুঁজতে থাকে তার দৃষ্টি।কিন্তু তার আগেই রুমের দরজা আটকে বাইরে বের হয় দর্শন।মৃত্তিকা চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“তুমি আমাকে এভাবে আটকে রাখতে পারো না দর্শন।ইউ হ্যাভ টু লিভ মি!”
.
আজকে অনেকদিন পর অফিসে এসেছেন ইরফান চৌধুরী।মেয়ের আসনে বসে তিনি বিরক্ত ও চিন্তিত মুখে কিছু ভাবছেন।মৃত্তিকার এভাবে হুট করে টুরে যাওয়ার ব্যাপারটা তাকে চিন্তায় ফেলছে!কিন্তু পরক্ষণেই এমন সিদ্ধান্তে মেয়ের উপর প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছেন তিনি।এভাবে কাউকে না জানিয়ে কোথাও যাওয়া কোন ধরনের ফ্যান্টাসি?
ইরফান চৌধুরীর ভাবনায় ছেদ ঘটে পুরুষালি গম্ভীর আওয়াজে।চট করে মাথা তুলে তাকান তিনি।অক্ষিপটে ভেসে উঠে দুইজন যুবকের প্রতিচ্ছবি।তাদের দেখে নিজের চিন্তিত চেহারা লুকানোর চেষ্টা করেন ইরফান চৌধুরী।দর্শন ও দীপনকে দেখে একটা ছেলে না থাকার কষ্ট হঠাৎ মাথা চারা দিয়ে উঠে।বক্ষপট ছেয়ে যায় শূন্যতায়।ওদের দুজনকে বসতে বলেন ভদ্রলোক।দর্শন আসন গ্রহণ করে নম্রস্বরে সালাম দেয়।ইরফান চৌধুরী সালামের উত্তর দিলে এবার কথা শুরু করে দীপন।ব্যবসায়িল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করার একপর্যায়ে দর্শন ইরফান চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,

“আপনাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে।এনি প্রবলেম?”

হঠাৎ করে এমন যৌক্তিক প্রশ্নে লুকিয়ে রাখা চিন্তিত ভাব ফুটে উঠে ইরফান চৌধুরীর চোখে মুখে।তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,

“মৃত্তিকা ব্যাপারে একটু আপসেট।ও কখনো এভাবে কোথাও যাইনি।”

দর্শনের ভ্রু কুঁচকে আসে।ভদ্রলোক তাকে সন্দেহ না করলেও মনে মনে খচখচানি রয়ে গেছে।দর্শন মনে মনে কথা সাজিয়ে নেয় তারপর বলে,

“আমি যতদূর জানি মৃত্তিকা সবসময় আপনার বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত থাকতো।যেহেতু আপনি কিঞ্চিৎ অসুস্থ আর ডাক্তারের বারণ আছে তাই আপনার মেয়েই সব দায়িত্ব নিয়েছে। এভাবে একটানা বিজনেসে ডুবে থাকতে থাকতে হয়ত সে হাঁপিয়ে গেছে।তাই হুট করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।চিন্তা করবেন না।কিছুদিনের মাঝেই ফিরবে।”

ইরফান চৌধুরী অভিযোগ নিয়ে বলেন,

“তাই বলে একবার বলে যেতে পারতো আমায়।তারউপর কোন ফোনও নেইনি!আর হঠাৎ করে একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে।এসে দেখলে ফের তোলপাড় করবে!”

তৃষার মৃত্যুর কথাটা আসার পর দর্শন চুপ করে থাকলেও দীপন নড়েচড়ে বসে।দর্শন আড়চোখে চায় তার দিকে।তারপর ইরফান চৌধুরীর পানে তাকিয়ে বলে উঠে,

“হয়ত আপনি যেতে দিবেন ভেবে বলেনি।ডোন্ট ওয়ারি!সি ইস এডাল্ট নাও!”

দীপন এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে চায় দর্শনের দিকে।কিছু একটা ভেবে ভ্রুদ্বয় কুঁচকে আসে তার।পরপরই ইরফান চৌধুরী প্রয়োজনীয় আলোচনায় ফিরলে তাতে মগ্ন হয় দীপন।
দশমিনিট পর কেবিন থেকে বেরোয় তারা।দীপন দর্শনের উদ্দেশ্যে বলে,

“মৃত্তিকার ব্যাপারে একটু বেশিই জানিস বলে মনে হচ্ছে না?”

সহসা দর্শনের চলতে থাকা পা থামে।ঘুরে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,

“সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।তুই তোরটা নিয়ে ভাব।আর হ্যা অবশ্যই ভালোমতো ভাববি।মৃত্তিকা টুর থেকে ফিরে তার পিএ এর মার্ডার হয়েছে শুনলে নিশ্চয়ই চুপ করে থাকবে না।”

দীপন ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে,

“কি বলতে চাইছিস তুই?”

“এটাই বেশি চালাকি ভালো নয় ব্রাদার!”

চলবে..