#ফিরে_আসা__
লেখা: ShoheL Rana শামী
পর্ব:-০১
১৫২৫ সাল।
ইংল্যান্ডের শাসনভার ছিল তখন রাজা অষ্টম হেনরির হাতে। ক্যাথরিন ছিল হেনরির সুন্দরী স্ত্রী। কিন্তু ক্যাথরিন কোনো পুত্র সন্তানের মা হতে পারেনি বলে হেনরি এক প্রকার বিরক্ত স্ত্রীর প্রতি। পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছিল সে ঠিকই। কিন্তু শৈশবেই প্রত্যেকে মারা যায় ওরা। শুধু মেরি নামে এক কন্যাসন্তান বেঁচে থাকে তার। হেনরি অন্য এক মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে তখন। মেয়েটির নাম সায়ানা। একদিন দলবল নিয়ে শিকার করতে বের হওয়ার সময় হেনরির নজরে পড়ে সে। গোপনে প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনি তাকে। সায়ানাও রাজি না হয়ে থাকতে পারেনি। গোপনে তাদের প্রেম চলতে থাকে। মাঝেমধ্যে হেনরি তাকে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে অনেক দূরে ঘুরতে নিয়ে যায়। সায়ানার একদিন ইচ্ছে হলো নিজ হাতে বাঘ শিকার করার। হেনরি মন্তব্য করেন,
-সাহসী রাজার পত্নীকেও তো সাহসী হতে হবে। ক্যাথরিনের কখনও শিকারে যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি। আমার সাথে কেমন যেন মিলে না ওর। মনে হয় ভুল করেই পত্নী হয়ে গেছে সে আমার।
-তাই? পত্নী হিসেবে আমি ঠিক আছি তো?’ হেসে প্রশ্ন করে সায়ানা।
-একদম।’ আলতো করে সায়ানার নাক টেনে দেয় হেনরি। তারপর তাকে ঘুরিয়ে কোমর প্যাঁচিয়ে ধরে ঘাড়ে ঠোঁট বুলায়। হালকা কেঁপে ওঠে সায়ানা। শিহরণ বয়ে যায় তার সারা শরীরে। হেনরি তাকে দু’হাতে তুলে ঘোড়ার উপর বসায়। তারপর নিজেও বসেন সায়ানার পেছনে।
-কোথায় যাচ্ছি আমরা?’ প্রশ্ন করে সায়ানা। হেনরি তার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করলেন,
-শিকার করবো আজ সারাদিন।’
মৃদু হাসি ফোটে সায়ানার ঠোঁটে। ঘোড়া ছুটিয়ে হেনরি তাকে নিয়ে আসেন গভীর জঙ্গলে। ঘোড়া থেকে নেমে সাবধানে কয়েক পা এগোতেই হেনরি সায়ানার বাহু ধরে চোখের দিকে তাকায়। সায়ানাও প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় হেনরির দিকে। হেনরি ইশারায় একটা বাঘ দেখিয়ে বললেন,
-ঐ যে বাঘ, বন্দুকটা তাক করো বাঘের দিকে।’
সায়ানা বাঘটাকে লক্ষ্য করে বন্দুক তাক করলো। পেছন থেকে তার কোমর জড়িয়ে ধরেন হেনরি। সায়ানা কেঁপে ওঠে তাঁর স্পর্শে, বন্দুক চালায়, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় গুলি। সতর্ক হয়ে যায় বাঘটা, ছুটে পালায়। সায়ানা হেনরির দিকে তাকিয়ে ‘হিহিহি’ করে হেসে ওঠে। হেনরির চোখে তখন কামনার দুরভিসন্ধি। আরও গভীর আলিঙ্গনে জড়িয়ে ফেলেন তিনি সায়ানাকে।
রাত গভীর হলে, ঘোড়ার টগবগ আওয়াজ এসে থামে সায়ানার জীর্ণ কুটিরের সামনে। ঘোড়া থেকে নামে দুজন। নিস্তব্ধ পরিবেশ! ঝিঁঝি পোকার শব্দও নেই। চাঁদের আবছা আলোয় হেনরি চারপাশটা একবার দেখে নিলেন। আশেপাশে আরও অনেক কুটির আছে। যেন একটা বস্তি এলাকা। এমন পরিবেশে হেনরির এই প্রথম পা পড়েছে। সায়ানা নিজের ঘরটা দেখিয়ে বললো,
-এই হলো আমার ঘর। ভাঙা কুটির। আপনার হয়তো এখানে পা ফেলারও রুচি নেই।’
-এই ভাঙা কুটিরে যে থাকে, তার সাথে প্রেম করার রুচি থাকলে, এই কুটিরে থাকারও রুচি আছে আমার। চলো ভেতরে।’ পা বাড়ায় হেনরি। সায়ানা কুটিরের দরজায় টোকা দিয়ে ডাকে,
-ডায়ানা… ডায়ানা…’
একটুপর দরজা খুলে দেয় ডায়ানা। হাতে একটা কুপিবাতি। কুপির আলোতে হেনরি দেখেন সায়ানার ছোট বোন ডায়ানাকে। সদ্য যুবতী, সুন্দরী, ফর্সা, নিটোল দেহ। সারা শরীরে রূপ যেন তার টগবগ করছে। চেয়ে থাকেন হেনরি ডায়ানার দিকে। এমন রূপসী মেয়ে তার রাজ্যে আছে! হাজারও বিস্ময় ফোটে হেনরির দৃষ্টিতে। এবার হেনরির মনে ধরে যায় ডায়ানাকে। ডায়ানাকে তার পেতেই হবে। দৃঢ় সংকল্প করে বসেন তিনি। সেই রাতে রাজা হেনরি সায়ানার সাথে কুটিরে থাকতে এলেও, হেনরি সারারাত আড্ডা দেয় ডায়ানার সাথে।
ডায়ানাকে একদিন রাজ দরবারে অতিথি করেন হেনরি। হরেক রকমের আয়োজন করেন তিনি ডায়ানার জন্য। সায়ানার মনে তখন সন্দেহ জাগে। তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক করার পর কখনও রাজা তাকে নিমন্ত্রণ করেননি। অথচ তার ছোটবোনকে রাজা রাজ দরবারে অতিথি করেছেন। বিষয়টা সহজভাবে নিতে পারলো না সায়ানা। ভৃত্যার বেশ ধরে সেদিন সায়ানাও যায় রাজ দরবারে। দেখে, রাজা ডায়ানাকে একটা কক্ষে নিয়ে গিয়ে আলাদাভাবে কথা বলছেন। সায়ানা এবার নিশ্চিত হয়, হেনরি তাকে ধোঁকা দিয়ে তার বোনের সাথে সম্পর্ক করতে চাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে ছুটে চলে যায় সায়ানা।
এটা নিয়ে একদিন সায়ানা হেনরির সাথে কথা বললে, হেনরি সব স্বীকার করে বলেন,
-হ্যাঁ, ডায়ানাকে আমার মনে ধরেছে। ওকে আমার রানি বানাবো।
-কিন্তু আমার সাথে সম্পর্ক করে এভাবে তো ধোঁকা দিতে পারেন না আপনি?’ সায়ানাও উত্তেজিত হয়।
-আমি কী করবো, আর কী না করবো সেটা বলার তুমি কেউ না সায়ানা।
-আমার সাথে যা করলেন, এর কী হবে? আমার শরীরটাও তো দিয়ে দিছি আপনাকে। আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারেন না আপনি।
-বিনিময়ে কী চাও বলো? যা চাও তাই দেবো।
-আমি অন্য কিছুই চাই না। শুধু আপনার রানি হতে চাই।
-সেই জায়গাটা ডায়ানার…
-নাহ্, আমি কখনও আমার বোনকে আপনার হতে দেবো না।
-তাহলে তোমাকেই সরিয়ে দিতে হবে সামনে থেকে।
-মানে?’ চোখ বড়ো বড়ো করে ভীতদৃষ্টিতে হেনরির দিকে তাকায় সায়ানা। হেনরির ঠোঁটে পৈশাচিক হাসি ফুটে ওঠে। ঘাড়টা বাঁকিয়ে ইশারা করে সে তাঁর কয়েকজন সৈন্যকে। ঘোড়া নিয়ে এগিয়ে আসে সৈন্যদল। তারপর ওরা জোর করে সায়ানাকে ঘোড়ার উপর তুলে নেয়। সায়ানা চিৎকার করতে চাইলে একজন ওর মুখ চেপে ধরে। টগবগ করে জঙ্গলের দিকে ছুটতে থাকে ঘোড়া। প্রতিবার শিকারে গিয়ে ওরা বাঘ শিকার করে, আজ তারা বাঘের জন্যই শিকার নিয়ে যাচ্ছে।
হন্তদন্ত হয়ে রাজ দরবারে প্রবেশ করে ডায়ানা। সিংহাসন থেকে রাজা হেনরি প্রশ্ন করেন,
-কী ব্যাপার ডায়ানা, আজ তোমাকে এমন বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন?’
-ইউর ম্যাজেস্টি, আমি বড়ো বিপদে পড়েছি। গতকাল থেকে আমার বোন সায়ানাকে খুঁজে পাচ্ছি না। রাতেও ফিরেনি। আপনার সহায়তা চাচ্ছি ইউর ম্যাজেস্টি।’
রাজ দরবারের বাইরে তখন হৈ-হুল্লোড় শোনা গেল। একজন সৈন্য ভেতরে এসে কুর্নিশ করে বললো,
-ইউর ম্যাজেস্টি, একটা লাশ এসেছে। একটা মেয়ের লাশ। আমরা জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে খুঁজে পাই লাশটা।’
চমকে উঠে সৈন্যের দিকে তাকায় ডায়ানা। তারপর ছুটে যায় বাইরে। দেখে রক্তাক্ত পড়ে থাকা লাশটা। চেনার উপায় নেই। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত-বিক্ষত। গা থেকে মাংস খসেখসে পড়ছে। গায়ের জামাটার কারণেই ডায়ানা চিনতে পারে ও, তার বোন সায়ানা। ‘হু হু’ করে কেঁদে উঠে ডায়ানা বোনের লাশ জড়িয়ে ধরে। ভেতর থেকে হেনরি এসে ডায়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে।
দুবোন একসাথে থাকতো ওরা। সায়ানা মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়ে ডায়ানা। রাজা হেনরি তাকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসেন তখন। এরপর থেকে ডায়ানার দিন কাটতে থাকে রাজপ্রাসাদে। নিজের অমায়িক ব্যবহারের কারণে অল্প সময়েই সে রাজ সভার সকলের আপন হয়ে যায়। রানি ক্যাথরিনের সাথেও তার একটা ভাব হয়ে যায়। রানি নিজের দামি-দামি গহনাগুলো ওকে নিজহাতে পরিয়ে দিতো। নিজহাতে ওকে সাজিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলতো,
-বাহ্, খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে। মনে হচ্ছে এই প্রাসাদেরই রানি।’
ডায়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,
-কী যে বলেন না, আমার জন্য রানি শব্দটা ব্যবহার করাও হারাম।
-কেন হারাম হবে? তুমি দেখতে সুন্দরী, আচার আচরণ ভালো। তুমি কি জানো, রাজা মহাশয় তোমাকে পছন্দ করে? তোমাকে বিয়ে করতে চায়?’
চমকে উঠে গালে হাত দেয় ডায়ানা। অবাক হয়ে তাকায় রানির দিকে। কী সহজেই এই মহিলাটা নিজের স্বামীর অন্য মেয়ের প্রতি আকর্ষণের কথাটা বলে ফেললো? ডায়ানা ভালো করে খেয়াল করলো রানিকে। নাহ্, রাগ নেই, কোনো ক্ষোভ নেই রানির চোখে। তবে কেমন যেন একটা অভিমান লুকিয়ে আছে রানির পুরো চেহারায়।
-আপনার কষ্ট হয়নি কথাটি বলতে? কী করে এটা মেনে নিলেন?’ প্রশ্ন ছুড়ে ডায়ানা। ক্যাথরিন তার কাঁধে হাত রেখে কৃত্রিম হাসার চেষ্টা করে।
-মেনে নিতে হয় বোন। কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়। নয়তো কে চায় স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে। এই রাজ বংশের একজন উত্তারাধিকারী লাগবে তো… আমি তো তা দিতে অক্ষম। তুমিই না হয়…
-না, না… আমি পারবো না। আমার দ্বারা এ বিয়ে করা সম্ভব না।
-কেন সম্ভব না?’ ভেতরে প্রবেশ করেন রাজা হেনরি। ভয়ে কুঁকড়ে যায় তখন ডায়ানা। রাজার দিকে তাকাতে পারে না সে। দৃষ্টি নত করে চুপ হয়ে থাকে। হেনরি তার কাঁধে হাত রাখলে অস্বস্তিবোধ করে সে। আরও বেশি কুঁকড়ে যায়। হেনরি তার কানের পাশে মুখ নিয়ে গিয়ে নরম সুরে যেন ধমক দিলেন,
-এই বিয়ে অবশ্যই হবে। তুমিই হবে আমার দ্বিতীয় রানি।’
জবাবে কিছু বলতে পারলো না ডায়ানা। রাজার মুখের উপর কথা বলার দুঃসাহস এখনও কারও হয়নি।
নিজের সব আশা-ভরসা জলাঞ্জলি দিয়ে একসময় ডায়ানা রাজার দ্বিতীয় রানি হয়। তার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে হয়তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে যেতো। কিন্তু ডায়ানা তা পারছে না। সারাক্ষণ কেমন যেন বিষণ্ণ চেহারায় বসে থাকে। তার বিষণ্ণ চেহারা দেখে ক্যাথরিন প্রশ্ন করে,
-কী হয়েছে বোন? তুমি যেন হঠাৎ পালটে গেছ। কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকো সারাক্ষণ।’
ডায়ানা ক্যাথরিনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
-এ বিয়ে আমি করতে চাইনি।’
ম্লান হেসে ক্যাথরিন ডায়ানার চোখের জল মুছে। তারপর হতাশ কণ্ঠে বলে,
-আমরা এখনও পুরুষের কাছ থেকে পুরোপুরি স্বাধীনতা পাইনি বোন। মেনে নিতে শিখো। এই যে আমাকে দেখো, যেভাবে আমি মেনে নিচ্ছি সবকিছু…’
ডায়ানার কান্না তবু থামে না। ফোঁপাতে থাকে সে।
সেইরাতে ডায়ানা প্রস্তুতি নেয়, এই রাজপ্রাসাদ ছেড়ে চলে যাবে। রাজা হেনরি ছিল না তখন। তিনি মাঝেমাঝে সৈন্যসহ শিকারে গিয়ে দুই/তিনদিন ফিরতেন না। এই সুযোগে সে পালিয়ে যাবে। রাত আরও গভীর হলে ডায়ানা চুপিচুপি বের হয় রাজপ্রাসাদ থেকে। চাঁদের আলোতে নিজের ছায়ার সাথে চলতে থাকে সে। কিছুটা দূর থেকে তখন কে যেন প্রশ্ন ছুড়ে,
-কে ওখানে?’
সেনাপ্রধান জেমস পিটারের কণ্ঠ শোনে এগিয়ে গেল ডায়ানা ওদিকে। তারপর পিটারকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। পিটার ডায়ানার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
-শান্ত হও, এভাবে ভেঙে পড়ো না…’
ফোঁপাতে ফোঁপাতে ডায়ানা বললো,
-চলো, দুজন অনেকদূরে পালিয়ে যাই।
-কোথায় পালাবো? যেখানে যায় রাজা আমাদের খুঁজে বের করবে।
-কিন্তু এভাবে তো আর পারছি না। আমি তো ভালোবেসেছি শুধু তোমাকে। রাজা আমাকে জোর করে বিয়ে করে নিলো।
-কষ্ট তো আমারও হয় ডায়ানা। এই যে প্রতিটা রাত আমার নির্ঘুম কাটে এভাবে। হারানোর ব্যথা কী করে বুঝাবো?
-এখন কী করতে বলছো তুমি আমাকে?
-তুমি প্রাসাদে ফিরে যাও। আমরা আগের মতোই মেলামেশা করবো গোপনে।
-যদি রাজা জানতে পারে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেবে।
-ভাগ্যে যা থাকবে, তাই হবে…’
চোখ মুছে আবার প্রাসাদে ফিরে চললো ডায়ানা।
সাল ১৫২৮।
ডায়ানা এখন রাজা হেনরির একমাত্র রানি। রাজ প্রাসাদে থাকার অধিকার হারিয়েছে রাজার প্রথম স্ত্রী ক্যাথরিন। ডায়ানার সাথে বিয়ের পর থেকে হেনরি তার প্রথম স্ত্রীকে অন্য নজরে দেখতে শুরু করেন। অনেকদিন ধরে দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল ছাড়াছাড়ির ব্যাপারে। ক্যাথরিন ছিল আসলে তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রী। বিয়ের পাঁচ মাসেই তাঁর ভাই মারা যায়। এরপর বড় ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে নিজেই বিয়ে করেন। তিনি মনে করেন, ভাইয়ের স্ত্রীকে বিয়ে করার কারণেই একটা অভিশাপ লেগে আছে তাঁর উপর। তাই কোনো পুত্র সন্তান বেঁচে থাকে না তাঁর। এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্যাথরিনকে ছেড়ে দিবেন। ক্যাথরিন এর প্রতিবাদ করে। তাই হেনরি সিদ্ধান্ত নেয় করে তাকে নির্বাসনে দেয়ার।
ক্যাথরিনের মেয়ে মেরি রাজপ্রাসাদেই থাকে। যেহেতু নিজের মা কাছে নেই তাই ডায়ানাকেই মা হিসেবে আপন করে নিয়েছে। ডায়ানা এখনও কোনো সন্তানের মা হতে পারেনি। মেরিকে নিজের মেয়ের মতোই দেখে সে। অন্দরমহলে নিজের কক্ষে মেরিকে চুপচাপ শুয়ে থাকতে দেখে প্রবেশ করে ডায়ানা। মেরির মাথায় হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করে,
-মন খারাপ?
-হুমম…’ মেকি জবাব মেরির।
-কেন?
-ঐ পাদরিটার কথা ভাবছি…
-কোন পাদরি?
-ঐ যে, যিনি আমাকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আচ্ছা মা, আসলেই কি আমার নামটা ইতিহাসে এভাবে থাকবে? আসলেই কি আমি ব্লাডি মেরি হিসেবে পরিচিত হবো ইতিহাসে?’
কয়েকমুহূর্ত চুপ থেকে ডায়ানা মেরির মাথায় হাত বুলায়,
-ওসব চিন্তা মাথা থেকে সরাও। পাদিরর কথা সত্য নাও হতে পারে…
-যদি হয়? সত্যিই যদি আমি ব্লাডি মেরি হয়ে যাই?’
কোনো জবাব দিতে পারে না ডায়ানা। কারণ সে জানে, যে পাদরি মেরিকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, আগেও তার অনেক কথা সত্যি হয়েছে। হয়তো একদিন মেরি এক রক্ত পিপাসুতে পরিণত হবে।
[[চলবে….]]