ফিরে আসা পর্ব-৫৪+৫৫

0
676

#ফিরে_আসা
৫৪+৫৫
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

সিঁড়ির কাছে পৌঁছেই চমকে গেল অরা। সিঁড়িজুড়ে লাল গোলাপের পাপড়ির ছড়াছড়ি। মনে হচ্ছে কেউ যেন লাল কার্পেট বিছিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। অরা স্যান্ডেল খুলে খালি পায়ে সিঁড়ির ওপর পা রাখলো। প্রত্যেকটা সিঁড়ির দুপাশে মোমবাতি। গোলাপের সৌরভের সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে যেন বেলি ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে অরা বুঝতে পারলো বেলি ফুলের ঘ্রাণটা আসছে মোমবাতি থেকে। এগুলো তাহলে সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি। মুচকি হেসে অরা এগিয়ে গেল ছাদের দিকে।

ছাদে পা রাখতেই অরার বিস্ময়ের সকল সীমানা ছাড়িয়ে গেল। পুরোটা ছাদ জুড়ে বিভিন্ন সাইজের অসংখ্য মোমবাতি। কতগুলো মোম আছে এখানে? কয়েক’শ তো হবেই। গোলাপের পাপড়ির কোমলতা এখনো পায়ের নিচে টের পাচ্ছে অরা। মেঝের দিকে চোখ পড়তেই আরেকবার বিস্মিত না হয়ে পারলো না সে। এত বিশাল ছাদের পুরোটা জুড়ে লাল গোলাপের পাঁপড়ি আর সাদা রঙের বেলুন। লাল-সাদার কম্বিনেশনটা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।

ছাদের ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটা গোল টেবিল। টেবিলের দুপাশে দুটো চেয়ার। আর ওপরেও মোমবাতি আর ফুলের ছড়াছড়ি। টেবিলের ওপরে বড় একটা ট্রে। সেই ট্রে আবার বিশাল সাইজের ঢাকনা দিয়ে ঢাকা। অরা সেদিকে এগোতেই যাচ্ছিল, তার আগেই কারও বাহুডোরে আটকা পড়ে গেল। আরশাদ আচমকা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে তাকে।

অরা ঝলমলে গলায় বলল, “আপনি কি পাগল?”

আরশাদ অরার কানের কানে ঠোঁট নিয়ে শান্ত গলায় বলল, “কিছুটা। কেন তুমি জানো না?”

অরা এবার আরশাদের দিকে ঘুরলো। খয়েরী রঙের পাঞ্জাবি, পরিপাটি চুল আর ঠোঁটে লেগে থাকা এক চিলতে হাসিতে তাকে আজ অনন্য সুন্দর লাগছে। হাজার হাজার মেয়েরা শুধুশুধু এই মানুষটার প্রেমে হাবুডুবু খায় না। অরার ভাবতেই অবাক লাগে, এই মানুষটা না-কি তার একান্ত ব্যক্তিগত!

অরার দিকে তাকিয়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে আরশাদ। কোনো এক প্রবল ঘোরের মাঝে। সে ঘোর কাটিয়ে ওঠা তার পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার।

আরশাদ ঘোরগ্রস্ত কণ্ঠে বলল, “এত সুন্দর কেন তুমি? কেউ কী করে তোমাকে ভালো না বেসে থাকতে পারে?”

লজ্জায় অরা চোখদুটো বুজে মাথা রাখলো আরশাদের বুকে। সে যে এতটা লজ্জা পেতে পারে, আগে কখনো বোঝেনি। আরশাদের এমন কর্মকাণ্ড তার মধ্যকার লজ্জা দিন দিন যেন বাড়িয়েই দিচ্ছে। আরশাদ সুযোগ হাতছাড়া করলো না। তৎক্ষণাৎ অরাকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে একটা চুমু খেল নিলো। তড়িৎ গতিতে কেঁপে উঠলো অরা। আরশাদ যদি এমনই হুটহাট চুমু খেতে শুরু করে তাহলে তাকে আর এই পৃথিবীতে থাকতে হবে না। অন্য কোনো গ্রহে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করতে হবে।

কিছুটা সময় ঠিক এভাবেই থেকে আরশাদ আলতো হাতে তার বুক থেকে অরার মুখটা তুলে ধরে বলল, “কেমন সাজিয়েছি বলো তো?”

অরা বিস্মিত গলায় বলল, “এতসব আপনি একা করেছেন?”

আরশাদ অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বলল, “হুঁ। তোমার সারপ্রাইজ আমি ছাড়া আর কে প্রিপেয়ার করবে?”

“শুধু শুধু এত কষ্ট করতে গেলেন কেন? আজ কী কোনো স্পেশাল ডে?”

আরশাদ অরার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “না। কিন্তু মানুষটা স্পেশাল। স্পেশাল মানুষের জন্যে স্পেশাল ব্যবস্থা তো করতেই হয়!”

অরা মুচকি হাসি হেসে বলল,“আমাদের ছাদটা চেনাই যাচ্ছে না! ছাড়ুন তো, একটু ঘুরে দেখি!”

আরশাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, “ছাড়তে হবে কেন? আমার হাত ধরে ঘোরো!”

আরশাদ অরার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেই পুরো ছাদটা ঘুরে দেখালো। মোমবাতির আলোয় আলোকিত হয়ে প্রতিটা কোণা। সেই সঙ্গে ছাদজুড়ে লাল-সাদার খেলা। অরার চোখে ফুটে উঠলো মুগ্ধতা ঝলক। তার ঠোঁটজুড়ে প্রচ্ছন্ন এক হাসি। হাসিটা দেখে আরশাদের মনে হচ্ছে এতক্ষণে তার কষ্ট সার্থক হয়েছে।

ছাদের দোলনাটাও সুন্দর করে সাজিয়েছে আরশাদ। লাল আর সাদা রঙের কাপড় দিয়ে সুন্দর করে রডগুলো ঢেকে দিয়েছে। আর বসার জায়গাতেও ছোট ছোট লাল রঙয়ের কুশন। দুজনে গিয়ে বসলো দোলনাটায়। আরশাদ এখনো ধরে আছে অরার হাতটা। প্রশান্তিময় নীরবতার হওয়ায় দুজনেই গা ভাসালো। অন্যান্য সময় নীরবতা অসহ্যকর বলে মনে হয় আরশাদের কাছে। কেবল নীরবতা কাটিয়ে ওঠার জন্যেই অহেতুক কথা বলার প্রয়োজন মনে হয়। তবে অরার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহুর্ত কোনো নিয়ম মানে না। এই মুহূর্তগুলো কথার মাঝেও সুন্দর, নীরবতাও সুন্দর।

কিছুটা সময় পর আরশাদ নীরবতা ভঙ্গ করে ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “শোনো অরা! এভাবে বসে থাকলে চলবে না। আজ রাতে কিন্তু আমাদের অনেক কাজ।”

অরা অবাক হয়ে বলল, “কী কাজ?”

“ক্যান্ডেললাইট ডিনার করবো, তারপর…”

“তারপর কী?”

আরশাদ ঠোঁটে ফুটে ওঠা হাসি লুকানোর চেষ্টা করে বলল, “না থাক। লজ্জা পাবে।”

অরা জেদ ধরে বলল, “বলুন তো আপনি!”

আরশাদ দুষ্টুমিমাখা গলায় বলল, “তারপর ক্যান্ডেলাইট বাসর করবো।”

তরঙ্গের ন্যায় কী যেন একটা খেলে গেল অরার শরীরজুড়ে। লজ্জায় তার গালদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। এসব কী ধরনের কথা? আরশাদের কথাবার্তা আর কাজকর্ম দিন দিন বড্ড লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

অরা লজ্জা রাঙা মুখটা লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বলল, “ছি! অসভ্য একটা!”

আরশাদ হেসে বলল, “আমি অসভ্য? সিরিয়াসলি? বিয়ের বছর পেরিয়ে গেল বউকে টাচ পর্যন্ত করলাম না, আর আমি না-কি অসভ্য!”

“একদম মিথ্যা বলবেন না! বছর কোথায় পেরিয়েছে? ছয় মাস পেরিয়েছে মাত্র।”

“ওই একই কথা। এরকম আরেকটা ছয় মাস পেরোলেই তো এক বছর! আমি অত ভালো মানুষ না যে আরেকটা ছয় মাস ওয়েট করবো। অনেক ওয়েট করেছি।”

অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো অরা। নিজের রক্তিম গাল দুটো আরশাদের থেকে আড়াল করে রাখবার বৃথা চেষ্টা। এই মানুষটার হঠাৎ কী হলো? দুদিন আগেও তো ভদ্র ছেলের মতো তার সঙ্গে গল্প বলতো, সিক্রেট সিক্রেট খেলতো। আর সেই একই মানুষটা আজ শুরু থেকে কেবল অসভ্যের মতো কথা বলে যাচ্ছে।

আরশাদ বাঁকা হাসি হেসে বলল, “আবার লজ্জা পাওয়া শুরু করলে?”

অরা মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে রেখেই জড়ানো গলায় বলল, “আপনার এসব কথা শুনলে তো যে কেউই লজ্জা পাবে।”

“যে কাউকে লজ্জা তো পেতে হবে না। তুমি পেলেই চলবে।”

আরশাদ দেখছে অরার লজ্জা শেষ হবার নামই নিচ্ছে না। নাহ্! এভাবে চলতে থাকলে তো তার আজ রাতের সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে যাবে।

আরশাদ তাই অরাকে সহজ করার উদ্দেশ্যে বলল, “এবার চলো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে।”

আরশাদ অরাকে যত্ন করে হাত ধরে নিজ হাতে সাজানোর টেবিলের কাছে নিয়ে এলো। চেয়ার টেনে ইশারায় বসলো বলল তাকে। ক্রমেই আরশাদের কাজেকর্মে হতবাক হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটাকে একটু আগেও মনে হচ্ছিল চরম অসভ্য। আর এখন মনে হচ্ছে ভদ্র-সভ্য জেন্টেলম্যান।

আরশাদ গিয়ে অরার মুখোমুখি থাকা চেয়ারটায় বসলো। ধীর-স্থির ভঙ্গিতে ট্রেয়ের ওপর থেকে বড় ঢাকনাটা তুলে দিলো। স্টেক, ম্যাশেড পটেটো আর স্যালাড। সেই সঙ্গে আরও আছে আপেলের জুস। আরও একবার অবাক না হয়ে পারলো না অরা। কবে যেন একদিন অরা বলেছিল, তার স্টেক খেতে ভালো লাগে। সেই কথাটা এখনো মনে করে রেখেছে আরশাদ?

আরশাদ অরার প্লেটে স্টেক তুলে দিতে দিতে বলল, “কেমন হয়েছে বলবে কিন্তু।”

অরা হতবিহ্বল কণ্ঠে বলল, “আপনি রান্না করেছেন?”

“হুঁ! এজন্যেই তো এতটা সময় লাগলো।”

“কী সাংঘাতিক! শুধু শুধু এত কষ্ট কেউ করে?”

“শুধু শুধু না অরা। কেন করেছি আগেও বলেছি।”

ছুরি কাঁটাচামচের সাহায্যে আরশাদের তৈরি করা স্টেক মুখে নিলো অরা। মুহূর্তেই মনে হলো যেন মুখের ভেতরে উৎসব চলছে। স্বাদের উৎসব। কতগুলো ফ্লেভারের সঠিক মিশ্রণ ঘটিয়েছে আরশাদ। মনে হচ্ছে কোনো প্রফেশনাল বাবুর্চির হাতের রান্না। যে গুণী, তার আসলে সব দিক থেকেই গুণ থাকে।

আরশাদ বলল, “কেমন হয়েছে!”

অরা মুগ্ধ গলায় বলল, “দারুণ! মনে হচ্ছে অমৃত খাচ্ছি।”

আরশাদ অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল, “এতটাও ভালো হয়নি।”

অরা ভ্রু কুঁচকে কিন্তু মুখে হাসি নিয়ে বলল, “নিজের প্রশংসা সহ্য হয় না, না? যখন কেউ আপনাকে সুপারস্টার বলে তখন আপনি ঠিক এভাবেই বলেন, না না আমি কোনো সুপারস্টার না।”

আরশাদ জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, “আসলে রান্নার ইন্সপিরেশন আমি তোমার কাছ থেকে পেয়েছি।”

“আমার কাছ থেকে? কিন্তু আমি তো খুব একটা রান্না করি না।”

“যতটুকুই করো, খুব উৎসাহ নিয়ে করো। আর সেটা খেতেও হয় দারুণ!”

অরা হাসিমুখে বলল,“তাই না-কি? তা আর কী কী শিখেছেন আমার কাছ থেকে?”

আরশাদ দুষ্টুমিভরা গলায় বলল, “সেটা বলতে গেলে তো রাতটাই শেষ হয়ে যাবে। আর টাস্ট মি, আজকে রাতে আমার অনেক প্ল্যান আছে। তোমাকে তো বললামই।”

হিমবাহের ন্যায় জমে গেল অরা। আবারও অসভ্যতা শুরু করেছে ছেলেটা। এবার আর তাকে সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না।

অরা তাই প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “আমি আপনার কাছ থেকে কী শিখেছি বলবো?”

“বলো।”

“কী করে নিজেকে ভালোবাসতে হয়।”

আরশাদ কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “আমি নিজেকে খুব ভালোবাসি না-কি?”

“সেজন্যেই তো শিখেছি। নিজেকে ভালোবাসতেন না বলেই তো এতগুলো দিন কষ্ট পেয়েছন। সব কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায় হলো নিজেকে ভালোবাসা।”

আরশাদ ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল, “ওসব কথা আজ আর না বলি?”

“আচ্ছা।”

“আজ আমার কেন জানি ওই দিনটার কথা খুব মনে পড়ছে।”

“কোন দিন?”

“যেদিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। ঠিক হলুদ রঙয়ের একটা জামা পড়েছিলে তুমি।”

“আপনার মনে আছে?”

আরশাদ মজার ছলে বলল, “হুঁ। ভেবো না লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট হয়েছিল বলে মনে আছে। আমার মেমোরি এমনিতেই ভয়ানক।”

অরা স্মৃতিকাতর হয়ে বলল, “সেদিন খুব নার্ভাস ছিলাম জানেন। আমি যে পরিস্থিতিতে বেড়ে উঠেছি, তাতে সিনেমা দেখার কোনো সুযোগ আমার ছিলো না। আমাদের ওদিকে অবশ্য সিনেমা হলও তেমন ছিল না। ঢাকায় আসার পরও সিনেমা দেখার সুযোগ হয়নি। আমি যে এতিমখানায় থাকতাম, ওখানে একটা টিভি ছিল। সন্ধ্যায় সবাই একসঙ্গে টিভি দেখতে বসতাম। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে আপনার অ্যাড দেখাতো। সবথেকে বেশি দেখাতো পেপসির অ্যাড। আমি তো আপনাকে নামে চিনতাম না, চিনতাম পেপসির অ্যাডের নায়ক হিসেবে।”

আরশাদ হেসে ফেলে বলল, “আর এই কথাটা আজ জানতে পারছি?”

অরাও হাসিমুখে বলল, “যখন আপনার ম্যানেজার ছিলাম, তখন সাহস ছিল না-কি এই কথা বলার? তারপর শুনুন না কী হলো!”

অরার চোখদুটো জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছে যেন পুরনো দিনগুলোর প্রতিচ্ছবি তার চোখেই ভেসে উঠেছে।

আরশাদ বলল, “বলো!”

“তারপর যখন…”

কথাটা বলতে গিয়েই থেমে গেল অরা। তারপর নওশীন তাকে আরশাদের ম্যানেজার হবার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এই মুহূর্তে নওশীনের প্রসঙ্গটা আনতে তার ইচ্ছা করছে না। তাই চুপ করে রইলো। আরশাদ যথেষ্ট বুদ্ধিমান ছেলে। সে ঠিকই বুঝে ফেলল অরার মনের কথাটা।

তাই সহজ গলায় বলল, “হুঁ বুঝেছি, তারপর থেকে বলো।”

অরা মুচকি হাসি হেসে বলল, “আমি জানতাম আরশাদ হক নামের কোনো বিশাল সুপারস্টারের ম্যানেজার হবো আমাকে। আমাকে সেভাবেই ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছিল। এক আন্টি আমাকে স্পিচ নিয়ে ট্রেনিং দিচ্ছিলেন। কারণ তখনও আমি আঞ্চলিক টোনে কথা বলি। ট্রেনিং সেন্টারের টিভিতে হঠাৎ ওই অ্যাডটা দেখালো। আন্টি বললেন, ওই দেখো তোমার বস। আমি রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এই পেপসির অ্যাডের নায়কই না-কি শেষমেশ আমার বস!”

“সেদিন নার্ভাস ছিলে এটা সত্যি। তোমার চোখেমুখে নার্ভাসনেস দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি মনে মনে ভাবছিলাম এতটুকু একটা মেয়ে কী করে আমার ম্যানেজার হবে।”

অরা আঁতকে উঠে বলল, “আমি মোটেও এতটুকু একটা মেয়ে ছিলাম না।”

আরশাদ সোজাসাপ্টা জবাবে বলল, “তুমি এখনো এতটুকু একটা মেয়েই আছো।”

অরা চুপ করে রইলো। কী বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। তাই কোনো উপায় না দেখে স্টেকে মনোযোগ দিলো।

আরশাদ হঠাৎ কোমল স্বরে বলল, “অরা?”

“হুঁ?”

আরশাদ অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল, “আমি অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিলাম জানো। আমার এত চাকচিক্যময় জীবন, সাকসেসফুল ক্যারিয়ার – সবকিছুই অনর্থক বলে মনে হতো। ইচ্ছা হতো ছুটে কোথাও পালিয়ে যাই। যেখানে কেউ বিরক্ত করতে পারবে না আমাকে। ইচ্ছা হতো এভাবে তিলে তিলে শেষ না হয়ে নিজেকে একেবারেই শেষ করে ফেলি।”

বুকে ধ্বক করে একটা ধাক্কা খেল অরা। এসব কথা শুনলেও তার আত্মা কেঁপে ওঠে। অথচ কী নিঃশঙ্কোচে তা বলে যাচ্ছে আরশাদ। শুধু বলছেই না। একটা সময়ে তা অনুভবও করেছে।

অরা বাঁধ সেধে বলল, “এসব কী কথা বলছেন আপনি?”

“পুরোটা শুনবে তো।”

আরশাদকে বলার সুযোগ দিয়ে চুপ করে রইলো অরা।

আরশাদ টেবিলের অপরপ্রান্ত থেকে অরার একটা হাত ধরে মোহনীয় কণ্ঠে বলল, “আমার অন্ধকার জীবনটা অন্ধকারই রয়ে যেত, যদি কোনোদিন তুমি না আসতে। আমার জীবনে তুমি তো সেই কবেই এসেছো। কখনো ম্যানেজারের থেকে বেশি কিছু ভাবিনি তোমাকে। কিন্তু আমাদের এই বিয়েটা সব বদলে দিলো। তোমার সাথে থাকতে থাকতে, তোমার কথা শুনতে শুনতে, তোমাকে নিজের কথা শোনাতে শোনাতে সব কেমন যেন বদলে গেল। অন্ধকার জীবনে আচমকা হাজার হাজার মোমবাতি জ্বেলে গেল। আমি আবারও পথ খুঁজে পেলাম। You’ve healed me.”

অরার চোখে যেন জল চলে এল। প্রথম
জীবনে সে প্রচুর অপমান আর বঞ্চনার শিকার হয়েছে। সেই যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিগুলো আজও মাঝেমধ্যে দুঃস্বপ্ন হয়ে ধরা দেয়। অথচ তার দ্বিতীয় জীবনটাই যে এট সুখময় হবে, কে জানত? কে জানত, এত এত সুন্দর অনুভূতি দিয়ে আরশাদ ভরিয়ে দেবে তার মনটাকে? কে জানত, সুপারস্টার আরশাদ হক, যে কাউকে পরোয়া করে না, সে কিনা নিজের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আসনটা তার জন্যে ছেড়ে দেবে?

অরা সাবধানে তার চোখের জল মুছে বলল, “আজ একটাও সিক্রেট বলবেন না?”

“আজ তুমি বলো। বললাম তো আমার অন্য প্ল্যান আছে।”

অরা মুচকি হেসে অন্যরকম গলায় বলল, “আমি না ভালোবাসায় বিশ্বাস করতাম না। একেবারেই না। আমার মনে হতো ভালোবাসা কেবলই লোক দেখানো একটা জিনিস। পৃথিবীতে এত এত মানুষ, অথচ দুটো মানুষ কী করে একে অপরের প্রেমেই পড়বে? আমার সিক্রেট হলো, আপনি আমাকে ভালোবাসায় বিশ্বাস করিয়েছেন।”

আরশাদ ক্লান্ত ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “তাও ভালোবাসি কথাটা মুখে বলবে না?”

“বাসি তো! সেটা আপনিও জানেন।”

“উহুঁ! এভাবে না। সুন্দর করে বলো।”

“অন্য আরেকদিন বলি?”

আরশাদ মেকি ধমকের সুরে বলল, “একদম না। আজকেই বলতে হবে।”

অরা লজ্জাসরমের মাথা খেয়ে বলল, “I love you.”

আরশাদের সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। গায়ে কাঁটা দিয়ে গেল। এমনটা কেন হচ্ছে? এমন তো নয় যে সে জানে না অরার ভালোবাসার কথা। প্রতিটা মুহূর্তে সে মেয়েটার দুচোখে নিজের জন্যে নির্ভেজাল ভালোবাসা দেখতে পায়। তবুও আজ তার নিজের মুখে কথাটা শুনে যেন আরশাদের সকল অপেক্ষার অবসান ঘটলো।

আরশাদ প্রচ্ছন্ন হাসি হেসে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, “ওঠো!”

অরা কিছুটা ভয় পেয়ে বলল, “কোথায় নিয়ে যাবেন?”

আরশাদ তাকে চোখ মেরে বলল, “আপাতত কোথাও না।”

অরার হাত ধরে আরশাদ তাকে নিয়ে এলো তার অর্গানিক গার্ডেনের কাছে। এই বাগানের চারপাশটাও মোমবাতি দিয়ে সাজানো। বাগানের মাঝে আরশাদ লুকিয়ে রেখেছিল বড়সর একটা হলুদ গোলাপের তোড়া। ফুলের তোড়াটা বের করে এনে সে অরার হাতে ধরিয়ে দিলো।

ফুল জিনিসটাই এমন, মানুষ যেমন পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন – এই জিনিস হাতে পেলেই তার মন ভালো হয়ে যায়। ফুল পেয়ে অরার ঠোঁটে চওড়া একটা হাসি ফুটে উঠলো। চোখদুটো বুজে ফুলের সুবাস নিলো সে। আরশাদ প্রাণ ভরে দেখছে তার হৃদয়ে বসবাসকারীনীকে। হলুদ জামদানিতে অরাকে আজ এমনিতেই একটা হলুদ ফুলের মতো লাগছে। তার ওপরে তার হাতে হলুদ গোলাপের তোড়া। মনে হচ্ছে যেন এক ফুলের হাতে আরেক ফুল।

অরা হঠাৎ কী যেন মনে করে বলল,
“হলুদ গোলাপ না বন্ধুত্বের প্রতীক?”

আরশাদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, “হুঁ। তুমি তো আমার বন্ধুই। কেন লাল গোলাপ পাওনি বলে মন খারাপ করলে?”

“না মানে…”

অরা আর কিছু বলে ওঠার আগেই আরশাদ বাগানের মধ্যে থেকে আরেকটা গোলাপের তোড়া বের করলো। এবারের গোলাপের রঙ টকটকে লাল। যে লাল কেবলই ভালোবাসার প্রতীক।

এবার আর অরা নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। আনন্দে খিলখিল করে হেসে উঠলো। আরশাদের নেশাক্ত দৃষ্টি আটকে গেল অরার হাসিটার দিকে। ভাবতেই অবাক লাগে এই হাসিটা তার, শুধুমাত্র তার।

অরার খুব কাছকাছি চলে এলো আরশাদ। যতটা কাছে গেলে তার নিঃশ্বাসের শব্দ টের পাওয়া যাবে, ঠিক ততটা কাছে। হাসি থামিয়ে এবার স্বাভাবিক হলো অরা। তার চোখদুটো আটকে আছে আরশাদের চোখের দিকে। অরা প্রাণপণ চেষ্টা করে তার দৃষ্টি সরিয়ে নিতে। তবে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। নেশাগ্রস্তরা যেমন চাইলেও নেশার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না, অরার অবস্থা হয়েছে ঠিক তেমন। আরশাদ একটু একটু করে এগিয়ে আসছে তার দিকে। অরার হৃদস্পন্দন বেড়েই চলেছে। সে শক্ত করে শাড়ির আঁচল চেপে ধরলো।

আরশাদ অরার কানের সঙ্গে ঠোঁট মিশিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে, “Will you dance with me?”

অরা চমকে উঠে বলল, “কিন্তু আমি তো নাচতে পারি না।”

“না পারলেও নাচতে হবে অরা। আমার আজকের প্ল্যানে একটা স্লো রোমান্টিক ড্যান্সও আছে।”

নিজের ফোনে একটা গান প্লে করে দিলো আরশাদ। কোন গানে সে অরার সঙ্গে নাচবে সেটাও আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। অরার হাত থেকে ফুলের তোড়াগুলো নিয়ে দোলনার ওপরে রাখলো। এরপর তার খুব কাছাকাছি এগিয়ে গিয়ে নিজের বাম হাতটা রাখলো অরার উন্মুক্ত কোমরে। আর অরার ডান হাত রাখলো নিজের কাঁধের ওপরে। নিজের ডান হাতটা দিয়ে অরার বাম হাত শক্ত করে আকড়ে ধরলো।

গানের মৃদু তালে নাচছে দুজনে। ভয়ঙ্কর সুন্দর এক মোহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। অতল গহ্বরে আরশাদের সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে অরা। ইচ্ছা করছে সময়টাকে থামিয়ে দিয়ে। ঠিক এভাবেই থাকতে বাকিটা জীবন। পৃথিবীর কাছে অরার আর চাওয়ার কিছুই নেই।

“Oh, I used to say
I would never fall in love again until I found her
I said, I would never fall unless it’s you, I fall into
I was lost within the darkness, but then I found her
I found you”

অরার কপালে কপাল ঠেকিয়ে আরশাদ ঘোরলাগা কণ্ঠে বলল, “এই গানের প্রতিটা লাইন তোমাকে ডেডিকেট করলাম।”

অরা সজল চোখে তাকিয়ে বলল, “আপনি এত ভালো কেন আরশাদ?”

অরার চোখে জল গড়িয়ে পড়ার আগেই আরশাদ তা মুছে দিয়ে বলল, “আমি যে তোমার, এজন্যে।”

আনন্দে-প্রশান্তিতে নিজেকে হারিয়ে চুপ করে রইল অরা। একটা পর্যায়ে গান শেষ হয়ে গেল। অরা গিয়ে মুখ লুকালো আরশাদের বুকে। এই বুকটাকে তার পৃথিবীর সবথেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলে মনে হয়।

আরশাদ তার বুক থেকে দুহাতে অরার মুখটা তুলে ধরে বলল, “Will you marry me?”

অরা বিস্ময়ের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছে বলল, “Aren’t we already married?”

“আরে ধুর! ওটা কোনো বিয়ে হলো না-কি? হোটেলের নিচতলায় লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে! আমার এমন একটা বিয়ে দরকার যেখানে আমার সব আত্মীয়-স্বজনরা আসবে। দিনরাত আনন্দ করবে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবে। তোমার হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা হবে আমার নাম। তুমি টকটকে লাল শাড়ি বৌ সেজে এসে আমার পাশে বসবে।”

আরশাদ এমনভাবে বলছে যেন বিয়ে করার জন্যে তার আর তর সইছে না। যত তারাতারি আর একান্ত আপন অরাকে নতুন করে আপন করে নেয় ততটাই মঙ্গল।

আরশাদ ব্যাকুল কণ্ঠে বলল, “করবে বিয়ে?”

অরা আনন্দের হাসি হেসে বলল, “অবশ্যই।”

আরশাদ তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে নীল রঙের একটা বক্স বের করলো। সে বক্সটা খুলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো চকচকে একটা হীরার আংটি। আরশাদ আংটিটা বক্স থেকে বের করে পড়িয়ে দিলো অরার অনামিকায়।

ভালোবাসা জিনিসটা এতটাই সুন্দর? একটা সময়ে অরার মনে হতো ভালোবাসা কেবলই বিভ্রান্তিকর একটা সমীকরন। অথচ আজ মনে হচ্ছে, যে মানুষ ওই সমীকরনের সমাধান করে ফেলতে পারে, জগতের সব সুখ সে পায়। সুপারস্টার আরশাদ হকের যেখানে দুদণ্ড শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই, সে কিনা সব কাজ ভুলে বিপদের দিনে তাকে উদ্ধার করতে ছুটে গিয়েছে। সে কিনা আজ অরাকে ভালোবেসে তার জন্যে এত হুলস্থুল কান্ড বাঁধিয়েছে।

আরশাদ হুট করে কোলে তুলে নিলো অরাকে। আচমকা এমন কান্ডে অরা কিছু বুঝে উঠতে না পেরে জড়িয়ে ধরলো আরশাদের গলা।

আরশাদ অরার নাকে নাক ঘষতে ঘষতে কোমল স্বরে বলল, “কেমন লাগলো আজকের সারপ্রাইজ?”

আরশাদের এমন কান্ডে হকচকিয়ে গিয়ে অরা কম্পিত স্বরে বলল, “অসম্ভব সুন্দর।”

আরশাদ অরার ঠোঁটের একদম কাছে নিজের ঠোঁট এনে বলল, “তোমার মতো?”

অরা কিছু বলতে যাচ্ছিল। বলার সুযোগ আর পেলো কোথায়? তার আগেই আরশাদ তার ঠোঁটদুটো মিশিয়ে দিলো অরার ঠোঁটে। শিহরণে শিহরণে পাগল হয়ে গেল অরা। বাড়ন্ত হৃদস্পন্দন কখন যে তাকে আরশাদের পাঞ্জাবি খামচে ধরতে বাধ্য করলো সে নিজেও জানে না।

অনেকটা সময় ঠিক এভাবেই থাকার পর একটা শব্দে ঘোর কাটলো অরার। দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শব্দে। অরা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো তারা শোবার ঘরে। কী আশ্চর্য! আরশাদ তাকে এখানে নিয়ে এলো কখন? সে কি এতটাই ঘোরে ডুবে গিয়েছিল, যে আশেপাশের কোনোকিছুই স্পর্শ করতে পারেনি তার চেতনাকে।

হঠাৎ অরার খেয়াল হলো তাদের শোবার ঘরটাও ঠিক একইভাবে সুগন্ধিযুক্ত মোমবাতি আর ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে সাজানো।

অরা আরশাদের ঠোঁট ছেড়ে হতবিহ্বল কণ্ঠে বলল, “একি! এই ঘরটাও সাজিয়েছেন?”

আরশাদ ব্যস্ত গলায় বলল, “বললাম না, ক্যান্ডেল লাইট বাসর করবো!”

ব্যস্ততা তো বটেই। কথা বলে আর এক মুহুর্তও সময় অপচয় করতে চাইছে না আরশাদ। অরাকে কোল থেকে নামিয়ে কোনমতে এসিটা অন করে দিলো। ফ্যান ছাড়লে তো বাতিগুলো সব নিভে যাবে। এরপর অরাকে বদ্ধ দরজার সঙ্গে ঠেকিয়ে আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়লো তার ঠোঁট দুটো নিয়ে।

আরশাদের প্রত্যেকটা পদক্ষেপে যেন মূর্ছা যাচ্ছে অরা। লজ্জা, ভয়, ভালোলাগা – কতশত অনুভূতি যে তার এই মুহূর্তে অনুভূত হচ্ছে সে নিজেও জানে না। ভালোবাসার উন্মাদনায় নিজের মধ্যে আর নেই আরশাদ। অরার ঠোঁটদুটো ছেড়ে উন্মাদের ন্যায় মুখ ডুবিয়ে দিলো তার গলায়। আরশাদের একটা হাত ব্যস্ত অরার কাঁধ থেকে আঁচলটা সরাতে। তবে মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেফটিপিন। অরা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অজস্র লজ্জার মাঝেও সেফটিপিন খুলে সাহায্য করে দিলো আরশাদকে।

আরশাদ এমনিতেই আগে থেকে উন্মাদ হয়ে ছিল অরার জন্যে। মেয়েটার ছোট্ট এই সাড়াটুকু যেন তার উন্মাদনা কয়েক হাজারগুণ বাড়িয়ে দিলো। আরশাদ উত্তেজিত অবস্থায় অরার আঁচলটা কাঁধ থেকে সরিয়ে তাকে বিছানায় ফেলে দিলো।

বিছানার দিকে চোখ পড়তেই অরা লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে গেল। নাটক-সিনেমায় যেমন বাসর ঘরে বিছানার চারিদিকে ফুলেল পর্দা তৈরি করা হয়, ঠিক সেভাবেই তাদের বিছানাটা সাজিয়েছে আরশাদ।

আরশাদ অরার কাছে এসে ঘোরগ্রস্ত কণ্ঠে বলল, “অরা?”

কথা বলতেও যেন লজ্জা পাচ্ছে অরা। তবুও বহুকষ্টে অস্পষ্ট গলায় বলল, “উঁ?”

আরশাদ নেশাগ্রস্তের মতো বলল, “I love you too. I love you more than the world. I love you day and night.”

ভালোবাসার নতুন এক জগতে অরা আজ ঘুরে বেড়ালো আরশাদের সঙ্গে। যে জগতটা কেবলই তাদের। যে জগতে চাইলেই একে অপরের মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায়।

(চলবে)