ফিলোফোবিয়া পর্ব-১৪+১৫

0
541

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

১৪.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

ফোনের অপর পাশ থেকে ফ্যাচফ্যাচ কান্নার আওয়াজ। গাড়ি্র সিটে হেলান দিয়ে বসে আছে শতাব্দ। কানে ফোন। শক্ত, গম্ভীর মুখ। প্রিয় কেঁদে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। থামার নাম নেই কোন। শতাব্দ বিরক্ত হলো। কন্ঠে বিরক্ত ঠেলে বলল,
‘ গত দশ মিনিট ধরে কেঁদে যাচ্ছ। কি হয়েছে বলবে?’
নাক টেনে, এলোমেলো ভাবে চোখমুখ মুছে কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল প্রিয়। একটু সময় নিয়ে। ধরে আসা কন্ঠে বলল,
‘ আপনি উপরে আসবেন না প্লিজ।’
শতাব্দ উত্তর দিলো না কোন। গম্ভীর চোখমুখ নিয়ে কপাল কুঁচকে বসে আছে এখনো। চোখ উঁচিয়ে সামনের বাড়ির বারান্দায় চাইল একবার। অন্ধকার বারান্দায় জড়সড়ভাবে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়।
প্রিয় কাঁপাকাঁপি কন্ঠে করুন সুরে বলল আবার,
‘ আব্বা জেগে, টের পেলে ভ*য়*ঙ্কর তুল*কালাম লেগে যাবে। আপনি চলে যান প্লিজ।’
রাগ বাড়ল শতাব্দের। সারাদিন না নেয়ে, না খেয়ে নির্বাচনের কাজ সামলে চারঘন্টা জার্নি করে ঝা*মেলা মেটানোর জন্য ইমান্দিপুর এখানে এলো। আর মেয়েটা তাকে বাবার ভ*য় দেখিয়ে চলে যেতে বলছে? শতাব্দের প্রচন্ড রাগ হলো। ইচ্ছে করল উপর থেকে টেনে নামিয়ে প্রিয়’র দু’গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিতে।
‘ তুমি আসবে? নাকি আমি উপরে আসবো!’
শতাব্দের ঠান্ডা আওয়াজ। প্রিয় হতভম্ব হতাশ! কন্ঠে এক রাশ ভী*তি,
‘ আব্বা আম্মা জেগে। বিল্ডিংয়ের নিচে ক্যামেরা লাগানো। দারোয়ান আঙ্কেল পরিচীত। দেখলে আব্বার কাছে নালিশ করবে।’
প্রিয়’র কথা কানে তুলল না শতাব্দ। গাড়ির দরজা খুলে বিল্ডিংয়ের দিক পা বাড়ালো।
শতাব্দকে বাড়ির দিকে আসতে দেখে। ঘাবড়ে গেল প্রিয়। চেঁচিয়ে বলল,
‘ আসবেননা প্লিজ। প্লিজ!’
বলতে বলতেই কেঁদে দিলো প্রিয়। শতাব্দ থেমে গেল। অপর পাশ থেকে প্রিয়’র কান্নাভেজা ভী*ত আওয়াজ। চোখ বুজে রাগ চাপানোর চেষ্টা করল শতাব্দ। ভারী শ্বাস ফেলে একটু সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করল। বলল,
‘ এসব আমাকে ইগনোর করার আগে ভাবা উচিত ছিল।’
প্রিয় উত্তর দিলো না কোন। ডুকরে কাঁদছে। এতোক্ষণ টানা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে। শতাব্দ শক্ত কন্ঠে বলল,
‘ কান্না থামাও। ভালো লাগছেনা আমার।’
চেষ্টা করল প্রিয়। কান্না থামছে না তার। ভ*য় ভী*তি ঝেঁকে ধরেছে তাকে। ঠাহর করে শতাব্দ। নরম স্বরে বলল,
‘ আসবো না। এবার কান্না থামাও।’
অনেক কষ্ঠে কান্না থামালো প্রিয়র। একটু চুপ থেকে জিজ্ঞেস করল শতাব্দ,
‘ কি হয়েছ? সমস্যা কোথায়! এভাবে ইগনোর করছ কেন?’
প্রিয় চুপ। আওয়াজ করলো না কোন। এবার গম্ভীর গর্জন করে বলল শতাব্দ,
‘ আমাকে ইগনোর করবে আমি চুপচাপ তামাশা দেখবো! এমন ছেলে আমি নই। আমাকে জ্বা*লাতে চাইলে তুমিও সেই আ*গুনে জ্ব*লবে, পু*ড়বে। আমার যা চাই আপো*ষে হোক বা জোর করে আমি ঠিক আদায় করে নেই। শেষ বারের মত জিজ্ঞেস করছি কি হয়েছে প্রিয়?’
উত্তর দিলো না প্রিয়। নিশ্চুপ কাঁদছে শুধু। শতাব্দ উত্তরের আশায় রইল। অপর পাশ থেকে কোন জবাব না পেয়ে রেগে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ এর মাশুল তোমাকে দিতে হবে। ফল বড্ড ভ*য়ঙ্কর হবে।’
কট করে ফোন কেটে। ক্রু*দ্ধ পায়ে গাড়ির দিক এগিয়ে গেল। প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে বড়সড় কান্ড ঘটিয়ে ফেলবে। তড়িঘড়ি করে গাড়ি চড়ে রওনা হলো সে। প্রিয় বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। ভেজা চোখ জোড়া রাস্তায় চেয়ে আছে ঠাই। বুক য*ন্ত্রণা করছে খুব। সেই সাথে চেপে ধরেছে আসন্ন ভয়। সেই রাতে ঘুম হলো না আর। নির্ঘুম কা*টলো সারারাত।

সকাল দশটায় ঘুম ভাঙ্গল প্রিয়’র। মায়ের বকুনঢুলতে ঢুলতে টেবিলে নাস্তা করতে এসেছে। ছোলার ডালে রুটি ছিঁ*ড়ে খাচ্ছে। মা পাশেই বসে। চপিং বোর্ডে সবজি কা*টছে। হ্ঠাৎ মা গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ কয়টা পর্যন্ত রাত জেগেছিস কাল? চোখমুখ এমন ফোলা দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে প্রিয়।
ঘাবড়ে গেল প্রিয়। মা কি কোন কিছু টের পেল? সন্দেহ করছে!চোখমুখ স্বাভাবিক ফুটিয়ে উত্তর দিলো,
‘ কই না তো। অনেক দিন পর বাড়ি এসেছি তাই ভালো ঘুম হয়নি।’
‘ তোর আব্বা সকাল থেকে চিন্তা করছে। বারবার জিজ্ঞেস করছে, মেয়েটার কি হয়েছে। চোখমুখ এমন দেখাচ্ছে কেন?’
‘ ও কিছু না। তুমি আব্বাকে বলে দিও। জায়গা পরিবর্তনে ঘুম কম হওয়ায় এমন দেখাচ্ছে।’
মা কিছু বলল না আর। প্রিয় চায়ের কাপ গোলগোল ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,
‘ দু’একের ভেতর ইমান্দিপুরে ফিরতে চাইছি আম্মা।’
ভড়কে উঠল আমেনা বেগম। বলল,
‘ দুইদিন হলো আসলি। এত তাড়াতাড়ি চলে যাবি!’
‘ কিছু নোট’স কালেক্টড করতে হবে। কোচিং শুরু হলে পরে সময় পাবোনা আর।’
খানিক চুপ থেকে ধীর আওয়াজে বলল,
‘ বেশ। যা ভালো মনে করিস। কাল মজনু চাচার বাড়িতে যাবে। সাথে করে নিয়ে যেতে বলবো তোকে।’
কথা বাড়ালো না প্রিয়। বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়ালো। গাঁ ডাকা দিয়ে এখানে বসে থাকলে চলবে না তার। সমস্যা কমার বদলে আরো বাড়বে। শতাব্দের ভরসা নেই! আবার কখন চলে আসে। যদি বড়সড় কোন ঝা*মেলা করে? তারচেয়ে বরং চলে যাবে। যা হবার সেখানেই হবে। শতাব্দ নিশ্চয়ই চি*বিয়ে খা*বেনা তাকে!

পরেরদিন সকাল সকাল ব্যাগপত্র গুছিয়ে তৈরি প্রিয়। বাবা পরিচীত গাড়ি ঠিক করে দিয়েছে। ইমান্দিপুরের সামনের গ্রামে মজনু ভাইয়ের চাচার বাড়ি। মজনু ভাইকে নামিয়ে প্রিয়’কে ইমান্দিপুরে নিয়ে যাবে গাড়ি। বাবা মাকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে চড়ল। সারা রাস্তা গাড়ি ঠিকঠাক চললেও, মজনু ভাইকে নামাতে যেয়ে সমস্যা আটলো। গ্রামের কাছাকাছি যেতেই গাড়ির ইঞ্জিনে ঝা*মেলা দেখা দিলো। সারতে সময় লাগবে অনেক! মজনু ভাই ফোন করলে। তার চাচাতো ভাই শিহাব গাড়ি করে নিতে আসলো তাকে। প্রথমে তাদের সাথে বাড়িতে যেতে না চাইলেও, কোন দিকাদিক না পেয়ে। শিহাব ভাইয়ের জোরাজোরিতে যেতে হলো প্রিয়কে।
শিহাব ভাইয়ের মা ফরিদা বানু গ্রামের সহজ সরল মানুষ। অতিথি আপ্যায়নে অধীর। অল্পতেই আপন করে নেয় সবাইকে। মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়েছে। শুকনো মুখে যেতে দিবে না প্রিয়’কে। পাশে বসে পাতে উঠিয়ে যত্ন করে খাওয়ালেন দুপুরে।
বিকালে প্রিয়কে গাড়িতে তুলে দিতে যেতে কেঁদে ফেললেন তিনি। শাড়ির আঁচলে চোখ মুখছে মুছতে বললেন,
‘ আজকের দিনটা থেকে যাও মা।’
‘আরেকদিন এসে থাকবো আন্টি। খালা অপেক্ষা করছে যেতে হবে আজ।’
মৃদু হেসে বিদায় জানিয়ে শিহাবের পাশের সিটে বসল।

গলি’র কাছাকাছি যেতেই ভ*য়ে আঁ*তকে উঠল প্রিয়। চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে বিশাল সমাবেশের আয়োজন। চেয়ারম্যান সাহেব তদারকি করতে ব্যস্ত । পাশেই দাঁড়িয়ে শতাব্দ। আশেপাশে আরো লোকজন অনেক। মাথায় ওড়না টেনে মুখ লুকাতে চাইল প্রিয়। লাভ হলো না কোন। গাড়ি থেকে নামতেই শতাব্দের তো*পের মুখে পড়ল। তার আ*গুন ঝরা র*ক্তিম চোখমুখ। শিহাবের দিক ঠাহর করে। শিহাবও একই দৃষ্টিতে তাকিয়ে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর ছেলে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। দুজনের মধ্যে চোখেচোখে নীরব যু*দ্ধ চলছে। শতাব্দ রাগ চেপে কোনরকম হাত মুঠিবদ্ধ করে রেখেছে। শিহাবে ঠোঁটের কোণে উষ্কানি সূচক হাসি। শতাব্দ তে*ড়ে আসতে চাইলে, কাঁধ চাপিয়ে থামিয়ে দিলো চেয়ারম্যান সাহেব। চোখের ইশারায় শান্ত হতে ইঙ্গিত করল। এসবে ঘাবড়ে গেল প্রিয়। শিহাবকে বিদায় জানিয়ে শতাব্দের দিক তাকাতেই ভ*য়ে কেঁপে উঠল। অ*গ্নি দৃষ্টির ভস্ম করা নজর! ঢোক গিলে মাথা নুয়ে নিলো প্রিয়। ব্যাগ হাতে বড় বড় পা ফেলে ভিতরে গেল দ্রুত।
সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় প্রিয়দের বাড়ি এলো শতাব্দ। গলার ভাঁজ পেয়ে ভয়ে দরজা আটকে বসে রইল প্রিয়। খালা ডেকে গেল কয়েকবার। মাথা ব্যাথার মিথ্যা বাহানা করে সারা সন্ধ্যা বেরিয়ে এলো না আর। ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করে চলে গেল শতাব্দ।
রাতে বারান্দায় কাপড় আনতে গিয়ে ভড়কে গেল প্রিয়। সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে শতব্দ। অবছা আলোতে ভেসে আছে মুখ। তার আক্*রোশপূর্ণ দৃষ্টি এদিকটাতেই চেয়ে। চোখে ক্রো*ধ। হাতে সিগারেটের জ্ব*লন্ত আ*গুন। নিষ্*ঠুর নি*র্দয় সেই চাহনি। যেন দৃষ্টিতেই জ্বা*লসে দিবে সে। প্রিয় ঘাবড়ে গেল। তড়িঘড়ি পা চালিয়ে ঘরে চলে এলো। বারান্দার দরজা লাগিয়ে পিঠ ঠেকিয়ে ভারী ভারী নিশ্বাস ফেলল। মানুষটার সামনে যাবে না আর। একদমই যাবেনা! দেখা যাবে তার ভ*য়*ঙ্কর ভস্ম করা চাহনিতে জ্ব*লসে দিচ্ছে প্রিয়’কে।

ভোরে ঘুম ভেঙ্গেছে আজ। আলসি ভেঙ্গে বিছানা ছাড়ল প্রিয়। প্রতিদিনকার অভ্যাসের ন্যায় আজও আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বারান্ধায় গেল। চোখ কচলে সামনে তাকাতেই শিউরে উঠল। গত রাতের সেই একই জায়গায় শতাব্দ এখনো বসে। দৃষ্টি প্রিয়দের বারান্দায়। ফর্সা মুখশ্রী মুড়ছে আ্ছে। র*ক্তিম ফোলা চোখ। হাতে এখনো সিগারেট জ্বলছে। সারারাত ঘুমায়নি সে?
তার চোখে এখনো রাগ। ভয়*ঙ্কর রাগ! সময়ের সাথে সাথে যেন আরও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। হাতের কাছে পেলে নিশ্চয়ই তছন*ছ করে ফেলবে! ভেবেই চমকে গেল প্রিয়। ঝটপট পা চালিয়ে ভিতরে চলে এলো।
দুপুরের আগে জুবাইদা শতাব্দের বার্তা নিয়ে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
‘ ভাই ভীষণ রেগে। বোধহয় কাল সারারাত ঘুমায়নি। তোকে দেখা করতে বলেছে। সাথে এটাও বলেছে তুই গেলে কিছু বলবে না। ভাইয়া আসলে বড়সড় ঝা*মেলা হবে।’
‘ কিছু বলবেনা!’ শুনে প্রিয় আরো বেশি চুপসে গেল। সে জানে একবার হাতের কাছে পেলে শতাব্দ তাকে থা*পড়িয়ে অজ্ঞান করে ফেলবে। খু*নও করতে পারে! যা ভ*য়*ঙ্কর রেগে! ভরসা নাই। ভ*য় ছাপিয়ে চোখমুখ স্বাভাবিক করল। গলা টানটান করে বলল,
‘ অনেক কাজ আছে আমার। যাবোনা।’
জুবাইদা চমকে গেল। মলিন মুখ করে বলল,
‘ তোর না হয় জা*নের ভ*য় নেই! আমাদের কেন ফাঁ*সাচ্ছিস?
কেন এমন করছিস সব জেনে গেছে ভাই।’
প্রিয় চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,’ কে বলল?’
জুবাইদা মিনমিনিয়ে বলল, ‘ সকালে জিজ্ঞেস করছিল ভাই তাই…’
এতটুকু বলে থামলো।হতাশ শ্বাস ফেলল। বিমূঢ় চেয়ে রইল প্রিয়। এখানে এসে কি নিজের পায়ে নিজে কু*ড়াল মা*রল? কি করবে এখন? শতাব্দের তো*পের থেকে কিভাবে বাঁচবে। পালাবে? যদি ধরে ফেলে। না বের হবেনা আর। বাড়ির বাহিরে এক পাও রাখবেনা সে।

কলেজ থেকে ফিরে। খালা শুয়ে আছে ঘরে। অসুস্থ শরীর। প্রেসার বেড়েছে। বিকাল থেকে লোডশেডিং হচ্ছে। চারদিক অন্ধকারে তলিয়ে সন্ধ্যা নামছে। টিমটিমে মোমবাতি জ্বলছে। আলোঅন্ধকারে ছেয়ে আছে ঘর। ‘ঠকঠক’ হ্ঠাৎ দরজায় করাঘাত। বিছানা ছেড়ে দরজার দিক পা বাড়ালো প্রিয়। দরজা খুলে কাউকে দেখলো না বাহিরে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে পিছন ফিরতে ঘাবড়ে গেল সে। সামনে অন্ধকার ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে। ফোঁসফোঁস শ্বাস ফেলছে। যেন ভীষণ রেগে। প্রিয় আওয়াজ করবে। তার আগেই মুখ চেপে ধরলো। গায়ের ওড়না টেনে মুখ বেঁ*ধে ছায়ামূর্তিটা কোলে তুলে নিলো।

চলবে……

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

১৫.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ)

কোলে করে ছাদে এনে কাঠের চেয়ারটার উপর ছুঁড়ে ফেলল। হাত মুখ খুলতেই, প্রিয় সাথে সাথে উঠে দাঁড়ালো। এগিয়ে আসছে শতাব্দ। ভয়ে পা পিছাতে পিছাতে সিঁড়ি কোটার দেয়ালে যেয়ে ঠকলো। খিঁচে চোখমুখ বন্ধ করে নিলো। ভয়ে থরথর কাঁপছে। ধুকপুক করছে বুক। ফোঁসফোঁস রাগী শ্বাস ফেলছে শতাব্দ। নিশ্বাসের গর্জন শুনে রাগের পরিমাণ অনুমান করা যাচ্ছে। আচমকা কাছে এসে এক হাতে কোমর খামচে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিলো প্রিয়’কে। অন্য হাতে শক্ত করে তার চিবুক চেপে। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল,
‘ আমাকে ইগনোর করা? আমাকে? আমি তোমার ইগনোর ঠেলবার লোক!….বারবার জিজ্ঞেস করেছি। সমস্যা কোথায়? কি হয়েছে। সামনা সামনি বসে সমাধান করি। আমার কথার কোন দাম নেই? তাই না?
প্রিয় চুপ। প্রচণ্ড ভয় করছে তার। শতাব্দের আগুন ঝরা ক্ষিপ্ত নিশ্বাস মুখে পড়তেই। শিরশিরে উঠছে গা। শতাব্দ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
‘ কোনকিছু না শুনে, না বলে হুট করে গায়েব হয়ে যাওয়া। শিহাবের সাথে গাড়ি করে ঘুরা। আমি এসব সহ্য করবো? উহু, খু*ন করে ফেলবো।’
শেষ কথাটা ধমকে বলল শতাব্দ। আঁতকে উঠল প্রিয়। ভয়ে জড়সড় হয়ে দেয়াল ঘেঁষে আরো নিবিড় ভাবে দাঁড়ালো। ঝুঁকে এলো শতাব্দ। প্রিয়’র গাল চেপে ধরল। গম্ভীর কঠিন গলায় বলল,
‘ চোখ খুলো। আমার দিকে তাকাও!’
চোখ খুলল না প্রিয়। আরো শক্ত করে চেপে রইল। শতাব্দের রাগ হলো। প্রচন্ড রাগ। দাঁতে দাঁত চেপে, চাপা কন্ঠে ধমকে বলল,
‘ আমার দিকে তাকাতে বলেছি প্রিয়!’
ওই অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে তাকানোর সাহস নেই প্রিয়’র। চোখ খুলবে না সে। গলায় দলা পাকিয়ে থাকা কান্নাটা বেরিয়ে এলো। ডুকরে কেঁদে ফেলল হ্ঠাৎ। শুনল না শতাব্দ। তার রাগ সপ্তম আকাশে আজ। এই কয়েক দিন মেয়েটা বড্ড বেশি পুড়িয়েছে। গতকাল শিহাবের গাড়িতে আসতে দেখে মাথা বিগড়ে গেছে। প্রিয়’র ভয়, কান্না কোন কিছু চোখে পড়ছেনা তার। কোন এক অসুর ভয় করেছে যেন। প্রিয়’র দু’ কাঁধ চেপে ধরল। চিৎকার করে বলল,
‘ আমাকে নিয়ে খেলতে চাইছ? কি ভেবেছ ছেড়ে দিবো আমি! আমি তোমাকে শে*ষ করে দিবো প্রিয়! বলো কেন? কেন এমন করছ! বলো’
শতাব্দ আরো শক্ত করে চেপে ধরলো ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল প্রিয়। ডুকরে কেঁদে উঠল। চাপা স্বরে চিৎকার করে বলল,
‘ কারণ, আপনি অন্যকারো সাথে জড়িয়ে গেছেন তা সহ্য করতে পারছিলাম না। কষ্ট হচ্ছিলো আমার। বুকে ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছিলো।’
শতাব্দ থমকে গেল। রাগটা নিমিষেই ধপ করে নিভে গেল । প্রিয় মুখের এই তিন বাক্য অদ্ভুত শান্তি দিচ্ছে তাকে। এই কয়েকদিনের অশান্তি, জ্বা*লাপো*ড়া। পলকেই উধাও হয়ে গেল সব।
অনবরত কেঁদে যাচ্ছে প্রিয়। ভারী ভারী শ্বাস ফেলছে। শতাব্দ বড় নিশ্বাস টেনে এলোমেলো নিজেকে সামলে নিলো। প্রিয়’র হাত টেনে কাঠের চেয়ারটায় বসালো। হাত পা গুটিয়ে। ভয়ে কাচুমাচু হয়ে চেয়ারের সাথে লেগে বসে আছে প্রিয়। জোসনা রাত। চাঁদের আলো এসে মুখ ছুঁইছে তার। ফোলা চোখমুখ ভীষণ মায়াবী দেখাচ্ছে। চোখের পানিতে গাল ভিজে। হাত পা এখনো কাঁপছে। শীতল চাহনিতে সব ঠাহর করল শতাব্দ। প্রিয়’র গা ঘেঁষে বসে বুকে টানতে চাইলে। হাত ঠেকিয়ে বাঁধা দিলো প্রিয়। শুনলো না শতাব্দ। হেঁচকা টান দিয়ে বুকে এনে ফেলল। কোমর চেপে মিশিয়ে নিলো। ফোঁসফোঁস শ্বাস ফেলছে প্রিয়। চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে তখনো। ডুকরে কাঁদছে। হেঁচকি উঠে গেল। ছাড়া পাবার জন্য হাতপা ছুঁ*ড়াছুঁড়ি করল। ছাড়লো না শতাব্দ। আরো চেপে ধরল। প্রিয়’র মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করল। খানিক সময় নিয়ে প্রিয়’র হাত পা ছুঁড়াছুঁড়ি থামলো। শান্ত হলো। একটু চুপ থেকে। শতাব্দ মৃদু শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ ওই মেয়ের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। নামও জানিনা। কেনটিনে সবার একবার প্রপোজ করেছিল রিজেক্ট করছি। কোথা থেকে জানো আইডি জোগাড় করে ম্যাসেজ দিয়েছিল সেদিন। নির্বাচন, ক্লাস চারদিকের ঝামেলায় ব্যস্ত থাকায় ম্যাসেজ চেক করা হয়নি আর। তুমি চাইলে কনভারসেশন চেক করতে পারো।’
বুক থেকে মাথা উঁচু করে প্রিয় তাকালো একবার। অভিমানী কন্ঠের সরল জিজ্ঞাসা তার,
‘ আমার কাছে বলছেন কেন? আমি কে হই আপনার?’
শতাব্দ প্রিয়’র মুখপানে সরু দৃষ্টিতে চাইল।ঠোঁট মেলে মৃদু হাসল। স্নিগ্ধ শীতল সুরে বলল,
‘ কি শুনতে চাইছ? প্রেমিকা!’
কপাল কুঁচকে চাইল প্রিয়। শতাব্দ আবার বলল,
‘ উহু, তুমি আমার প্রেমিকা নও। তুমি আমার যন্ত্রণা। বুকে বিঁধে থাকা নিবিড় যন্ত্রণা। যা ক্ষণে ক্ষণে শুধু পো*ড়ায়। ভীষণরকম জ্বা*লায়।’
‘ বেনামি সম্পর্কে এ কেমন অধিকার। কে হই আপনার?’
প্রিয়’র কন্ঠে ব্যকুলতা। বেনামি সম্পর্কটার নাম বুনতে অধির আকুলতা, উৎকণ্ঠা!
প্রিয়’র অস্থির এলোমেলো চোখজোড়ার উন্মাদনা অস্থিরতা ঠাহর করল শতাব্দ। নিমিষ চেয়ে রইল সেই নিদারুণ হরিণটানা আঁখিতে। সরল চাহনি মেয়েটার। নাকমুখ ছেয়ে আছে র*ক্তিম আভায়। ঠোঁট জোড়া কাঁপছে তিরতির।
অদ্ভুত এক সম্মোহনী মাথা চেপে ধরল। দৃষ্টিতে ঘোর লাগলো। আচমকা ঝুঁকে পড়লো। প্রিয়’র চিবুক উঁচিয়ে ভ*য়ঙ্কর এক কাজ করল। চোখমুখে এলোপাতাড়ি গাঢ় চুমু দিতে লাগলো। ঘাবড়ে গেল প্রিয়। ওড়নার কোন চেপে শক্ত হয়ে রইল। প্রচন্ড অনুভূতিতে কাঁপছে সে। শিরশির করছে গাঁ। নিশ্বাসের প্রবল উঠানামা। চোখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। মিনিট পাঁচেক পর থামলো শতাব্দ। ঠোঁটে আলতো চুমু দিয়ে, কপালে কপাল ঠেকিয়ে বসলো। তার ভারী ভারী তপ্ত নিশ্বাস। প্রিয়’র মুখ ছুঁইছে বারবার। নিশ্বাসে নিশ্বাসে কেঁপে উঠছে প্রিয়। ভ*য়ঙ্কর এই অনুভূতিতে মিয়িয়ে যাচ্ছে সে। আচমকা শতাব্দের গভীর নেশাতুর আওয়াজ ভেসে এলো। ফিসফিসিয়ে সে বলল,
‘ ভালোবাসি প্রিয়।’
কেঁপে উঠল প্রিয়। এই দুইটা শব্দ তার সর্বাঙ্গে কম্পন তুলে দিয়েছে। মন, মস্তিষ্ক আত্মা নাড়িয়ে দিয়েছে। হ্ঠাৎ অজানা কোন কারণে চোখের কোন ভরে এলো। অশ্রু বনে টপ করে গাল গড়ালো। কেন এই অশ্রু? অতি সুখের কারণে!
হিমেল হাওয়ায় ভেসে এলো ফিসফিস আওয়াজ। অত্যন্ত নিবিড় আর বুক ধা*রালো শতাব্দের সেই সুর,
‘ আমার তোমাকে একদিন দুইদিনের জন্য না অনন্তকালের জন্য চাই প্রিয়। এতটা চাই, যতটা চাইলে তোমার শরীরের এই মিষ্টি ঘ্রাণে মিশে থাকা যায়!’
লজ্জা পেল প্রিয়। শতাব্দের বুকে মুখ লুকালো। শক্ত করে চোখমুখ বুজে নিলো। ফিসফিসিয়ে মনেমনে বলল,
‘ আমার আপনাকে অতটা চাই, যতটা পেলে আপনি শুধু আমার থাকবেন। শুধুই আমার’
আকাশের চাঁদ তারাগুলো কি এখনো তাদের দিক চেয়ে? নাকি লজ্জায় তারই মত মেঘেদের আড়ালে মুখ লুকালো। প্রিয় পিটপিট দৃষ্টি মেলে আকাশ পানে চাইল। এই চাঁদ, এই রাত শুধুই তাদের। আর তাদের ভালোবাসার।

বর্তমান
>___________< ' ভালোবাসি প্রিয়' আঁতকে উঠল প্রিয়। নিশ্বাসের উঠানামা প্রচন্ড। ভয়ে শরীর কাঁপছে। হাতপা থরথর করছে। ঝিমঝিম করছে সব। মাথাটা চক্কর দিলো। হ্ঠাৎ চোখের সামনে সব অন্ধকার হতে লাগলো। প্রিয়কে ঢলে পড়তে দেখে। অরণ্য তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালো। তাড়াতাড়ি করে প্রিয়কে যেয়ে ধরলো। গাছের নিচে বসিয়ে। একটু সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল, ' তুমি ঠিক আছো?' হাত মুঠিবদ্ধ। চোখ বুজে উপর নিচ আলতো মাথা ঝাকাল প্রিয়। কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তার। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। গা গুলিয়ে আসছে। অরণ্য আবার জিজ্ঞেস করল, ' পানি খাবে? আনবো?' প্রিয় আবারো মাথা ঝাকাল। অরণ্য পাশের দোকান থেকে পানি এনে খুলে হাতে দিলো। পুরোটা পানি শেষ করে খানিক চুপ থেকে প্রিয় বলল, ' আপনি আমার ভাইয়ের বন্ধু... অরণ্য কথার ধাঁচ ধরতে পেরে থামিয়ে দিলো। বলল ' তুমি অসুস্থ। ওসব কথা থাকনা এখন প্রিয়।' ' সবটা এখনি ক্লিয়ার করা প্রয়োজন। আমি চাইনা কোন মিথ্যা আশা পুষে থাকেন আপনি। অরণ্য ভাই ছোট থেকে আপনার আমাদের বাসায় আসা যাওয়া। সবসময় বড় ভাইয়ের চোখে দেখে এসেছি। ভাইয়ের মতই জেনেছি। মনের ভুলেও আপনার সম্পর্কে কখনো এমন ধারণা আসেনি আমার। আর তাছাড়া... এতটুকু বলে থামলো প্রিয়। নিশ্বাস আটকে আটকে আসছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। একটু সময় নিয়ে বলল আবার, ' আর তাছাড়া আমার পক্ষে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না। বিয়ে প্রেম ভালোবাসা আবেগে জড়ানো মত ইচ্ছা আমার নেই। এসব খানিকে অপ্রয়োজনীয় মোহ। মোহ কেটে গেলে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। ঝকঝকে হয়ে যায় চোখ।' প্রিয়'র চোখমুখে বিরক্তির তিক্ত আভা। অরণ্য মনযোগ দিয়ে শুনল। কাতর কন্ঠে আবেদন করল, ' তোমার অতীতে কি ঘটেছে আমি জানি না। জানতে চাইও না। শুধু তোমাকে চাই। একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না প্রিয়?' প্রিয় তড়িঘড়ি উত্তর দিলো, ' না যায়না। এসব প্রেম বিয়ে সংসার করার মত ফালতু সময় আমার নেই। এসব তিক্ত অসহ্য বাজে জিনিস!' হতাশ শ্বাস ফেলল। প্রিয়'র চোখেমুখে স্পষ্ট ভয়। তবুও মেয়েটা তা ছাপানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তিক্ত কথার বুলিতে ভেতরের ভয়টা ঢাকতে চাইছে। অরণ্য বলল, ' শুনলাম প্রভার বয়ফ্রেন্ডের ভাইয়ের জন্য তোমার হাত চাইছে। যদি বিয়েই করো তাহলে আমাকে করতে সমস্যা কোথায়? আগামীকাল তোমার হাত চাইলে বাবাকে তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো।' ক্ষেপে উঠল প্রিয়। ক্ষিপ্ত কন্ঠেই বলল, ' সোজা কথা বুঝতে পারছেনা না আপনি? আমি বিয়ে করবো না। না আপনাকে, না অন্যকাউকে। এসব প্রেম বিয়ে আমার জন্য নয়। আজকের পর আর কোনদিন আমাকে ফোন করবেন না।' বলেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো। বড় বড় ধাপ ফেলে জায়গা ত্যাগ করল। খানিক সামনে এসেই হাঁপিয়ে গেল। বড় গাছ্টার নিচে বসে। বড়বড় শ্বাস ফেলল। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। মাথা ঝিমঝিমানো আরো বাড়ছে। শরীরে শক্তি পাচ্ছেনা কোন। ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ইরার নাম্বারে ফোন করল। দুবার বাজতেই অপর পাশ থেকে ফোন তুলল। বলল, ' হ্যাঁ প্রিয় বল।' ' তুই কোথায়? বাড়িতে?' ' হ্যাঁ বাড়িতেই আছি। কেন? কি হয়েছে? তুই কোথায় বলতো!এভাবে হাঁপাচ্ছিস কেন? ' শরীর খারাপ লাগছে। একা বাড়ি যেতে পাড়বো না বোধহয়। একটু আসবি!' প্রিয়'র করুণ আকুতি। ' তুই কোথায়?' ' তোর বাড়ির পাশে লেকের পাড়ে।' ' আচ্ছা, আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।' পাঁচ মিনিটের ইরা এসে পৌঁছালো। তাড়াতাড়ি রিকশা ডেকে প্রিয়কে তুলল। থরথর কাঁপছে প্রিয়। ঠান্ডা হাত পা। চোখমুখ ফ্যাকাসে। কেমন নেতিয়ে আছে মেয়েটা। আঁতকে জিজ্ঞেস করল ইরা, ' এখানে কি করছিলি? জানিস হুটহাট অসুস্থ হয়ে পড়িস। তবুও একা কেন বের হয়েছিস?' ইরার কাঁধে মাথা হেলিয়ে চোখ বুজে আছে প্রিয়। মিনমিনিয়ে বলল, ' অরণ্য ভাই ডেকেছিল।' ' তোর ভাইয়ের বন্ধু অরণ্য? কেন ডেকেছে?' ' প্রপোজ করতে।' ' তুই কি বললি? সবসময়ের মত 'না'! প্রিয় চুপ। ইরা আর কথা বাড়ালো না। রিকশা প্রিয় বাড়ির সামনে এসে থামলো। ভাড়া মিটিয়ে দুজন উপরে চলে গেল। দরজা খুলে মেয়েকে দেখে আমেনা বেগম হতভম্ব, ঘাবড়ে গেল। তড়িঘড়ি করে ঠাণ্ডা শরবত বানিয়ে আনলো। ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদে উঠল। প্রিয় বিরক্ত হলো বলল, ' মা মাথা ধরছে আমার। এটা এখন অস্বাভাবিক কিছুনা। প্রায়ই হয়। কান্না করোনা তো প্লিজ।' আমেনা বেগম থামলেন না। মুখে শাড়ির আঁচল চেপে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। খানিকক্ষণ প্রিয়'র পাশে বসে রইল ইরা। যাওয়ার আগে ইনভিটেশন কার্ড ধরিয়ে বলল, ' এমনিতেও বিকালে কার্ড নিয়ে তোদের বাড়িতে আসতাম। এখন যখন আসছিলাম তখন ঝটপট ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। আগামী বুধবার আমার বোনের মেয়ে অদ্রিজার জন্মদিন। তোকে কিন্তু অবশ্যই আসতে হবে।' মলিন হাসলো প্রিয়। হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। ধীর আওয়াজে বলল, ' আসবো' মুচকি হেসে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে গেল ইরা। প্রিয় বালিশে গা এলিয়ে আরাম করে বসলো। কার্ডটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। বেবি পিংক আর হোয়াইট কম্বিনেশনে ভীষণ সুন্দর কার্ড। প্রাচুর্য বাড়াতে উপরে সোনালী রঙের আবরনে ডেকেছে। কভার খুলে ভেতরের কার্ডটা বের করল প্রিয়। কার্ডে চোখ বুলাতে বুলাতে হ্ঠাৎ অভ্যর্থনায় চোখ আটকালো। ' Dr. rikta & Dr.khan' গোটা গোটা অক্ষরে লিখা। কার্ডে Dr. না লাগিয়ে শুধু তাদের নাম লিখলেও লোকেদের চিনতে বোধহয় অসুবিধা হতো না। প্রিয়'র হ্ঠাৎ মনে হলো, এই সমাজ ঠুনকো। এই সমাজের মানুষ তাদের অর্জন লোক সমাজে জাহির করতে পছন্দ করে খুব। Dr. khan নামটা দেখে প্রিয়'র রাগ হলো প্রচন্ড। মাথা যন্ত্রণাটা আবারো নাড়া দিয়ে উঠল। ঝাপসা হয়ে এলো চোখ। ডুব দিলো অনেকবছর আগের সেই অতিতে। অতীত >_______< চলবে......... ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।