ফিলোফোবিয়া ( দ্বিতীয় খন্ড )
ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )
২৭.
( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )
‘ বিয়ের মাত্র ছয়দিন বাকি। এসময় ট্যুরে কে যায় আপা?’
প্রভার বিরক্তি ঢালা অভিযোগ সুরে কপাল কুঁচকে তাকালো প্রিয়। চোখমুখ গম্ভীর করে আবার ব্যাগ গোছাতে মনযোগ দিলো। বোনের এমন অনিহা দেখে প্রভা বিরক্ত হলো আরো। উদাস সুরে বলল,
‘ যার সাথে সারাজীবন কাটাবি, অন্তত তার সাথে একবার দেখা কর।’
বড় নিশ্বাস ফেলল প্রিয়। পিছন ফিরে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ ঠিক আছে, দেখা করবো! যদি পছন্দ না হয়? তখন কিন্তু মত ঘুরবে আমার!’
প্রিয়’র রাগী গম্ভীর চোখ। সেই কত তালবাহানা করে রাজি করিয়েছে প্রিয়কে। এখন যদি বিয়ে করবেনা বলে ‘না’ করে দেয়। তখন! প্রিয়’র সাথে সাথে তার বিয়েটাও ভাঙ্গবে। প্রভা ঘাবড়াল। বলল,
‘ আচ্ছা! দেখা না করলি। ফোনে কথা তো বলতে পারিস অন্তত। উনার নাম্বার দিবো আপা?’
‘ প্রয়োজন নেই।’
‘ তোর নাম্বার উনাকে দিবো?’
‘ দরকার নেই।’
নিরাশ হলো প্রভা। হতাশ কন্ঠে বলল,
‘ তুই এমন অস্বাভাবিক কেন আপা! বারবার গিল্টি ফিল হচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে গলায় ছু*রি বিয়ের পিড়িতে বসাচ্ছি তোকে। যা হচ্ছে আর পাঁচটা মানুষের মত স্বাভাবিক ভাবে মেনেনে আপা।’
প্রিয় লাগেজের জিপ আটকে বিছানা থেকে নামিয়ে নিচে রাখলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘন কেশ গুলো কাঠের কাঠিতে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে উত্তর দিলো,
‘ তোর গিল্টি ফিল হবে, এটাই স্বাভাবিক। বিয়েটা আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হচ্ছে। করতে বাধ্য হচ্ছি একপ্রকার! বিয়ের থেকে অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট জিনিস আছে জীবনে। আপাতত আমার ভার্সিটির ট্যুর!’
হতভম্ব কন্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রভা,
‘ ভার্সিটির ট্যুর তোর নিজের বিয়ের থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট?’
প্রিয়’র বেশ স্বাভাবিক চোখমুখ। বলল,
‘ আপাতত তাই-ই! ভার্সিটি লাইফের শেষ ট্যুর। মিস করতে চাইছিনা।’
‘ আর তোর বিয়ের কেনাকাটা?’ কন্ঠে সামান্য ক্রো*ধ ঢেলে জিজ্ঞেস করল প্রভা।
‘ আমার পছন্দ আমার থেকে ভালো জানিস তুই। তাছাড়া হলুদের দিন ভোরে চলে আসবো ঢাকায়।’
ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গল প্রভার। অস্থির কন্ঠে বলল,
‘ তোর মনে হচ্ছেনা তুই বেশি বেশি করছিস আপা? আব্বা জানলে রে*গে যাবে। দুদিন পর থেকে আত্মীয়স্বজন আসতে শুরু করবে। ওই বাড়ির লোকজন তোর কথা জিজ্ঞেস করলে, তাদের কি জবাব দিবো আমরা?’
প্রিয়’র স্বাভাবিক কন্ঠে সরল উত্তর,
‘ বলবি ট্যুরে গেছি।’
ক্লান্তির শ্বাস ফেলল। গভীর দৃষ্টিতে প্রিয়’র কাজকর্ম দেখছে প্রভা। এতটা এলোমেলো কেন মেয়েটা! সত্যি কি অনুভূতিহীন প্রিয়?
বিরক্তির কন্ঠে বলল,
‘ বিয়ে ভাঙ্গার জন্য যেহেতু উঠেপড়ে লেগেছিস। তাহলে রাজি হলি কেন তখন?’
এবার গম্ভীর হলো প্রিয়। চোখমুখে গম্ভীরতা এঁটে বলল,
‘ বিয়েতে রাজি হওয়ার কারণ তুই বেশ ভালো করেই জানিস প্রভা। বারবার একই প্রশ্নের উত্তর দিতে বিরক্ত লাগে আমার।’
প্রিয় কাপড় পাল্টাতে ওয়াশরুমে চলে গেল। প্রভা নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। প্রিয়’র এমন ত্যাড়ামো কথাবার্তা অস্বাভাবিক নয়। বিয়ের জন্য প্রভাই বাধ্য করেছে তাকে। প্রিয়’র রে*গে থাকাটা স্বাভাবিক।
মিনিট পাঁচেক পর ফিরে এলো প্রিয়। প্রভা এতক্ষণে কথা গুছিয়েছে। প্রিয়কে দেখে বেশ হাস্যোজ্জ্বল স্বাভাবিক স্বরে বলল,
‘ ইরা আপুর ভাগ্নির জন্মদিনে উনি ছিল। আরমান বলছিল, তোকে দেখে নাকি ড্যাবড্যাব করে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিল আপা।’
‘ ওহ আচ্ছা! থাকবে হয়তো। সেই অনুষ্ঠানে শহরের অনেক চেনাজানা ডাক্তারা ছিল। ইরার বড়বোন আর তার বর ডাক্তার কিনা।’
প্রিয়’র ব্যস্ত গলার সাদাসিধা উত্তর। আবারো নিরাশ হলো প্রভা। সে চাইছে প্রিয়’র মনে সেই মানুষটাকে নিয়ে আগ্রহ জাগুক। কৌতূহলী হয়ে তাকে ফোন করুক। বিয়ের আগে চেনাপরিচয় হোক। কিন্তু হচ্ছে না! প্রত্যেকবার বেশ স্বাভাবিক ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে।
সুন্দরী হওয়ার সুবাদে কলেজ ভার্সিটি জীবনে কত কত ছেলেরা প্রপোজ করছে প্রিয়কে। অথচ অনুভূতিহীন প্রিয় নিষ্*ঠুর ভাবে রিজেক্ট করেছে সবাইকে। কারো চেহারার দোষ দেখিয়ে! কখনো আবার চরিত্রের দোষ দেখিয়ে। কলেজ ভার্সিটিতে ছেলেদের কাছে ‘অহংকারী, বদমেজাজী’ নামে বেশ পরিচীত সে। একটা আঘা*ত কাউকে এতটা পাল্টে দিতে পারে? প্রিয়কে না দেখলে হয়তো কখনোই প্রভা বুঝতো না।
প্রভা নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে চায়। প্রচন্ডরকম চায়। তাই স্বার্থপরের মত নিজের সুখের জন্য বোনকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু তাই বলে নি*ষ্ঠুর নয় প্রভা। সে চায়, মন থেকে চায় প্রিয় সুখে থাকুক। অতীত ভুলে নতুন করে বাঁচুক। আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বাভাবিক ভাবে থাকুক।
লাগেজ টেনে ড্রইং রুমে চলে এলো প্রিয়। আমেনা বেগম ঘর বাড়ি পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। দুই মেয়ের বিয়ে। কত আত্মীয়স্বজন আসবে। হাতে শত কাজকাম। প্রিয়কে লাগেজ হাতে দেখে আমেনা বেগম ভড়কে উঠল। হতভম্ব কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ কোথায় যাচ্ছিস প্রিয়?’
‘ কক্সবাজার। ট্যুরে যাচ্ছি মা।’
প্রিয়’র বেশ স্বাভাবিক উত্তর। আমেনা বেগম বিমূঢ় হয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘ ট্যুর মানে? বিয়ের মাত্র ছয়দিন বাকি। এখন ট্যুরে যাওয়ার সময়! তোর শ্বশুরবাড়ির লোকদের কি বলবো?’
‘সত্যিটা বলবে।’
মেয়ের উত্তরে বিরক্ত হলো আমেনা বেগম। কন্ঠে ক্রো*ধ ঢেলে বলল,
‘ বিয়ে কি কোন ছেলেখেলা! এমন দায়িত্বহীন কবে থেকে হলি প্রিয়?’
‘ ভার্সিটি জীবনের শেষ ট্যুর। বাঁধা দিও না। হলুদের দিন ভোরে চলে আসবো।’
‘ তোর আব্বাকে কি জবাব দিবো?’
‘ কোন একটা বাহানা দিয়ে কাটিয়ে দিও তো মা।’ প্রিয়’র খাপছাড়া আওয়াজ।
‘ এভাবে জীবন চলে না প্রিয়। পালিয়ে বেড়ালে হবেনা। বিয়ে তোকে করতেই হবে।’
সিরিয়াস হলো প্রিয়। জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল,
‘ বিয়ে করতে মানা করলাম কখন? বিয়ে তো আমি করবো। কিন্তু তার আগে যেসব ফর্মালিটি ঝামেলা আছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকতে চাইছি আপাতত। তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে বিদায় করে চাইছ তো! তোমাদের ইচ্ছা পূর্ণ করবো। হলুদের দিন ভোরে চলে আসবো।’
মেয়ের কন্ঠে জোড়ালো অভিমান। আমেনা বেগম কারণ জানে তার। কি করে মেয়েটাকে বোঝাবে? জীবন যুদ্ধে একা চলা যায়না এতটা পথ। তার জীবন আর সবার মত স্বাভাবিক নয়। পদেপদে বিপ*দের সম্মখীন হয়। যাকে পছন্দ করেছে প্রিয় জন্য যোগ্য পাত্র। বিয়ে দিয়ে তার হাতে তুলে দিতে পারলেই নিশ্চিন্ত হয়।
উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে জিগ্যেস করল প্রিয়,
‘ আব্বা কই মা?’
‘ কোথায় আবার! বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেছে।’
‘ ওইযে আব্বার মেডিকেল জুনিয়র যে?’
‘ হ্যাঁ’
‘ আমি বুঝিনা জুনিয়রদের সাথে এত কিসের বন্ধুত্ব।আব্বার বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র জুনিয়র সবার সাথে আমরা পরিচীত। শুধু এই মানুষকে লুকিয়েই রাখে। কেন? এতবছর ধরে তার সাথে সম্পর্ক। অথচ ছেলে নাকি মেয়ে আব্বা তা বলতে নারাজ!
সকাল সকাল তার সাথে দেখা করতে চলে গেছে। ব্রেকফাস্ট ডেট? এটা কেমন কথা মা। বিষয়টা তুমি ঘেঁটে দেখো তো একটু! নয়তো আমি খোঁজ লাগিয়ে দেখবো।’
প্রভা বোনের দিক চোখ পাকিয়ে তাকালো। পাশ ঘেঁষে ফিসফিস করে বলল,
‘ কথা ঘোরানোর জন্য তুই যাতা বলবি আপা? এখন আকাশকুসুম গভীর চিন্তায় ডুবে যাবে মা।’
প্রভার কথার তোয়াক্কা করল না প্রিয়। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
‘ তোর কি মনে হয় আব্বার জুনিয়র বন্ধুকে চিনে না মা? অবশ্যই চিনে। নয়তো এত নিশ্চিন্তে থাকত না। নাজেহাল করে ছাড়তো আব্বার!’
প্রভা জ্ঞানীদের মত মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
‘ তুই কি করে বুঝলি? আর এই কথা এখন উঠালি কেন?’
‘ প্রথমত মাকে তোর থেকে আমি বেশি চিনি। সেই মানুষটা যেই হোক মা তাকে চিনে। কোনো কারণ বসতো শুধু আমাদের থেকে লুকাতে চাইছে। মা আরো আধঘন্টা জেরা করবে। বাস ছাড়ার সময় হয়ে এসেছে। বাড়ি থেকে বের হবার জন্য আমার মাকে ডিস্ট্রাকড করার প্রয়োজন ছিল। তাই এই প্রসঙ্গ তুলে ভাবমায় রেখে ঝামেলা মুক্ত হয়ে বেরিয়ে যাবো এখন।’
বলেই লাগেজ তুলে সিঁড়ির দিক হাঁটা দিলো প্রিয়। বোনের কথাবার্তা, কর্মকান্ডে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল প্রভা। মনে মনে বলল,
‘ বিয়ের আগে আপা বাড়িতে ফিরে আসবে তো?’
তড়িঘড়ি করে মোবাইল বের করে কাউকে ফোন করল প্রভা।
সময় বড্ড অদ্ভুত। পৃথিবীর সকল আবর্তন পরিবর্তনের কারণ। কখনো জখম দিয়ে কখনো আবার ঔষধ হয়ে দাঁড়ায়। ভোরের আকাশে কালো মেঘ দেখা গেলেও, এখন আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার। আকাশ জুড়ে সূরের আলোছায়ার নিদারুণ খেল।
মাত্রই গাড়ি ছেড়েছে। জানালার পাশে বসেছে প্রিয়। দমকা হাওয়ার দুলছে অবাধ্য কেশ। আচমকা মোবাইল বেজে উঠল। ফোন করেছে প্রভা। বিরক্ত হলো প্রিয়। মাত্রই তো বাড়িতে দেখা হলো। আবার কেন ফোন করলো?
কপাল কুঁচকে ফোন তুলে কানে ধরল। অপর পাশ থেকে প্রভার ব্যস্ত আওয়াজ,
‘ হ্যালো আপা, শুনছিস?’
কন্ঠে বিতৃষ্ণা জুড়ে উত্তর দিলো প্রিয়,
‘ হ্যাঁ বল, শুনছি।’
‘ তোর নাম্বারটা ভাইয়াকে পাঠিয়েছি। ফোন করতে পারে তোকে। গ্রামীণ নাম্বার লাস্টে 630..’
আরকিছু না শুনে চট করে ফোনটা কেটে দিলো। রা*গে গা জ্বলছে তার। নাম্বার দিতে নিষেধ করেছিল প্রভাকে। তবুও কেন দিলো সে। আবারো ফোন এলো। কেটে দিলো প্রিয়। আবার ফোন বাজতেই মোবাইল সুইচ অফ করে ব্যাগে রেখে দিলো।
সারাদিন জার্নি করে ভোর চারটায় এসে কক্সবাজার পৌঁছেছে। ফাইনাল ইয়ারের লাস্ট ট্যুর হওয়ায়। ম্যানেজমেন্টের লোকজন বেশ ভালো আয়োজন করেছে। বেশ নামিদামি হোটেলে রুম বুক করেছে। ডাবল বেডের রুম। প্রতিরুমে চারজন করে। সকাল আটটা বাজতে না বাজতেই সবাই রুম খালি করে বিচের পাড়ে বেরিয়েছে। শুধু প্রিয়’ই রুমে। যাওয়ার সময় ইরা ডেকে গেছে একবার। উত্তরে, নাকেমুখে আরো শক্ত করে চাদর টেনে শুয়ে ছিল প্রিয়। তার ভাষ্যমতে, আগে ঘুম তারপর দুনিয়ার অন্যকিছু। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে বিড়বিড় করে ইরা বেরিয়ে গেছে।
গভীর ঘুমে তলিয়ে প্রিয়। আচমকা দরজায় কড়া পড়লো। প্রথমে নড়েচড়ে শুয়ে পড়লেও। পরবর্তীতে ভারী আওয়াজে প্রিয়’র ঘুম ভাঙ্গল। বিরক্ত হয়ে চোখ ঢলতে ঢলতে বিছানা ছেড়ে উঠল। মাথাটা টিসটিস করে ব্যাথা করছে এখনো। দরজা খুলতেই কপাল কুঁচকে নিলো। বাহিরে কেউ নেই। দরজার কাছে বড়সড় গোলাপ ফুলের বুকে। মাথা বের করে আশেপাশে তাকালো। কেউ নেই।
ঝুঁকে ফুলের বুকেটা হাতে তুলে নিলো। ভিতরে একটা চিরকুট লাগানো। চিরকুটের ভাঁজ খুলে হতভম্ব প্রিয়,
‘ গুড মর্নিং প্রাণপ্রিয়! ঘুমকন্যা ঘুম ভেঙ্গেছে আপনার? কি ভেবেছ শহর ছাড়লেই রেহাই হবে। উহু, আমি যে ছায়ার মত সর্বদাই আশেপাশে আছি তোমার।
ফাইভ ডে’স টু গো! টিক..টক..টিক…টক…’
চিরকুট দেখে রাগে কিড়মিড়িয়ে উঠল প্রিয়। রুম থেকে ওড়না এনে গলায় প্যাঁচিয়ে। স্লিপার পরেই হাঁটা ধরল। রিসেপশনে বসে থাকা মেয়েটার সামনে ফুলের বুকেটা আঁচড়ে ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করল,
‘ এই বুকেটা আমার রুমের সামনে কে রেখেছে জানতে পারি?’
মেয়েটা ভদ্র স্বরে উত্তরে বলল,
‘ না ম্যাম। আমাদের হোটেলে এমন সার্ভিস নেই।’
আশাহত হলো প্রিয়। এতবছর যাবত এই অজানা মানুষটার জ্বা*লাতনে অতিষ্ঠ সে। ভেবেছিল রিসেপশন থেকে তথ্য জোগাড় করে ব্যাটাকে হাতে নাতে ধরবে এইবার। কিন্তু মানুষটা মনে হচ্ছে গভীর জলের মাছ। প্রিয়ও কম কিসে?
ব্যস্ত কন্ঠে বলল আবার,
‘ রুম নাম্বার ২০২ এর সামনের সিসি ক্যামেরা’র ফুটেজ দেখা যাবে কি?’
‘ নো ম্যাম।’
‘ আমি শুধু ফুটেজটা দেখবো একবার।’
‘ সরি ম্যাম। এটা আমাদের হোটেলের রুলসের এগেইনস্ট।’
বিরক্ত হলো প্রিয়। চেঁচিয়ে বলল,
‘ বললাম তো শুধু একবার দেখবো।’
‘ সরি ম্যাম।’
মেয়েটার সাথে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে গেল প্রিয়। সমুদ্রপাড় ঘুরে মাত্রই রুমে ফিরছিল ইরা। রিসিপশনে প্রিয়’র চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দৌড়ে এলো। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই প্রিয়’র হাতে ফুলের তোড়া দেখে সবটা বুঝে গেল। কিটকিটে হেসে ফেলল। বলল,
‘ আবার? নিশ্চয়ই গোলাপ ফুলের বাগান আছে লোকটার। তাইতো গোলাপ ফুলের বুকে পাঠায় সবসময়। এতদিন ভাবতাম মানুষটা বাহিরের। এখন মনে হচ্ছে ভার্সিটিরই কেউ। নয়তো পিছুপিছু কেউ কক্সবাজার অবধি আসে? ভাগ্য করে একটা প্রেমিক পেয়েছিস বটে!’
ইরার মজার ছলে কথাবার্তায় বিরক্ত হলো প্রিয়। ফুলের বুকেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে বলল,
‘ সে যেই হোক না কেন। কয়দিন পর যখন জানবে বিয়ে হয়ে গেছে আমার। এমনি এমনি মাথা থেকে প্রেমের ভূত নেমে যাবে তার।’
বলেই হনহন করে রুমে চলে গেল প্রিয়। পেছন পেছন ইরাও গেল।
রিসেপশনের পাশে ভিআইপি লাউঞ্জ। যাকে নিয়ে পেছনে ছোটখাট যুদ্ধ চলল। সেই মানুষটা বেশ আয়েশ করে চা খাচ্ছে। প্রিয়’র চেঁচামেচি উপভোগ করছে। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেশ। চায়ের কাপে চুমুক দিতেই ওয়েটার এসে জিজ্ঞেস করল,
‘ আর কিছু লাগবে স্যার?’
‘ মিষ্টি।’
ওয়েটার ভ্রু কুঁচকাল। বুঝলো না। বলল,
‘ সরি স্যার?’
‘ চিনি।চায়ে চিনি কম।’
ওয়েটার চলে গেল। ফোন বের করে প্রিয় নাম্বারে ফোন করলো আবার। এখনো ‘সুইচ অফ’। মানুষটা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো।উদাস কন্ঠে বলল,
‘ যতই দুরত্ব বাড়াও না কেন? তুমি শুধু আমারি থাকবে প্রিয়!’
চলবে……..
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ফিলোফোবিয়া
ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )
২৮.
( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )
আজ গায়ে হলুদ। ভোর পাঁচটায় বাড়ি ফিরেছে প্রিয়। আত্মীয় স্বজনে গিজগিজ করছে বাড়ি। চারিদিকে চাপা গুঞ্জন। বিয়েতে মেয়ের মত আছে কি? আমেনা বেগম সকাল থেকে মেয়ের সাফাই গাইতে ব্যস্ত।
গ্রাম থেকে জাফর সাহেবের ভাইবোনদের পুরো পরিবার এসেছে। আশেপাশের বন্ধুবান্ধব পাড়াপ্রতিবেশি সবাই আমন্ত্রীত। মেয়েদের বিয়েতে ঘটা করে আয়োজন করছেন। বরের বাড়িতে তেমন কোন আয়োজন নেই এখন। ছেলের বাবা মা সহ দশ পনের জন আত্মীয় এসে বিয়ে করিয়ে নিয়ে যাবেন। পরে আস্তেধীরে অনুষ্ঠান করবে।
বেলা দশটায় ঘুম ভাঙ্গল প্রিয়’র। চেয়ারে এক পা তুলে বেশ আয়েশ করে রুটি ছিঁড়ে খাচ্ছিলো। হ্ঠাৎ-ই সামনে এসে দাঁড়াল প্রভা। কোমরের দুপাশে হাত রেখে বলল,
‘ এখন খাচ্ছিস? ওইদিকে মেক-আপ আর্টিস্ট এসে অপেক্ষা করছে। দশটায় এপয়েন্টমেন্ট ছিল আমাদের।’
প্রিয়’র বেশ স্বাভাবিক খাপছাড়া আওয়াজ,
‘ ওহ আচ্ছা। জানতাম না তো আমি!’
বিরক্ত হলো প্রভা। ক্লান্ত কন্ঠে বলল,
‘ নাম্বার বন্ধ থাকলে কি করে জানাবো? দেখ আপা, এমনিতেই বাড়িতে তোর ট্যুরে যাওয়া নিয়ে চাপা গুঞ্জন চলছে। মা সকাল থেকে সেইসব সামলাচ্ছে। এখন নতুন কোন সিনক্রিয়েট করিস না প্লিজ!’
প্রভা খানিকক্ষণ উত্তরের অপেক্ষা করল। প্রিয়’র কোনোরূপ হেলদোল না দেখে ক্ষি*প্ত পায়ে চলে গেল।
রাত তিনটা পর্যন্ত বাড়ির ছাদে হলুদের অনুষ্ঠান হলো। পুরোটা সময় প্রিয় মূর্তির মত বসেছিল। আশেপাশে যা ঘটছে কোনকিছুতে কোন প্রকার হেলদোল নেই তার। সবকিছু অসহ্য লাগলেও বাবা মায়ের মুখের দিক তাকিয়ে চুপচাপ মেনে নিচ্ছে। মেক-আপ উঠিয়ে ফ্রেশ হয়ে যেই বিছানায় ঘুমাতে যাবে অমনি কলিং বেল বাজলো। সবাই মাত্রই যার যার ঘরে বিশ্রাম নিতে গেছে। এমন সময় কে এলো? বিরক্ত হলো প্রিয়। ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। দরজা খুলতেই হতভম্ব। দারোয়ান চাচা এসেছে। বড়সড় একটা লাল গোলাপের বুকে হাতে। বিহ্বল প্রিয়। বুকের মাঝে ছোট একটা চিরকুট। ভাঁজ ভাঙ্গতেই দেখল,
‘ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটার জন্য একগুচ্ছ গোলাপ’
প্রচন্ড রাগ হলো প্রিয়’র।বিমূঢ় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ কে পাঠিয়েছে চাচা?’
‘ একটা ছেলে। গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিচে।’
‘ এখনো আছে?’
‘ হ আম্মা।’
দ্রুত পা চালিয়ে কয়েক সিড়ি নিচে নামল প্রিয়। আচমকা কিছু একটা ভেবে থেমে গেল। দারোয়ান চাচা জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হইলো থাইমা গেলা কেন! যাইবা না ?’
‘ না চাচা। তাকে দেখার ইচ্ছা নাই আমার।’
গম্ভীর কন্ঠে আওড়াল প্রিয়। পিছন ঘুরে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠল। ভিতরে ঢুকার আগে ফুলের বুকেটা ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। ঘরে এসে জানালার পাশে দাঁড়াল। দূর রাস্তা একটা গাড়ি দাঁড়ানো। অন্ধকারে একজন পুরুষালি আভা। এদিকটাই তাকিয়ে আছে যেন লোকটা।
কোনার ঘরটায় বউ সাজচ্ছে। সেদিকে যাওয়া নিষেধ। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পা নাচাচ্ছে প্রভা। চোখমুখ জুড়ে চাপা উত্তেজনা। এই দিনটারই তো অপেক্ষা ছিল তার। অবশেষে তার স্বপ্ন পূর্নতা পাচ্ছে। অনেক যুদ্ধের পর ভালোবাসার মানুষটার হতে যাচ্ছে। একদম টিপটপ পার্ফেক্ট দেখতে লাগে যেন তাকে। মেক-আপ আর্টিস্টদের এটা কম, ওইটা বেশি হয়েছে বলে বেশ বিরক্ত করছে। আচমকা প্রিয়’র দিক চোখ যেতেই চেঁচিয়ে উঠল প্রভা। বাজখাঁই আওয়াজে বলল,
‘ বিয়েতে এমন লাইট মেক-আপ কে করে আপা? তুই কি গেস্ট? তুই হচ্ছে বউ। সবার আকর্ষণ থাকবে তোকে ঘিরে। তুই করবি গ্ল্যামারাস হ্যাভি মেক-আপ।’
মেক-আপ আর্টিস্ট মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল প্রভা,
‘ ভেস মেক-আপটা আরেকটু হ্যাভি করেন তো আপু।’
প্রিয় বাঁধা দিলো। গম্ভীর মুখ করে বলল,
‘ কেন লাইট মেক-আপ করলে কি তোর ভাসুর আমাকে বিয়ে করবে না? তোর সার্কাস সাজার ইচ্ছা, তুই সাজ। আমাকে প্যাচাবি না একদম।’
প্রভা চুপসে গেল। মুখ ফুলিয়ে চুপচাপ বসে রইল।
ভারী লেহেঙ্গা পড়ে মুখ ভার করে স্টেজে বসে আছে প্রিয়। চোখমুখে গম্ভীর অন্ধকার। দুইরাত ধরে ঘুম হচ্ছেনা। মাথাটা প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে এখনো। অন্যদিকে প্রভা বেশ হাসিখুশি প্রাণবন্ত। বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলতে ব্যস্ত। দাওয়াতের লোকজন কমেছে। বরযাত্রা চলে আসবে। একটু আগে জাফর সাহেব ফোন করেছে। বলেছে, রাস্তায় আছে।দশ মিনিট লাগবে পৌঁছাতে। জানুয়ারির শুরু। শীতের দাপট এখনো প্রচন্ড। এই শীতেও ঘামছে জাফর সাহেব। কাজের ফাঁকে বারবার প্রিয়’র দিক চাইছে। খানিক বাদে যা ঘটতে পারে তা আশংকা করেই ভয়ে কেঁপে উঠছে। ইতোমধ্যে অনেকই তা লক্ষ করেছে। বেশ কয়েকজন জিজ্ঞেসা ও করেছে। বিয়ে বাড়ির ঝামেলার সামান্য ছুতো দিয়ে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
বাহির থেকে গাড়ির আওয়াজ ভেসে আসছে। ‘বর এসেছে, বর এসেছে’ বলে বাচ্চারা হুরাহুরি করছে। বরের বাড়ির লোকেদের স্বাগতম করতে এগিয়ে গেলেন জাফর সাহেব।
বর এসেছে। বাহিরে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন চলছে। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে প্রিয় প্রভাকে স্টেজে নেওয়ার হবে। চাপা উত্তেজনা নিয়ে বসে আছে প্রভা। উশখুশ করছে মন। আরমানকে দেখতে কেমন লাগছে? রাজপুত্রের মত কি! স্টেজের দিক উঁকিঝুঁকি করছে বারবার। প্রভার এমন কান্ড দেখে বিরক্ত হলো প্রিয়। খানিক চেঁচিয়ে বলল,
‘ লাজলজ্জা আছে? নাকি বেচে দিয়েছিস সব! কেউ দেখলে কি বলবে প্রভা।’
প্রভার খাপছাড়া আওয়াজ,
‘ যা বলার বলবে। তাতে কি! অনেক যুদ্ধ করে তাকে পেতে যাচ্ছি। রূপকথা মনে হচ্ছে সব। আচ্ছা আপা, রূপকথার ভালোবাসাও কি এমন সুন্দর হয়?’
উদাস হাসলো প্রিয়। মলিন কন্ঠে বলল,
‘ উহু, বড্ড বা*জে জ*ঘন্য হয়। ভালোবাসা অনুভূতিটাই জ*ঘন্য ইলোজিকাল ব্যাপার স্যাপার।’
প্রভার হাসিহাসি মুখটা চুপসে গেল। প্রিয়’র কাছে এমন প্রশ্ন করা, একদম উচিত হয়নি তার। প্রবল উত্তেজনার তাড়নায় কিভাবে জানো করে ফেলল হ্ঠাৎ!
কাজি এসেছে। বউদের স্টেজে ডাকছে। বিয়ে পড়ানো হবে এখন। তিন চারজন মেয়ে এসে নিয়ে গেল তাদের। লজ্জায় গদগদ করছে প্রভা। অন্যদিকে প্রিয়’র চোখমুখ অন্ধকার এখনো। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। জোড়ালো ভয় চেপেছে মনে। ধুকপুক করছে বুক।
প্রথমে স্টেজে বসানো হলো প্রভাকে। দুইজন জন মেয়ে এসে নিয়ে গেল প্রিয়কে। কারো পাশে বসানো হলো তাকে। তখনো প্রিয়’র চোখজোড়া ঝুঁকে আছে অস্বস্তিতে। হাত জোড়া উশখুশ করছে।
‘ কি হয়েছে? খারাপ লাগছে!’
আচমকা কানের কাছে অতিপরিচিত ফিসফিস আওয়াজ বাজলো। ভড়কে উঠল প্রিয়। বিস্ফোরিত দৃষ্টি তুলে পাশের মানুষটার দিক তাকালো। মুহূর্তেই হাতপা কাঁপতে শুরু করল। এতবছর পর এই লোকটা আবার! কেন!
ফাঁকা ফাঁকা লাগছে মাথা। কিছু ভাবতে পারছে না। বুঝতে পারছেনা। কি করবে? কি হচ্ছে! ঝাপসা হয়ে আসছে চোখ। প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে মাথা। বুজে আসছে চোখ। আচমকাই নেতিয়ে পড়ল প্রিয়। পাশের মানুষটার উপর ঢুলে পড়ল।
ঘর জুড়ে চাপা গুঞ্জন। কানাঘুষা করছে আশেপাশের লোকজন।সোফায় শুয়িয়ে রেখেছে প্রিয়কে। পাশে বসেই বাতাস করছে আমেনা বেগম। চোখেমুখে চিন্তা ভয়ের ছাপ। মেয়েটার কিছু হলো না তো আবার?
প্রিয়’র পায়ের কাছে বসে পায়ের পাতা মালিশ করে দিচ্ছে প্রভা। দূরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র। চিন্তায় মুখে হাত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। শেষ অবধি তাদের বিয়েটা হবে তো?
বিয়ের পাগড়িটা নিচে পড়ে।অস্থির ক্ষি*প্ত পায়ে ঘর জুড়ে পায়চারি করছে শতাব্দ। ভীষণ এলোমেলো লাগছে। ভিতরে ভিতরে প্রচন্ডরকম নার্ভাসনেস কাজ করছে। চিন্তা, ভয়ে প্রিয়’র পাশে এসে দাঁড়াতে পারছেনা সে। না তাকে ছোঁয়ার সাহস করতে পারছে। আনন প্রিয়’র চেকআপ করে উঠে দাঁড়াতেই। ছুটে এলো এলো শতাব্দ। অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
‘ কি হয়েছে? সবঠিক?’
শতাব্দের কাঁধে হাত রেখে শান্ত করার চেষ্টা করল আনন।?
‘ শান্ত হ, তুই একজন ডাক্তার। অল্পতেই এভাবে অস্থির হলে চলবে না’
আননের সান্ত্বনা সূচক কথাবার্তা শোনার মত মানসিকতা নেই এখন। অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করল আবার,
‘ ঠিক আছে প্রিয়?’
‘ তেমন কিছু না। প্রেসার লো। ঘুম খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম হচ্ছে হয়তো। একটু পরই জ্ঞান ফিরবে।’
জাফর সাহেব শক্ত পাথর বনে দাঁড়িয়ে। এই ভয়টাই পাচ্ছিলো এতক্ষণ। জ্ঞান ফিরলে রিয়েকশন কি হবে প্রিয়’র! মাথা কাজ করছেনা তার।
ঘন্টা খানেক বাদে প্রিয়’র জ্ঞান ফিরল। লোকজন চলে গেছে ততক্ষণে। পিটপিট চোখজোড়া মেলে আশেপাশে তাকালো প্রিয়। তাকে ঘিরে চেয়ারম্যান বাড়ির লোকজন। প্রথমে কিছু না বুঝতে পারলেও। আস্তে আস্তে সব স্পষ্ট হলো। চট করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো। চারদিকে চোখ বুলালো। আ*তঙ্কিত চোখমুখ। সমুদ্রের সাথে প্রভার বিয়ে? কি করে সম্ভব এসব।
দরজার কাছে শতাব্দকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘৃ*ণায় দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো প্রিয়। ঘৃ*না রাগে শরীর কাঁপছে থরথর। ভারী-ভারী নিশ্বাস ফেলছে। নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল সে। মাথার ওড়নাটা টেনে খুলে নিচে ছুঁড়ে ফেলল। বাবার দিক মাথা তুলে তাকালো। র*ক্তিম চোখ। সারা মুখ অশ্রুতে ভিজে। ভীষণ অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে তাকে। ঘৃ*ণা মিশ্রিত কাঁপাকাঁপি কন্ঠে বলল,
‘ এই বিয়ে আমি করবোনা। এই লোকটাকে এখান থেকে চলে যেতে বলো আব্বা।’
চলবে……….
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।