ফিলোফোবিয়া পর্ব-২৯+৩০

0
517

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

২৯.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

ঘর এখন মোটামুটি খালি। ভীড় কমেছে অনেকক্ষণ। বাহিরে অপেক্ষা করছে সবাই। সোফায় হাত ভড় দিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছে অগোছালো এলোমেলো প্রিয়। চোখজোড়া অশ্রুভারাক্রান্ত। পানি ঝরছে টপটপ।
প্রিয়’র সামনে ফ্লোরে পা জড়িয়ে বসে আছে প্রভা। অশ্রুতে ভিজে আছে তার চোখ। মুখশ্রী জুড়ে আ*তঙ্ক ভয়। পিছন ফিরে একবার চাইলো। দরজার সামনে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে জাফর সাহেব।
প্রভা আরো কাছ ঘেষলো। কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই গম্ভীর কন্ঠে বলল প্রিয়,
‘ আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। প্লিজ জোর করবিনা প্রভা! প্লিজ…’
হতাশ হলো প্রভা। অশ্রুভারাক্রান্ত পিটপিট চাহনি। উদাস সুরে বলল,
‘ আপা! আমার কথাটা একবার শুন। আপা..’
কান্না চেপে রাখার যথাসম্ভব চেষ্টা করছে প্রিয়। কাঁপাকাঁপি কন্ঠে বলল,
‘ তোর কোন কথা আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পারবেনা প্রভা।’
বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো প্রিয়। প্রভা শান্ত করার চেষ্টা করল। বলল,
‘ শান্ত হ আপা। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর। বরযাত্রী ফেরত গেলে সবার সামনে কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবে আব্বা? তোর হাতে সব। প্লিজ…
‘ আমি পারবো না প্রভা! পারবো না। ওই লোকটার সাথে এক ছাদের তলায় থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব।’
অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো প্রভা। পেটে হাত রেখে ফিসফিস সুরে বলল,
‘ ওর কথা একবার ভাব। আজ বিয়েটা না হলে, এলোমেলো হয়ে যাবে সব।’
মাথা তুলে অনুভূতিহীন ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রিয়। ধীর আওয়াজে বলল,
‘ সরি। পারবো না আমি।’
অনেক আকুতি মিনতি করল। মানলো না প্রিয়। আশাহত হলো প্রভা। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।

প্রাণহীন পাথর হয়ে বসে আছে প্রিয়। জাফর সাহেব মেয়ের পাশে বসলেই। মেয়ের মাথায় হাত রেখতেই, গম্ভীর গর্জন করে উঠল প্রিয়। বলল,
‘ সব জেনে শুনে তুমি কি করে এই কাজটা করতে পারলে আব্বা?’
জাফর সাহেব বিমূঢ়! তপ্ত অনুতপ্ত। কাঁপাকাঁপা হাতে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কান্না আটকে রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা তার। ধীর আওয়াজে বললেন,
‘ আমার সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে আদরের তুই। কোনদিন তোর কাছে কোনকিছু চাইনি। আজ একটা জিনিস চাইবো। দিবি মা?’
প্রিয় বাবার দিক মাথা তুলে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকালো। মেয়ের চাহনি উপেক্ষা করে জাফর সাহেব বললেন,
‘ শতাব্দকে বিয়েটা করে নে মা।’
হতভম্ব প্রিয়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা। বিমূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শুধু। চোখজোড়া থেকে অশ্রু ঝরছে টপটপ। বুক ফেটে চিৎকার আসছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।হাউমাউ করে কাঁদতে চাইছে। পারছেনা। ফুপিয়ে উঠলো প্রিয়। অশ্রুভারাক্রান্ত শক্ত চোখে তাকিয়ে রইল।
জাফর সাহেব আবারো বললেন,
‘ আমি ওয়াদাবদ্ধ। বিয়েটা করে নে মা।’
‘ মেয়ের জীবন থেকে কারো কাছে করা ওয়াদা তোমার কাছে বড় হয়ে গেল আব্বা?’
হতভম্ব কন্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রিয়। দৃষ্টি নুয়ে নিলো জাফর সাহেব। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
‘ মেয়ের জীবনের মূল্য বেশি বলেই ওয়াদাবদ্ধ। বাবার এই আবদারটা রাখবি মা?’
স্তব্ধ হয়ে বসে রইল প্রিয়। নিস্তব্ধতায় ডুবে আছে চারিপাশ। মাথা ভনভন করে ঘুরছে। আরো কিছুক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে রইল ঠাই। নীরবতা ভেঙ্গে বলল,
‘ ঠিক আছে। বিয়েটা আমি করবো। তোমার পিতৃঋণ চুকিয়ে দিবো। এরপর তোমাদের সাথে আর কোনরকম সম্পর্ক থাকবেনা আমার।’
মেয়ের অভিমানী মুখখানায় নিমিষ চেয়ে রইলেন জাফর সাহেব।

দরজার বাহিরে পায়চারি করছে শতাব্দ। ভিতরে কি কথা হচ্ছে জানতে হবে তাকে! বিয়ের জন্য রাজি হবে তো প্রিয়? নাহ! এভাবে হাতে হাত রেখে বসে থাকতে পারছেনা আর।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো শতাব্দ। জাফর সাহেব শব্দ পেয়ে আলগোছে বেরিয়ে এলো।
দরজা ভিড়িয়ে আলতো পায়ে এগিয়ে গেল শতাব্দ। সোফায় ভড় দিয়ে শক্ত হয়ে বসে আছে প্রিয়। হাঁটু ভাঁজ করে প্রিয়’র সামনে গিয়ে বসলো শতাব্দ। কাঁপাকাঁপা হাতে প্রিয়’র হাত জোড়া জড়িয়ে ধরতে গিয়েও ধরল না। থেমে গেল। ভয় হচ্ছে। প্রচন্ড! জীবনের প্রথমবার এমন ভয় করছে তার। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার। কথা গোছানোর চেষ্টা করছে! হচ্ছেনা। এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব। শতাব্দ থামলো। স্ট্রেস কমানোর জন্য ডিপ ব্রিথিং নিলো। নিজেকে শান্ত করে বলল,
‘ আমি তোমার অপ*রাধী প্রিয়। আমার উপর রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। যত ইচ্ছা রাগ ঝাড়ো। কিন্তু আমাকে ঘৃ*ণা করোনা প্লিজ।’
সাড়াশব্দ নেই কোন। আগের মত মুখ গম্ভীর করে বসে আছে প্রিয়। জলে চিকচিক করছে চোখজোড়া। তীক্ষ্ণ ধা*রালো কিছুর আঘা*ত লাগলো শতাব্দের বুকে। কোথা থেকে জানো অজানা এক সাহস এলো মনে। প্রিয়’র হাত জোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। অস্থির কন্ঠে বলল,
‘ তোমার শক্ত অভিমান করাটা স্বাভাবিক। দৃষ্টির আড়ালেও অনেক কিছু থাকে প্রিয়।তোমাকে সেদিন ফিরিয়ে দেওয়ার পেছনে কারণ ছিল বড়। আমি চাইনি তুমি…’
শতাব্দের হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলল প্রিয়। ঘৃ*ণা মিশ্রিত রক্তিম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাজখাঁই গলায় বলল,
‘ কারণ যত বড়ই হোক না কেন। এখন তার কোন মূল্য নেই। যেই মানুষটাকে আমার বিপদে পাইনি। সেই মানুষটা কখনোই আমার না। আগের সেই প্রিয় নই আমি। এখন আমি আর অভিমান পুষি না। ঘৃ*ণা করতে জানি।’
প্রিয়’র শক্ত কঠিন কথা গুলো শতাব্দকে নাড়িয়ে দিলো। স্থির, বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইল প্রিয়’র মুখপানে। আসলেই, এই কয়েক বছরে সময়ের সাথে সাথে তার প্রিয়ও বদলে গেছে। পুরোটাই!

বিয়ে পড়ানো হলো। পুরোটা সময় চোখমুখ গম্ভীর করে বসে রইল প্রিয়। বিদায়ের সময় বাবা মাকে জড়িয়ে প্রচন্ড কাঁদলো প্রভা। প্রিয় একটুও কাঁদল না। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে গাড়িতে উঠল। শক্ত মুখ করে বসে রইল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল,
‘ জীবনে যত কান্নার কেঁদেছে। আর কোনদিন কাঁদবেনা। কিছু মানুষকে তাদের প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়ার পালা এখন।’
শতাব্দ পাশে বসলো। গাড়ি স্টার্ড হলো। গলি থেকে বেরিয়ে গাড়ি হাইওয়ে’তে উঠল। অন্ধকারে তলিয়ে চারিপাশ। আজ কি তবে আমাবস্যা রাত! বাহিরের কৃত্রিম আলো। চলন্ত গাড়িতে পড়ছে তার আবছা আভা। ঘাড় ফিরিয়ে পাশে তাকালো শতাব্দ। মুখশ্রী শক্ত, গম্ভীর করে বসে রেখেছে প্রিয়। জানালার কাচ খোলা। সুড়সুড় করে আসা বাতাস লাগছে নাকেমুখে। প্রিয়’র দিক ঝুকতেই শক্ত গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ বিয়ে হয়েছে বলেই যে আমাকে পেয়ে যাবে! এমন না। আমাকে কোনদিন পাবেন না আপনি।’
ঠোঁট মেলে হাসলো শতাব্দ। বলল,
‘ পেতে হবেনা। তুমি আমার চোখের সামনে থাকবে এতটুকুই যথেষ্ট।’
জানালার কাচ বন্ধ করে দিয়ে দূরে সরে বসলো শতাব্দ। গাড়ি এসে শতাব্দের এপার্টমেন্টের সামনে থামলো। জায়গাটা চিনতে খুব একটা অসুবিধা হলোনা প্রিয়’র। বুক ধক করে উঠল। চোখমুখ শক্ত করে গাড়ি থেকে নামলো প্রিয়। এপার্টমেন্টের দরজা খুলতেই খটখট আওয়াজ করে ভিতরে চলে গেল প্রিয়। বাড়ির আনাচে-কানাচে সবটাই চেনা তার। সোজা শতাব্দের ঘরে যেয়ে ঢুকলো। শতব্দ কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিয় গম্ভীর ধা*রালো কন্ঠে বলল,
‘ একটু মানসিক শান্তি চাই আমার।’
বলেই শতাব্দের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো। হতভম্ব শতাব্দ বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। হাতে প্রিয়’র লাগেজ। মিনিট পাঁচেক এভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। প্রিয়’কে কয়েকবার ডাকলো। ভেতর থেকে আওয়াজ এলো না কোন। অপেক্ষা করল শতাব্দ। ভেতর থেকে কোনপ্রকার হেলদোল না পেয়ে। দরজার সামনে লাগেজ রেখে হল ঘরের সোফায় যেয়ে বসলো। দরজার দিক তাকিয়ে হতাশার নিশ্বাস ফেলল।

আমাবস্যার গহীন রাত কাটিয়ে। নতুন ভোর নেমেছে ভুবনে। চারিদিক উজ্জ্বল সোনালী আলোয় মাখানো। কাচের দেয়াল বেদ করে আলো এসে পড়লো শতাব্দের চোখে মুখে। পিটপিট দৃষ্টি মেলে নিজেকে সোফায় আবিষ্কার করল। গায়ে এখনো শেরওয়ানি জড়ানো। গতরাতে এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। রাতে কথা মনে পড়তেই দরজার দিক তাকালো। দরজা খোলা। লাগেজ গায়েব । বাড়ি থেকে চলে গেল না তো প্রিয়? ধড়ফড়িয়ে উঠল শতাব্দ। তড়িঘড়ি পায়ে ঘরে গেল। প্রিয় নেই কোথাও নেই। চিন্তায় মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। কি করবে, কোথায় খুঁজবে ভেবে নাজেহাল অবস্থা তার। পকেট থেকে ফোন বের করল। জাফর সাহেবের নাম্বারে যেই কল করল অমনি রান্নাঘর থেকে কিছু পড়ার আওয়াজ পেল। ফোন কেটে সেদিকে যেতেই হতভম্ব শতাব্দ।
চা করছে প্রিয়। শতাব্দকে দেখেই ঠোঁট মেলে হাসলো প্রিয়। বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
‘ কিছু কথা ছিল। বারান্দায় বসুন চা নিয়ে আসছি।’
শতব্দ যন্ত্রের মত মাথা নাড়ল। বারান্দায় যেয়ে বসলো। খালি বাড়ি। গতরাতে বিয়েবাড়ি থেকেই ইমান্দিপুরে চলে গেছে সবাই। শতাব্দ প্রিয়’কে নিয়ে রওনা হবে আজ।
প্রিয়’র এমন স্বাভাবিক আচরণ বড্ড অস্বাভাবিক লাগছে শতাব্দের। এক রাতে এত পরিবর্তন! মাথায় কি চলছে তার? ভাবনায় ছেদ পড়লো শতাব্দের। চা নিয়ে এসেছে প্রিয়। ট্রে থেকে চায়ের কাপ নামিয়ে সামনে রাখল।
সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে প্রিয়’কে পরখ করছে শতাব্দ। মেরুন রেড জর্জেট শাড়ি। চোখে গাঢ় করে কাজল লেপ্টানো। শাড়ির সাথে মিলিয়ে দারুণ এক লিপস্টিক লাগিয়েছে ঠোঁটে। গলায় ছোট একটা পেনডেন্ট। খোলা কেশ দুলছে দমকা বাতাসে। কি চমৎকার লাগছে মেয়েটাকে। কি নামে ডাকবে, স্বর্গের পরী নাকি কোন অপ্সরী?
প্রিয় ডাকল।বলল,
‘ আপনি যে জেঠা হচ্ছেন। জানেন?’
ভড়কে উঠল শতাব্দ। সামান্য চেঁচিয়ে বলল,
‘ হোয়ার্ট? জেঠা মানে।
প্রিয়’র বেশ স্বাভাবিক উত্তর,
‘ আপনার ভাইয়ের অনাগত সন্তানের মা হচ্ছে প্রভা।’
‘ তোমাকে কে বলল?’
‘ প্রভা।’
‘ তুমি রিপোর্ট দেখেছ?’
‘ উহু, ও বলেছে।’
‘তুমি বিশ্বাস করে নিলে?’
‘ হ্যাঁ’ সন্দিহান স্বরে উত্তর দিলো প্রিয়।
মৃদু হাসলো শতাব্দ। প্রিয় এখনো আগের মত। যে যা বলছে তাতেই বিশ্বাস করছে। বিয়েতে রাজি করানোর জন্য প্রভা মিথ্যা বলল, প্রিয় বিশ্বাস করে নিলো। ঘেঁটে দেখল না একবার ।
প্রিয় আবারো ডাকল। সন্দিহান সুরে জিজ্ঞেস করল,
‘ কেন? এটা কি মিথ্যা?’
‘ কি জানো। ওদের ব্যাপার আমি কি করে জানবো।’
‘ সমুদ্র ভাই তানহাকে ভালোবাসতো। প্রভার সাথে কি করে সম্পর্কে জড়ালো? তানহাকে ঠকিয়েছে আপনার ভাই? আপনাদের র*ক্তের ধর্ম নাকি ভালোবাসার মানুষকে ঠকানো!’
কাঠকাঠ দৃষ্টিতে তাকালো শতাব্দ। রাগ হলো প্রচন্ড। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
‘ তোমার কেন মনে হলো সমুদ্র ঠকিয়েছে তানহাকে? উল্টাটাও তো হতে পারে।’
‘ অবিশ্বাস্য। ঠকবাজি আপনাদের রক্*তে মিশানো।’
‘ দুনিয়ার বাকি সবাই সাধু?’
‘ সাধু না হলেও, আপনাদের মত পাল্টিবাজ তো নয়।’
রাগ চেপে ভারী নিশ্বাস ফেলল। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা টানলো শতাব্দ। নিজেকে শান্ত করে বলল,
‘ শুনো, তোমার বান্ধবী তানহা ঠকিয়েছে সমুদ্রকে। সম্পর্ক ভেঙ্গেছে আরো অনেকবছর আগে। এখন দুইবাচ্চার মা সে। টিনেজ প্রেম স্কুলের গন্ডীতেই কেটে গেছে। আবেগ কাটিয়ে বিবেকহীন হয়ে অন্যকারো হয়ে গেছে।’
স্তব্ধ প্রিয়। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এখনো। শতাব্দ আবারো বলল,
‘ যখন বাবার সাথে ঝামেলা পাকিয়ে, সম্পর্ক ছি*ন্ন করে সমুদ্র ঢাকায় চলে এলো। তখন তাদের দুরত্ব বাড়লো। আস্তেআস্তে তানহা তার ইউএসএ’তে থাকা কাজিনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেল। যখন সমুদ্র জানলো অনেক দেরি হয়েগেছে। বিয়ের কথা পাকাপাকি তখন। বিয়ে আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছে সমুদ্র। আকুতি মিনতি করেছে। তানহা মুখ ফিরে চায়নি। বিয়ে করে ইউএসএ’তে সেটেল্ড হয়ে গেছে। আর সমুদ্র ছন্নছাড়া জীবনে!’
শতাব্দের কথা শুনে চুপচাপ বসে রইল প্রিয়। সবাই এমন অদ্ভুত কেন? ধোয়াশার দুনিয়ায় মুখোশধারী সবাই!
প্রিয় বলল,
‘ প্রভার সাথে পরিচয় হলো কোথায়?’
‘ আমি কি করে জানবো। তোমার সিরিয়াসলি মনে হয়, ওদের লাভ লাইফ নিয়ে ইন্টারেস্ট আছে আমার!’
ছোট নিশ্বাস ফেলল প্রিয়। শক্ত গলায় বলল,
‘ আমার থেকে কোনপ্রকার এক্সপেকটেশন রাখবেন না। আপনার সাথে আমার সম্পর্কটা লোক দেখানো শুধু।’
তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো শতাব্দ। কথাটা পছন্দ হলো না তার। খাটো আওয়াজে বলল,
‘ আচ্ছা?’
‘ ইমান্দিপুরে কখন রওনা হবেন?’
‘ বারটায়।’
চা শেষ করে উঠল প্রিয়। বলল,
‘ চা ঠান্ডা হচ্ছে, খেয়ে নিন।’
শতাব্দ চায়ের কাপ উঁচু করে মুখের কাছাকাছি আনতেই, প্রিয় পিছন ফিরে বলল,
‘ সাবধানে খাবেন। চায়ে ইদুর মা*রার বিষ থাকলেও থাকতে পারে।’
রহস্যময় হেসে চলে গেল প্রিয়। পেছন থেকে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল শতাব্দ। এতটাও বদলাতে যেতে পারে কেউ?

চলবে……..

ফিলোফোবিয়া

ঊর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনির )

৩০.

( কার্টেসি ছাড়া কপি নিষেধ )

অনেক বছর পর আবার সেই চিরচেনা পথ। কিছু কি বদলেছে এই পথে? হ্যাঁ, সবটাই বদলে গেছে। শুধু অনুভূতিটাই পুরানো রয়ে গেছে। জানালার দিক মাথা ঝুঁকে দিলো প্রিয়। মলিন বিকেল। সূর্যের নরম আলোয় ছড়াছড়ি চারিদিক। মৃদু বাতাস। চোখ বুঝে নিলো প্রিয়। বাতাসে যেন মিষ্টি অদ্ভুদ ঘ্রাণ। মুচড়ে উঠলো বুক। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠল দুইহাজার এগারো’র সেই বিকেল। উদাস হাসলো প্রিয়।
আচমকা জোরে হর্ণ বাজলো। গাড়ি ইমান্দিপুর এসে চেয়ারম্যান বাড়ির গলিতে ঢুকছে। শত শত লোকের সমাগম। ভিড় ঠেলে ভিতরে যাচ্ছে। নতুন বউকে দেখতে উদ্রিক্ত সবাই। গাড়ির কাচের ধারে এসে ঝুকে পড়ছে। সজোরে বাজছে ব্যান্ড বাজনার আওয়াজ। কাচের বাহিরের মানুষ গুলো, ‘বড় সাহেব, ‘বড় সাহেব’ বলে চিল্লাচ্ছে। হতভম্ব প্রিয়। শতাব্দকে সবাই ‘বড় সাহেব’ বলছে কেন? এত বছরে কি বিরাট কিছু পরিবর্তন এসেছে ইমান্দিপুরে?
লোকজনের উদ্রিক্ত আচরণ দেখে, প্রিয় বরাবরই বিমূঢ়, হতভম্ব। একটা সময় এই সমাজের লোকজন তাকে হে*নস্তা করেছিল। ব্যা*শা বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি। আজ এই সমাজের সেই মানুষ গুলোই ফুল হাতে নত মাথায় স্বাগতম করতে দাঁড়িয়ে। সময় কি আশ্চর্য! তাইনা?
প্রিয়’র দিক ঝুকে এলো শতাব্দ। কপালের অবাধ্য কেশ গুছিয়ে দিয়ে। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘একদিন যেই সমাজের মানুষ গুলো তোমার দিক আঙুল তুলেছিল, আজ সেই সমাজকে তোমার পদতলে এনে দিয়েছি প্রিয়।’
আশ্চর্যজনক চাহনিতে তাকাল প্রিয়। শতাব্দের দৃষ্টিতে অদ্ভুত এক চমক। গাড়ির দরজা খোলার আওয়াজে সামনে তাকালো। চেয়ারম্যান সকলে স্বাগতম করতে দাঁড়িয়ে। বুক ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল। ঠোঁটের কোণে নিদারুণ রহস্যময় হাসি টেনে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। আশেপাশের লোকজন প্রিয়কে দেখে হতভম্ব। এত গানবাজনার মাঝেও ফিসফিস গুঞ্জন আওয়াজ। প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি সকলের।
ব্যাপারটা বেশ ভালোই উপভোগ করছে প্রিয়। কার জন্য, কি কারণে এই মানুষ গুলো তার সামনে নত তা গুরুত্বপূর্ণ না! গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, যেই মানুষ গুলো একদিন তার উপর আঙুল তুলেছিল আজ নত মাথায় ঝুকে আছে তারা। এরচেয়ে প্রশান্তি’র কিছু আছে কি? ঠোঁট মেলে চমৎকার হাসলো।বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে সামনের দিক পা বাড়ালো।

চেয়ারম্যান বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছে অভিলাষা। আবেগাপ্লুত অশ্রুভারাক্রান্ত চোখ। এই দিনটার জন্য কত বছর অপেক্ষা করেছে। দরজার সামনে আসতেই অভিলাষা বেগম বুকে জড়িয়ে ধরলেন প্রিয়’কে। দু’গাল ছুঁয়ে কপালে চুমু দিলেন। টলমল দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,
‘ চোখের শান্তি! এই দৃশ্য দেখার জন্য কত বছর অপেক্ষা করেছি। অবশেষে পূর্নতা তা পেল।’
গহনার বাক্স থেকে সাতপাল্লার সিতা হারটা বের করে প্রিয়’র গলায় পড়িয়ে দিলো অভিলাষা। মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন। মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়।
প্রিয়’র আগমনে চেয়ারম্যান বাড়ির কারো কারো মুখ জ্যোত্স্নার মত হাস্যোজ্জ্বল, কারো আবার অন্ধকার আমাবস্যা কালো! যেমন, শাদ। ছোট থেকেই প্রিয়কে অপছন্দ। কখনো পছন্দ ছিলনা তার। প্রিয় ভাইয়ের বউ রূপে তো একদমই নয়।
আচমকাই একটা মেয়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো প্রিয়কে।চেহারা না দেখলেও অনুভূতিতে ঠিক চিনলো। মেয়েটা জুবাইদা। ছলছল করে উঠল প্রিয়’র চোখ। এতবছর এই মানুষটাকে খুব মনে করেছে সে।
জুবাইদা অভিযোগ করে বলল,
‘ তোকে অনেক মিস করেছি প্রিয়। অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। খুঁজে পাইনি কোথাও।’
চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়। কি উত্তর দিবে জুবাইদাকে? যে ইচ্ছে করে যোগাযোগের কোন পথ খোলা রাখেনি সে। ভার্চুয়ালে ব্লক করে রেখেছিল অতীতের সবাইকে!
চোখ মুছে জুবাইদা গদগদ করে বলল,
‘ ফাইনালি! সত্যি সত্যি তুই আমার ভাবি হয়ে গেছিস প্রিয়। শতাব্দ ভাই কথা রেখেছে, তোকে জয় করে নিয়েছে।’
শতাব্দের বিজয়ী মুখখানায়, গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়।

সবে সন্ধ্যা নামছে তখন। বিয়ের খবর কানে আসতেই, মেয়েকে নিয়ে ছুটে এসেছে ছবি বেগম। বাড়িতে এসেই চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করলেন। হাঁকডাক দিয়ে বললেন,
‘ আমি কি তোমাদের খুব পর হয়ে গেছি ভাবি। রাতারাতি দুই ছেলেকে বিয়ে করিয়ে আনলে, একবার জানানোরও প্রয়োজনবোধ করলে না!’
অভিলাষা জলখাবারের ব্যবস্থা করছিল। বাড়ি ভর্তি মেহমান। এমন সময় ছবি বেগমের এসেই চিৎকার, চেঁচামেচিতে বিরক্ত হলেন। কপালের বিরক্তির রেখা মিলিয়ে। হাতের কাজে মনযোগ দিলেন আবার। ছবি বেগম আরো ক্ষিপ্ত হলো যেন। ডাইনিং টেবিলের কাছে যেয়ে অভিলাষা বেগমের মুখোমুখি হয়ে বললেন,
‘ শতাব্দ, সমুদ্র আমার ভাতিজা। ওদের উপর আমারও অধিকার আছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে কি করে বিয়ে করিয়ে আনলে ভাবি?’
থালায় মিষ্টি তুলতে রাখতে রাখতে বেশ স্বাভাবিক স্বরে বললেন,
‘ বিয়েতে যেন কোন ঝা*মেলা না হয় তাই, শতাব্দ চায়নি কাউকে জানাতে। বিশেষ করে তোমাকে।’
ছবি বেগম হতভম্ব সুরে বললেন,
‘ আমি আমার ভাতিজাদের বিয়েতে ঝা*মেলা করবো ভাবি? আমার সম্পর্কে এই ধারণা শতাব্দে’র! মানছি লুবনার সাথে বিয়ে হচ্ছিলো। বিয়ের দিন আসেনি তোমার ছেলে।হাজার হাজার লোকের সামনে আমার নাক কান কা*টিয়েছে। তাই বলে কি প্রতি*শোধ নিবো? তোমার ছেলের বিয়ে ভাঙ্গবো।’
অভিলাষা শান্ত দৃষ্টিতে চুপচাপ তাকিয়ে। ছবিকে বেশ ভালো করে চিনে। মুখে মধু অন্তরে বিষ। বেশ কৌশল খাটিয়ে কথার জালে পেঁচিয়ে নিরবে হু*মকি দিচ্ছে। তার এসব হু*মকি ধ*মকি ধার ধারেনা শতাব্দ তা কি এখনো বুঝেনা সে!
অভিলাষা বেগম বেশ নরম স্বরে বললেন,
‘ এসেছ যখন থেকে যাও কয়েকদিন। দুইদিন পর ছেলেদের বৌভাত। আগামীকাল এমনিতেও তোমার ভাইজান দাওয়াত নিয়ে যেত তোমাদের বাড়ি।’
অভিলাষার কথায় তেলে বেগুনে জ্ব*লে উঠল ছবি। যেখানে তার মেয়ের থাকার কথা। সেখানে কোথাকার কোন মেয়ে এসে জুড়ে বসেছে। ঘটা আয়োজন করে তাকে নিয়ে আহ্লাদ করা হবে সেইসব দুচোখে দেখতে হবে। ভেবেই রাগে কিড়মিড়িয়ে উঠল ছবি। মুখ বাকিয়ে বলল,
‘ কোন বাড়ির মেয়ে বাপপরিচয়, বংশ-বিদ্যা দেখে এনেছ তো? বাপের টাকাপয়সা আছেনি। চেহারা সুরত সুন্দর আছে কিছু! যেখান থেকেই আনো না কেন! আমার লুবনার মত পাঁচেপদে কাউরে পাইবা না। তোমার ছেলে মারাত্*মক একটা ভুল করলো ভাবি। মারাত্*মক ভুল।’
অভিলাষা ঠোঁট মেলে মৃদু হাসলো। বলল,
‘ মেয়ে শতাব্দের পছন্দের। সম্মানিত পরিবারের। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। পাশাপাশি দেশের বেশ পরিচিত শাড়ি ব্রেন্ডের ব্র্যান্ড প্রমোটর। রঙরূপে চোখ ধাধানো সুন্দরী।’
ছবি বেগম চুপসে গেল। কিন্তু দমলো না। গলা উঁচিয়ে বলল,
‘ তাই নাকি! তাহলে তো চমৎকারী মেয়েটাকে দেখতে হয় একবার।’

দোতলার সিড়ি কোটার পাশে খালি জায়গাটায় নতুন বউদের বসানো হয়েছে। সেখানেই মুখ দেখার আয়োজন করেছে। আসার পর থেকে প্রিয় এখানে বসে। একজনের পর একজন। কেউ না কেউ আছে সদা। বসে থাকতে থাকতে কোমরের হাঁড় শিথিল হওয়ার উপক্রম। মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে প্রিয়। এভাবে বসে থাকবে আর কতক্ষণ!
কিছু প্রশ্ন জেগেছে প্রিয়’র মনে। উত্তর শুধু শতাব্দ’ই জানে। যতক্ষণ না জানতে পারছে, ছটফট করবে সারাক্ষণ। মাঝে দুবার শতাব্দের সাথে চোখাচোখি হয়েছিল। আসার পর থেকে প্রচন্ড ব্যস্ত সে। নিরিবিলি কথা বলার মত সময় নেই তার।

শেষ সিড়িতে পা রাখতেই হতভম্ব ছবি বেগম। যেন আকাশ থেকে পড়লেন। যা দেখছে সত্যি! দুঃস্বপ্ন নয়তো কোন? আয়শার মেয়ে! ‘প্রিয়’? এতবছর পর আবার সেই মুখ!
প্রিয়’ই কি শতাব্দের বউ। হুবহু সেই চোখ, সেই মুখ। আয়শার মত তীর্*যক চাহনি তার।
মাথা আউলে গেল তার। রাগে কিড়মিড়িয়ে উঠল গা। মনে হলো, প্রচন্ড জোরে কেউ তার গালে থা*প্পড় মা*রলো। কিছু আঘা*তের শব্দ হয়না। ছাপ থাকে শুধু। প্রিয় সেই ছাপ। যতবার প্রিয়কে দেখবে ততবার এই আঘা*তটা অনুভব করবে। এই চেহারাটাকে প্রচন্ডরকম ঘৃ*ণা করে। তার সতীনের মেয়ে তারই বাপের বাড়িতে রাজত্ব করবে? পায়ের উপর পা তুলে রাজধানী হয়ে থাকবে! অতীত আবারো পুর্নাবৃত্তি হচ্ছে। আয়শা তার সাথে যা যা করেছে। এখন ওর মেয়ে লুবনার সাথে একই কাজ করছে। যা লুবনার হওয়ার কথা ছিল। সেখানে প্রিয়’র রাজত্ব। আর যাইহোক প্রিয়’কে সহ্য করবেনা সে। হাজার হোক সতিনের মেয়ে।
কত কারসাজি করে শোয়েবকে হাসিল করেছে। এখন শতাব্দকে নিয়েও কি আবারো একই লড়াই ল*ড়তে হবে! প্রিয় কি আদৌ জানে সে আয়শা আর শোয়েবের মেয়ে।
অসহ্য, সেদিনই মে*রে ফেলত যদি পথের কা*টা হয়ে শতাব্দ না দাঁড়াত। এখন কিছু করা যাবেনা। ক্ষমতা এখন শতাব্দের হাতে। শাহরিয়ার সাহেব চেয়ারম্যান হলেও পেছন থেকে শতাব্দ সব কলকাঠি নাড়ে। হাতেকাছে ইলেকশন শতাব্দ’র সাহায্যের ভীষণ প্রয়োজন। এখন কিছু করে, বাড়া ভাতে পানি ঢালবে না সে।

ছবি বেগমকে হতভম্ব দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, উঠে দাঁড়ালো প্রিয়। তির্যক ধা*রালো চাহনি তার। ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিত রহস্যময় হাসি। যেন আয়শার প্রতিবিম্ব। এগিয়ে এলো প্রিয়, ছবি বেগমকে জড়িয়ে ধরল। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ ভাগ্যের লেখা যায়না খন্ডন। বলেছিলাম, জ্বালিয়ে দিবো। আপনার অহং*কার দ*ম্ভ মাটিতে মিলিয়ে দিবো। কথার খেলাফ করি না আমি। অপেক্ষা করুন, দেখুন।’
ছবি বেগম ফুলেফেঁপে উঠলেন। প্রত্যুত্তরে প্রিয় মিষ্টি হাসলো।

‘ তোমার সবসময় ওই মেয়েটাকেই পছন্দ ছিল তাই না শতাব্দ ভাই? এই মেয়েটার জন্যই আমাদের বিয়ের দিন আসোনি তুমি। আমার সাথে কেন এমন করলে? কেন?’
গিজগিজ অন্ধকারে লুবনার রাগী গর্জন। ক্রো*ধে উসখুস করছে সে। শতাব্দ শান্ত, স্বাভাবিক। শতাব্দের এমন স্বাভাবিক আচরণ তার রাগ বাড়াচ্ছে আরো। চেঁচিয়ে উঠল সে। বলল,
‘ এই মেয়েটার জন্য হাজার হাজার মানুষের সামনে অপমান হয়েছি। তুমি কি ভাবছ, ছেড়ে দিবো মেয়েটাকে। উহু, খু*ন করে ফেলবো ওকে। আমার ক্রি*মিনাল রেকর্ড তো তোমার জানাই আছে।’
খপ করে লুবনার গলা চেপে ধরলো শতাব্দ। চোখেমুখে ভয়া*নক রাগ। ভ*স্ম করা চাহনি। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ ডোন্ট ডেয়ার। ওর দিক চোখ তুলে তাকালে, আমি কি করতে পারি নিশ্চিত জানা আছে তোর? এতবছর এই দিনটার অপেক্ষা ছিলাম। তাই কোন ঝামেলা চাইছিনা আপাতত। ঊষ্ণচড় রওনা হবি আগামীকাল সকাল সকাল।’
লুবনা কেঁদে ফেলল। বলল,
‘ সেই ছোট থেকে তোমায় ভালোবাসি। আমার সাথে কেন করলে এমন?’
‘ উত্তরটা তোর সত্যিই অজানা?’
লুবনা পিটপিট দৃষ্টিতে তাকালো। শতাব্দ লুবনার গলা ছেড়ে দিলো। রেলিং-এর পাশ ঘেঁষে সিগারেট জ্বা*লিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
‘ রি*ভেঞ্জ অফ নেচার! অপমা*নের বদলে অপ*মান। তোর মা আর তোর জন্য দরকার ছিল তা। প্রিয় শুধু আমার। জন্ম থেকে লিখিত। আমাদের সম্পর্ক ঠিক কত বছর পুরানো তা কল্পনাও করতে পারনেনা কেউ।’
মাথা নেড়ে উঠলো লুবনা। চট করে শতাব্দের হাত চেপে ধরলো। বলল,
‘ ওর থেকে কি কমতি আছে আমার? আমাকে ভালোবাসলে না কেন? ‘
‘ ওর সাথে অন্যকারো তুলনা হয়না। অতুলনীয়! আমার প্রাণপ্রিয়।’

আচমকাই ঘরের দরজা খুলল। শতাব্দের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে লুবনা। হাত ঝাড়ি দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো শতাব্দ। প্রিয় বেশ স্বাভাবিক। লাগেজ থেকে ফোনের চার্জ বের করতে করতে ব্যস্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
‘ দরজা নক করার দরকার ছিল, সরি! চার্জার নিতে এসেছিলাম। ইউ গাইছ ক্যারি অন।’
ঘর থেকে বেরিয়ে গেল প্রিয়। হতাশ শ্বাস ফেলল শতাব্দ। প্রিয়’র পেছনে গেল। হাত টেনে থামালো। অস্থির সে। ব্যস্ত স্বরে বলল,
‘ তুমি যেমন ভাবছ, এমন কিছুনা। আসলে..
থামিয়ে দিলো প্রিয়। বেশ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
‘ যেমনই হোক। আই ডোন্ট কেয়ার। অনেস্টলি, আপনি কার সাথে কি করলেন এতে আমার কিছু আসে যায়না। আমার উদ্দেশ্য আপনি নন!’
হাত ছাড়িয়ে চলে গেল প্রিয়। নিমিষ দৃষ্টিতে প্রিয়’র যাওয়ার দিক চেয়ে রইল শতাব্দ।

চলবে…….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।