ফুলপিসি পর্ব-০২

0
167

#ফুলপিসি
#পর্ব_০২
#লেখা_Bobita_Ray

নিভারানী চোখ গরম করতেই ফুলপিসি দমে গেল। ভাতিজার শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলল,
-‘না মানে.. আমি তো একটু ইয়ার্কি করছিলাম৷ আচ্ছা এখন এইসব টপিক বাদ। এখানে মুরুব্বিরা বিয়ের পাকা কথা বলুক। পৃথিলা মা চলো আমরা তোমার ঘরে গিয়ে বসি? এই ঋষি তুইও চলে আয়?
ফুলপিসি ভাতিজাকে বগলদাবা করে পৃথিলার পিছুপিছু চলে গেল। পৃথিলার ঘরে গিয়ে খাটের মাঝখানে হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসল। গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘এই ঋষি …এই অসহ্য গরমে কেউ বিয়ে করে? আজ তাপমাত্রা কত জানোস? একচল্লিশ ডিগ্রি। দেখা যাবে, বাসর ঘরে তুই রোমান্টিক মুড নিয়ে তোর বউয়ের কাছে গেলি। তোর বউ গরমে ঘেমে-নেয়ে অতিষ্ঠ হয়ে তোকে বিছানা থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল! তখন কী হবে? অল্প বয়সে তো তোর কোমরটা ভাঙ্গবে।
ইশ..কী লাগামছাড়া কথাবার্তা। পৃথিলা লজ্জায় কুণ্ঠিত বোধ করল। ঋষি রেগে আগুন হয়ে গেল। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-‘সবাই তোমার মতো জল্লাদ না। যে জামাইকে একশোবার লেবু চটকানোর মতো চটকাবে।
-‘কীহ..আমি জল্লাদ? তোর চৌদ্দগুষ্ঠী জল্লাস। বেয়াদব কোথাকার। শোনো..পৃথিলা? আমি তোমার ভাল চাই। ভুলেও এই বলদাটাকে তুমি বিয়ে করো না। ওরে বিয়ে করলে জীবনেও সুখী হবা না।
-‘পিসিইইই..আমি জানতাম! তুমি ছলেবলে আমার বিয়েটা ভাঙার জন্যই এখানে এসেছো!
পৃথিলা ওদের পিসি, ভাতিজার খুনসুঁটিময় দুষ্টু, মিষ্টি ঝগড়া দেখে মিটিমিটি করে হাসছে।
ঋষি বলল,
-‘এই পৃথিলা? তোমার নাইট ক্রীমটা কোথায়?
পৃথিলা হাত উঁচিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দেখিয়ে দিল। ঋষি নাইট ক্রীমের কৌটাটা পিসির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-‘এই ক্রীমটা প্রতিদিন রাতে নিয়ম করে মাখলেই ধবধবে ফর্সা হয়ে যাবা পিসি। তবুও আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দিও না প্লিজ..? ঋষির কণ্ঠে হতাশা। ফুলপিসি চট করে নাইট ক্রীমটা নিজের ব্যাগে ভরে ফেলল। বসে বসে পা নাচিয়ে বলল,
-‘ওকে। তবে আমার একটা শর্ত আছে?
-‘আবার কী শর্ত?
-‘বিয়েটা বৃষ্টির দিনে করবি। এই গরমে না কব্জি ডুবিয়ে খেতে পারুম। আর না মেকাপ করে শান্তি পামু। ভাল করে তাকিয়ে দ্যাখ? আমার মুখের মেকাপ গুলো গলে গলে পরতেছে। ধুরু..এতটাকা খরচ করে সাজলাম। আমার টাকাগুলোই জলে গেল। এই পৃথিলা? তোমাকে আসার সময় আমার বৌদি কতটাকা দিয়েছে গো?
_’দুই হাজার দুই টাকা।
ফুলপিসি হাত বাড়িয়ে বলল,
-‘ওখান থেকে পাঁচশো টাকা আমাকে দাও তো মা?
ঋষি অবাক হয়ে বলল,
-‘ওর টাকা তোমাকে কেন দিবে? আজব!
-‘বাহ্ রে..ওকে দেখতে এসেই তো আমার সুন্দর সাজটা নষ্ট হলো। এর ক্ষতিপূরণ দিবে না?
-‘পিসি এবার কিন্তু তুমি সত্যি সত্যিই বাড়াবাড়ি করতেছো?
-‘আরে বাহ.. বিয়ে হলো না। এখুনি দেখি তোর হবুবউয়ের জন্য পুড়ে ধুমো উড়ছে।
পৃথিলা একহাজার টাকার একটা নোট পিসির হাতে গুঁজে দিল। বলল,
-‘ওর কথা ছাড়ুন তো পিসি। এই নিন টাকা! এরপর থেকে আমার কাছে সাজবেন। আমি এর থেকেও বেটার সাজাতে পারি।
পিসিকে কথাগুলো বলতে বলতে ঋষির দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপলো পৃথিলা। পিসি খুশিতে ডগমগ হয়ে বলল,
-‘সত্যিইই? আহা.. কী শান্তি। এখন থেকে আমি বিনা পয়সার মন চাইলেই সাজতে পারব। এই ঋষি? তোর প্রেমিকা এত গুনী। আগে বলিসনি কেন আমাকে? আমরা এখানেই তোর বিয়ে দিমু। যা বিয়ে কনফার্ম..
ঋষি মুখ টিপে হাসল৷ এখন খুব ভাল লাগছে। বিয়ের কথা শুনলেই এত শান্তি লাগে কেন! কে জানে!
ফুল পিসির আড়ালে ঋষি, পৃথিলার আঙুলে আঙুল পেঁচিয়ে ধরে, চুপটি করে বসে রইল। পিসি দেখেও না দেখার ভাণ করে বসে রইল।
শাড়িতে পৃথিলাকে দেখতে খুব ভাল লাগছে।
কিছু একটা মনে পড়তেই পিসি লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। যেতে যেতে বলল,
-‘উফ্..যে গরম পরেছে। বেশি কিছু করিস না আবার!
পিসির কথা শুনে দুজনেই লজ্জা পেয়ে লাজুক হাসল। পৃথিলা আলতো করে ঋষির ঘাড়ে মাথা এলিয়ে দিল। ঋষি আঙুল ছেড়ে দিয়ে পৃথিলার কোমর জড়িয়ে ধরল। গাঢ় কণ্ঠে বলল,
-‘নতুন সম্পর্কে সত্যি সত্যিই বাঁধা পড়ছি তাহলে?
-‘হুম।
-‘অনুভূতি কেমন?
-‘দারুণ।
-‘আমারও।
-‘তোমার পিসিটা জোশ।
-‘জোশ না সোনা। পিসি রক’স আমরা সবাই পিসির ভয়ে শক’স।
-‘হা হা হা।
-‘পৃথিলা?
-‘বলো?
-‘উহুম.. এখন বলব না। পরে বলব।
-‘আচ্ছা।

-‘কী রে তোরা কী করি..স? পিসির মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। চোখদুটো বড় বড় করে বলল,
-‘এই গরমে তোদের শরম করে না? একটা আরেকটার সাথে লেগে বসে আছিস! ছিঃ..
ঋষি পৃথিলাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। চাপা কণ্ঠে বলল,
-‘তোমাকে এখন এই ঘরে কে আসতে বলেছে?
-‘সময় মতো না আসলে তো। তোরা আরও গভীরে চলে যাইতি। এরজন্যই তোদের সবসময় চোখে চোখে রাখি আমি। বলা তো যায় না। কখন কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলিস।
-‘পিসিইই..এবার একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
-‘তোমরা ঝাপটায় ধরে বসে থাকবা। আমি বললেই দোষ?
-‘চুপপপ..
-‘তোর চৌদ্দগুষ্ঠী চুপ।
ঋষি হাল ছেড়ে দিল। অন্যদিকে গোমড়া মুখ করে বসে রইল। পিসি, ঋষির পাশে বসে মৃদু কেশে উঠল। বলল,
-‘মন খারাপের কিছু নাই। একমাস পরেই বিয়ে।
-‘সত্যিইই পিসি?
-‘এখনো সময় আছে। বিয়েটিয়ে করা লাগবে না ঋষি। বিয়ে করে কী করবি? সেই তো বউয়ের থেকে ফোনরেই বেশি সময় দিবি।
-‘একমাস পরে ভালোই ভালোই আমার বিয়েটা হয়ে গেলে, ভগবানের দিব্যি কেটে বলছি, বিয়ের পরে একমাস ফোন ছুঁয়েও দেখব না পিসি। শুধু বউ নিয়ে থাকব। প্রমিস।
-‘ছিঃ..কী অশ্লীল কথাবার্তা ঋষি?
ঋষি মনে মনে বলল,
-‘আর কতদিন কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো পিসি? নিজে তো ঠিকই পিসেমশাইকে জড়িয়ে ধরে শান্তির ঘুম দাও। আমার কষ্টটা তুমি কী বুঝবা!

পৃথিলার কাকা ফুল পিসির দিকে তাকিয়ে কথা বলছে আর একটু পরপর এক চোখ টিপছে। ফুলপিসি এতক্ষণ খেয়াল করেনি। বিষয়টা খেয়াল করতেই নিজেও কথা বলতে বলতে খুব সাবধাণে একচোখ টিপলো। আশ্চর্য ভদ্রলোক ওইভাবে হাঁ করে তাকিয়ে আছে কেন? নিজে তো ঠিকই একটু পর পর চোখ টিপতেছে। আর একবার কী চোখ মেরে দেখব? ফুলপিসি আরও একবার চোখ টিপলো। ভদ্রলোক লজ্জা পেয়ে বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলে অন্যদিকে মুখ করে তাকিয়ে রইল। এবার খুব শান্তি লাগছে ফুলপিসির। চোখ টিপাটিপির প্রতিযোগিতা দিলে ফুলপিসি ঠিকই ফাস্ট হতো। নিজের প্রতি কনফিডেন্স ফিরে পেল। বিয়ের পাকাকথা বলে, গাড়িতে ওঠে বসতেই ঋষির মা বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘এই ঋষি তোর হবুকাকা শ্বশুরের কী চরিত্রে কোন সমস্যা আছে?
-‘কেন মা?
-‘কথা বলতে বলতে কতবার যে চোখ টিপেছে। তার কোন হিসেব নেই। পরে আমি লজ্জায় আর ওনার দিকে তাকাইনি।
পিসি খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
-‘লজ্জা পেলেই লুচ্চাগুলা আরও বেশি সুযোগ নিবো। আমারে দেখেও চোখ টিপি মারছে। পরে আমিও মেরে দিসি। নে এবার বুঝ?
পিসেমশাইয়ের মুখটা কালো হয়ে গেল। মন খারাপ করে বলল,
-‘তুমিও কোন অংশে কম না। ওই ব্যাটাকে কেন চোখ মারতে গেলা?
-‘আরেহ্..ব্যাপারটা হালকা ভাবে নাও তো। আমারে মারছে আমিও মাইরা দিছি। হিসাব বরাবর।
-‘চুপ করো তো পিসি। ওনার জন্মগত অভ্যাস। আর ওটাকে চোখ টিপা বলে না চোখ মিটিমিটি করা বলে।
-‘গাধার বাচ্চা আমাকে আগে বলবি না?
-‘দেখছো মা? তোমার ননদ তোমাদের সামনে আমাকে কী বলল? আমি যদি গাধার বাচ্চা হই। গাধাটা কে বলোতো মা? তুমি না বাবা?
পিসির মাথা হট হয়ে গেল। তার এই মহাবদ ভাতিজাটা সবসময় ক্লিক লাগাতে উস্তাদ। উঁচু কণ্ঠে বলল,
-‘ঋষি আমি শুধু তোকে বলেছি। এর মাঝে তোর বাপ-মাকে টানবি না খবরদার?
নিভা রানী বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘আহা..ফুলি চুপ করো তো। এই তোমাদের মাথা ব্যথা করে না? এত কথা কীভাবে বলো?
ফুলপিসি গাল ফুলিয়ে বলল,
-‘এখন তো সব দোষ আমার। নিজের ছেলে ধোঁয়া তুলসীপাতা।
-‘আমি দুজনকেই বলেছি।
ফুলপিসি মুখে ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকাল। ঋষি মুখ টিপে হেসে দিল। বেশ হয়েছে।
ফুলপিসি গাড়ি থেকে নেমে পৃথিলাকে ফোন দিল। চটপটে কণ্ঠে বলল,
-‘তুমি কবে আসবা আমাদের বাড়ি? আমার দল ভারী করা লাগবে পৃথিলা। এরা মা-ছেলে মিলে সারাক্ষণ আমার পিছে লেগে থাকে।
-‘যেদিন নিয়ে যাবেন।
-‘আমার তো মনে চাইতেছে তোমাকে এখুনি নিয়ে আসি। তোমাদের বাড়ির খাবার গুলো কিন্তু অনেক সুস্বাদু হয়েছে। একটা সিক্রেট বলি পৃথিলা? কাউকে বলো না আবার?
-‘আচ্ছা।
ফুলপিসি ফোনটা কানের সাথে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
-‘আসার সময় পলিথিন ব্যাগে ভরে তোমাদের বাড়ি থেকে পাঁচটা মিষ্টি চুরি করে নিয়ে এসেছি। আসলে মিষ্টিটা খেতে এত দারুণ লেগেছে। তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করো তো? কোন দোকান থেকে কিনছে।
পৃথিলা শত চেষ্টা করেও হাসি আটকে রাখতে পারল না। শব্দ করে হেসে দিল। এই মানুষটা এত রসিক কেন? ফুলপিসি অবাক হয়ে বলল,
-‘কী হলো হাসছো কেন?
পৃথিলা মুখে হাত চেপে ধরল। মাথা ঝাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
-‘না এমনিই।
-‘পিসি কার সাথে কথা বলো?
ঋষি, পিসির পাশে ধপ করে বসে পরল। পিসি ভাব নিয়ে বলল,
-‘আমার একমাত্র হবুভাতিজা বউয়ের সাথে।
-‘ওহ..আচ্ছা। এরজন্যই তো পৃথিলার নাম্বার বার বার ওয়েটিং পাচ্ছি। এবার দয়া করে ফোন রাখো। আমি কথা বলব।
-‘না রাখব না। পৃথিলার সাথে আমার প্রাইভেট কথা এখনো শেষ হয়নি।
-‘হবুবউটা কী তোমার না আমার?
-‘ছিঃ..কী অশ্লীল কথাবার্তা বলছিস ঋষি?
ঋষি ভ্রুজোড়া নাচিয়ে বলল,
-‘তাহলে তোমার এত কিসের কথা? না কী তুমি শরিফা থেকে ধীরে ধীরে শরিফ হয়ে যাচ্ছো?
হাতে মোবাইল ছিল। মোবাইল দিয়েই ধুমধাম ঋষির পিঠে দুঘা বসিয়ে দিল পিসি। তাতেও স্বাদ মিটলো না। চুলের মুঠি টেনে ধরে রাগী কণ্ঠে বলল,
-‘আর বলবি এসব কথা?
ঋষি হাতজোড় করে বলল,
-‘আমার ভুল হয়ে গেছে মা জননী। এই গরমে আর জীবনেও বলব না। এবার দয়া করে আমাকে ছেড়ে দেন? আহ্.. ব্যথা লাগছে কিন্তু পিসি?
পিসি এসি অফ করে, এসির রিমোট নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। যাওয়ার আগে দরজাটা বাইরে থেকে শব্দ করে লাগিয়ে দিয়ে বলল,
-‘আমাকে অপমান করা? এবার দ্যাখ কেমন লাগে।
-‘পিসি দরজা খুলো বলছি? গরমে সেদ্ধ হয়ে গেলাম?
-‘হ সেদ্ধ। লবন, মরিচ, তেল, মশলা মাখিয়ে রান্না করে চেখে দেখব, কেমন টেস্ট।
-‘পিসি ভাল হবে না কিন্তু?
পিসি সে কথা শুনলে তো। ঋষি গরমে ছটফট করতে করতে পাক্কা একঘণ্টা পর ছাড়া পেল। ছেলেটার মুখ ঘেমে-নেয়ে পাকা টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে। পিসি শাড়ির আঁচল দিয়ে ঋষির মুখ ভাল করে মুছিয়ে দিল। ঋষি অভিমানে মুখটা সরিয়ে নিল। পিসি মৃদু ধমকে বলল,
-‘ঘাম বসে গেলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
-‘লাগুক। এখন এত দরদ দেখিয়ে কী হবে।
-‘কিছুই হবে না। তুই কী ভেবেছিস? আমি তোকে ভালোবেসে যত্ন করছি? মোটেও না।
-‘তাহলে?
-‘এই গরমে হিট স্ট্রোক করে তুই যদি মরে টরে যাস। তাহলে তো পৃথিলাকে অন্যকেউ বিয়ে করে নিয়ে যাবে। তখন তো আবারও আমার সেই একগাদা টাকা খরচ করেই পার্লার থেকে সাজতে হবে। বাড়িতে একজন পার্মানেন্ট বিউটিশিয়ান থাকা খুব জরুরী। ও তুই বুঝবি না।
-‘স্বার্থপর মহিলা।
-‘তুই স্বার্থপর।

রাতে শুয়ে হঠাৎ নাইট ক্রীমের কথা মনে পড়ল পিসির। একলাফে উঠে বসল। পিসেমশাই চমকে উঠল। বলল,
-‘এই কী হয়েছে?
-‘মুখে নাইট ক্রীম মাখা হয়নি। দাঁড়াও নিয়মটা জেনে নেই।
পিসি ব্যস্ত হয়ে পৃথিলাকে ফোন দিল। আশ্চর্য এতরাতে মেয়েটা কার সাথে ফোনে কথা বলছে? বার বার ফোন ওয়েটিং দেখাচ্ছে। পিসি চিন্তিত হয়ে ঋষির ঘরের সামনে গিয়ে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগল। চাপা কণ্ঠে বলল,
-‘এই ঋষি উঠ? দ্যাখ.. তোর হবুবউ মাঝরাতে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে? ঋষিরে…
ঋষি ঠাস করে দরজা খুলে হাতের ফোনটা দেখিয়ে বলল,
-‘কার সাথে আবার কথা বলবে? চেয়ে দ্যাখো? আমার সাথে কথা বলছে।
-‘তাই তো বলি..তোর চোখের নীচে এত কালি পরেছে কেন! মাঝরাতে নিশ্চয়ই ১৮+ কথাবার্তা বলিস তোরা? আমি ঠিকই ধরেছি।
দে ফোনটা আমাকে দে?
ঋষি অবাক বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কী বলে এই মহিলা? অবশ্য ফুল পিসির এত ধৈর্য নেই। ফোনটা ঋষির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বলল,
-‘এই পৃথিলা খবর কী তোমার? শুধু হবুবরের সাথে কথা বললেই হবে? নাইট ক্রীম যে দিলা? নিয়ম তো বলে দিলা না? কীভাবে মুখে মাখব?

ফোনের ওপাশ থেকে কী বলল শোনা গেল না। পিসি বলল,
-‘ওহ..আগে ফ্রেশওয়াশ দিয়ে মুখ ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে? তারপর আলতো করে মুখ মুছে বাতাসে ভাল করে শুকিয়ে নেবো? তারপর সময় নিয়ে সারামুখে ধীরে ধীরে মাখব?
-‘আচ্ছা.. আচ্ছা। অনেক ধন্যবাদ। আসলে কোনদিন মাখিনি তো। তাই নিয়মটা জেনে নিলাম। আর শোন রাত করে এত কথা বলো না। এবার ঘুমাও। এত রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে। এখন রাখি। গুড নাইট।

মুখে ক্রীম মেখে পিসির মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। ধুর.. খুশিতে ঘুম ধরছে না। পিসেমশাই মানে পিসির বর অনিলবাবুকে পিসি কাঁচা ঘুম থেকে টেনে তুলল। ভদ্রলোক মহাবিরক্ত। চোখ, মুখ কুঁচকে বলল,
-‘কী হয়েছে?
ফুলপিসি, অনিলবাবুর ভুঁড়িতে গুঁতো দিয়ে লাজুক কণ্ঠে বলল,
-‘আমার না ঘুম আসছে না?
-‘তো আমি করব?
পিসি চোখ বড় বড় করে বলল,
-‘কী করবা মানে? প্রেম করবা? এই তোমার ফোন কোথায়? দেখি ফোনটা দাও?
পিসি হাত বাড়িয়ে দিল। ভদ্রলোক বালিশের তলা থেকে ফোনটা নিয়ে পিসির হাতে তুলে দিল। পিসি ইমোতে নিজের ফোনে ভিডিও কল দিয়ে, ভদ্রলোকের ফোনটা ভদ্রলোকের হাতে তুলে দিল। তারপর পাশ ফিরে শুয়ে, ফোনের স্ক্রীণে অনিলবাবুর দিকে তাকিয়ে আবেগী কণ্ঠে বলল,
-‘কেমন আছো ওগো মোর প্রিয়তম?
অনিলবাবু বোকা বনে গেল। ফোনের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাল। বিড়বিড় করে বলল,
-‘তুমি কী পাগল?
-‘একদম পাগল বলবা না। সুন্দর করে কথা বলো? বিয়ের পর পর মিষ্টিসুরে যেভাবে আমার সাথে কথা বলতে, ঠিক সেইভাবে। না কী আমি এখন পুরোনো হয়ে গেছি দেখে, আর আমাকে ভাল লাগে না? শেষের কথাগুলো অভিমান করে বলল ফুলপিসি। ভদ্রলোকের মনটা নরম হলো। বলল,
-‘আমার খুব ঘুম পাইছে বউ?
-‘খবরদার ফোন কাটবা না কিন্তু? গোপন কিছু দেখবা না কী? একদম ঘুমটুম ছুটে যাবে।
-‘ছিঃ..ছিঃ
-‘ছিঃ..ছিঃ করছো কেন? ভুলে যেও না আমি তোমার ঘরের বউ।
-‘বুড়ো বয়সে ভীমরতি। লোকে শুনলে হাসবে।
-‘হাসুক। আমাদের জীবনে আমরা একঘেয়েমি আসতেই দেব না। শোন না..?
-‘বলো?
-‘কী করো?
-‘কী করি মানে? তুমি দেখতেছো না শুয়ে আছি?
-‘আহ..একটু নরম সুরেও তো বলতে পারো? সবসময় খিটখিট করো কেন? খাটাশ ব্যাটা।
-‘তুমি কী?
-‘তুমি কী এখন আমার সাথে ঝগড়া করতে চাইতেছো? খবিশ ব্যাটা মাঝরাতে প্রেম করতে হয়। এভাবে নিব্বা-নিব্বিদের মতো পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে হয় না। এতগুলো বছর সংসার করেও শিখাতে পারলাম না।
-‘এবার ক্ষমা দাও? আমি ঘুমাব।
-‘এ্যাই…?
-‘আবার কী হলো?
ফুলপিসি লাজুক হেসে বলল,
-‘আমাকে দেখতে কেমন লাগছে?
-‘লাক্সের বিশ্ব সুন্দরী নায়িকা ফুলকলি।
-‘যাহ পাঁজি। তুমি বানিয়ে বানিয়ে বলছো?
-‘না..না সত্যি।
-‘ইশ..
অনিলবাবুর প্রথমে বিরক্ত লাগলেও এখন খুব ভাল লাগছে। প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল শরীর, মন। যার ঘরে আস্ত একটা বিনোদনের ডিব্বা আছে। তার কী বেশিক্ষণ বিরক্ত লাগার উপায় আছে?

সকালে খাবার টেবিলে বসে ঋষি রুটি ছিঁড়ে খেতে খেতে বলল,
-‘শুনলাম.. তুমি না কী পৃথিলার সাথে আজ দেখা করতে যাবা?
পিসি হাতে নেইলপালিশ পরতে পরতে বলল,
-‘তোকে কেন বলব?
-‘ওর সাথে কিসের দরকার তোমার?
-‘আছে অনেক দরকার।
-‘আমিও তোমার সাথে যাব পিসি?
-‘আমি তো তোকে আমার সাথে কিছুতেই নেবো না ঋষি।
-‘তোমার মতলব আমার ভাল ঠেকছে না পিসি। ভুলে যেও না হবুবউটা আমার।
পিসি, ঋষির মাথায় চাট্টি মেরে বলল,
-‘মাথামোটা, হিংসুটে কোথাকার।

(চলবে)