ফুলপিসি পর্ব-০৫

0
124

#ফুলপিসি
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ০৫

সকালে স্নান সেরে দুজন খাবার টেবিলে বসতেই ফুলপিসি ভেংচি কেটে বলল,
-‘খেয়ে টেয়ে এখন কী করবি রে ঋষি?
ঋষি মাংস দিয়ে খিচুড়ি মেখে নিয়ে খেতে খেতে বলল,
-‘কী করব মানে?
ফুলপিসি নীচু কণ্ঠে বলল,
-‘না মানে তুই তো বেকার। এখন কী সারাদিন বউয়ের সাথে ঘরে শুয়ে, বসে থাকবি?
ঋষির খাওয়ার রুচি চলে গেল। কটমট করে পিসির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘খাওয়ার সময় তোমার আজগুবী প্যাঁচাল না পারলে হয় না পিসি?
পিসি বলল,
-‘না হয় না।
পিসিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে, গালে হাত রেখে কিছু একটা ভাবতে দেখে পৃথিলা জিজ্ঞেস করল,
-‘কী ভাবতেছো পিসি?
-‘ভাবতেছি।
-‘কী ভাবতেছো?
-‘এই যে জল আর খাবারটা দেখছো, না?
-‘হ্যাঁ।
-‘জলটাও পরিষ্কার খাবারটাও সুস্বাদু আবার আমার পেটটাও ভাল। কিন্তু এই পরিষ্কার জল আর সুস্বাদু খাবার পেটে গিয়ে ওই রকম দূর্গন্ধময় হাগু আর হিসু হয়ে বের হয়ে কেন? বলো তো পৃথিলা?
পৃথিলা বিস্ময় খেল। ঋষির যা একটু খাওয়ার রুচি ছিল। পিসির কথা শুনে সেটুকু চলে গেল। নাকে প্রবল দূর্গন্ধ এসে ঠেকলো।
বলে কী ফুলপিসি? এর সঠিক কোন ব্যাখা পৃথিলার আদৌও জানা নেই। তবে বিষয়টা সত্যিই ভাবার বিষয়। কোন ডাক্তারের কাছ থেকে সময় করে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।
ঋষি অর্ধেক খাওয়া ফেলে উঠে চলে গেল। বমি করার থেকে না খাওয়া ভাল।

পৃথিলা শুয়ে ছিল। শিখামাসি ঘরে আসতেই উঠে বসল। শিখামাসি খাটের কোণায় বসে বলল,
-‘আমার দিদি, জামাইবাবু অনেক ভাল বুঝছো বৌমা? না হলে এই যুগে কেউ যৌতুক ছাড়া ছেলে বিয়ে দেয়? আমি তো মোটা দাগের যৌতুক ছাড়া ছেলে বিয়ে করাবো না বাপু!
ফুলপিসি বেলকনিতে ছিল। ঘরে এসে বলল,
-‘আমরাও অনেক ভাল ছিলাম। বুঝলে তো শিখা? নাহলে সেই যুগে তোমার দিদিকে যৌতুক ছাড়া ঘরে তুলতাম না। যারা যৌতুক নেয়। তারা হলো এক নাম্বারের ছোটলোক। ওই রকম ছোটলোকি স্বভাব আমাদের বংশে নেই।
কথায় সুবিধা করতে না পেরে শিখা বলল,
-‘আপনি কবে যাবেন?
-‘আমার সেদিন সময় হবে। সেদিন যাব। আমার চিন্তা করে তোমার ঘুমাই করতে হবে না।

-‘তুই কিন্তু আমারে কথা দিছোস, হানিমুনে নিয়া যাবি?
ঋষি শুকনো ঢোক গিলল। বলল,
-‘তুমি আমাদের সাথে হানিমুনে গিয়ে কী করবা পিসি?
-‘কী করুম মানে? খামু-দামু, ঘুইরা বেড়ামু। তারপর ফেসবুকে ছবি পোস্ট কইরা ভাইরাল হইয়া যামু।
ঋষি অসহায় বোধ করল। পিসি বলল,
-‘আমি একটা বিরাট কাজ কইরা ফালাইছি?
ঋষি ভয়ে ভয়ে বলল,
-‘কী?
পিসি লাজুক হেসে, হাতে হাত কচলে বলল,
-‘হানিমুনে যাওয়ার খুশিতে তোর পিসেমশাইয়ের চুলের সাথে সাথে দাড়িতেও কালা কালার লাগাইয়া দিছি। এখন যে তারে কী ইয়াং লাগতেছে ঋষি। উফ্.. আমি তো পুরাই ফিদা।
ঋষি ঠোঁট টিপে হেসে দিল। বলল,
-‘তুমি কী সত্যি সত্যিই আমাদের সাথে যাবা পিসি?
-‘আলবাৎ যামু। তোরা ঘুরবি, মজা করবি, চিপায়, চাপায় যাইয়া চাকুমচাকুম করবি। বুড়া হয়ে গেছি দেখে কী আমাগো শখ করে না?
-‘তো যাও না। পিসেমশাইকে সাথে নিয়ে একা একা যাও। শুধু শুধু আমাদের পিছু ধরছো কেন?
পিসি মন খারাপ করে বলল,
-‘ ওই বদলাডা তো চিনেই না। কোন কোন জায়গা দিয়া ঘুরতে যেতে হয়। যদি আমরা হারাইয়া যাই?
-‘তাও ঠিক।
-‘শোন ঋষি বার বার কইতাছি। টিকেট কিন্তু চারটা কাটবি? নাহলে আমি কিন্তু তোর কোলে চইড়া যামু। হুহ..
পৃথিলা আর একটু উস্কে দিতে বলল,
-‘মার্কেটে যাবেন না পিসি?
-‘ঘুরতে গেলে আবার মার্কেটও করা লাগে না কী পৃথিলা?
-‘তো কী? শুধু ওই ব্যাকডেটেট শাড়ি পরেই ঘুরে বেড়াবেন না কী? দেখা গেল সমুদ্রে নামলেন তীব্র বাতাসে আপনার শাড়ি খুলে গেল। তখন কী হবে? আমি তো শার্ট, জিন্স, গাউন, প্লাজোসহ অনেককিছু কিনব।
পিসি ব্যাগ থেকে দশহাজার টাকা বের করে পৃথিলার হাতে ধরিয়ে দিল। বলল,
-‘এই নাও টাকা। তুমি যা যা কিনো, আমার জন্যও কিনে আনবা কিন্তু?
-‘আচ্ছা।

হানিমুনে যাওয়ার দিন , ঋষি, পিসি, পিসেমশাইয়ের সাজপোশাক দেখে মাথায় হাত দিল। বুড়ো, বুড়ি দুইটারে ভীমরতিতে ধরেছে। একজন শার্ট, প্যান্ট, আবার মাথায় টুপিও পরেছে। আরেকজন জিন্সের সাথে লম্বা টপস পরেছে। ঠোঁটে কড়া করে লিপস্টিক নিয়েছে। চোখে কালো সানগ্লাস। পুরাই সং। দুইটারেই সবাই অদ্ভুত চোখে দেখছে। পৃথিলা নীচু কণ্ঠে বলল,
-‘কী বুঝলা?
-‘পুরাই রোমিও, জুলিয়েট।
পিসি বাসের সামনে দাঁড়িয়ে পিসেমশাইকে বলল,
-‘ বেবি আসো একটা সেলফি নেই?
পিসেমশাই, পিসির কাঁধ জড়িয়ে ধরে স্টাইল করে দাঁড়াল। পরপর কয়েকটা ক্লিক করে পিসি ক্লান্ত হয়ে ঋষির সিটে পৃথিলার পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পরল। বলল,
-‘ছবিগুলা এডিটিং ফিডিটিং কইরা আমার আইডিতে পোস্ট কইরা দাও তো?
ঋষি বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘আমি কোথায় বসব?
-‘ তুই পিসেমশাইয়ের কাছে গিয়ে বয়? এখন পৃথিলার কাছ থেকে আমি ছবি দিয়ে ভিডিও বানানো শিখমু। কক্সবাজারে গিয়া তো আর তোদের যখন তখন বিরক্ত করা যাইবো না। এখুনি শিখা রাখা ভাল।
নেহাৎ বাসের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে, ঋষি কিছু বলল না। তবে মনে মনে পিসির গুষ্টি উদ্ধার করল। বেকার হওয়ার এই এক জ্বালা। ধেৎ ভাল লাগে না।

ঋষির তন্দ্রা ভাব এসে গিয়েছিল। পিসি গুঁতো মারতেই হুড়মুড় করে উঠল। ভীতু কণ্ঠে বলল,
-‘কী হয়েছে…কী হয়েছে?
-‘বাস থামাতে বল?
-‘কেন?
-‘আমি একটু বাইরে যামু।
-‘বাইরে গিয়ে কী করবা তুমি?
ফুলপিসি চাপা কণ্ঠে বলল,
-‘গাধার বাচ্চা। কী করুম তুই বুঝোস না? হিসু করুম। যা শিগগিরই?
-‘আচ্ছা তুমি বসো। দেখছি কী করা যায়।
-‘দেখার সময় নাই রে ঋষি। তাড়াতাড়ি কর? অনেকক্ষণ আটকে রাখছি। আর সম্ভব না।

ঋষি উঠে গেল। একটা তেলের পাম্পে বাস থামাতেই পিসিকে নিয়ে বাস থেকে নেমে গেল। পিসি বাথরুম থেকে বের হয়ে পেটে হাত রেখে বলল,
-‘আহ..কী শান্তি।

ঘণ্টাখানেক পর, বাস একটা হোটেলের সামনে পনেরো মিনিটের বিরতি নিয়ে থামলো। পিসিরা হোটেলে বসে ভরপেট খেল। পিসি বাথরুমে যাওয়ার সময় দেখল, একটা চার বছরের বাবুকে তার মা বেসিনের উপরে উঁচু করে ধরে হাগু করাচ্ছে। পিসি সেই দৃশ্য দেখে বমি করে ভাসাল। রাগে কটমট করতে করতে বলল,
-‘এই মহিলা আপনার কোন কমনসেন্স নাই? এতবড় বাচ্চাকে বেসিনে হাগু করায় কেউ?
-‘তাতে আপনার কী সমস্যা?
-‘আবার বলেন আমার কী সমস্যা! তিনশো টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাইছি। দশ মিনিটও হয়নি। এই দৃশ্য দেখে সব খাবার যে বমি করে ফেলে দিলাম। এর ক্ষতিপূরণ কে দিবো এখন? এই আমার তিনশো টাকা ফেরত দেন?
-‘আজব তো! আমি কেন আপনাকে টাকা দেব? পাগল না কী আপনি?
-‘তোর চৌদ্দগুষ্ঠী পাগল। তুই কেন বেসিনে হাগু করালি বল?
-‘ভদ্রভাবে কথা বলেন!
-‘তুমি অভদ্র কাজকর্ম করে আমাকে বমি করাবা আর আমি তোমার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলব? দাঁড়া হোটেলের স্টাফদের ডেকে নিয়ে আসি।
অল্প সময়ে বেশ ভীড় জমে গেল।
ঋষি খুঁজতে খুঁজতে লেডিস্ বাথরুমের সামনে এসে পিসিকে পেল। কার সাথে যেন কোমড়ে হাত রেখে ঝগড়া করছে।
ঋষি বলল,
-‘কী হয়েছে?
-‘দ্যাখ না ঋষি। এই মহিলা ওতবড় বাচ্চাকে বেসিনে হাগু করাচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করতেই আমার সাথে ঝগড়া বাঁধিয়ে নিল।
-‘চলো পিসি? বাস ছাড়ার সময় হয়েছে।
-‘ছাড়ুক বাস। আমি তো তিনশো টাকা না নিয়ে কিছুতেই যাব না।
-‘কিসের তিনশো টাকা?
-‘বাহ্..রে ওনার বাচ্চার গু দেখে যে আমি বমি করলাম।
ঋষি পিসির হাত টেনে ধরে বলল,
-‘পিসি চলো তো। আমি তোমাকে খাবার কিনে দেব।
পিসি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল।
ঋষি খাবারের পার্সেল নিয়ে বাসে উঠে বসতেই বাস ছেড়ে দিল।

অবশেষে ওরা গন্তব্যে এসে পৌঁছাল। একটা বিলাসবহুল রিসোর্টে পাশাপাশি দুটো রুম বুকিং দেওয়া ছিল। ঋষি রুমে ঢোকার সময় চট করে পৃথিলাকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে ঢুকে গেল। সেই দৃশ্য ফুলপিসি গালে হাত রেখে বড় বড় চোখে তাকিয়ে দেখল। পিসেমশাই রুমে ঢোকার সময় ফুলপিসি পেছন থেকে কাঁধ চেপে ধরল। অনিলবাবু বলল,
-‘কী হলো?
ফুলপিসি ঢঙ করে বলল,
-‘আমাকেও কোলে নিয়ে রুমে ঢুকো?
-‘অসম্ভব।
ফুলপিসি জেদী কণ্ঠে বলল,
-‘কোলে না নিলে তো আমি রুমেই যামু না। এখানেই থাকুম।
-‘কেন জেদ করছো ফুলি? আমার বয়স হয়েছে। তোমার যে ওজন। এখন তোমাকে কোলে নিতে গেলেই আমার দম বের হয়ে যাইবো।
-‘যাক। তবুও আমাকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকতে হইবো। তুমি যদি না পারো! আমি কিন্তু অন্যকারো কোলে চেপে রুমে যামু ?
পিসেমশাই রিস্ক নিল না। তার বউকে বিশ্বাস নেই। সত্যি সত্যিই যদি কারো কোলে চেপে বসে। সর্বনাশ হয়ে যাবে। পিসেমশাই এই ময়দার বস্তাকে বহুকষ্টে কোলে তুলে নিল। ইশ, জানটা বোধহয় এবার ভেতর থেকে বেড়িয়ে যেতে চাচ্ছে!

(চলবে)