#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৪০
#নিশাত_জাহান_নিশি
আপনাকে দেখাটা আমার কাছে কঠিন কিছু নয়! যাই হোক, ক্লাসে বসে বসে ঘুমুচ্ছিলেন কেন? রাতে কী চোর পাহারা দিয়েছিলেন?”
রূপলের কথায় নীহারিকারি ভীমড়ি খেয়ে উঠল। কোমরে হাত গুজে সে রূপলের অনেকটা কাছে চলে এলো! ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ ওঠা নামা করিয়ে সে রূপলের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“তার মানে আপনি আমাকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন তাইনা? যাকে বলে সূক্ষ্ণ দৃষ্টি! আমাকে ওভাবে কেন দেখছিলেন বলুন?”
পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করল রূপল! প্রসঙ্গ পাল্টাতে তৎপর হয়ে উঠল। থতমতানো অবস্থা থেকে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। নীহারিকাকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে সে ব্যগ্র হেসে নীহারিকার নাকের ডগায় একটু করে তার ডান হাতের তর্জনী আঙুলটি ছুঁয়ালো! ধীর গলায় বলল,
“লিসেন মিস নীহারিকা? আমার এত ফা’ল’তু সময় নেই কারো দিকে ওভাবে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকানোর! নেহাতই কোনোভাবে ঐদিকে আমার নজর পরে গিয়েছিল। দেট’স ইট।”
নীহারিকার নাক থেকে আঙুলটি সরিয়ে রূপল আঙুলটি তার শার্টের কাপড়ে বেশ ভালোভাবে মুছল! মনে হলো যেন আঙুলটি নোংরা হয়ে গেল তার! রূপলের এসব অস্বাভাবিক কাণ্ডকারখানা দেখে নীহারিকা নাক ফুলিয়ে রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল! নীহারিকার রাগকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে রূপল ভাবশূণ্য গলায় নীহারিকার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,
“বাই দ্যা ওয়ে। আপনি ক্লাসে থেকে আমাকে ওভাবে টুকুর টুকুর দেখছিলেন কেন? ক্লাস বাঙ করেও আবার বের হয়ে এলেন। কাহিনী কী?”
রূপলের প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে নীহারিকা পাল্টা রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আগে আপনি বলুন মেয়েটি কে ছিল?”
“আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন!”
“নাহ্! আপনি আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন!”
“আমি আপনার সাথে ঝগড়া করতে এখানে আসিনি!”
“ঝগড়া তো আপনি বাড়াচ্ছেন। সোজাসাপটা বলে দিলেই তো হয় মেয়েটি কে হয় আপনার।”
“কেন? মেয়েটিকে নিয়ে আপনার এত কিউরিসিটি কেন?”
মিথ্যের আশ্রয় নিলো নীহারিকা! বেশ ভাবসাব নিয়ে বুকের উপর হাত গুজে দাড়ালো। নাক টেনে বলল,
“আমার ফ্রেন্ড জিজ্ঞেস করল তাই!”
বোকা বনে গেল রূপল! নির্বোধ গলায় বলল,
“আপনার ফ্রেন্ড? কী জিজ্ঞেস করল?”
“জিজ্ঞেস করল আপনি সিঙেল কী-না! মেয়েটি কে হয় আপনার! হয়ত আপনাকে লাইন টাইন মারতে চায়।”
হু হা করে হেসে দিলো রূপল! নীহারিকার বানোয়াট কথায় একরত্তিও বিশ্বাস করলনা সে! শার্টের কলারটা ঠিক করে সে নীহারিকার দিকে আচ্ছন্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। প্রশ্ন ছুড়ল,
“ওহ্ রিয়েলি? এরপর আপনি কী বললেন?”
রূপলের হাসি দেখে রাগে নীহারিকার রাগে গাঁ রি রি করে উঠল! ক্ষেপে গিয়ে সে তটস্থ গলায় রূপলকে বলল,
“আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা আপনার?”
“বিশ্বাস হবেনা কেন? অবশ্যই হয়েছে! আমার ফোন নাম্বারটা তাকে দিয়ে এলেন না কেন? আপনি কী চান না আমার প্রেম হোক?”
“আর কয়টার সাথে প্রেম করবেন আপনি? একটু আগেও তো একটার সাথে এখানে দাড়িয়ে প্রেম করছিলেন! বেডা মানুষ!”
রূপলের উপর বেশ তেজ দেখিয়ে নীহারিকা জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! মিচকে হেসে রূপল নীহারিকার পিছু নিলো! নীহারিকার পাশাপাশি হেঁটে সে মজার ছলে নীহারিকাকে বলল,
“এই বি’য়া’দ’ব বেডি? কথা না শুনেই কোথায় যাচ্ছেন?”
“ক্লাস আছে আমি ক্লাসে যাব। খবরদার আমার পিছু নিবেন না!”
“আপনার পিছু নেওয়ার কোনো ইন্টারেস্ট নেই আমার! এমনিতেও আমার অনেকটা দেরি হয়ে যাচ্ছে। হৃদিকে স্কুল থেকে পিক করতে হবে। বাই দ্যা ওয়ে, ঐ মেয়েটি আমার ছোটো বোনের মত। ফোর্থ ইয়ারে ভর্তি সম্পর্কিত ব্যাপারে তাকে কিছু সমস্যার মুখে পরতে হয়েছে। সেই জন্যই আমার কাছে তার হেল্প চাওয়া। আমিও কলেজে একটা দরকারে এসেছিলাম। ভাবলাম কলেজেই যেহেতু এসেছি মেয়েটার সমস্যাগুলোও শুনে যাই।”
স্বস্তি পেল নীহারিকা। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল রূপল তার পাশে নেই! হতভম্ব হয়ে নীহারিকা পেছনে তাকাতেই দেখল রূপল অলরেডি কলেজ থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। নিজের প্রতি বিরক্ত হলো নীহারিকা। হাপিত্যেশ করে বলল,
“ধ্যাত! আমার কথায় কী কষ্ট পেল লোকটা? বিদায় না নিয়েই হুট করে চলে গেল। আমার হয়ত উনাকে এভাবে জেরা করাটা ঠিক হয়নি! বাড়াবাড়ি করে ফেললাম আমি।”
বিষণ্ন মন নিয়ে নীহারিকা ক্লাস চলাকালীন সময়ে ক্লাসের ভেতর ঢুকে গেল। ক্লাসও প্রায় শেষ হওয়ার পথে। দশ কী পনেরো মিনিট বাকী আছে। তুলির পাশে চুপটি করে বসল নীহারিকা। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তুলি নীহারিকার দিকে তাকালো। ক্লাসে থাকা ম্যামকে আড়াল করে সে নীহারিকাকে মৃদু ধাক্কা দিলো। মিনমিনে গলায় বলল,
“কী রে? চলে এলি যে?”
“তো কী করব ওখানে দাড়িয়ে থেকে? রোদে শুকিয়ে কাঠ হব?”
“এভাবে কথা বলছিস কেন? মনে হচ্ছে রেগে আছিস?”
“না। হঠাৎ রাগ করব কেন?”
“আচ্ছা একটা সত্যি কথা বল তো?”
“কী সত্যি?”
“তুই কী তোর বেয়াইকে পছন্দ করিস?”
ঝট করে তুলির দিকে শিথিল দৃষ্টিতে তাকালো নীহারিকা। পরক্ষণে কী ভেবে যেন সেই শিথিল দৃষ্টিতে রুক্ষতা নেমে এলো! তুলির থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সে ক্লাসে মনোযোগ দিলো। অকপটে গলায় বলল,
“এসব ফা’ল’তু কথা বাদ দিয়ে ক্লাসে মনোযোগ দে!”
নীহারিকার অস্বাভাবিক আচরণে অবাক হলো তুলি। তবে এই মুহূর্তে নীহারিকাকে ঘাটাতে চাইল না সে। নীহারিকার কথামত ক্লাসে মনোযোগ দিলো।
___________________________________
হৃদিকে স্কুল থেকে পিক করল রূপল। দু’হাত দ্বারা হৃদি শক্ত বাঁধনে রূপলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে রাখল। বাইক মোটামুটি ধীর গতিতেই চালাচ্ছে রূপল। তবুও যেন হৃদির ভয় কমছেনা। বুক কাঁপছে তার। বিষয়টায় বেশ অবাক হলো রূপল। বিশেষ করে হৃদির হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে যাওয়াটা। ইদানিং হৃদি বেশ চুপচাপ হয়ে গেছে। আর এই বিষয়টাই রূপলকে বেশ ভাবাচ্ছে। হৃদি তো আগে এমন ছিলনা। খুব দুষ্টু, চঞ্চল, বাচাল প্রকৃতির ছিল। তবে হুট করেই তার এত পরিবর্তন কেন? তাই বিষয়টাকে এবার রূপল সিরিয়াসলি নিতে বাধ্য হলো। হৃদির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সে গলা ঝাকালো। ধীর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“হেই হৃদি? তুমি কী কোনো কারণে আপসেট?”
“না তো বাবা। কেন?”
“বাবাদের সাথে মিথ্যে বলতে নেই তুমি জানো না?”
“সত্যি বলছি বাবা। আমার মন একটুও খারাপ না।”
“তাহলে মনমরা হয়ে বসে আছো যে? বাবার কাছ থেকে কিছু লুকোচ্ছ তুমি?”
“কী লুকাবো বাবা?”
“আচ্ছা বাদ দাও। গত দুইদিন ধরে তুমি স্কুলে যাওনি কেন? তোমার মাকে অনেকবার কল করেছিলাম তোমার মা ও কলটা তুলছিল না। সময়ের অভাবে আমিও তোমাদের বাড়িতে যেতে পারিনি। তোমার মা ঠিক আছে তো?”
“ঠিক আছে বাবা। তবে আমি কিছুটা অসুস্থ ছিলাম।”
“সরি মা। ব্যস্ততার জন্য বাবা তোমার সাথে দেখা করতে যেতে পারিনি।”
“ইট’স ওকে বাবা। তুমিতো আমার আপন বাবা নও যে সবসময় আমার খোঁজ খবর রাখবে! আমার আপন বাবা তো আমাকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গেছে! এখন পৃথিবীতে আমার মা ছাড়া আর কেউ নেই!”
সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তার পাশ ঘেঁষে বাইকটি থামিয়ে দিলো রূপল! বাইক থেকে নেমে সে ঝট করে হৃদিকে কোলে তুলে নিলো। হৃদির প্রতি রক্তের টান অনুভব হলো তার। আবেগপ্রবণ হয়ে সে হৃদির মাথায় চুমু খেলো। ভরাট গলায় বলল,
“কে বলল তোমার বাবা নেই? তোমার বাবা তো জীবিত আছে মা। তোমার শুধু একটা বাবা নয় মা। দুই দুইটা বাবা! প্রথম জন হলো তোমার জন্মদাতা। দ্বিতীয় জন তোমার রূপল বাবা।”
রূপলের আদর পেয়ে অঝরে কেঁদে দিলো হৃদি! রূপলকে শক্তভাবে আলিঙ্গন করে বলল,
“কতদিন হলো বাবাকে দেখিনা। বাবা কেন আমার কাছে আসছেনা? মাকে জিজ্ঞেস করলে মা বলে তোর বাপ ম’রে গেছে! মা কেন বলে আমার বাবা ম’রে গেছে?”
সবিতার প্রতি রূপলের বেশ রাগ জন্ম নিলেও হৃদির সামনে তা প্রকাশ করলনা। হৃদিকে শান্তনা দিয়ে সে কোমল গলায় হৃদিকে বলল,
“সবিতা কী তোমাকে মারধর করে মা?”
“না। তবে বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই বলে তোর বাপ ম’রে গেছে!”
“মায়ের কথা কানে তুলতে হবেনা তোমার! রূপল বাবা যা বলছি তাই সত্যি। তোমার বাবা সত্যিই জীবিত আছে। সময় হলে একদিন তোমার বাবার সাথে তোমাকে দেখা করাতে নিয়ে যাব আমি। একদম কাঁদবেনা তুমি।”
হৃদির মন ভালো করার জন্য রূপল আজ সারাটা দিন হৃদিকে নিয়ে বাইকে করে ঘুরে বেড়ালো। হৃদির পছন্দের জায়গাগুলোতেও ঘুরে বেড়ালো। হৃদির পছন্দের আইসক্রীম, চকলেট, বার্গার, হাওয়াই মিঠাই সব খাওয়ালো। বিকেলের দিকে সে হৃদিকে নিয়ে তার বাড়িতে উঠলো। সবিতা অনেকবার কল করার পরেও সে কলটি তুললনা! ইচ্ছে করেই সবিতাকে টেনশানে রাখল। সবিতা তার কথা না শুনেই হৃদিকে নিয়ে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল! হৃদিকেও জোর করে রাখতে পারেনি রূপল। সবিতার পিছু পিছু চলে গিয়েছিল। সেই ক্ষোভ থেকে রূপল এখন সবিতার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে! কোনো কারণ ছাড়া সবিতার সাথে যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন মনে করেনা।
হৃদিকে নিয়ে রূপল বাড়ির ড্রইংরুমে ঢুকল। ক্লান্ত হয়ে রূপল এবং হৃদি সোফার উপর পিঠ ঠেকাতেই নাজনীন বেগম তরতরিয়ে হেঁটে এলেন রূপলের কাছে। হৃদিকে দেখে তিনি না চাইতেও মায়ায় পরে গেলেন! আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি হৃদিকে টেনে কোলে তুলে নিলেন। হৃদির কপালে কয়েকটা চুমু খেয়ে আহ্লাদি গলায় বললেন,
“ভালো আছো দাদু?”
উচ্ছ্বল হেসে হৃদি প্রত্যত্তুরে তার দাদিকে বলল,
“ভালো আছি দাদি। তুমি কেমন আছো?”
“ভালো আছি।”
“খেয়েছ দুপুরে?”
“হুম। আজ রূপল বাবা আমাকে আমার সব পছন্দের খাবার খাইয়েছে দাদি!”
“বাহ্। বেশ ভালো তো।”
হৃদির থেকে মনোযোগ সরিয়ে নাজনীন বেগম এবার রূপলের দিকে মনোযোগ দিলেন। রূপলের পাশে বসে তিনি চিন্তিত গলায় রূপলকে বললেন,
“জানিস তুই কাল কী হয়েছিল?”
ক্লান্ত গলায় রূপল তার মাকে বলল,
“না বললে জানব কীভাবে মা?”
“নিহাল পিয়াসার গাঁয়ে হাত তুলেছে!”
নাজনীন বেগম ভেবেছিলেন কথাটা শুনে রূপল হয়ত বেশ তেতে উঠবে! ক্ষিপ্ত হয়ে এখনি নিহালদের বাড়িতে ছুটে যাবে! আজ এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে। কিন্তু না, তার কিছুই হলো না। বিষয়টাকে রূপল গাঁয়েই মাখল না। বরং সোফায় মাথা রেখে সে বেশ স্বাভাবিক গলায় তার মাকে বলল,
“তো এখানে এত হাইপার হওয়ার কী আছে মা? এটা তো নরমাল বিষয়। হাসবেন্ডই তো গাঁয়ে হাত তুলেছে অন্য কেউ তো তুলেনি!”
#চলবে…?
#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৪১
#নিশাত_জাহান_নিশি
“তো এখানে এত হাইপার হওয়ার কী আছে মা? এটা তো নরমাল বিষয়। হাসবেন্ডই তো গাঁয়ে হাত তুলেছে অন্য কেউ তো তুলেনি!”
রূপলের গাঁ ছাড়া কথায় অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেলেন নাজনীন বেগম। পূর্বের তুলনায় অধিক রুষ্ট হয়ে তিনি কঠোর গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“তোর কাছে কী বিষয়টা নরমাল মনে হলো?”
সোফা থেকে মাথা তুলল রূপল। তার মায়ের দিকে ঈষৎ রূঢ় দৃষ্টিতে তাকালো। গাম্ভীর্যপূর্ণ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“অভেয়সলি! অন্যায় দেখলে হাসবেন্ড তার ওয়াইফের গাঁয়ে হাত তুলতেই পারে। এখানে আমি ওভার রিয়েক্ট করার মত কিছু দেখলাম না মা।”
ঘামে সিক্ত শরীর নিয়ে রূপল বসা থেকে ওঠে গেল। অস্থির হয়ে সে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে তার রুমের দিকে গতিপথ নির্ধারণ করল। গরমে অধৈর্য হয়ে বলল,
“ইশশ কী গরম পরল রে। গাঁয়ের চামড়া ঝলসে গেল। এখনি শাওয়ার নিতে হবে।”
ঐদিকে রাগে ফোঁসতে লাগলেন নাজনীন বেগম! হৃদিকে কোল থেকে নামিয়ে তিনি হনহনিয়ে রূপলের পিছু নিলেন। রূপলকে উদ্দেশ্য করে তটস্থ গলায় বললেন,
“সুহাসিনীর শোকে শোকে কী তুই পাথর হয়ে গেলি রে? এত আদরের বোন তোর। যে বোনের গাঁয়ে তুই কখনও আঁচড় লাগতে দিসনি সেই বোনের এই দুর্দিনে তুই তাকে অবহেলা করছিস?”
নাজনীন বেগমের আলুথালু কথায় অবাক হলো রূপল। পিছু ঘুরে সে নির্বোধ দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকালো। ভ্রু যুগল কুঁচকে হঠকারি গলায় বলল,
“তুমি কী বললে মা? আমি পাথর হয়ে গেছি? ভাই হয়ে বোনকে অবহেলা করছি? নাও ইউ টেল মি, তোমার মেয়ের কী এমন দুর্দিন নেমে এলো যে তার পাশে আমাকে থাকতে হবে?”
“একটা পরের ঘরের ছেলে তোর বোনের গাঁয়ে হাত তুলেছে রূপল! তোর বোনের জীবনে এরচেয়ে বড়ো আর কী দুর্দিন আসতে পারে?”
“মা প্লিজ। তোমার মত একজন সংসারী মহিলার মুখে এসব বিবেকহীন কথা মানায় না। অন্যায় না দেখলে কেউ কারো গাঁয়ে হাত তুলেনা। মনে মনে কিন্তু তুমিও জানো মা, তোমার মেয়ে খুব বেশী একটা সুবিধার না! মনে আছে বিয়ের দিনের কথা? কী কেলেঙ্কারিটা করেছিল সে? এইতো সেদিনও তোমার মেয়ে অবান্তর বাহানা ধরল শ্বশুর বাড়িতে যাবেনা সে! পরে আমি মারধর করে একপ্রকার জোর করে তাকে ঐ বাড়িতে রেখে আসলাম! এমন ছেলেমানুষী করলে তার সংসার টিকবে কী করে মা? আর তুমি কী-না তাকে সংসার জীবনের এই বাস্তবিক দিকগুলো না বুঝিয়ে উল্টো তাকে ইন্ধন দিচ্ছ? তাহলে তোমার থেকে তোমার মেয়ে কী শিক্ষা পাবে মা? সংসার ভাঙার শিক্ষা?”
রূপলের উচিৎ কথাগুলো মোটেও পছন্দ হলোনা নাজনীন বেগমের! অকপট দৃষ্টিতে তিনি রূপলের দিকে তাকালেন। খরতর গলায় বললেন,
“তুই ভাই হয়ে যখন বোনের দিকটা ভেবে দেখছিস না তখন বাইরের ছেলে আর কী ভাববে? জানিনা সুহাসিনী তোকে কী যাদু করে গেছে! কোন জগতে আছিস তুই।”
হাইপার হয়ে গেল রূপল! না চাইতেও সে রূঢ় ব্যবহার করতে বাধ্য হলো তার মায়ের সাথে। ধমকের স্বরে তার মাকে বলল,
“মা প্লিজ। মৃত ব্যক্তিকে আমাদের মাঝখানে টেনে এনো না। আর তাছাড়া আমি যা বলছি সব বাস্তবিক চিন্তাধারা থেকে বলছি। বরং তুমি যা বলছ সব নিছক আবেগী চিন্তাধারা থেকে বলছ! মানছি মা হিসেবে মেয়ের প্রতি সহানুভূতি তোমার বেশীই কাজ করবে, কিন্তু নিজের আবেগকে এতটাও প্রশ্রয় দিওনা যে এতে করে তোমার মেয়ের সর্বনাশ হয়! তাছাড়া জিজু খুবই ভালো মনের মানুষ। শুধু জিজু কেন বলছি? পিয়াসার শ্বশুর বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ ভীষণ আন্তরিক। এত সরল মনের মানুষদের সাথে যদি তোমার মেয়ে মানিয়ে চলতে না পারে সরি টু সে আমি বলব, তোমার মেয়ে পৃথিবীর কোথাও কারো সাথে সংসার করতে পারবেনা! আর কাইন্ডলি এই বিষয় গুলো তুমি তোমার মেয়েকে বুঝিয়ে দিও। আমি বুুঝাতে গেলে হয়ত গাঁয়ে হাত ওঠে যাবে!”
“আমার মেয়ে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে নিহাল প্রয়োজনে তাকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে দিত এতে কাজ না হলে আমাদের কাছে নালিশ করতে পারত। কিন্তু তা না করে সে কোনো সাহসে আমার মেয়ের গাঁয়ে হাত তুলে?”
“একই কথা বার বার রিপিট করতে আমার ভালো লাগেনা মা! তোমার মেয়ে কী এতই সোজা যে তাকে ভালোভাবে বুঝালে সে বুঝবে? নিশ্চয়ই ঘাড়ত্যাড়ামো করেছে কিংবা বাড়াবাড়ি কিছু করেছে তাই হয়ত জিজু গাঁয়ে হাত তুলতে বাধ্য হয়েছে। তাছাড়া জিজু তার গাঁয়ে হাত না তুলে যদি তাদের ফ্যামিলির অন্য কেউ তুলত তাহলে না হয় বিষয়টা আমাদের গাঁয়ে লাগালে মানাত! কিন্তু এখানে স্বামী হাত তুলেছে স্ত্রীর গাঁয়ে। এখানে আমাদের আর কী বলার থাকতে পারে মা? একটা কথা সবসসয় মাথায় রাখবে মা। বিয়ের পর মেয়েরা পর হয়ে যায়! তখন তাদের জগতটাও আলাদা হয়ে যায়। স্বামী, সংসার, শ্বশুর বাড়ি হয়। আর তখন মেয়ের সংসারে নাক গলানোটা তোমার বাড়াবাড়ি হয়ে যায়! বিবেকহীনতার কাজ মনে হয়! আর একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, তোমার মেয়ের বুদ্ধি খুবই কম! যদি তার মাথায় মিনিমাম বুদ্ধি বলে কিছু থাকত। তাহলে চড় খাওয়ার বিষয়টা লজ্জায় কাউকে জানাত না! এই বিষয়টা নিয়ে তুমি আর প্লিজ আমার কানের কাছে আর ঘ্যান ঘ্যান করো না। এমনিতেই গরমে অসহ্য লাগছে তার উপর তোমার এই ভাঙা রেকর্ড।”
হৃদিকে কোলে নিয়ে রূপল জায়গা ত্যাগ করল! নাজনীন বেগম হতবাক দৃষ্টিতে তার ছেলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন। উদাসীন হয়ে মিনমিনে গলায় বললেন,
“আমার ছেলে আমাকে এসব কী বলে গেল? মা বোন কাউকেই ছাড় দিলোনা? তবে কী এই দিন দেখার জন্য ছেলেকে মানুষ করেছিলাম আমি? গুরুজনদের মুখে শুনি বিয়ের পর না-কী ছেলেরা পাল্টে যায়! এখন তো দেখছি বিয়ের আগেই আমার ছেলে পাল্টে গেছে!”
হৃদিকে ফ্রেশ করিয়ে রূপল তার ফোনটা দিয়ে হৃদিকে বিছানায় বসিয়ে রাখল। সেই ফাঁকে রূপল ও তার শাওয়ারটা সেরে নিলো। ভেজা শরীর নিয়ে রূপল টাওয়াল দিয়ে মাথাটা মুছতে মুছতে হৃদির হাত থেকে ফোনটা নিলো। হৃদি এতে রেগে গেল! কারণ তার গেইম খেলায় ব্যাঘাত ঘটল। বিষয়টা বুঝতে পেরে রূপল কোমল গলায় হৃদিকে বুঝিয়ে বলল,
“ফোনে একটু কাজ আছে মা। জাস্ট ফাইভ মিনিটস এর জন্য ফোনটা নিলাম ওকে?”
নাক ফুলিয়ে হৃদি বুকের উপর দু’হাত গুজে বলল,
“ওকে। তবে কিন্তু শুধু ফাইভ মিনিটসই। এর বেশী নয়।”
“ওকে বাবা। তুমি কাউন্ট করো।”
হৃদির সাথে মৃদু হেসে রূপল ফোনটা নিয়ে বারান্দায় গেল। খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভেবেচিন্তে সে নিহালের নাম্বারে কল করল! প্রথম কলটি বেজে উঠতেই নিহাল ব্যস্ততা কাটিয়ে কলটি তুলল। সৌজন্যতার হাসি দিয়ে বলল,
“হ্যা রূপল বলো? কেমন আছো?”
বিনিময়ে রূপলও ভদ্র গলায় জবাবে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি জিজু। আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তো কী করো? হঠাৎ কী মনে করে জিজুকে কল করা?”
“না মানে এমনি জিজু। ভাবলাম আপনার একটু খবর নিই।”
“আমি হয়ত বুঝতে পেরেছি রূপল তুমি হঠাৎ কেন আমায় কল করলে!”
“বুদ্ধিমানদের জন্য ইশারাই যথেষ্ট জিজু! আমি জানি আপনিই পারবেন আমার ঘ্যাড়ত্যাড়া বোনটাকে সোজা করতে! এবার তাকে মেরে ধরে যেভাবে পারেন সেভাবেই সোজা করেন। সেক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই!”
“তুমি আমার ধারণাই বদলে দিলে রূপল! আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে শাসানোর জন্য কল করেছ। এখন দেখছি হলো এর উল্টোটা। তুমি সত্যিই অন্য ধাতের মানুষ রূপল। তোমাকে শালা হিসেবে পেয়ে আমি প্রাউড ফিল করছি।”
“উঁহু। বরং আমি আপনাকে জিজু হিসেবে পেয়ে প্রাউড ফিল করছি। আমি সবসময়ই ফিল করি আমার বোন আপনার কাছেই সেইফ! আমি এবং আমার পরিবার সঠিক ছেলের হাতেই আমার বোনকে তুলে দিয়েছি। আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়ত এতদিনে আমার বোনের সংসারটা ভেঙে যেত! আপনি আমার বোনকে সহ্য করছেন বলেই সংসারটা আজও টিকে আছে। আশা করি, গোটা জীবনটাও এভাবে কেটে যাবে। আপনি যত পারেন তাকে শাসন করুন জিজু। এই বিষয়ে আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই! আর এই কথাটা আপনাকে বলার জন্যই কলটা করা।”
“তোমার কথায় স্বস্তি পেলাম রূপল। সকাল থেকেই বেশ চিন্তিত ছিলাম তোমার পরিবারের রিয়েকশন কী হবে ভেবে! ভয়ে ভয়ে ছিলাম মারধরের বিষয়টা শোনার পর তোমার যদি পিয়াসাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নাও! কিন্তু এখন মনে হলো, না আমাকে সঠিক বিষয়টাতে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তোমরা আমার পাশে আছো!”
“অল দ্যা বেস্ট জিজু! আপনি এগিয়ে যান। আমরা আপনার পেছনে আছি।”
অমনি হৃদি ফোন নেওয়ার জন্য কান্নাকাটি জুড়ে দিলো! সম্পূর্ণ কথা শেষ না করেই রূপল বাধ্য হলো তার ফোনটা হৃদিকে দিতে। গরমের তাড়নায় গাঁয়ে শার্ট জাতীয় কিছু পরেনি রূপল! খালি গাঁয়ে সে সোজা রান্নাঘরে চলে গেল। হঠাৎ লেবুর শরবত খেতে খুব ইচ্ছে হলো তার। সাথে বরফের টুকরো। এই কাঠ ফাটা গরমের জন্য এটাই বেস্ট। যদিও রান্নাঘরে তেমন আসা হয়না তার। কিছু বানানোর জন্য তো একদমই না। তবে এই মুহূর্তে সে তার মাকেও ডাকতে পারছিলনা! কারণ, সে জানে তার মা এখন তার উপর ভীষণ রেগে আছে। এখন শরবত বানিয়ে দেওয়ার কথা বললে তো ঘাড় থেকে তার গর্দান আলাদা করতেও সময় লাগবে না!
লেবু চিপে শরবত বানাতে ব্যস্ত হয়ে গেল রূপল। ঐদিকে হৃদি ফোন টিপতে টিপতে হঠাৎ নীহারিকার হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল দিয়ে ফেলল! প্রথমে ভুলবশত হলেও পরে ইচ্ছেবশত নীহারিকার হোয়াটসঅ্যাপে কল দিতে লাগল। নীহারিকা ঘুম থেকে ওঠে সবেমাত্র ফ্রেশ হতে যাচ্ছিল। এরমধ্যেই রূপলের নাম্বার থেকে ভিডিও কল এসেছে দেখে নীহারিকা তাজ্জব হয়ে গেল! ঘুমের তাড়নায় ভুল দেখছে ভেবে সে কয়েকবার চোখ দুটো কচলালো। তবুও একের পর এক ভিডিও কল আসতে দেখে নীহারিকা চিন্তায় পরে গেল। ভালো করে চোখ মেলে দেখল সত্যিই রূপলের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ভিডিও কল আসছে। ঝট করে মুখে হাত দিয়ে নীহারিকা কলটির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“হুতুম পেঁচাটা আমাকে হঠাৎ কল দিচ্ছে কেন? তাও আবার ভিডিও কল? কী দেখাতে চাইছে আমাকে?”
সারা ঘরময় নীহারিকা পায়চারি করতে করতে ভাবছিল কলটি তুলবে না-কী তুলবেনা। এর আগে তো রূপল কখনও তাকে ভিডিও কল দেয়নি। তাহলে আজ হঠাৎ কেন ভিডিও কল দিলো? কোনো কুমতলব নেই তো তার? এতটুকু ভেবেই নীহারিকা নিজেকে নিজে বকতে শুরু করল! নিজের মাথায় চাপর মেরে বলল,
“ধ্যাত। কী ভাবছি এসব আমি? হয়ত ভাবির সাথে কথা বলার জন্য কল করেছে। তাছাড়া তিনি কুমতলব নিয়ে আমাকে কেন কল করবে? আমি তো তার নজরে আসার ধারে কাছেও না!”
বহু ভেবেচিন্তে নীহারিকা কলটি তুলল! অমনি হৃদির হাসোজ্জল চেহারাটি তার চোখে ভেসে উঠল! হৃদিকে দেখে অবাক হলো নীহারিকা। বিস্মিত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“হৃদি তুমি? কেমন আছো?”
“আরে রাখো তোমার ভালো থাকাথাকি। আগে তুমি দেখো আমার রূপল বাবা মেয়েদের মত কী করছে!”
হৃদির কথা শুনে মুখে হাত চলে গেল নীহারিকার। চোখ দুটো প্রসারিত করে সে কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী করছে তোমার রূপল বাবা?”
“আরে দেখোই না কী করছে। দাঁড়াও আমি ফোনটা বাবার কাছে নিয়ে যাচ্ছি।”
এই বলে হৃদি দৌড়াতে দৌড়াতে রান্নাঘরে সোজা রূপলের কাছে চলে গেল। ব্যাক ক্যামেরায় ফোনটি রূপলের দিকে তাক করে সে চুপটি করে রূপলের থেকে সামান্য দূরত্বে দাঁড়ালো। আর মুখ টিপে মিটিমিটি হাসতে লাগল। তখন লেবু কেটে লেবুর রস চিপছিল রূপল। ভারি ব্যস্ত কাজে। হৃদির উপস্থিতি টের পেয়েও রূপল হৃদির দিকে তাকালো না! ব্যস্ত গলায় হৃদিকে বলল,
“এই গরমে তুমি রান্নাঘরে কী করছ হৃদি? রুমে যাও। এসির নিচে বসো।”
জবাবে হৃদি কিছু বললনা। শুধু মুখ টিপে হাসল। ভিডিও কলে থেকে নীহারিকাও চুপ হয়ে রূপলের কাজকর্ম দেখছিল। রূপলের দিকে তাকাতে তার লজ্জায় চোখ ভেঙে আসছিল! কারণ রূপল খালি গাঁয়ে ছিল! গ্লাসে লেবু এবং চিনি মেশানোর পর রূপল কিছুটা শব্দ করেই বলল,
“একটু লবণ দিলে হয়ত টেস্টটা আরও বাড়বে। লবণের কৌটোটা যেন কোথায়।”
অমনি নীহারিকা মুখ খুলল! রূপলকে উদ্দেশ্য করে ফোনের ঐ পাড় থেকে বলল,
“ঐ তো লবণের কৌটোটা আপনার হাতের কাছে।”
নীহারিকার গলার আওয়াজ পাওয়ামাত্রই রূপল এবার চোখ তুলে সেই আওয়াজের সন্ধান করে হৃদির দিকে তাকাতেই হৃদি হু হা করে হেসে দিলো! বলল,
“নীহারিকা আন্টিকে দেখাচ্ছি তুমি কীভাবে মেয়েদের মত কাজ করছ!”
অমনি রূপল রাগী চোখ নিয়ে হৃদির দিকে তাকালো! চোয়াল উঁচিয়ে সে হৃদির থেকে ফোনটি কেড়ে নিলো! রূপলের কঠিন রূপ দেখে হৃদি ভয়ে কেঁদে দিলো। রান্নাঘর থেকে সে দৌড়ে বের হয়ে গেল। ফোনটি হাতে নিয়ে রূপল ভিডিও কলে থাকা নীহারিকার দিকেও এবার গরম দৃষ্টিতে তাকালো। ঝাঁজালো গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“সিক্স প্যাক ওয়ালা বডি দেখতে খুব ভালো লাগছে? মজা নিচ্ছেন? আরও দেখবেন? প্যান্ট খুলে দিব?”
রূপলের ডানপিটে কথা শুনে রাগে গাঁ রি রি করে উঠল নীহারিকার। ঝগড়া করার প্রস্তুতি নিলো সে! চোখমুখ লাল করে সে খরতর গলায় রূপলকে বলল,
“হেই মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। কাকে কী বলছেন আপনি? আপনার দিকে ফিরে তাকানোরও বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার! শুধু আপনি কেন? পৃথিবীর কোনো ছেলের দিকেই ওরকম নির্লজ্জ ভাবে তাকানোর ইচ্ছে নেই আমার। প্রথমে আপনার দিক থেকেই কলটা এসেছিল। আমি শুধু কলটা রিসিভ করেছিলাম। কে জানত আপনি আগে থেকেই এভাবে উদোম শরীরে দাড়িয়ে থাকবেন?”
“হ্যাঁ ঠিক আছে কলটা আমার দিক থেকে এসেছিল। কিন্তু পরে যখন দেখলেন কলটা আমি নই বরং হৃদি করেছিল অথবা যখন আমাকে উদোম শরীরে দেখলেন তখন কী কলটা কেটে দিতে পারেননি? এতক্ষণ ধরে কলে কেন ছিলেন আপনি? ফ্রিতে খুব এঞ্জয় করছিলেন এম আই রাইট?”
রূপলের সাথে তর্কে জড়ানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হলোনা নীহারিকার! ফট করে সে কলটি কেটে দিলো। শুধু তাই নয় হোয়াটসঅ্যাপ থেকেও রূপলকে ব্লক করে দিলো!
#চলবে…?
[রি-চেইক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৪২
#নিশাত_জাহান_নিশি
রূপলের সাথে তর্কে জড়ানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হলোনা নীহারিকার! ফট করে সে কলটি কেটে দিলো। শুধু তাই নয় হোয়াটসঅ্যাপ থেকেও রূপলকে ব্লক করে দিলো!
নীহারিকা কলটি কেটে দেওয়ার সাথে সাথেই রূপল স্ক্রীণের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো! পরমুহূর্তেই সেই নাজুক হাসি থামিয়ে সে চেহারায় দুষ্টু ভাব এনে ব্যগ্র হেসে বলল,
“ইয়েস, ক্ষেপে গেছে ক্ষেপিটা! নিশ্চয়ই এখন সাপের মত ফনা তুলছে! আরও একটু রাগিয়ে দিই!”
নীহারিকাকে পুনরায় ক্ষেপানোর জন্য রূপল যখন আবারও নীহারিকার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে কল করতে গেল তখনি খেয়াল করল নীহারিকা তাকে অলরেডি হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ব্লক করে দিয়েছে। ফুরফুরা মেজাজ মুহূর্তেই রগচটা হয়ে উঠল রূপলের! চোখ দুটিতে অসম্ভব ক্ষোভের ছায়া নেমে এলো। কপালেও ভাজ পরে গেল তার। দাঁত কিড়মিড়িয়ে সে বলল,
“হোয়াট? সি ব্লকড মি! এত বড়ো সাহস তার?”
এই বলে রূপল তার অন্য সিমটি দিয়ে নীহারিকার নাম্বারে ননস্টপ কল করতে লাগল। নীহারিকাও রাগে ফোঁসফোঁস করে কলটি কাটছিল! কল ঢুকার সাথে সাথেই সে কলটি কেটে দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন সে ওঁৎ পেতে ছিল কখন কলটি আসবে আর সে ছোঁত করে কেটে দিবে। এতে করে রূপল পূর্বের তুলনায় আরও বেশী ক্ষেপে গেল। ফোনটি পাশে রেখে সে গড়গড় করে লেবুর শরবতটুকু খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। তবে মুখ থেকে সেই শরবতটুকু ফেলে দিতেও তার সময় লাগলনা! অতিরিক্ত লবণ কটা হয়ে গেছে শরবতটি। মুখে তুলবার মত নয়! মুখটিকে খরতরভাবে কুঁচকে রূপল বমি করার মত ভাব নিলো। অসহনীয় গলায় বলল,
“ওয়াক। ক্ষেপিটার অভিশাপ লেগেছে হয়ত! নিশ্চয়ই বসে বসে আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে। আমাকে ব্লক করা তাইনা? আজ তার একদিন কী আমার একদিন!”
বলেই রূপল হনহনিয়ে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে তার বেডরুমে চলে গেল। গিয়ে দেখল হৃদি তার রুমে নেই। ড্রইংরুমের দিকে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখল হৃদি তার দাদুর সাথে বসে পুতুল নিয়ে খেলা করছে। পুনরায় রুমে ফিরে এসে রূপল গাঢ় নীল রঙের শার্টটি পরে অগোছালো অবস্থায় রুম থেকে বের হয়ে গেল। রূপলের প্রতি রেগে আছেন বিধায় নাজনীন বেগম জানতে চাইলেন না রূপল কোথায় যাচ্ছে! বরং রূপলকে দেখে তিনি মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলেন। মায়ের রাগ বুঝতে পেরে রূপল যেতে যেতে তার মা লক্ষ্য করে বলল,
“আমি একটু আসছি মা। এলাকার মধ্যেই থাকব।”
প্রত্যত্তুরে হ্যাঁ বা না কিছুই বললেন না নাজনীন বেগম। মুখটা কেবল ফুলিয়ে রাখলেন। রূপলও তার মাকে আর ঘাটালো না। কারণ সে পরিস্থিতি বিগড়াতে চাইলনা। বাইক নিয়ে শো শো বেগে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল সে। তখন চারিদিকে মাগরিবের আযানও পরে গেল। একটু পরেই সন্ধ্যে সাতটা বেজে যাবে। এই মোক্ষম সুযোগ নীহারিকাকে ধরার! কারণ রূপল জানে সন্ধ্যা সাতটায় নীহারিকা তার টিউশনিতে যায়! আর নীহারিকা কোথায় টিউশনি করায় তা ভালোভাবেই জানা আছে তার। সরাসরি বাড়িতে গিয়ে নীহারিকাকে ধরাটা উচিৎ হবে বলে মনে হলোনা রূপলের! এতে বাড়ির লোকজন তাকে এবং নীহারিকাকে অসঙ্গত কারণে ভুল বুঝতে পারে। বোনের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে বোনের সম্মান নষ্ট করতে চায়না সে।
ফ্রেশ হয়ে নীহারিকা তার টিউশনির উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেল। রূপলের বিষয়টা সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল। ব্লক করতে পেরেছে এতেই সে শান্তি। তাই রূপলের অপমানও তার তেমন গাঁয়ে লাগছেনা। রাস্তায় বের হতেই একটি খালি রিকশা পেয়ে গেল নীহারিকা। গাড়িটিতে ওঠে বসল সে। মিনিট দশের মধ্যেই নীহারিকা তার ছাত্রীর বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালো। গাড়িভাড়া চুকিয়ে সে বাড়ির গেইটের ভেতরে ঢুকার পূর্বেই হঠাৎ যেন রূপল কোথা থেকে দৌড়ে এসে গেইটের সামনে দাড়িয়ে নীহারিকাকে আটকে দিলো! অকস্মাৎ রূপলকে দেখে যেন চোখ দুটি কপালে ওঠে গেল নীহারিকার! মুখটা হা করে সে বিস্মিত গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“এই? আপনি এখানে?”
মুখ থেকে সিগারেটের ধোঁয়া বের করে রূপল দ্রুত দু-হাত দিয়ে ধোঁয়াগুলো সরিয়ে দিলো। বাঁ পাশের ভ্রুটি উঁচিয়ে সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। ডানপিটে গলায় শুধালো,
“কেন? ভয় পাচ্ছেন? ভেবেছেন সিক্স প্যাক দেখাতে এসেছি? দেখবেন সিক্স প্যাক? দেখাব?”
রূপলের কথা শুনে দু-কদম পিছিয়ে গেল নীহারিকা। চোখেমুখে রূপলের হিংস্রতা ফুটে উঠছিল। এই প্রথম রূপলকে দেখে নীহারিকা সাংঘাতিক ভয় পেয়ে গেল। শুকনো ঢোঁক গিলতে সে বাধ্য হলো। আমতা আমতা গলায় বলল,
“মামামানে? কীকী বলছেন আপনি?”
নীহারিকা যত পিছিয়ে যেতে লাগল রূপল ততই নীহারিকার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল! আঙুল উঁচিয়ে রূপল সূচালো দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। তেজী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আমাকে ব্লক করলেন কেন? কোন সাহসে আপনি আমাকে ব্লক করেন? হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস?”
যদিও নীহারিকা রূপলের ব্যবহার আচরণে ভয় পাচ্ছিল তবুও সে হিম্মত রাখার যথেষ্ট চেষ্টা করল। বিপদে ঘাবড়ে গেলে বিরোধী দল আরও শক্তি যুগিঢে বসে। তাই ফট করে সে জায়গায় দাড়িয়ে গেল! উল্টো রূপলের দিকে এগিয়ে এসে সে রূপলের একদম মুখোমুখি দাড়ালো। সোজাসাপটা গলায় বলল,
“বেশ করেছি ব্লক করেছি! প্রয়োজনে নতুন সিমটা থেকেও ব্লক করব! আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলেই আমি ব্লক করব। এবার আপনি যেই হোন না কেন আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার!”
রাগ সংযত করতে পারলনা রূপল! তার মুখে মুখে কেউ কথা বলুক তা মোটেও পছন্দ নয় তার। দাঁতে দাঁত চেপে সে ঝাঁজালো গলায় নীহারিকাকে বলল,
“ব্লকটা খুলুন বলছি।”
ঘাড়ত্যাড়ামো করে নীহারিকা বলল,
“না খুলব না!”
রূপল পুনরায় জেদ দেখিয়ে বলল,
“খুলুন বলছি।”
গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে নীহারিকা তার সামনে পরে থাকা চুলগুলি পেছনের দিকে সরিয়ে নিলো। বুকে হাত গুজে এক রোঁখা গলায় বলল,
“খুলব না। এবার আপনি যা ইচ্ছা তা করুন। আমার দেখার বিষয় না।”
শেষবারের মত রূপল নীহারিকাকে শাসিয়ে বলল,
“খুলবেন না তাই তো?”
নীহারিকা তার সিদ্ধান্তে অটল রইল। একগুঁয়ে ভাব নিয়ে বলল,
“না না না। খুলব না। এক কথা আর কত বার বলব?”
“ওকে। এবার আমি যা করব তার জন্য কিন্তু আমি দায়ী থাকব না!”
বলেই রূপল এদিক সেদিক তাকালো। কেউ তাদের দেখছে কী-না তা খেয়াল করল! সুযোগ বুঝে রূপল অবিশ্বাস্যভাবেই নীহারিকার বাঁ গালে টুপ করে চুমু খেয়ে দিলো! রাগে গজগজ করে সে নীহারিকার সামনে থেকে প্রস্থান নিলো! যেতে যেতে তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকা নীহারিকাকে শিথিল গলায় হুমকি দিয়ে বলল,
“আজ থেকে আপনার ঘুম হারাম করার দায়িত্ব আমার! চাইলেও আপনি আমার এই প্রতিশোধ ভুলতে পারবেন না! আমার স্পর্শ ভুলতে পারবেন না। আমি সবসময় আপনার গালে লেগে থাকব! আমাকে উপেক্ষা করা আপনার প্রিয় অসুখ হয়ে দাঁড়াবে।”
পিছু ঘুরে রুপলের দিকে ফিরে তাকানোরও পরিস্থিতিতে রইলনা নীহারিকা! নিস্তব্ধতায় মূর্তমানবী হয়ে রইল৷ কী থেকে কী হয়ে গেল? সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। আদৌতেই কী তার সাথে কল্পনার অতীত কোনো ঘটনা ঘটে গেল? যা তার ভাবনার বাইরে ছিল? রূপল এতক্ষণে বাইক স্টার্ট করে দিলো। নীহারিকার উপর জমে থাকা সমস্ত রাগ সে বাইকের উপর ঝাড়ল! দু-চোখ যেখানে যায় সেখানে হারিয়ে গেল। রেগে গেলে সে নিজেকেই ভয় পেয়ে যায়! হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পড়ানো বাদ দিয়ে নীহারিকা উল্টো পথে হাঁটা ধরল! তার বাড়ির উদ্দেশ্যে। গাল থেকে হাত তার কিছুতেই সরছিল না। নির্বাক, হতবাক, স্তব্ধ সে। এই প্রথম কোনো পুরুষ তার গালে স্পর্শ করল। তাও আবার এত গাঢ় গভীর সেই স্পর্শ! সে চাইলেও যে স্পর্শের কথা ভুলতে পারবেনা। এই অদ্ভুত স্পর্শটি তার সমস্ত অনুভূতি জুড়ে মিশে থাকবে। উদাসীন ভাবে নীহারিকা রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। অমনি মনে হলো সে কারো সাথে একটা ধাক্কা খেলো। হালকা ব্যথা পেলেও সে কোনো উহ্ আহ্ শব্দ করলনা। তেমন কোনো অনুভূতিই হলো না। নীহারিকার সাথে ধাক্কা খাওয়া ব্যক্তিটি বিনিময়ে নীহারিকাকে সরি ও বলল। সেদিকে ফিরেও তাকালো না নীহারিকা। নিজের খেয়ালে ব্যস্ত থেকে সে ইট’স ওকে বলে চলে এলো।
রাত আটটায় বাড়ি ফিরে এলো নীহারিকা। অমনোযোগী হয়ে সে বাড়ির ড্রইংরুমে প্রবেশ করল। সবকিছু থেকে অবিচ্ছিন্ন ভাব তার। ফোনে মারজিনা বেগম তার আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলছিলেন। নীহারিকাকে দেখা মাত্রই তিনি কলটি কেটে নীহারিকার দিকে এগিয়ে এলেন। প্রফুল্ল গলায় বললেন,
“একটা গুড নিউজ আছে।”
গাল থেকে হাত সরিয়ে নীহারিকা নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকালো। অনুভূতিশূণ্য হয়ে শুধালো,
“কী নিউজ?’
“আসছে শুক্রবার নিহাল আর পিয়াসার রিসিপশন!”
“বিয়ে তো সেই কবেই হয়ে গেল মা। এখন আবার রিসিপশন কেন?”
“আর বলিসনা তো। আত্নীয়-স্বজনরা খেয়ে ফেলছে আমাকে। নিহালের বিয়েতেও তাদের দাওয়াত করিনি। রিসিপশনটাও করলাম না। তাদের কী বিয়ের দাওয়াত খেতে মন চায়না? সবক্ষেত্রে কিপ্টেমি মানায় না। হেনতেন বলছিল। তাই ভাবলাম রিসিপশনটা এবার করেই ফেলি। সবাই মিলে একটা গেট টুগেদার হবে। হৈ-হুল্লোড় হবে। কী বলিস তুই?”
“ভাইয়া আর ভাবি এই ব্যাপারে কিছু জানে?”
“হ্যাঁ। ইঙ্গিত দিয়েছিলাম অবশ্য। নিহাল অফিস থেকে ফিরলে এই বিষয়ে সরাসরি আলোচনা হবে। তার শ্বশুর বাড়িতেও তো খবরটা পাঠাতে হবে। তাদেরও তো একটা প্রস্তুতি আছে।”
“যা ভালো মনে করো তাই করো মা। তবে রিসিপশনটা হলে ভালো হবে! আত্নীয় স্বজনরা সবাই একসাথে হওয়া যাবে।”
এই বলে নীহারিকা তার রুমে চলে গেল। মারজিনা বেগম অবাক হয়ে নীহারিকার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন। চুপচাপ নীহারিকাকে তিনি সত্যিই অবাক হলেন। চিন্তিত গলায় মিনমিনিয়ে বললেন,
“কী হলো মেয়েটার? চুপচাপ মনে হলো না?”
_____________________________________
রাত এগারোটা বেজে যাওয়ার পরেও নীহারিকাকে ঘুম থেকে জাগানো যাচ্ছিলনা! মনে হচ্ছিল যেন ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে সে। নীহারিকাকে ডাকতে ডাকতে নিহাল এবং মারজিনা বেগম উভয়ই ক্লান্ত হয়ে গেলেন। বিষয়টায় বেশ ভয় পেয়ে গেল নিহাল। তবে তার মাকে তা বুঝালো না। এতে খামোখা টেনশন করবেন তিনি। চুপিসারে নিহাল যদিও নীহারিকার শ্বাস প্রশ্বাস চেইক করে দেখল শ্বাস নিশ্বাস পরছিল তবে নীহারিকার কোনো নড়াচড়া বা ঘুম ভেঙে ওঠার কোনো সম্ভাবনা দেখছিল না সে! আর তখনই সে আরও বেশী ঘাবড়ে গেল! তাড়াহুড়ো করে সে পানি ছিটাতে লাগল নীহারিকার চোখেমুখে।
এক পর্যায়ে নীহারিকা ঘুম ভেঙে উঠল। চোখ খুলে নীহারিকা সামনে তাকাতেই নিহাল এবং মারজিনা বেগম ভয়ে পেয়ে গেলেন। কারণ, চোখ দুটি তার অসম্ভব লাল হয়ে আছে! যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে চোখ থেকে। নেশাখোরদের চেয়ে কোনো অংশে কম মনে হচ্ছেনা তাকে!
#চলবে…?