#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৪৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
“বেশী এটিটিউট থাকা ছেলেরা ভালো হয়না! কানা ছেলে আপনার পছন্দ হলেও সে ছেলে আপনার ম্যান্টালিটির সাথে যাবেনা!”
রূপলের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলনা নীহারিকা। নির্বোধ দৃষ্টিতে সে রাগে ডুবুডুবু রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল। রূপলের রাগ এবং কথার সাথে বর্তমান পরিস্থিতি মেলাতে পারছেনা সে। রূপলের আচরণ তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল। দোমনায় ভুগে অবিলম্বেই কপাল কুঁচকে এলো তার। ভ্রু যুগল উঁচিয়ে সে রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“হোয়াট? কার এটিটিউট বেশি? কোন কানা ছেলের কথা বলছেন আপনি? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা আমি।”
সিগারেটটি ধুম করে হাত থেকে ছুড়ে ফেলল রূপল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সে নীহারিকার দিকে তাকালো! যতটা সম্ভব নীহারিকার মুখোমুখি এসে দাড়ালো। দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেন? আপনি কিছু জানেন না?’
“কী জানব আজব? হয়েছেটা কী?”
“সিরিয়াসলি আপনি কিছু জানেন না?”
“না বললে আমি জানবটা কীভাবে? আমি কী মনোবিজ্ঞানী? যে সবার মনের কথা পড়ে বসে আছি?”
“আপনার বিয়ের জন্য বাড়ি থেকে একটা ছেলেকে ঠিক করা হচ্ছে!”
বেকুব বনে গেল নীহারিকা! ধ্যান জ্ঞান তার পাল্টে গেল। চোখের পলক ফেলতে ফেলতে সে হতভম্ব গলায় শুধালো,
“এহ্! কে বলল আপনাকে এসব ফেইক নিউজ?”
নীহারিকার গাঁ ছাড়া ভাব দেখে যেন রূপলের গাঁ পিত্তি রাগে আরও রি রি করছিল! এই সিরিয়াস বিষয়টাকে নিয়ে হেলাফেলা করছে নীহারিকা? এই সময়টা কী দুষ্টুমি করার সময়? ঝাঁজালো গলায় সে নীহারিকাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলল,
“কী? ট্রাস্ট হচ্ছেনা আমার কথা? ফেইক মনে হয় আমাকে?”
“তা নয়ত কী? আমার জন্য বিয়ে আসা বা পাত্র ঠিক করাটা তো হলো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের মত! অযথা এসব আজগুবি কথা বিশ্বাস করতে যাব কেন আমি?”
“সেই ভেবে তো আমিও নিশ্চিন্ত ছিলাম! বাট এখন দেখি কাহিনী ঘটে গেল উল্টো! আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিলো আপনার পরিবার আর ঐ কানা ছেলেটা মিলে! মাথা কাজ করছেনা আমার। কী করব আমি?”
কথার ঠেলায় রূপল তার মনের সব নিংড়ানো অনুভূতি প্রকাশ করে দিলেও নীহারিকা ব্যস্ত ছিল তার নিজের খেয়ালে! রূপলের কোনো কথাই যেন তার কান অবধি পৌঁছোয়নি। হুট করেই সে কপালে কয়েক দফা ভাজ ফুটিয়ে তুলল। চিন্তিত স্বরে বলল,
“ওহ্ আচ্ছা বুঝতে পেরেছি। এজন্যই ভাবি ও আম্মু মিলে আমাকে আকার ইঙ্গিতে বলছিল টিউশনিটা ছেড়ে দিতে? ঘটনা তাহলে এখানেই?”
এদিকে স্বস্তির শ্বাস ফেলতে ব্যস্ত রূপল! নীহারিকা তার কোনো কথাই শুনেনি! মনে মনে যদিও রূপল নীহারিকাকে চাইছে তবে এই মুহূর্তে তা প্রকাশ করতে চাইছেনা সে। সময়, সুযোগ, পরিস্থিতি বুঝে নিশ্চয়ই সে তার অনুভূতি নীহারিকার কাছে ব্যক্ত করবে। যদি এর আগেই নীহারিকা তার অনুভূতি বুঝতে পেরে যায় তাহলে তো আর কোনো দুঃশ্চিন্তাই রইল না! সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। সেই সময়ের আগে পরে কিছু করতে চাইলে হীতে বিপরীতই হয় বেশী! সেই ভেবে রূপল এখন তার অনুভূতিকে দমিয়ে রাখতে চাইল। গলা ঝাড়ল রূপল। শান্ত থাকার চেষ্টা করল। শার্টের কলারটা ঠিক করে সে ধীর গলায় নীহারিকাকে শুধালো,
“এখন আপনার কী মতামত? বিয়েটা কী এখনি করতে চান?”
“আরে ধুর! আপনিও কী আমার মা, বাবা, ভাইয়া, ভাবির মত পাগল হইছেন? এতই সহজ বিয়ে? আগে তো আমাকে পছন্দ করতে হবে ছেলের। এরপর তো বিয়ে!”
“যদি বলি ছেলের গোষ্ঠী শুদ্ধু আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছে তখন?”
অট্ট হাসিতে ফেটে পরল নীহারিকা! হাসি থামাতে না পেরে সে বিদ্রুপের স্বরে বলল,
“হাউ ফানি রূপল! আমাকে করবে পছন্দ? তাও আবার ছেলে এবং ছেলের পরিবার মিলে? শেগুড়ে বালি!”
নিজেকে নিয়ে খিল্লি উড়ানো যেন শেষই হচ্ছিলনা নীহারিকার! রাগকে সংযত করতে না পেরে রূপল বাইকে জোরে এক ঘুঁ’ষি মারল! আঙুলে প্রচণ্ড ব্যথা লাগলেও সেই ব্যথাকে তোয়াক্কা না করে রূপল চোয়াল উঁচু করে তীক্ষ্ণ গলায় নীহারিকাকে শুধালো,
“আমি একদিন বলেছিলাম না আপনাকে? নিজেকে সবসময় ছোটো মনে না করতে? তবুও কেন একই কাজ রিপিট করছেন আপনি? কথা গাঁয়ে লাগেনা আমার? খুব প্রশ্রয় দিয়ে ফেলছি বলে মাথায় ওঠে গেছেন? সহজ সরল ভাবতে শুরু করেছেন আমাকে?”
রূপলের হঠাৎ রেগে যাওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক মনে হলো নীহারিকার কাছে। নিজেকে আঘাত করা এসব আবার কীসের রাগ? রাগ দেখানোরও তো একটা লিমিট থাকা উচিৎ। হাসি থামিয়ে নীহারিকা এবার তৎপর হয়ে উঠল। সোজা হয়ে দাড়ালো সে। কঠিন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“এসব কী ধরনের রাগ রূপল? নিজেকে আঘাত করা রাগ দেখানোর কোনো নমুনা হলো? তাছাড়া হয়েছেটা কী আপনার? আমার জন্য যদিও বিয়ে এসে থাকে তাতে আপনার কী? এতে আপনার এত বাড়াবাড়ি করার কী আছে? তাড়াহুড়ো দেখিয়ে টিউশন থেকে আমাকে ডেকে ডাকলেন। ছেলে দেখতে কানা তাও বলছেন! বিয়েতে রাজি কী-না জিজ্ঞেস করছেন এসবের কারণ কী?”
নিরুত্তর রূপল! হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে সে মাথা নুইয়ে মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারার দ্বিধায় ভুগছে! হুট করেই নীহারিকাকে কিছু বলতে বা বুঝাতে চায়না সে! নীহারিকা হয়ত তাকে বা তার অনুভূতিকে পজেটিভলি না ও নিতে পারে! এমনিতেও মেয়েদের মন বুঝা বড়ো মুশকিল! মুখ ফসকে বেফাঁস কিছু বলে সে সেই মুশকিল কাজকে আরও বেশি মুশকিল করতে চাইছেনা সে।
রূপলের নীরবতা দেখে নীহারিকা একটু করে রূপলের দিকে এগিয়ে গেল। মনের ভুলেই নীহারিকা হুট করে রূপলের ব্যথা পাওয়া হাতের আঙুলটি বেশ শক্তপোক্তভাবেই ধরল! শিথিল গলায় শুধালো,
“কী হলো বলুন?”
অমনি রূপল আঙুলের ব্যথায় উহ্ করে উঠল! সঙ্গে সঙ্গেই নীহারিকা রূপলের হাতটি ছেড়ে দিলো। অস্থির দৃষ্টিতে সে ব্যথাতুর রূপলের দিকে তাকালো। অধীর গলায় শুধালো,
“কী হলো? ব্যথা লাগল?”
নীহারিকার দিকে ফিরেও তাকালো না রূপল! অভিমান নিয়ে উল্টো দিকে ফিরে গেল সে। বাইকে ওঠে স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখল। গম্ভীর গলায় নীহারিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“বাইকে উঠুন৷ আজ একটু আর্লি বাড়ি ফিরতে হবে।”
রূপলের ভাবশূণ্য কাজকর্ম দেখে অবাক হলো নীহারিকা। বাইকে উঠতে উঠতে সে রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কেন? কী এমন বিশেষ কাজ আছে আজ?”
“পিয়াসার রিসিপশন নিয়ে কিছু কাজ আছে।”
বাইক স্টার্ট করে দিলো রূপল। রাতের ঠাণ্ডা হাওয়া গাঁয়ে লাগতেই মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল নীহারিকার। ঠোঁটের কোণে আচমকা এক চিলতে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। হাসি মুখে রেখেই সেগ নির্জীব রূপলকে শুধালো,
“আচ্ছা কাল বিকেলের দিকে আপনি ফ্রি আছেন?”
“কেন?’
“আগে তো বলুন ফ্রি আছেন কী-না?”
“কারণটা বললে সময় বের করব!”
“কাল আমরা শপিংয়ে যাব। আমি, ভাইয়া, ভাবি। তাই জিজ্ঞেস করলাম আপনি ফ্রি আছেন কী-না।”
“ফ্রি থাকলেও আমি আপনাদের সাথে যাবনা! মেয়েদের সাথে শপিংয়ে যাওয়া আর নিজের গালে নিজে ঠাস ঠাস করে চ’ড় মারা সমান!”
“হোয়াট? এসব কে বলল আপনাকে?”
“কেউ বলেনি। আমি নিজেই রিয়েলাইজ করি।”
“ওহ্ বুঝেছি! সুহাসিনীর সাথে সবসময় শপিংয়ে যাওয়া হতো তাইনা?”
“হুম। আর এখন এটা অতীত! তবে এক্সপেরিয়েন্স তো রয়েই গেছে। সেই এক্সপেরিয়েন্স থেকেই বলছি মেয়েদের কোনো কাজে ছেলেদের যাওয়া উচিৎ নয়! বিশেষ করে শপিং আর পার্লারে।”
“ওকে ওকে! আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমি বসেও নেই! যেতে না চাইলে যাবেন না! এতে বরং ভালোই হবে। রিল্যাক্স মোডে আরও বিশটা ত্রিশটা দোকান ঘুরে দেখা যাবে!”
“এই যে দেখলেন? মিলে গেলনা? এখন থেকেই এসব বলছেন। না জানি কাল শপিংয়ে যাওয়ার পর কী কী করবেন! জিজুর মাথা শুদ্ধু খেয়ে ফেলবেন। বেচারা জিজুর জন্য আমার এখন থেকেই টেনশন হচ্ছে! আহারে! দু’দুটো বেডি মানুষ! বেচারা জিজু আমার শপিং ব্যাগগুলো সামলাবে কীভাবে।”
রূপলের সাথে কথা বাড়ালোনা নীহারিকা! পুরোপুরি চুপ হয়ে গেল। ভেতরে ভেতরে রাগে ফোসতে লাগল! নীহারিকার নীরবতায় রূপলের কোনোরূপ ভ্রুক্ষেপ হলোনা। এক ধ্যানে সে বাইক চালাতে লাগল। নীহারিকাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রূপল তার বাড়ি ফিরে গেল। যাওয়ার সময় হৃদির জন্য হাতভর্তি চকোলেট, চিপস, আইসক্রীম নিয়ে গেল। রূপলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে হৃদি সেই কখন ঘুমিয়ে পরেছে। হৃদির মাথার পাশে চুপটি করে বসল রূপল। পাশ থেকে নাজনীন বেগম উদ্বিগ্ন গলায় রূপলকে বলল,
“হৃদির জন্য আমার খুব টেনশন হয় রে।”
হৃদির ঘুমন্ত মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থেকে রূপল শূণ্য গলায় বলল,
“কী টেনশন মা?”
“মেয়েটার ভবিষ্যৎ কী হবে রে? না পাচ্ছে বাবাকে না পাচ্ছে মাকে! কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটা তার মা -বাবার জন্য কান্নাকাটি করে ঘুমিয়েছে। মায়ের কাছে যাবে বলছিল। এভাবে আর কতদিন তাকে বুঝিয়ে রাখব বল?”
“যতদিন অবধি আমি তার জন্য মা খুঁজে না পাই ততদিন অবধি মা! তাকে নিয়ে তুমি অযথা চিন্তা করো না। আমি হৃদিকে সামলে রাখব।”
নাজনীন বেগমকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা রূপল! ঘুমন্ত হৃদিকে কোলে নিয়ে সে তার রুমে চলে এলো। বিছানায় হৃদিকে শুইয়ে দিয়ে রূপল যেইনা বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে অমনি হৃদি রূপলের হাত টেনে ধরল! অবাক হয়ে রূপল পিছু ফিরে দেখল হৃদি ঘুম থেকে ওঠে গেছে। চোখে তার জল! শুকনো মুখে হৃদি অশ্রুসিক্ত গলায় রূপলকে বলল,
“আমি মায়ের কাছে যাব বাবা! বাবাও আমাকে ছেড়ে চলে গেল! এখন মা ও চলে গেল! তারা কেউ আমাকে ভালোবাসে না বলো?”
রূপল তার আবেগকে ধরে রাখতে পারলনা! চোখে জল নিয়ে সে হৃদিকে জড়িয়ে ধরল। ভরাট গলায় বলল,
“কেউ তোমাকে ভালোবাসে না এসব তোমার মনের ভুল হৃদি। তুমি এত মিষ্টি একটা মেয়ে তোমাকে ভালো না বেসে থাকা যায় বলো? আমি থাকতে তোমার বাবার প্রয়োজন কেন মা? তোমার বাবা-মা সব আমি! কী? রাইট বলছি তো আমি?”
ফুপিয়ে কেঁদে হৃদি বলল,
“তাহলে কী সত্যি সত্যি আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে বাবা?”
নিরুত্তর রূপল! মন তো চাইছিল হৃদিকে সব সত্যি বলে দিতে। তবে ছোট্টো হৃদি, নাজুক মন তার। মানতে পারবেনা সে তার জীবনের এই তিক্ত সত্যি!তাই খামোশ খেয়ে গেল রূপল। শুধু নির্বাক গলায় হৃদিকে বলল,
“তুমি যদি সত্যিই আমাকে বাবা মনে করে থাকো। তাহলে আমার উপর ভরসা রাখবে বিশ্বাস রাখবে। আমার সব কথা মেনে নিবে। আমি এখন তোমার মা-বাবার প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাইনা মা! শুধু এতটুকুই বলতে চাই, ” আমিই তোমার বাবা, আমিই তোমার মা। তোমার জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে পাশে পাবে। তোমার এই বাবা তোমাকে কখনও ছেড়ে যাবেনা।”
কথা শেষ করতেই রূপল খেয়াল করল হৃদি এতক্ষণে ঘুমিয়ে পরেছে! হৃদির সেই ঘুমকে আর ভাঙাতে চাইলনা রূপল। জায়গা থেকেও উঠল না সে। হৃদিকে বুকে জড়িয়ে ধরে প্রায় ঘণ্টাখানিক কাটিয়ে দিলো। অফিস থেকে রূপলের বাবা বাড়ি ফিরতেই রূপল এবং তার পরিবার মিলে পিয়াসার রিসিপশন সম্পর্কিত ব্যাপারে আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেল।
রাত তখন দুটোর কাছাকাছি প্রায়। কিছুতেই যেন চোখে ঘুম লাগছিলনা রূপলের। হৃদিকে নিয়ে টেনশনের পাশাপাশি সে নীহারিকার বিয়ে নিয়েও গভীর টেনশনে আছে! যেকোনোভাবেই হোক নীহারিকার বিয়ে ভাঙতে হবে তার। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে। হৃদির পাশ থেকে ওঠে গেল রূপল। রূপলদের বাড়ির পাশের বাড়িটাই হলো রূপলের চাচার। এই মাঝরাতেই সে সজল এবং শাকিলের কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে বাইক চেপে চলে এলো সোজা উজ্জলের বাড়ির সামনে! ঘুমে লকলকিয়ে পরে যাচ্ছিল শাকিল এবং সজল! বাইক চালানোটাই তাদের জন্য রিস্কি হয়ে গিয়েছিল। রূপলের হুমকি ধমকি খেয়ে যদিও দুজন সোজা হয়ে বসেছিল তবে কিছুক্ষণ পর পর আবার হেলেদুলে পরছিল!
উজ্জ্বলের বাড়ির মেইন গেইটের সামনে বাইক পার্ক করে রূপল নাইট গার্ডদের মতো ঘুরছিল বাড়ির আশেপাশে! শকুনের দৃষ্টি তার। রূপলের এসব পাগলাটে কাজকর্ম দেখে রাগে ফুসছিল সজল এবং শাকিল! দুজনই বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। বুকের উপর হাত গুটিয়ে। রূপলের দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শাকিল সজলকে বলল,
“আমাদের বংশের মধ্যে যে হঠাৎ করেই এমন পাগল ছাগল উৎপাদন হবে কে জানত? আমার বড়ো চাচার সুখ শেষ। হেরে তো তালাফি করার দরকার! রাত-বিরাতে যে হারে পাগলামি শুরু করছে।”
“আমার তো কিছু সুবিধার লাগছেনা রে শাকিল! ভাই এখানে চু’রি-ডা’কা’তি করতে এলো না তো?”
“হোয়াট? চু’রি ডাকাতি?”
“যদি তা না-ই হয় তাহলে ভাইয়া এই গভীর রাতে আমাদের নিয়ে এখানে এলো কেন? দেখ দেখ বাড়িটাকে এমনভাবে দেখছে যেন চোখ দিয়েই পরিমাপ করছে বাড়িতে কী কী আছে! আমি বাপু চু’রি, ডা’কাতি করতে পারবনা!”
কথাগুলো বলে সজল দম নেওয়ার সময়ও পেলনা! এরমধ্যেই রূপল বাড়ির মেইন গেইটে বেয়ে সোজা বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল! সঙ্গে সঙ্গেই মুখে হাত চলে গেল শাকিল এবং সজলের! বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে শাকিল সজলের দিকে তাকালো। বলল,
“আইলা! সত্যি সত্যিই চুরি করবে না-কী?”
আতঙ্কিত গলায় সজল বলল,
“পালা শাকিল পালা! ভাইকে কোনোভাবেই ফলো করা যাবেনা। ভুলে যাস না আমাদের দুজনেরই কিন্তু গার্লফ্রেন্ড আছে! তারা যদি চু’রি চামারির বিষয়ে কিছু জানতে পারে পাক্কা ব্রেকাপ করে দিবে! বহু কষ্টে তোর ভাবিরে পটাইছি আমি!”
বলেই দুজন রাস্তার দুদিকে দৌড় দিলো! পিছু ফিরে আবারও দুজন একই জায়গায় ফিরে এলো। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মৃদু চিৎকার করে বলল,
“চোর হলেও আমাদের ভাই তো! তাকে একা ফেলে কীভাবে পালাই আমরা?”
অমনি রূপল বাড়ির গেইট টপকে বাড়ির বাইরে বের হয়ে এলো! হাত দুটো ঝেড়ে সে ক্রুর হেসে সজল এবং শাকিলের দিকে হেঁটে এলো! তার ভাবসাব দেখে মনে হলো মনের মতো কোনো এক কাজ করে এসেছে সে! বাহিরে বেশ ভালোভাবেই আত্মতৃপ্তি প্রকাশ করছে। দু-কদম বাড়িয়ে সজল রূপলের দিকে এগিয়ে গেল। হতবাক গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী চু’রি করলেন ভাই?”
অমনি সজলের গালে কষে এক চ’ড় পরল! গালে হাত দিয়ে সজল আক্রমনাত্নক রূপলের দিকে তাকিয়ে রইল! রূপলের চোখের গরমে সিদ্ধ হওয়ার চেয়ে ভালো বরং দু-কদম পিছিয়ে যাওয়া! হুড়োহুড়ি করে সজল শাকিলের পাশে এসে দাড়ালো। ভীতু হয়ে দাড়িয়ে থাকা শাকিলের দিকে তাকিয়ে সে ঠাস করে শাকিলের গালে চ’ড় মেরে বসল! কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“তুই কেন বাদ থাকবি? চো’র তো তুইও ভাইয়াকে বলেছিলি!”
গালে হাত দিয়ে শাকিল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সজলের দিকে তাকিয়ে রইল! কী হলো না হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। তখনি তেড়ে এলো রূপল দুই আসামীর দিকে! চোয়াল উঁচিয়ে দুজনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী বললি আমি চু’রি করতে গিয়েছিলাম ঐ বাড়িতে? আমাকে দেখতে তোদের চো’র মনে হয়?”
আঙুল দিয়ে শাকিল সজলকে দেখিয়ে ভীতিকর গলায় বলল,
“আমি না ভাই! সজল বলেছে তুমি না-কী চু’রি করতে ঐ বাড়িতে ঢুকেছ!”
“এই শাকিল একদম মিথ্যে বলবি না! আমরা দুজন মিলেমিশেই কিন্তু বলেছিলাম ভাইয়া চু’রি করতে গেছে!”
দুজনের মধ্যে বেশ তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেল! দুজনের দিকে ফিরে তাকাতে তাকাতে রূপলের ঘাড় ব্যথা হয়ে গেল। শেষমেশ বিরক্ত হয়ে গেল রূপল! চোয়াল উঁচিয়ে সে দুজনের কান টেনে ধরল! গজগগজিয়ে বলল,
“হেই স্টপ। উজ্জ্বলের বাইকের হাওয়া পাংচার করতে গিয়েছিলাম আমি! চু’রি করতে নয়!”
#চলবে…?
#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫০
#নিশাত_জাহান—নিশি
“হেই স্টপ। উজ্জ্বলের বাইকের হাওয়া পাংচার করতে গিয়েছিলাম আমি! চু’রি করতে নয়!”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সজল ও শাকিল তাকিয়ে রইল হিংস্রাত্নক রূপলের দিকে। নির্বাক চাহনি তাদের। রূপলের বাচ্চাসুলভ কাজকর্ম তাদের রীতিমত অবাক করে দিলো। তড়িঘড়ি করে কান দুটো ছেড়ে দিলো রূপল। তড়তড়িয়ে হেঁটে বাইকে ওঠে বসল। তখনি সজল দু’কদম বাড়িয়ে রূপলের দিকে এগিয়ে গেল। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আর ইউ শিওর ভাই? বাইকের হাওয়া পাংচার করার জন্য তুমি এই রাত বিরাতে আমাদের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে ঘাড় ধরে চেপে এনেছ?”
বাইকের স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখল রূপল। রাগে ফোঁস ফোঁস করে বলল,
“না। এসেছিলাম চাশমিশ উজ্জ্বলের ক্লাস নিতে! বাট পরে মনে হলো এখন ডিরেক্টলি তার সাথে লাগাটা ঠিক হবেনা! আর তখনই সামনে তার বাইকটা পরল তাই পাংচার করে এলাম। কিছু না কিছু তো একটা করতেই হতো।”
বেশ বিরক্তি ভরা গলায় সজল পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আর ইউ ক্রেজি ভাই? এসব করার রিজন কী?”
প্রত্যত্তুরে মৌন রইল রূপল! গাঁয়ের সমস্ত শক্তি দ্বারা বাইকের স্টিয়ারিংটা ঘুরাতে লাগল। হাতের রগগুলো ফুলে ফেঁপে উঠছিল তার। রাগে, ক্ষোভে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল। সজল তাকে প্রশ্ন করছে? ছোটো হয়ে বড়ো ভাইকে প্রশ্ন করা? দাঁতে দাঁত চেপে সে তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় সজলকে বলল,
“তুই হয়ত ভুলে যাচ্ছিস তুই কাকে প্রশ্ন করছিস! কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠ। হারি আপ।”
আগ্রাসী হয়ে উঠল সজল! জেদ দেখালো বেশ। এক রোঁখা গলায় বলল,
“না। আগে তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিবে! দেন আমরা গাড়িতে উঠব! এর আগে আমরা এখান থেকে এক পা ও নড়ব না।”
রূপল ও তার জেগে অনড় রইল! সজলের দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো। শক্ত গলায় বলল,
“ওকে। তোরা তাহলে এই মাঝ রাস্তাতেই দাড়িয়ে থাক। আর একটু পর যখন টহল পুলিশরা এসে দুইটাকে কানে ধরে হাজুতে নিয়ে যাবে তখন ভালো হবে! তখন কিন্তু এসবের মাঝে আমাকে জড়াতে আসবিনা। একদম না। আমি তখন তোদের ভাই বলেও পরিচয় দিবনা!”
এই বলে রূপল বাইক স্টার্ট করে দিলো! অমনি সজল ও শাকিল পেছন থেকে রূপলকে ডাকতে শুরু করল। দুজনই ভয় পেয়ে গেল। ছুটে চলল বাইকের পেছনে। মৃদু আওয়াজে বলল,
“হেই ভাইয়া। প্লিজ স্টপ। আমরা আসছি তো!”
বাইক থামিয়ে দিলো রূপল। পিছু ফিরে তাকালো সজল ও শাকিলকের দিকে। গরম মেজাজ নিয়ে দুজনকে শাসিয়ে বলল,
“কোনো কুয়েশ্চন, ফুয়েশ্চন করতে পারবিনা! যদি এগ্রি হোস তো তবেই আমি তোদের বাইকে তুলব। এর আগে নয়। ভালো করে ভেবে দেখ কী করবি?”
সজল হা করে কিছু বলার পূর্বেই শাকিল অস্থির হয়ে উঠল। অনর্গল গলায় বলতে লাগল,
“ওকে ভাইয়া। আমার এগ্রি। তুমি আমাদের বড়ো ভাই। হুটহাট আমার তোমার উপর প্রশ্ন তুলতে পারিনা! তবে আমরা জানি তুমি যা করো তার পেছনে নিশ্চয়ই কোনো না কোনো রিজন থাকত! এবার এই কারণটা না হয় আমরা না-ই জানলাম।”
সজলের কথায় খুশি হলো রূপল! রাগকে যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে এনে গলা ঝেড়ে বলল,
“গুড! আই লাইক ইট। এবার ওঠে পড় তাহলে।”
হুড়মুড়িয়ে দুজন বাইকে ওঠে বসল। রূপল ও হাই স্পিডে বাইক ছেড়ে দিলো। রূপলকে খুশি করার জন্য শাকিল দু’একটা মনগড়া কথা বললেও তা মানতে পারছিলনা সজল! চুপচাপ থেকে সে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,
“ভাইয়া নিশ্চয়ই কিছু একটা লুকুচ্ছে আমাদের থেকে! আমি যতটা আন্দাজ করতে পারছি, নীহারিকা আপুর সাথে কোনো না কোনো চক্কর চলছে ভাইয়ার! সেইজন্যই আপুর বিয়ে ভাঙতে ভাইয়া এমন ওঠে পড়ে লেগেছে। যাই হোক, লেটস সি। জল কতদূর গড়ায়!”
মিনিট দশেকের মধ্যে রূপল বাড়ি পৌঁছে গেল। বাইকের চাবি হাতে নিয়ে রুমে প্রবেশ করল। ঘামে ভেজা শার্টটিকে গাঁ থেকে খুলল। শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছে তার। উন্মুক্ত শরীর নিয়ে সে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকল। ঈষৎ ঝুঁকে ওয়াশরুমের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো। অতি নিঁখুতভাবে নিজেকে পর্যবেক্ষণ করল। দাঁড়ি গুলো একটু বেশিই বড়ো হয়ে গেছে তার। ছোটো করা প্রয়োজন। একদম উজ্জ্বলের মত! প্রয়োজনে ক্লিন শেইভ করবে। তাহলে তাকে দেখতে উজ্জ্বলের চেয়েও বেশী ফর্সা দেখাবে! যদিও সে উজ্জ্বলের চেয়েও ফর্সা। লম্বায় উজ্জ্বলের চেয়েও দুই ইঞ্চি লম্বা রূপল। ৫ ফিট ৭ ইঞ্চি তো হবেই। তবে বেশি কিছু না, রূপল আগের মত কুল গেটআপে ফিরে এলেই উজ্জ্বল তার কাছে পাত্তা পাবেনা! এসব ভাবতে ভাবতেই চোখেমুখে পানি ছিটালো রূপল। আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে আয়নায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। গম্ভীর গলায় বলল,
“আই ডোন্ট নো আমি কেন উজ্জ্বলের সাথে নিজেকে এতটা কম্পেয়ার করছি! কেন আমি তাকে নিয়ে এত জেলাস ফিল করছি! কেন নীহুর সাথে উজ্জ্বলকে মেনে নিতে পারছিনা। কেন এত পাগলামি করছি। এটা কী আদো প্রেম না-কী ভালো লাগা তাও আমি জানিনা! তবে এতটুকু জানি আমি কিছুতেই নীহুকে অন্য কারোর হতে দিবনা! ফার্স্ট টাইম যদিও আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম। তবে এইবার করিনি! যে নিঁখাদ মনের মানুষটিকে চিনতে আমার এক চুল পরিমান ভুল হয়নি সেই মানুষটিকে আমি কোনোভাবেই হারাতে দিবনা! এর নাম যদি ভালোবাসা হয়, হ্যাঁ “আমি ভালোবাসি তাকে!” যাকে আমি ভালোবাসি তাকে আমি যতটা সম্ভব আগলে রাখার চেষ্টা করব। নিজের দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমি তাকে আটকে রাখব। আর এটা হলো আমার নিজের কাছে নিজের ওয়াদা।”
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এলো রূপল। শটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। ঘুমের মধ্যে হৃদি নড়েচড়ে উঠতেই রূপল হৃদিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরল।
_________________________________
শপিং করতে এসেও কোনকিছুতে মন লাগছিল না নীহারিকার! মনমরা হয়ে সে পিয়াসা এবং নিহালের সাথে পিছু পিছু ঘুরছিল। এই দোকান থেকে সেই দোকানে। মনে হচ্ছে যেন ঠেকায় পরে সে শপিং করতে এসেছে। মন আটকে আছে তার অন্য কোথাও। কোনো লেহেঙ্গাই যেন তার পছন্দ হচ্ছেনা। পিয়াসা যা পছন্দ করে দিচ্ছে তাও তার পছন্দ হচ্ছেনা। হাত থেকে ফেলে দিচ্ছে। বিষয়টা নোটিশ করল নিহাল। কৌতূহলী গলায় নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী রে? কী হয়েছে তোর? মনমরা দেখাচ্ছে কেন তোকে?”
পরিস্থিতি সামলাতে নীহারিকা জোরপূর্বক হাসল! হুড়মুড়িয়ে বলল,
“কোথায় মনমরা দেখাচ্ছে ভাইয়া? আসলে কোনো কালেকশনই পছন্দ হচ্ছেনা আজ। তাই হয়ত এমন দেখাচ্ছে!”
ভ্রু যুগল উঁচালো নিহাল। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“শিওর?”
আড়ষ্ট গলায় নীহারিকা বলল,
“হ্যাঁ শিওর!”
নীহারিকার মুখের কথায় বিশ্বাস করতে পারছিল না নিহাল! নীহারিকার চোখমুখ দেখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল নীহারিকা মিথ্যা বলছে! তবে এই মুহূর্তে নীহারিকাকে ঘাটাতে চাইলনা নিহাল। সন্দেহ নিয়ে নীহারিকার পাশ থেকে সরে এলো। ইতোমধ্যেই নীহারিকার নজর গেল পিয়াসার পছন্দ করা খয়েরী রঙের লেহেঙ্গাটির দিকে! সঙ্গে সঙ্গেই সে উত্তেজিত গলায় বলে উঠল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ এই লেহেঙ্গাটা! এই লেহেঙ্গাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে ভাবি!”
তৎক্ষনাৎ পিয়াসা রাগী দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো! নীহারিকার প্রতি ক্ষোভ জমল। খরতর গলায় বলল,
“এটাতো আমি আমার জন্য পছন্দ করেছি নীহারিকা! রিসিপশনে আমি এটা পরব। তাছাড়া এই রঙটাতে তোমাকে মানাবে না! তুমি অন্যকিছু দেখো।”
“এই রঙটিতেই তাকে বেশী মানাবে পিয়াসা! তোর থেকেও বেশী! সৌন্দর্যের বুঝিস কী তুই?”
কথাগুলো বলেই রূপল আচমকা নীহারিকার পাশে এসে দাড়ালো! রূপলের উপস্থিতি সবাইকে অবাক করে দিলো। রূপলকে দেখে পিয়াসা যতটা না অবাক হলো এর চেয়েও বেশী রেগে গেল। রূপলের কথায় সে ইনসাল্টেড ফিল করল! ছ্যাত করে তার গাঁয়ে যেন আগুনের ছ্যাঁকা লেগে গেল! চোখ রাঙিয়ে সে রূপলের দিকে তাকালো। প্রশ্ন ছুড়ল,
“তুমি এখানে কী করছ ভাইয়া?”
“একটা কাজে এসেছি! বাই দ্যা ওয়ে দুজনেরই যেহেতু একই লেহেঙ্গা পছন্দ হয়েছে আই থিংক একই কালার একই ডিজাইনের দুটো লেহেঙ্গা নিয়ে নে তোরা! যদি জিজু চায় তো।”
রূপলের কথা শুনে পিয়াসার মাথা গরম হয়ে গেল। মানতে পারলনা রূপলের সিদ্ধান্ত। রাগী গলায় সে কিছু বলার পূর্বেই নিহাল পাশ থেকে বলে উঠল,
“আরে ভাই আমি চাইবটা কী? আমি তো চাই-ই দুজনই এক রকম লেহেঙ্গা পড়ুক। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই।”
অমনি পিয়াসা গরম চোখে পাশ ফিরে নিহালের দিকে তাকালো। জেদ দেখিয়ে বেশ ঝাঁজালো গলায় বলল,
“আমি এই লেহেঙ্গা পরব না! এটা আপনি আপনার বোনের জন্যই নিয়ে নিন।”
রাগে গজগজ করে পিয়াসা জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! অমনি নীহারিকা পেছন থেকে পিয়াসার হাত টেনে ধরল। কাতর গলায় বলল,
“স্টপ ভাবি। তোমার পছন্দ করা লেহেঙ্গাটা আমি কীভাবে পরব বলো? লেহেঙ্গাটা হঠাৎ পছন্দ হয়ে গিয়েছিল তাই হুট করে বলে ফেলেছিলাম। তুমি বরং এই লেহেঙ্গাটাই নাও। আমি অন্যকিছু দেখছি।”
নীহারিকার হাতটি ঝেড়ে ফেলে দিলো পিয়াসা! দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“উঁহু। আমি ঐ লেহেঙ্গাটা ছুঁয়েও দেখব না! তুমিই নিয়ে নাও ওটা। আমি এরচেয়েও সুন্দর ও গর্জিয়াস লেহেঙ্গা নিব!”
“ওকে যা যা! তোকে কেউ রিকুয়েস্ট করছেনা এই লেহেঙ্গাটা নিতে!”
এই বলে রূপল পিয়াসার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। হনহনিয়ে হেঁটে পিয়াসা অন্য শপে ঢুকে গেল! নীহারিকার চেয়েও রূপলের উপর বেশী ক্ষোভ জমেছে তার। বোনের চেয়েও বোনের ননদকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে তার ভাই? দাঁত কিড়মিড়িয়ে পিয়াসা বলল,
“ঐ মেয়েটা আমার ভাইকে কী জাদু করেছে জানিনা! তার পেছনে পেছনে সে শপিংমল অবধি চলে এসেছে? প্রেম এতই খেয়ে উঠেছে?”
এরমধ্যেই পিয়াসার মাথায় শয়তানি এক বুদ্ধি খেলল! পার্স থেকে ফোন বের করে সে মেসেঞ্জারে কাউকে মেসেজ করল! ব্যগ্র হেসে বলল,
“এবার জমবে মজা! এবার নীহারিকার পেছনে তোমার ঘুর ঘুর করা বের করব ভাইয়া!”
ফোঁস শ্বাস ফেলে নিহাল রূপলের দিকে তাকালো। উত্তেজিত গলায় বলল,
“তোমার বোনটাকে নিয়ে আমি কী করি বলো তো? হঠাৎ হঠাৎ রেগে যায়। মানে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করেনা সে! মাঝে মাঝে আমি তাকে নিয়ে কনফিউজড হয়ে যাই। চিনতেই পারিনা তাকে।”
“কুল জিজু। বেশী কিছুনা তাকে শুধু টাইটে রাখতে হবে! বেশী প্রশ্রয় দেওয়া যাবেনা। এমনিতেও মেয়েদের মন বুঝা মুশকিল! আর এমন ঘাড়ত্যাড়া টাইপের মেয়ে হলে তো কিছু করারই নেই!”
কোমরে হাত গুজল নীহারিকা। রূপলকে শাসিয়ে বলল,
“এই আপনি চুপ করুন তো! এমনিতেই ভাবি রেগে গেছে তার উপর আপনি আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছেন!”
পাশ ফিরে নীহারিকা এবার নিহালের দিকে তাকালো। খরখরে গলায় বলল,
“আর তুমিই বা এখানে দাঁড়িয়ে কী করছ? যাও ভাবির সাথে যাও। দেখলে না রাগ করেছে ভাবি?”
বেশ তাড়া দেখিয়ে নিহাল বলল,
“ওকে ওকে যাচ্ছি বাবা।”
প্রস্থান নিলো নিহাল। পিয়াসাকে এই শপে ঐ শপে খুঁজতে লাগল। রূপলের দিকে এবার তেড়ে এলো নীহারিকা। একা পেয়ে তাকে ঝাড়তে শুরু করল।খিটখিটে মেজাজে বলল,
“এই? আপনার কী কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই?”
ভ্রু উঁচালো রূপল। কপালে কয়েক দফা ভাজ ফেলে বলল,
“যেমন? কী আক্কেল জ্ঞান?”
“বোনকে এভাবে কেউ ইনসাল্ট করে?”
“ইনসাল্ট কোথায় করলাম? আমিতো জাস্ট সত্যিটা বললাম।”
“ভাবির জায়গায় যদি আমি থাকতাম না? তাহলে আমিও হয়ত এভাবেই রাগ করতাম! আমি আমার পছন্দের জিনিস অন্য কাউকে দিবে কেন?”
“আমিও আমার পছন্দের জিনিস অন্য কাউকে দিতে চাইনা নীহু! বাট তুমি বুঝতে চাইছ না!”
কথা শেষ করে বেশ আদুরে হয়ে রূপল নীহারিকার নাক টেনে দিলো! ব্যগ্র হেসে পেছনে ফিরল রূপল। নম্র গলায় দোকানদারকে বলল,
“হেই ব্রাদার। লেহেঙ্গাটা প্যাক করে রাখুন। আমরা আসছি।”
দোকানদার খুশি হয়ে লেহেঙ্গাটা প্যাক করতে লাগল। সামনে হাঁটা ধরল রূপল। রূপলের আচার আচরণে অবাক হলো নীহারিকা। তাজ্জব বনে সে রূপলের যাওয়ার তাকিয়ে রইল। নির্বোধ গলায় বিড়বিড় করে বলল,
“ব্যাপারটা কী হলো? কী বুঝাতে চাইলেন তিনি? আর আমার নাকই বা কেন টানলেন? তুমি করেও সম্বোধন করলেন!”
এই বলে নীহারিকা তার কৌতূহল দূর করার জন্য রূপলের পিছু পিছু ছুটল। আগ বাড়িয়ে রূপলের পাশাপাশি হাঁটতে লাগল সে। আগ্রহী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী বললেন আপনি ওটা? আমি কী বুঝতে চাইনা!”
মাথার চুলগুলো ঠিক করল রূপল। গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে এদিক ওদিক তাকালো। রসকষহীন গলায় বলল,
“আপনি তো হলেন টিউব লাইট! কী বললাম বুঝবেন কীভাবে?”
রেগে গেল নীহারিকা। রূপলের পথ আটকে দাড়ালো সে! চোয়াল উঁচু করে বলল,
“কী বললেন আপনি? আমি টিউব লাইট?”
নীহারিকার দিকে মনোযোগ নেই রূপলের। আশেপাশের দোকানগুলোতে সে শকুনের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে! মনে হচ্ছে যেন সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে কাউকে খুঁজছে সে। রূপলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারে পূর্বের তুলনায় আরও অধিক রেগে গেল নীহারিকা। ঝাঁজালো গলায় শুধালো,
“আমি এখানে। এদিক ওদিক তাকিয়ে আপনি কাকে খুঁজছেন?”
“সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে খুঁজছি!”
“মানে? কে সে?”
“চিনবেন না।”
রূপলের দিকে এবার নিঁখুত দৃষ্টিতে তাকালো নীহারিকা। পরিপাটি দেখাচ্ছে আজ রূপলকে। চেহারায় জৌলুশতা দ্বিগুন বেড়ে গেছে। হালকা চাপ দাঁড়িতে তাকে ভালোই লাগছে। চুলগুলো ও ঠিকঠাক লাগছে। সব মিলিয়ে খুবই গোছানো। চোখ আটকে গেছে নীহারিকার। কিছুতেই যেন চোখ সরাতে পারছেনা। সম্মোহিত হয়ে গেল সে। নীহারিকার মৌনতা বুজে রূপল এবার নীহারিকার দিকে তাকালো। নীহারিকার ড্যাব ড্যাব চাহনী দেখে রূপল অবাক হলো। তুড়ি মেরে নীহারিকার দৃষ্টি আর্কষণ করার চেষ্টা করল। বলল,
“হেই নীহু? কোথায় হারিয়ে গেলেন?”
সম্বিত ফিরে পেল নীহারিকা। তড়িঘড়ি করে রূপলের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। মাথা নুইয়ে সে তার হাত-পায়ের দিকে তাকালো! রূপলের হাত-পা কত ফর্সা! আর তার হাত-পা? ছিঃ কী জঘন্য! হীনমন্যতায় ভুগতে লাগল নীহারিকা। বিড়বিড় করে বলল,
“কোথায় উনি, আর কোথায় আমি! কত আকাশ পাতাল তফাৎ আমাদের। উনার দিকে তাকানোটা ও তো পাপ!”
কোনো কারণে নীহারিকার মন খারাপ হয়ে গেছে তা বুঝতে পারল রূপল। অস্থির হয়ে উঠল সে। খানিক বিচলিত হয়ে নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আরে কী হয়েছে? হঠাৎ চুপ করে গেলেন কেন?”
মাথা তুলে নীহারিকন জড়তাগ্রস্ত হয়ে কিছু বলতে যাবে অমনি হঠাৎ পেছন থেকে পিয়াসার গলার আওয়াজ ভেসে এলো! ক্ষোভ ভুলে সে মিষ্টি মধুর গলায় নীহারিকাকে ডেকে বলল,
“এই নীহারিকা? দেখো কে এসেছে?”
কৌতূহলী হয়ে নীহারিকা পিছু ফিরে তাকাতেই দেখল পিয়াসা এবং নিহালের পাশে একজন অপরিচিত ছেলে! সেই ছেলেটিকে চিনতে বেশী দেরি হলোনা রূপলের! ফট করে তার মাথা গরম হয়ে গেল। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে সে রাগে ফোঁসতে লাগল। উজ্জ্বলের দিকে রক্তশূল দৃষ্টিতে তাকালো। এই প্রথম উজ্জ্বল নীহারিকার মুখোমুখি হলো! ছবিতে নীহারিকাকে যতটা কালো মনে হয়েছিল সরাসরি ততটাও কালো নয় নীহারিকা। মায়া যেন ঠিকরে পরছিল তার মুখশ্রী থেকে! নীহারিকাকে দেখে ইম্প্রেস হয়ে গেল উজ্জ্বল! জড়তা ভুলে সে বেখেয়ালি হয়ে নীহারিকার দিকে এগিয়ে এলো। হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্যে নীহারিকার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
“হায়। আ’ম উজ্জ্বল।”
ভ্রু কুঁচকে নীহারিকা উজ্জ্বলের দিকে তাকিয়ে রইল। হ্যান্ডশেক করাটা তার বেহায়াপনা মনে হলো! প্রথমত সে চিনেনা উজ্জ্বলকে, দ্বিতীয়ত তার অদ্ভুত চাহনি। সব মিলিয়ে নীহারিকা বিরক্ত উজ্জ্বলের প্রতি। শান্ত হয়ে রূপল দেখতে চাইছিল নীহারিকা ঠিক কী করতে চায়! আদো একটা অপরিচিত ছেলের সাথে হ্যান্ডশেক করে কী-না। রূপলকে খুশি করে দিয়ে নীহারিকা জোরপূর্বক হেসে উজ্জ্বলের দিকে তাকালো। ইতস্তত গলায় বলল,
“সরি। একচুয়েলি আমি অপরিচিত পুরুষদের সাথে হ্যান্ডশেক করিনা। বাই দ্যা ওয়ে কে আপনি? আপনাকে তো চিনলাম না।”
নীহারিকার আচরণে উজ্জ্বল ইনসাল্টেড ফিল করল! হাতটা শীঘ্রই গুটিয়ে নিলো। পেছন দাড়িয়ে থেকে রূপল ব্যগ্র হাসছিল। বিড়বিড় করে বলল,
“আহ! শান্তি। নীহু আজ তো তুমি আমার মন খুশি করে দিলে।”
#চলবে….?
#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫১
#নিশাত_জাহান_নিশি
“আহ! শান্তি। নীহু আজ তো তুমি আমার মন খুশি করে দিলে।”
রাগে ভেতরটা রি রি করছিল উজ্জ্বলের! তবে তা বাইরে প্রকাশ করার মত পরিস্থিতি নেই এখন। খুবই স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি সামলে নিতে হবে তার। প্রথম দেখাতেই তিক্ততা প্রকাশ করা যাবেনা। নিজের সম্মান নিজেকেই বজায় রেখে চলতে হবে। সবকিছু ভেবেচিন্তে সে জোরপূর্বক হাসল। সুমিষ্ট গলায় নীহারিকাকে বলল,
“আপনার ভাইয়াকেই জিজ্ঞেস করুন না আমি কে? মেবি আপনার ভাইয়া আমার বিষয়ে আপনাকে এখনও কিছু জানায়নি। দেট’স হোয়াই আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না।”
তখনি নীহারিকা উজ্জ্বলের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিহালের দিকে তাকালো। নিহাল মৃদু হেসে নীহারিকা ও উজ্জ্বলের দিকে এগিয়ে এলো। উজ্জ্বলের কাঁধে হাত রেখে সে চওড়া হেসে নীহারিকাকে বলল,
“ইট’স উজ্জ্বল নীহা। আমার অফিসের কলিগ। তবে সম্পর্ক বদলাতে হয়ত সময় লাগবেনা! মা তোর জন্য উজ্জ্বলকে পছন্দ করেছেন।”
পিয়াসাও তখন মৃদু হেসে এগিয়ে এলো নীহারিকার দিকে। সমস্ত ক্ষোভ যেন নিমিষেই ভুলে গেল সে! মনে হলো তার ভালো ভাবি পৃথিবীতে আর দুটো নেই। নীহারিকার পাশে দাড়িয়ে সে হেসে হেসে নীহারিকাকে বলল,
“উজ্জ্বল ভাইয়া তোমার উডবি হতে চলেছেন নীহারিকা! খুব শীঘ্রই তোমাদের বিয়ে।”
উপরে উপরে নীহারিকা অবাক হওয়ার মত ভান ধরলেও ভেতরে ভেতরে সে রাগে ফোঁসতে লাগল! নাক ফুলিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“আমি তো প্রথম দেখাতেই চিনে গেছি ছেলেটি কে! রূপল তো আগেই আমাকে তার সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে ছেলেটির এটিটিউট আমার পছন্দ হয়নি! মনে হচ্ছে লোকটি ভেতরে এক তো বাইরে আরেক। এই আপদ আমি ঘাড় থেকে কীভাবে দূর করব? মোটে ও ভালো লাগছেনা তাকে আমার!”
নিরুপায় হয়ে নীহারিকা তখন পিছু ঘুরে রূপলের দিকে তাকালো! ভ্রু উঁচিয়ে রূপল কপালে কয়েক দফা ভাজ ফেলে নীহারিকার দিকে তাকালো। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝতে চেষ্টা করল নীহারিকার মনের ভাব। নীহারিকা ঠোঁট উল্টো আকার ইঙ্গিতে রূপলকে বুঝালো উজ্জ্বলকে তার সহ্য হচ্ছেনা! তা বুঝা মাত্রই রূপল এগিয়ে এলো নীহারিকার দিকে। নীহারিকার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে সে উজ্জ্বলের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসল। ক্ষোভ চেপে রেখেও মলিন স্বরে বলল,
“আই থিংক আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন। এম আই রাইট?”
“ইয়াহ্। মেবি গতকালই আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল।”
“ইয়াহ্ ইয়াহ্। ইউ আর অ্যাবচুলুয়েটলি রাইট।”
“ওকে। বাট হু আর ইউ? এখানে কী করছেন?”
নিহাল পাশ থেকে উত্তর দিলো। উজ্জ্বলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“রূপল আমার শালা হয় উজ্জ্বল।”
রূপলের দিকে পুনরায় স্থবির দৃৃষ্টিতে তাকালো উজ্জ্বল। জিজ্ঞাসু গলায় বলল,
“ওহ্ আচ্ছা। বুঝতে পেরেছি। তার মানে নীহারিকা আপনার বেয়াইন হয় তাই তো?”
মাথা চুলকে রূপল বলল,
“হ্যাঁ। ঐ আর কী।”
অমনি রূপলকে উপেক্ষা করে উজ্জ্বল বেশ গাঁ ছাড়া ভাব নিলো। নিহালের কাছে প্রস্তাব রেখে সে বেশ নম্র স্বরে বলল,
“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ভাইয়া আমি কী নীহারিকার সাথে পার্সোনালী কথা বলতে পারি? জাস্ট ফর ফিফটিন মিনিটস।”
নিহাল যদিও দ্বিমনায় ভুগছিল আদো উজ্জ্বলের সাথে নীহারিকার এখনি পার্সোনালি কথা বলাটা ঠিক হবে কীনা তবে পাশ থেকে পিয়াসার চোখ রাঙানোতে নিহাল রাজি হতে বাধ্য হলো! সংকোচ হীন গলায় সে বলল,
“ইয়াহ্ ইয়াহ্ শিউর! হোয়াই নট?”
নীহারিকা আপত্তি প্রকাশ করল! বিব্রতকর গলায় সে নিহালকে বলল,
“কিন্তু ভাইয়া?”
নীহারিকার আপত্তিকে গ্রাহ্য করলনা নিহাল! পকেটে হাত গুজে সে কঠিন ভাব নিলো। বলল,
“যা কথা বলে আয়। আমরা ওয়েট করছি।”
উজ্জ্বলের পিছু পিছু যেতে বাধ্য হলো নীহারিকা! পিছু ফিরে সে রূপলের দিকে একবার তাকালো। তাকানো যাচ্ছেনা রূপলের দিকে। ফর্সা মুখটা লাভার রূপ ধারণ করেছে! এসির নিচে থেকেও মাত্রাতিরিক্ত ঘামাচ্ছে সে। অস্থির দেখাচ্ছে তাকে। নীহারিকার আর সাহস হলোনা রূপলের দিকে তাকানোর। সঙ্গে সঙ্গেই নীহারিকা দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। মাথা নুইয়ে সে উজ্জ্বলের পিছু পিছু হাঁটতে লাগল। বুকে ভয় নিয়ে সে বিড়বিড় করে বলল,
“আমি মাঝে মাঝে আপনাকে বুঝতে পারিনা রূপল! কখনও মনে হয় আপনি আমাকে পছন্দ করেন! তাই হয়ত আমার সবকিছুতে আপনি এত রিয়েক্ট করেন। আবার কখনও মনে হয়, না! আপনার সাথে আমার কোনোদিক থেকেই যায়না! কোথায় আপনি, আর কোথায় আমি। যদিও এই পার্থক্যটা আমি নিজেই ফিল করি! জানিনা আপনি কী ফিল করেন। তবে কোনো দিক থেকে আপনার সাথে আমার ম্যাচ হয়না রূপল! আমার নিজেকে খুব ছোটো মনে হয়!”
উজ্জ্বলের পিছু পিছু নীহারিকা শপিংমলের চার তলায় ওঠে গেল। নিরিবিলি ও মনোরম একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। মুখোমুখি বসে আছে দুজন। উজ্জ্বল যদিও নীহারিকার দিকে সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তবে নীহারিকা মাথা নুইয়ে বসে আছে। তাই নীহারিকার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করল উজ্জ্বল। গলা খাকিয়ে বলল,
“আমি এখানে মিস নীহারিকা। নিচে তাকিয়ে আপনি কী দেখছেন?”
চোখ তুলে নীহারিকা এবার সংকুচিত দৃষ্টিতে উজ্জ্বলের দিকে তাকালো। নীহারিকার জড়তাগ্রস্ত চাহনি দেখে উজ্জ্বল মৃদু হাসল। বলল,
“ঠিকভাবে তাকান না আমার দিকে। ওয়েট ওয়েট আর ইউ সাই?”
সঙ্গে সঙ্গেই নীহারিকা চোখ দুটো নামিয়ে নিলো। কী বলবে কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলনা সে। উজ্জ্বলের সাথে কথা বলতেই তার ইচ্ছে করছেনা। হাসফাস লাগছে। নীহারিকার ব্যবহারে ক্রমশ বিরক্ত হতে লাগল উজ্জ্বল! তবুও সে নিজেকে স্থির রেখে নিচু গলায় নীহারিকাকে বলল,
“আচ্ছা এখানে আমিই তো আছি। এত লজ্জা পাওয়ার কী আছে? প্লিজ আপনি আমার দিকে তাকান। নরমালি কথা বলুন। তাছাড়া এর আগে কী আপনি কখনও কারো সাথে মিট করেননি?”
অমনি নীহারিকা বিচলিত দৃষ্টি ফেলল উজ্জ্বলের দিকে। সানির কথা মনে পরে গেল তার। প্রায় অনেকবারই সানির সাথে মিট করেছে সে। তবে তখন তো সে সানিকে ভালোবাসত। তাই ভালোবাসার স্বার্থেই তার সাথে মিট করেছিল। কিন্তু উজ্জ্বলকে তো তার কোনোভাবেই পছন্দ হচ্ছেনা! সে নরমালি কথা বলবে কীভাবে? স্মিত হেসে উজ্জ্বল পুনরায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“প্লিজ সে অনেস্টলি নীহারিকা। এর আগে আপনার কারো সাথে রিলেশন ছিলনা?”
নীহারিকা পূর্বের তুলনায় আরও বেশী ঘাবড়ে গেল! কী বলবে ভেবে পাচ্ছিলনা সে। নীহারিকার হাবভাব বুঝে উজ্জ্বল নিজেই আবার প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“আচ্ছা অতীতে যা হইছে হইছে! তবে বর্তমানে যেন শুধু আমিই থাকি! একচুয়েলি আমার পরিবার আপনাকে এতটাই পছন্দ করে বসেছে যে তারা চাইছে আপনার সাথেই আমার বিয়েটা হোক। সেজন্য আমিও চাই আমার বিয়েটা আপনার সাথেই হোক। যদিও আমি জানিনা আপনার মনে কী চলছে।”
শুকনো ঢোঁক গিলল নীহারিকা। আগ্রহ থেকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আপনার পরিবারের হঠাৎ আমাকে এত পছন্দ করার কারণ কী? আপনার সাথে তো আমার কোনোদিক থেকেই মিলছেনা! আপনি চাইলে তো সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারেন। বাট আমিতো কালো।”
ফিচেল হাসল উজ্জ্বল। নীহারিকার দিকে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। হেয়ো স্বরে বলল,
“সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই আমার! তারা রূপ দেখিয়ে মানুষ ঠকায়! বাড়াবাড়ি রকমের অহংকার দেখায়। বিয়ের পর স্বামীর উপর ও ক্ষমতা দেখায়। আর একটু এডুকেটেড হলে তো কথাই নেই! চাকরী বাকরীর বাহানা দিয়ে না জানি কী কী করে বেড়ায়!”
“সুন্দরী মেয়েদের প্রতি এত রাগ কেন আপনার? আপনার লাইফেও বুঝি কোনো সুন্দরী মেয়ে ছিল?”
নীহারিকার কঠিন প্রশ্নে খামোশ খেয়ে গেল উজ্জ্বল! তড়িঘড়ি করে সে নীহারিকার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। মেন্যু কার্ডের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল। প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“কী খাবেন? কোল্ড নাকি হুট?”
_____________________________________
পিয়াসা এখনও হন্ন হয়ে তার রিসিপশনের লেহেঙ্গা খুঁজে বেড়াচ্ছে। পছন্দসই কোনো লেহেঙ্গাই সে খুঁজে পাচ্ছেনা। রূপলের যেন শান্তি নেই কিছুতেই। নীহারিকার উপর প্রচণ্ড রাগ জমা হলেও নীহারিকাকে একা ছাড়তে ইচ্ছে হয়নি তার! রেস্টুরেন্টের ভেতর রূপল সশরীরে প্রবেশ না করলেও রেস্টুরেন্টের ওয়েটারকে সে উজ্জ্বল ও নীহারিকার পেছনে হায়ার করেছে! ওয়েটার তাদের দুজনকে চোখে চোখে রাখছে ও প্রতিটা মুহূর্তের আপডেট দিচ্ছে রূপলকে! কথা বলতে বলতে উজ্জ্বলের সাথে নীহারিকা প্রায় অনেকটাই মিশে গেল! এই পর্যায়ে এসে উজ্জ্বলকে খারাপ মনে হলোনা নীহারিকার। তবে মন থেকেও মানতে পারছিলনা তাকে! ভালো বন্ধু মনে হলো তার। এভাবেই প্রায় আধ ঘণ্টা পাড় হয়ে গেল। কথা শেষে দুজনই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এলো।
নীহারিকার মুখোমুখি হলোনা রূপল! তার থেকে অনেকটাই দূরে দাড়িয়ে রইল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে উজ্জ্বল তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। পিয়াসাও সিদ্ধান্ত নিলো আজ সে লেহেঙ্গা কিনবে না। বাড়ি ফিরে যাবে। কাল বা পরশু এসে লেহেঙ্গাটা কিনে নিয়ে যাবে। পিয়াসা নিজে থেকেই তার পছন্দ করা লেহেঙ্গাটির প্যাকেট নীহারিকার হাতে তুলে দিলো! মনে কোনো ক্ষোভ রাখলনা সে! পিয়াসার ব্যবহারে নীহারিকা বেশ অবাক হলো। এত ভালো মানুষির কারণ সে বুঝল না। শপিংমল থেকে সবাই বের হওয়ার সময় রূপল হঠাৎ পেছন থেকে নিহাল এবং পিয়াসাকে ডাকল। নিহালের কাছে আবদার রেখে সে বলল,
“জিজু। আপনারা বাড়ি ফিরে যান। পিয়াসাকে নিয়ে আমি একটু পরে বাড়ি ফিরছি!”
রূপলের প্রস্তাবে অবাক হলো নিহাল। কৌতূহলী গলায় শুধালো,
“কেন? কোনো বিশেষ প্রয়োজন?”
নির্লিপ্ত গলায় রূপল বলল,
“ভাবলাম পিয়াসাকে একটু সময় দিই! অনেকদিন হলো পিয়াসার সাথে তেমন সময় কাটানো হচ্ছেনা আমার।”
রূপলের কথায় আবেগপ্রবণ হয়ে গেল পিয়াসা! রূপলের হাত চেপে ধরে দাড়ালো সে। আবদারের স্বরে নিহালকে বলল,
“হ্যাঁ নিহাল। আমিও ভাইয়ার সাথে কিছুক্ষণ থাকতে চাই। নীহারিকাকে নিয়ে আপনি বাড়ি ফিরে যান।”
অপারগ গলায় নিহাল বলল,
“ওকে। তোমাদের ইচ্ছে।”
নীহারিকাকে নিয়ে নিহাল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। রূপলের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না নীহারিকা। চোরের মত সে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে! কোনো রকমে একবার রূপলের মুখোমুখি হলে খবর আছে তার। যদিও সে তার অনুমান থেকে উপলব্ধি করতে পারছে। রূপলও একটি বারের জন্য ফিরে তাকাচ্ছে না নীহারিকার দিকে। সহ্যই করতে পারছেনা যেন সে নীহারিকাকে।
নিহাল ও নীহারিকা চলে যেতেই রূপল পিয়াসাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল। পিয়াসার পছন্দের চকলেট ফ্লেভারের আইসক্রীম অর্ডার করল সে। সাথে বার্গার ও কোল্ড ড্রিংকস। পিয়াসা তার পছন্দের খাবার পেয়ে বেশ খুশি হয়ে গেল। আইসক্রীম খেতে খেতে সে প্রফুল্ল চোখে রূপলের দিকে তাকালো। উদ্বেলিত গলায় বলল,
“থ্যাংকস ভাইয়া। আমিতো ভেবেছিলাম তুমি আমার পছন্দের কথা ভুলেই গেছ!”
স্মিত হেসে পিয়াসার মাথায় গাড্ডা মারল রূপল। প্রসঙ্গ পাল্টে প্রশ্ন ছুড়ল,
“উজ্জ্বলকে তুই-ই ডেকে এনেছিস তাইনা?”
অমনি পিয়াসা আইসক্রীম খাওয়া বন্ধ করে দিলো! জিদ্দি হয়ে সুস্পষ্ট গলায় বলল,
“হ্যাঁ এনেছি! তো?”
“তাকে ডেকে আনার কারণ?”
“কারণটা তো তোমার না বুঝার কথা নয় ভাইয়া! তোমার সাথে নীহারিকাকে আমার মোটেও সহ্য হয়না!”
“তার গাঁয়ের রঙ কালো বলেই কী তাকে তোর সহ্য হয়না?”
“হ্যাঁ তাই! তাছাড়া আজ তুমি তার পছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমার পছন্দকে অগ্রাহ্য করেছ! তোমার ব্যবহারে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি ভাইয়া।”
“তুই তখন কী যেন বলেছিলিস তাকে? ঐ রঙটা তাকে মানাবে না তাই তো? এই কথাটা কী তার কাছে অপমান মনে হয়নি? তাকে ছোটো করা হয়নি? কষ্ট পায়নি সে? তেমনি আমিও তোকে অপমান করে এটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম যে, অপমানিত হওয়ার পর অনুভূতিটা কেমন হয়! তুইও তো সবার সামনে তাকে অপমান করতে ছাড়িস নি তাইনা? ভাই বলে যে আমিও তোকে সবসময় ছাড় দিব এমনটা কিন্তু নয়! তুই যখন একজনকে অপমান করার ক্ষমতা রাখবি তেমনি নিজেও অপমানিত হওয়ার সহ্য ক্ষমতা রাখবি!”
“আমার থেকে ঐ মেয়েটা তোমার কাছে বেশী ইম্পর্টেন্ট হয়ে গেল ভাইয়া? তাকে আমি অপমান করেছি বলে তুমি ও তার হয়ে আমাকে অপমান করবে।”
“লিসেন পিয়াসা? তুই এখন ছোটো না। কমবেশী ভালোই বুঝিস। নীহুর প্রতি আমার আলাদা এক অনুভূতি তৈরী হয়েছে তা তুই ভালো করেই বুঝিস! নতুন করে তোকে বুঝানোর কিছু নেই। যদি আজকের পরিস্থিতি এমন হতো যে নীহু তোকে আমার সামনে অপমান করেছে তখন আমিও নীহুকে এর যোগ্য জবাব দিতাম! কেউ ছাড় পেতো না আমার থেকে। তবে এর বিপরীতে তোর উচিৎ হয়নি উজ্জ্বলকে ডেকে আনা! আমাকে হার্ট করা।”
“কেন উচিৎ হয়নি? একদম উচিৎ হয়েছে! নীহারিকার সাথে উজ্জ্বলের বিয়ে ঠিক হচ্ছে ভাইয়া। তুমি তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো। তাছাড়া তোমার রুচি এত থার্ড ক্লাস হলো কীভাবে শুনি? শেষমেশ তুমি কী-না একটা কালো বেটে মেয়ের দিকে নজর দিতে গেলে? যেখানে সুন্দর সুন্দর মেয়েরা তোমার জন্য পাগল।”
নিজেকে যথেষ্ট সংযত রাখার চেষ্টা করল রূপল! পিয়াসার গাঁয়ে হাত তুলতে গিয়েও সে থেমে গেল। রুদ্ধকর শ্বাস ফেলে সে পিয়াসার দিকে ঝুঁকে এলো। স্থির গলায় পিয়াসাকে বুঝানোর চেষ্টা করে বলল,
“পাবলিক প্লেসে আমি তোর গাঁয়ে হাত তুলতে চাইনা পিয়ু। ঠাণ্ডা মাথায় বুঝাচ্ছি তোকে শোন? গাঁয়ের রঙ কালো হওয়াটা কোনো পাপ নয়। যে আল্লাহ্ তোকে এবং আমাকে নিজের হাতে নিজের ইচ্ছে মত ফর্সা করে তৈরী করেছেন তেমনি তাকেও নিজের হাতেই নিজের খুশিতেই কালো করে তৈরী করেছেন। আল্লাহ্’র ইচ্ছা এবং খুশিতেই সে কালো হয়ে পৃথিবীতে এসেছে। এখানে তুই বা আমি সুন্দর বলে অহংকার করার কিছু নেই। এসব কালো সাদার পার্থক্য করে তুই নিজের পাপ বাড়াচ্ছিস। আল্লাহ’কে নারাজ করছিস।”
চুপ হয়ে গেল পিয়াসা। কোথাও না কোথাও সে তার ভুল বুঝতে পারল! তবুও সে উঁচু গলায় নিজেকে বড়ো রাখার জন্য বলল,
“এখন আর এসব বলে লাভ নেই ভাইয়া। নীহারিকার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমার রিসিপশনের পরই তার বিয়ে লাগবে! যত দ্রুত সম্ভব তুমি তাকে ভুলে যাও। এতে তোমার জন্যই ভালো হবে। দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক থাকবে!”
বলেই পিয়াসা বার্গার খেতে ব্যস্ত হয়ে পরল। কপালে হাত দিয়ে রূপল মাথা নুইয়ে বসে রইল। সত্যিই কী তার আর কিছু করার নেই? নীহারিকা ও তো কী সুন্দর উজ্জ্বলের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলো! উজ্জ্বলকে হয়ত তার ভালো ও লেগে গেছে। সে কী এখন তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে তাদের মাঝখানে রয়ে গেছে? তার কী এখন উচিৎ তাদের মাঝখান থেকে সরে আসা?
মন ভেঙে গেল রূপলের! মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো নীহারিকা ও উজ্জ্বলের মাঝখানে আর যাবেনা সে। যতটা সম্ভব নীহারিকার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। পিয়াসাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে রূপল তার বাড়িতে ফিরে এলো। বাড়ি ফিরে দেখল শাকিল ও সজল হৃদির সাথে খেলছে! হৃদিকে কিছুক্ষণ আদর করে রূপল সোজা তার রুমে চলে গেল৷ রূপলের উদাসীনতা দেখে অবাক হলো শাকিল ও সজল৷ দুজনই অস্থির হয়ে রূপলের পিছু নিলো। রুমে প্রবেশ করেই দুজন দেখতে পেল রূপল দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে তার বাঁ হাতটিকে মুষ্টিবদ্ধ করে বার বার দেয়ালের সাথে আঘাত করছে! হাত কেটে টপটপিয়ে রক্ত পরছে তার! উদ্বিগ্ন হয়ে শাকিল ও সজল ছুটে গেল রূপলের কাছে। রূপলকে থামিয়ে দুজন সমস্বরে বলল,
“এসব কী ধরণের পাগলামি ভাই? তোমার আগের স্বভাবটা এখনও গেলনা?”
দুজনকে ধাক্কা মেরে রূপল রাগে ফোঁস ফোঁস রক্ত চক্ষু দ্বারা দুজনের দিকে তাকালো। ঝাঁজালো গলায় বলল,
“একটা কাজও ঠিকঠাক মত করতে পারিস তোরা? তোদের দুজনকে বলেছিলাম উজ্জ্বলের হিস্ট্রি খুঁজে বের করতে। করেছিস কিছু? আর ঐটা কোন মেয়ের নাম্বার দিয়েছিস আমাকে? তাকে ট্রেসই করা যাচ্ছেনা। বলেছিলি সে শপিং মলে থাকবে। কোথায় ছিল সে?”
রূপলের রাগ দেখে ভয় পেয়ে গেল সজল ও শাকিল। ভীতু গলায় শাকিল শুকনো ঢোঁক গিলে রূপলকে বলল,
“অফিসের কাজে মেয়েটা আটকে গেছে ভাইয়া। তাই আজ তোমার সাথে মিট করতে পারেনি।”
“তো সেটা আমাকে আগে বলিসনি কেন? এখন এসব বলেও আর লাভ নেই! সব শেষ হয়ে গেছে। হাতের বাইরে চলে গেছে সব। নীহু ঐ ছেলেটাকে গ্রহণ করে নিয়েছে! খুব শীঘ্রই তাদের বিয়ে। বের হয়ে যা তোরা আমার রুম থেকে। আমাকে একা থাকতে দে।”
সজল ও শাকিলের কোনো কথাই কানে তুলল না রূপল। দুজনকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে রুম থেকে বের করে দিলো। উদোম শরীরে সে ধপ করে ফ্লোরে বসল। খাটের কার্নিশে মাথা ঠেকিয়ে একের পর এক সিগারেট ফুকতে লাগল। তখনি নীহারিকার নাম্বার থেকে অনেকগুলো কল এলো! কলগুলো দেখেও রূপল তুলছিল না। উল্টো ভীষণ রাগ হচ্ছিল তার। সেই রাগ থেকে সে নীহারিকার নাম্বারটা ব্লক লিস্টে ফেলে দিলো! চোখ জল নিয়ে অবিচল গলায় বলল,
“আজ থেকে আপনার এবং আমার পথ সম্পূর্ণ আলাদা নীহারিকা! অযথা আপনাকে বিরক্ত করে দুই পরিবারের শান্তি নষ্ট করার কোনো মানে হয়না! আমি দূরে সরে যাব আপনার জীবন থেকে! অনেক দূরে।”
নীহারিকা যখন বুঝতে পারল রূপল তাকে ব্লক লিস্টে ফেলে দিয়েছে তখন অজান্তেই তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরল! লেহেঙ্গাটা গাঁ থেকে খুলে ফেলল সে। রূপলকে দেখানোর জন্যই সে লেহেঙ্গাটি পরেছিল! ভেবেছিল কলটি রিসিভ সে রূপলকে বলবে ভিডিও কলে আসতে। লেহেঙ্গাটি তাকে কেমন মানিয়েছে রূপলের কাছ থেকে জানতে চাইবে!
#চলবে…?