ফেরারি প্রেম পর্ব-৫৫+৫৬+৫৭

0
321

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

“নাও। তোমার দুষ্টু মেয়েকে সামলাও! সবসময় আমার ঘাঁড়েই মেয়েকে চাপিয়ে দিবেনা! মা হিসেবে তোমারও কিছু কর্তব্য আছে!”

বেকুব বনে গেল নীহারিকা। মুখে আপনাআপনি হাত চলে গেল তার। চোখের পলক পরাও যেন নিমিষেই থেমে গেল! নিজের কানকেও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারছেনা সে! লামিয়ার সামনে এই কোন ক্যালেঙ্কারি বাঁধিয়ে দিলো রূপল? কামড়ের প্রতিশোধ বুঝি এত ভয়ঙ্করভাবে নিলো? ততক্ষণে হৃদিও নীহারিকার কোলে ওঠে গেল! নীহারিকার গলাকে সাপের মত প্যাঁচিয়ে ধরে মুখ টিপে হাসল! আহ্লাদি গলায় বলল,

“হায়এ মেরি মা! কতক্ষণ পর তোমার কোলে উঠলাম! এই কোলটাকেই তো এতক্ষণ মিস করছিলাম!”

অতিশয় বিপাকে পড়ে চোখের কোটর থেকে চোখ বের হয়ে আসার উপক্রম হলো লামিয়ার! নীহারিকার চেয়েও লামিয়ার বিস্মিত হওয়ার মাত্রা যেন অধিক বেড়ে গেল। বেশিক্ষণ সেই চমক আটকে রাখতে পারলনা লামিয়া! বিক্ষিপ্ত গলায় নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াট ইজ দিস নীহা? তুই বিয়ে করলি কবে? এই বাচ্চাটাই বা কবে হলো তোর? কী হচ্ছে এসব? সব তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে!”

পৈশাচিক হাসিতে লিপ্ত রূপল! মাস্ক পরে থাকার দরুন যদিও তার হাসির মাত্রা বুঝা যাচ্ছেনা তবে তার কুঁচকানো চোখ দেখে নীহারিকা তা সুস্পষ্ট ভাবেই টের পাচ্ছে! রাগে গাঁ রি রি করে উঠল নীহারিকার। অবিলম্বেই চোয়াল ঝুঁকে এলো তার! ফোঁস করে শ্বাস ফেলে সে রূপলের ফুটফুটে দু’চোখের দিকে তাকালো। বিপরীতে গাঁ ছাড়া ভাব নিলো রূপল! খামখেয়ালি সুরে বলল,

“ওকে নীহু। তাহলে তুমি মেয়েকে সামলাও! আমি বরং আসছি।”

জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো রূপল! লামিয়ার সন্দেহ আরও প্রগাঢ় হলো। তেড়ে গেল সে নীহারিকার দিকে। খরতর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“এই নীহা? কবে তুই এই আকাম করে রেখেছিলি? বাড়ির সবাই জানে তোর এই ক্যালেঙ্কারির কথা?”

পরিস্থিতি সামলানোর দায়ে পড়ে নীহারিকা বদ্ধ উন্মাদের মত হু হা করে হেসে দিলো! হাসির আড়ালে লরাদশা আড়াল করে হেয়ালি সুরে বলল,

“তুমিও না লামিয়া আপু। বুদ্ধি সুদ্ধি নেই তোমার মাথায়? ইয়ার্কিও বুঝো না তুমি? মিস্টার রূপল হলেন সম্পর্কে আমার বেয়াই! সেই খাতিরে প্রায়ই আমাদের মধ্যে এসব দুষ্টুমি হয়। আজও হলো ঠিক তাই। তাছাড়া এরমধ্যেও একটা সত্যি লুকিয়ে আছে। জানি সত্যিটা বললে তুমি কষ্ট পাবে!”

উৎসুক হয়ে উঠল লামিয়া। সত্যি জানার জন্য সে তৎপর হয়ে উঠল। উত্তেজিত গলায় শুধালো,

“কী সত্যি বল আমাকে? আমি কষ্ট পাবনা প্লিজ বল?”

দুঃখী দুঃখী ভাব নিলো নীহারিকা! নাক টেনে মাথা নুয়ালো। ধীর স্বরে বলল,

“রূপলের অন্য কোথাও সম্পর্ক আছে লামু আপু! দেট’স হোয়াই তিনি আমার উপর দোষ চাপিয়ে তোমার থেকে পরিত্রাণ পেতে চেয়েছে! একচুয়েলি তিনি এখনি চাননা তার গার্লফ্রেন্ডের বিষয়টা কারো সামনে আসুক। কজ তিনি আপাতত বেকার মানুষ তো! যখন চাকরী বাকরী হবে তখন তিনি বিষয়টা সবাইকে জানাবেন। আমি নিজেও জানিনা তার গার্লফ্রেন্ড কে! তবে এতটুকু খুব কষ্টে জেনেছি যে তার গার্লফ্রেন্ড আছে!”

মন ভেঙে গেল লামিয়ার! বুকে এক অদ্ভুত শূণ্যতা কাজ করতে লাগল। ভরাট গলায় সে নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“তুই যা বলছিস সব সত্যি তো নীহা? তাছাড়া এই বাচ্চাটাও যে তোকে মা বলে ডাকল? এর কারণ কী? তোরা সবাই মিলে গোল খাওয়াচ্ছিস না তো আমাকে?”

“কারণ বাচ্চাটাও তার চাচ্চুর সাথে জড়িত! কথা বার্তায় বুঝো না? পাকা বুড়ি একটা!”

দুষ্টুমি ভুলে হৃদি কেমন যেন আবেগপ্রবণ হয়ে উঠল! মায়াময় অশ্রুসজল দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। হুট করেই সে চোখ বুজে নাক টেনে নীহারিকার গাঁয়ের গন্ধ শুকতে লাগল। ভরাট গলায় বলল,

“তুমিই তো আমার মা নীহা আন্টি! তোমার গাঁ থেকে আমার মায়ের গন্ধ ভেসে আসছে!”

হতভম্ব দৃষ্টি ফেলে নীহারিকা হৃদির দিকে চাইল। হৃদির চোখেমুখে সে এক অদ্ভুত মায়া খুঁজে পেল। তাৎক্ষণিক বুকটা কেঁপে উঠল তার। অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রুবিন্দু জড়ো হলো। মিষ্টি হেসে হৃদি নীহারিকার গালে চুমু এঁকে দিলো। আদুরে সুরে বলল,

“আজ থেকে তুমিই মা নীহা আন্টি! আমি তোমাকে নীহা আন্টি না, বরং নীহা মা বলে ডাকব।”

বিগলিত হয়ে নীহারিকা মুহূর্তেই হৃদিকে তার বুকের মাঝে চেপে ধরল। এতক্ষণ যাবত বুকের মাঝে যে হাহাকার কাজ করছিল সেই হাহাকার যেন তার নিমিষেই দূর হয়ে গেল! প্রশান্তিতে ভরে উঠল বুকের ভেতরটা! “মা” শব্দটা ক্রমাগত তাকে মা হয়ে উঠার উপলব্ধি টের পাইয়ে দিচ্ছিল! কত অদ্ভুত সুন্দর এই অনুভূতি।

তাদের মাঝখানে লামিয়া আর তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে থাকতে চাইলনা! নীহারিকার বানোয়াট কথা সে বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো যে, রূপলের গার্লফ্রেন্ড আছে! গার্লফ্রেন্ডকে লুকানোর জন্যই রূপল নীহারিকাকে ব্যবহার করেছে। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এই যে, নীহারিকার মত কুৎসিত দেখতে একটা মেয়ের প্রেমে রূপলের মত সুদর্শন ছেলে কখনও পরতে পারেনা! তবে এই মুহূর্তে সে রূপলের গার্লফ্রেন্ডকে খোঁজার জন্য মরিয়া হয়ে উঠল! সিদ্ধান্ত নিলো যে করেই হোক রূপলের গার্লফ্রেন্ডকে সে খুঁজে বের করবে। ছলাকলা করে তাদের ব্রেকাপ করাবে। তারপর রূপলকে সে বিয়ে করবে! এরজন্য তাকে পিয়াসার সাথে মিলিত হতে হবে! পিয়াসাকেই প্রথমে ইমপ্রেস করতে হবে!

হৃদিকে এখনও বুকের মাঝে চেপে ধরে রেখেছে নীহারিকা। হৃদিও নীহারিকাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। হৃদির মাথায় হাত বুলিয়ে নীহারিকা নরম সুরে প্রশ্ন ছুড়ল,

“তুমি কী লামিয়া আপুকে দেখেই আমাকে মা বলে ডাকলে হৃদি? আপুর সামনে অভিনয় করলে?”

“না নীহা মা! প্রথমে আমি অভিনয় করলেও পরে যখন তোমার গাঁয়ের ঘ্রাণ শুকলাম তখন মনে হলো তুমিই আমার মা! কী মিষ্টি ঘ্রাণ গো তোমার গাঁয়ে। আমাদের স্কুলে টিচাররা সবসময় বলে জানো? মায়ের গাঁয়ে নাকী মিষ্টি একটা ঘ্রাণ থাকে। তোমার গাঁয়েও সেই ঘ্রাণটা পেয়েছি আমি! তাই তুমি এবার থেকে আমার মা!”

হয়রান হয়ে গেল নীহারিকা। হৃদির উপলব্ধি তার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হলোনা! বরং অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল তার। হৃদির চোখে মুখে চুমু খেয়ে নীহারিকা হেসে হেসে বলল,

“ওকে হৃদু। এবার থেকে আমি তোমার মা। আর তুমি আমার মেয়ে! এবার চলো আমরা নিচে যাই। অনুষ্ঠান তো শুরু হয়ে গেল। খাওয়াদাওয়া ও তো করতে হবে।”

হৃদিও নীহারিকার কপালে চুমু খেয়ে বলল,

“ওকে মা চলো। আমারও বেশ ক্ষিদে পেয়েছে।”

হৃদিকে কোলে নিয়ে নীহারিকা খাবারের প্যান্ডেলে চলে এলো। পিয়াসার পরিবার থেকে আসা আত্নীয়স্বজন ও নিহালের কলিগরা খেতে বসে গেছে প্রায়। ডেকোরেটরের লোকরা বেশ খাতির যত্ন করে তাদের খাওয়াচ্ছে। তখনি নীহারিকার নজর গেল স্টেজে পিয়াসার পাশের সোফায় বসা লামিয়ার দিকে! দূরে থেকেও নীহারিকা আঁচ করতে পারল লামিয়া নিশ্চয়ই কোনো চাল চালছে! পিয়াসাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছে। লামিয়ার বুদ্ধির তারিফ না করে পারলনা নীহারিকা! বাঁকা হেসে সে বিড়বিড় করে বলল,

“বাহ্ লামিয়া আপু বাহ্! ভালোই সুযোগ নিয়েছ তুমি। কোথায় গেলে তোমার কী ফয়দা হবে তা বেশ ভালোভাবেই রপ্ত তোমার। পিয়াসা ভাবি তো এমনিতেই আমাকে পছন্দ করেনা এখন আবার তোমার মত সুন্দরী মেয়ের দেখা পেয়ে গেল! এবার তো তোমরা সোনায় সোহাগা! কলকাটি ভালোই নাড়তে পারবে।”

সেদিকে আপাতত পাত্তা দিলোনা নীহারিকা। হৃদির ক্ষুধা পেয়েছে কেবল এই বিষয়টাই আপাতত তার মাথায় ঘুরতে লাগল। হৃদির জন্য একটি প্লেটে খাবার মেখে নীহারিকা বেশ তৃপ্তি করেই হৃদিকে খাইয়ে দিলো। এরমধ্যেই ঘুম পেয়ে গেল হৃদির। নীহারিকা তার রুমে নিয়ে হৃদিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিচে নেমে এলো। রূপলের পরিবারের সবাই তখন টেবিলে বসল খাবার খেতে। মেহমানদের খাবার প্রায় শেষের দিকে। লামিয়াও অন্য টেবিলে বসে খাচ্ছিল।

দুটো টেবিল একত্র করে দুই পরিবারের সবাই খেতে বসল। নিহাল ও পিয়াসাও সবার সাথে খেতে বসল। শাকিল, সজল কব্জি ডুবিয়ে খেতে শুরু করেছে। রূপল এখনও মাস্ক পরা অবস্থায়! ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার। এখন সে খাবার খাবে কী করে তা ভেবেই চিন্তায় পরে গেল। দূর থেকে দাড়িয়ে রূপলের কাণ্ড সব দেখছিল নীহারিকা! হাসতে হাসতে তার পেটে খিল ধরে যাচ্ছিল। নিহাল হঠাৎ এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে লাগল। চিন্তিত সুরে বলল,

“নীহাকে কোথাও দেখছিনা। নীহা কোথায়?”

তখনি নিহালের শ্বাশুড়ি অর্থাৎ নাজনীন বেগম নিহালকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“হৃদিকে ঘুম পাড়াতে গিয়েছে নীহারিকা। আমরা ওয়েট করি। নীহারিকা এলে না হয় একসাথে খাব।”

নাজনীন বেগমের কথায় মারজিনা বেগম ফোড়ন কাটলেন। খামখেয়ালি স্বরে তিনি বললেন,

“না না বেয়াইন। আপনারা খাওয়া শুরু করে দিন। নীহারিকা হয়ত আসছেও। রাত তো অনেক হয়ে গেল। প্লিজ আপনারা খাওয়া শুরু করুন।”

মারজিনা বেগমের জোরাজুরিতে সবাই খেতে শুরু করল। রূপল হুট করে তখন চেয়ার ছেড়ে ওঠে সোজা দাড়িয়ে গেল। সবার দৃষ্টি এবার রূপলের দিকে পরল। পিয়াসা মুখে লোকমা তুলতে গিয়েও থেমে গেল। আশ্চর্যিত গলায় রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী ব্যাপার ভাইয়া? তুমি হঠাৎ মুখে মাস্ক পরলে কেন?”

খেতে খেতে সজল ইয়ার্কিপূর্ণ গলায় পিয়াসাকে বলল,

“সে কিছুনা আপু। ভাইয়ার নাকে ভীমরুল কামড় দিয়েছিল তো, তাই ভাইয়া মাস্ক পরতে বাধ্য হলো!”

অমনি রূপল রাগে গজগজ করে উঠল! হাত-পা ঝেড়ে ঝাঁজাল গলায় বলল,

“শাট আপ। জাস্ট শাট আপ! ক্ষেপাবি না আমায়। না হয় এতক্ষণ অবধি যা খেয়েছিস কিক মেরে সব এক এক করে পেট থেকে বের করব।”

রাগে হনহনিয়ে রূপল জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! শাকিল ও সজল মুখ টিপে হাসতে লাগল। উপস্থিত সবাই বেকুব হয়ে রূপলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। সবাই শাকিল ও সজলকে চেপে ধরল। জানতে চাইল কী হয়েছে রূপলের। তারা দুজনই চাপে পরে হুড়োহুড়ি করে খাবার খেয়ে টেবিল ছেড়ে ওঠে গেল! এখানে থেকে বিপদ তারা বাঁধাবে না-কী?

প্যান্ডেলের বাইরে দাড়িয়ে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছিল নীহারিকা। বাঘ যে তার পেছনে দাড়িয়ে রয়েছে সেই দিকে বিন্দুমাত্রও খেয়াল নেই তার! হাসতে হাসতে নীহারিকা যেইনা রুপলের গাঁয়ের সাথে ধাক্কা খেলো তখনি তার টনক নড়ল! পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে নীহারিকা পিছু ফিরে তাকালো। রূপলের অগ্নিঝরা চাহনি দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল নীহারিকা! শুকনো ঢোঁক গিলে সে মানে মানে করে যেইনা জায়গা থেকে পালাতে যাবে অমনি রূপল এক ঝটকায় নীহারিকার কোমর প্যাচিয়ে ধরল! আতঙ্কগ্রস্ত নীহারিকাকে কোমড় ধরে টানতে টানতে সে নীহারিকার রুম অবধি নিয়ে এলো! ধাক্কা মেরে নীহারিকাকে সে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো। রুমের দরজা আটকে মুখ থেকে মাস্কটা খুলল। স্বস্তি খুঁজে পেল সে। মুক্তভাবে শ্বাস নিতে লাগল।

গভীর ঘুমে মগ্ন হৃদি। অধীর চোখে নীহারিকা পাশ ফিরল। এই বুঝি হৃদি ওঠে গেল। না! এখনও নাক টেনে ঘুমুচ্ছে হৃদি। জোর বাঁচা বেঁচে গেল নীহারিকা। রাগী দৃষ্টিতে সে এবার রূপলের দিকে তাকালো। খিটখিটে গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াটস ইউর প্রবলেম ম্যান? কোমড় জড়িয়ে ধরে চাপাচাপি বন্ধ হবেনা আপনার? নাকে কামড় খেয়েও শাস্তি হলোনা?”

ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল রূপলের। হাত থেকে মাস্কাট ছুড়ে ফেলে সে তেড়ে এলো নীহারিকার দিকে। নীহারিকার মুখের কাছে ঝুঁকে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“বাইটের শাস্তি তো তুমি এবার পাবেই! ইউ নো হোয়াট? আজ তোমার জন্য আমাকে কী কী ফেইস করতে হয়েছে? সবাই লিটরেলি আমাকে মেয়ে মেয়ে বলে ক্ষেপাচ্ছিল! সব তোমার জন্য হয়েছে!”

রূপলের ভয়ঙ্কর রূপ এবং রূপল এই মুহূর্তে কী করতে চাইছে তা বুঝতে পেরে নীহারিকা হুট করে রূপলের মুখ চেপে ধরল! ভীতু গলায় বলল,

“খবরদার। কামড়াকামড়ি করতে আসবেন না। না হয় কিন্তু….

নীহারিকাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলোনা রূপল! হাত টেনে ধরে নীহারিকাকে বসা থেকে উঠিয়ে দিলো সে। নীহারিকার জায়গায় পায়ের উপর পা তুলে বসল! বদরাগী গলায় বলল,

“আ’ম সো হাংরি। কুইকলি খাবার নিয়ে এসো। তুমি কামড়াইছ তুমিই এখন নিজ হাতে খাওয়াই দিবা! বিয়ের আগে কোনো প্রকার কামড়াকামড়ি করব না আমি! এতটুকু সভ্যতা জানা আছে আমার!”

ছাড়া পেয়ে নীহারিকা হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল! বাড়ির সবাইকে আড়াল করে রূপলের জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো। রূপলের কথা মত নীহারিকা ভয়ভীতি নিয়ে রূপলকে খাইয়ে দিতে লাগল। এর ফাঁকে ফাঁকে রূপলও হাত ঘুরিয়ে নীহারিকার মুখেওখাবার পুড়ে দিলো। এভাবেই দুজন সবটা খাবার শেষ করল।

খাবার শেষে রূপল আয়নার দিকে তাকালো। দেখল নাকে থাকা কামড়ের দাগটা মিশে গেছে প্রায়। স্বস্তির শ্বাস ফেলল সে। মাস্কটা আর পরতে হবেনা সেই খুশিতে ব্যগ্র হাসল! পেছনে চুপটি করে দাড়িয়ে থাকা নীহারিকাকে সে হাত ধরে তার দিকে টেনে আনল। নীহারিকাকে জড়িয়ে ধরে কাতর স্বরে বলল,

“প্লিজ নীহু ব্লকটা খুলে দিও! তোমার সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারব না। সেদিন যা হয়েছে তার জন্য আ’ম সরি! বাড়ি ফিরে কল করেই যেন তোমাকে আমি পাই। প্লিজ একটু কো-অপারেট করো।”

“ওয়েট ওয়েট আমাকে ছাড়া থাকতে না পারার কারণ? এখনও কিন্তু বললেন না।”

“মুখে না বললেও যে তুমি বুঝোনা বিষয়টা কিন্তু এমন নয়! তুমি যথেষ্ট বুঝদার। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় আমার চেয়েও ভালো বুঝো তুমি! যখন সময় হবে তখন আমি নিজে থেকেই আমার মনের অনুভূতি তোমাকে খুলে বলব। এখনও সেই সুইটেবল সময় আসেনি।”

নীহারিকাকে ছেড়ে রূপল ঘুমন্ত হৃদিকে কোলে তুলে নিলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী নিহাল আজ পিয়াসার সাথে তার শ্বশুড় বাড়ি যাবে। রূপল খায়নি ভেবে রূপলের খাবারটা মারজিনা বেগম প্যাক করে দিলেন! বিদায় নিয়ে সবাই গাড়িতে ওঠে বসল। গাড়ি ছেড়ে দিলো রূপলদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

#চলবে…?

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

নীহারিকাকে ছেড়ে রূপল ঘুমন্ত হৃদিকে কোলে তুলে নিলো। দ্রুত পায়ে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিয়ম অনুযায়ী নিহাল আজ পিয়াসার সাথে তার শ্বশুড় বাড়ি যাবে। রূপল খায়নি ভেবে রূপলের খাবারটা মারজিনা বেগম প্যাক করে দিলেন! বিদায় নিয়ে সবাই গাড়িতে ওঠে বসল। গাড়ি ছেড়ে দিলো রূপলদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

সরাদিনের ধকল ও ক্লান্তিতে সবার দেহ প্রায় অসাড় হয়ে এলো। রূপলরা তাদের বাড়িতে ফিরে যে যার মত ঘুমিয়ে পরল। তদ্রুপ নীহারিকারাও তাদের মেহমান ও আত্মীয়স্বজনদের বিদায় দিয়ে অগোছালো বাড়িটার টুকটাক কাজ গুছিয়ে শীঘ্রই ঘুমিয়ে পরল। সবারই এখন বিশ্রামের প্রয়োজন। কাজের জন্য রাত জেগে থাকলেই শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তবে সেই রাতে ঘুমালোনা নিহাল ও পিয়াসা। তারা তাদের পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত! নিহাল চাইছে শীঘ্রই তার ঘর আলো করে সন্তান আসুক। বাবা ডাক শোনার জন্য তার ভেতরটা যেন খাঁ খাঁ করছে। তবে পিয়াসা চাইছে আরও কয়েকটা মাস সময় নিতে। সবে তো মাস খানিক হলো তাদের বিয়ের। এরমধ্যেই এত তাড়াহুড়ো কীসের? নিহালকে বেশ বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখছে পিয়াসা! বেশ সাবধানতা অবলম্বন করছে। পিয়াসার জেদের সাথে পেরে উঠছেনা নিহাল! যদিও এই ক্ষেত্রে দুজনেরই সম্মতির প্রয়োজন। তাই এই মুহূর্তে কেউ কাউকে জোর করাটা অনুচিত।

পরের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই রূপল লাগাতার নীহারিকার নাম্বারে ট্রাই করতে লাগল। নীহারিকা যদিও রূপলের ব্লক খুলে দিয়েছে তবে সকাল থেকেই নীহারিকা কাজে কাজে ভীষণ ব্যস্ত থাকায় রূপলের কলটি তুলতে পারছিলনা। যদিও রূপল বুঝতে পেরেছিল নীহারিকা কাজে ব্যস্ত। তাই সেও নীহারিকাকে তেমন জ্বালাতে চায়নি। নিজের মত করে ছেড়ে দিয়েছে।

সকালের নাশতা সেরেই রূপল এই প্রথম বারের মত নিহালের সাথে বাজারে গেল! শালা দুলাভাই মিলে অনেক অনেক বাজার করে আনল। দুপুর ঘনিয়ে সন্ধ্যাও হয়ে এলো। এরপরেও নীহারিকাকে কলে পাচ্ছিলনা রূপল। মাথা যেন গরম হয়ে গেল তার। শত ব্যস্ত থাকলেও নীহারিকার তো একবার উচিৎ ছিল ফোনটি চেক করার। সে তো জানে রূপল তাকে কল করবে। কল করে তাকে না পেলে পাগল হয়ে যাবে! জেনেও কেন এমন হেয়ালি করছে?

নীহারিকার উপর প্রচণ্ড রাগ নিয়ে রূপল এলাকার ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে বের হয়ে গেল। ঘণ্টা খানিক এভাবে পাড় হয়ে গেল। তার মনে কিছুতেই যেন শান্তি লাগছিলনা। মনে হচ্ছিল কিছু না কিছু তো একটা খারাপ ঘটছে নীহারিকার সাথে! যা সে আন্দাজ করতে পারছে। মনে অশান্তি নিয়েই শীঘ্রই রূপল এলাকা থেকে বের হয়ে গেল। বাইকে চেপে সোজা নীহারিকাদের বাড়িতে গিয়ে উঠল। ড্রইং রুমে প্রবেশ করেই তাজ্জব বনে গেল রূপল! উজ্জ্বল তার পরিবারকে নিয়ে নীহারিকাদের বাড়িতে হাজির। শুধু তাই নয় সাথে একজন কাজী সাহেবও রয়েছেন! সবথেকে বেশী অবাক হলো রূপল তাদের সাথে নিহাল এবং পিয়াসাকে দেখে! তারা আবার কখন এই বাড়িতে এলো? তার অগোচরে কী হচ্ছে কী এখানে?

রূপলের হঠাৎ আগমনে পিয়াসা থতমতিয়ে গেল! হকচকানো দৃষ্টি ফেলল সে রূপলের দিকে। শুকনো গলায় বিড়বিড় করে বলল,

“হায় আল্লাহ্! ভাইয়া তো এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিল। হঠাৎ এখানে টপকালো কীভাবে? তাহলে কী আমার সব প্ল্যানিং ভেস্তে গেল?”

তবে নিহাল মনে মনে বেশ খুশি হলো! রূপলের আসাটাই যেন তার একান্ত কাম্য ছিল! উত্তেজিত হয়ে উজ্জ্বল বসা থেকে ওঠে গেল! রূপলের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নিহালকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“ভাইয়া আমি কিন্তু আপনাকে বলেছিলাম বাইরের কেউ এখানে এলাউড নয়। এই ছেলেটা এখানে কী করছে?”

বিব্রতকর গলায় নিহাল প্রত্যত্তুরে বলল,

“কী আশ্চর্য উজ্জ্বল। রূপল বাইরের কেউ হতে যাবে কেন? দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র আপন শালা আমার! তাছাড়া তুমি এত হাইপার হচ্ছ কেন? বিয়ে তো কেউ এভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে করতে আসেনা!”

তাৎক্ষণিক পিয়াসা ঝট করে বসা থেকে ওঠে গেল! তড়তড়িয়ে বলল,

“আচ্ছা আমি ভেতরে মায়ের কাছে যাচ্ছি। দেখি নীহারিকাকে মা কতটুকু কী রেডি করালো!”

প্রস্থান নিলো পিয়াসা। রূপল আপাতত শান্ত রইল। উজ্জ্বলের মনে কাজ করছে অস্থিরতা! যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। বিয়েটা যে তার এখনি ভেঙে যাবে সেই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত সে! এরচেয়ে ভালো ছিল নীহারিকাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করাটা। পিয়াসা তো তাকে কথা দিয়েছিল রূপল এই বিয়ের ব্যাপারে কিছু জানবেনা! এমনকি নীহারিকার ফোনটাও পিয়াসা ছলাকলা করে লুকিয়ে রেখেছিল! তাহলে কোনো নিউজ ছাড়া রূপল এখানে উপস্থিত হলো কীভাবে? এ যেন গভীর চিন্তায় ডুবে গেল উজ্জ্বল।

উজ্জ্বলের অস্থিরতা বুঝতে পেরে রূপল ক্রুর হাসল! শার্টের কলারটা ঠিক করে সে বেশ ভাবসাব নিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসল। উজ্জ্বলের ঠিক মুখোমুখিটায় বসল সে। ভাবশূণ্য গলায় উপস্থিত সবার সামনে উজ্জ্বলকে লক্ষ্য করে বলল,

“মনের টান থাকারও তো একটা বিষয় থাকে তাইনা? আমরা যাকে ভালোবাসি যাকে ছেড়ে আমরা থাকতে পারবনা ভাবী, তার কোনো অসুবিধা বা বিপদ হলে যে সবক্ষেত্রেই আমাদের ইনফরম করে জানাতে হবে বিষয়টা যদি এমন হত তাহলে হয়ত জগৎ জোড়া প্রেম ভালোবাসা হতো না! আই গেইস আপনি বুঝতে পেরেছেন আমি কী বুঝাতে চাইছি?”

রূপলের কথায় উজ্জ্বল ও উজ্জ্বলের পরিবার হুমকির মুখে পরে গেল! মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল তাদের। গলা ঝাকিয়ে উজ্জ্বল সভ্য গলায় রূপলকে বলল,

“আমি তোমার সাথে একটু পার্সোনালি কথা বলতে চাই রূপল!”

“ইয়াহ্ ইয়াহ্। হোয়াই নট? প্লিজ কাম।”

উজ্জ্বলকে নিয়ে রূপল বাড়ির ছাদে চলে গেল! দুজনই পাশাপাশি দাড়িয়ে রইল। অপ্রত্যাশিতভাবে উজ্জ্বল হুট করেই রূপলের হাত দুটো চেপে ধরল! রূপলকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে সে অনুনয়ভরা গলায় বলল,

“দেখো রূপল। নীহারিকাকে বিয়ে করাটা আমার অনেক বেশি প্রয়োজন! বিলিভ মি? আমার পরিবারের সবাই নীহারিকাকে খু্বই পছন্দ করেছে। এই প্রথমবারের মত তারা কোনো মেয়েকে এতটা পছন্দ করল! তাই তাদের পছন্দকে আমি অসম্মান করতে পারছিনা। তারা চাইছে আমি নীহারিকাকেই বিয়ে করি। তাছাড়া নীহারিকার পরিবারও আমার সাথেই নীহারিকার বিয়েটা দিতে প্রস্তুত। মাঝখানে তুমি বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে কেন বলো? প্লিজ আমাদের বিয়েটা ভালোয় ভালোয় হতে দাও। তুমি আমাদের মাঝখান থেকে সরে যাও।”

উজ্জ্বলের হাতটা ঝট করে ছেড়ে দিলো রূপল! উজ্জ্বলের আবদার তার কাছে অনৈতিক মনে হলো। অস্থির হয়ে উঠল সে। চোখ দুটিতে অসম্ভব ক্ষোভ ফুটিয়ে তুলল। তীব্র গলায় বলল,

“আমি কারো মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি ওকে? উল্টো আপনি আমাদের মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন! আমার ভালোবাসাটা যে একতরফা তাও নয় বরং নীহারিকাও আমাকে ইকুয়েলি ভালোবাসে। তাহলে এখানে কে কার জীবনে বাঁধা হয়ে দাড়ালো? আমি না আপনি? যদি আপনি নীহারিকাকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইতেন তাহলে ব্যাপারটা ভিন্ন ছিল! কিন্তু আপনি তো নীহারিকাকে বিয়ে করতে চাইছেন নিজের স্বার্থের জন্যে! যে কী-না নিজের স্বার্থের জন্য নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য ওঠে পড়ে লাগতে পারে সেই মানুষের থেকে এরচেয়ে বেশী কিছু কী আর এক্সপেক্ট করা যায়? মূলত আপনি কানো মেয়েরই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নন! যে তার ভালোবাসার মানুষকে সম্মান করতে পারেনা সে আবার অন্যের ভালোবাসাকে কীভাবে সম্মান করবে বলুন? সত্যি কথা বলতে গেলে আপনার ভাগ্য ভালো যে, এতকিছুর পরেও সুইটি আপু আপনাকে বিয়ে করতে চাইছে! তার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে অবশ্য আপনার মেইন পয়েন্টে কিক মেরে কবেই চলে যেতো!”

নিমিষেই ক্ষেপে গেল উজ্জ্বল! ভেবেছিল রূপলকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে পারবে সে। তবে কথায় যেহেতু চিড়ে ভিজেনি তাই সে রূপলের চোখকে আড়াল করে প্যান্টের পকেট থেকে খুঁড় বের করল! সুযোগ বুঝে যেইনা সে রূপলের পেট বরাবর ঘাই মারতে গেল অমনি নিহাল পেছন থেকে ছুটে এসে উজ্জ্বলের হাত থেকে খুঁড়টি ফেলে দিলো! এতক্ষণ যাবত নিহাল ছাদের দরজায় দাড়িয়ে সব শুনছিল! তাই উজ্জ্বলের অসৎ উদ্দেশ্য ধরতেও তার সময় লাগলনা। হতভম্ব হয়ে রূপল নিহালের দিকে তাকিয়ে রইল। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে উজ্জ্বলের গালে সপাটে এক চড় বসিয়ে দিলো নিহাল! রুক্ষ মেজাজ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তুই এক্ষণি তোর পরিবার নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। বিয়ে টিয়ে ক্যান্সেল। তোর কাছে আমার বোনকে বিয়ে দেওয়ার চেয়ে ভালো বরং গলা টিপে আমার বোনকে মে’রে ফেলা! গেট লস্ট ফ্রম মাই হোম ইউ ব্লা*ডি, বি*চ! পুলিশ ডাকার আগে ভাগ তুই আমার বাড়ি থেকে!”

এই ঘোর অপমান সহ্য করতে পারলনা উজ্জ্বল! গালে হাত রেখে সে নিহালের দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকালো। চোখের ইশারায় বুঝালো নিহালকে সে দেখে নিবে! হনহনিয়ে হেঁটে উজ্জ্বল ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রূপল। স্বস্তির শ্বাস ফেলে নিহালের দিকে তাকালো। তবে কিছু বিষয় সে এক্ষণি ক্লিয়ার করতে চাইল। তাড়াহুড়ো করে সে তার প্যান্টের পকেট থেকে সেল ফোনটি বের করতে করতে দ্রুত গলায় নিহালকে বলল,

“উজ্জ্বল ছেলেটা মোটেও ভালো নয় জিজু। তার এগেইনস্টে অনেক প্রুভ আছে আমার কাছে। ওয়েট অ্যা সেকেন্ড জিজু। আমি আপনাকে ভিডিওটা দেখাচ্ছি।”

মুহূর্তেই রূপলের হাত ধরে রূপলকে থামিয়ে দিলো নিহাল। নিশ্চল দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকালো। গুরুতর গলায় বলল,

“আমাকে কোনো প্রুভ দেখাতে হবেনা রূপল। উজ্জ্বলের বিস্তারিত আমার জানা আছে! আমি শুধু এতটুকুই বুঝতে চেয়েছিলাম আমি এবং আমার পরিবারের পর আমার বোনকে তুমি কতটুকু ভালোবাসো! তাকে কতটুকু ভালো রাখতে পারবে তুমি! আদো তোমার ভালোবাসাটা কতটুকু স্বার্থহীন। সমীকরণ মিলে গেল আমার। একমাত্র তুমিই পারবে আমার বোনকে স্বার্থহীনভাবে ভালোবেসে তাকে জনম ভর আগলে রাখতে! সেই প্রথম থেকেই আমি তোমার চোখে আমার বোনের জন্য এক অন্যরকম ভালোবাসা দেখেছি! কাজে ক্ষেত্রে বহুবার তার প্রমাণও পেয়েছি। উজ্জ্বলের সাথে বিয়ে ঠিক করার মূল কারণই ছিল তোমার ফিলিংসটা এক্সপোজ করা! কী পাগলামিটাই না করলে তুমি উজ্জ্বল যখন তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে তোমাদের মাঝ এলো। তার সব গোপন তথ্য কত স্মুথলি তুমি খুঁজে বের করলে। তাকে এক্সপোজ করার কত চেষ্টা করলে। আমি তোমার সব ছোটো বড়ো পদক্ষেপগুলো আড়াল থেকে যতদূর সম্ভব পরিমাপ করেছি রূপল। সব একত্র করে শেষ পর্যায়ে এসে বুঝতে পেরেছি আমার বোনের জন্য তোমার চেয়ে যোগ্য কেউ হতে পারেনা! তোমার কাছেই আমার বোন নিরাপদ! তবে এই চিরন্তন সত্যিটির মাঝেও একটি নেতিবাচক সত্যি লুকিয়ে আছে! আর তা হলো তোমার পরিবার! আমার পরিবারকে আমি বুঝাতে পারলেও তুমি তোমার পরিবারকে সঠিক বুঝাতে পারবে কী-না আমি এই বিষয়ে সন্দিহান! একটা ছোটো ডাউট তো রয়েই গেল তাইনা?”

এতক্ষণ যাবত রূপল বেশ মনোযোগ দিয়ে নিহালের শ্রুতিমধুর কথাগুলো শ্রবণ করছিল। খুশিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল সে! তড়াক করে নিহালের হাত দুটো চেপে ধরল! উৎফুল্লিত গলায় বলল,

“বাদ দিন তো আপনার অসব ডাউট ফাউট! আপাতত এই অপ্রত্যাশিত সময়টা আমাকে এঞ্জয় করতে দিন। অন্তত একজনকে তো মানাতে পেরেছি আমি? বাকিদের ও আস্তেধীরে মানিয়ে নিব। তবে একটা হাম্বেল রিকুয়েস্ট আপনার কাছে জিজু! আপনি আপনার পরিবারকে বুঝাবেন প্লিজ। আমাকে অন্তত একটা বছর সময় দিবেন। মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে আমি নীহুকে আমার ঘরে তুলব! আই হোপ সো আপনি এই বিষয়ে আমাকে কো-অপারেট করবেন।”

মৃদু হেসে নিহালও রূপলের হাত দুটো চেপে ধরল। ভরসার সুরে রূপলকে বলল,

“এই বিষয়ে তুমি শতভাগ নিশ্চিন্ত থাকো রূপল। বললাম তো তোমার চেয়ে যোগ্য কেউ আমাদের নীহারিকার জন্য হতেই পারেনা।”

ইতোমধ্যেই পিয়াসা হম্বিতম্বি হয়ে ছুটে এলো ছাদে। অমনি নিহাল ঝট করে রূপলের হাতটি ছেড়ে দিলো। দুজনই অপ্রস্তুত হয়ে পরল। জায়গা থেকে খানিক নড়েচড়ে দাড়ালো। অস্থির গলায় পিয়াসা নিহালকে বলল,

“এই? আপনি এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কী করছেন হ্যাঁ? ঐদিকে আপনার বোনের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে! উজ্জ্বল তার পরিবার নিয়ে চলে যাচ্ছে। বিয়ে নাকী ক্যান্সেল?”

গাঁ ছাড়া ভাব নিলো নিহাল। ভাবশূণ্য গলায় বলল,

“হ্যাঁ তো? পাত্রপক্ষ যদি বিয়ে ক্যান্সেল করে চলে যেতে চায় সেখানে আমি কী করতে পারি?”

“কিন্তু বিয়ে ক্যান্সেল করার কারণ কী? মা ঐদিকে বার বার বেহুশ হয়ে যাচ্ছে। নিচু চলুন। বাড়ির একটা খারাপ অবস্থা আর আপনি এদিকে দাড়িয়ে রঙ তামাশা করছেন?”

“কী আশ্চর্য। মা কেন বার বার বেহুশ হয়ে যাচ্ছে? বিয়ে ভেঙে গেছে এতে এত হাইপার হওয়ার কী আছে?”

এই বলে নিহাল হম্বিতম্বি হয়ে ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। মাথা চুলকে রূপলও যেইনা নিহালের পিছু নিলো অমনি পিয়াসা পেছন থেকে রূপলকে ডাকল। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“এই ভাইয়া শোনো? বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পেছনে তোমার কোনো হাত নেই তো?”

“কী আশ্চর্য! নতুন করে তোকে এসব বুঝাতে হবে কেন? তুই এবং তোরা যতবারই আমার থেকে নীহুকে আলাদা করতে চাইবি ঠিা ততবারই এভাবে তোদের প্ল্যান ভেস্তে দিব আমি! সো পরের বার একটু কেয়ারফুললি ওকে?”

গটগটিয়ে হেঁটে রূপল ছাদ থেকে প্রস্থান নিলো। রাগে দুঃখে হাত পা ঝারল পিয়াসা! খিটখিটে গলায় বলল,

“না এইভাবে আর হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে লামিয়াকেই এবার ভাইয়ার পেছনে লাগাতে হবে! সুন্দরী মেয়েরা চাইলেই সব পারে! একটা পসেসিভ ছেলেকেও ক্যারেক্টারলেস বানাতে পারে!”

__________________________________

পার্কের এক কোণায় বসে রূপল গুরুগম্ভীর ভাবে তার ফোন ঘাটছে। নীহারিকা যে তার পাশে বসে রয়েছে সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। রূপলের পাশে থেকেও বেচারি নীহারিকা নিজেকে এতিম মনে করছে! হৃদি তার কোলে বসে হাওয়াই মিঠাই খাচ্ছে। আর এদিক ওদিক তাকিয়ে মানুষদের হাঁটা চলা দেখছে। রূপলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য নীহারিকা বাধ্য হলো এবার রূপলের গাঁ ঘেঁষে বসতে! নীহারিকার গাঁয়ের স্পর্শ পেতেই রূপল তেতে উঠল! চোখ থেকে সানগ্লাসটি সরিয়ে সে নীহারিকার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। ঝাঁজালো গলায় বলল,

“কী হইছে? গাঁয়ের সাথে এমন ঘঁষাঘঁষি করছ কেন? দেখছ না পার্কে অনেক মেয়েরা আছে? তোমার সাথে তারা আমাকে দেখলে আমাকে লাইন মারা বন্ধ করে দিবে! সো কিপ ডিস্টেন্স ওকে?”

“ওকে! তাহলে তো আমি এবার আপনার কোলে ওঠে বসব! দেখব কোন মেয়েরা আপনার দিকে তাকায়। কে আপনার সাথে লাইন মারতে আসে।”

“না। একদম না! আমার থেকে ডিস্টেন্স মেন্টেইন করে বসো! তুমি যেমন উজ্জ্বলকে পেয়ে নাচতে নাচতে তাকে বিয়ে করার জন্য বৌ সেজে রেডি হয়ে বসেছিলে? তেমনি আমিও এখন তোমার চোখের সামনে দিয়ে হট হট মেয়েদেরকে আমার কোলে বসাব! ইকুয়েশন সেইম সেইম!”

অমনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল নীহারিকা। হৃদিকে কোল থেকে নামিয়ে সে তার পাশে বসালো। ইচ্ছে করেই রূপলের গাঁয়ের সাথে যতখানি সম্ভব ঘেঁষে বসল! পারছিলনা শুধু রূপলের কোলে ওঠে বসতে! রূপলের মুখের কাছে মুখ এনে নীহারিকা দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

“একদম হিসেব বরাবর করতে আসবিনা আমার সাথে! এটা পার্ক না হলে এখন তোর গাল কামড়ে দিতাম আমি! বৌ সেজে বসেছিলাম কারণ আমি জানতাম তুই আসবি! ভাইয়া আমাকে শান্তনা দিয়েছিল যেভাবেই হোক তুই আসবি। তাই আমি টেনশন ফ্রি ছিলাম। একদম ভাব দেখাবিনা আমার সাথে। মনে নেই কাল রাতে যে কামড়টা দিলাম? এখনও তো কালসিটে দাগ পড়ে আছে নাকে! সো বি কেয়ারফুল ওকে?”

#চলবে…?

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

“একদম হিসেব বরাবর করতে আসবিনা আমার সাথে! এটা পার্ক না হলে এখন তোর গাল কামড়ে দিতাম আমি! বৌ সেজে বসেছিলাম কারণ আমি জানতাম তুই আসবি! ভাইয়া আমাকে শান্তনা দিয়েছিল যেভাবেই হোক তুই আসবি। তাই আমি টেনশন ফ্রি ছিলাম। একদম ভাব দেখাবিনা আমার সাথে। মনে নেই কাল রাতে যে কামড়টা দিলাম? এখনও তো কালসিটে দাগ পড়ে আছে নাকে! সো বি কেয়ারফুল ওকে?”

হতবাক রূপল! নির্লিপ্ত, নির্বিকার। পার্ক ভর্তি লোকজনের সামনে এই মেয়ে এখন তার কোলে ওঠে বসবে না-কী? লাজ শরমের ফালুদা করে ছাড়বে মনে হচ্ছে। কেন ক্ষ্যাপাতে গেল রূপল এই মাথা ভাঙা উড়নচণ্ডীকে? বড্ড আফসোস হচ্ছে যে! চোখ থেকে তো আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে মেয়েটির। সেই আগুনে নির্দ্বিধায় জ্বলে পুড়ে ভৎস হয়ে যাবে রূপল। এক্ষুণি এই জ্বলন্ত শিখাকে পাশ থেকে সরাতে হবে। ভয়ে ভয়ে কে-ই বা মরতে চাইবে? এছাড়াও এই মুহূর্তে রূপলের হৃৎস্পন্দনের অবস্থা খুবই নাজুক। যেকোনো মুহূর্তে বুকের ছাতি ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা শতাধিক! পুরুষ মানুষের মন বলে কথা! মেয়ে মানুষ এত কাছাকাছি চলে এলে তো তারা বেসামাল হয়ে পড়ে। উত্তেজনা ধরে রাখা মুশকিল হয়ে যায়!

এতটুকুনিতেই এসে রূপল তার ভাবনাচিন্তায় তালা লাগালো। গলা ঝাকিয়ে শার্টের কলারটা ঝেড়ে ঠিক করল। উত্তেজনা হোক বা ভীতসন্ত্রস্ততা কোনোটিই বুঝাতে চাইলনা নীহারিকাকে! গলায় কঠোরতা আনার চেষ্টা করে বলল,

“কী হচ্ছে কী নীহু? এটা একটা পার্ক, পাবলিক প্লেস। তুমি এখানে এসেও আমার পিন্ডি চটকাচ্ছ? সব জায়গায় আমার প্রেস্টিজ পাংচার না করলে তোমার হয়না?”

সম্বিত ফিরে পেল নীহারিকা। টুক করে যেন আকাশ থেকে জমিনে পরল। আশপাশে সূক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখল লোকজন তাদের দিকে হা করে তাকিয়ে চলতি পথ ধরে হেঁটে যাচ্ছে। তবে কারো মুখশ্রীতে বিরক্তির ছাপ তো কারো মুখশ্রীতে দুষ্টু হাসির ছাপ! তাৎক্ষণিক রূপলের পাশ থেকে কয়েক ইঞ্চি সরে এলো নীহারিকা। মাথা নুইয়ে চুল ঠিক করল। দাঁত গজগজিয়ে রূপলকে লক্ষ্য করে বলল,

“আপনি জেচে পড়েই বার বার ইনসাল্ট হতে আসেন ওকে? পাবলিক প্লেসেও বাধ্য করলেন নিজেকে হাসির খোঁড়াক বানাতে। মুখে সারাক্ষণই হট হট মেয়েদের কথা ওঠে থাকে। তাদের নাম জপ করতে করতে মুখে ফেনা ওঠে যায়! এত হট হট মেয়ে চাইলে আবার আমাকে ফোসলাচ্ছেন কেন? আমার ভাইয়ার কাছে সময় চাইলেন কেন? তখনই বলে দিতে পারতেন যে আপনার হট হট মেয়ে পছন্দ। আমার মত জ্বলে পুড়ে আঙরা হয়ে যাওয়া কয়লা কালার মেয়ে নয়!”

“আরে বাবা তুমি সিম্পল জিনিসটা বুঝোনা কেন? তুমি কী আর কম হিটে, কম আগুনে জ্বলে পুড়ে কয়লা হইছ? তোমার মধ্যে হটনেসও যেমন বেশী তেমনি আগুনও বেশী! অন্য মেয়েরা তো শুধু রূপের আগুনে জ্বলে আর তুমি তো শুধু জ্বলোনা রে ভাই তুমিতো রূপের আগুনে জ্বলেপুড়ে কয়লা হয়ে যাও! সাথে পুরুষদের মনকেও কয়লা করে ছাড়ো! এবার বুঝো তোমার রূপের কত উত্তাপ? জাস্ট ইমাজিন, আমি কতটা লাকী?”

রূপলের এই আকাশ ছোঁয়া প্রশংসাতেও সন্তুষ্ট হলোনা নীহারিকা! ভ্রু যুগল কুঁচকে সন্দিহান দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকালো। দ্বিধাহীন গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“এসব কী আপনি মন থেকে বললেন? না-কী নিজেকে বাঁচানোর জন্য বললেন? কোনটা?”

নীহারিকার উদ্ভট প্রশ্নে মনের দিক থেকে ধাক্কা খেলো রূপল! রোষাগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো প্রশ্নবিদ্ধ নীহারিকার দিকে। আঘাতপ্রাপ্ত গলায় বলল,

“মেয়ে দেখেছি জীবনে অনেক। কিন্তু তোমার মত উদ্ভট মেয়ে দেখি নাই! মন থেকে, হৃদয় থেকে, অন্তর থেকে, অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এত প্রশংসা করলাম তবুও তোমার মনে সন্দেহ কাজ করছে? আমার ভালোবাসাও কী তোমার কাছে সন্দেহের মনে হয়?”

“ভালোবাসেন কবে বলছেন? জোর করেও কী ঐ ওয়ার্ডটা আপনার মুখ থেকে এই অবধি একবারও শুনতে পেরেছি?”

মৌন রইল রূপল। অযথা কথা বাড়াতে চাইলনা নীহারিকার সাথে। শুধু হাত বাড়িয়ে নীহারিকার হাতটা তার বুকের বাঁ পাশে চেপে ধরল! ফোঁস করে শ্বাস ফেলে রূপল আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা নীহারিকার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“হার্টবিট কতটা দ্রুত গতিতে বিট করছে বুঝতে পারছ তো? এর থেকেই বুঝে নাও তোমার প্রতি আমার অনুভূতি কতটা গাঢ় ও নিগূঢ়। একে ভালোবাসা বলে না-কী জেচে এনে নিজের সর্বনাশ করা বলে জানিনা আমি! তবে এতটুকুই জানি আমি মুখে মুখে ভালোবাসি বলা এই কথাটিতে বিশ্বাসী নই! ভালোবাসি তা যদি আমি কাজে ক্ষেত্রে বুঝাতে পারি তবে একেই আমি ভালোবাসা বলি। যেদিন তোমাকে আমি বিয়ে করে আমার ঘরে তুলতে পারব হ্যাঁ সেদিনই আমি বুকে সাহস রেখে নির্দ্বিধায় বলতে পারব আমি তোমাকে ভালোবাসি! যাকে আমি ভালোবেসেছি তাকে নিজের করে পেয়েছি। যেদিন তোমাকে নিজের করে পেয়ে আমি পূর্ণ হবো? সেদিন পুরো দুনিয়া আমার ভালোবাসার স্বাক্ষী হয়ে থাকবে! ভালোবাসি কথাটি তখন মুখে বলে কয়ে বেড়াতে হবেনা। তবে এক্ষেত্রে তোমার কনসেপ্টও ভিন্ন হতে পারে। একেক জনের অনুভূতি একেক রকম হয়। তেমনি ভালোবাসা প্রকাশের ভঙ্গিও একেক রকম হয়।”

সম্মোহিত চাহনি নীহারিকার। রূপলের পানে সে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মুগ্ধ হলো সে রূপলের কথায়। ভেবে দেখল সত্যিই তো, মুখে মুখে ভালোবাসি বলে কয়জনই বা সেই ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে পেরেছে? কাজে প্রকাশ করে দেখানোর মাঝেই তো সত্যিকারের ভালোবাসা নিহিত রয়েছে। যদিও নীহারিকা বহু আগেই প্রমাণ পেয়ে গেছে রূপল তাকে কতটা গভীরভাবে ভালোবাসে! তবুও মুখ থেকে শোনার ব্যাপারটা হলো আলাদা।

কথা শেষে রূপল নীহারিকার পাশ থেকে ওঠে দাড়ালো। অচিরেই নীহারিকা তার হাতটি গুটিয়ে নিলো। হৃদি যে সেই কখন নীহারিকার পাশ থেকে ওঠে পার্কের এদিক থেকে ওদিক ছুটোছুটি করছে সেদিকে কারোর খেয়াল-ই নেই! হৃদি তার মত কয়েকজন সমবয়সীকে দেখে তাদের সাথে মিলেমিশে খেলাধূলা করছে। দৌড়োদৌড়ি করতে গিয়ে না আবার হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় সেই ভয়ে রূপল সেখান থেকে হৃদিকে ধরে আনল! মন খারাপ করে হৃদি রূপলের পিঠে কিল ঘুষি দিতে লাগল! কান্না করে বলল,

“প্লিজ রূপল বাবা আমাকে ওখানে যেতে দাও। আমি খেলা করব।”

“শাট আপ হৃদি। স্কুলেও আজ অনেক খেলাধূলা করেছ। এত বেশী দৌড় ঝাপ করলে তোমার পা ব্যথা করবে। দৌড়োতে গিয়ে পরে গেলে তো হাত পা ও ছিলে যাবে। তখন কী হবে হ্যাঁ? চুপচাপ এখন আমার সাথে চলো। ঐদিকে তো তোমার নীহা মা তোমাকে ফেলে আইসক্রীম খেয়ে ফেলল!”

আইসক্রিমের লোভ দেখিয়ে রূপল হৃদিকে তার বসে আনল! অমনি হৃদি কান্নাকাটি থামিয়ে দিলো। ব্যস্ত স্বরে রূপলকে বলল,

“আরে বাবা তাড়াতাড়ি হাঁটো না। নীহা মা তো আমাকে ফেলে সব আইসক্রীম খেয়ে ফেলল!”

পার্কে থাকা একটি আইসক্রীমের স্টল থেকে রূপল তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ফ্লেভারের কোণ আইসক্রীম কিনল। রূপলের হাত থেকে হৃদি টেনেটুনে একটি কোণ আইসক্রীম আগেই কেড়ে নিলো। বাকী দুটো আইসক্রীম হাতে নিয়ে রূপল বেঞ্চে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকা নীহারিকার দিকে এগিয়ে গেল। আইসক্রীম দুটি রূপল নীহারিকার মুখের সামনে ধরল। ব্যগ্র স্বরে বলল,

“নিন ম্যাম। আপনার ফেভারিট কোণ আইসক্রীম।”

নির্জীব অবস্থায় নীহারিকা রূপলের হাত থেকে আইসক্রীম দুটি নিলো। ভ্যাপসা গরমে বেশ ঘামাচ্ছিল নীহারিকা। সরাসরি রোদের আলো তার চোখেমুখে পরছিল। অথচ এই জায়গাটা কিছুক্ষণ আগেও শিথিল ছিল। রোদের ছিটেফোঁটাও ছিল না। প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে রূপল তার টিস্যুর প্যাকেটটি বের করল। প্যাকেটটি নীহারিকার দিকে এগিয়ে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,

“ঘামটা মুছে নাও। অনেক ঘামাচ্ছ আজ।”

রূপলের কোলে থেকে হৃদি বেশ জ্বালাতন করছিল! আইসক্রীম ফেলে দিচ্ছিল রূপলের শার্টে। যদিও এতে রূপল বিরক্ত হচ্ছিলনা। শার্ট থেকে আইসক্রীমগুলো হাত দ্বারা মুছে নিচ্ছিল। তখনই হৃদি বিড়বিড় করে রূপলের কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

“বাবা? আমাকে কিন্তু তুমি আরেকটা আইসক্রীম কিনে দিবে! নীহা মা কে তো দুটো আইসক্রীম দিলে।”

নমনীয় গলায় রূপলও হৃদির কানে ফিসফিসিয়ে বলল,

“তুমি কী নীহু মায়ের সাথে হিংসে করছ মা? যদি করেও থাকো তাহলে বলব পরেরবার থেকে আর তাকে নিয়ে জেলাস ফিল করবেনা! মায়ের সাথে জেলাসি দেখাতে নেই বাবা! বাড়ি ফেরার সময় তোমাকে আমি আরও অনেকগুলো আইসক্রীম কিনে দিব ওকে? কিন্তু এখন তো তোমার আইসক্রীমটা গলে যাচ্ছে হৃদি। একটু কেয়ারফুললি খাও।”

রূপল হৃদিকে আরও অনেক আইসক্রীম কিনে দিবে এই কথা শুনে হৃদি চট করে হেসে দিলো। খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে রূপলের গালে চুমু খেলো। বিড়বিড় করে বলল,

“ঠিক আছে বাবা। আমি আর কখনও নীহা মায়ের সাথে জেলাসি করবনা! তুমি কিন্তু আজ আমাকে অনেকগুলো আইসক্রীম কিনে দিবে।”

রূপলের হাত থেকে টিস্যুটি হাতে নিলো নীহারিকা। পার্কে থাকা কতগুলো মেয়ে রূপলের দিকে কেমন যেন আড়চোখে তাকাচ্ছিল! ইশারায় কী যেন বলছিল তারা! নীহারিকা অনেকক্ষণ যাবত এই ব্যাপারটা নোটিশ করছিল। রেগেমেগে সে বসা থেকে ওঠে দাড়ালো। টিস্যুর প্যাকেট থেকে একটি টিস্যু বের করে সেই টিস্যুটি রূপলের দিকে এগিয়ে দিলো! রুক্ষ গলায় বলল,

“দেখি মুখটা মুছে দিন!”

অবাক হলো রূপল! নির্বোধ দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকালো। তবে প্রশ্ন করলনা! কারন রূপল জানে কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া নীহারিকা রূপলকে জনসম্মুখে এই কাজ করতে বলবে না। নীহারিকার মুখ মুছাতে মুছাতে রূপল এদিক ওদিক তাকালো। তখনি দেখল কিছু মেয়ে মুখ ফুলিয়ে নীহারিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছে! পিল চমকে গেল তাদের! তাহলে কী ছেলেটির গার্লফ্রেন্ডও আছে? বাঁকা হাসির রেখা নীহারিকার ঠোঁটে। উদ্দেশ্য দারুনভাবে সফল হলো তার! নীহারিকার চালবাজি বুঝে রূপল চাপা হাসল। তবে তা নীহারিকা বা মেয়ে গুলোকে বুঝতে দিলোনা।

রূপলের কোল থেকে নেমে গেল হৃদি। দাড়িয়ে দাড়িয়ে বেশ মনোযোগ দিয়ে আইসক্রীম খেতে লাগল। নীহারিকা একটি আইসমক্রীম মুখে দিতে দিতেই হৃদির আইসক্রীম শেষ হয়ে গেল! তখনি নীহারিকা তার অন্য আইসক্রীমটি হৃদিকে দিয়ে দিলো। খুশি হয়ে গেল হৃদি। নীহারিকার হাতে চুমু খেয়ে বলল,

“থ্যাংকস নীহা মা। তুমি এত্তগুলা ভালো!”

হৃদির পেছনে পেছনে রূপল ও নীহারিকা হাঁটতে লাগল। রূপলকে অনেক জোরাজুরি করেও নীহারিকা আইসক্রীম খাওয়াতে পারলনা। আইসক্রীম তেমন একটা পছন্দ নয় রূপলের! তার মতে আইসক্রীম হলো মেয়েদের খাবার জিনিস। রাস্তায় বের হলে ছেলেদের জন্য তো সিগারেটই সই! এই মুহূর্তে রূপলের সিগারেট খাওয়ার অনেক নেশা উঠল! তবে সুযোগ পাচ্ছেনা সে একান্তে গিয়ে কোথাও দু-এক টান মেরে আসার!

সুযোগ বুঝে রূপল নীহারিকার হাতটি ধরল। হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হাঁটার মনবঞ্চা তাকে চেপে বসল। অমনি নীহারিকা ঝট করে রূপলের হাত থেকে তার হাতটি ছাড়িয়ে নিলো! আমতা আমতা করে বলল,

“হাত ধরছেন কেন? দেখছেন না এটা একটা পাবলিক প্লেস?”

“ন্যাকামি বন্ধ করো তো! হাতটা দাও।”

“কী বললেন? আমি ন্যাকামি করি?”

“তাহলে হাতটা ছাড়ালে কেন?”

“ন্যাকামি কাকে বলে আপনি জানেন?”

“তুমিই বলে দাও।”

“তাহলে শুনুন। যদি আমি আপনাকে কথায় কথায় বাবু বলে ডাকতাম, চব্বিশ ঘণ্টা ফোন করে আপনাকে জ্বালাতন করতাম আর বলতাম বাবু তুমি কেমন আছো, কী করো, খাইছ, হাগছ? তুমি না খেলে কিন্তু আমিও আজ খাবনা বাবু! অথচ ভেতরে ভেতরে সব খেয়ে সাবাড়! এরপর তো এখন আবার নতুন ট্রেন্ড চালু হয়েছে নিব্বারা না হাগলে নাকী নিব্বিরাও হাগবেনা! আরও আছে। জান তুমি না বললে কিন্তু আমি এদিকে যাবনা ঐদিকে যাবনা। বাবু আমার হাত কেটে গেছে কিসি দিয়ে দাও! সেরে যাবে। এসবকে ন্যাকামি বলে বুঝেছেন?”

“তো করো না একটু ন্যাকামি! ছেলেরা তো এসব বিষয়ে একটু বেশিই মজা পায়!”

রূপলের ঠোঁটে ক্রুর হাসির রেখা দেখে মেজাজ গরম হয়ে গেল নীহারিকার। ধপাধপ পায়ে হেঁটে সে সামনে আগাতে লাগল। তখনি কাকতালীয়ভাবে লামিয়ার সাথে দেখা গেল তার! কয়েকজন বান্ধবীকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসেছে। যদিও নীহারিকা জানেনা লামিয়া তাকে দেখেছে কী-না! লামিয়াকে এক ঝলক দেখামাত্রই নীহারিকা পিছু ঘুরে গেল! ছুটে গিয়ে রূপলের মুখোমুখি দাড়ালো। রূপলকে আড়াল করার চেষ্টা করল! উজবুক দৃষ্টিতে রূপল নীহারিকার দিকে তাকিয়ে রইল। প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াট?”

“কিছুনা। এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরাবেন না একদম! শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকুন।”

“আরে হইছেটা কী বলবা তো?”

“যা বলেছি তা শুনুন। আমার কথার বাইরে গেলে কিন্তু মাথার চুল একটাও থাকবেনা।”

স্ট্যাচু হয়ে দাড়িয়ে রইল রূপল! নীহারিকার হুমকিতে চুপসে গেল সে! যে মেয়ে সামান্য রাগ থেকে নাকে কামড় বসাতে পারে সেই মেয়ে যে তার কথার এদিক ওদিক হলে চুলও ছিঁড়ে ফেলতে পারবে সে বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই! এই বয়সে ন্যাড়া হওয়ার শখ নেই তার। নীহারিকা যতই রূপলকে লুকানোর চেষ্টা করুক না কেন লামিয়া ঠিকই তার বান্ধবীদের রেখে নীহারিকার চোরামি ধরতে তড়তড়িয়ে চলে এলো রূপলের কাছে! নীহারিকাকে উপেক্ষা করে লামিয়া গলা ঝাকিয়ে মৃদু স্বরে রূপলকে বলল,

“আপনি মিস্টার রূপল না?”

তবুও ঘাড় ঘুরালোনা রূপল! দু-একবার চোখের পাতা ফেলে নীহারিকার দিকেই তাকিয়ে রইল। দাঁত কিড়মিড়াতে লাগল নীহারিকা! রাগে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। লামিয়ার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসল। রূপলের জবাবে নীহারিকা বলল,

“হ্যঁ। ইনি মিস্টার রূপল। কেন চিনতে পারছনা?”

তখনই ক্ষিপ্ত গলায় লামিয়া বলল,

“শোন নীহা? তোর সাথে কথা বলতে আমি ইন্টারেস্টেড না! আমি মিস্টার রূপলের সাথে কথা বলতে এসেছি। কথা বলা হয়ে গেলেই চলে যাব।”

তখনও রূপল লামিয়ার দিকে ফিরে তাকালোনা! নীহারিকার দিকেই তাকিয়ে রইল৷ রূপলের দিকে রোষভরা চাহনিতে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চাপল নীহারিকা। অপকট সুরে বলল,

“নিন কথা বলুন। আপনার সাথে কথা বলতে এসেছেন ইনি।”

মুভ হলো রূপল! রুদ্ধশ্বাস ফেলে লামিয়ার দিকে তাকালো। রূপলের দিকে তাকিয়ে লামিয়া লাজুক হাসল। সামনে পরে থাকা চুলগুলো কানের পেছনে গুজে বলল,

“আজ সকালে কী আপনিই আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিলেন?”

সকাল থেকেই রূপলের ফোনটা হৃদির কাছে ছিল। হয়ত তখনই ফোন ঘাটতে গিয়ে কোনোভাবে লামিয়ার কাছে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট চলে গেছে। তাই রূপল গলা ঝেড়ে বলল,

“হ্যাঁ ঐ আর কী….

রূপলকে বৃত্তান্ত খুলে বলার সুযোগ দিলোনা নীহারিকা! রাগে ফোঁস করে ওঠে সে সামনে হাঁটা ধরল। নীহারিকার রাগের কারণ বুঝতে পেরে রূপল পিছু নিলো নীহারিকার। পেছন থেকে অস্থির গলায় নীহারিকাকে ডেকে বলল,

“আরে নীহু শোনে? আমার পুরো কথা তো শুনে যাবে?”

পেছনে ফিরেও তাকালো না নীহারিকা! দ্রুত পা ফেলে সে পার্ক থেকে বের হয়ে গেল। মাথায় হাত চলে গেল রূপলের। লামিয়ার উপর রাগের মাত্রা বেড়ে গেল তার। পিছু ঘুরে তেড়ে গেল সে লামিয়ার দিকে। ঝাঁজালো গলায় বলল,

“আপনার জন্যই আজ আমার সংসারে অশান্তি বাঁধল! ইউ ইডিয়ট গার্ল!”

লামিয়াকে তাতিয়ে দিয়ে রূপল হৃদিকে কোলে তুলে পার্ক থেকে বের হয়ে গেল। নীহারিকার অস্তিত্বও কোথাও খুঁজে পেলনা সে। ফোন করেও নীহারিকাকে পেলনা। তবে ধরে নিলো নীহারিকা হয়ত বাড়ি চলে গেছে। কিছুক্ষণ পর মারজিনা বেগমের নাম্বারে কল করলেই সে কনফার্ম হবে।

হৃদিকে নিয়ে বাইকে ওঠে রূপল বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। ভেতরে ভেতরে নীহারিকার জন্য যেমন চিন্তা হচ্ছিল তেমনি রাগও কাজ করছিল। এই প্রথম নীহারিকার কোনো কাজে রূপল অসন্তুষ্ট হলো। অন্তত তার পুরো কথাটা তো একবার শুনবে? হুটহাট করে রেগে গেলেই কী চলবে?

______________________________________

মাঝখানে কেটে গেল দুইদিন। নীহারিকা এখনও রূপলের উপর রেগে আছে! রূপলের ফোন কল কিছুই তুলছেনা সে। তবে এর পেছনেও একটা কারণ লুকিয়ে আছে! পিয়াসাকে পরীক্ষা করতে চাইছে সে! নীহারিকা যেদিন থেকে রূপলের সাথে কথা বলা বন্ধ করেছে সেদিন থেকেই পিয়াসা বেশ স্বাভাবিকভাবে আচরণ করছে নীহারিকার সাথে! এই থেকে তার বুঝতে সুবিধা হলো যে পিয়াসা ভেতরে ভেতরে কোনো চাল চালছে! সেদিন রূপলের ফোন থেকে পিয়াসাই হয়ত লামিয়াকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিল! পিয়াসা তো সেদিন তার বাপের বাড়িতেই ছিল। তাই এটা অসম্ভব কিছু নয়। আর এই কাজে পিয়াসার সাথে লামিয়াও জড়িত ছিল! ঝামেলা বাঁধানোর জন্য সেদিন লামিয়া উদ্দেশ্যপ্রবণভাবে পার্কে গিয়েছিল। সুযোগ বুঝেই লামিয়া নীহারিকার সামনে সেই প্রসঙ্গটি তুলেছিল। যেন নীহারিকা রেগে যায়। তাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়! সব বুঝেও নীহারিকা এখন চুপ করে আছে! পিয়াসা ও লামিয়াকে সুযোগ দিতে চাইছে। যখন সে দুজনকেই প্যাচে পাবে তখনই সুযোগ বুঝে সে দুজনকে প্যাঁচিয়ে ধরবে!

ইদানিং পিয়াসা সারাক্ষণ লামিয়ার সাথে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকে। বিষয়টা বহুবার নীহারিকার চোখেও পরেছে। বাড়ি থেকেও হুটহাট বের হয়ে যাচ্ছে পিয়াসা। আজ বিকেলের দিকেও পিয়াসা বাসায় নেই। ঘুম থেকে ওঠে নীহারিকা পিয়াসাকে কোথাও খুঁজে পেল না। চা খেতে খেতে নীহারিকা তার মায়ের ঘরে গেল। কৌতূহলী গলায় শুধালো,

“ভাবি কোথায় মা?”

আলমারিতে কাপড় গোছাতে ব্যস্ত মারজিনা বেগম। তাই তিনি বেশ ব্যস্ত সুরেই বললেন,

“বলল তো বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছে। আশেপাশের কোনো একটা ফ্লাটে নাকী তার বান্ধবী জামাই নিয়ে উঠেছে। তাই তাকে দেখতে গেছে।”

“ওহ্ আচ্ছা।”

মারজিনা বেগমের কথায় জোর পেলনা নীহারিকা। দ্বিধা নিয়ে সে চা খেতে খেতে ড্রইংরুমে গেল। সোফায় বসে টিভি ছেড়ে দিলো। চ্যানেল পাল্টে পাল্টে মুভি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরল। চারিদিকে তখন মাগরিবের আযান পরে গেল অথচ এখনও পিয়াসা বাড়ি ফিরলনা! বিচলিত হয়ে উঠলেন মারজিনা বেগম। নীহারিকার সন্দেহ এবার প্রগাঢ় হলো। সে তার মাকে কিছু না জানিয়েই এই ভর সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল!

লামিয়াদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে নীহারিকা কলিং বেল চাপল! কাজের বুয়া এসে দরজা খুলে দিলো। বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিতেই বুয়া আবার রান্নাঘরে চলে গেল। যেহেতু বুয়া নীহারিকাকে চিনে তাই কোনো প্রশ্ন করলনা নীহারিকাকে। যেতে যেতে শুধু নীহারিকাকে বলে গেল,

“উপরে যান আফা। বাড়ির সবাই উপরেই আছে।”

বিশাল বড়ো বাড়ি লামিয়াদের। লামিয়ার বাবা পেশায় একজন পলিটিশিয়ান। এলাকায় সবচেয়ে বড়ো বাড়ি লামিয়াদের। ক্ষমতাও কম নয় তাদের। সিঁড়ি ভেঙে দু’তলায় উঠতেই পা ধরে গেল নীহারিকার! এই পা ব্যথা নিয়ে নীহারিকা দু’তলায় উঠতেই আতঙ্কিত হয়ে উঠল! লামিয়ার গোটা পরিবারের সামনে লামিয়ার বড়ো ভাই রাহুল পিয়াসার গালে একের পর এক চ’ড় থা’প্প’র মারছে! কেউ তাকে আটকাচ্ছেও না পর্যন্ত। পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু রঙ তামাশা দেখছে! একের পর এক চড় খেয়ে পিয়াসা ব্যথায় কুকড়ে উঠল। নাক-মুখ থেকে রক্ত বের হতে লাগল। মৃদু চিৎকার করে লুটিয়ে পরল মাটিতে!

এই মুহূর্তে কাউকে মানার সময় নেই নীহারিকার! হাতের কাছে পিছার ঝাড়ু পেতেই নীহারিকা হুড়োহুড়ি করে ঢুকে গেলে রুমে! তেড়ে গেল লামিয়ার বড়ো ভাইয়ের সামনে। উপস্থিত সবাই থতমত খেয়ে গেল! ঝাড়ুটা নীহারিকা রাহুলের মুখের সামনে ধরল। আক্রমনাত্নক গলায় বলল,

“এবার মে’রে দেখান আমার ভাবিকে! দেখব কত বড়ো ক্ষমতা আপনার। ইউর টাইম ইজ স্টার্ট নাও ইউ ব্লা’ডি, বি’চ!”

#চলবে…?

[পিয়াসা শ্যাষ!🥲]