ফেরারি প্রেম পর্ব-৫৮+৫৯

0
314

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

“এবার মে’রে দেখান আমার ভাবিকে! দেখব কত বড়ো ক্ষমতা আপনার। ইউর টাইম ইজ স্টার্ট নাও ইউ ব্লা’ডি, বি’চ!”

নীহারিকার স্পর্ধা দেখে বাকরুদ্ধ রাহুল! হটকারি দৃষ্টিতে সে চেয়ে রইল উগ্র নীহারিকার দিকে। মুহূর্তের মধ্যেই কী ঘটে গেল এসব? যা হলো সব অকল্পনীয় ছিল। পুরুষ মানুষ হয়েও নীহারিকার কাছে এখন তার নিজেকে ছোটো এবং হেয়ো মনে হচ্ছে! কারণ এই প্রথম কেউ তার দিকে এতটা তেড়ে এলো, প্রকাশ্যে তাকে মারার হুমকি দিলো, এমনকি গালি পর্যন্ত দিলো! তাও আবার তার বাড়িতে এসে, তার পরিবারের সামনে। এই ধাক্কা সহজে মানতে পারলনা রাহুল। মাথা গরম হয়ে গেল তার। তখনি পাশ থেকে লামিয়া ও লামিয়ার মা তেড়ে এলো নীহারিকার দিকে। লামিয়ার মা (জোহরা আনম) বাড়ি বয়ে এসে ছেলের অপমানে বেশ চটে গেলেন। গলা উঁচিয়ে তিনি খরখরে গলায় নীহারিকাকে বললেন,

“তোমার ভাবি কী করেছে জানো তুমি? বিস্তারিত না জেনেই তোমার সাহস কীভাবে হলো আমার ছেলের দিকে আঙুল তোলার? তাকে শাসানোর, তাকে গালি দেওয়ার? পরিবার থেকে বুঝি এই শিক্ষাই পেয়েছ?”

ঝগড়ুটে ভাব নিলো নীহারিকা। সাপের মত ফণা তুলল! ঝাঁজাল গলায় বলল,

“সাবধানে আন্টি। আপনি আমার পরিবার নিয়ে আমার শিক্ষা দিক্ষা নিয়ে কী প্রশ্ন তুলবেন শুনি? উল্টো আমি এখন আপনার শিক্ষাদিক্ষা এবং আপনার গোটা পরিবারের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলব! হ্যাঁ, মানলাম আমার ভাবি কোনো অন্যায় করেছে। যদিও জানি আমার ভাবি ঐরকম আহামরি কোনো অন্যায় করবেনা। যার জন্য তার গাঁয়ে হাত তুলতে হবে। তবুও তর্কের খাতিরে যদিও মানলাম আপনাদের ভাষ্যমতে আমার ভাবি কোনো অন্যায় করেছে তো তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তার স্বামী রয়েছে, তার শ্বশুড়- শ্বাশুড়ি রয়েছে, তার মা-বাবা-ভাই রয়েছে এতেও যদি কাজ না হতো তো আপনারা থানা পুলিশ করতেন। আপনাদের কোন শিক্ষায় আছে বলুন তো? একটা বিবাহিত মেয়েকে এভাবে বাড়িতে ডেকে এনে তাকে টর্চার করার? তার গাঁয়ে হাত তোলার? তাকে রক্তাক্ত করার? কী ভেবেছেন কী আপনারা? পলিটিশিয়ানের বংশধর বলে আপনাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করা যাবেনা? আম জনতা বলে কী আমরা গাঙের জলে ভেসে এসেছি? আইন কানুন জানা নেই আমাদের? আইন আমাদের পক্ষে থাকবেনা?”

নীহারিকার উচিৎ ও উপযুক্ত কথায় থতমতিয়ে গেল লামিয়া ও জোহরা আনম! নারী নির্যাতনের মামলা কতটা ভয়ঙ্কর জানা আছে তাদের। যদিও তারা নিশ্চিত ছিল এসব মামলা টামলা করেও নীহারিকা তাদের কিছু ছিঁড়তে পারবেনা! তখনি রাহুল তেতে উঠল! নীহারিকার দিকে এক কদম এগিয়ে এলো। হাত দুটি মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তুই কিন্তু বেশী বাড়াবাড়ি করছিস নীহারিকা। ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙিসনা আমার। তাহলে কিন্তু ভালো হবেনা।”

“খারাপ হওয়ার কী বাকী রেখেছ তুমি? আমার ভাবির গাঁয়ে হাত তোলা যে কথা আমার গাঁয়ে হাত তোলা তো একই কথা! তুমি আজ যা করলে তা মোটেও ভালো করোনি ভাইয়া। এর খেসারত কিন্তু তোমাকে দিতেই হবে।”

“কী করবি তুই হ্যাঁ? কী করবি? নারী নির্যাতনের মামলা করবি? ওকে! তাহলে করে দেখা মামলা। বাকীটা আমরা বুঝে নিব। তোর ভাবির বিরুদ্ধে আমাদের কাছেও যথেষ্ট প্রমাণ আছে!”

তখনি আহত শরীর নিয়ে পিয়াসা মেঝে থেকে ওঠে দাড়ালো। নীহারিকার পেছনে মুখ লুকালো সে! ভয়ে কেঁপে ওঠে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

“বিশ্বাস করো নীহারিকা। আমি কোনো অন্যায় করিনি। উল্টো ঐ লোকটা আমার সাথে জোর জবরদস্তি করতে চেয়েছিল! যখন আমি চিৎকার করে উঠলাম তখন তো লামিয়া এবং আন্টিও ছুটে এসেছিল রুমে। তারাও তো দেখেছিল লোকটা যে আমার শাড়ি খোলার চেষ্টা করছিল!”

তাৎক্ষণিক মাথা নুইয়ে নিলো লামিয়া এবং জোহরা খানম! দুজনই হকচকিয়ে উঠল। অসহায় দৃষ্টি ফেলল পিয়াসা লামিয়ার দিকে। করুন গলায় লামিয়াকে লক্ষ্য করে বলল,

“প্লিজ লামিয়া সত্যিটা বলো। চুপ করে থেকোনা আর।”

হকচকানো গলায় লামিয়ে আমতা আমতা করে বলল,

“না না। আমি এসব কিছুই দেখিনি! উল্টো দেখেছিলাম আপনি আমার ভাইয়ার গাঁয়ের উপর ওঠে নোংরামি করছিলেন ভাবি!”

নির্বাক হয়ে গেল পিয়াসা! কার সাথে এতদিন সে মেলামেশা করল? কাকে ভরসা করে ভাইয়ের বৌ বানাতে চেয়েছিল? কার জন্য নিজের ননদের সাথে অন্যায় করছিল? নিজের ভাইয়ের মন থেকে উঠছিল? হাসবেন্ডের সাথেও অশান্তি করছিল? দিনশেষে বুঝি তাকে এভাবে ঠকতে হলো? নিঃস্ব হতে হলো? এতকিছুর পরেও নীহারিকা কী আদো তাকে বিশ্বাস করবে? তার পাশে দাড়াতে চাইবে? কী হবে এখন তার?

লামিয়ার কথায় আচমকা হু হা করে হেসে দিলো নীহারিকা! এই বিপর্যস্ত মুহূর্তেও হাসতে হলো তার! হাত থেকে ঝাড়ুটা মেঝেতে ফেলে দিলো নীহারিকা। হাত দুটো ঝেড়ে শ্লেষাত্মক গলায় বলল,

“হাসালে লামিয়া আপু! সত্যিই হাসালে। আমার ভাবি নাকী তোমার ভাইয়ের গাঁয়ের উপর ওঠে নোংরামো করছিল! শুধু আমাকে কেন? পুরো এলাকা ঘুরেও যদি মাইক দিয়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে তুমি বলো না যে তোমার ভাই নির্দোষ? কিংবা কোনো মেয়ে নিজের স্বইচ্ছায় তোমার ভাইয়ের সাথে নোংরামো করছিল আর তোমার ভাই অবলা পুরুষের মত সব সহ্য করছিল তবে এলাকার কেউ এই কথা বিশ্বাস করবেনা! কেন বলো তো? কারণ, তোমার ভাইয়ের ক্যারেক্টার সম্পর্কে এলাকার ছোটো থেকে বড় সবারই বেশ ভালোভাবে জানা আছে! মেয়ে দেখলেই যে তার চোখ দুটো লোভে চকচক করে ওঠে তা এলাকার কচিকাচাদেরও জানা! এই কথা তুমি আমার সামনে বলেছ, প্লিজ বাইরে গিয়ে কাউকে বলোনা তাহলে কিন্তু তোমার মান ইজ্জত কিছুই থাকবেনা!”

পিয়াসা অবাক হলো নীহারিকার কথায়। অন্তত এতটুকু নিশ্চিত হলো যে নীহারিকা তাকে বিশ্বাস করেছে! কান্নার মাঝেও সে আলতো হাসল! স্বস্তি পেল। তৎক্ষনাৎ লামিয়া ক্ষেপে এলো নীহারিকার দিকে! চোয়াল উঁচিয়ে সে আঙুল তাক করে নীহারিকাকে শাসিয়ে বলল,

“খবরদার নীহারিকা। আমার পরিবারের সাথে লাগতে আসবিনা। তাহলে এর পরিণাম কতটা ভয়াবহ হবে তুই কিন্তু তা ভাবতেও পারছিসনা। যা হয়েছে তা এখানেই ভুলে যা! মুখ বন্ধ করে ফেল। তোর ভাবিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যা। যদি এই হুমকিতে কাজ না হয় তো তোদের সবার লাইফ কিন্তু ডিস্কের মধ্যে পরে যাবে!”

“তার মানে তুমি স্বীকার করছ যে তোমার ভাই আমার ভাবির সাথে জোর জবরদস্তি করেছিল?”

চুপ হয়ে গেল লামিয়া। আঙুলটা নামিয়ে নিলো। অন্য পাশ ফিরে রাগে ফোঁসতে লাগল। জোহরা খানম তখন গলা উঁচিয়ে নীহারিকাকে বললেন,

“লামিয়া তোমাকে যা বলেছে তাই শোনার চেষ্টা করো নীহারিকা। আজ এই বাড়িতে যা হয়েছে সব ভুলে যাও! তোমার ভাবিকে চুপ থাকতে বলো। তাছাড়া আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণও নেই তোমাদের কাছে! তাই চুপ থাকাটাকেই আমি বেটার মনে করছি!”

“প্রমাণ আছে না আছে তা তো পরে দেখা যাবে আন্টি! তবে এটাও মাথায় রাখবেন নীহারিকাকে থামানো এত সহজ নয়!”

পিয়াসার হাত ধরে নীহারিকা হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। লামিয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে নীহারিকা পিয়াসাকে নিয়ে মেইন রাস্তায় চলে এলো। জোহরা খানম তখন রেগেমেগে রাহুলের গালে জোরে এক চড় বসিয়ে দিলেন! চমকে ওঠা রাহুলকে শাসিয়ে তিনি বললেন,

“কী দরকার ছিল নিজের নোংরা স্বভাব বাড়ির গেস্টদের সাথেও প্রমাণ করার? তোর জন্য এলাকায় তোর বাবার মান সম্মান নষ্ট হচ্ছে। কিছুদিন আগেও একটা ক্যালাঙ্কারি করলি। আজ আবার নতুন একটা। নীহারিকাকে চিনিসনা তুই? ধানি লঙ্কা এই মেয়ে! এতকিছুর পরেও তুই কী ভেবেছিস? দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকবে এই মেয়ে?”

ব্যথাযুক্ত গালে হাত রেখে রাহুল গম্ভীর গলায় প্রত্যত্তুরে বলল,

“তুমি নিশ্চিন্ত থাকো তো মা। প্রমাণ ছাড়া নীহারিকা আমার কিছু করতে পারবেনা! কেইস সাজানোর উপায় আমারও জানা আছে। হাজার হোক পলিটিশিয়ানের ছেলে আমি!”

লামিয়া ও লামিয়ার মা রাগে গজগজ করে রাহুলের রুম থেকে বের হয়ে গেল। গালে হাত রেখে রাহুল দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“তুই আমার কিছু করতে পারবিনা নীহারিকা! গাঁয়ে খুব চর্বি হয়েছে তোর তাইনা? খুব শীঘ্রই সেই চর্বি কমাব আমি!”

পিয়াসা ভয়ে ভয়ে নীহারিকার হাত ধরে হাঁটছে। সাহসে কুলোচ্ছিলনা তার নীহারিকার সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলার। কেমন যেন অনুশোচনা কাজ করছে তার। পিয়াসার প্রতি ব্যাপক ক্ষোভ জমে আছে নীহারিকার! তাই সে নিজেও এই মুহূর্তে পিয়াসার সাথে কথা বলতে চাইলনা!

ঘণ্টা খানিক পর। নীহারিকাদের বাড়ির বসার ঘরে দুই পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত। থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে সমগ্র বসার ঘর জুড়ে। নীহারিকার মুখ থেকে সব শুনে হতবাক দুই পরিবারের সবাই। চিন্তাভাবনা যেন লন্ডভন্ড হয়ে গেল তাদের। পিয়াসা তার রুমে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! পরিবারের লোকজনদের সামনে দাড়ানোর মুখ নেই তার। উপস্থিত সবাই পিয়াসার সাথে যা ঘটল তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন এবং হতাশ হলেও রূপল তার রাগকে সংযত করতে পারলনা! হনহনিয়ে হেঁটে গেল সে পিয়াসার রুমে। হাঁটু মুড়ে কাঁদতে থাকা পিয়াসাকে টেনে এনে সে বসার ঘরে সবার সামনে দাড় করালো। মাথা নুইয়ে কাঁদতে থাকা পিয়াসার গালে সে সপাটে একের পর এক চড় বসিয়ে দিলো! উপস্থিত সবাই রূপলের কান্ডে হকচকিয়ে গেলেও নিহাল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না! থম মেরে সোফায় বসে রইল! পিয়াসার কাজকর্মে সে বেশ আঘাত পেল।

চড় খেয়ে পিয়াসা চোখে জল নিয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে রূপলের দিকে তাকালো। রোষাগ্নি দৃষ্টিতে রূপল পিয়াসার দিকে তাকালো। মৃদু চিৎকার করে একের পর এক প্রশ্ন ছুড়ে বলল,

“আর কত মান সম্মান নষ্ট করবি আমাদের বল? ঐ লামিয়া মেয়েটার সাথে তোর কীসের বন্ধুত্ব? কত কাল ধরে চিনিস তাকে? কেন তুই আন্টিকে মিথ্যে বলে ঐ বাড়িতে গেলি? জিজুর পারমিশন নিয়েছিস একবারও? নিজেকে খুব বড়ো ভাবতে শুরু করে দিয়েছিন তাইনা? নিজেকে খুব স্বাধীন মনে করছিস?”

উপস্থিত সবাই মাথা নুইয়ে দাড়িয়ে রইল! কেউ রূপলকে বাঁধা দিতে এলোনা। এমনকি পিয়াসার মা এবং বাবাও না! তাদের মেয়ে যা করেছে অন্যায় করেছে। এক্ষেত্রে বড়ো ভাই হিসবে রূপলের শাসন করাটা অনুচিত নয়। নিহাল হঠাৎ গলা ঝাকালো। বসা থেকে শূণ্যে তাকিয়ে নির্জীব গলায় রূপলকে বলল,

“আমি জানি রূপল কেন তোমার বোন লামিয়ার সাথে এত ক্লোজ হয়েছে রূপল। একচুয়েলি সে চায়না আমার বোন তোমার বউ হয়ে তোমাদের বাড়িতে উঠুক! কারণ, আমার বোন দেখতে কালো! তোমার গাঁয়ের রঙের সাথে তার একদমই যায়না। লামিয়া তো খুবই সুন্দরী লামিয়ার সাথে তোমাকে মানাবে ভালো! অবশ্য এই নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই কোনো আক্ষেপও নেই। সবার পছন্দের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই তোমার বোনের মনের আশাই পূরণ করব আমি। তিক্ত হলে ও সত্যি রূপএ আজকের পর থেকে নীহারিকা তোমার সাথে আর কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখবেনা! তোমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ! ভেবোনা আমি মাথা গরম করে এসব কথা বলছি। যা বলছি ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে বলছি! এতটুকু বিশ্বাস আছে আমি যা বলব আমার বোন তা-ই শুনবে! আমার কথার বাইরে যাবেনা! ভাই হয়ে আমি নিশ্চয়ই তার খারাপ চাইবনা। আর এটাও চাইবনা তোমাদের সম্পর্কটা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কোনো অশান্তি হোক। কারণ, ভবিষ্যতে এর পুরো এফেক্টটা আমার বোনের উপরেই পরবে! তাই ভবিষ্যত সুরক্ষিত রাখা ভাই হিসেবে আমার কর্তব্য! তবে এর সাথে আমি আরও একটা কথা বলতে চাই রূপল, তোমার বোনকে তুমি এই বাড়ি থেকে নিয়ে যাও! অনেক তো চেষ্টা করলাম তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার। কিন্তু শেষ অবধি তা হয়ে উঠলনা। আজকের পর থেকে আমি তার মুখ ও দর্শন করতে চাইনা! প্লিজ তাকে নিয়ে যাও তোমরা! ইট’স মাই হাম্বেল রিকুয়েস্ট।”

ছ্যাত করে বুকে আ’গু’ন জ্বলে উঠল রূপলের! নীহারিকাকে পাবার আশায় তো সে একটু আগেও চাকরীর জন্য রিটেন এক্সাম দিয়ে এলো! ফরমাল পোশাক এখনও তার গাঁয়ে। দু’দিন ধরে না খেয়ে না ঘুমিয়ে চাকরীর জন্য প্রচুর পড়াশোনা করেছে সে। যদিও আরও এক দেড় মাস আগে থেকেই এক্সামের প্রিপারেশন ছিল তার। নিহাল তো সেদিন তাকে কথা দিয়েছিল নীহারিকা শুধু তারই হবে। কিন্তু আজ নিহাল পিয়াসার কাজে এতটাই কষ্ট পেল যে নিজের ওয়াদা নিজেই ফিরিয়ে নিলো? কী হবে এখন রূপলের? বুকের ভেতরটা যে হাহাকার করছে তার। মাথা ঘুরে আসছে। দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে আসছে। কাকে বুঝাবে সে তার ভেতরের এই নিগূঢ় যন্ত্রণা? নিহালের কথা মানতে গিয়ে নীহারিকাও কী তাকে অস্বীকার করবে? তার আকাশ ভরা ভালোবাসাকে অস্বীকার করবে? নিরুপায় হয়ে নীহারিকাও কী মেনে নিবে নিহালের কথা? ব্যথাতুর দৃষ্টিতে রূপল নীহারিকার দিকে তাকালো। তড়াক করে নীহারিকা তার অশ্রুসজল দৃষ্টি রূপলের থেকে নামিয়ে নিলো! দুই পরিবারের সবাই আজ খোলামেলাভাবে জানল রূপলের সাথে নীহারিকার সম্পর্ক রয়েছে। নীহারিকার বাবা মা আজ এই সম্পর্কে নতুন করে জানলেও রূপলের বাবা-মা আগে থেকেই তা জানত! তাই রূপলের মা-বাবা তেমন অবাক হননি। তবে রূপলের মা নাজনীন বেগম খুশি হলেন নিহালের প্রথম সিদ্ধান্তে! তিনি এখনও চাইছেননা রূপলের সাথে নীহারিকার বিয়ে হোক! তবে তিনি চাইছেন পিয়াসা এই বাড়িতেই থাকুক। স্বামী, সংসার নিয়ে থাকুক। নিহালের শেষেোক্ত সিদ্ধান্তটি তিনি মানতে পারেননি!

হতভম্ব দৃষ্টিতে পিয়াসা নিহালের দিকে তাকিয়ে রইল। পিয়াসার বিশ্বাসই হচ্ছিলনা নিহাল তাকে ছেড়ে থাকার কথা বলতে পারে! মন থেকে বুঝি এতটাই ওঠে গেল সে? বুকে পাথর চেপে রেখে নীহারিকা পাশ ফিরে রুদ্ধশ্বাস ফেলল। ঢোঁক গিলে শুকনো গলাটা ভিজালো। চোখে একরাশ জল নিয়ে কঠিন গলায় নিহালকে বলার চেষ্টা করল,

“ভাইয়া প্লিজ স্টপ! এই মুহূর্তে তোমার মুখে এসব কথা মানায় না। হ্যাঁ ঠিক আছে ভাবি যেহেতু চায়না আমি তাদের বাড়ির বৌ হয়ে যাই তো ঠিক আছে আমি যাবনা ঐ বাড়িতে বৌ হয়ে! তার ভাইয়ের সাথে আমি রাখবনা কোনো সম্পর্ক! আমার ভাইয়ের চেয়ে বড়ো আর কে হতে পারে? কেউ না।”

কথাগুলো বলার সময় নীহারিকার গলা থেকে ফুঁপিয়ে ওঠা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছিল! বুকটা অসহনীয়ভাবে কাঁপছিল তার। ছলছল দৃষ্টিতে সে এক ঝলক তাকালো রূপলের দিকে। রূপল যেন ভেঙেচুরে পড়ে যাচ্ছিল! রূপলের এই অসহনীয় অবস্থা সহ্য করতে পারছিলনা নীহারিকা! অথচ সে কখনও ভাবতেও পারেনি এই দিনটা তার জীবনে আসবে! তাকে বাবা-মায়ের মত গাইড করা বড়ো ভাই এবং তার জীবন মরণের সঙ্গি তার ভালোবাসার মানুষটির মাঝখান থেকে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে হবে! ঝট করে নীহারিকা তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। চোখ থেকে টুপ করে গড়িয়ে পরা জলটিকে আলতো হাতে মুছে নিলো। নাক টেনে ভরাট গলায় বলল,

“কিন্তু ভাবিকে তুমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলতে পারোনা ভাইয়া। আজ যা হয়েছে ভাবির সাথে অন্যায় হয়েছে। বাইরের আউট পার্সন হয়ে নিজের লালসা মেটাতে না পেরে রাহুল ভাই কেন ভাবির গাঁয়ে হাত তুলবে? এই রাইট রাহুলকে ভাইকে আমরা দিইনি। তুমি এক্ষুণি ভাবিকে নিয়ে থানায় যাবে ভাইয়া। রাহুল ভাইয়ার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করে আসবে!”

ক্ষেপে গেল নিহাল। ঝট করে বসা থেকে ওঠে দাড়ালো সে। নীহারিকার মুখোমুখি দাড়িয়ে তটস্থ গলায় বলল,

“শাট আপ। ইউ জাস্ট শাট আপ। সব জায়গায় বেশী ভালো মানুষি দেখানোর প্রয়োজন নেই তোমার। তোমার ভাবির কোনো অন্যায় নেই বলতে তুমি কী বুঝাতে চাইছ? রাহুল কী পার্সোনালী তোমার ভাবিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করেছিল? না-কী তোমার ভাবি জেচে গিয়ে নিজের ইজ্জত খোঁয়াতে গিয়েছিল? ঐ বাড়িতে যাওয়ার আগে একটা বার সে আমাদের থেকে জানতে চেয়েছে ঐ বাড়ির মানুষগুলো কেমন? সে যে বাড়িতে যাবে ঐ বাড়িটা তার জন্য সেইফ কী-না? আমি এইক্ষেত্রে রাহুলের কোনো দোষ দিবনা! সব দোষ তোমার সো কল্ড ভাবির! তাছাড়া রাহুলের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারব আমরা? কী প্রমাণ আছে তার বিরুদ্ধে? এখনও সময় আছে নিজের বুঝটা নিজে বুঝার চেষ্টা করো নীহা। যে তোমাকে এক আনার সম্মান দেয়না তাকে তুমি মাথায় তুলছ? যে তোমাকে আপন ভাবতে চায়না তুমি তাকে আপন ভাবো?”

নিহালের হুমকি ধমকিতেও তেমন ভয় পেলোনা নীহারিকা। মুখ চেপে কেঁদে সে পলকহীন দৃষ্টিতে তার ভাইয়ের দিকে তাকালো। বলল,

“আমার কাছে রাহুল ভাইয়ার বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে ভাইয়া। ঐ বাড়িতে ঢোকার সময় আমি আমার ফোনের রেকর্ডার সিস্টেমটা চালু করে গিয়েছিলাম! আমাদের মধ্যে সমস্ত কথা ঐ রেকর্ডারে রেকর্ড হয়ে গেছে!”

এতটুকু বলে নীহারিকা পাশ ফিরে বিধ্বস্ত পিয়াসার দিকে তাকালো। ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল,

“ভাবি আমাকে আপন না ভাবলেও আমি তো ভাবিকে আপন ভাবি ভাইয়া! তাই ভাবি আমাকে যতই অবহেলা করুক, যতই অপমান অপদস্থ করুক আমি ভাবির পক্ষেই থাকব।”

মেঝেতে বসে হু হু করে কেঁদে উঠল পিয়াসা! আর্ত গলায় নীহারিকাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“না নীহারিকা। আমি তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে চাইনা! আমার সাথে যা হয়েছে একদম ঠিক হয়েছে! এই দিনটা আমারই তৈরী। আমি যদি ঐ বাড়িতে না যেতাম তাহলে এত বড়ো দুর্হঘটনাটা ঘটত না। আমার পাপের শাস্তি আমি পেয়েছি নীহারিকা। তাই অযথা থানা পুলিশ করে আমি কারো মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাইনা! তোমাদের কাউকে কষ্ট দিতে চাইনা। কাউকে হয়রান করতে চাইনা।”

কাঁদতে কাঁদতে পিয়াসা এবার নিহালের পা দুটো চেপে ধরল! অনুনয় বিনয় কাকুতি মিনতি করে বলল,

“আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও নিহাল! আমি যা করেছি ভুল করেছি, অন্যায় করেছি। এই শেষ বারের মত আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। কথা দিচ্ছি আমি এবার থেকে নিজেকে শুধরে নিব।”

পিয়াসার ক্ষমা চাওয়া ও অসহায়ত্ব দেখেও বিন্দুমাত্র গললনা নিহালের মন! পা ঝারা দিয়ে সে ফেলে দিলো পিয়াসাকে! আপাতত পিয়াসার দিকে তাকানোর প্রয়োজনও বোধ করলনা সে। শক্ত গলায় নির্বাক রূপলকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“রূপল প্লিজ তুমি তোমার বোনকে এই বাড়ি থেকে নিয়ে যাও! আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।”

নিজের মধ্যে নেই রূপল। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তার। নিজের বুদ্ধিতে কিছু করার সেই বোধটুকুও নেই এখন তার মধ্যে। এখন যে তাকে যা বলবে সে তাই করবে। নিহালের কথা শুনে রূপল পিয়াসাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল! নিহালের নিষেধ অমান্য করে কেউ আটকাতে পারলনা পিয়াসাকে। এমনকি নিহালের মা-বাবাও। কম বিচ্ছেদে নিহাল এতটা রাগেনি। সচরাচর তাকে তেমন রাগতেও দেখা যায়না। আর একবার রেগে গেলে তার চেয়ে খারাপ কেউ হয়নাম

বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় রূপল উৎসুক দৃষ্টিতে পিছু ঘুরে একবার নীহারিকার দিকে তাকালো। বিশ্বাস ছিল এই বুঝি নীহারিকা চোখ তুলে সম্মোহনী দৃষ্টিতে একবার তার দিকে তাকাবে। সমস্ত বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে তার কাছে ছুটে আসবে। মনের অসুখ সাড়িয়ে দিবে তার। ভালোবাসা কী এতই ঠুনকো নাকী নীহারিকার? যে ভাইয়ের এক কথায় সে রূপলকে ছেড়ে দিবে? যথেষ্ট জোর আছে নীহারিকার ভালোবাসায়। তবে রূপলের সমস্ত বিশ্বাস এবং আশা ক্ষণিকেই ভেঙে দিলো নীহারিকা! ফিরে তাকালো না রূপলের দিকে। মাথা নুইয়ে রাখল। মনে হলো এই বুঝি রূপল জীবনের দ্বিতীয় ধাক্কাটা খেলো! আর এইবার বুঝি তার বেঁচে থাকার সম্ভবনা শূণ্যে এসে ঠেঁকল!

___________________________________

বছর দেড়েক কেটে গেল মাঝে! এই এক দেড় বছরে অনেককিছু পরিবর্তন হলো! দীর্ঘ এক বছর কানাডায় কাটিয়ে রূপল আজ দেশে ফিরছে নীহারিকার বিয়ে উপলক্ষ্যে! অফিস থেকে ফিরে এসেই সে বড্ড তাড়াহুড়ো করছে। সদ্য শাওয়ার সেরে কোমরে তোয়ালে বেঁধে সে ভেজা শরীর নিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে ল্যাকেজ গুছাচ্ছে। তখনি বেডে শুয়ে গেইমস খেলতে থাকা আরিয়ান কৌতূহলী গলায় রূপলকে শুধালো,

“আর ইউ শিওর রূপল? তুমি তোমার এক্সের বিয়ে খেতেই দেশে ফিরছ? কষ্ট হবেনা তোমার?”

“হেই স্টপ ডুড। আমি আমার এক্সের বিয়ে খেতে যাচ্ছি কে বলল? আমিতো যাচ্ছি আমার প্রেমিকার বিয়ে ভাঙতে!”

“হোয়াট রাবিশ রূপল। যে কী-না তোমাকে বিন্দুমাত্র ভালোবাসল না তুমি এখনও তাকে প্রেমিকা ভাবছ? তার জন্য কী-না একসময় হাতের শিরা কেটে সু’ই’সা’ইড করতে বাধ্য চেয়েছিলে? এখন আবার তার বিয়ে ভাঙতেও যাচ্ছ? হাউ ফানি ইয়ার!”

#চলবে…?

#ফেরারি_প্রেম
#পর্ব_৫৯
#নিশাত_জাহান_নিশি

“হোয়াট রাবিশ রূপল। যে কি-না তোমাকে বিন্দুমাত্র ভালোবাসল না তুমি এখনও তাকে প্রেমিকা ভাবছ? তার জন্য কী-না একসময় হাতের শিরা কেটে সু’ই’সা’ইড করতে বাধ্য চেয়েছিলে? এখন আবার তার বিয়ে ভাঙতেও যাচ্ছ? হাউ ফানি ইয়ার!”

আরিয়ানের কথায় থমকালো রূপল। ল্যাকেজ গোছানো বন্ধ করে দিলো। সোজা হয়ে দাড়িয়ে গেল সে। নিথর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে থাকা আরিয়ানের দিকে। মুহূর্ত কয়েক বাদে চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রূপল। মৌনতা ভুলে গলায় রুক্ষতা এনে প্রত্যত্তুরে বলল,

“সে আমাকে ভালোবাসেনি কে বলল? আমি বিশ্বাস করি আজও সে আমাকে ভালোবাসে! আমার ফিরে যাব সেই অপেক্ষায় দিন গুনছে। বরং তাকে ভুল বুঝে দূরে সরে এসে আমি জীবনের সবচেয়ে বড়ো বোকামিটা করেছি! জীবন থেকে দেড় দেড়টা বছর হেলায় নষ্ট করেছি। আজ এই সময়ে দাড়িয়ে আমি বুঝতে পারছি যে, একটা মেয়ে তার পরিবারের কাছে কতটা অসহায় আর কতটা অনুগত। চাইলেও তারা পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে পারেনা। সেদিন যখন নীহু তার ভাইয়া ও আমার মধ্যে তার ভাইয়াকেই বেছে নিয়েছিল সেদিন আমি জীবনের সবচেয়ে বড়ো আঘাতটা পেয়েছিলাম! সইতে পারিনি আমি সেই আঘাত। বাধ্য হয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিলাম। হসপিটালের বেডে শুয়ে যখন জীবন মরণের সাথে লড়াই করছিলাম তখনও আমি নীহুকে আমার আশেপাশে এলাউড করিনি! ভাগ্যবশত যখন মরণ পথ থেকে বেঁচে ফিরি তখনও ক্ষোভ থেকে আমি নীহুর থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য কানাডায় চলে আসি! পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিই! তবে আর নয়। অনেক হয়েছে অহেতুক রাগ, অভিমান, ভুল বুঝাবুঝি, দুঃখ, যন্ত্রণা, দূরত্ব। এখন তো নীহুকে বিয়ে করতে ও আমার কোনো বাঁধা নেই। একবছরে মোটামুটি স্যাটেল্ড হয়ে গেছি আমি। তার দায়িত্ব নেওয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য হয়েছে আমার। এবার কেউ আর আমাকে আটকাতে পারবেনা। নীহুর থেকে আমাকে কেউ আলাদা করতে পারবেনা। তাকে আপন করে নেওয়াটাই হলো এখন আমার মূল লক্ষ্য।”

কথা শেষে রূপল কয়েকদফা রুদ্ধশ্বাস ফেলল। ক্লান্ত হয়ে এলো সে। ল্যাকেজ গোছানো শেষে হ্যাঙারে ঝুলন্ত এ্যাশ কালারের শার্টটি গাঁয়ে জড়ালো। ঠোঁটের কোণে লেগে রইল তার আলতো হাসির রেখা। নীহারিকার ভাবনায় মত্ত সে। তার রুহ্ যেন পড়ে আছে এখন নীহারিকার কাছে। কখন সে বাংলাদেশে ল্যান্ড করে তার অতৃপ্ত চোখদুটো নীহারিকাকে দেখে তৃপ্ত করবে সেই ভাবনায় অস্থির হয়ে আছে। বিয়ে ভাঙার ব্যাপারটাও তাকে দ্রুত কনফার্ম করতে হবে। প্রয়োজনে এবার সে নিহালের হাতেপায়ে ধরবে! তবুও বিয়ে আটকে ছাড়বে।

এতক্ষণ যাবত রূপলের কথাগুলো বসে বসে ধ্যান করছিল আরিয়ান। ধ্যান ভেঙে সে হঠাৎ সন্দিহান গলায় ব্যস্ত রূপলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,

“এতকিছুর পরেও কী নীহারিকা তোমাকে গ্রহণ করবে রূপল?”

শার্টের বোতম লাগানো থামিয়ে দিলো রূপল। পিছু ঘুরে আহত দৃষ্টি ফেলল আরিয়ানের দিকে। তার সংশয়ও ঠিক এখানেই ছিল! নীহারিকা আদোতে তাকে মেনে নিবে তো? নাকি চাপা অভিমানকে প্রশ্রয় দিয়ে তাকে আবার দূরে সরিয়ে দিবে? তার ভেতরটাকে আবারও ভেঙেচূড়ে গুড়িয়ে দিবে না তো? তবে এবার আর ভাঙা মন নিয়ে ফিরবেনা রূপল। ভালোবাসার জোর খাঁটাবে! যত যাই হয়ে যাক না কেন নীহারিকাকে এবার তার হতেই হবে। তার ভালোবাসার কাছে নীহারিকাকে এবার হার মানতেই হবে। পরিস্থিতি যেমন সে বিগড়ে দিয়েছে তেমন ঠিকও করবে!

মুহূর্তেই ব্যগ্র হাসল রূপল! ভ্রু নাচিয়ে সন্দিহান আরিয়ানের দিকে তাকালো। চুলটা ঠিক করে ফিচেল স্বরে বলল,

“রূপল চাইলে সব সম্ভব ডুড। এবার হোক তা ভালোবাসার ক্ষেত্রে কিংবা শত্রুদের ঘায়েল করার ক্ষেত্রে! এতদিনে নিশ্চয়ই রূপলকে ভালোভাবে চেনা হয়ে গেছে তোমার?”

আরিয়ানের ঠোঁটের কোণেও ফুটে উঠল ক্রুর হাসির রেখা! লাফ দিয়ে সে বিছানা থেকে ওঠে দাড়ালো। দুষ্টু ভাব নিয়ে হুট করে রূপলের কোমরে থাকা টাওয়ালটি টেনে খুলে ফেলল! হাত থেকে টাওয়ালটি মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দৌড়ে পালালো রুম থেকে। বাঘা রূপল যেন তাকে অ্যাটাক করতে না পারে তাই সে বাইরে থেকে দরোজার খিল আটকে দিলো! উচ্চ শব্দে হেসে রূপলকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“সেদিনের কথা আমার আজও মনে পড়ে রূপল। মিস এলিনাকে তুমি কী গোলটাই না খাওয়ালে! ইউ আর অ্যা জিনিয়াস বস! দোয়া করি রূপল, তুমি যেন তোমার উদ্দেশ্যে সফল হও। নীহারিকা ভাবির মন জয় করে নাও।”

রাগে ফুঁসে ওঠে রূপল মেঝে থেকে টাওয়ালটি তুলল। কোমরে টাওয়ালটি প্যাচিয়ে ছুটে গিয়ে দরোজাটি সশব্দে ধাক্কাতে লাগল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“শুভ কাজে যাচ্ছি বলে তোমার সাথে ফাইট করলামনা আরিয়ান। তবে যদি আবারও এই দেশে ফিরে আসি তো এর রিভেঞ্জ কিন্তু আমি নিয়েই ছাড়ব!”

___________________________________

মেহেন্দি আর্টিস্টরা নীহারিকার দু-হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে দিচ্ছে। তা বেশ উৎসুক দৃষ্টিতে দেখছে নীহারিকা। বিয়েতে দুই হাত ভরে মেহেন্দি পড়ার মজাই আলাদা! মেহেন্দির অনুষ্ঠানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নীহারিকা আজ সবুজ রঙের একটি শাড়ি পরেছে। শাড়ির সাথে মিলিয়ে কানের দুল, গলার সেট পরেছে। চুলের মাঝ বরাবর সিঁথি করে সেই সিঁথিতে গলার সেটের সাথে মিল রেখে একটি টিকলি পরেছে। চুলগুলো দু-পাশে ছেড়ে দিয়েছে। মাথায় ছোটো ঘুমটা টেনে আর্টিস্টদের মেহেন্দি দেওয়া দেখছে। নীহারিকাকে দেখে বুঝা যাচ্ছেনা যে বিয়েতে অসুখী সে! নতুন আশায় বুক বাঁধছে সে। তবে কী রূপলকে ভুলে নীহারিকা এত সহজেই অন্য কাউকে গ্রহণ করে নিলো?

ড্রইংরুম জুড়ে আজ আত্নীয়-স্বজনদের ঢল নেমেছে। বিশাল মাদুর বিছিয়ে বসার জায়গা করা হয়েছে মেঝেতে। যেহেতু আজ মেহেন্দির প্রোগ্রাম তাই সবাইকে মেঝেতেই বসতে হবে। পাশেই স্পিকারে ফুল ভলিউমে গান বাজছে। ছেলেফেলেরা কিছুক্ষণ পর পর গান পাল্টাচ্ছে। মনের মত গান খুঁজে পাচ্ছেনা তারা। মহল মোটামুটি জমেই উঠেছে। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পাড়ার মহিলারাও বেশ আগ্রহ নিয়ে নীহারিকার হাতে মেহেন্দি দেওয়া দেখছে। আর্টিস্টদের অনেক প্রশংসাও করছে তারা। সেই সাথে মারজিনা বেগমের সার্ভ করা কোল্ড ড্রিংকসও খাচ্ছে। ছোটো ছোটো মেয়েরা তো বায়না ধরেছে তারাও হাতে মেহেন্দি পরবে। নীহারিকার আশেপাশে হাত পেতে বসে আছে তারা। এরমধ্যে হৃদিও রয়েছে! নীহারিকাকে বড্ড জ্বালাতন করছে সে। সেই কখন থেকে হৃদি নীহারিকার কানের পর্দা ফাটিয়ে বলছে মেহেন্দি আর্টিস্টদের বলতে তাকে আগে একটু মেহেন্দি পরিয়ে দিতে! ফ্রেন্ডসদের সাথে একটু পরেই নাচতে হবে তাকে! নীহারিকার বিয়েতে নাচবে বলে টানা দুইদিন নাচ প্র্যাক্টিস করেছে সে। হৃদির জ্বালাতনে অধৈর্য্য হয়ে নীহারিকা এবার মুখ খুলল। তার ডান হাতে মেহেন্দি পরাতে থাকা আর্টিস্টকে ডেকে সে নমনীয় সুরে বলল,

“আপু? আমার এই হাতে তো মেহেন্দি দেওয়া প্রায় শেষের দিকে। এখানেই ডিজাইনটা একটু স্টপ রাখুন প্লিজ! আমার দুষ্টু মেয়েটার হাতে একটু মেহেন্দি লাগিয়ে দিন তো। অনেকক্ষণ ধরে জ্বালাতন করছে সে।”

নীহারিকার আবদারে বিরক্তবোধ করলেন মেহেন্দি আর্টিস্ট! নাকমুখ কুঁচকে তিনি বিব্রতকর গলায় বললেন,

“সরি ম্যাম। এক হাতে একটানা মেহেন্দি পরাতে না পারলে আমার কন্সেন্ট্রেশন ব্রেক হবে। ডিজাইনটা খাপছাড়া হয়ে যাবে। দেখতে বিশ্রী দেখাবে। কাইন্ডলি তাকে আর একটু ওয়েট করতে বলুন ম্যাম। আপনার মেহেন্দি দেওয়া তো প্রায় শেষের দিকেই।”

অসহায় দৃষ্টিতে নীহারিকা ঠোঁট উল্টে হতাশ হৃদির দিকে তাকালো। রাগ নিয়ে হৃদি ফুলে ফেঁপে ওঠে বুকের উপর দু-হাত গুজে মাথা নুইয়ে বসে রইল। নিশ্চল দৃষ্টিতে নীহারিকা একধ্যানে তাকিয়ে রইল হৃদির অভিমান মিশ্রিত রক্তিম মুখশ্রীর দিকে। এই দেড় বছরে অনেকটাই বড়ো গেছে হৃদি। চেহারার আকৃতি ও গাঁয়ের রঙ পাল্টে হুবহু রূপলের কার্বন কপি হয়ে গেছে! এর মাঝে হঠাৎ রূপলের কথা মনে পড়ে যেতেই নীহারিকার মন কেঁদে উঠল! শান্ত মুখের গড়ন তার অশান্ত হয়ে উঠল। চেহারার উজ্জ্বলতা ম্লান হয়ে এলো। চোখজোড়া জল নিয়ে সে মাথা নুইয়ে নিলো। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে সে হয়ত এতক্ষণে চিৎকার করে কাঁদত! মন থেকে যাকে একবার মুছে ফেলেছে সে তাকে নিয়ে তো দু’বার ভাবাটাও পাপ! সেখানে চিৎকার করে কাঁদার প্রসঙ্গ উঠতেই পরক্ষণে নীহারিকার বড্ড হাসি পেল!

গত দুইদিন ধরে কাজকর্মের অনেক চাপ যাচ্ছিল নিহালের উপর। বিয়ে বাড়ির কাজ বলে কথা। খুটিনাটি সব দিকেই তার নজর রাখতে হচ্ছে। শরীরের দুর্বলতা থেকে নিহাল বাধ্য হলো কাজ ফেলে তার বেডরুমে আসতে। ধপ করে বিছানার উপর পরল সে। চোখ জোড়া বুজে কপালে হাত রেখে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করল। তখনই রুমে দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি ঘটল। শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে পিয়াসা এলো! মাথা নুইয়ে সে অপরাধী গলায় নিহালকে ডেকে বলল,

“নিহাল শুনছেন? আপনার শরবত।”

পিয়াসার গলার আওয়াজ পেয়ে মুহূর্তেই যেন নিহালের গরম মাথাটা আরও গরম হয়ে গেল! কপাল থেকে হাত সরিয়ে সে ঝট করে চোখ মেলল। রক্তিম চক্ষুতে পিয়াসার দিকে তাকালো। তৎক্ষনাৎ শোয়া থেকে ওঠে গেল। বদরাগী গলায় শুধালো,

“আমি বলেছি আমার শরবত লাগবে?”

ভয়ে থুত্থুর করে কেঁপে উঠল পিয়াসা! শরবরতের গ্লাসটি হাতে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। যদিও নিহালের এই রূপ তার এখন আর অচেনা নয় তবুও নিজেকে মানিয়ে নিতে তার সময় লাগছে! শঙ্কিত গলায় সে জবাবে বলল,

“বলেননি। তবুও…

“এত দরদ দেখানোর প্রয়োজন নেই ওকে? আমার যখন যা প্রয়োজন হবে নিজের হাতেই করতে পারব। এই একই কথা আমি গত পাঁচমাস ধরে আপনাকে বুঝাতে বুঝাতে হাঁপিয়ে উঠছি।”

প্রতিবারের মত এবারও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল পিয়াসা। ভরাট দু’চোখে রোষাগ্নি নিহালের দিকে তাকালো। আহত গলায় শুধালো,

“আপনি এমন কেন বলুন তো? রঙ এত পাল্টান কেন? বাড়ির সবার সামনে প্রকাশ্যে আপনি আমার সাথে এক ব্যবহার করেন তো সবার অগোচরে চার দেয়ালের মাঝে আবার অন্য রকম ব্যবহার করেন। একবছর তো ছিলাম আপনার থেকে দূরে তাইনা? এরপরেও কীসের এত দম্ভ আপনার? কেন আপনি আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছেন বলুন তো? অন্যায় করার বিনিময়ে শাস্তি তো কম দেননি আমায়। আর কত শাস্তি দিবেন?”

চট করে পিয়াসার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো নিহাল! পিয়াসা শুনতে চাইল তাই কঠিন গলায় সে জবাবে পিয়াসাকে বলল,

“মন থেকে ওঠে গেলে কী করার?”

“তাহলে সোজা ডিভোর্স দিয়ে দিন!”

তড়াক করে নিহাল ক্রন্দনরত পিয়াসার দিকে তাকালো। ডিভোর্সের কথা শুনে তার বুকের ভেতরটা কেমন কেঁপে উঠল! তবে খারাপ লাগা বুঝাতে চাইল না সে। মুখের উদ্বেগী ভাব পাল্টে কঠিন ভাব ফুটিয়ে তুলল। পিয়াসার থেকে মুখ ফিরিয়ে সে রুম থেকে প্রস্থান নিতে নিতে বলল,

“যদি সম্ভব হতো তাও দিতাম! শুধুমাত্র আপনার অসুস্থ মায়ের দিকে তাকিয়ে আপনাকে একটা মিথ্যা সম্পর্কে বেঁধে রেখেছি! নয়ত সেই কবেই মুক্তি দিতাম।”

হনহনিয়ে হেঁটে রুম থেকে প্রস্থান নিলো নিহাল। হতবাক দৃষ্টিতে পিয়াসা তাকিয়ে রইল নিহালের যাওয়ার পথে। হাত থেকে শরবতের গ্লাসটি পড়ে গেল তার! হঠাৎ শোকে মাথা ঘুরে মেঝেতে পরে গেল সে!

নীহারিকার দু-হাতে মেহেন্দি দেওয়া মাত্র শেষ হলো। মেহেন্দি রাঙা দু’হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল নীহারিকা। কালো হাতে মেহেন্দির রঙ তেমন ফুটবেনা জেনেও সে খুশি! হৃদিকে তার জায়গায় বসিয়ে দিয়ে সে বসা থেকে ওঠে দাড়ালো। পা দুটো ঝিমঝিম করছে তার। এক্ষুণি পা দুটি না ঝারলে নয়। তখনি সজল ও শাকিল ব্যস্ত ভঙ্গিতে ক্যামেরা নিয়ে এলো নীহারিকার মেহেন্দি রাঙা হাতের ফটোশুট করতে। হাসিমুখে নীহারিকা ফটোশুট করতে ব্যস্ত হয়ে গেল! নীহারিকার হাতের ছবি তুলতে তুলতে শাকিল ও সজল নীহারিকাকে কৌশলে বাড়ির পেছনের দিকটায় নিয়ে এলো!

হুট করে তখন ঐদিকের সমস্ত আলো নিভে গেল! ভয়ে ঘাবড়ে উঠল নীহারিকা। নিভু দৃষ্টিতে এদিক ওদিক তাকালো। বিরক্তিকর গলায় বলল,

“ওত্তেরি। কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেলোনা?”

ভীতসন্ত্রস্ত গলায় নীহারিকা শাকিলকে বলল,

“ফোনের ফ্ল্যাশলাইটটা অন করো শাকিল। আমার অনেক ভয় করছে।”

মুহূর্তেই নীহারিকার চোখের সামনে আলো জ্বলে উঠল। স্বস্তির শ্বাস ফেলে নীহারিকা তার সামনে স্বচ্ছ দৃষ্টি ফেলতেই হাসিখুশি মুখখানি ফ্যাকাসে হয়ে এলো! চোখের স্বস্তি উড়ে গেল। মনের শান্তি নষ্ট হলো। পৃথিবীর সবচেয়ে অপছন্দের লোকটি যে তার সামনে দাড়িয়ে! কীভাবে সম্ভব তা? কানাডা থেকে তো তার আগামী পাঁচ বছরেও ফেরার কথা না। মাথা ঝাকালো নীহারিকা। সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আবার সামনে তাকালো। এবারও তার কাছে এটা স্বপ্ন বা অকল্পনীয় কিছু মনে হলোনা! তবে কী লোকটি উদ্দেশ্যপ্রবণভাবে আবারও তার জীবনের সমস্ত সুখ কেড়ে নিতে এসেছে?

হতভম্ব নীহারিকার দিকে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রূপল! চোখের পলক ফেলতেও যেন ভুলে গেল সে। প্রেয়সীর ব্যাকুল দু’চোখে তাকিয়ে ভালোবাসা খুঁজতে লাগল। তবে হায়। ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পেলনা চোখে। রীতিমত নিরাশ হলো রূপল৷ চোখে জল জমে এলো তার। শুকনো গলায় শুধালো,

“তার মানে তুমি সত্যি সত্যিই রাজি এই বিয়েতে?”

নির্ভীক রইল নীহারিকা। ক্ষুদ্রতম আবেগও প্রকাশ করলনা। রূপলের থেকে দৃষ্টিও নত করলনা। সমানে সমানে দাড়িয়ে কঠিন গলায় বলল,

“হ্যাঁ তো? আমাকে দেখে মনে হচ্ছেনা?”

“মনে হলেও বিশ্বাস করতে পারছিনা!”

এই বলে রূপল ক্ষুব্ধ হয়ে তার হাতে থাকা ফোনটি শুকনো ঘাসের উপর ছুড়ে ফেলল। দাঁতে দাঁত চেপে নীহারিকার দু-বাহুতে হাত রেখে তাকে ঝাকাতে লাগল। তেজী গলায় বলল,

“সামান্য অভিমান থেকে তুমি জীবনের এত বড়ো কঠিন সিদ্ধান্তটা নিতে পারোনা নীহু। কাইন্ডলি একবার বলো কার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে? তোমাকে আর কিছু করতে হবেনা। জাস্ট এতটুকুই বলো।”

নিথর হয়ে দাড়িয়ে রইল নীহারিকা। রূপলের দিকে ভাবশূণ্য দৃষ্টিতে তাকালো সে। আঙুল দ্বারা ইশারা করে তাদের থেকে একটুখানি দূরে দাড়িয়ে থাকা সজলকে দেখালো! উদ্দেশ্যপ্রবলভাবে বলে উঠল,

“সজল!”

রূপলের পাশাপাশি সজলও চমকে ওঠে চিৎকার করে উঠল! রূপল এবং সজল দুজনই বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে নীহারিকার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“হোয়াট?”

শাকিলও তাদের সাথে সাথে বোকা বনে গেল! গোল গোল চোখে হা করে দাড়িয়ে থাকা সজলের দিকে তাকালো। নির্বোধ গলায় শুধালো,

“সিরিয়াসলি? তুই নীহারিকা আপুর উডবি?”

রূপলকে পুরো দমে উল্লু বানিয়ে নীহারিকা হনহনিয়ে হেঁটে সজলের গাঁয়ের সাথে ঘেঁষে দাড়ালো। হতবাক রূপলের দিকে তাকিয়ে সে জোরপূর্বক হাসল। বিড়বিড় করে সজলকে শাসিয়ে বলল,

“যেভাবেই হোক তোমার ভাইয়াকে বিশ্বাস করাও যে তুমিই আমার উডবি! নয়ত সানিয়ার সাথে তোমার ব্রেকাপ কনফার্ম!”

বিচলিত দৃষ্টিতে সজল পাশ ফিরে নীহারিকার দিকে তাকালো! অন্তরআত্তা কেঁপে উঠল তার। কপাল চাপরাতে লাগল সে। মাথা নুইয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বিড়বিড়িয়ে বলল,

“আমি আপনার কোন জন্মের শত্রু ছিলাম বইন? কেন আপনি আমাকে এই মাইনকার চিপায় ফাসালেন? কার সাথে আপনার বিয়ে ঠিক হইছে তা ভাইয়াকে ডিরেক্টলি বলে দিলেই তো হয়। আমিও বেঁচে যাই আপনিও বেঁচে যান।”

“বলা যাবেনা! এটা টপ সিক্রেট। তোমাকে যা বলতে বলছি তাই বলো। নয়ত সানিয়ার সাথে…

রূপলের হটকারি রূপ এবার হিংস্র হয়ে উঠল। রক্তশূল দৃষ্টিতে তাকালো সজলের দিকে। ক্রমশ আক্রমন প্রবণতা বাড়ছে রূপলের। এই বুঝি তেড়ে এসে ধরে ফেলবে তাকে। ভয়ে ‘কিডনি’ শুকিয়ে এলো সজলের! বুকে হাত চেপে ধরে সে দুরুদুরু গলায় বলল,

“সানিয়ার থেকেও বড়ো ঠাকুরের কাছেই তো আমাকে ফাঁসিয়ে দিলেন আপনি! তার চোখই তো বলে দিচ্ছে আজ আমার শেষদিন। জীবনের বড়ো কোনো শখ আহ্লাদ পূরণ করারও আর সময় পেলামনা! আহারে আমার সানিয়া! কত আশায় বুক বেঁধে আছে আমার বাচ্চার মা হবে। এখন তো বিয়ে শাদি করার আগেই তাকে বিধবা হতে হবে! সাদা থান পড়ে ঘুরে বেড়াবে আমার মা বাবাও বুঝি তাদের নায় নাতকুরের মুখ দেখতে পারবেনা।”

তখনি পাশ থেকে শাকিল হুড়োহুড়ি করে সজলের হাত থেকে তার ওয়াচটি খুলে নেওয়ার চেষ্টা করল! দ্রুত স্বরে বলল,

“দাড়া ভাই দাড়া। মরার আগে তো আমার ওয়াচটা আমাকে দিয়ে যা! যাক বাবা ফাইনালি তোর মত ছ্যাঁচড়া কাজিনের হাত থেকে মুক্তি মিলবে আমার! থ্যাংকস রূপল ভাইয়া। তোমাকে ম্যানি ম্যানি থ্যাংকস।”

#চলবে…?