ফেরারী বসন্ত পর্ব-০৫

0
9

#বড় গল্প
#ফেরারী বসন্ত
পর্ব-পাঁচ
মাহবুবা বিথী

বিয়ে বাড়ি বলে কথা। পুরো বাড়িতে আলোর রোশনাই ঝলমল করছে। হাসনা ভাবে,খালামনি তার মেয়ের বিয়েতে কোনো কমতি রাখে নাই। আল্লাহর রহমতে উনাদের টাকা পয়সার সেরকম কোনো ঘাটতিও নাই। দুহাত ভরে খরচ করতে পারছে। সারাবাড়িতে মানুষ গমগম করছে। একটু আগে ঢাকা থেকে জারার ফুফু এসেছে। উনারাও অনেক বড়লোক। ঢাকার উত্তরায় সোফিয়া ফুফুদের দুইটা বড় বড় ইলেক্ট্রনিক্সের শোরুম আছে। হাসনার তিরিশ বছর বয়সে একবার মাত্র উনার সাথে দেখা হয়েছিলো। একটু দেমাগী আছেন। জারা আর সিতারার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব এসেছে। এতো গম গম হট্টগোল হাসনার ভালো লাগছে না। ছাদে এসে পেতে রাখা স্টিলের চেয়ারটায় নিরিবিলিতে হাসনা বসে আছে। সামনেই হলুদের স্টেজ করা হয়েছে। তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেসব রজনীগন্ধা বেলী আর গোলাপের সুবাস এসে ওর নাকে লাগছে। আরশির জন্য হাসনার মনটা খুব পুড়ছে। সন্তানের জন্য মায়ের মন পুড়বে এটাই স্বাভাবিক। আজ যেন হাসনা খুব বেশী অনুভব করছে। মেয়েটা কি খাচ্ছে কি পড়ছে আল্লাহপাক জানেন। আবার আরশিকে যে নিজের কাছে এনে রাখবে সে উপায়ও নেই। বুকের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। মনে মনে বলে,”নারীর জীবন সব সময় না ঘরকা না ঘাটকা। সংসার করতে গেলেও নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। আর যদি সেটা না পারে তাহলে এই সমাজ সংসার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তুমি ব্যর্থ। কপালগুনে শ্বশুর বাড়ি ভালো পেলে তো ভাগ্য বর্তে যায়। আর যদি খারাপ হয় তাহলে তো সারাজীবন জ্বলে পুড়ে মরতে হয়। তাওতো ওর সংসারটা ধরে রাখা গেল না।”
হাসনা নিজেকে এই বলে সান্তনা দেয় আর যাই হোক প্রতিদিন পান থেকে চুন খসলেই মারের আঘাত তো আর সইতে হয় না, বডি সেমিং এর স্বীকার হতে হয় না,ভাতের খোঁটা খেতে হয় না এসব হাজারো কটু কথার বাক্যবান থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছে। তবে ডিভোর্স হওয়াতে এই সমাজ থেকে কিছু অর্জিত হয়েছে। সবার আগে ভাবে সংসার যেহেতু টিকলো না তাহলে সিংহভাগ দোষ ঐ ডিভোর্সি মেয়েটার। আড়ালে আবডালে আত্মীয়স্বজন ওকে নিয়ে নানা কটু কথা বলে। কখনও বা উনাদের গল্পের খোরাক হতে হয়। সে কারণে নীচের বিয়ে বাড়ির হট্টগোল থেকে নিজেকে সরিয়ে এই ছাদের মুক্ত হাওয়ায় হাসনা বসে আছে। শরতের মেঘমুক্ত আকাশ। শীতল বাতাস শরীরে এসে লাগছে।
মাঝে মাঝে এই সমাজের মানুষগুলোকে বলতে ইচ্ছা করে “মার খেয়ে শরীরের ব্যথায় কাঁদতে কাঁদতে যখন ও ঘুমিয়ে পড়তাপ তখন তাদের সংসার ধরে রাখা মেয়েদের কম্ম এই নীতিবাক্য কোথায় ছিলো। কিছু হলেই এই সমাজ খুঁজে খুঁজে মেয়েদের দোষ বার করে। অথচ সংসার ধরে রাখার দায় শুধু মেয়েদের নয় বরং এটা তার ব্যর্থতা যে ঐ মেয়েটাকে ধরে রাখতে পারেনি। মেয়েটা তার দীর্ঘদিনের চেনা পরিবেশ আর আপনজনদের ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবেশে চলে এসেছে সুতরাং তাকে ধরে রাখার দায়িত্ব ঐ ছেলেটার। অথচ এই সমাজ সংসার সবসময় নারীর দিকে অঙ্গুলি তুলে।” হাসনার সবচেয়ে বেশী কষ্ট লাগে ডির্ভোসী নারীদের সবাই শুধু করুনা করে। ভাগ্যিস হাসেমের বুদ্ধিতে ক্যাটারিং সার্ভিসের কাজটা শুরু করতে পেরেছে। স্বামীর সংসারে অন্যায় অত্যাচার সয়ে সয়ে আত্মবিশ্বাসটা তলানীতে ঠেকেছিলো। আজ অন্তত সেখানে এগিয়ে যাবার আলোকশিখা প্রজ্জ্বলিত করতে পেরেছে। সে কারণে বাবার সংসারে ও আজ আর বোঝা নয়।

সিঁড়িতে অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। হাসনার বিরক্ত লাগছে। নিশ্চয় জারার দেমাগী ফুফুটা আসতেছে। এখন ওকে দেখলেই এক গাদা প্রশ্নে জর্জরিত করবে। হাসনা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। আলো আঁধারিতে ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সায়মা বলে,
—কে ওখানে?
—-খালামনি আমি,
হাসনা ওদের সামনে এগিয়ে আসে। ওকে দেখে সায়মা বলে,
—তুই এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
—-নীচে গরম লাগছিলো। তাই ছাদে খোলা জায়গায় বসেছি।
ওর দিকে তাকিয়ে জারার ফুফু সোফিয়া বলে,
—একে তো চিনলাম না?
—আমার বোনের মেয়ে,
—-ও হা এখন মনে পড়ছে। কিছুদিন আগে যে মেয়েটার ডিভোর্স হয়েছে সেই মেয়েটা তো?
সোফিয়ার মুখে এ কথা শুনে সায়মার জা রুবা মনে মনে বলে,আমি বললেই দোষ,এখন কেমন লাগে? রাগ দেখিয়ে দুকথা শোনাতে পারো কিনা দেখি?
সোফিয়ার কথা শুনে সায়মা মনটা খারাপ করলো। সেদিকে তাকিয়ে সোফিয়া বলে,
—সরি ভাবি,তুমি কিছু মনে করো না। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল।
হাসনা এগিয়ে এসে হাসি দিয়ে বলে,
—আমিই তো এসব কথায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।
এরপর সায়মার দিকে তাকিয়ে হাসনা বলে,
–খালামনি তুমি কেন মন খারাপ করছো?
এমনসময় সিতারা বলে,
—অতি সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট। তোমাদের অবস্থা হয়েছে তাই। এসেছো হলুদের স্টেজ দেখতে। সেটা না দেখে সবাই মিলে ফাউল কথা বলতে শুরু করেছো।
জারা সাথে সাথে বলে,
—একদম ঠিক বলেছিস।
সোফিয়া স্টেজটার দিকে এগিয়ে গিয়ে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বলে,
—খুবই সুন্দর হয়েছে। তা এখানে কি নাচা গানা হবে?
সায়মা সোফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-না,তোমার ভাই নিষেধ করেছে। তাছাড়া এখানে চেয়ারগুলো সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে দিলে নাচার জায়গা হবে না। তবে সিতারা বলে,
—অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে আমরা নিজেরা একটু গান নাচ করবো।
—সে দেখা যাবে।
সায়মার ফোনটা বেজে উঠে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ফিরোজ মানে জারার বাবা বলে,
—-একটা দুঃসংবাদ আছে।
—কি,
—আজ যে বাবুর্চি আসার কথাছিলো সে হঠাৎ করে স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
—তাহলে এখন উপায়?
—-সেটাই তো ভাবছি। এতো তাড়াতাড়ি কোথা থেকে বাবুর্চি যোগাড় করবো।
—আচ্ছা দেখি কি করা যায়?
—দেখি বলতে তো হবে না। দেড়শো মানুষের রান্না এখন কে রাঁধবে?
—ফোন রাখি। ব্যবস্থা তো একটা করতেই হবে।
সায়মা ফোন রাখার সাথে সাথে সোফিয়া বলে,
—কোনো সমস্যা?
—-হুম,আজকে হলুদের রান্নার জন্য যে বাবুর্চি আসার কথা ছিলো সে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
সায়মার চিন্তিত মুখ দেখে হাসনা এগিয়ে এসে বলে,
—খালামনি, তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে রান্নার দায়িত্বটা আমি নিতে পারি।
সায়মা কিছু বলার আগেই সোফিয়া বলে,
—গায়ে হলুদের রান্না বলে কথা। অনভিজ্ঞ কারো হাতে পড়লে সব গুবলেট পাকিয়ে যাবে। কত গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আসবে। শেষে না জানি ভাইয়ার বদনাম হয়ে যায়।
তবে সায়না একটু সাহস পেলো। ও জানে হাসনা ক্যাটারিং এর কাজ করে। মনে মনে বলে দেখা যাক কি হয়?
ঐ রাতে আর বাবুর্চি যোগাড় করা সম্ভব হলো না। রান্নার দায়িত্ব অবশেষে হাসনার উপর পড়ে। রান্নার সুবাসে পুরো বাড়ি মৌ মৌ করছে। বাড়ীর সবাই ভীষণ অবাক। হাসনা সারারাত ভরে খাসীর বিরিয়ানী কাবাব আর জর্দা রান্না করলো। তবে হাসেম চলে আসাতে হাসনার সুবিধা হয়। হাসেমও বোনের সাথে হাত লাগায়। বিরিয়ানীটা হাসেম নাড়াচাড়া করে। হাসনার টেনশন ছিলো খাবার কম পড়ে যায় কিনা। সে কারণে আলাদা করে কিছু সাদা পোলাও রান্না করে রেখেছে। তবে হাসনার আগ বাড়িয়ে রান্নার দায়িত্বটা নেওয়াতে ওর দুই মামা মনে মনে বিরক্ত হয়। এমনিতেই বড় বোনটা আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়াতে ওরা খুব একটা যোগাযোগ রাখে না। ওর ছোটো মামা জুবায়ের মনে মনে হাসনার উপর বিরক্ত। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে বোন সায়মাকে বলে,
—-হাসনার উপর রান্নার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়াটা মনে হয় ঠিক হলো না।
জুবায়েরের সাথে সুর মিলিয়ে ওর বউ রত্না বলে,
—-মেজ আপা,আমার তো খুব টেনশন হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আবার খাবারে কম পড়ে যায় কিনা কে জানে?
সায়মা মনে মনে ভাই আর ভাইয়ের বউয়ের উপর বিরক্ত। বিয়ে বাড়িতে কতো কাজ থাকে। আগামীকাল বিয়ে। কনভেনশন হলে গিয়ে ওখানকার বাবুর্চির সাথে বাজার জরা দরকার। সেদিকে কোনো দায়িত্ব নেই। এখানে বসে হাসনার সমালোচনা করছে। হলুদ উপলক্ষ্য কেন শাড়ি আর পাঞ্জাবীটা ওদের হাতে দিয়ে বলে,
—আমি কিচেনে গিয়ে দেখি রান্না কতদূর এগুলো।
ওদিকে হাসনার বড়মামা সাবের ওর মাকে একা পেয়ে বলে,
—এখানে এসে তোর মেয়ের বাবুর্চির কাজ না করলে চলছিলো না তাই না? ও যে বাবুর্চির কাজ করে সেটা কি সবাইকে জানানো জরুরী ছিলো?
আসমা বেগম রেগে গিয়ে বলেন,
—আমার মেয়ে বাবুর্চী হোক আর সুইপার হোক সে কর্ম করে খায়। কারো ঘাড়ের উপর বসে খায় না।
সাথে সাথে সাবেরের বউ লিলি আসমাকে বলে,
—এমনিতেই ও ডিভোর্সী সেটা নিয়ে একটা সমস্যা তো আছে। সারাজীবন তো এভাবে কাটানো যাবে না। ওর তো বিয়ে দিতে হবে। আমার হাতে একটা ভালো ছেলে আছে। তবে বয়সটা একটু বেশী।
এমন সময় সায়মা ওদের দুজনের শাড়ি পাঞ্জাবী নিয়ে ঘরে ঢুকতেই লিলির কথাগুলো কানে আসে। সে কারনে ওকে সায়মা বলে,
—তা ছেলের বয়স কতো বেশী? এক পা আবার কবরে চলে যায়নি তো?
লিলি একটু বিরক্ত হয়ে বলে,
—-আমাদের মেয়েটাও তো আর নিঁখুত নয়। সেটাও তো আপনাকে বুঝতে হবে।
—তা নয় বুঝলাম। এখন তোমার পাত্রের ইতি বৃত্তান্ত বলো শুনি।
—-কোনো ঝামেলা নেই নির্ঝঞ্জাট পরিবার। দুই ছেলে মেয়ের বিয়ে শাদি হয়ে গেছে। ওরা আমেরিকাতে থাকে। বউটা হঠাৎ মরে যাওয়াতে পাত্রের জীবনটা নিসঙ্গ থাকে। সে কারণেই বিয়ে করতে চাইছে। সহায় সম্পত্তির কোনো অভাব নেই। দুটো কোল্ডস্টোরেজ আছে,নিজেদের তিনতলা বাড়ি, একটাতে নিজেরা থাকে বাকি দুটো ভাড়া দেওয়া আছে। পীরগাছায় একটা ইটের ভাটা আছে।
—সবই বুঝলাম। বয়সও নিশ্চয় ষাটের উপর হবে। পারতে নিজের মেয়ের জন্য এমন একটা প্রস্তাব আনতে? পারতে না। কারণ উপকার করতে হলে সম্মান দিয়ে উপকার করতে হয়। দয়া বা করুণা দিয়ে নয়।
একথা বলেই ওদের হাতে শাড়ি পাঞ্জাবী ধরিয়ে দিয়ে ঐ রুম থেকে মেজাজ খারাপ করে সায়মা বের হয়ে আসে। সায়মা চলে যাবার পর লিলি সাবেরের দিকে তাকিয়ে বলে,
—আসলে আজকাল কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না।
এরপর আসমার দিকে তাকিয়ে সাবের বলে,
—মেয়েটাতো তোর,তাই সিদ্ধান্ত তোকে নিতে হবে। প্রস্তাবটা কিন্তু খারাপ না।
ওরা দুজন ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আসমার ভীষণ কষ্ট লাগে। শেষ পর্যন্ত নিজের ভাই হয়ে ভাগনির জন্য এমন প্রস্তাব কি করে আনলো। চোখের পাপড়ি গুলো অজান্তে সিক্ত হয়ে উঠে। এমনসময় হাসনা আর হাসেম হাতে দুটো প্যাকেট নিয়ে ঘরে আসে। ওর মা ওদের দেখে তাড়াতাড়ি চোখের পানিটা মুছে ফেলে। হাসনা ওর মায়ের দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে,
—এখানে তোমার শাড়ি রাখা আছে। রেডী হয়ে নাও। দুটো বাজে।
আসমা শাড়ীটা খুলে দেখেন। এরপর হাসনার দিকে তাকিয়ে বলেন,
—রান্নার দায়িত্বটা নিতে গেলি কেন? শেষ পর্যন্ত সব রক্ষা হবে তো?
—-এতো ভেবো না। আমি তো আজ নতুন করছি না। এর আগেও আরো তিনটে অনুষ্টান করেছি।
—তুই কি পরবি?
মুচকি হেসে বলে,
—খালামনি আমাকেও একটা শাড়ি দিয়েছে।
হাসেম ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
—আজকে আপুর বিরিয়ানীটা ফাটাফাটি হয়েছে।
আসমা বেগম হেসে বলেন,
—ময়রা কোনোদিন নিজের দই মিষ্টির দোষ দেখতে পায় না।
মায়ের কথা শুনে হাসনা হেসে ফেলে। এরপর হাসেমের দিকে তাকিয়ে বলে,
—-গোসল করে রেডী হয়ে নে।
এরমধ্যে দুপুরের খাবার সময় হয়। বিয়ে বাড়িতে সবাই খাওয়া শেষ করে রেডী হতে শুরু করে। জারার জন্য মেকাপ আর্টিস্ট এসেছে। হাসনাকে সাজার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিলো। হাসনা যায়নি। বেশী ভারী সাজ হাসনার ভালো লাগে না। নিজের মতো হালকা সাজ দিয়েছে। তবে চোখে বেশ গাঢ় করে কাজল দিয়েছে। চুলগুলো আঁচড়িয়ে হাত খোঁপা করে নিয়েছে। আসলে মাথায় হেজাব দেওয়াতে চুল নিয়ে হাসনার টেনশন করতে হয় না।
অবশেষে গায়ে হলুদের অনুষ্টান শুরু হলো। ছেলের মা চাচী এসেছে। তবে খাবার খেয়ে সবাই অভিভূত। ছেলের চাচী থাকতে না পেরে একসময় সায়মাকে জিজ্ঞাসা করে,
—বেয়াইন আজকের রান্না কোন বাবুর্চি রেঁধেছে?
সায়মা চিন্তিত হয়ে বলে,
—কেন বেয়াইন রান্না কি খারাপ হয়েছে?
—কি বলেন,এমন রান্না বহুদিন খাইনি। সে কারণে জিজ্ঞাসা করলাম। তাছাড়া আপনি তো জানেন আমাদের দুটো রেস্টুরেন্ট আছে। শেফরা যে কি রান্না করে কে জানে? খাবারের তেমন স্বাদ পাই না।
হাসনা কিচেনে খাবারের তদারকি করছিলো। সায়মা ছেলের চাচীকে নিয়ে কিচেনে এসে বলে,
—-এই হলো আমার বাবুর্চি। কাল রাতে হঠাৎ করে বাবুর্চি স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হয়। মাথায় তো আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ভাগ্যিস আল্লাহপাকের রহমতে হাসনা সামলাতে পেরেছে। ও আমার বড় বোনের মেয়ে।
হাসনাকে দেখে মরিয়মের বেশ ভালো লাগে। হাসতে হাসতে মরিয়ম বেগম বলেন,
—-ইচ্ছা করছে তোমার দুই হাত সোনা দিয়ে বেঁধে রাখি।
এরপর ওখান থেকে সরে এসে সায়মার কাছে হাসনার খোঁজখবর নেয়। হাসনা ডিভোর্সি শুনে মরিয়ম বেগম মনে মনে রাজের জন্য ঠিক করে ফেলে। রাজ মরিয়ম বেগমের ছেলে। দুবছর হয় ডিভোর্স হয়েছে। একটা তিন বছরের মেয়ে আছে। কেন যেন উনার মনে হলো এই মেয়েটাকেই উনার রাজের জন্য খুব দরকার।

চলবে