ফেরারী বসন্ত পর্ব-০৬

0
9

#বড় গল্প
#ফেরারী বসন্ত
পর্ব-ছয়
মাহবুবা বিথী

ওদিকে বিয়ে বাড়িতে হলুদের অনুষ্ঠান জমে উঠেছে। কারণ পাভেলও চলে এসেছে। এটা সবার কাছে সারপ্রাইজড ছিলো। কেননা ওর আসার কথা ছিলো না।পাভেল আলাদা করে হলুদ করতে চেয়েছিলো। কিন্তু ওর দাদীর বিরোধিতার কারণে সম্ভব হলো না। উনার কথা হচ্ছে বিয়ে বাড়িতে এতো নাচ গান করা ঠিক নয়। এতে বিয়ের বরকত কমে যায়। ঘরোয়াভাবে বিয়ের গোসলের আগে গায়ে হলুদ দিয়ে পাভেলকে গোসল করানো হবে।এটা শুনে পাভেলের মন খুব খারাপ হয়। জারা একথা জানতে পেরে পাভেলকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য অনুরোধ করে। অবশেষে ও এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।
সায়মা আপাতত হাসনার বিষয়টা সবার কাছে গোপন রাখে। তবে সায়মা মন থেকে চায় হাসনার জীবনটা সুন্দর হোক। হাসনা অবশ্য বুঝতে পারেনি জারার চাচী শাশুড়ী ওকে নিজের ছেলের বৌয়ের জন্য পছন্দ করে রেখেছে। কার মনে কি আছে কে জানে? ওদিকে রত্না তো এক ঘাটের মরা নিয়ে এসে হাজির হয়েছে। তবে সায়মার একটু টেনশন হচ্ছে। স্ট্যাটাসের দিক থেকে রাজদের পরিবার অনেক উঁচু। তার উপর ওরা আবার যৌথ পরিবার। রাজের দাদী এখনও বেঁচে আছে। রাজের বাবাকে সায়মা যতটুকু দেখেছে ভদ্রলোক বেশ রাশভারী। রাজও ওর বাবার মতো হয়েছে। পাভেলের বাবা অবশ্য বেশ গাল্পিক। দিলটাও বেশ খোলামেলা। রাজ ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ করেছে। অপরদিকে হাসনা এইচএসসি পাশ। রাজের আগের বউটা বেশ কোয়ালিফাইট। ইউএন সেকশনে জব করতো। আজ শ্রীলঙ্কা কাল কেনিয়া এভাবেই দেশের বাইরে পোস্টিং হয়। রাজ মেয়েটাকে চাকরি ছাড়তে বলেছিলো। কেননা বছরের আটমাস সে দেশের বাইরে থাকে। আর যাই হোক না কেন এভাবে দাম্পত্য জীবন চলে না। শেষপর্যন্ত ওদের সংসারটা টিকলো না।
এখন হাসনার সবটা জেনে ওরা কি ওকে মেনে নিবে? আর মেনে নিলেও হাসনা কি ওদের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। সায়মা হাসনার সম্পর্কে একটা কথা গোপন করেছে। সেটা হলো হাসনার যে একটা মেয়ে আছে রাজের মাকে জানানো হয়নি। কেন যে সায়মা গোপন করলো তা নিজেই বুঝে উঠতে পারছে না।

রাত দশটা বাজে মেহমানরা সব চলে গিয়েছে। দুএকজন এখন আছেন। জারার শাশুড়ী আর চাচী শাশুড়ীর সাথে আরো দুএকজন এখনও রয়েছে। হাসনা শাড়ি বদলে একটা হালকা আকাশী রঙের থ্রিপীচ পড়ে ছাদে পেতে রাখা চেয়ার টায় বসে। হাসেমও বোনের খোঁজে ছাদে এসে হাজির হয়। পুতুলের মতো একটা বাচ্চামেয়ে কোলে নিয়ে হাসেম ছাদে এসেছে। হাসনার কোলে দিয়ে বলে,
—আপু তুমি একটু একে রাখো। আমার কোলে উঠেছে এখন আর নামতে চাইছে না।
হাসনা মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বলে,
—-বাচ্চাটা কার?
—জারার ভাসুরের,
—তোর কাছে আসলো কিভাবে?
—-চেহারাটা বেশ কিউট দেখে আদর করছিলাম। অমনি আঙ্কেল আঙ্কেল বলে কোলে উঠে পড়লো। আর তুমি তো জানো, বাচ্চারা আমাকে খুব পছন্দ করে।
বাচ্চাটার চেহারাটা বেশ মায়াবী। হাসনা ওর ফোলা ফোলা গালদুটো আলতো করে টিপে দিয়ে বলে,
—তোমার নাম কি?
—সালা?
হাসনা অবাক হয়ে হাসেমের দিকে তাকিয়ে বলে,
—-এ আবার কেমন নাম?
—-র বলতে পারে না। সে কারণে সালা বলেছে। ওর নাম সায়েরা।
হাসনা মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
—তোমার নামটার মতো তুমিও অনেক কিউট।
—তুমিও অনেক কিউট আন্তি।
মেয়েটার আধো বলে কথা শুনতে হাসনার ভীষণ ভালো লাগছে। আরশির কথা মনে পড়ছে। সংসারের কাজের চাপে আরশির এই সময়গুলো হাসনা এনজয় করতে পারেনি। সেই যে সকালে উঠে কাজে নামতো একদম রাত বারোটা পর্যন্ত বসার ফুরসুত ছিলো না। শুধু খাওয়ানোর সময় মেয়েটাকে একটু কাছে পেতো। কালে ভদ্রে যদিও কখনও আহ্লাদ করতো অমনি শাশুড়ী বলে উঠতেন,
—-পয়দা করেছে মেয়ে সন্তান তাতেই এতো আদিখ্যেতা,ছেলে হলে না জানি কতো ঢং দেখতে হতো। এরপর হাসনার থেকে আরশিকে কেড়ে নিয়ে বলতেন,
—-এগুলো দেখলে আমার শরীরটা জ্বলে। সেই তো আমার ছেলের একগাদা টাকা খরচ করে এই মেয়েকে পরের বাড়ি পাঠাতে হবে।
এমন সময় সিতারা হন্তদন্ত হয়ে ছাদে আসে। ওর পিছু পিছু বেশ হ্যান্ডসাম ভদ্রলোক উঠে আসেন। সিতারা হাসনার দিকে তাকিয়ে বলে,
–এই পুছকেটা তোমার কাছে কিভাবে এলো? ওদিকে ওর বাপ সারাবাড়িতে ওকে গরুখোঁজা খুঁজেছে।
হাসনা সিতারার দিকে তাকিয়ে বলে,
—হাসেমের সাথে এসেছে।
হাসেম সাথে সাথে বলে,
—-সায়রা তো ছাদে আসতে চাইলো তাই নিয়ে আসলাম।
রাজের দিকে তাকিয়ে হাসেম বলে,
—ভাইয়া,ওতো তখন আপনার সামনে আমার কোলে আসলো।
রাজ একটা বিষন্ন হাসি হেসে বলে,
—আসলে মেয়েটাকে আমি বড্ড ভালোবাসি। চোখের আড়াল হলেই অস্থির হয়ে যাই।
রাজের কথা শুনে হাসনা মনে মনে বলে,
“চব্বিশ ঘন্টা সাথে থাকে তাও একপলক না দেখলে উনি অস্থির হয়ে যান আর হাসনাতো ওর মেয়েটার দেখা কালে ভদ্রে পায় তাহলে ওর ভিতরটা কতটা পুড়ে।”
মুখে হাসির প্রলেপ মেখে সবার সাথে মিশে থাকে কিন্তু ওর চোখ শুধু মেয়েটাকে দেখার জন্য উতলা হয়।
রাজ হাসনার কোল থেকে মেয়েটাকে নিতে চাইতেই সায়েরা বলে,
— আমি আন্তির কাছে থাকবো। আমি যাবো না।
রাজও সায়েরাকে বলে,
—মা, আমাদের তো এখন ফিরতে হবে।
রাজ একদম জোর করে সায়রাকে নিতে গেলে হাসনার গায়ে হালকা ধাক্কা লাগে। সায়েরাকে কোলে নিয়ে রাজ হাসনার দিকে তাকিয়ে বলে,
—আপনাকে বিব্রতকরার জন্য দুঃখিত।
হাসনা রাজের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজ ওর মেয়েকে নিয়ে হাঁটা শুরু করে। রাজের আচরণ হাসনার কাছে খুব অদ্ভুত ঠেকে। রাজ চলে যাবার পর সিতারা হাসনাকে বলে,
—আপু সারাদিন তুমি কোথায় ছিলে? শেষ বিকেলে তোমার ভাইয়ের দেখা পেলেও তোমার দেখা পেতে রাত হয়ে গেল।
হাসনা ম্লান হেসে বলে,
—কাছেই ছিলাম,তুই ব্যস্ত ছিলি বলে দেখতে পাসনি।
হাসেমের দিকে তাকিয়ে বলে,
—হাসেম ভাই নীচে সবাই খুব মজা করছে। তুমিও চলো।
—পরে যাবো।
—ঠিক আছে,আমার বলার কথা বললাম,পরে আবার বলে বসো না তোমাকে সাধা হয়নি।
সিতারা চলে যায়। সিতারার চঞ্চলতা হাসেমের বেশ ভালো লাগে। এরপর হাসেম আর কিছু ভাবে না। কারণ দুটি পরিবারের আর্থিক বৈষম্য বিশাল।
হাসনা আজ ইচ্ছে করেই বিয়ে বাড়ীর হট্টগোল থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছে। প্রথমত বিয়েশাদির মাঝে আসলে নিজের অসুখী দাম্পত্যের কথা খুব মনে পড়ে। তার সাথে যোগ হয় আত্মীয়স্বজনের বাঁকা চাহনি। সে কারনে এ ধরণের ভীড়ভাট্টা এড়িয়ে চলে। হাসনার নিরবতায় হাসেম বলে,
—আপু তোর কি মন খারাপ?
হাসনা বিষন্ন হাসি হেসে বলে,
—আমার মতো মানুষদের মন খারাপ করতে নেই।
হাসনার বিষন্ন হাসি দেখে হাসেমের খুব খারাপ লাগে। ওর মনে পড়ে এই বোনটার কোলেপিঠে চড়ে ও বড় হয়েছে। বিয়ের পর স্বামীর কাছে লাথি ঝাঁটা খেয়ে হলেও ওর পড়াশোনার জন্য টাকা পাঠিয়েছে। হাসেম বুঝেনি আগে বোনটা যে এতো অত্যাচারিত হয়। যেদিন ওদের সামনে ঐ পাষন্ডটা বোনটার গায়ে হাত তুলে সেদিন বুঝেছে এই সংসারে কতটা আঘাত বোনটাকে হজম করতে হয়েছে।
নীচে সিঁড়ি দিয়ে কারা যেন আসছে। হাসনা আর হাসেম সচকিত হলো। হাসনা ওর খালা আর জারার শাশুড়ীদেরকে ওর কাছে আসতে দেখে অবাক হলো। জারার চাচী শাশুড়ী এসে হাসনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—জানো,যার মন সুন্দর আর সেই মনে যখন সবার জন্য ভালোবাসা থাকে তখনই তার রান্না স্বাদ হয়। তোমাকে দেখেই মনে হয় তুমি অনেক সুন্দর মনের মানুষ। এরকম মন সবার থাকে না। দোয়া করি আল্লাহপাক তোমার জীবন সুখ আর স্বাচ্ছন্দে ভরিয়ে দিন।
জারার চাচী শাশুড়ীর আচরণ দেখে সোফিয়া বলে,
—ওকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য আপনার নীচ থেকে এতো কষ্ট করে উপরে উঠে আসার দরকার ছিলো না। আপনার আর্থারাইজের সমস্যা আছে। কাউকে দিয়ে ডেকে পাঠালেই হতো।
—তা হতো,কিন্তু আমার নিজের ইচ্ছায় ওর কাছে এসেছি। যে মানুষটা সারাদিন এতোগুলো মানুষের জন্য রাঁধলো সে নিশ্চয় এখন খুব ক্লান্ত। তাকে আমার সাথে দেখা করার জন্য আসতে বলাটা আমার বিবেকে বাঁধছিলো। সে কারনে আমি নিজেই আসলাম।
এমন সময় সায়মার ভাইয়ের বউ রত্না বলে,
—আপা,ও জাস্ট পরিমানটা দেখিয়ে দিয়েছে। কিচেনে তো আপুর তিন চারজন হেল্পিং হ্যান্ড রয়েছে। ওরাই তো বেশী কাজটা করেছে।
সায়মা মনে মনে ভাইয়ের বউয়ের উপর বিরক্ত হলো। এখানে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে ওকে কে ডেকেছে? আগুনে ঘি ঢালতে জারার চাচী রুবা বলে,
—রত্না তুমি ঠিক বলেছো। কাজে সাহায্য করার জন্য আমাদের বেশ কয়েকজন হেল্পিং হ্যান্ড আছে।
মনোয়ারা বেগম মানে জারার চাচী শাশুড়ী একটু গম্ভীর হয়ে বলে,
—তোমরা যারা এধরনের দায়িত্ব কখনও পালন করোনি তারা কখনও বুঝবে না এসব কাজে কতটা শ্রম দিতে হয়।
আমি যৌথ পরিবারের বউ। সে কারনে এসব দায়িত্ব আমি আর পাভেলের মা প্রচুর করেছি। আমি জানি এসব কাজে যেমন পরিশ্রম থাকে তেমনি টেনশনের কমতি থাকে না।
সায়মা মনে মনে বলে কতগুলো কুটনী আমার পরিবারে জমা হয়েছে। ভাগ্যিস আপা আর জারার শাশুড়ী নীচে আছে। ওদের সামনে এমন কথার চালাচালি হলে সায়মা লজ্জাবোধ করতো।
মনোয়ারা বেগম হাসনার কাছে গিয়ে ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
—কাল সুন্দর করে সাজুগুজু করে বিয়েতে আনন্দ করবে। আজ তো কাজের চাপে তোমার টিকিটা দেখতে পাইনি।
উপস্থিত সবাই একটু বিরক্তবোধ করলো। কি এমন ভিআইপি তার আবার এতো খাতির। ওরা চলে যাবার পর হাসনা মনে মনে ভাবে,জগতে মানুষে মানুষে কত তফাৎ।

বিয়ে বাড়ি থেকে সবাই মুলাটোলে ফিরে আসলো। সায়মা জারার দাদী শাশুড়ী আর চাচা শ্বশুরের জন্য খাবার পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। মনোয়ারা বেগম বাড়িতে পৌঁছে জমিলা বেগম মানে জারার শাশুড়ীর কাছে তার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করলেন। অনেক সময় জাদের মাঝে দা কুড়াল সম্পর্ক হলেও এদের জায়ে জায়ে খুব মিল। সে কারণে মনোয়ারা বেগম তার গোপন ইচ্ছার কথা জমিলা বেগম শুনে বলে,
—-আপা,আগে আপনি রাজের মতামত নেন। কারণ রাজ যদি মনের দিক থেকে রাজী হয়ে স্বতস্ফুর্তভাবে বিয়েতে মত দেয় তাহলে সবার জন্য মঙ্গল। নয়ত যে মেয়েটা বউ হয়ে এ বাড়িতে আসবে তার কষ্টের সীমা থাকবে না। মেয়েরা সব সইতে পারে স্বামীর অবহেলা সইতে পারে না।
—-কথাটা জমিলা তুমি ঠিকই বলেছো। তবে মেয়েটাকে তোমার কেমন লেগেছে?
—-আপাত দৃষ্টিতে ভালোই লেগেছে। দেখে মনে হলো বেশ সাংসারিক। রশ্নি তো বেশী প্রফেশনাল ছিলো। সে কারণে সংসারটা টিকলো না। মেয়েটার লেখাপড়া কতদূর করেছে জানো?
—-হুম,এইচএসসি পাশ।
—তোমার ছেলে এতো অল্পশিক্ষিত মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হবে?
—কেন হবে না? তুই আর আমি তো মেট্রিক পাশ। তা আমাদের দিয়ে এই সংসারে কোন কাজটা হয়নি?
ছেলেমেয়েদের স্কুল কলেজে ভর্তি করা অসুখ হলে চিকিৎসা করা বাজার সদাই শপিং সব কিছু আমাদের দুজনকে করতে হয়েছে। আল্লাহর রহমতে ছেলেদুটো ঢাকা ভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছে। কোন জায়গায় খামতি ছিলো?
—সবই বুঝলাম আপা। তারপরও ওরা আজকালকার যুগের ছেলেমেয়ে। ওদের মতের গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে গায়ে হলুদের অনুষ্টান শেষ করে আসার পর পাভেলের দাদী মনোয়ারার কাছে ইতিবৃত্তান্ত শুনতে চাইলো। পাভেলের বাবা এসে মনোয়ারাকে জিজ্ঞাসা করে,
—ভাবি,আজকে জারাদের বাসার রান্নাটা কোন বাবুর্চি করেছে জানো?
—কোনো বাবুর্চি রাঁধে নাই। বেয়াইনের বড় বোনের মেয়ে রান্না করেছে। আসলে ওদের যে বাবুর্চি ঠিক করা হয়েছিলো সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তখন ঐ মেয়েটা রান্নার দায়িত্ব পালন করে।
নিজের শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন,
—মা, আপনার আর আপনার ছেলের জন্য বেয়াইন খাবার পাঠিয়ে দিয়েছেন।
পাভেলের বাবা রিশাদ চৌধুরী মনোয়ারা বেগমকে বলেন,
—মেয়ের রান্নার হাত ভীষণ ভালো।
মনোয়ারা বেগম শাশুড়ীর সাথে দেখা করে নিজের ঘরে আসেন। স্বামী আরশাদ চৌধুরী এশার নামাজ পড়ছিলেন। সায়েরা বিছানায় বসে খেলছিলো। মনোয়ারা বেগম শাড়ি বদলে ম্যাক্সি পড়ে নিলেন। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এসে একটা বড় ওড়না গায়ে জড়িয়ে রাজের রুমের দরজায় নক করেন। রাজ বিছানা থেকে দরজা খুলে মাকে ভিতরে আসতে বলে। মনেয়ারা বেগমের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে রাজ বুঝে ফেলে মা কি বলতে এসেছে? রশ্নি চলে যাবার ছ,মাস পর থেকে রাজকে এই ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। উনি রাজের জন্য বউ খুঁজে বেড়ান। আজও নিশ্চয় বিয়ে বাড়িতে এমন কাউকে দেখে পছন্দ করেছে। সে কারণে রাজ কে জানাতে এসেছে। এটা ও ঠিক বুঝতে পারছে। মা কিছু বলার আগেই রাজ ল্যাপটপে চোখ রেখে বলে,
—-বউ পছন্দ করে এসেছো?
মনোয়ারা বেগম বিমর্ষ হয়ে বলেন,
—এভাবে বলছিস কেন? সায়েরার দিকে তাকিয়ে তোর অন্তত বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
—-ঠিক আছে, কথা দিলাম এবার আর অমত করবো না। এবার দয়া করে এই রুম থেকে যাও। আমি একটা জরুরী কাজে ব্যস্ত আছি।
ছেলে মত দিয়েছে এই খুশীতে মনোয়ারা বেগম ছেলের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে হাসি মুখে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
মা চলে যাবার পর রাজ একটু অন্যমনস্ক হয়। রাজ ছাদে চলে যায়। আসলে ওর মা যখনি ওর বিয়ের কথা বলে তখনি রশ্নির প্রসঙ্গ ওর মনে পড়ে। আট বছরের প্রেম ছিলো তবুও রাজ বুঝতে পারেনি দুজন যে দুই মেরুর বাসিন্দা। অথচ বিয়েটা দুবছরও টিকলো না। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আধফালি চাঁদ উঠেছে। মনে হয় শুক্লপক্ষ চলছে। আধ ফালি চাঁদের স্থায়িত্ব অনেক কম। ঠিক ওর আর রশ্নির সংসার জীবনের মতো। রাজের পূর্ণিমা খুব ভালো লাগে আর রশ্নির কাছে এটা ঘুম বাদ দিয়ে বেহুদা সময় নষ্ট। রাজের কবিতা ভালো লাগে আর রশ্নির কাছে তা খুবই বিরক্তিকর। ছাদে বসে থেকে রাজ সিগারেট ধরালো। সবসময় খায় না। তবে রশ্নির কথা মনে হলে নিকোটিনের ধোয়ায় নিজের যন্ত্রণাকে পোড়াতে মন চায়। আকাশের আধফালি চাঁদটা ডুবে যায়। অন্ধকার নেমে আসে।

চলবে