ফেরারী বসন্ত পর্ব-০৭

0
9

#বড় গল্প
#ফেরারী বসন্ত
পর্ব-সাত
মাহবুবা বিথী

বিয়ে বাড়ি সেজে উঠেছে। হাসনার কাছে মনে হচ্ছে আলোকোজ্জ্বল এক স্বপ্নপুরী। নীচে প্যান্ডেল খাটিয়ে সেখানে বর আর বউয়ের স্টেজ করা হয়েছে। হাসনার এ রকম বিয়ের উৎসব তেমন একটা দেখা হয়নি। ও বার বার জানালা দিয়ে দেখছে,বর কখন আসবে। আজকের অনুষ্ঠানে ওর নিজের হাতে করা হ্যান্ডপেইন্টের শাড়িটা পরার ইচ্ছা ছিলো কিন্তু খালামনি সায়মা নিষেধ করলেন। এর পরিবর্তে একটা মেরুন রঙের মিরপুরের কাতান শাড়ি হাতে ধরিয়ে দিলেন। হাসনা না করতে পারেনি। খালামনির চাওয়া অনুসারে মেরুন রঙের কাতান শাড়িটা পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিপদে আপদে এই মানুষটাই পাশে থাকে। ওদিকে বর আসার সময় হয়েছে। সবাই গেট ধরতে গিয়েছে। বিয়ের এই পর্বগুলো হাসনার বেশ ভালো লাগে। যদিও নিজের বিয়েতে এসবের কিছুই ঘটেনি। নিচে বর এসেছে বলে শোরগোল শোনা যাচ্ছে। নিজের উপর ওর খুব রাগ হচ্ছে। এখনও শাড়ীটা ঠিকমতো পরতে পারছে না। এখন মনে হচ্ছে জারার কথা শুনলেই ভালো করতো। মেকাপ আর্টিস্ট দিয়ে শাড়ীটা পরিয়ে নিলে ভালো হতো। কোনো রকমে শাড়িটা গায়ে জড়ালো।তার সাথে ম্যাচ করে হেজাব মাথায় জড়িয়েছে। মুখে হালকা ফেস পাউডার চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে। ঠোঁটে মেরুন রঙের লিপিস্টিক দিয়েছে। তাতেই ওকে বেশ সুন্দর লাগছে। এখন ওর শরীরটা শুকিয়ে একটা সুন্দর আকার ধারণ করেছে। দেখে মনে হয় ওর যেন বিয়েই হয়নি। দরজায় নক করার শব্দ হচ্ছে। দরজা খুলেই দেখে ওর বাবা আর মা দাঁড়িয়ে আছে। ওর বাবা ওকে দেখে বলে,
—মা,খাওয়া শেষ হলেই আমরা রওয়ানা দিবো।
এমন সময় ফিরোজ মানে হাসনার খালু এসে রায়হান সাহেবকে বললেন,
—আসতে না আসতে যাবার কথা বলছেন এটা তো ঠিক নয়। এখন আমার সাথে চলুন। এখুনি বিয়ে পড়ানো হবে। আপনি উকিল হবেন।
রায়হান মাস্টার লজ্জা পেয়ে বলে,
—আমাকে কেন? জুবায়ের আর সাবের তো আছে।
—- সবার বড় হিসাবে এই দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে।
আসমার দিকে তাকিয়ে ফিরোজ বলে,
—আপা, আমার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়েছে না?
আসমা স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলে,
—ফিরোজ যখন এতো করে বলছে তোমার যাওয়া উচিত।
ফিরোজের ব্যবহারে হাসনা আর ওর মা খুবই মুগ্ধ। মানুষটার অর্থ বিত্তে কোনোদিকে কোনো খামতি নেই সেই সাথে কোনো অহঙ্কারও নেই। সবাইকে আপন করে নিতে পারে।
উনারা দুজন চলে যাবার পর হাসনা আর ওর মা নীচে চলে আসে। হাসেম আগে থেকে নীচে ছিলো। হাসনাকে দেখে সিতারা দৌড়ে এসে বলে,
—আপু,তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।
হাসনাও সাথে সাথে বলে,
—-আর তোর দিক থেকে তো চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।
হাসেম ওখানে দাঁড়িয়েছিলো। সিতারা আড় চোখে হাসেমের দিকে তাকিয়ে বলে,
—তুমি ছাড়া তো আমার এ রুপ কারো চোখে পড়ে না।
সিতারার কথা শুনে হাসেম ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। কারণ সিতারার প্রতি ওর দুর্বলতা ও প্রকাশ করতে চায় না। তেল আর পানি কখনও মিশে যায় না এটা হাসেম জানে। জারা আর সিতারা দুবোনই ভীষণ সুন্দরী। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সিতারাকে যতই ভালো লাগুক তাই বলে নিজের জীবনের সাথে হাসেম জড়াতে চায় না। সিতারা যে ওকে পছন্দ করে এটা হাসেম ঠিক বুঝতে পারে। হাসেম খুব লাজুক টাইপের ছেলে। সামাজিক বৈষম্য যদি নাও থাকতো তারপরও কোনোদিন সিতারার সামনে গিয়ে বলতে পারতো না,”আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।” এটা হাসেমের পক্ষে সম্ভব নয়।
হাসনাও সিতারার দুর্বলতা বুঝতে পারে কিন্তু ধরা দেয় না। সে কারণে প্রসঙ্গ এড়াতে বলে,
—-চলো ওদিকটায় যাই, এখনি মনে হয় বউয়ের বিদায় হবে।
বিয়ের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবার পরে এলো বিদায়ের পালা। বড় খালা হিসাবে সবার সাথে আসমা বেগমও গাড়ির কাছাকাছি গেলেন। ওখানে আগে থেকে জারার চাচী শাশুড়ী রাজ আর ওর মেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। হাসনাকে দেখেই সায়েরা ওর বাবার কোল থেকে নেমে হাসনার কাছে এসে বলে,
—আন্তি আমাকে একটু কোলে নাও না।
হাসনা অমত করতে পারে না। সায়েরাকে কোলে তুলে নেয়। সেই মুহুর্তে জারার চাচী শাশুড়ী রাজকে বলে,
—হাসনার সাথে তোমার নিশ্চয় পরিচয় হয়নি,ও জারার কাজিন মানে ওর বড়খালার মেয়ে। খুব ভালো মেয়ে।
রাজ একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। হাসনাকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে। হাসনা রাজের আচরণে খুব অবাক হলো। গতকাল ও সায়েরাকে নিয়ে খুব দ্রুত চলে গেল।যাক হয়তো তার ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতে পারে। ওখানে রাজের বাবা আর জারার শ্বশুরও ছিলেন। রাত হয়ে আসছে। জারার বাবা তাড়াতাড়ি রওয়ানা হতে তাগাদা দিলেন।
জারা আর পাভেল সবার কাছে বিদায় নিয়ে গাড়ীতে উঠলো। গাড়িটা ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে জারার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। এক ধরণের শুন্যতা অনুভব করে। অথচ এতোদিন ভেবেছিলো নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাবে সুতরাং ওর আর কষ্ট কিসের? কিন্তু পাভেলকে পাওয়ার আনন্দে যতটা বিভোর ছিলো আজকে চলে যাওয়ার সময় বাবা মায়ের জন্য কষ্টটা তার দ্বিগুন হয়ে বুকের মাঝে বিঁধতে লাগলো।

হাসনা বিয়ের দিনই ওদের বাড়িতে চলে আসার উদ্যেগ নেয়। যদিও ওর খালা থাকতে বলেছিলো কিন্তু হাসনা কতগুলো কাজের অর্ডার পেয়েছে। সেগুলো এরমাঝেই করতে হবে। সে কারণে একরকম জোর করেই বাড়ীতে চলে আসতে হচ্ছে। রওয়ানা দেওয়ার সময় হাসেমের চোখ দুটো সিতারাকে খুঁজছিলো। তারুন্যে ভরপুর হাসেমের মনটা যাওয়ার সময় ভীষণ উতলা হলো। যদিও চাইছিলো সিতারার সাথে দেখা না হয়। কিন্তু মনটা বলছিলো একটু দেখা হলে কিবা এমন ক্ষতি হবে। সিতারা ছাদে ছিলো। দূর থেকে দেখতে পারছে ওর বাবা মা হাসনাদের বিদায় জানাচ্ছে। ও সিঁড়ি দিয়ে খুব
দ্রুত নীচে নেমে আসে। হাসনাকে ডেকে বলে,
—–আপু তোমরা আজকের দিনটা থেকে গেলেই পারতে,
সিতারার ডাক শুনে হাসেম ওর দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে। সামনে সিতারার বাবা মা দাঁড়িয়ে আছেন। ফিরোজ হাসেমের পিঠে হাত বুলিয়ে বলে,
—-ভালো মতো পড়াশুনা করে নিজের পায়ে দঁড়াতে হবে। বাবা মায়ের দায়িত্ব তোমাকে পালন করতে হবে।
অবশেষে বিদায়ের পালা শেষ করে হাসনারা বাড়ীর পথে রওয়ানা দেয়।

ওদিকে মরিয়ম বেগম আর দেরী করতে চান না। জারার বিয়ের দুসপ্তাহ পার হয়েছে। মরিয়ম বেগম রাজের বিয়ে নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন। যেহেতু ও মত দিয়েছে সে কারণে মরিয়ম বেগম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসনাকে বউ করে আনতে চাচ্ছেন। বিয়ের দিন সবাই হাসনাকে দেখেছে। সে কারণে বাড়িতে বিষয়টা উপস্থাপন করলে সবাই বলেছে রাজ রাজি থাকলে ওদের আপত্তি নেই। মরিয়ম সায়মা বেগমকে ইতিমধ্যে রাজের বিয়ের ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। সায়মা এখন কিছুটা অবসর আছেন। বিয়ের বাড়ীর আত্মীয়স্বজন যার যার গন্তব্যে চলে গিয়েছে।
সায়মা একটা বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত। শত চেষ্টা করেও হাসনার মেয়ের কথাটা মরিয়ম বেগমকে বলতে চেয়েও বলতে পারেনি। মনে হলো যদি বিয়েটা ভেঙ্গে যায়। আসলেই মেয়েটার বিয়ে হওয়া খুব দরকার।

সায়মা হাসনার মাকে ফোন করে মরিয়মের পছন্দের কথা জানিয়ে দেয়। আসমা খুব খুশী হয় তবে পাশাপাশি এতো বড় ঘরে হাসনার বিয়ে নিয়ে চিন্তা হয়। ওরা আবার হাসনাকে অত্যাচার করবে নাতো? অনেক কষ্টে হাসনা আগের ঘরের দুঃসহ যন্ত্রণা ভুলে নিজেকে সামলে উঠার চেষ্টা করছে। মেয়েটা আসাতে সংসারের স্বাচ্ছন্দ কিছুটা ফিরেছে। এখন আবার যদি কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে হাসনার পক্ষে সামলে উঠা কঠিন হবে। আসমা সাত পাঁচ ভেবে সায়মাকে ফোন দিয়ে বলে,
—অত বড় ঘরে আমি হাসনাকে বিয়ে দিবো না।
—-আপা,সমস্যা কি?
—-অত বড় ঘরে বিয়ে দিয়ে পরে আফসোস করতে পারবো না। ওরা যদি হাসনার উপর মানসিক শাস্তি দেয় তাহলে ও আর নিতে পারবে না।
—-আপা,ওরা কিন্তু মানুষ হিসাবে খুবই ভালো। তাছাড়া যেঁচে যে সম্পর্ক হয় তাকে কখনও অবহেলা করতে নেই। ছেলের মা মানে জারার চাচী শাশুড়ী হাসনাকে ভীষণ পছন্দ করেছেন। তুমি অমত করো না।
সায়মার চাপাচাপিতে আসমা আর না করতে পারে না। দেখতে এসেই মরিয়ম বেগমরা হাসনা আর রাজের আকদ করে ফেলে। হাসনাকে সাজানোর দায়িত্ব জারা নিয়েছে। খুব সুন্দর করে জারা হাসনাকে সাজিয়ে দিয়েছে। আসমা কখনও ভাবেনি হাসনার এতো ভালো বিয়ে হবে। কেননা দ্বিতীয় বিয়ে সবার খুব একটা ভালো হয় না। তার উপর হাসনার প্রথম বিয়ের প্যারায় আসমা কখনও কল্পনা করেনি দ্বিতীয় বিয়েটা এতো ভালো হবে। আসলে যার সাথে যার রিজিক বাঁধা থাকে তার সাথে তার বিয়ে হবে। তবে দুজনকে বেশ মানিয়েছে।
ভার্সিটি খুলে যাওয়াতে সিতারা আসতে পারেনি। হাসেম অবশ্য ভেবেছিলো সিতারা আসবে। কিন্তু হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে যাওয়াতে ওর পক্ষে আসা সম্ভব হয়নি। সায়মা অবশ্য চেয়েছিলো এভাবেই হঠাৎ করে বিয়ে হোক। বেশী লোকজন ডাকাডাকির দরকার পড়লো না। বিশেষ করে সায়মার জা আর ওর দুই ভাইয়ের বৌ এরা মানুষ হিসাবে ভালো না। অপরের ভালো এরা সহ্য করতে পারে না। যদি কোনো উল্টাপাল্টা কথা বলে হাসনার বিয়েটা ভেস্তে যায় সেই ভয় থেকে সায়মা বেশী লোকজন জানাজানি করতে চায়নি। বিয়ের আনুষ্টানিকতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সায়েরা পুরোটা সময় হাসনার কোলে বসে থাকে। আজ আরশির কথা ভীষণ মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে আরশিকে যদি সাথে নিয়ে আসতে পারতো তাহলে খুব ভালো হতো। নানা ভাবনায় গাড়িটা রংপুর শহরে একটা তিনতলা বাড়ির সামনে থেমে গেল। জারা সায়েরাকে কোলে নিয়ে হাসনাকে গাড়ি থেকে নামতে সাহায্য করে। হাসনা খুব সাবধানে গাড়ি থেকে নামে। কেননা পায়ে শাড়ি বেঁধে যদি পড়ে যায় তাহলে বিশ্রী ব্যাপার ঘটবে। জারা হাসনাকে নিয়ে সোজা তিনতলায় উঠে বাসর ঘরে নিয়ে যায়। এরমাঝে সায়েরা ঘুমিয়ে পড়ে। জারা সায়েরাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে হাসনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-আপু আমার আজ ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।
হাসনার ভীষণ ভয় করছে। এতেবড় বাড়িতে ও মানিয়ে নিতে পারবে তো? হাসনাকে নিরব দেখে জারা বলে,
—-তুমি খুশী হওনি আপু?
—কেন খুশী হবো না? আমি তো আমার প্রাপ্তির চেয়ে অনেক বেশী পেয়েছি। ভয় হচ্ছে মানিয়ে নিতে পারবো তো?
জারা খুব জোর দিয়ে বলে,
—-ইনশাআল্লাহ, তুমি পারবে।
হাসনা বিছানার কোনায় গুটিশুটি মেরে বসে। কে যেন দরজা নক করছে। জারা দরজা খুলে দেখে ওর দাদীশাশুড়ী দাঁড়িয়ে আছেন। জারা ওর দাদীশাশুড়ীর হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে। হাসনাকে দেখে উনার খুব পছন্দ হয়েছে। হাসনার হাতটা ধরে আমেনা বেগম বলেন,
—-ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। সে কারণে আমার নাতিটাকে মায়া মমতা ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখো।
এরপর নিজের হাতের থেকে একজোড়া চুড়ি খুলে হাসনার হাতে পরিয়ে দিলেন। হাসনা বুড়িকে বুকে জড়িয়ে ধরে। আসলে পায়ে ধরে সালাম করার কালচারে ও বড় হয়নি। ওর মাস্টার বাবা পায়ে নয় বরং মুখে সালাম দেওয়া শিখিয়েছেন। আমেনা বেগমও হাসনার আচরণে খুশী। উনিও পায়ে সালাম করার পক্ষে নয়। এরপর বিছানায় ঘুমন্ত সায়েরার দিকে তাকিয়ে জারাকে বলেন,
—-জারা,আজ ওকে আমার ঘরে রেখে এসো। কাল থেকে না হয় হাসনার সাথে ঘুমাবে।
সাথে সাথে হাসনা বাঁধা দিয়ে বলে,
—না,দাদীমা ও আজ থেকে না হয় আমার কাছে ঘুমাক।
আমেনা বেগম তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে হাসনাকে পর্যবেক্ষণ করলেন। কথাটা কি মন থেকে বলেছে নাকি বলার জন্য বলেছে। নাহ্ হাসনার চেহারায় কোনো ভণিতা ছিলো না। সে কারণে আমেনা বেগম বলেন,
—-তোমার সমস্যা না হলে আমার কোনো সমস্যা নাই।
এরপর জারার দিকে তাকিয়ে বলে,
—-এখানে আমার তো আর কোনো কাজ নেই। ওর একটু বিশ্রাম নেওয়া দরকার। তুমি ওর ঘুমানোর পোশাকগুলো কোথায় রাখা আছে দেখিয়ে দাও।
জারা হাসনার প্রয়োজনীয় সব কিছু সামনে এগিয়ে দিয়ে ঐ রুম থেকে বের হয়ে আসে।
জারা চলে যাবার পর হাসনা পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে নেয়। খাটটা অল্প বিস্তর তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দামী চাদর বিছানো রয়েছে। জানালায় সাদা শিফনের পর্দা ঝোলানো আছে। বাতাসে পর্দাগুলো উড়ছে। রুমে একটা ড্রেসিং টেবিল রয়েছে। আয়নাটা বেশ বড়। পা থেকে মাথা পর্যন্ত অনায়াসে দেখা যায়। রুমের পাশে একটা ছোটো রুম আছে। রুমটাতে গিয়ে দেখে সেখানে বইয়ের সেলফ আর পড়ার টেবিল আর চেয়ার রয়েছে। একপাশে একাটা সিঙ্গেল খাট রয়েছে। রুমটা দেখা মাত্রই আরশির কথা মনে পড়লো। মেয়েটাকে আনতে পারলে এই রুমটা ওকে দেওয়া যেতো। হাসনা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত একটা বাজে। ওয়াশরুমে গিয়ে পোশাক বদলে এশার নামাজ আদায় করে নিয়ে ভাবছে,
“ওকি ঘুমিয়ে পড়বে নাকি রাজের জন্য অপেক্ষা করবে?”
এদিকে দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসছে। বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিতে দরজায় নক করার শব্দ হলো। চট জলদি বিছানা থেকে দরজা খুলে দেখে রাজ দাঁড়িয়ে আছে। হাসনা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। রাজ হাসনার দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলে,
—প্যাকেটটা রাখুন,
হাসনা হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—-এতে কি আছে?
—-সায়েরার ডায়াপার শেষ হয়ে গিয়েছে। কিনে আনলাম। রাতে ওকে ডায়াপার পরিয়ে দিও।
একথা বলে রাজ চলে যায়। হাসনা ভীষণ অবাক হয়। মনে মনে বলে, মানছি সায়েরার জন্য ঐ মানুষটা ওকে বিয়ে করেছে। তাই বলে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করা কি অপরাধ?

চলবে