ফেরারী বসন্ত পর্ব-১০

0
9

#বড় গল্প
#ফেরারী বসন্ত
পর্ব –দশ
মাহবুবা বিথী

আরশী এক সপ্তাহ থেকে ওর বাবার কাছে চলে যায়। যাওয়ার সময় কেঁদে কেঁদে হাসনাকে বলে,
—আম্মা, আমাকে যত তাড়াতাড়ি পারেন আপনার কাছে নিয়ে আসেন। সারাদিন সংসারের কাজ করি তারপরও আব্বা আর দাদী আমাকে সবসময় বকতে থাকে। মাঝে মাঝে আব্বা চড় থাপ্পরও দেয়৷ আমার আর ভালো লাগে না।
হাসনা পারবে কিনা জানে না। তারপরও আল্লাহপাকের উপর ভরসা করে ওকে কথা দেয় যত শীঘ্রই সম্ভব ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে।
সেদিন আরশীকে দেখে জারার অনেক মায়া হয়। ও এই প্রসঙ্গটা নিয়ে পাভেলের সাথে আলোচনা করতে চায়। কিন্তু ওর মা বলেছে, বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা যেহেতু উনাকে করতে হয়েছে তাই বিষয়টা যেন উনার উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে জারা আর পাভেলের আমেরিকা পাড়ি দেওয়ার সময় ঘণিয়ে আসছে। জারা চলে যাবে ভেবে হাসনার মনটা ভীষণ অস্থির হয়। আরশীর ব্যাপারে ভেবেছিলো জারার সাহায্য নিবে। কিন্তু ও এখন ওর দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
গতরাতে হাসনা আরশীকে স্বপ্নে দেখেছে। ও আর আরশী হাত ধরে নদীর পাড়ে হাঁটছে। আকাশে ফকফকা জোছনা। হাসনা আরশীকে নিয়ে ঘরে যেতে চাইলে ও বলে,
—,আম্মা বহুদিন পরে আপনাকে কাছে পেলাম। আজ সারারাত আপনার সাথে বসে জোছনা দেখবো। জানেন আম্মা,জোছনার সাথে আমার জীবনের অদ্ভুত মিল আছে।
হাসনা অবাক হয়ে আরশীকে দেখে আর ভাবে,
“কবে থেকে ওর মেয়েটা এতো বড় হয়ে গেল।” হাসনার নিরবতায় আরশী বলে,
—,আপনি জানতে চাইলেন না মিলটা কোথায়?
হাসনা অবাক বিস্ময়ে বলে,
—কোথায়?
—চাঁদের আলো শুক্ল পক্ষে একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর চাঁদের বয়স যখন মাঝামাঝি হয় তখন ঝকমকা আলোয় চারিদিকে মুগ্ধতা ছড়ায়। তারপর কৃষ্ণপক্ষে আস্তে আস্তে আলোর রোশনাই কমতে থাকে। তারপর অমাবশ্যা যখন আসে পুরো পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যায়। আমি যখন আপনার কাছে থাকি তখন আমার পৃথিবীটা আলোকিত থাকে। আর আব্বার কাছে যখন যাই তখন আমার পৃথিবীতে অমাবশ্যার অন্ধকার নেমে আসে।
হাসনা অবাক হয়ে আরশী আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে। এভাবে ও কবে থেকে কথা বলা শুরু করলো। হয়তো জীবন ওকে এভাবে কথা বলতে শিখিয়ে দিয়েছে। হঠাৎ ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করে। তার সাথে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো বরফের মতো ঠান্ডা। হাসনা আরশীর হাত ধরে একটু আশ্রয়ের জন্য দৌড়াতে থাকে। দূরে একটা বটগাছ দেখতে পায়। ও আরশীকে ডেকে বলে,
—আম্মু,চলো ঐ বটগাছটার নীচে দাঁড়াই।
এমনসময় ওর ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাজ পাশে শুয়ে ছিলো। হাসনার ঘুম ভাঙ্গতেই জিজ্ঞাসা করে,
—তুমি কি স্বপ্ন দেখছিলে?
হাসনা আমতা আমতা করতে থাকে। এরপর রাজ দুম করে বলে,
—আরশী কে?
হাসনা চমকে উঠে। রাজ ওর চমকে উঠা দেখে বলে,
—তুমি স্বপ্নে আরশী বলে ডাকছিলে তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
হাসনা রাজের কথার উত্তর না দিয়ে বলে,
—আমি পানি খাবো।
রাজ সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা ওর দিকে এগিয়ে দেয়। পানি খেয়ে হাসনা পাশ ফিরে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে।

গত দুদিন হাসনার প্রচন্ড বমি হয়েছে। আসলে ওর খুব অ্যাসিডিটি করেছে। কিন্তু বাড়ীর মানুষগুলে ভাবছে ও কনসিভ করেছে। কি মুশকিল! একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে। গতরাতে ওর শাশুড়ী বলেছে তোমাকে সকালে উঠতে হবে না। প্রথম প্রথম একটু বমি হয়। দু,তিনমাস পার হয়ে গেলে বমি বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। হাসনার ভীষণ অস্বস্তি লাগছে। এদিকে জারাও বাড়িতে নেই। সামনের সপ্তাহে ওদের ফ্লাইট। সে কারণে দুদিন আগে কামাল কাছনায় ওর বাপের বাড়িতে পাভেল সহ গিয়েছে। রাজও বাড়িতে নেই। এতো সকালে কোথায় গিয়েছে কে জানে? ইদানিং খুব ব্যস্ত থাকে। কিসের এতো কাজ হাসনা বুঝে পায় না। যদিও বাসায় তাকলে হাসনার সাথে খুব একটা কথা রাজ বলে না তবুও হাসনার ভালো লাগে। ও বাসায় আছে এতেই হাসনার অন্তরে সুখানুভূতীর উদ্রেক হয়।হাসনা রুম থেকে বের হয়ে একবার কিচেনে উঁকি মেরে দেখে ওর দুই শাশুড়ী মা কোমরে আঁচল বেঁধে রাঁধতে বসেছে। এতো কিসের আয়োজন বুঝতে পারছে না। পরক্ষণেই মনে হলো আজ তো জারার ফেরার কথা। হঠাৎ ওর দিকে নজর পড়তেই ওর শাশুড়ী মরিয়ম বেগম বলেন,
—তুমি আবার উঠে এসেছো কেন? বললাম না শুয়ে থাকতে?
—মা, আপনি যা ভাবছেন তাতো নাও হতে পারে।
তখনি ওর চাচী শাশুড়ী জমিলা বেগম মুচকি হেসে বলেন,
—-শাশুড়ীদের কথা শুনতে হয়।
হাসনা কিচেন থেকে বের হয়ে এসে দেখে কাজের হেলপার আকলিমা হাসনার পাশের রুমটা ঝেড়ে মুছে পরিস্কার করছে। রুমটাতে সায়েরার খেলার সামগ্রী রাখা হয়েছিলো। আজ সেখানে একটা সিঙ্গেল খাট পাতানো হয়েছে। একটা পড়ার টেবিল সাথে একটা ক্লসেট আর বইয়ের সেলফ রাখা হয়েছে। জানালায় নতুন পর্দা লাগানো হয়েছে। হাসনা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—কিরে, এখানে কে থাকবে?
—আমি তো জানি না ভাবী। খালাম্মা গুছিয়ে রাখতে বলেছেন।
সায়রা হাসনার দাদীশাশুড়ীর রুমে গল্প শুনছে। মেয়েটা গল্প শুনতে খুব পছন্দ করে। সে কারণে হাসনাকেও ইউটিউব দেখে গল্প মুখস্ত করতে হয়।
এদিকে সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো রাজের কোনো দেখা নাই। বিয়ের একবছর হতে চললো হাসনা কখনও রাজের মোবাইলে ফোন দেয়নি। আজ একটু ফোন দিতে ইচ্ছা হলো। মোবাইলে রিং হতেই ওপাশ থেকে গুরুগম্ভীর স্বরে রাজ বললো,
–কি ব্যাপার তুমি হঠাৎ ফোন দিলে?
হাসনা একটু থতমত খেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
—না মানে আপনি দুপুরে খেতে বাসায় আসলেন না দেখে ভাবলাম শরীর ঠিক আছে কিনা?
—শরীর ঠিক আছে। একটা জরুরী কাজে আটকে গিয়েছি।
—ঠিক আছে রাখছি।
ফোনটা রেখে হাসনা ফেসবুকে ঢুকে দেখে জারা আর পাভেলের সুন্দর সুন্দর ছবি ফেসবুকের ওয়ালে শোভা পাচ্ছে। কদিন আগে ওদের ম্যারেজ ডে হয়ে গেল। ওরা মালদ্বীপ বেরাতে গিয়েছিলো। ওখানে পানির উপরে রিসোর্টে পাশাপাশি দুটো চেয়ারে জারা আর পাভেল বসে আছে। পায়ের কাছে ঢেউ আঁছড়ে পড়ছে। হাসনারও বিয়ের একবছর হতে চললো। তবে কখনও রাজের সাথে ওর কোথাও বেরাতে যাওয়া হয়নি। তবে হাসনা আশাও করেনি। যেটুকু পেয়েছে তাতেই ওর মনে হতো অনেক বেশী পেয়েছে। বিছানায় গড়াগড়ি দিতে গিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি।

হঠাৎ জারার ডাকে হাসনার ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্রথমে ধাতস্থ হতে একটু সময় নেই। তারপর অস্বস্তি শুরু হয়। দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আর এখন মাগরিব পার হয়ে গেছে। ভীষণ লজ্জা লাগছে। জারার দিকে চোখ কছলে তাকিয়ে হাসনা বলে,
—তুমি কখন চলে এসেছো?
—-আমি কখন চলে এসেছি সেটা পরেও শুনতে পারবে। আজ না তোমার ম্যারেজ ডে। ভাইয়া তোমার জন্য অনেক দামী একটা গিফট নিয়ে এসেছে চলো দেখবে।
—আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।
ওয়াশরুমে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে মুখটা ধুয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবে, এই এক বছরে রাজ ওর প্রয়োজনীয় সবই ওর সামনে এনে দিয়েছে। কিন্তু একটা ভালোবাসার গোলাপ ফুল কিংবা বেলী ফুলের কখনও এনে দেয়নি। কখনও শুধু ওকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যায়নি। তবে এটা ওর অভিযোগ নয়। ও ভালো করেই জানে রাজের মতো পুরুষের বৌ হবার যোগ্যতা ওর নেই। আল্লাহপাক খুশী হয়ে হয়তো এই মানুষটার সাথে ওর রিজিক বেঁধে দিয়েছেন। কি এমন দামী গেল গিফট আনলো যেটা সবার সামনে দেওয়ার জন্য ওকে ডেকে পাঠিয়েছে। ফ্রেস হয়ে এসে জারার সাথে ডাইনিংরুমে আসে। সেখানে একটা কেক রাখা আছে। হাসনাকে দেখে ওর শাশুড়ী বলে,
—তোমার শরীর এখন ঠিক আছে?
—-হুম,এখন ভালো আছি।
শ্বশুর আরশাদ চৌধুরী ব্যস্ত হয়ে বলেন,
—আমাদের ফ্যামেলি ফিজিশিয়ানকে খবর দিলে একটু দেখে যেতো।
চাচা শ্বশুর রিশাদ চৌধুরী বলেন,
—খোঁজ নিয়েছিলাম। উনি রংপুরে নেই। একটা সেমিনারে যোগ দিতে ঢাকায় রওয়ানা দিয়েছেন।
সায়েরা দৌড়ে এসে হাসনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—মামনি,একটা —
কথাটা শেষ করতে পারে না। অমনি রাজ বলে,
—হাসনা, তোমার জন্য আমাদের সবার তরফ থেকে একটা স্পেশাল গিফট এনেছি।
একথা বলে রাজের পিছনে দাঁড়ানো আরশীর হাত ধরে হাসনার হাতে তুলে দিয়ে বলে,
—আরশীর কথা তোমার গোপন করা একদম উচিত হয়নি।
হাসনা আবেগে আপ্লুত হয়ে সবার সামনে রাজকে জড়িয়ে ধরে। রাজ সত্যিই খুব অবাক হয়ে যায়। আজ বিয়ের এক বছরে হাসনা নিজ থেকে এভাবে কখনও ওকে জড়িয়ে ধরেনি। এরপর আরশীর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিতে থাকে। আর দুচোখ দিয়ে অঝোরে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। আরশীও ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। পরিবারের প্রতিটি মানুষ মা আর সন্তানের এক অভূতপূর্ব মিলনের দৃশ্য অবলোকন করে।
এমন সময় জারার শাশুড়ী জমিলা বেগম বলেন,
—আজ থেকে আরশী এ বাড়ির মেয়ে। রাজ সেভাবেই ওকে নিয়ে এসেছে। উকিল ধরে একদম সারাজীবনের জন্য নিজের করে নিয়ে এসেছে। অবশ্য বিনিময়ে আরশীর বাবাকে অনেক টাকা দিতে হয়েছে।
জমিলার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে হাসনার দাদী শাশুড়ী বলে,
—- টাকার টাকা খরচ হয়েছে এতে সমস্যা নেই কিন্তু সন্তান তার মায়ের বুকে ফিরে এসেছে। এর কোনো তুলনা নেই।
হাসনা রাজের দিকে তাকিয়ে অঝোরে চোখের পানি ফেলছে। এ চোখের ভাষা যেন রাজ পড়তে পারছে। সন্তানের জন্য বাবা মায়ের অন্তর কতটা পুড়ে এই উপলব্দিবোধ রাজেরও আছে। হাসনা মনে মনে এ বাড়ির মানুষগুলোর জন্য অন্তর থেকে দোয়া করে। এদের সবার জন্য সুস্থতা আর নেক হায়াত কামনা করে। এ বাড়িতে এসে হাসনার এই উপলব্ধিবোধ হয়েছে, এরা মানুষকে সম্মান করতে জানে। কে বড়লোক কিংবা কে গরীব সেই হিসেবে নয়। মানুষ হিসাবে যার যতটুকু সম্মান প্রাপ্য তাকে ততটুকু সম্মান ওরা দেয়। এরপর হাসনা আর আরশী চোখের পানি মুছে কেক কাটায় অংশ নেয়। আজ হাসনা আর রাজের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। সেই সাথে এ বাড়িতে একজন নতুন অতিথির আগমনে প্রচুর খাওয়া দাওয়া আনন্দ হয়।

যে রুমটা ঝাড়মোছ করা হয়েছিলো সেখানে আরশীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসনার রুমের লাগোয়া আরশীর রুম। মায়ের কাছে এসে আরশী ভীষণ খুশী। এতো সুন্দর থাকার ঘর। ওর কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে। এরমাঝে সায়েরার সাথে আরশীর ভালোই বন্ধুত্ব হয়েছে। রাতে ডিনার শেষ করে আরশী ওর রুমে চলে যায়। সায়েরাও ওর পিছুপিছু ঐ রুমে চলে যায়। হাসনা রাতে সায়েরাকে নিতে আসে। কিন্তু সায়েরা যেতে চায় না। এমন সময় রাজ এসে বলে,
—-সায়েরা আজ আরশীর কাছেই থাকুক। ওদের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি বোঝাপড়া হবে ততই ভালো। ওদেরকে ওদেরমতো থাকতে দাও। তুমি চলে আসো।
রাজের আহ্বানে হাসনা যেন একটু কেঁপে উঠে। আজ বিয়ের একবছর হলো রাজ কখনও ওকে এভাবে কাছে ডাকেনি। হাসনা চাবি দেওয়া পুতুলের মতো রাজের পিছু পিছু রুমে চলে আসে। রুমের স্পট লাইটের মৃদু আলোতে বোঝা যায় বাইরে চাঁদের আলো ঝরছে। হাসনার দিকে তাকিয়ে রাজ বলে,
—ছাদে যাবে,আজ চাঁদের আলো ঝরছে। আমার জোছনা খুব ভালো লাগে।
হাসনাও সাথে সাথে বলে,
—আমারও জোছনা খুব প্রিয়।
জানালার কাছে দাঁড়িয়ে হাসনা চাঁদের পানে তাকিয়ে বলে,
—- এখন শুক্লপক্ষ চলছে।
রাজ অবাক হয়ে হাসনার দিকে তাকিয়ে বলে,
—তুমি কি করে বুঝলে?
—আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেন,আধফালি চাঁদ উঠেছে। এর স্থায়িত্ব ক্ষনস্থায়ী। জোছনায় ডুবতে চাইলে এখনি যেতে হবে।
রাজ হাসনার একদম কাছে চলে আসে। হাসনা দুম করে রাজকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকে। রাজের শার্টের সামনের অংশ ভিজে যায়। একসময় রাজও হাসনাকে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। হাসনা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—-আপনার এই ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না।
রাজ দুই হাত দিয়ে হাসনাকে বুকের উপর থেকে তুলে বলে,
—-স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে ঋণ, কৃতজ্ঞতাবোধ এগুলো থাকতে হয় না। বিশ্বাস আর ভরসায় সুখে দুঃখে একে অপরের পাশে থাকতে হয়। আমি শুধু তোমার পাশে থাকতে চেয়েছি। তবে তুমি একটা অপরাধ করে ফেলেছো। আরশীর কথা গোপন করা তোমার ঠিক হয়নি।
হাসনা শাড়ীর আঁচলের সুতো টেনে বলে,
—আমি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেই সুযোগটা করে নিতে পারিনি। তাছাড়া—
—তাছাড়া কি?
—খালামনি বলেছিলেন, এই বিষয়টা উনি সামলে নিবেন।
এরপর রাজের দিকে তাকিয়ে অবাক বিস্ময়ে বলে,
—-আপনি আরশীর কথা কিভাবে জানলেন?
—-প্রায় রাতে স্বপ্নে তুমি আরশী আরশী বলে ডাক দিতে। তখনি আমার সন্দেহ হয়। আম্মুকে জানালে বাকি কাজটুকু আম্মু করে। জারা আম্মুর সাথে কথা পুরো ঘটনা জেনে নেয়।
হাসনা একটু অস্বস্তি নিয়ে বলে,
—আরশীর বাবা তো ভালো মানুষ নয়। তার কাজ থেকে মেয়েকে কিভাবে আনলেন?
–উকিলের মাধ্যমে কাজটা করতে হয়েছে। তবে কি জানো,টাকার কাছে সবাই বশ হয়।
হাসনা আফসোসের সুরে বলে,
–আপনার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেল তাই না?
রাজ হেসে দিয়ে বলে,
—নিজের প্রিয়তম মানুষটার সুখের জন্য টাকা একটু খরচ হলো বৈকি।
রাজের মুখে প্রিয়তম শব্দটা হাসনার কানে খুবই সুমধুর শোনালো। হাসনা যেন একটু শিহরিত হলো।

চলবে