বছর দুয়েক পর পর্ব-২৯+৩০

0
28

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_২৯
সারিকা হোসাইন

_______
তুমুল মা*-রামা*-রির এক পর্যায়ে সকল সিকিউরিটি গার্ড নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগে প্রত্যেকটা ছেলেকে সরাতে সক্ষম হলো।প্রত্যেকটি ছেলে আহত হয়েছে।কারো কে*-টেছে ঠোঁট,কারো কপাল কারো বা গাল।আকস্মিক এহেন ঝগড়ার হেতু কারোর বোধগম্য হলো না।যেই পরিবেশ কিছুক্ষন আগেও আনন্দঘন ছিলো তা এখন রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এলেও চলতে থাকলো অশ্রাব্য বিশ্ৰী গালাগাল।ছেলে গুলো রেইনের বেস্টফ্রেন্ড।এই মানুষগুলোর সাথে রেইনের বন্ধুত্ব আজকের নয়।সকলেই তার বাল্য কালের বন্ধু।এই সব বন্ধু দের সাথে মিলে করা হয়েছে কতো আনন্দ উল্লাস,কতো পার্টি কতো ট্যুর।শুধু কি তাই?অবলীলায় বলা হয়েছে নিজের ব্যাক্তিগত নিগুড় গোপন কথা গুলোও।নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসা হয়েছে তাদের।তবে মুহূর্তেই তারা এভাবে পিঠ পিছে ছুরি কেনো বসাবে?তাদের কি তবে ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিলো?রেইনের আভিজাত্য সুখী জীবন তবে কি তারা আর সহ্য করতে পারছে না?
মনের ভাবনা ফেলে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে রেইন নিজের ঠোঁটের কোণের গড়িয়ে পড়া রক্তের ধারা বা হাতে মুছে বলে উঠলো

“আই এন্ডেড অল ফ্রেন্ডশিপ উইথ ইউ ফ্রম টুডে।

কথা গুলো বলে সিঁড়ি বেয়ে নিজের কক্ষের দিকে পা বাড়ালো সে।রেইনের এমন হৃদয় বিদারক কথায় কারো মুখের কোনো ভাব পরিবর্তন হলো না।সকলেই রেইন কে ক্যারেক্টার লেস গালি দিয়ে প্রস্থান নিতে থাকলো।কেউ কেউ আবার রাগের বসে ছুড়ে মারলো খালি হুইস্কির বোতল।যা পুরো বাড়িতে ঝনঝন শব্দের সঞ্চার করলো নিমিষেই।নোয়াহ আর হেলেন প্রস্থান নিলো সকলের শেষে।তারাও বেশ অবাক হয়েছে বাকি চার বন্ধুর আচরণে।বন্ধু গুলো হঠাৎ শত্রুতে কেন পরিণত হলো?

এলোমেলো পায়ে নিজের কক্ষে এসে একটা সিগারেট জ্বালালো রেইন।শীতের দিনে শরীরের ব্যথা গুলো একটু বেশিই চিড়বিড়িয়ে উঠে।কিন্তু আজকে যেনো শারীরিক ব্যাথার চাইতে মনের ব্যাথাই বেশি মনে হল তার কাছে।সিগারেট এ প্রথম টান দিতেই তাথৈ এর কথা মনে পড়লো।বিতৃষ্ণায় সিগারেট পায়ে পিষে বলে উঠলো

“নিশ্চয় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে নিজের ঘরে দুয়ার দিয়েছে।

তাচ্ছিল্য হেসে তাথৈ এর কক্ষের পানে পা বাড়ালো রেইন।মেয়েটিকে দেখলে হয়তো মনের ব্যাথা কিছুটা উপশম হবে ।লম্বা লম্বা পা ফেলে তাথৈ এর কক্ষে প্রবেশ করতেই মুখের হাসি উবে গেলো।ওয়াশ রুমএর দরজাও খোলা।কক্ষে তাথৈকে না পেয়ে ছাদে এলো রেইন।মস্ত বড় ছাদের কোথাও তাথৈ নামক মানুষটির অস্তিত্ব নেই।নিজের হতাশা জনিত ক্রোধ গিলে খেয়ে পুরোবাড়ি খুঁজে চললো তাথৈকে।কোত্থাও তাথৈ নেই।রাগে নিজের ঝলমলে ব্যাকব্রাশ সেটিং চুল গুলো খামচে ধরে হাটু মুড়ে বসে পড়লো রেইন।এরপর গর্জে ডেকে উঠলো

“তাথৈ……

রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো রেইন এর পাতলা চোয়াল।নাকের পাতা গুলোও ফসফস শ্বাসে ফুলে ফুলে উঠছে।উত্তেজিত ক্রোধ সামলাতে না পেরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো

“সবাই আমার সাথে চিট করেছে।আমি কাউকেই ছাড়বো না।ইউ উইল সাফার ফর ডিজ ডার্লিং….ইউ উইল সাফার!

________

সময়ের কাটায় বেলা কতো হয়েছে তার হিসেব তাথৈ জানেনা।বহু দিন বাদে পরম শান্তিতে ঘুমিয়েছে সে।আজ কিছুতেই তার নিদ্রা ভঙ্গ হচ্ছে না।ঘুমের মাঝেই নিজেকে সেফ আর নিশ্চিন্ত মনে হচ্ছে।ভয়ানক দুঃস্বপ্ন গুলোও আজ তাকে তাড়া করছে না।গায়ে জড়ানো ভারী ব্ল্যাঙকেট টা আরেকটু গায়ের সাথে জড়িয়ে পুনরায় গভীর ঘুমে তলালো তাথৈ।

নিনাদের আজ হসপিটালে চেকআপ ডেট রয়েছে।তাই সকাল গড়িয়ে সূর্য মধ্য গগনে অবস্থান নিতেই ঝটপট বেরিয়ে গেলো তিহান আর তূর্ণা।এদিকে কাজ হীন অভীক শুয়ে বসে বোর হয়ে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সে আজ লেকের ধারে ফিসিং এ যাবে।উইন্টার সানি ডে ফিসিং এর জন্য পারফেক্ট অপশন।তাই আর বাড়তি কিছু না ভেবে ফিসিং এর সকল সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।

আরো ঘন্টা তিন ঘুমিয়ে পিটপিট করে চোখ মেললো তাথৈ।কে যেনো জানালার পর্দা গুলো যত্ন করে সরিয়ে দিয়েছে তাই জন্য জানালার সাদা থাই ভেদ করে মৃদু রোদ এসে চোখে লাগছে।ঘুম ভেঙেই এমন রোদ চোখ সইয়ে নিয়ে পারলো না।পুনরায় চোখ বন্ধ করতেই গত রাতের বিদঘুটে কথা গুলো মনে পড়লো তার।ভয়ে জড়সড় হয়ে চট করে চোখ খুলে উঠে বসার চেষ্টা করতেই ঘাড়ের কাছে আর হাতে ব্যথা অনুভূত হলো।ভালো করে পরখ করতেই কুনুই এর কাছে সফেদ ব্যন্ডেজ চোখে পড়লো।গায়ে রংচঙা গাউনের পরিবর্তে ঊলের পাতলা সুয়েটার আর ডেনিম লুজ প্যান্ট জড়ানো।ভ্রু কুঁচকে নিজের অবস্থান বোঝার জন্য ভীত নেত্রে চারপাশে নজর বুলালো তাথৈ।মুহূর্তেই দৃষ্টি আটকালো দেয়ালে টানানো বৃহৎ ফটো ফ্রেমে।হাস্যজল এক পুরুষের বিশালাকার ওয়াল ফটো।পুরুষটি তাথৈ এর একান্ত কাছের।এই মানুষটির জন্য তার জীবনের এতো রদবদল।ছবিটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছলছল চোখে ভেজা গলায় তাথৈ বলে উঠলো

“কেনো এই লুকোচুরি?.

বুক ভেঙে চিৎকার করতে ইচ্ছে হলো তাথৈএর।কিন্তু নিজেকে সামলে যথেষ্ট শক্ত রাখার চেষ্টা করলো সে।চোখের জল গুলো দুই হাতের করপুটে মুছে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করলো।কিন্তু পা নাড়াতেই অসহনীয় ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো সে।অবচেতন মন বলে উঠলো
“পায়ে আবার কি হলো?

মস্তিষ্কে হাত বাড়াতেই মনে পড়লো গত রাতে উঁচু হিল পরে দৌড়ানোর সময় বেকায়দায় রাস্তায় পরে গিয়েছিলো সে।পরে যাবার বিষয়টিকে সেভাবে আমলে না নিয়ে পুনরায় দ্বিগুন তেজে দৌড়ে চলেছে সে।এরপর একটা গাড়ির সামনে হঠাৎ জ্ঞান হারায় সে।এরপর আর কিচ্ছু মনে নেই তার।

পায়ের ব্যথাকে গুরুত্ব না দিয়ে পুনরায় মেঝেতে পা ফেলার চেষ্টা করলো তাথৈ।শারীরিক কষ্টের চাইতে হৃদয়ে যেই ঝড় বইছে তার তান্ডব থামানো আগে জরুরি।চোখ দুটোতে যেই তৃষ্ণার সৃষ্টি হয়েছে তা মিটবে কি করে?

“আমি কি সত্যিই নিজেকে সামলাতে পারবো?নাকি দুর্বল হয়ে পরবো?

নিজেকে নিজেই সাহস জুগিয়ে মচকে যাওয়া পা টিতে অল্প ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তাথৈ।এরপর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কক্ষের দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।হাত বাড়িয়ে নব ঘুরানোর আগেই খট করে স্বশব্দে খোলে গেলো দরজা খানা সেই সাথে নাসা রন্ধ্রে বাড়ি খেলো অতি পরিচিত গন্ধ।লম্বা শ্বাস টেনে ধুকপুকুনি হৃদয় নিয়ে মাথা নত করেই দাঁড়িয়ে রইলো তাথৈ।শরীর থরথর করে কাঁপছে।ঠোঁট আর চোখের পাতা দুটোও বেশ বেইমানি করছে।এক সময় গভীর চোখ দুটো আরো বেশি বেইমানি করে ঝরিয়ে দিলো অশ্রুবিন্দু।।সেই অশ্রুবিন্দু গুলো কপোল গড়িয়ে গ্রীবাদেশ বেয়ে বুকের কাছটায় বিলিন হলো।যেই বিন্দু গুলো একটু বেশি মোটা সেগুলো ভার সইতে না পেরে মেঝেতে পড়লো।কান্নার হিড়িকে পুরো শরীর নড়ছে।কিন্তু কোনো ভাবেই কান্না রোধ করা যাচ্ছে না।ওপাশের মানুষটি ব্যাথিত আহত স্বরে ডেকে উঠলো

“তাথৈ…..

ব্যাস,যেই টুকু নিজেকে ধরে রেখেছিলো দুর্বল মেয়েটি সেটিও লাগামহীন হলো।সজল চোখ জোড়া ধীরে ধীরে উপরে তুলে অস্ফুট স্বরে তাথৈ প্রশ্নবাণ ছুঁড়লো

“কষ্টের মাত্রা টা একটু বেশিই বুঝি হয়ে গেলো তাই না?

জবাব হীন হলো ভিয়ান।চোখ দুটোতে জ্বালা ধরলো তার।পলক ঝাপটিয়ে ইতিউতি তাকিয়ে কিছু ভাবতে লাগলো।যেই প্রশ্নবানের ভয়ে সে এই দুটো বছর ভীত ছিলো সেটাই আজ তার সামনে উত্তরের আশায় প্রহর গুনছে।কি ব্যখ্যা দেবে সে এই প্রশ্নের?

ধীরে ধীরে কান্নার বেগ বাড়লো তাথৈ এর।ভিয়ানের পেটের কাছের শার্ট খামচে ধরে আর্তনাদ করে কেঁদে কেঁদে তাথৈ বললো

“আমি যে তোমাকে ছাড়া বেঁচে থেকেও মরে গেছি তবুও কেনো আমার খুজ নিলেনা তুমি?এতোটা নির্দয় কি করে হতে পারো তুমি?

কান্নার দমকে ধীরে ধীরে ভিয়ানের শার্ট ছেড়ে মেঝেতে বসে ভিয়ানের পা জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তাথৈ।তাথৈ এর কান্নার প্রতিটি আওয়াজ ভিয়ানের বৃহৎ বাড়িতে বাড়ি খাচ্ছে।সেই সাথে ভেঙে টুকরো টুকরো হচ্ছে কঠিন হৃদয় খানা।এই নির্মম দৃশ্য চোখ আর সইতে পারছে না।মুখ ও যেনো আজ জবান শূন্য হয়েছে।মেয়েটি তার পা জড়িয়ে কাঁদছে অথচ সে নির্বাক হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে।ভোঁতা মস্তিষ্ক কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারছে না।নিউরন গুলোও যেনো আজ কাজ করা বন্ধ করেছে।ভিয়ানের হাঁটুতে কপাল ঠেকিয়ে তাথৈ করুন আর্তনাদে বলে উঠলো

‘তুমি বেঁচে আছো অথচ আমি বিধাতার কাছে প্রতিনিয়ত আমার মৃত্যু কামনা করে গিয়েছি।এ কেমন আযাব দিলে তুমি আমায়?তবে কি আমার ভালোবাসায় কোনো খাদ ছিলো ভিয়ান?

পা থেকে তাথৈকে তুলে এক ঝটকায় নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে কাঁপা কন্ঠে ভিয়ান বলে উঠলো

“আ উইল এক্সপ্লেইন অল দ্যা কমপ্লেইন্টস..প্লিজ স্টপ ক্রাইং।এই কান্না আমি সহ্য করতে পারছি না তাথৈ।আই ফিল সাফোক্যাটেড।

কিন্তু তাথৈ কি সেসব শোনার পাত্রী?এই কান্না কি দুই এক দিনের?এই কান্না #বছর_দুয়েকের।কতদিন পর সে এভাবে বুক উজাড় করে অভিযোগ জানিয়ে কাঁদতে পারছে এই কঠিন পুরুষ কি তা জানে?জানলে কি আর এতো এতো দূরত্ব রাখতো?অবশ্যই কোনো না কোনো বাহানায় সকল দূরত্ব ঘোচাতো।কান্নার বেগ কিছুটা কমিয়ে তাথৈ বলে উঠলো

“যদি তেমন কোনো রহস্য থেকেই থাকে আমাকে গোপনে জানালে আমি কি সেই বিশ্বাস ভঙ্গ করতাম?দরকার পড়লে দুটো বছর সকল যোগাযোগ ছিন্ন করে অপেক্ষা করতাম।তবুও তো মন জানতো পৃথিবীর কোথাও একটা তুমি ভালোভাবেই বেঁচে আছো।তাই বলে তুমি হারিয়ে গিয়েছো এই খবর টাই আমাকে দিলে?কেমন হাল হয়েছিলো এমন ভয়ানক সংবাদ শোনার পর আমার?একবারো সেসব ভাবলে না?আমার বয়স টা কি এতোটা ভার বহনের ছিলো?

তাথৈএর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বৃহৎ হাতের থাবায় মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে ভিয়ান বলে উঠলো

‘প্লিজ আর কোন অভিযোগ করোনা।সব ভুল আমার।ব্যাথা আমি দিয়েছি উপশম ও আমিই করবো।জাস্ট গিভ মি সাম টাইম।আ উইল হিল অল পেইন।প্রমিস।

কথাটি বলে তাথৈএর শুষ্ক ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো ভিয়ান।চিনচিনে ব্যথায় চোখ বুজে ভিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরলো তাথৈ সেই সাথে খসে পড়লো আরো খানিক অশ্রু কণা।

দীর্ঘ চুম্বনের পর তাথৈকে পাজা কোলে তুলে ড্রয়িংরুমে নিয়ে সোফায় বসালো ভিয়ান এরপর তাথৈ এর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বুকে জড়িয়ে বলে উঠলো

“আন্টির সাথে কথা বলা উচিত তোমার।উনি অনেক টেনশনে আছেন।তোমার চিন্তায় উনি অসুস্থ হয়ে বিছানায় শয্যা নিয়েছে।যদিও রাতেই তাকে তোমার ব্যাপারে ইনফর্ম করেছি আমি।বলেছি আজ থেকে তুমি টোটালি সেফ জোনে আছো।কেউ আর তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না।

ভিয়ানের উৎসুক কথা গুলো শুনে চোখের জল মুছে নিভু স্বরে তাথৈ শুধালো

“আম্মু আমার আসল মা নয় তাই না ভিয়ান?

তাথৈ এর প্রশ্নে কিছুটা হোঁচট খেলো ভিয়ান।এরপর বড়বড় চোখে অবাক মিশ্রিত কন্ঠে আমতা আমতা করে শুধালো

“কবে থেকে জানো?

“বছর দুয়েক আগে থেকে।উনি নিঃসন্তান।ভাইয়াও উনার সন্তান নয়।ঠিক?

ভিয়ান মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই তাথৈ ভিয়ানের হাত চেপে ধরে নিচু স্বরে শুধালো

“তাহলে আমার মা বাবা কোথায় ভিয়ান?উনারা কি বেঁচে আছেন?জেঠিমনি আমার আম্মু কি করে হলো?

#চলবে….

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৩০
#সারিকা_হোসাইন

ভোরের আলো ফুটতেই পুরো সিডনি শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়ালো রেইন।কিন্তু কোত্থাও তাথৈ নামক মানবীর দেখা মিললো না।পাসপোর্ট ছাড়া এই মেয়ে যখন তখন পুলিশের কাছে ধরা পরবে।অজানা দেশে পালিয়ে বেড়ানোর চান্স একদম জিরো।আর টাকা পয়সাহীন পায়ে দৌড়ে কত দূর ই বা যেতে পারবে সে?রেইন প্রথমে বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও জতো সময় গড়ালো ততো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো।এখন আর মোটেও বিষয়টি স্বাভাবিক ঠেকছে না তার কাছে।এদিকে ড্যান নামক অকর্মার ঢেকি এখনো তিহানের কোনো খবর আনতে পারেনি।চাইলেই রেইন পুলিশের কাছে গিয়ে তাথৈ এর নিখোঁজ এর ব্যাপারে কেস ফাইল করতে পারে।কিন্তু পাছে নিজেকেই ফেঁসে যেতে হয় এই ভয়ে দাঁতে দাঁত কামড়ে নিজের লোকবল লাগিয়েই নিশ্চিন্ত থাকতে চাইলো।মেয়েটিকে যেকোনো মূল্যে তার চাই।এই কদিনে মেয়েটি রেইনের বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।ঘুমুতে যাবার আগে তার মিষ্টি মুখশ্রী খানা দেখলে শান্তিময় নিদ্রা হয়।মেয়েটাকে হারিয়ে কিছুতেই সে নিদ্রাহীন থাকতে চায়না।দরকার পড়লে টাকা ছিটিয়ে পাতাল থেকে হলেও খুঁজে বের করে আনবে সে তাথৈকে।আর একবার তাথৈ হাতের মুঠোয় এলে চূড়ান্ত শিক্ষা দিয়ে ছেড়ে দেবে।ভালোবাসা ভেবে যাকে এতোদিন ফুলের টোকা টুকুও দেয়নি সে, এবার আর সেসব তাংপাং চলবে না।নরক যন্ত্রনা ভোগ করিয়ে পায়ে বেড়ি পরাবে শুধু মাত্র তাকে ধোকা দেবার অপরাধে।আরো কতো কতো শাস্তি অপেক্ষা করছে সেটা সময় এলেই দেখা যাবে।

সারাদিনের চিরুনি তল্লাশি অভিযান শেষ করে ক্লান্ত শরীরে নিজের বাংলো রেইন প্যালেস এ ফিরে এলো রেইন।শরীরের ক্লান্তি গুলোও এখন আর ক্লান্ত ঠেকছে না তার কাছে।প্রচন্ড ক্রোধে শরীরের রক্ত গুলো টগবগিয়ে ফুটেছে।মস্তিস্ক দাউ দাউ করে জ্বলে যাচ্ছে।এই অসহনীয় যন্ত্রনা তাথৈ ছাড়া কেউ দূর করতে পারবে না।মুহূর্তে মুহূর্তে হাইপার হয়ে উঠছে রেইন।নিজেকে কিছুটা শান্ত করতে ড্রিংক্স কর্নার থেকে একটা কড়া ড্রিংক্স নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিলো রেইন।এরপর বোতলের ছিপি খুলে সেই তেতো তরল গলায় চালান করে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“নিজের স্থান নিজেই নষ্ট করলে তুমি তাথৈ শেহতাজ।তোমার চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাবো আমি।ওসব মাখো মাখো প্রেম আমার ধাতে নেই।যেটা বিলিয়ে ছিলাম সেটা তুমিই নষ্ট করেছ।উলুবনে মুক্তো ছড়িয়ে কি লাভ বলো?তোমার ঐ ভাই আমার থেকে কতদিন তোমাকে লুকিয়ে রাখতে পারবে?পুরো সিডনি যে আমার হাতের তালুতে।

********
সন্ধ্যার পরপর তিহান আর তূর্ণা ফিরে এলো।এসেই দেখতে পেলো সোফায় গা হেলিয়ে চোখ বুঝে নিষ্প্রাণ বসে আছে তাথৈ।ভিয়ানকে আপাতত কোথাও নজরে লাগছে না।কিচেন থেকে টুংটাং আওয়াজ আসছে।আর পুরো পরিবেশ নিশ্চুপ নিস্তব্ধ।নিনাদের আধো আধো বুলিতে চোখ খুলে তাকালো তাথৈ।চোখের সামনে পরিচিত মানুষ গুলোকে দেখে অসহায়ের ন্যায় ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো সে।ব্যাতিব্যস্ত হয়ে তূর্ণা আর তিহান দৌড়ে এসে তাথৈকে বাহুডোরে জড়িয়ে শান্তনার বাণী ছুড়ে বললো

“কিচ্ছু হয়নি।সব ঠিক হয়ে যাবে।দুঃস্বপ্ন ভেবে সব ভুলে যা তাথৈ।

তিহানের কথায় চোখের জল মুছে তাথৈ নিচু স্বরে শুধালো

“ভিয়ান যে বেঁচে আছে এটা তুমি জানতে তাই না ভাইয়া?

তিহান কোনো ভনিতা না করে স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর করলো
“হ্যা জানতাম।সবই জানতাম।অনেক বলতে চেয়েছি কিন্তু অজানা ক্ষতির আশঙ্কায় বলতে পারিনি।

“কি সেই আশঙ্কা?

“সময় এলে ভিয়ান নিজেই তোকে সব কিছু বলবে।দুটো দিন রেস্ট নে তার পর ধীরে ধীরে সব জানিস।তুই ক্লান্ত।তোর বিশ্রাম প্রয়োজন।

তাথৈকে মাথায় হাত বুলিয়ে তূর্ণা বললো
“ঘটনার পেছনে ঘটনা থাকে তাথৈ।শুধু এটুকু জেনে নাও তোমার আর ফুপির ভালোর জন্যই আমরা সবাই এই ভয়ানক সত্যি গুলো চেপে গিয়েছি।

তূর্ণা আর তিহানের কথায় বুদ্ধিমতি মেয়ের মতো কিছু জিনিস আঁচ করে কথা ঘুরালো তাথৈ।নিনাদ কে কোলে নিয়ে তুলতুলে রেশম চুলে হাত বুলাতে বুলাতে শুধালো

“তুলতুল কোথায় ভাইয়া?

তিহান উত্তর করার আগেই গরম গরম স্ন্যাক্স এর ট্রে হাতে করে আনতে আনতে ভিয়ান বলে উঠলো

“তুলতুল এখানেই আছে।আগামী কাল তোমাকে দেখতে আসবে।আমি ওকে তোমার কথা জানিয়েছে।ও অনেক এক্সাইটেড তোমাকে দেখার জন্য।আজ ওর এক্সম ছিলো তাই আসতে পারেনি।কাল ভোরে ঠিক চলে আসবে।

সেন্টার টেবিলে খাবার গুলো রেখে ভিয়ান নিনাদের গাল টিপতে টিপতে তিহানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“ফ্রেশ হয়ে আয়, কথা আছে।

তিহান নিনাদ কে তাথৈ এর কোলে রেখে তুর্ণাকে নিয়ে উঠে গেলো।সে যে ইতোমধ্যে বিশাল বিপদে পরে গিয়েছে তা বেশ ভালোই বুঝেছে।অবশ্য এসব ভয় গায়ে মাখেনা তিহান।মেখেই বা কি হবে?একদিন তো দুনিয়া ছেড়ে সকলকেই ওপারে যেতে হবে।সৃষ্টি কর্তা ভাগ্যে যা লিখেছে তাই হবে।তার উপর হাত ঘুরায় কার সাধ্যি?

তিহান চলে যেতেই একটা চিকেন বল ফু দিয়ে ঠান্ডা করে তাথৈ এর মুখের দিকে বাড়িয়ে ভিয়ান শুধালো
“আন্টির সাথে কথা বলবে কখন?দুপুরে বলতে বললাম তখন ও বললে না।আবার রাত গড়াচ্ছে এখনো বলছো না ।ঘটনা টা কি?হুম?

চিকেন বল মুখে নিয়ে চিবুতে চিবুতে তাথৈ বলে উঠলো
“আম্মুর ফোন টা এরিক কি যেনো করে রাখে।আম্মু যার সাথে কথা বলে ও সব শুনে ফেলে।

ভিয়ান আরেকটা চিকেন বল এগিয়ে বললো
“এরিক আর কিছুই শুনতে পারবে না।তুমি বাসায় কথা বলো।

ভিয়ানের কথায় তাথৈ সামান্য নড়েচড়ে উঠে চোখ ছোট ছোট করে শুধালো
“তুমি কি করে জানলে সে আর শুনতে পারবে না?

ভিয়ান তাথৈ এর ছোট হাত খানা নিজের হাতের ভাজে ভরে বললো
“ও আর এসব শোনার অবস্থায় নেই।।।

ভীত হয়ে তাথৈ শুধালো
“কি করেছো ভাইয়াকে সত্যি করে বলোতো।তোমার হাবভাব সুবিধার ঠেকছে না।

নিনাদ কে সহ তাথৈকে শক্ত করে জড়িয়ে ভিয়ান বলে উঠলো

“তোমার কিডন্যাপ হবার কথা শুনে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল একদম।যখন জানলাম সবকিছুর পেছনে কলকাঠি নেড়েছে এরিক তখন আর নিজেকে সামলাতে পারিনি।ধরে নিয়ে এসে টাইম নিয়ে খুব মেরেছি।হসপিটালে পরে রয়েছে এখন।আর বাকি রইলো সাইফ আজমী।তাকেও চাঁদ মুখ খানা দেখিয়ে এসেছি।আমাকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠেছিলো।আরেকটু হলেই লুঙ্গির গিট খুলে যেতো।

ভিয়ানের শার্টের বোতামে আঁকিবুকি করতে করতে তাথৈ মিনমিন করে বললো

“তবুও যদি কেউ জেনে রেইনকে বলে দেয় আমি এখানে তখন?

তাথৈ এর কথায় বিগলিত হেসে মেয়েটির গাল টেনে ভিয়ান বলে উঠলো
“ওসব রেইন বৃষ্টি গোনার টাইম আছে আমার বলো?আমার বউ আমার থেকে নিয়ে যাবে কার বুকের পাটা এতবড়?পুঁতে রেখে দেবো না?

মেকি রাগ দেখিয়ে তাথৈ বলে উঠলো
“খুব তো বাহাদুর সাজা হচ্ছে।যখন ইকবালের বাড়ির সামনে থেকে আমায় তুলে আনা হলো তখন আপনি কোথায় ছিলেন বাহাদুর সাহেব?

তাথৈকে কাছে টেনে কানের কাছে ফিসফিস করে ভিয়ান বলে উঠলো
“জ্বর সারিয়ে নিউইয়র্ক ফিরছিলাম।আমার আদর ছাড়া তো আবার আপনার জ্বর নামে না।

লজ্জায় রাঙা হয়ে মাথা নিচু করে ঠোঁট টিপে হেসে তাথৈ বলে উঠলো
“ছি, অসভ্য লোক একটা।মুখে কিচ্ছুটি আটকায় না।এভাবে কেউ শরম দেয়?

ঘোর লাগানো কন্ঠে ভিয়ান উত্তর করলো
“এই টুকুতেই এতো লজ্জা?তাহলে সিরিয়াস অসভ্যতামি করলে কি করবে?

আরেকটু নুইয়ে পড়লো তাথৈ।নিনাদের পিঠে মুখ গুজে তাথৈ বলে উঠলো
“তোমাকে মোটেও এখন আর দেখতে ইচ্ছে করছে না।ইচ্ছে করেই এমন করছো আমার সাথে তাই না?বজ্জাত একটা।

ভিয়ান তাথৈ এর লজ্জা কাটাতে আগ্রহী হয়ে প্রশ্ন করলো
“রাতে ঘুরতে যাবে আমার সাথে?সিডনি হারবার ব্রিজে?অনেক দিন তোমার হাত ধরে হাটি না।

কিছুক্ষন ভাবুক হয়ে কি যেনো ভাবলো তাথৈ এরপর বললো
“ওখানে স্ট্রিটফুড পাওয়া যাবে?

ভিয়ান মাথা দুলিয়ে বললো
“হম্ম।

“আচ্চা তাহলে যাবো।

“ঠিক আছে সাড়ে আটটায় রেডি হয়ে থাকবে।

পরক্ষণেই মন ভার করে তাথৈ বললো
“আমার কোনো ড্রেস নেই।কি পরে বাইরে যাবো?

ফিচেল হেসে ভিয়ান বললো
“আমার রুমের ক্লোজেট এর অর্ধেক পাশ ভর্তি শুধু তোমার ই কাপড়।এগুলো আরো বছর তিনেক আগে কেনা হয়েছিলো।জখন যেটা ভালো লেগেছিলো সেটাই কেনা হয়েছে।শুধু ইউজ করার জন্য তুমিই ছিলে না।

ভিয়ানের কথাটা ছুরির তীক্ষ্ণ ফলার ন্যায় বুকের মধ্য খানে এসে বিধলো তাথৈ এর।সব কিছু ঠিকঠাক ই চলছিলো।হঠাৎই একটি দুর্ঘটনার সংবাদ এলোমেলো করে দিলো সব কিছু।ভেঙে টুকরো টুকরো হলো সাজানো স্বপ্ন গুলো।আর জীবন?সেতো বেঁচে থেকেও মৃতের ন্যায়।

দুর্বিষহ স্মৃতি হাতড়াতেই চোখ থেকে টুপ করে জল খসে পড়লো তাথৈ এর সফেদ গাল বেয়ে।ভিয়ানের প্রশস্ত কাঁধে মাথা এলিয়ে আহত ভেজা কন্ঠে তাথৈ বলে উঠলো

“নিনাদের মতো আমাদের ও একটা ফুটফুটে বেবি থাকতো তাই না?

তাথৈএর প্রশ্নে বুকের ভেতর ভাঙনের ঢেউ হানা দিলো ভিয়ানের।সামনে মেয়েটির জন্য আরো ভয়াবহ অতীত অপেক্ষা করছে।কিভাবে এক হাতে তাকে সামলাবে সে?অবর্ণনীয় কষ্টে গলা ধরে এলো ভিয়ানের।তাথৈ এর প্রশ্নের উত্তর দিতে চেয়েও পারলো না সে।শুধু অল্প করে বললো

“তখন হয়নি তো কি হয়েছে এবার হবে।

চোখের জল মুছে তাথৈ বলে উঠলো

“বিনা কারণে কারাবাস করলাম দুটো বছর।অথচ মিলেমিশে সুখ কুড়াবার কথা ছিলো আমাদের।

আনন্দের মুহূর্তে বিষাদের সুর বাজতেই ভিয়ান কথা ঘুরিয়ে বলে উঠলো
“অভীক কি আজ ফিস রিভারের সমস্ত মাছ ধরে তবেই বাড়ি ফিরবে নাকি?ছেলেটা সকালে বেরিয়েছে এখনো আসছে না কেন?

তাথৈ বুঝলো এসব দুঃসহ স্মৃতি মনে করতে চাইছে না ভিয়ান।তাই সেও আর কিছু না ঘাঁটিয়ে নিনাদ কে নিয়ে তূর্ণার কক্ষের দিকে পা বাড়ালো।

**********
নিজ কক্ষে রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে সিগারেট ফুকছেন সাইফ আজমী।আজকাল চারপাশ থেকে বিপদ ঘিরে ধরেছে তাকে।বজ্জাত রেইন এর জন্য কোটি কোটি টাকার লস হয়েছে তার।এদিকে ইনকাম ট্যাক্স অফিস থেকে বার বার ট্যাক্স পেপারে তাথৈ এর সিগনেচার এর জন্য নোটিশ পাঠাচ্ছে।প্রতিদ্বন্দি কোম্পানি গুলো কম মূল্যে প্রোডাক্ট ছেড়ে সাইফ আজমীর ব্যবসায় লাল বাতি ধরিয়ে দিয়েছে।এদিকে সেলিনা টাও বেশ হাউকাউ শুরু করে দিয়েছে মোটা অংকের টাকার জন্য।নইলে সকলের কাছে প্রেস ডেকে জানিয়ে দেবে সাইফ আজমী বিয়ের প্রলোভনে ভোগ করেছে তাকে।এরমধ্যে এরিক টাও লা পাত্তা।হঠাৎই রঙিন জীবন টা যেনো বিষিয়ে উঠলো সাইফ আজমীর।আধ খাওয়া সিগারেট এর ফিল্টার ছাই দানীতে ঠেসে গজগজ করে বলে উঠলো।।

“তোকে হাতের কাছে পেলে গুলি করে মারবো আমি এরিক।যেমনটা তোর প্রেমিকা নিকিতা কে করেছিলাম।একটুও হাত কাপেনি।আমার জীবনের সুখ যে কেড়ে নেবে তাকে দুদণ্ড বাঁচিয়ে রাখার ধৈর্য আমার নেই।বড্ড অধৈয্য লোক আমি।

সাইফ আজমীর ঘুটঘুটে কক্ষে হাতে কিছু পেপার্স নিয়ে পা রাখলেন মেহেরিন চৌধুরী।সিগারেট এর উটকো গন্ধে ঘর বিষিয়ে উঠেছে।কোনো প্রকার কপাল না কুঁচকে খট করে সুইচ টিপে মুহূর্তেই আলোকিত করলেন কবরসম কক্ষ খানা।এরপর হনহন করে সাইফ আজমীর সামনে এগিয়ে গেলেন।সাইফ আজমী কিছু বলার আগেই পেপার গুলো মুখে ছুড়ে মেরে শক্ত কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠলেন

‘তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়েছি সাইফ আজমী।আজ থেকে তোমার আর আমার কোনো সম্পর্ক নেই।ডিভোর্সটা আরো আগেই দিতে চেয়েছিলাম।সেই বছর পঁচিশ আগেই।কিন্তু কেনো যেনো মনটা তোমার শেষ পরিণতি দেখার জন্য অকুলিবিকুলি করছিলো।তাই নরক যন্ত্রনা ভোগ করেও এই ঠুনকো সংসারে অপেক্ষা করে এসেছি এতোগুলো বছর।আজ সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে।তোমার শেষ পরিণতি কি জানো?
ইউ আর এ লুজার!
তোমার এই জীবন পুরোটাই মূল্যহীন।না আছে সন্তান,না আছে সম্পদ আর না আছে স্ত্রী।উপর ওয়ালা বেশ নিকৃষ্ট করেই সৃষ্টি করেছে তোমাকে।তোমার পাপের সাম্রাজ্যের পতন ঘটলো বলে।যেভাবে তাথৈ এর বাগদত্তা কে মারার ফন্দি করেছিলে এভাবে আর কার কার প্রাণ নাশ করেছো তুমি?

চলবে।