বছর দুয়েক পর পর্ব-৩৩+৩৪

0
20

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৩৩
#সারিকা_হোসাইন
********
আকাশে গুড়গুড় মেঘের উপস্থিতি বিদ্যমান।দিনের ঝকঝক আলো যুক্ত আকাশ মুহূর্তেই কালমেঘে ঢেকে চারপাশ অন্ধকারে ছেয়ে নিলো।মনে হচ্ছে আকাশ ফুঁড়ে এখনই বৃষ্টি নামবে।মেহেরিন আর সাজিদ যখন বাস থেকে নামলো তখন অল্প অল্প বৃষ্টির কণা ঝরছে।ভারী বৃষ্টির ভয়ে দ্রুত একটা অটো ডেকে দ্বিগুণ ভাড়া চুকিয়ে মেহেরিনের বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো দুজনে।অটোতে উঠে বসে নিজের পকেট থেকে সুতি রুমাল খানা বের করে মেহেরিনের পানে এগিয়ে সাজিদ বলে উঠলো

“মাথা মুছে নাও।তোমার ঠান্ডা লাগবে।

এতো যুগ পরে এসেও মানুষটির ভালোবাসা ময় যত্নে শুকনো হাসলো মেহেরিন।বিধাতা চাইলেই আজ তাদের দুজনের সুন্দর একটা সংসার হতো।ডালভাত খেয়েই সুখের চাদরে জীবন মুড়াতে পারতো দুজনে।অথচ সাইফ আজমী নামক কঠিন অভিশাপে জীবনের মোড় ঘুরে গেলো বিশ্ৰী ভাবে।সংসার নামক কারাগারে মেহেরিন বন্দি হলেও সাজিদ মাহমুদ কিছুই পেলো না।বরাবরের ন্যয় মিথ্যে আশায় শূন্য হাত গুটিয়ে নিতে হলো তাকে।

মিনিট ত্রিশ পরেই নিজ বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো।মাঝ বয়সী অটো চালক সিকান্দর পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হেসে ভারিক্কি গলায় বলে উঠলো

“শেখ সাবের বাড়ি আইয়া গেছি স্যার।নামেন,বৃষ্টি আউনের আগে বাড়িতে যাইতে অইবো।

মেহেরিনকে নামিয়ে দিয়ে সাজিদ অটো চালক কে অনুরোধ করলো তাকে বাস স্ট্যান্ড এ নামিয়ে দিতে।কলেজ ভার্সিটি লাইফে এভাবেই সে মেহেরিন কে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছে।কোনো দিনও বাড়ির ভেতরে ঢোকা হয়নি তার।ইচ্ছে ছিলো মেহেরিন কে ঘরে তোলার সময় একেবারেই এই বাড়ির আঙিনায় পা রাখবে সে।কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো।

অটো চালক সম্মতি জানিয়ে গাড়ি ঘোরাতেই সম্বিৎ ফিরে পেলো মেহেরিন।ইতোমধ্যে বৃষ্টির বড় বড় ফোটা পড়তে শুরু করেছে।শাড়ির কুচি এক হাতে ধরে অটোর সামনে আগলে দাঁড়ালো মেহেরিন।সিকান্দর দ্রুত ব্রেক কষে দাঁড়াতেই এগিয়ে এসে সাজিদের হাত চেপে ধরলো মেহেরিন।এরপর কাঁপা গলায় বললো

“বাড়ি চলো সাজিদ।আব্বা তোমায় অনেকবার দেখতে চেয়েছেন।

বৃদ্ধ মকবুল শেখ দুপুরের খাওয়া শেষ করে কেবলই নিজ ঘরে শোতে যাচ্ছেন।এমন সময় মিহি গলায় মেহেরিন বলে উঠলো

“আজীবনের মতো আপনার বুকে ফিরে এলাম আব্বা।ওই জালিমের থেকে মুক্তি মিলেছে আমার।আমি মুক্ত আব্বা।আপনার কাছ থেকে আমাকে আর কেউ সরিয়ে নিতে পারবে না আব্বা।আজ থেকে আপনার মেয়ে সবসময় আপনার চোখের সামনেই থাকবে।

***********
দিনের ঝলসানো সূর্যখানা টকটকে কমলা বর্ণ ধারণ করে জ্যাকসন পোর্টের ওপারে কুয়াশায় ঢাকা পড়ার উপক্রম হয়েছে।নদীর শীতল হাওয়া পুরো শহর জুড়ে হিমবাহের সৃষ্টি করছে।ওয়েদার ফরকাস্ট অনুযায়ী আজ রাতে ভারী তুষারপাত হবে।ভারী তুষারে পথ ঘাট বন্ধ হবার ভয়ে সকলেই সন্ধ্যার আগে আগেই নিজ নিজ গৃহে ফেরার তৎপরতা শুরু করেছে ।এমন ব্যস্ত সন্ধ্যায় নিজের বাইক হাকিয়ে ড্যান ছুটে চলেছে রেইন প্যালেস এ।কালো রঙা হেলমেট ভেদ করে তার লালচে ঠোঁটের প্রশস্ত হাসিটা ঠিক দেখা গেলো না।কিন্তু তার বাইক স্পিড দেখে মনে হচ্ছে বিশেষ কিছুর লোভেই সে জীবন মরন ত্যাগ করে ছুটছে।

ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালিয়ে বিশাল ড্রয়িং রুমে পায়ের উপর পা তুলে সোফায় বসে আছে রেইন।একটি সপ্তাহ পেরিয়ে যাবার পরেও তাথৈ মেয়েটির কোনো খুজ পায়নি সে।আর না পেয়েছে তিহান নামক অজ্ঞাত লোকটির খুঁজ।হাতে থাকা হুইস্কির ছোট গ্লাস টা নাড়াতে নাড়াতে বিরবিড়িয়ে আওড়ালো

“এক রাতেই মেয়েটা কোথায় উবে গেলো?এই ভিনদেশে কে তাকে আগলে রেখেছে?আয়াজ আমিরের ব্যাক্তিগত জিনিস দখল করে নিজের কাছে রেখেছে কোন কলিজা ওয়ালা?জানতে পারলে কলিজা খানা যে খুবলে খাবো তা কি সে জানে না?

তাথৈ তাকে ধোকা দিয়ে পালিয়েছে এটা ভেবেই মুহূর্তে মুহূর্তে তার চোখ মুখের রঙ পরিবর্তন হচ্ছে।পছন্দের হুইস্কি ও আজ নেশা ধরাতে ব্যার্থ হচ্ছে।লাগাম টানা মনের কামুক বাসনা ফুঁসে উঠেছে বার বার।কিন্তু তাথৈকে আর এক বিন্দু ঠকাতে চায়না বলেই এতো এতো উপবাস।কিন্তু মূর্খ মানবী ভালোবাসার কোনো দামই দিলো না।

কীয়তখন গড়াতেই মুখে উৎফুল্ল হাসি ঝুলিয়ে কক্ষে প্রবেশ করলো ড্যান।ড্যান কে দেখে ভ্রু কুঁচকে তার আগমনের হেতু বুঝার চেষ্টা করলো রেইন।মুখে কিছু না বলেই সামনে থাকা সেন্টার টেবিলে হাতে থাকা একটা মোটা খাম ছুড়তেই সেটা ফেটে বেরিয়ে এলো কিছু এলোমেলো স্থির চিত্র।মুখের হাসি আরেকটু প্রশস্ত করে ফ্যাসফ্যাসে গলায় ড্যান বলে উঠলো

“হ্যাভ এ লুক….

ড্যান এর ইশারা অনুসরণ করে সামনের টেবিল থেকে কয়েকটি ফটো হাতে নিয়ে দৃষ্টি বুলাতেই চক্ষু কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।তেজ হলো শ্বাস সেই সাথে তরতর করে বাড়লো ক্রোধ।আগুন ঝরা মনিতে ড্যান এর পানে তাকিয়ে রেইন কাঁপা কন্ঠে শুধালো

“হুয়েন ডিড ডিজ হ্যাপেন?

ড্যান লাইটার দিয়ে সিগারেট ধরাতে ধরাতে স্বাভাবিক গলায় বলে উঠলো

“থ্রি ডেইজ এগো।

আর কোনো কথা হলো না।ছবি গুলোতে উন্মাদের ন্যায় নজর বুলিয়ে রেইন উত্তেজিত স্বরে শুধালো

“হুয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট ফর ডিজ জব?

সিগারেট এ লম্বা টান দিয়ে হাওয়ায় ধুয়া উড়াতে উড়াতে ড্যান বললো

“ফিফটি থাউজ্যান্ড ডলার…

“ইটস টু মাচ

সিগারেট ঠোঁটে গুঁজে ভাবলেশহীন হয়ে ড্যান হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো

“ওকে,দ্যান গিভ মি মাই পিকচার্স।

রেইন বুঝলো ছেলেটি দর কষাকষির উস্তাদ।মনে মনে ক্রুর হেসে রেইন নিজের রুম থেকে একটা চেকবুক এনে টাকার এমাউন্ট লিখে বাড়িয়ে দিলো ড্যান এর পানে।এই মুহূর্তে ড্যান কে তার খুব প্রয়োজন।সামান্য কটা টাকার জন্য এই জাসুস ছেলিটির সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চায়না রেইন।সময় এলে ঠিক এই জাসুস কে দেখে নিবে সে।সেই সাথে আদায় করবে নিজের টাকাও।এই মুহূর্তে শিকার ধরতে হলে তাকে শক্ত জাল বিছাতেই হবে।

চেক নিয়ে ড্যান চলে যেতে যেতে উঁচু আওয়াজে বলে উঠলো

“নাওয়াফ প্যালেস…..

ড্যানের মুখের ঠিকানা শুনে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো রেইন।ড্যান চলে যেতেই আরো এক প্যাগ হুইস্কি গ্লাসে ঢেলে সুখ চুমুক দিয়ে বলে উঠলো

“হঠাৎই নিউইয়র্ক থেকে এখানে এসে আগুন নিয়ে খেলার শখ হলো কেনো ভিয়ান নাওয়াফ?এই আগুনের উত্তাপ যে একটু বেশিই।দগদগে পোড়া ঘা টা শুকাতে পারবে তো?নাকি তার আগেই আরো বেশি ঝলসে যাবে?

*********
তিহানের ফোন থেকে মকবুল শেখের বাড়িতে ভিডিও কলিং করেছে তিহান।মূলত মেহেরিন আর তাথৈ এর যোগাযোগ এর জন্যই সে কল করেছে।সকলের সাথে আলাপ চারিতার এক পর্যায়ে তাথৈকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেলো সকলে।মকবুল শেখ নাতির মুখ দেখেই কেঁদে ফেললেন।কান্নার চোটে বৃদ্ধ বেশি কথাই বলতে পারলেন না।মেহেরিন ছটফট চিত্তে ফোন নিয়ে নানান প্রশ্নের উত্তর চাইলেন।কে তাকে কিডন্যাপ করেছে এটাও শুনলেন।এরপর এরিক আর সাইফ আজমীর প্রতি একরাশ ঘৃণা উগলে দিলেন।
তাথৈ এর সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন মেহেরিন।ভিডিও কলে মেয়ের চোখে মুখে চুমু একে ভেজা কন্ঠে বলে উঠলেন

“গরুর মাংস আর খিচুড়ি ওভাবেই ফ্রিজে পরে রয়েছে রে বাবা।ওগুলো আর মুখে তুলতে পারিনি।

মা মেয়ের আলাপের এক পর্যায়ে তাথৈ এর থেকে মোবাইল নিয়ে ভিয়ান সাবলীল কন্ঠে বলে উঠলো

“কিছু কথা বলতে চাই আন্টি।

মেহেরিন কান্না ভেজা কন্ঠে উত্তর করলেন

“যা মন চায় তাই বলো বাবা।

“আপনার কোনো অমত না থাকলে আমি আজই তাথৈকে বিয়ে করতে চাই আন্টি।এবার আর কোনো রিস্ক নিতে পারবো না আমি।আর বিয়ে ছাড়া তাথৈকে আমার কাছে আটকে রাখার কোনো পথ খোলা নেই ।ঘটনা সবই আপনি জানেন।চারপাশে মৃত্যু ওঁত পেতে আছে।একটু এদিক সেদিক হলেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাবে।সাইফ আজমী বলেন আর রেইন বলেন কেউ কিন্তু এক চুল ছাড় দিবেনা আন্টি।

ভিয়ানের মুখে বিয়ের কথা শুনে এক বাক্যে মেহেরিন বলে উঠলো

“আমাদের কারোর কোনো অমত নেই।তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো।শুধু আমার মেয়েকে আগলে রেখো।ওকে আমি তোমার হেফাজতে সোপর্দ করলাম।

মেহেরিনের সাথে সাথে ওপাশের সকলেই মত দিলেন।বৃদ্ধ মকবুল বলে উঠলেন

“আমার নাতি যেনো আর কোনো কষ্ট না পায়।ওর দিকে কেউ যেনো আর নোংরা হাত না বাড়াতে পারে এই আমি বলে দিলাম ।

সকলের মতামতে তাথৈ বেশ অপ্রস্তুত হয়ে উঠলো।সে শুনেছে বাবা নাহয় বাবার বংশীয় কেউ না থাকলে সেই বিয়ে শরীয়ত মোতাবেক হয় না।সেই বিয়ে নাকি বাতিল হয়।ভিয়ানকে সে নিজের জীবনের থেকেও বেশি চায়।কিন্তু আল্লাহ নারাজ হবেন এমন করে চায়না।এদিকে পরিস্থিতি ও খুব ভয়াবহ।তবে উপায়?

*********

ভিয়ানের বাবার পুরোনো বন্ধু সুলতান শরাফত।বয়স প্রায় ষাটের কাছাকাছি।খুবই পরহেজগার এবং আল্লাহভীরু মানুষ।সিডনি শহরে প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে মুসলিম বিবাহ বন্ধনের কাজ করে আসছেন তিনি।লোক মুখে প্রচলিত আছে শরাফত কাজী যার বিয়ে পড়ায় তার সংসার সুখের লহরিতে ভেসে যায়।যদিও ভিয়ান এসবে বিশ্বাসী নয়।উপরওয়ালা জীবনে সুখ শান্তি বরকত না দিলে কোনো মানুষের পক্ষে সুখ বিলানো সম্ভব নয়।আবেগের বশে হয়তো হাসাহাসির ছলে মানুষ এসব কথা বলে।কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সবকিছু দেয়া নেয়ার মালিক একজনই।

তাথৈকে নিয়ে সন্ধ্যার পরপর মুহূর্তেই সেই সুলতান শরাফত এর বাড়িতে প্রবেশ করলো ভিয়ান।বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ পর্দানশীল সেই সাথে কোমল আচরণের অধিকারী।ভিয়ানকে বসতে বলে উনার স্ত্রী দূতলায় চলে গেলেন।ভিয়ান নিজের পরিচয় দিয়েছে বিধায় মহিলাটি তাকে চিনতে ভুল করেনি।পর্দার আড়ালে যতটুকু কুশলাদি বিনিময় করা যায় সেটুকুই করে বসতে অনুরোধ করে সুলতান সাহেব কে ডাকতে চলে গেলেন।

ভয়ে তাথৈ এর চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে উঠছে বার বার।একদিকে প্রচন্ড শীত অপরদিকে হঠাতই বিয়ের জন্য ভিয়ানের চাপাচাপি।এক প্রকার বাধ্য হয়েই এখানে আসতে হয়েছে তাকে।ভিয়ানের মন কোনো ভাবেই ভাঙতে চায়না সে।এদিকে আল্লাহকেও অখুশি করতে চায়না সে।
কিছুক্ষন পর সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন সুলতান শরাফত।তাকে দেখে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো তাথৈ।মাথার ঘোমটা আরেকটু টেনে মনে মনে তাথৈ বলে উঠলো

“ইয়া আল্লাহ তোমার যা ভালো মনে হয় তুমি তাই করো।আমার সবকিছুর ভার আমি তোমার উপর সমর্পণ করলাম।কোনো পাপের ভাগিদার আমায় করোনা তুমি।

ভিয়ানকে দেখেই প্রশস্ত হেসে ভিয়ানকে বুকে জড়ালেন সুলতান সাহেব।বিভিন্ন কুশলাদি শেষে সুলতান সাহেব জিজ্ঞেস করলেন

“আজ হঠাৎ এই মুহূর্তে না জানিয়ে এলে যে?

‘পরিস্থিতি ই এমন।

“কি হয়েছে খুলে বলো।

“বিয়ে পরাতে হবে।

“কার?

“আমাদের দুজনের।

ভিয়ানের উত্তরের হা হা শব্দে হেসে সুলতান শরাফত বলে উঠলেন

“নিশ্চয়ই মজা করছো তাই না?ভিয়ান নাওয়াফ এভাবে বিয়ে করবে এটা তো দুঃস্বপ্ন।।

সিরিয়াস ভঙ্গিতে শক্ত কন্ঠে তাথৈ এর হাত চেপে ধরে ভিয়ান বলে উঠলো

“আংকেল আমি সিরিয়াস।এই বিয়ের সাথে আমার বাঁচা মরা জড়িয়ে আছে।

সুলতান শরাফত ভিয়ানকে শান্ত হবার অনুরোধ করে বলে উঠলেন

“দেখো বাবা বিয়ে হচ্ছে পবিত্র একটা সম্পর্ক।এই সম্পর্কে জড়াতে হলে কিছু প্রসেসর মধ্য দিয়ে যেতে হবে তোমাকে।চাইলে যেমন খুশি তেমন ভাবে বিয়ে করা যায় না।মেয়ের বাবা ছাড়া কিভাবে বিয়ে করবে তুমি?

“ওর বাবা মা অনেক আগেই মারা গেছেন আংকেল।

গলায় দুঃখী সুর এনে সুলতান শরাফত বললেন
‘ওহ হো খুব কষ্টের সংবাদ।কিন্তু তার চাচা ,বা ভাই এসব তো আছেন তাই না?

“যদি চাচা তার ভাতিজিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে দিনের পর দিন সুযোগ খুঁজে তবে কি সে উপযুক্ত গার্ডিয়ান?

সুলতান শরাফত আর কোন কথা খুঁজে পেলো না।ভিয়ান পুনরায় বলে উঠলো

“মেয়ের নিজের কেউ নেই।আমিই ওর গার্ডিয়ান।আপনি শরীয়ত অনুযায়ী বিয়ের বন্দোবস্ত করুন।

সুলতান শরাফত বললেন
“রেজিস্ট্রির কাগজ গুলো লাগবে,মেয়ের সকল কাগজপত্র।

লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভিয়ান বলে উঠলো

“ওকে কিডন্যাপ করে এখানে আনা হয়েছে।আর নিজেদের ব্যাবসায়িক লাভের জন্য সেই কিডন্যাপার এর হাতে ওকে তুলে দিয়েছে ওর আপন চাচা আর চাচাতো ভাই।আপন চাচী একজন ছিলো সেও ডিভোর্স নিয়ে চলে গিয়েছে।এবার আপনিই বলুন এই মেয়ের বিয়ের জন্য কি কি প্রয়োজন।

কাজী বুঝলেন খুবই জটিল বিষয়ে ফেঁসে গিয়েছে ছেলে মেয়ে দুটো।আল্লাহ কখনো কাগজ পত্র দেখে হালাল হারাম সম্পর্ক নির্বাচন করেন না।শরীয়ত অনুযায়ী বিবাহের কাজ সম্পন্ন হয়েছে কিনা সেটাই উনি দেখেন।

সুলতান শরাফত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার সহধর্মিনী মালিকা কে ডেকে বলে উঠলেন

“কিছু খেজুর আর ফলমূল সমেত বাড়ির সকল সদস্য নিয়ে এখানে উপস্থিত হও।শুভ কাজ আরম্ভ হতে যাচ্ছে।

#চলবে….

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৩৪
#সারিকা_হোসাইন

********
ঘন কুয়াশায় মৃদু আলোর সূর্যটা যখন পুরোপুরি তলিয়ে ধরণীকে আবছা অন্ধকারে ঠেলে দিলো ঠিক সেই মুহূর্তে অভীক কে সাথে নিয়ে তিহান আর তূর্ণা প্রবেশ করলো সুলতান শরাফত এর বিশাল ড্রয়িং রুমে।সকলের প্রতি সালাম জানিয়ে চতুরপাশে নজর বুলাতেই সোফার এক কোনে গুটুসুটি তাথৈকে দেখা গেলো।আশেপাশে ভিয়ানকে নজরে পড়লো না কারো।তূর্ণা ঝটপট এগিয়ে তাথৈকে আগলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে শুধালো

“সে কোথায়?

নিচু ধীর কন্ঠে তাথৈ জানালো
“ওযু করতে গিয়েছে।

তূর্ণা স্বস্তির শ্বাস ফেলে হাতে থাকা প্যাকেট তাথৈ এর পানে এগিয়ে বলে উঠলো

“এখানে নতুন শাড়ি ,ব্লাউজ পেটিকোট সব আছে।মেহেরিন ফুপি আমাকে পই পই করে বলেছে পুরাতন কাপড়ে যেনো তোমাদের বিয়ে না হয়।অসময়ে মার্কেট বন্ধের সময় যা পেয়েছি তাই কিনেছি।আপাতত এটাই পরো।ভিয়ান চাইলেই দামি দামি শাড়ি গহনা যখন তখন কিনে দিতে পারবে তোমায়।যদিও বিয়ে নিয়ে প্রত্যেকটি মেয়ের মনে অনেক ধরনের ফ্যান্টাসি কাজ করে।কিন্তু কি আর করার বলো?মন্দ ভাগ্য তোমার।মনে সবুর দাও।যেই হীরে তুমি পেতে চলেছো তা কি আর সবার ভাগ্যে জোটে?

তূর্ণার কথার বাস্তবিকতা মেনে হাত বাড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে প্যাকেট খানা হাতে নিলো তাথৈ।সুলতান শরাফত এর স্ত্রী সবটাই খেয়াল করে মুখে সুক্ষ হাসি ঝুলিয়ে নিচু স্বরে বললো

“আমার কক্ষে এসো তোমরা।মেয়েটাকে ভালোভাবে তৈরি করে দাও।একাকী মানুষ,ভয় পাচ্ছে বোধ হয়।তার মধ্যে পাশে আপন কেউ নেই।

মালিকা শরাফত এর কথায় দুচোখ ফেটে জলের ফোয়ারা ছুটতে চাইলো তাথৈ এর।কিন্তু নিজেকে সামলে তূর্ণাকে সাথে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরের ঘরে চলে গেলো।

অল্প সময়ের মধ্যেই ভিয়ান সেখানে উপস্থিত হলো।তিহান চোখের ইশারায় তাকে কাছে ডেকে একটা প্যাকেট এগিয়ে বলে উঠলো

“এখানে সাদা পাঞ্জাবি,পাজামা আর টুপি আছে।দ্রুত পোশাক পাল্টে নে।তুষার পাত শুরু হবার আগেই দ্রুত সকল কাজ শেষ করে আমাদের আবার ফিরতে হবে।নয়তো রাস্তায় আটকে পড়বো।পরে ফায়ার সার্ভিসের লোক কে কল করতে হবে।

তিহানের বাহুতে পাঞ্চ মেরে অল্প হেসে ভিয়ান বলে উঠলো

“থ্যাঙ্কস।

সোনালী পাড়ের ল্যাভেন্ডার রঙের একটা জামদানি শাড়ি তার সাথে কোনোরকম ম্যাচিং রেডিমেড একটা ব্লাউজ।প্রসাধনী হীন মুখমন্ডল আর গহনা হীন শরীর।কাঁধ সম চুল গুলো ইলাস্টিকের সহিত একটা খোপা বেঁধে দক্ষ হাতে সুন্দর করে শাড়ি খানা তাথৈ এর গায়ে জড়িয়ে মাথায় বড় একটা ঘোমটা টেনে সাজ সম্পন্ন করলো তূর্ণা।তাথৈ এর বয়সী সুলতান শরাফত এর কন্যা নায়রা এসে একটা কাজল এগিয়ে ইতস্তত কন্ঠে বললো

“সাজ সজ্জার উপকরণ বলতে এটাই আমরা ব্যাবহার করি।উনার চোখে একটু কাজল লেপে দিন।ভালো লাগবে।

তূর্ণা অল্প হেসে মেয়েটির হাত থেকে কাজল টা নিয়ে চোখে সুন্দর করে লাগিয়ে দিলো।এরপর তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলো

“চলো নীচে যাওয়া যাক।

ভয় জড়ানো দুরু দুরু বক্ষে তূর্ণার হাত জড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলো তাথৈ।চোরা চোখে একবার নজর বুলাতেই সফেদ পাঞ্জাবি পরিহিত শুদ্ধ পুরুষ ভিয়ানকে নজরে লাগলো।তিহান আর অভীকের সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি নিয়ে যেনো সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছে।মানুষটিকে দেখেই অনন্য এক ভালো লাগায় বুকের সমস্ত ভয় নিমিষেই উবে গেলো তাথৈ এর।এরপর শাড়ির ঘন কুচি গুলো ধরে ধীরপায়ে ড্রয়িং রুমে এসে দাড়ালো পরবর্তী নির্দেশ শোনার জন্য। ।

খুবই সাদামাটা সাজের তাথৈ এর পানে একবার তাকিয়ে ভিয়ানের হৃদয় টা যন্ত্রনায় মুষড়ে উঠলো।এই মেয়েটিকে সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যেই আড়ম্বর কেউ কখনো না দেখেছে সেই ভাবে পুরো পৃথিবীকে দেখিয়ে নিজ ঘরে তুলে নেবে স্ত্রী রূপে।অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস।মেয়েটির আঙুলে একটা রিং পর্যন্ত তুলে দেবার ক্ষমতা হলো না তার।এভাবেই কি বিধাতা মেয়েটির সকল রঙিন স্বপ্ন গুলো ভেঙে চুরমার করে দিলো?এই মেয়েটা কি রঙিন স্বপ্ন গুলো ডিজার্ভ করে না?

ভিয়ান বিষাদে ছেয়ে যাওয়া নীলচে শ্বাস ত্যাগ করে মনে মনে বলে উঠলো

“একবার শুধু তোমাকে নিউইয়র্ক নিয়ে যাই।পৃথিবীর সমস্ত সুখ এনে তোমার সামনে হাজির করবো আমি।কোনো দুঃখ আর তোমাকে ছুঁয়ে দেবার দুঃসাহস করবে না তাথৈ।ভিয়ান নাওয়াফ নিজে সেই দুঃখ গুলোকে ভস্ম করে হাওয়ায় উড়িয়ে দেবে।

সময় গড়ানোর সাথে সাথেই বাড়ির হেল্পিং হ্যান্ড এর সহায়তায় মেঝেতে একটা পাটি বিছানো হলো।সুলতান শরাফত এর নির্দেশে সেই পাটিতে তাথৈকে বসানো হলো স্বজত্নে।সামনেই বিছানো দস্তর খানায় বসানো হলো ভিয়ান কে।ভিয়ানের পাশে বসলো অভীক আর তিহান।সুলতান শরাফত বিসমিল্লাহ বলে কুরআনের কিছু সুন্দর সুন্দর আয়াত পড়লেন এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করলেন।নতুন জীবনের সূচনার আগে সৃষ্টি কর্তার সন্তুষ্টি অবশ্যই প্রয়োজন।

আরো কিছু জিকির আসগার করে সুন্দর কন্ঠে সুলতান শরাফত তাথৈকে বলে উঠলেন

“যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন।আজকে তোমার অভিভাবক আমি আর তোমার মামাতো ভাই।তুমি ভয় পেয়ো না মা।যা যা প্রশ্ন করবো লক্ষী মেয়ের মতো উত্তর করবে কেমন?

কাজীর নমনীয় কন্ঠে বুকের উপর চাপের প্রভাব কিছুটা কম অনুভব করলো তাথৈ।মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই কাজী শুধালো

“এই বিয়েতে কি তোমার মত আছে মা?তুমি কি মন থেকে ভিয়ান নাওয়াফ কে মেনে নিয়ে বিবাহ করতে প্রস্তুত?

ভয় আর লজ্জায় তাথৈ মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারলো না।শুধু কি তাই?স্বজন হীন বিবাহের ক্ষন মনে পড়তেই বুক ভেঙে হুহু করে কান্না পেলো তার।সুলতান শরাফত কিছুক্ষন নিশ্চুপ থেকে পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন।এদিকে তাথৈ এর নিশ্চুপ মুখশ্রী দেখে ভয়ে হৃদপিণ্ড ধকধক করে উঠলো ভিয়ানের।তাথৈ যদি এখন অমত করে বসে তবে এই মুহুর্তেই ভিয়ান বরবাদ হয়ে যাবে ।তবে কি তাথৈ তাকে নিঃশেষ করার জন্য চুপটি করে রয়েছে?তাথৈ এর ভেতরে কি চলছে তা বোধ হয় তূর্ণা বুঝতে পারলো।নিজের বুকের সাথে তাথৈ এর মাথা জড়িয়ে তূর্ণা শুধালো

“বিয়েতে তোমার মত আছে তাথৈ?

সামান্য ভরসা পেয়ে মাথা দুলিয়ে নিচু ধীর কন্ঠে তাথৈ বললো

“হ্যা আমার মত রয়েছে।আমি স্বেচ্ছায় উনার সাথে এখানে এসেছি।আজকের এই শুভ দিনে আমার বাবা মা আমার পাশে নেই সেজন্য আমি কিছুটা ভীত এবং বিভ্রান্ত হয়েছি।এছাড়া আর কিছুই না।

সুলতান শরাফত দুঃখী গলায় বললেন

“মহান সৃষ্টি কর্তা উত্তম ভাগ্য নির্ধারক।তুমি তার উপর ভরসার ভার ছেড়ে দাও মা।

তাথৈ এর মত নিয়ে ভিয়ানের মত ও নিলেন শরাফত সাহেব।এরপর পুনরায় বলে উঠলেন

“শাহরিয়ার নাওয়াফ এর একমাত্র পুত্র ভিভিয়ান নাওয়াফ কে নগদ এক লক্ষ্য টাকার দেন মোহর ধার্য্য করিয়া তোমারর সাথে বিবাহের সম্পর্ক স্থাপন করা হইলো।তুমি কি তাহাকে স্বামী রূপে গ্রহণ করিতে রাজি আছো মা?রাজি থাকলে পবিত্র সম্পর্ককে কবুল বলে গ্রহন করো।।

এবার আর সময় ব্যয় করলো না তাথৈ।যেই বাক্য তাকে বলতেই হবে সেটাতে ভনিতা করে কি লাভ?আর মানুষটি তার একান্ত আপন।বাবা মা হীন পৃথিবীতে এই মানুষটি ছাড়া তার আশ্রয় নেবার জায়গাই বা কোথায় আর?নিজের নির্মম ভাগ্যকে ধিক্কার জানিয়ে ভেজা গলায় তাথৈ বলে উঠলো

“আলহামদুলিল্লাহ কবুল।

তাথৈ কবুল বলতেই ভিয়ানের চোখ থেকে দুফোঁটা জল খসে পরলো।মেয়েটি তার হৃদয়ের কতোখানি জায়গা জুড়ে বিচরণ করে এটা কেউ কখনো অনুমান পর্যন্ত করতে পারবে না।মেয়েটিকে পবিত্র রূপে গ্রহণ করার জন্য নিজেকে কতো শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছিল সে এটা কি কেউ আদেও জানে?নিশ্চয় জানে না।দুটো বছরে কতো কতো বিরহ গেলো।এতো কষ্টের মাঝেও মেয়েটি তাকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসে গেছে।এই ভালোবাসার দায়ে কতো শত বার নির্যাতিত হয়েছে সকল কিছু ভিয়ানের জানা।ভালোবাসার ফিরতি উপহার না দিলে হৃদয়ে তৈরি হওয়া ক্ষত সারবে কিভাবে?

সুলতান শরাফত এর কন্ঠে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরলো ভিয়ান।তাকে তাথৈকে স্ত্রী রূপে গ্রহণের জন্য আহ্বান করা হচ্ছে।এই আহ্বান ফেরাবে তার সাধ্য কি?কোনো কিছু না ভেবেই ভিয়ান উঁচু আওয়াজে বলে উঠলো

“আলহামদুলিল্লাহ কবুল।

মুহূর্তেই হাসির হিড়িক পড়লো চারপাশে।সুলতান শরাফত এর স্ত্রী সকলের সামনে খেজুর এনে বলে উঠলেন

“মিষ্টি মুখ করে সকলেই নব দম্পতির জন্য দোয়া করি আমরা।উপর ওয়ালা তাদের উত্তম নেয়ামত দিন।

আনন্দ আর উৎফুললতায় খেজুর সহ আরো কিছু ফলমূল খেয়ে সকলেই বাড়ি ফেরার তাড়া দেখালো।কারন ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমে আসছে।যখন তখন ভারী তুষার ঝড়বে।মাঝে মাঝে এসব তুষারপাত বড় তুষারঝড়ে রূপ নেয়।

সুলতান শরাফত নিজেও আবহাওয়ার অবস্থা দেখে কাউকে আর জোর করলেন না।ভিয়ানের বাড়ি এখান থেকে মিনিট পনেরোর রাস্তা।তাই তিনি ভিয়ানকে বলে উঠলেন

“নব বধূকে নিয়ে তাহলে ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে যাও বাবা।আর নয়তো চাইলে রাত টুকু আমার এখানে….

তাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ভিয়ান বলে উঠলো
“আজকের রাতটা আমার স্ত্রীর সাথে একান্তে আমার নিজের বাড়িতে কাটাতে চাই আংকেল।আমরা এখনই চলে যাচ্ছি।আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন শুধু।আসছি।

সুলতান শরাফত বিষন্ন গলায় বললেন
“আজ তোমার বাবা মা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।তোমার জন্মের আগেই ছেলের বিয়ে ছেলের বউ এসব নিয়ে আলাপ করতো আমাদের সাথে।তোমার বাবার মত বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।আজও তাকে ভুলতে পারিনা আমি।

সুলতান শরাফত কে শান্তনার বাণী ছুড়ে তাথৈ এর হাত ধরে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো ভিয়ান।গাড়ির কাছে এসে অভীক বলে উঠলো

“আপনার কথা মতো আপনার দ্বিতীয় ছোট বাংলো টা আমি গুছিয়ে দিয়েছি স্যার।রাত কাটানোর সকল ব্যাবস্থা করা হয়েছে।ওখানে আপনাদের কোনো অসুবিধা হবে না।

ভিয়ান অভীকের থেকে গাড়ির চাবি নিতে নিতে বলে উঠলো

“অভীক তুমি তিহান দের নিয়ে আমার ফ্রেন্ড জ্যাকসন এর বাড়িতে চলে যাও।জ্যাকসনের সাথে কথা হয়েছে আমার।ওর এপার্টমেন্ট এ ও একাই থাকে।বিশাল বড় এপার্টমেন্ট।কারোর কোনো কষ্ট হবে না।আর স্টিফেন কে বলে দিও আমাদের বাড়ির সামনে যেনো বড় তালা ঝুলিয়ে দেয়।আর আগামী এক সপ্তাহ যেনো ওই তালা না খোলা হয়।

তিহান ভ্রূ কুঁচকে অবাক ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো

“অন্যের বাসায় কেনো থাকবো?

ভিয়ান তাথৈকে গাড়িতে বসিয়ে তিহানের সামনে এসে বলে উঠলো

“বিশাল এক মাইন্ড গেম খেলতে যাচ্ছি আমি।সেই গেইমে না চাইতেও সামিল হয়েছিস তুই।যদি বাঁচতে চাস তবে আমার কথা মতো চল।না হলে আয়াজ আমিরের নোংরা হাতের থাবায় পড়লে আর বাঁচবি না।তাথৈ আমার কাছে আছে এই খবর সে জেনে গিয়েছে।

অভীক বিশ্ময়ভরা কন্ঠে উত্তেজিত ভঙ্গিতে শুধালো

“কি করে?

শুকনো হেসে ভিয়ান বললো
“কয়েকদিন ধরেই একটা ছেলেকে নোটিশ করছি আমাকে ফলো করতে।বাদ দে ওসব কথা।এসব হাইড এন্ড সিক গেমের উস্তাদ আমি।আমাকে টেক্কা দিয়ে গেইম জিতবে এমন মানুষের জন্মই হয়নি আজ পর্যন্ত।আমির সাহেব কে একটু ঘোল খাওয়াবো আমি।আর অভীক এই কয়দিনে তাথৈ এর ফলস ভিসা পাসপোর্ট এর এরেঞ্জ করবে তুমি।অস্ট্রেলিয়ার অলি গলিতে এসব ফলস পাসপোর্ট এর কাজ হয় খুব নিখুঁত ভাবে।টাকা ঢালো সব পসিবল হবে।আমার এক সপ্তাহের মধ্যেই নিউইয়র্ক যাওয়া চাই।এট এনি কস্ট।

আর দাঁড়ালো না ভিয়ান।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সাই সাই করে চলে গেলো সকলের সামনে দিয়ে।ভিয়ানের যাবার পানে তাকিয়ে তিহান অসহায়ের ন্যয় বলে উঠলো

“কোন চক্করে ফেঁসে গেলাম রে বাবা?শেষপর্যন্ত এমন লুকাচুপি খেলা খেলতে হচ্ছে এই বুড়ো বয়সে?

অভীকের তাড়ায় তারাও গাড়িতে উঠে বসলো।তাদের গন্তব্য শুরু হলো জ্যাকসন এর নিউ এপার্টমেন্ট এর দিকে।

এদিকে রেইন নিজের গাড়ি হাকিয়ে এক ঘন্টার রাস্তা ড্রাইভ করে দাঁড়ালো নাওয়াফ প্যালেস এর বিশাল স্টিলের কারুকাজ খচিত গেইট টির সামনে।গাড়ি থেকে নেমে মুখে ক্রুর হাসি ঝুলিয়ে সামনে এগুতেই রাগে ঘাড়ের শিরা গুলো ফুলে উঠলো সেই সাথে শক্ত হয়ে উঠলো চোয়ালদ্বয়।বড় বড় দুটো তালা ঝুলছে মেইন গেটে।ক্রোধ সামলাতে না পেরে সজোড়ে গেটে লাথি মেরে গর্জে উঠে বলে উঠলো

‘আ উইল কিল ইউ বাস্টার্ড।তুই ব্ল্যাক ম্যাম্বা সাপ নিয়ে খেলছিস ।বড় ফনা তুলে যখন বিষাক্ত ছোবল টা মারবো তখন আর বাঁচার পথ খুঁজে পাবিনা।

মুহূর্তেই ঝরঝর করে ঝরতে লাগলো শীতল তুলার ন্যায় বরফ।সেই সাথে প্রবাহিত হতে লাগলো হিম শীতল বাতাস।পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে গাড়িতে উঠে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিলো রেইন।চলতে চলতে শুধু ফুসফুস করে বলে উঠলো

“তোকে আমি ছাড়বো না ভিয়ান নাওয়াফ।তুই প্রতিটি বিষয়ে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছিস।তোর জীবন যদি আমি নরক বানিয়ে না ছেড়েছি তো আমার নাম ও রেইন নয়।

#চলবে…..