বছর দুয়েক পর পর্ব-৪২+৪৩

0
96

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৪২
#সারিকা_হোসাইন

ধরণী জুড়ে শরৎ কালের আগমন ঘটে গিয়েছে দিন চারেক আগে।ঘন বরষার বিদেয় এর পর সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ শরৎ আসতে একটুও কার্পণ্য করেনি।শরৎ কালের আবির্ভাব হতেই পৃথিবী যেনো নতুন সাজে সেজে উঠলো।কিছুদিন আগেও যেই গাছপালা লতাপাতা গুলো সবুজ শাড়ি পরিহিত ছিলো নিমিষেই তারা হলুদ কমলা আর লাল বর্ণ ধারণ করেছে।পাতা ঝরে কিছু কিছু বৃক্ষ রিক্তের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে।ধবধবে সাদা কাশফুল গুলোও সারি সারি বেঁধে ফুটেছে বোধ হয়।উত্তপ্ত ধরণী শীতলতার চাদরে মুড়েছে আজকাল।আকাশেও ফকফকে সাদা মেঘের ভেলা।যদিও মন খারাপের এলোমেলো মুহূর্তে পশলা ভরা বৃষ্টি ঝুপঝুপিয়ে ঝরে পড়ে কিন্তু মুহূর্তেই তার মোহনীয় গন্ধে মনের সকল কালিমা মুছে দিয়ে চলে যায়।বাতাসেও যেনো প্রকৃতির ঘ্রাণ ভেসে বেড়ায়।

ফকফকে আকাশের ঝলমলে শরদিন্দুর পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে মৌটুসী।আজকের চাঁদটা একটু বেশিই যেনো সুন্দর।অবশ্য প্রাণ উৎফুল্ল থাকলে সকল কিছুই সুন্দর আর মন মাতানো মনে হয়।আজকের রাত টুকু গড়ালেই মৌটুসী কে নিজের চির চেনা বাড়ি ঘর বাবা মা নিজের ছোট কক্ষ সব কিছু ত্যাগ করে চলে যেতে হবে অন্যের বাড়িতে।সেখানে সবকিছুই নতুন।মায়া বসাতে বেশ সময় লাগবে।নিজের মায়া জড়ানো সব কিছু পেছনে ফেলে নতুনকে বরণ করতে হবে পরম সাদরে।চিরতরে বিদায় হবে মৌটুসীর।এক সময় যেই বাড়িতে নিজের রাম রাজত্ব চলতো এক নিমিষেই সেই বাড়ির মেহমান এ পতিত হবে সে।মন চাইলেই বাবা মায়ের কাছে এটা সেটার আবদার করা হবে না।ঘুম থেকে উঠেই মায়ের বকুনি বা বাবার চোখ রাঙানি দেখতে হবে না।এক সময় এগুলোর প্রতি বেশ বিরক্ত ধরে গিয়েছিল তার।কিন্তু আজ যেনো মন বলছে ওই বাড়িতে এসব পাবি তো?মন টিকবে তো?বাবা মাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে না?

বিদায় লগ্নের নিষ্ঠুরতা মনে হানা দিতেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো মৌটুসী।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সে।মৌটুসীর জন্মের পর রোকসানা কাকবন্ধা নারীতে রূপান্তর হয়েছেন।বিধাতা শত চেষ্টার পরেও আর কোনো সন্তান তাদের দেননি।উপরে উপরে যতোই কঠিন খোলস পরে থাকুক না কেনো তারা ভেতরে ঠিক কতটা নরম এই মানুষ দুটো মৌটুসী তা ভালোই জানে।

“আমি চলে গেলে তুমি ঠিক অন্ধকার রুমে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদবে তাই না বাবা?

অস্ফুট স্বরে কথাটি বলে হুহু করে কেঁদে উঠলো মৌটুসী।তাকে শান্তনা দেবার মতো সেরকম কেউ নেই।একজন ছিলো আর সে হলো তাথৈ।ভাগ্যের কঠিন চক্রান্তে আজ সে দূরদেশে।ইকবালের থেকে মৌটুসী শুধু জেনেছে ওরা বিয়ে করেছে এবং ভালো আছে।ব্যাস এই টুকুই! নিজেদের বিয়ে নিয়ে তাথৈ আর মৌটুসীর নানান কল্পনা ছিলো।কিন্তু সেসব কিছুই সত্যি হলো না।কেউ কারো বিয়েতে উপস্থিত হওয়া তো দূর চোখের দেখাও দেখতে পারলো না।

নিজের পছন্দের মানুষকে স্বামী হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।না চাইতেও মন পুলকিত হয় বারবার।হৃদয়ের গহীনের সুখ গুলো আন্দোলন করে হৃদয় ফেটে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়।কিন্তু মৌটুসীর আজ যেনো আনন্দের চাইতে দুঃখই বেশি উপলব্ধি হচ্ছে।নিজের সবটা দিয়ে ইকবাল কে সে খুশি রাখতে পারবে তো?

***********
সারা দিনের কাজ শেষ করে ঘন্টা খানেক আগে নিজের রুমে ফিরেছে ইকবাল।বিয়ের আয়োজনে বহুত ভেজাল।বৃদ্ধ বাবা কে কোন ভাবেই হয়রানি করতে চায় না সে।একদিকে বিজনেস সামলানো অন্যদিকে বিয়ের জোগাড় সব মিলিয়ে বেশ নাস্তানাবুদ হয়েছে ইকবাল।রুমে এসে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে মৌটুসীর খবর নেবার জন্য ফোন হাতে নিলো ইকবাল।আজ সারাটা দিন কাজের ব্যস্ততায় মেয়েটির কোনো খুঁজ নেয়া হয়নি।হয়তো অভিমান করে ঘুমিয়ে পরেছে।এখনই যদি অভিমানের পাল্লা ভারী হয় তবে ভবিষ্যতে সাংঘাতিক বিপদ হয়ে দাঁড়াবে।ইকবাল কিছুতেই এই রিস্ক নিতে চায়না।

ফোনের লক খুলতেই ভিয়ানের নম্বর থেকে টুং করে একটা মেসেজ এলো,মৌটুসীর ভাবনা সাইডে রেখে ভ্রু কুঁচকে সেই মেসেজ ওপেন করলো ইকবাল।

“এরিক কে সাইফ আজমীর কাছে সোপর্দ করে দে।আমি চাইনা তোকে কোনো বিপদ স্পর্শ করুক।আর নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা।

মেসেজের মানে খুব ভালো করেই বুঝলো ইকবাল।ফুঁস করে লম্বা শ্বাস টেনে মৌটুসীর নম্বরে একটা ছোট মেসেজ ড্রপ করলো

“একটা ইমারজেন্সি কাজে আটকে গিয়েছি মৌটুসী।প্লিজ রাগ করোনা।লক্ষী মেয়ের মতো রাত না জেগে ঘুমিয়ে পরো কারন আগামী দিন গুলোতে আর আমার অত্যাচারে ঘুমুতে পারবে না।

মেসেজটি সেন্ড করে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ইকবাল।ভিয়ান ঠিকই বলেছে।নতুন করে এসব ঝামেলায় না জড়ানোই উত্তম।সাইফ আজমীর বিশ্বাস নেই।ছেলেকে খুঁজে পেতে ঠিক মামলা মোকদ্দমার আশ্রয় নেবে।ঘরে নতুন বউ রেখে এসব কালকূট করতে পারবে না ইকবাল।একবার মৌটুসী কিছু আন্দাজ করে ফেললে জবাবদিহিতা করে শেষ করা যাবে না।মেয়েটি সহজ মনের মানুষ।তার মধ্যে কোনো জটিল চিন্তার উদ্রেক তৈরি করতে চায়না ইকবাল।তার চেয়ে হাত ধুয়ে সেফ হয়ে থাকাই বেটার।আবর্জনা ঘরে রেখে না পচিঁয়ে ভাগারে ফেলে দেয়াই উত্তম সিদ্ধান্ত।
মোবাইল এর স্ক্রিন ট্যাপ করে একবার সময় দেখে নিলো ইকবাল।রাত প্রায় দেড়টার কাছাকাছি।মাহির নিশ্চয়ই ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।বিপদ থেকে একবার দূর হতে পারলে এমন শান্তির ঘুম হাজার বার ঘুমানো যাবে।
মনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে তাৎক্ষণিক মাহিরের নম্বর ডায়াল করলো ইকবাল।একবার রিং হয়ে কেটে যেতেই দ্বিতীয়বার ডায়াল করলো মাহিরের নম্বর।আগামী কাল ইকবালের নতুন জীবনের সূচনা হবে।প্রায় সপ্তাহ খানেক এসব বিষয়ে হাত লাগানোর সময় পাবে না সে।তাই যা করার আজই করতে হবে।মাহির এবারও ফোন না তুললে তার বাড়িতে হানা দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।

এবার রিং বাজতেই ঘুম ঘুম কন্ঠে মাহির শুধালো

“কিরে শালা বিয়ের চিন্তায় ঘুম আসেনা তোর?এই মাঝ রাতে কিসের প্যারা উঠেছে তোর?

নিজের কন্ঠটা একটু খাদে ফেলে অল্প কেশে নিলো ইকবাল।এরপর ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

“জীবন্মৃত ভ্যাম্পায়ার কে কফিনে তোলার ব্যবস্থা কর।

মাহির বুঝলো ইকবাল কি বুঝাতে চাইছে।তাই আর বাক্য খরচ না করে বলে উঠলো

“তুই নিশ্চিন্তে বিয়ে বাসর সব করে ফেল।কাল আমি এটাকে ট্রান্সফার করে তবেই বর যাত্রী হিসেবে উপস্থিত হবো।আর যদি না আসি বুঝবি পার্সেল আমার কাছেই আছে।

আর কথা বাড়ালো না ইকবাল।নিঃশব্দে ফোনের লাইন কেটে দিয়ে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়লো।জীবনে বহু অন্যয় কাজ করেছে সে।সাদা হাত প্রায় প্রায় ই রক্তে রঞ্জিত হয়েছে।কখনো কোনো অনুশোচনা হয়নি তার।কারণ কোনো নির্দোষ মানুষকে একটা ফুলের টোকাও দেয়নি সে।যারা তার হাতে প্রাণ হারিয়েছে তাদের সকলেই বিশাল মাপের স্কাউন্ড্রয়েল।পুলিশ আদালত হলে ঠিক এদের ফাঁসি হবে সেই কাজ না হয় ইকবাল নিজে থেকেই করে দিয়েছে।বিষয় তো একই তাই না?

________

ভিয়ানের চিন্তায় সারা রাত এক মুহূর্তের জন্য চোখের পাতা এক করতে পারেন নি সাইফ আজমী।হাঁটুর বয়সী একটা ছেলে এভাবে তাকে মুহূর্তে মুহূর্তে চমকিত করবে এটা ভেবেই তার প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে মিনিটে মিনিটে।ভিয়ানের ধূর্ত চালচলনের উপর ক্রোধে খেই হারিয়ে সকাল সকাল অশ্রাব্য গালি গালাজ জুড়লেন মাঝবয়সী এই লোক।এদিকে রেইন কে বেশ শাতীর মনে করেছিলেন তিনি।কিন্তু এটাও যে একটা বিলেতি গাধা তার প্রমান নখদর্পণে।কিন্তু সমস্ত কিছুর নাটের গুরু এরিক কোথায় লুকিয়ে রয়েছে সেটাই যেনো ভেবে পেলেন না সাইফ আজমী।বিভিন্ন টেনশনে এতদিন সবকিছু ভুলে দিব্যি ছিলেন তিনি।কিন্তু সেলিনা এসে তার ব্লাড প্রেসার একদম হাই করে দিয়ে গিয়েছে।চক্রাকারে ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে সাইফ আজমি বিরবিড়িয়ে বলে উঠলেন
“কেউ মাটির তলে চালান করে দেয়নি তো আমার ছেলেকে?

হঠাৎই ফোন কলে ভাবনার ব্যাঘাত ঘটলো সাইফ আজমীর।বালিশের নীচে ভো ভো করে বেজে যাচ্ছে দামী ফোন খানা।রেইনের ফোন ভেবে ঝটপট হাতে তুললেন ফোন খানা।স্ক্রিনে জলজল করছে অপরিচিত নম্বর।মনে সন্দেহের বীজ বুনে ভ্রু কুঁচকে ফোন কানে তুললেন সাইফ আজমী।আকস্মিক ওপাশ থেকে ভরাট গলায় প্রশ্ন এলো

“হ্যালো সাইফ আজমী বলছেন?নিউরো কেয়ার হসপিটাল থেকে ডক্টর মাহির মানসুর বলছি।

হসপিটালের নাম শুনে ধক করে উঠলো সাইফ আজমীর বিশাল হৃদয়।দুঃসংবাদ কার বিষয়ে হবে সেসবে তার আন্দাজ নেই।কিন্তু হাসপাতাল থেকে অবশ্যই কোনো সুসংবাদ দিতে কেউ ফোন করবে না।ডক্টর কার বিষয়ে ফোন করেছে এটা ভেবেই গম্ভীর ভাব বজায় রেখে সাইফ আজমী উত্তর করলেন

“জ্বী সাইফ আজমী বলছি।

এবার একটু নড়ে চড়ে উঠলো মাহির।কন্ঠে খানিক কাঠিন্য ভাব এনে অজান্তের ন্যয় বলে উঠলো

“আজ পঁচিশ দিন ধরে আপনার ছেলে আমাদের হসপিটালে ভর্তি।গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত অবস্থায় কয়েকজন লোক তাকে এখানে এডমিট করে।মাথায় আঘাত পাবার কারনে সে কোমায় চলে গিয়েছে।পেশেন্টের প্রয়োজনীয় তথ্য আমাদের কাছে না থাকায় আমরা আপনাকে কল করতে পারিনি।আপনার ছেলের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।প্লিজ তাকে এসে নিয়ে যান।

কথা গুলো বলে ফোন কেটে দিলো মাহির।ভদ্রলোক বড়োই ধূর্ত।বেশি কথা বলতে গেলেই প্রশ্নের ঝুড়ি খুলবে।এতো ঝামেলায় জড়াতেই চায়না মাহির।ছেলের প্রতি গরজ থাকলে আধ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবে।এরিক কে সাইফ আজমীর ঘাড়ে গছাতে পারলে মাহির ও বেঁচে হাঁফ ছাড়বে।

*********
মকবুল শেখের বাড়িতে দাওয়ায় বাবু হয়ে বসে আছে সাজিদ মাহমুদ।পাশেই চেয়ারে নত মস্তিষ্কে দুই হাত কপালে ঠেকিয়ে বসে আছেন মকবুল শেখ।বহু আগে থেকেই সাজিদ মাহমুদ কে চিনেন বৃদ্ধ মকবুল।মেহেরিন কে সাজিদের হাতে তুলে দেবার স্বপ্নও দেখে ছিলেন এই ভদ্রলোক।কিন্তু দুষ্ট দৈত্যের আগমনে সাজানো বাগান লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে।যা আজো গুছিয়ে উঠতে পারেনি কেউ।সমস্ত নীরবতা ভেদ করে সাজিদ অনুনয়ের স্বরে বলে উঠলো

“আপনার কোনো আপত্তি না থাকলে মেহেরিন কে আমি বিয়ে করতে চাই চাচা।মেহেরিন আমার কাছে ভালো থাকবে।বাকিটা জীবন ওর সকল দুঃখ দূর করে ওকে আকড়ে বুকে জড়াতে চাই আমি।আপনি শুধু একবার হ্যা বলুন।

কেবলই নাস্তার ট্রে নিয়ে সেই বৈঠকে এসে দাঁড়িয়েছে মেহেরিন।সাজিদ মাহমুদ এর এহেন কথা যেনো মেহেরিন এর বুকে তীরের ফলার ন্যয় বিধলো।অজানা কষ্টে থরথর করে কেঁপে উঠলো পুরো শরীর।নাস্তা সহ ট্রে খানা ঝনঝন শব্দে আলোড়িত হলো।নিজের ভারসাম্য হারাতে চাইলো মেহেরিন।কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে শক্ত গলায় মেহেরিন বলে উঠলো

“তুমি অবান্তর বকছো সাজিদ।বয়সের খাতা থেকে আট চল্লিশ টি বছর কাটা হয়ে গিয়েছে আমার।তোমার বয়সও এখন পঞ্চাশের ঘরে।এখন কি বিয়ের বয়স আছে আমাদের?তাথৈ জানলে ছি ছি বলবে আমাকে।আর এই বয়সে এসে সংসার করার অবস্থায় নেই আমি।সব কিছুর ই একটি নির্দিষ্ট বয়স থাকে।যখন যা খুশি তাই করা যায় না ।

মেহেরিনের উঁচু গলায় লজ্জায় মিইয়ে গেলো সাজিদ।মুখ থেকে আর কোনই টু শব্দ বেরোলো না তার।মকবুল শেখ এখনো মাথা ঝুঁকেই বসে আছেন।নাস্তার ট্রে টেবিলে রেখে প্রস্থান করতে চাইলো মেহেরিন।কিন্তু তার আগেই তিহানের মা এসে মেহেরিনের হাত চেপে ধরে বলে উঠলেন

“জীবনকে উপভোগ করার অধিকার সবার আছে।তোমার চাইতে বয়স্ক মানুষ এখন বিয়ের পিঁড়িতে বসছে।একটা খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়ে জীবনের অর্ধেক শেষ হয়েছে মানে এই নয় যে তুমি আজীবন এই খয়ে যাওয়া জীবন টেনে নিয়েই বেঁচে থাকবে।আমাদের ছোট্ট এই জীবন টা খুব সুন্দর মেহেরিন।সাজিদ ভাই তোমার জন্য সঠিক মানুষ।তাকে তুমি পায়ে ঠেলো না।সৃষ্টিকর্তা দ্বিতীয়বার জীবনকে রাঙানোর সুযোগ দিয়েছেন তোমাকে।তার হুকুম অমান্য করবে তার কি সাধ্যি?

আর দাঁড়ালো না মেহেরিন।তিহানের মা কে ফেলে দ্রুত পদে নিজের ঘরে গিয়ে খিল দিলো।এরপর বালিশে মুখ গুজে হুহু করে কেঁদে মেহেরিন বলে উঠলেন

“এই ভাঙাচোরা জীবনে কিসের মেরামত করতে চাও তুমি সাজিদ?
ভাঙা জিনিস কি কখনো জোড়া লাগে?বিশ্ৰী ধারালো দাগ টা থেকে যায়না?

********

#চলবে…..

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৪৩
#সারিকা_হোসাইন

তুলতুলকে পেয়ে তাথৈ যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।গত কালকের বিকেল থেকে তারা দুজনে নানান গল্পে মজেছে এবং সুযোগ পেলেই দুজন দুজনকে শক্ত আলিঙ্গনে আগলে নিচ্ছে।যেনো শত জন্মের বন্ধুত্ব তাদের।কারোর মুখ থেকেই যেনো হাসির রেখা সরছে না।এই কয়েক বছরে হাজারো কথা জমা হয়েছে তাদের।পাঁচটি বছরে তুলতুল তাথৈ দুজনেই বেশ বড় হয়ে গিয়েছে।শুধু কি তাই?বয়সের সাথে সাথে চেহারা আর শারীরিক গরনেও এসেছে আমূল পরিবর্তন।কিন্তু মেয়ে দুটো সেসব গায়ে মাখছে না।তারা যেনো পুরোনো অতীতে ই আটকে রয়েছে।

তাথৈ এর থেকে অস্ট্রেলিয়া আসার পুরো ঘটনা শুনে ভয়ে শিউরে উঠলো তুলতুল। সেই সাথে কথায় কথায় তুলতুল জানালো

“ভিয়ান ভাইয়া আমাদের সবাইকে ওয়ার্ন করেছিলো যাতে তোমাকে না জানাই যে, তিনি বেঁচে আছেন।আমি তোমার নম্বর জানতাম।বাট ইচ্ছে করেই যোগাযোগ অফ রেখেছিলাম।কারন তোমার বাবা সাইফ আজমী আর এরিক ভাইয়া মিলে ভিয়ান ভাইকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছিলো।ভাইয়া বেঁচে আছে শুনলে তুমি উল্টাপাল্টা রিয়েক্ট করতে।যেটা ভাইয়ের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক হতো না।হয়তো দ্বিতীয়বার তাকে শেষ করার পরিকল্পনা পর্যন্ত করে ফেলতো তারা।

ভিয়ান হীন পূর্ব স্মৃতি গুলো মনে পড়তেই ছলছল করে উঠলো তাথৈ এর চোখ জোড়া।এমন নিদারুণ যন্ত্রনা কেউ যেনো না পায় ।যেই যন্ত্রনা তাথৈ বেঁচে থেকে সয়েছে তা বর্নাতীত।এরিক আর সাইফ আজমী বহু চেষ্টা করেছে তাথৈকে অন্যত্র বিয়ে দিতে।কিন্তু মেহেরিনের কঠিন বেষ্টনী আর তাথৈ এর জেদের কাছে টিকতে পারেনি তারা বাপ ছেলে।যদি সেসময় তারা জয়ী হয়ে তাথৈকে অন্য কারো হাতে জোর করে তুলে দিতো তবে আজ কি ধরনের অনাসৃষ্টি হতো?
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে থরথর করে কেঁপে উঠলো তাথৈ।ওই ভয়ানক স্মৃতি গুলো কোনো ভাবেই মনে করতে চায় না সে।যেই নির্মম অতীত খুব করে গত হয়েছে তা গোপন ই থাকুক।

অন্যমনস্ক তাথৈকে দেখে তুলতুল তাথৈ এর মনের ভাবনা অনুধাবন করলো।এরপর প্রসঙ্গ পাল্টে বলে উঠলো

“নিউইয়র্ক চলে যাবে নাকি খুব শীঘ্রই?

তুলতুলের প্রশ্নে ভাবনা ছেড়ে বেরিয়ে এলো তাথৈ।সংগোপনে চোখের কোনে জমে থাকা জল দ্রুত মুছে ধরা গলায় বলে উঠলো

“হ্যা,তাছাড়া আর যাবার জায়গা কোথায় বলো?আম্মুও পাপাকে ডিভোর্স দিয়ে তোমার দাদু বাড়ি চলে গিয়েছে।দুনিয়াতে আপন বলতে ওই স্বামী নামক মানুষটাই তো এখন রয়েছে।যেকদিন তাকে আগলে প্রাণ ভরে শ্বাস নেয়া যায়।এইতো।

তাথৈ এর মাথায় আলতো করে হাত বুলালো তুলতুল।এরপর শুকনো হেসে মমতা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো

“বয়সের তুলনায় অনেকটাই বড় হয়ে গিয়েছো তুমি তাথৈ।

“পরিস্থিতি আমাকে অভিজ্ঞ করে তুলেছে তুলতুল।

আর কথা হলো না দুজনের।হঠাৎই নুরজাহান এসে কিছু স্ন্যাক্স তাথৈ আর তুলতুল এর সামনে রেখে বললো

“দুই বোন মিলে শুধু গল্প করলেই হবে?নাস্তা পানি তো কিছু করতে হবে নাকি?নাও দেখি এগুলো খেয়ে আবার গল্পে লেগে পরো।

নূরজাহান এর কথায় এক গাল হেসে তুলতুল বলে উঠলো
“আপনিও বসুন আমাদের সাথে।সারাদিন তো শুধু কাজ কাজ করেই ব্যস্ত থাকছেন।

তাথৈ নিজেকে স্বাভাবিক করে আবদার এর স্বরে বলে উঠলো

“আমাদের সাথে আপনারা দুজনেও নিউইয়র্ক চলুন না প্লিজ?

বৃদ্ধা নুরজাহান তাথৈ এর কথায় খুবই অমায়িক হাসলেন।এরপর করুন কন্ঠে বললেন

“এই বাড়ির মায়া ছাড়তে পারি না রে মা।ছাড়তে পারি না বলেই ছেলে মেয়েদের কাছেও যেতে পারি না।মায়া বড়ো শক্ত জিনিস।সহজেই যে কাটানো যায়না একে।আস্তে আস্তে সংসারী হও, গৃহিণী হও সব টের পাবে।অন্যের থেকে শুনলে নিছক মুখের কথাই মনে হবে।

নুরজাহান এর কথায় পুনরায় ভাবনার সাগরে পতিত হলো তাথৈ।তার অবচেতন মন তাকে শুধালো

“তবে কি আমাদের বাড়ির প্রতি আম্মুর কোনো মায়া কাজ করেনি?এক নিমিষেই আম্মু এই বাড়ি ছেড়ে কিভাবে চলে গেলো?তার কি একটুও মন খারাপ লাগেনি?আর পাপা?তাদের মধ্যে কি কোনো দিন ও কোনো ভালোবাসা ছিলো না?

**********
নিউরো কেয়ার হসপিটাল থেকে সেদিন ই এরিক কে নিয়ে এসেছেন সাইফ আজমী।নিজেদের পরিচিত নামিদামি প্রাইভেট হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে তাকে।মাথার শুকিয়ে আসা ক্ষত দেখে কেউ আঘাত কিভাবে হয়েছে তা সঠিক ভাবে অনুমান করতে পারছেন না।একেক ডক্টর একেক ঘটনা অনুমান করছেন।প্রচন্ড ব্লিডিং আর অধিক ড্রাগ এডিক্টেড কে কারন দর্শিয়ে এরিকের কোমায় যাওয়া ব্যাপারটা আন্দাজ করেছেন অভিজ্ঞ ডক্টর রা।কিন্তু এসব বিষয়ে সাইফ আজমীর মাথা ব্যাথা নেই।সে এখন ভিয়ান কে নিয়ে মত্ত।ছেলের উপর থেকে তার ভক্তি ভালোবাসা সব উঠে গিয়েছে।মনে মনে ঘেন্নার সাগরে রাত দিন ছেলেকে ভাষান তিনি।এই ছেলের জন্যই তার আজ এতো এতো দুর্দশা।এদিকে গোপন সূত্রে মেহেরিনের খবর নিয়েছেন তিনি।এডভোকেট সাজিদ মাহমুদ এর হরদম যাতায়াত হচ্ছে নাকি ওই বাড়িতে।বুড়ো বয়সে মেহেরিন আর সাজিদের প্রেম প্রেম লুকোচুরি দেখে মনে মনে ঘেন্নায় থু থু ফেলেন সাইফ আজমী।মেহেরিন কে অশ্রাব্য গালি গালাজ ও জুড়েন মাঝে মাঝে।এদিকে ছেলের হসপিটালে ভর্তির খবর শুনে উন্মাদ হয়েছে সেলিনা।সাইফ আজমিকে বার বার দেখে নেবার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।সেলিনার ধারণা এরিকের উপর ক্ষোভে তিনিই গোপনে ছেলেকে সরিয়ে দেবার প্ল্যান করেছেন।কারন সাইফ আজমীর সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকার একমাত্র এরিক ই।এরিক পুরো সম্পদ পেয়ে গেলে সেলিনার চোধুরী বাড়িতে আসা কেউ আটকাতে পারবে না।সারা জীবন রক্ষিতা হয়ে কে থাকতে চাইবে?সমাজে তার ও তো একটা স্থান থাকা দরকার নাকি?
সাইফ আজমী বেশ করে আজকাল সেলিনার ছায়া পর্যন্ত এড়িয়ে চলেন।সেলিনা যে কিছু বুঝতে পারে না বিষয় টা তা নয়।সবটাই অবলোকন করেন তিনি।তবুও না বোঝার ভান ধরে দেখতে চান সাইফ আজমী ঠিক কতটা নিকৃষ্ট হতে পারে।

সেলিনার এই মনোভাব বহু আগেই টের পেয়েছেন সাইফ আজমী।এজন্য অবশ্য উত্তম প্ল্যান করে রেখেছেন তিনি।সময় এলেই প্ল্যানটা সাকসেস ফুল করবেন তিনি।শুধু সময়ের অপেক্ষা।

মনে মনে চিন্তা ভাবনা করে বদ্ধ হসপিটাল কেবিনে হো হো করে হেসে উঠলেন সাইফ আজমী।সেই হাসির শব্দ বদ্ধ কামরায় দানবীয় শব্দের ন্যয় ঠেকলো।সাইফ আজমীর মনে হলো তারভেই হাসির শব্দ এরিক এর নিথর দেহ কেঁপে উঠলো যেনো।
ঘটনার সত্যতা যাচাই এর লক্ষ্যে আরো কিছু সময় দৃষ্টি মেলে রাখলেন।কিন্তু কোনো পরিবর্তন ঠেকলো না।নিছক মনের ভুল ভেবে সাইফ আজমী শক্ত গলায় বলে উঠলেন

“আমার পথে যে বাধা হয়ে আসবে তাকে ঠিক দুনিয়া ছাড়া করবো আমি।হোক সে স্ত্রী অথবা সন্তান।

_________
সিডনির শহরে রাত নেমেছে কিছুক্ষন আগেই।আজকের হিমবাহ অন্য দিনের থেকে তুলনামূলক কম।হয়তো উইন্টার বিদায় নিচ্ছে এই জন্য।এখন আর সন্ধে নামলেই গায়ে ভারী জ্যাকেট মাফলার জড়াতে হচ্ছে না।পাতলা সুয়েটার আর শর্ট জ্যাকেট এই শীত নিবারণ হচ্ছে আরামসে।তাথৈএর পাসপোর্ট ভিসা কে কেন্দ্র করে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে ভিয়ান।বাসায় পা পেতে দুদণ্ড বসার সময় নেই তার।নতুন বউকে একা ফেলে দূরে দূরে ঘুরতে তার মন মোটেও সায় দেয় না।কিন্তু পরিস্থিতি সব কিছু পাল্টে দিয়েছে।প্ল্যান মাফিক কিচ্ছু হয়নি।তাথৈকে নিয়ে ভিয়ান যেই স্বপ্ন দেখেছিল আর এক কণাও পূর্ণ হয়নি।তবে তাথৈ তো তার হয়েছে এই অনেক।

ভিসা অফিস থেকে ফেরার পথে এক কুটিল বুদ্ধি জাগলো ভিয়ানের মনে।মুখে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে নির্জন একটি রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করালো সে।এরপর গাড়ি থেকে নেমে পকেট হাতড়ে একটা সিগারেট বের করে লাইটার দিয়ে ধরিয়ে ঠোঁটে ঠেসে দিলো। ঝকঝকে সোডিয়াম বাতির আলোয় চারপাশ আলোকিত।এতবড় লম্বা চওড়া ফর্সা মানুষটিকে যে কারোর নজরে লাগবে।কিন্তু সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার কি কাজ?সে যেই শিকারের আশায় ওঁৎ পেতে আছে সেই শিকার জালে আটকালেই তার জন্য এনাফ।

ঘড়ির কাটা দশের ঘরে স্থির হয়ে টিকটিক করে জানান দিলো শিকারি খুব কাছেই আছে।সিগারেট এর শেষ টান মুখে পুড়ে ফিল্টার খানা অনাদরে পায়ে পিষে গাড়ির অগ্রভাগে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুনে ক্রস স্টাইলে দাঁড়ালো ভিয়ান।এরপর ধীরে ধীরে মুখের ধোয়া গুলো হাওয়ায় উড়াতে লাগলো।ঠিক সেই মুহূর্তে ওপর পাশ থেকে ধেয়ে এলো দামি রোলস রয়েস।ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ধরে অন্যত্র নজর বুলালো সে।ভাবখানা এমন যেনো সামনের কিছুই সে দেখছে না।

কিছু ওপাশের ঈগল তুল্য মানব ভিয়ানকে দূর থেকে দেখেই চিনতে এক মুহূর্ত সময় ব্যয় করলো না।তড়িৎ গতিতে ব্রেক কষে চলতি গাড়ি স্থির করলো সে।এরপর চোখে মুখে হিংস্র ভাব ফুটিয়ে খট করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো।কিন্তু ভিয়ান তার অবস্থানে অনড়।সামনের মানুষটিকে নিয়ে তার যেনো কোনো ভ্রূক্ষেপ ই নেই।

“ফাইনালি দেখা পাওয়া গেলো তবে তোমার ভিয়ান নাওয়াফ?

তীক্ষ্ণ ভরাট কন্ঠস্বর শুনে সামনে দৃষ্টি মেললো ভিয়ান।এরপর অবাক হবার ভান ধরে বিস্ফারিত নেত্রে তাকিয়ে শুধালো

“আরে মিস্টার রেইন…নাইস টু মিট ইউ।

ভিয়ান এর গা জ্বালানো অভিনয়ে দাউ দাউ করে রেইনের সর্বাঙ্গ জ্বলে উঠলো।তবুও মুখে ক্রোধ প্রকাশ না করে স্বাভাবিক গলায় শুধালো

“তাথৈ তোমার কাছে তাই না?সব জানি আমি।এন্ড আশা করবো মিথ্যে অভিনয় করে আমাকে ডিস্ট্র্যাক্ট করার চেষ্টা করবে না।

কোনো প্রকার ভনিতা না করেই ভিয়ান জবাব দিলো

“প্রেমিকের কাছে প্রেমিকা থাকবে এটাই স্বাভাবিক নয় কি?তুমি তাকে কিডন্যাপ করে চূড়ান্ত ধৃষ্টতার প্রমান দিয়েছো।তোমাকে আমি ওতো সহজে ছাড়বো না।

নিজের হিংস্র সত্তাকে গিলে খেয়ে রেইন বলে উঠলো

“যা চাও তাই পাবে বিনিময়ে তাথৈকে আমার হাতে তুলে দাও।

ভিয়ান তাচ্ছিল্য হেসে শুধালো

“ভোগ করতে চাও নাকি রক্ষিতা বানাতে চাও?কোনটা?কারন আমি তো শুনেছি আয়াজ আমির এক রাতের বেশি কোনো মেয়ের সাথে টাইম স্পেন্ড করতে পছন্দ করে না।

ভিয়ানের কথায় রাগে রিরি করে উঠলো রেইনের মস্তিষ্ক।কিন্তু তবুও যথা সম্ভব নম্র রইলো সে।কন্ঠে আরেকটু নমনীয়তা ঢেলে রেইন বললো

“ওকে আমি বিয়ে করতে চাই।আমার জীবনটাকে গুছাতে চাই।আমি আগে যা করেছি সব ভুলে নিজেকে শোধরাতে চাই।প্লিজ ভিয়ান তাথৈকে আমার হাতে তুলে দাও।দরকার পড়লে সিডনির সব থেকে সুন্দরী মেয়ের সাথে সেটিং করিয়ে দেবো তোমাকে।

ভিয়ান খানিক মেপে হেসে শুধালো

“তা ওই সিডনি সুন্দরীর সাথে নিজের সেটিং করাচ্ছ না কেনো?

ভিয়ানের প্রশ্নে থতমত খেলো রেইন।কিন্তু পরিস্থিতি নিজের বাগে আনতে ভিয়ান বলে উঠলো

“চলো একটা কার রেস খেলি।যে জিতবে সেই পাবে তাথৈ কে।আমি শুনেছি তুমি খুব ভালো গাড়ি চালাতে পারো।ঠিক?

রেইন ঠোঁট কামড়ে গম্ভীর গলায় শুধালো

“কোন রাস্তায় খেলতে চাও?

ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি একে ভিয়ান বলে উঠলো

“হোম বুশ বে ড্রাইভ রোড।

রেইন শক্ত নজরে তাকিয়ে বলে উঠলো
“পাগল হয়েছো?ওই রাস্তায় সবচেয়ে বেশি গাড়ি এক্সিডেন্ট করে শুধু মাত্র এই দ্রুত গতির জন্য।অন্য কোনো রাস্তা বেছে নাও।

ভিয়ান তাড়া দেখিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো

“ওকে না প্রবলেম।তাথৈ আমার কাছেই থাকুক।

ভিয়ান এর হেয়ালিতে লম্বা শ্বাস টানলো রেইন।এরপর জোড় গলায় বলে উঠলো

“দুর্ঘটনায় তোমার মৃত্যু হলে আমার জন্যই কিন্তু ভালো।

ভিয়ান বিগলিত হেসে বলে উঠলো
“আমি তোমার মৃত্যু দেখতে পাচ্ছি মিস্টার রেইন।

#চলবে……