বছর দুয়েক পর পর্ব-৪৪+৪৫

0
48

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৪৪
#সারিকা_হোসাইন

________
হোমবুশ বে ড্রাইভ রোড
সিডনি,অস্ট্রেলিয়া

শীতল নিশির পক্ষ আরেকটু এগুতেই ঝাপসা কুয়াশার বেষ্টনী চারিদিকে ঘিরে ধরলো।শীতের মাত্রা মাঝামাঝি কিন্তু কুয়াশার বিস্তার ধুম্র জালের ন্যয়।নিজেদের কর্ম জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে হোম বুশ বে ড্রাইভ এর পিচ ঢালা স্মুদ রাস্তা ধরে সাই সাই গতিতে গাড়ি চালিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরছেন সকল মানুষ।ঘরে ফেরার তাগাদা যেনো সবাইকে উচাটন করে রেখেছে।একেক জনের চাইতে একেক জনের গাড়ির স্পিড বেশি।যদিও গভমেন্ট এর পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট একটা স্পিড মিটার বাতলে দেয়া হয়েছে কিন্তু মানুষ তা থোরাই কেয়ার করতে নারাজ।সিডনির বাকি সকল রাস্তা গুলোর চাইতে এই রাস্তাটা একটু ড্যাঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত।এই রোডে দ্রুত গতির জন্য প্রায়শই নির্মম কার এক্সিডেন্ট হতে দেখা যায়।তবুও এই বিদেশি মানুষ গুলোর সেসব নিয়ে ভ্রূক্ষেপ নেই।

হোমবুশ বে ড্রাইভ এর ব্যস্ত রাস্তা ধরে সর্বোচ্চ গতি সীমা দিয়ে কার রেস খেলে চলেছে খিলাড়ি দুই পুরুষ।দুজনের চোখ ই যেনো ভয়ানক হিংস্র হারপি ঈগলের ন্যয় জ্বলছে।কারোর কাছেই মৃত্যু ভয় পৌঁছুতে পারছে না যেনো।দুজনেই নিজেদের মনের জোড়ের দম্ভে অন্ধ।ঘন ঝাপসা কুয়াশা ভেদ করে ধুলো উড়িয়ে সমান তালে ছুটে চলেছে দুটি দামি ব্র্যান্ডেড কার।গাড়ি দুটোর দাপটে রাস্তার সোডিয়াম আলো পর্যন্ত ঝাপসা হয়ে উঠেছে।সিডনির মানুষ জনের কাছে এসব দৃশ্য নতুন নয়।বড়লোকের ছেলেরা প্রায়শই নিজের কলা কৌশল জাহির করার জন্য এসব গাড়ি দৌড়ানোর খেলা খেলে।কিন্তু তার জন্য চাই নির্জন প্রশস্ত রাস্তা।কিন্তু এরা এমন ব্যস্ত রাস্তায় কোন মৃত্যু আনন্দে মেতেছে?

হঠাতই ভিয়ানের গাড়ি ওভার টেক করে চলে গেলো রেইন।এতে ভিয়ান বিচলিত হলো না বরং নিজের গতি নিয়ন্ত্রণ রেখে ছুটতে লাগলো।কারণ সামনে চারটি রাস্তার মিলন স্থল রয়েছে।যখন তখন যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।রেইন কে ভিয়ানের কাছে এই মুহূর্তে বুদ্ধি জ্ঞান হীন মূর্খ পুরুষ মনে হলো।মিছে মরীচিকার পিছনে ছুটে সে তার জীবন খোয়াতে চাইছে।
ভিয়ানকে পাশ কাটিয়ে রেইন বিজয়ী হাসি হাসলো।কিন্তু বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না সেই হাসি।রাস্তায় টহল রত পুলিশ হুইশেল ফুকে বেরিগেট টেনে থামিয়ে দিলো রেইন কে।এরপর চিরুনি তল্লাশি চালালো তার সর্বাঙ্গে এবং গাড়িতে।শুধু তাই নয় গতি সীমা লঙ্ঘন করার দায়ে দন্ড করলো মোটা অংকের জরিমানা।পুলিশের এসব বাড়াবাড়ি রেইনের মস্তিষ্ক জ্বালিয়ে দিচ্ছে।যখন ভিয়ান বাঁকা হেসে তাকে ক্রস করে ধীর গতিতে চলে গেলো তখন রেইন উন্মাদ প্রায়।সে ক্রোধে গর্জে উঠে পুলিশের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

“ডু ইউ নো হু আই এম?

প্রশ্নটি করে নিজের কার্ড খানা পুলিশের মুখে ছুড়ে মেরে রেইন হাপাতে হাপাতে বলে উঠলো

‘আই হ্যাভ আর্জেন্ট ওয়ার্ক।প্লিজ ডোন্ট বোদার মি।

এরপর পুলিশ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে একই গতিতে ছুটতে লাগলো ভিয়ানের অভিমুখে।
রাস্তার মোড় চ্যঞ্জ করে অন্য একটা রাস্তা ধরলো ভিয়ান।এই রাস্তায় বড় বড় কার্গো ট্রাক আর লরি চলে।শখের বসে অনেক বার নিজের মন সন্তুষ্টির জন্য এই রাস্তায় কার রেস খেলেছে ভিয়ান।কারন বরাবরই সাহসী কাজ করতে পছন্দ করে সে।এসব দুঃসাহসী কাজে তার পিচাশ মন তৃপ্ত হয়।নিজেকে বড় মাপের রংবাজ মনে হয় এবং সেই সাথে মিলে আত্মিক শান্তি।

এই রাস্তাটির অলিগলি থেকে শুরু করে স্পিড ব্রেকার এর মাপ পর্যন্ত তার নখদর্পণে।কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও একবার যদি কোনো একটা কার্গো ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে যায় তবে এপারের খেলা সাঙ্গ হবে নিমিষেই।

হঠাতই বিকট হর্ণ বাজিয়ে ভিয়ানকে ধরে ফেলতে সক্ষম হলো রেইন।রাস্তার যেই প্রস্থ তাতে পাশাপাশি দুটো গাড়ি চলা অসম্ভব।কারন এক লেনের রাস্তা এটা।বিপরীত মুখ থেকে দৈত্যাকৃতি ট্রাক গুলো রাস্তা কাঁপিয়ে ধেয়ে আসছে বারবার।কিন্তু রেইন যেনো এসব দেখেও দেখছে না।দক্ষ ভিয়ান সবটাই খেয়াল করে নিজেদের সেফটির জন্য উঁচু গলায় রেইনকে বলে উঠলো

“মরতে চাও নাকি?দেখছো না বড় বড় কার্গো সমানে ধেয়ে আসছে?একবার ধাক্কা লাগলে কি হবে ভেবে দেখেছো?

ভিয়ানের কথায় তাচ্ছিল্য হেসে রেইন দাম্ভিক কন্ঠে শুধালো

“নিজের প্রেমিকা কে অন্যের হাতে তুলে দেবার ভয় কি ভিয়ান নাওয়াফ কে কাবু করলো তবে?আমার লিমিট আমি জানি মিস্টার।তুমি নিজের চিন্তা করো।এসব কার রেস আয়াজ আমিরের বা হাতের খেল মাত্র।

রেইনের কথায় পুরো মস্তিষ্ক চিড়বিড়িয়ে উঠলো ভিয়ানের।নিজের স্ত্রীকে কোন সুপুরুষ অন্যের হাতে তুলে দেয়?সব কিছু মগের মুল্লুক নাকি।এই মানুষটি এখনো তাথৈকে পাবার স্বপ্ন দেখছে?তাথৈকে বিয়ে করতে চায়?তাথৈ এর শরীরের দখল নিতে চায়?আর যেনো সহ্য হলো না ভিয়ানের।তাথৈ এর টসটসে ওষ্ঠে কেউ চুমু খাচ্ছে এটা ভেবেই নিজের ক্রোধের নিয়ন্ত্রণ হারালো সে।রেইনকে চূড়ান্ত শিক্ষা দিতে স্কেলেটারে পা চেপে গতি বাড়িয়ে রেইনের থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলো ভিয়ান।এরপর শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“তাথৈ এর ভুত তোর মাথা থেকে চির দিনের জন্য সরিয়ে দেবো আমি মাদার ফাঁকার্স।

চলতে চলতে হঠাতই উঁচু স্পিড ব্রেকারের সাথে ধাক্কা খেলো রেইন।অতি স্পিডের কারনে গাড়িটি ছিটকে সামনে এগিয়ে গেলো প্রায় হিচড়ে হিঁচড়ে সেই সাথে রাস্তার অল্প ইট কংক্রিট উঠে গেলো।শরীরে প্রচন্ড ঝাকুনি খেলো রেইন।এদিকে অপরপাশ থেকে ধেয়ে আসা ট্রাক সমানে হর্ণ বাজিয়ে মাঝ রাস্তা থেকে রেইনকে নিজের লেনে ফেরার সতর্ক করছে।এবারের যাত্রায় কিছুটা নিজেকে সামলে নিলো রেইন।কিন্তু ততক্ষণে শকুনি ভিয়ান তাকে ফেলে চলে গিয়েছে।নিজের স্পিডের নিয়ন্ত্রণ না করেই আবারো ছুটলো রেইন।কিন্তু এটাই যেনো তার জীবনের চূড়ান্ত ভুল হলো।সামনে থাকা দ্বিতীয় স্পিড ব্রেকার দেখেও আর গতি কন্ট্রোল করতে পারলো না সে।আধ ভাঙা স্পিড ব্রেকারে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে রাস্তার পাশের বৃহৎ ইউকেলিপটাস গাছের সাথে সজোড়ে আঘাত খেলো গাড়িটা।মুহূর্তেই চুরচুর করে ভেঙে ঝরে পড়লো দামি গাড়ির ভারী কাচ গুলো।হেড লাইট গুলো ভেঙে যা তা অবস্থা হলো।গাড়ির বোনেট আর বাম্পার দুমড়ে মুচড়ে গুঁড়িয়ে রইলো।স্টিয়ারিং এ ছিটকে পড়ে কপাল ফেটে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারালো রেইন।সেই সাথে সারা শরীরে বিধে রইলো টুকরো টুকরো ভাঙা কাঁচ।

নিজের গাড়ির লুকিং গ্লাসে পুরো ঘটনা দেখতেই স্থির হয়ে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেলো ভিয়ান।রেইন বেঁচে আছে নাকি মরে গিয়েছে সেই চিন্তায় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমলো।মুহূর্তেই মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করলো।সামনে থেকে ধেয়ে আসা লড়ির হর্ণ যেনো শুনেও শুনলো না সে।দক্ষ চালক গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে করতে ভিয়ানের গাড়ির সাথে সজোড়ে ধাক্কা লাগিয়ে দিলো।গাড়ির দরজার সাথে বাড়ি খেয়ে কিঞ্চিত কপালের কোনা কেটে উষ্ণ রক্তের ধারা গড়ালো ।সেই সাথে সম্বিৎ ফিরে পেলো সে।গাড়ি চালক ব্যতিব্যস্ত হয়ে চিল্লিয়ে জিজ্ঞেস করলো

“আর ইউ আলরাইট?

জ্ঞান হীন মানুষের ন্যয় অল্প মাথা ঝাঁকালো ভিয়ান।এরপর নিজের গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট করে রাস্তার কিনার ধরে চলতে লাগলো এবং ইমারজেন্সি পুলিশ কল করে ক্লান্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“এন এক্সিডেন্ট হ্যাপেন্ড হেয়ার।

***********
চারপাশে মাগরিব এর আজান পড়েছে।ইকবালের মায়ের সাথে হাতে হাতে সকলের জন্য নাস্তা বানানোর কাজে লেগে পড়েছে মৌটুসী।দুদিন ধরে সে এবাড়িতে বউ হয়ে এসেছে।শাশুড়ি নামক মানুষটি নিজের মেয়ের মতো আগলে নিয়েছে তাকে।একটা কুটো ছিঁড়ে দুভাগ পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না তাকে।বয়স্ক একজন মানুষ বাড়ির সকল কাজ সামলাবে তা মৌটুসী কখনো হতে দিতে পারে না।এদিকে ইকবাল টাও বলিহাড়ি।নির্লজ্যের চরম সীমায় তার অবস্থান।সুযোগ পেলেই যখন তখন হুট হাট জড়িয়ে ধরে ঘরে নিয়ে খিল টানছে।বাপ মা কাজের লোক কিচ্ছুটি যেনো তার ওই গভীর চোখে পড়ে না।এসব নিয়ে মৌটুসীর লজ্জায় মাটিতে নুইয়ে পড়ার উপক্রম।মৌটুসী মাঝে মাঝে নিজেকে শুধায়

“আচ্ছা মানুষটা এমন কেনো?সে কি বুঝেনা তার এমন বেসামাল ভালোবাসা আমার তনুমন নাড়িয়ে দেয়?সে কি আমাকে বদ্ধ উন্মাদ বানাতে চায়?

হঠাৎই ভরাট পুরুষালি কন্ঠে ধ্যন ভঙ্গ হলো মৌটুসীর।ঝটপট সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলো ইকবাল দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।সদ্য ফ্রেস হবার দরুন কপালের কাছের চুলগুলো ভেজা ভেজা।যা এই পুরুষটিকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে।অবচেতন মনে ইকবালের সেই ভেজা চুলের দিকে হাত বাড়ালো মৌটুসী।মুহূর্তেই সেই হাত খপ করে ধরে ইকবাল চট করে কোলে তুলে নিলো মৌটুসী কে।এরপর নেশাক্ত স্বরে বলে উঠলো

“অফিসে আজ অনেক ধকল গিয়েছে প্লিজ আমার ক্লান্তি গুলো দূর করে দাও।

লজ্জায় রাঙা হয়ে মৌটুসী চারপাশে নজর বুলালো।নাহ কাউকে দেখা যাচ্ছে না।এবার যেনো বেশ করে বেঁচে গেলো সে।নিজেদের কক্ষে এসে মৌটুসী কে বিছানায় বসিয়ে দুয়ার টানার আগে ইকবাল উঁচু গলায় ডেকে উঠলো

“এই টুটুল রান্নাঘরে পেঁয়াজু পুড়ে যাচ্ছে তোর পিঠের ছাল বাঁচাতে চাইলে তাড়াতাড়ি সেগুলোর তদবির কর।বউ আমার খাঁচায় বন্দি থাকবে সারা সন্ধ্যা।

নামাজ শেষ করে কেবলই ইকবালের বাবা বাড়ি ফিরছিলেন।হঠাৎই ছেলের এমন কথা শুনে কিছুক্ষন খুক্ষুক করে কেশে বলে উঠলো

“নাও বাবা বউ নিয়ে বসে থাকো।তোমাদেরই দিন।আমরা আর বিয়ে করিনি।

কোথা থেকে যেনো দৌড়ে এসে ইকবালের মা ঝামটা মেরে বলে উঠলেন

“বিয়েতো করোই নি বান্দি নিয়ে এসেছো।সারাজীবন শুধু তোমার মায়ের কাজই করে গেছি।ছিলে তো মায়ের ন্যাওটা।কোনো দিন কাছে ডেকে গল্প পর্যন্ত করোনি।এখন ছেলেকে দেখে জ্বলছে বুঝি?

স্ত্রীর কথায় আর দাড়ালেন না ভদ্রলোক।যেচে পরে কে অপমানিত হতে চায়?অবশ্য রোজিনা যা বলেছে সবটাই সত্য।আগের দিনের শাশুড়িরা পুত্র বধূকে খাটিয়ে কাহিল করতে পারলেই যেনো বেশি সন্তুষ্ট হতেন।এখন দিন পাল্টেছে।মানুষ বেশি বেশি শিক্ষিত হয়েছে।পরিবর্তন এসেছে আচার ব্যবহারে।তখনকার হিসেব এখন করলে কি আর সেই দিন ফিরে পাওয়া যাবে?

এদিকে দরজা আটকেই মৌটুসীর কোলে মাথা রেখে ধপাস করে শুয়ে পড়লো ইকবাল।এরপর মৌটুসীর নরম তুলতুলে হাত খানা নিজের কপালের উপর রেখে ক্লান্ত আদুরে কন্ঠে আবদার জানালো

“একটু মাথা টা টিপে দাও না জান।খুব পেরেশানি গিয়েছে আজ।

কথা টি বলেই চোখ বুজে পরে রইলো ইকবাল।মৌটুসী স্বামীর আদেশ আজ্ঞাবহ মেনে নিয়ে ধীরে ধীরে নিজের নরম আঙ্গুলি চালালো।এরপর কথায় কথায় ইকবালের সকল বিষয়ে খুজ খবর নিলো।

হঠাৎই ইকবাল দুম করে উঠে বসে বিস্ফারিত নেত্রে জিজ্ঞেস করলো

“গত রাতে কি যেনো বলতে চেয়ে ছিলে তুমি?

মৌটুসী ইতস্তত করে ধীর গলায় বলে উঠলো

“তাথৈ এর সাথে অনেক দিন কথা হয়নি।একটু কথা বলা যাবে কি ওর সাথে?

মৌটুসীর কথা শুনে ইকবাল ঘড়ির কাঁটায় নজর বুলালো।সময় প্রায় সাড়ে সাতটা।লম্বা একটা শ্বাস টেনে মৌটুসীর গোলগাল মুখ খানা নিজের হাতের আজলায় ভরে বলে উঠলো

“অস্ট্রেলিয়া তে প্রায় রাত একটা বাজতে চলেছে এখন।ওরা আমাদের থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় এগিয়ে।আগামী কাল দুপুরে কথা বলিয়ে দেবো প্রমিস।

মৌটুসী মন ভার করে বলে উঠলো

“কাল না আমাদের বাড়িতে যাবার কথা?বাবা মা বার বার ফোন করছে।

মৌটুসীর তিরতির করে কম্পনরত ঠোঁটে নিজের উষ্ণ ঠোঁট ছুঁইয়ে ইকবাল বলে উঠলো

“যেই সময়ে যেটার কথা দিয়েছি সেটা অবশ্যই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো মৌ।তুমি শুধু আমার উপর ভরসা রেখো।

মৌটুসী ফট করে ইকবালের গলা জড়িয়ে ধরে ফিরতি চুমু খেলো।মোটেও লজ্জা পেলো না সে।মানুষটি তার স্বামী।এই লোকের সাথে সে যা করবে সব বৈধ।তবে অহেতুক লজ্জা ঢেলে লাভ কি?

মৌটুসীর চুম্বনে শিহরিত হয়ে ইকবাল অসহায়ের ন্যয় বললো

“আমি কিন্তু বার বার ছাড় দেবো না মৌ সোনা।মানুষ হিসেবে কিন্তু খুব খারাপ আমি।

মৌটুসী ইকবাল কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে বলে উঠে

“পাজি লোক একটা।

*********
ভিয়ানের চিন্তায় তাথৈ এফ দুই চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না এখনো।ঘড়ির কাঁটায় রাত বরাবর একটা ।ভিয়ান কখনো এতো দেরি করে না।তবে আজ কি এমন হলো?সেই সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।নুরজাহান এর ফোনে কল করে একটা খুজ পর্যন্ত নেয় নি।মানুষটার কোনো বিপদ হলো না তো?

বিপদের কথা মনে পড়তেই হৃদয় মুষড়ে উঠলো তাথৈ এর।সকাল থেকে তার বা চোখের পাতাটা নড়ে চলেছে।তাথৈ জানে এগুলো কুসংস্কার।কিন্তু মাঝে মাঝে অবচেতন মন এসব বিশ্বাসে সায় দেয়।

নানান অলুক্ষনে ভাবনা ভেবে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তাথই।তুলতুল মেয়েটা হয়তো ঘুমিয়েছে।ওকে ডেকে তুলে হলেও ভিয়ানকে একটা কল করবে তাথৈ।এভাবে ভয় বুকে চেপে শ্বাস পর্যন্ত নেয়া যাচ্ছে না।

নিজের কক্ষ ছেড়ে বের হতেই ভিয়ানের গাড়ির হর্ণ শুনতে পেলো তাথৈ।মুহূর্তেই উন্মত্ত ধাকধাক ধ্বনি ধীমে হলো।পায়ের গতি বাড়িয়ে সদর দরজা খুলতেই ক্লান্ত ভিয়ান দরজার চৌকাঠে দুই হাত ঠেসে দাঁড়ালো।আবছা আলোয় মাথায় অল্প ব্যন্ডেজ দেখে শিউরে উঠলো তাথৈ।ছলছল চোখে কিছু শুধাবার আগেই ভিয়ান নরম গলায় বলে উঠলো

“ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নেবে কাল,আগামী পরশু আমরা নিউইয়র্ক ফিরছি।খুব ক্লান্ত লাগছে।ঘুমুতে যাচ্ছি ।গুড নাইট

#চলবে…..

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৪৫
#সারিকা_হোসাইন

_________

রাতের সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে পু পু সাইরেন এ হাওয়ার বেগে ছুটে চলেছে রোগী বাহী এম্বুলেন্স।গন্তব্য সিটি হসপিটাল।এম্বুলেন্স এর ভেতরে যেই মানব জ্ঞানহীন শুয়ে আছেন তিনি সিডনির নামকরা বিজনেস ম্যান।এক নামে যার পরিচয়।তিনি ইচ্চে প্রকাশ করলেই সমস্ত কিছু তার পদতলে হাজির হয়।এতো ক্ষমতার পরেও কি এমন তাড়নায় ছুটছিলেন তিনি যার জন্য এমন বিভৎস ভাবে দুর্ঘটনায় পতিত হলো?কোনো কিছুর হিসেব ই যেনো মিলাতে পারলো না আর্থার।

হসপিটালে পৌছেই দুজন ওয়ার্ড বয় এর সহায়তায় এম্বুলেন্স থেকে স্ট্রেচারে তোলা হলো রেইন কে।এরপর সেই স্ট্রেচার ঠেলে ডক্টর এবং নার্স দৌড়ে ছুটলো অপারেশন থিয়েটারের অভিমুখে।আর্থার নিজেও ছুটলো তাদের পিচুপিছু।কিন্তু তাকে থামিয়ে টেনে দেয়া হলো ওটি রুমের ভারী দরজার পাল্লা।
রেইনের পুরো শরীর এবং মাথায় হাজারো ভাঙা টুকরো কাঁচের ছড়াছড়ি।মাথায় বেশ আঘাত লেগেছে।প্রথম দেখায় ডক্টর এর চাহনি বুঝতে ভুল হয়নি অর্থারের।পরিস্থিতি নিশ্চয় জটিল।টাকা ফেললেই নামি দামি অভিজ্ঞ ডক্টর এনে হাজির করা যাবে এখানে।কিন্তু অর্থারের কাছে মনে হলো আজকের দুর্ঘটনা টাকার সাথে জড়িত নয়।এই দুর্ঘটনার সাথে পুরোপুরি লাক ফেভার করছে যেনো।

আর্থার এর ভাবনার পরিধি আরেকটু বিসৃত করতে ওটি থেকে দৌড়ে এলো অল্প বয়সী একজন নার্স এবং ফ্যাকাশে মুখে হরবড়িয়ে বলে উঠলো

“হিজ ব্লাড গ্রুপ ইজ এবি পজিটিভ,দেয়ার ওয়াজ এ লট অফ ব্লিডিং ডিও টু দ্যা হেড ইনজুরি।দ্যা ব্লাড উই হ্যাভ ইন আওয়ার ব্লাড ব্যাঙ্ক ইজ নট এনাফ।প্লিজ এরেঞ্জ ব্লাড আর্জেন্টলি।

কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে দৌড়ে পুনরায় ওটি রুমের ভেতরে চলে গেল নার্স।এবার যেনো বেশ বেকায়দায় পড়লো আর্থার।ঘড়িতে রাত প্রায় দুটো।এতো রাতে ব্লাড পাবে কোথায় সে?তবুও নিজের ব্রেনকে যথা সম্ভব শান্ত রেখে গার্লস গ্রুপ এ রক্তের প্রয়োজন লিখে মেসেজ করলো।মুহূর্তেই তরুণীদের ভিড় উপচে উঠলো রক্ত দেবার জন্য।সকলেই রক্ত দিতে প্রস্তুত।এতো রাতে মেয়ে গুলো না ঘুমিয়ে অনলাইনে কি করছে এটাই ভেবে পেল না আর্থার।সে যাই হোক রক্তের ব্যবস্থা হয়েছে এই অনেক।রেইন সুস্থ হলে প্রয়োজনে সব গুলো মেয়েকে প্রমোশন এর ব্যবস্থা করে দেবে সে।যদিও মেয়ে গুলো রেইনকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার স্বপ্ন দেখে।চাইলেই কি আর সব স্বপ্ন সত্যি হয়?

************
বাহিরে ইলসে গুড়ি বৃষ্টির আমেজ।বর্ষাকাল যেনো শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না।এমন খটখটে শুকনো শরৎকালে ফ্যাচফ্যাচ বৃষ্টি পছন্দ হলো না সাইফ আজমীর।আকাশে এক ফোটা মেঘ নেই অথচ বৃষ্টি যেনো ধেই ধেই করে নাচছে।হসপিটালের বৃহৎ জানালার পানে বিতৃষ্ণায় একবার নজর বুলিয়ে পুনরায় নেতিয়ে থাকা ছেলের পানে বিরক্তি ভরা নজর ফেললেন।ফর্সা ছেলেটি প্রায় কৃষকায় বর্ণ ধারণ করেছে।মুখের মায়াবী চেহারা খানা আজ প্রায় বিদঘুটে।ওই স্যালাইন এর নলে করে অল্প জুস আর মেডিসিন কি এতবড় সুঠাম দেহী ছেলের উদর ভরাতে পারে?কিন্তু ছেলের এমন নির্মম অবস্থা দেখে একটুও কষ্ট পেলেন না তিনি।উল্টো ছেলের প্রতি রাগ আর অবজ্ঞায় পিত্তি জ্বলে উঠলো তার।কিছুক্ষন দাঁত মুখ খিঁচিয়ে পুরো কেবিন জুড়ে পায়চারি করলেন তিনি। এর পর সাইফ আজমী চারপাশে একবার সতর্ক নজর বুলালেন।নাহ আশেপাশে কেউ নেই।কারোর থাকবার কথাও নয়।ভিআইপি কেবিন।এখানে বাড়তি মানুষের হাও কাও নেই।ডক্টর এবং নার্স সময় মতো এসে এরিক কে পর্যবেক্ষণ করে মেডিসিন এর ডোজ দিয়ে সাথে সাথেই চলে যায়।দেয়ালে থাকা ঘড়ির দিকে একবার নজর বুলালেন সাইফ আজমী।দুপুর বারোটা বেজে কুড়ি মিনিট।এই সময় তার জরুরি বিজনেস মিটিং এটেন্ড করবার কথা।কিন্তু দর্যাল সেলিনার ভয়ে এখানে এসে এই আধমরা নরকের কীট কে পাহারা দিতে হচ্ছে তার।কোন অলুক্ষনে যে সেলিনার সাথে তার দেখা হয়েছিলো আর সেই অপকর্মের ফল হিসেবে জুটেছে এই অপদার্থ ছেলেটি তার হিসেব করে কোনো কুল কিনারা পেলেন না সাইফ আজমী।ধীরপদে হেটে কেবিনের দরজার কাছে এসে দাড়ালেন সাইফ আজমী।চারপাশে সতর্কতা মূলক দৃষ্টি ফেলে সিটকানি এঁটে দিয়ে এরিকের বেডের পাশে এসে দাড়ালেন।এরপর দাঁতে দাঁত পিষে মুখে অগ্নি ঝরা ভাব এনে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলেন

“আর কত জ্বালাবি আমাকে?এবার না হয় একটু খ্যামা দে।তোদের মা ছেলের অত্যাচারে তো পিন্ডি চটকে যাচ্ছে।তোরা ইচ্ছে করেই আমাকে চূড়ান্ত ধৈর্য্য হারা হতে বাধ্য করছিস তাই না?আমার নিভিয়ে রাখা ক্রোধ একবার প্রকাশ পেলে কি হবে তা জানিস তো?এতো গুলো বছরেও বোধ হয় বাপ কে চিনিস নি তাই না?

কথা গুলো বলে আরেকটু এরিকের কাছে চলে এলেন সাইফ আজমী।এরপর এরিকের মুখের অক্সিজেন মাস্ক পট করে টেনে খুলে বিশ্ৰী শব্দে হেসে উঠলেন

“আমাকে চারপাশে ফাঁসিয়ে এখানে এসি রুমে শুয়ে শুয়ে আরামের ঘুম হচ্ছে সালা বাস্টার্ড!নে মর।বিদেয় হ চোখের সামনে থেকে।আগে তোকে শেষ করবো এরপর তোর মা কে।তোরা আমার কোনো কাজেই আসবি না।উল্টো আমাকে বিপদের মুখে ঠেলবি বারবার।

অক্সিজেন মাস্ক খোলার সাথে সাথেই এরিকের সমস্ত শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো সেই সাথে পেশেন্ট মনিটর এ বিপ বিপ আওয়াজ হয়ে বক্র রেখা গুলো দ্রুত লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে লাগলো।এরিকের ছটফট দেখে আরেকটু কুটিল হাসলেন সাইফ আজমী।এরপর জোর গলায় বলে উঠলেন

“ভালো থাকিস ওপারে।খুব জ্বালিয়েছিস।তোর কারনেই তাথৈ মেহেরিন সব আমার হাত ছাড়া হয়েছে।ব্যাঙ্ক থেকে টাকা পর্যন্ত তুলতে পারছি না।পাওনাদার গুলো মরিয়া হয়ে পিছনে ছুটছে।সাইফ আজমী দেউলিয়া হবার পথে শুধুমাত্র তোর কারনে।তুই কি ভেবেছিস তোকে এসির বাতাস খাইয়ে নরম বিছানায় শুইয়ে রাখার জন্য এখানে এনেছি?কারী কারী টাকা হসপিটাল বিল তোর কোন বাপ ভরবে?

আরো কিছু বলতে চাইলো সাইফ আজমী।কিন্তু তার আগেই দরজায় সজোড়ে আঘাত হানলো কেউ।চতুর সাইফ আজমী বুঝে ফেললো মনিটর এর বিপ বিপ আওয়াজ বাইরে পৌঁছে গেছে হয়তো।নিজের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ার ক্ষোভে মনে মনে আগত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে অক্সিজেন মাস্ক পুনরায় লাগিয়ে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নিলো।এদিকে দরজার আঘাত জোর দার হলো।নিজের মুখভাব স্বাভাবিক রেখে দরজা খুলতেই উদ্ভ্রান্তের ন্যয় কক্ষে সেলিনা প্রবেশ করলো।চারপাশে চতুর নজর বুলিয়ে বাজখাই গলায় সেলিনা শুধালো

“দরজা আটকেছো কোন উদ্দেশ্যে?আর বাইরে থেকে কিসের শব্দ পাচ্ছিলাম?কোথাও আমার ছেলেকে মেরে দেবার ফন্দি করছো না তো?যদি এমন কিছুই ভেবে থাকো এর ফল কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম।সমস্ত প্রমান নিয়ে আমি কোন পর্যন্ত যেতে পারি এটা তুমি ভালোই জানো।আর এরিকের গার্লফ্রেন্ড নিকিতা কে তুমি নিজ হাতে খুন করেছ সেই ফুটেজ ও কিন্তু আমার হাতে আছে।তাই ভালোয় ভালোয় বলছি সাবধান হয়ে যাও।নইলে কিন্তু লাল ঘরের ভাত খাইয়ে ছাড়বো।

একজন মহিলা মানুষের কাছে এতো গুলো হুমকি শুনে রাগের মাত্রা হারালেন সাইফ আজমী।কিন্তু মুখে গরম ভাপ পর্যন্ত বের করলেন না।শুধু আমতা আমতা করে বলে উঠলেন

“আসছি,জরুরি মিটিং আছে।আর নিজের সন্তানকে কোন বাবা মারতে পারে?এসব অপবাদ না দিলেই কি নয়?

সাইফ আজমীর কথা শুনে তাচ্ছিল্য হেসে সেলিনা বলে উঠলেন

“বাবা!আর তুমি?হাসালে সাইফ।

সেলিনার বিশ্ৰী হাসি যুক্ত চেহারা দেখেই সাইফ আজমী আরো কয়েক ধাপ ক্রোধিত হলেন।কিন্তু এখন ক্রোধ দেখানোর সময় নয়।সেলিনা বিষাক্ত অজগরের চাইতেও দুধর্ষ।সেলিনাকে বাগে আনতে হলে রাগ পানি দিয়ে গিলে খেতে হবে।এখন চটে গেলেই বিছিয়ে রাখা জালে আর মাছ পরবে না।তাই এখান থেকে প্রস্থান করাকেই উত্তম মনে করলেন সাইফ আজমী।

**********
সিডনি এয়ারপোর্ট এর চারপাশে হাজারো সুন্দরী রমণীর ভীড়।কোন পুলিশ ট্যাকেল কোন বেরিগেট তারা মানছে না।সকলের হাতেই একটা করে প্ল্যাকার্ড আর সেখানে বড় বড় করে লিখা ভিয়ান নাওয়াফ।মেয়ে গুলো যেনো আজ অনশন করেছে ভিয়ান নাওয়াফ এর সাক্ষাত না পেলে তারা এয়ারপোর্ট ছাড়বে না।তাথৈ আর ভিয়ান যখন ভাড়া করা কালো গাড়ি থেকে এয়ারপোর্ট এর বা দিকের এনট্র্যান্স এ নামলো তখন ডান পাশের এনট্র্যান্স এ উত্তাল হাউকাউ।মুখে ক্রুর হাসি ঝুলিয়ে মাস্ক আর কালো ক্যাপ ভালো করে লাগিয়ে তাথৈ এর হাত ধরে ছুটে চললো ভেতরের দিকে।অবাক চিত্তে তাথৈ শুধু এতোগুলো মেয়ের মুখে নিজের স্বামীর নাম শুনে যাচ্ছে কিন্তু ঘটনা কি কিচ্ছুটি বুঝতে পারছে না।সেক্রেটারি অভীক পর্যন্ত কালো পোশাকে ভুতের মতো ছুটছে।এমন ঘটনায় কিছুটা ভড়কে গেলো তাথৈ।এমনিতেই তার ভিসা পাসপোর্ট সব কিছু নকল।একবার ধরা পড়লে নিশ্চিত জেল।সেই জেল থেকে সাজা কাটিয়ে উঠলেই ফিরতে হবে দেশে।আর দেশে গেলেই সাইফ আজমীর মতো হায়েনার থাবায় পড়তে হবে।চারপাশে যেনো অমানিশার আধার দেখতে পেলো তাথৈ।

তাথৈকে নিয়ে ভিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডিপর্চার এ পৌঁছুতেই পাসপোর্ট আর ভিসা দেখতে চাইলো চেকিং এর জন্য।
ভিয়ান আর অভীক নিজেদের পাসপোর্ট আগে রেখে তাথৈ এর পাসপোর্ট পিছনে রাখলো এরপর চেকিং গার্ড এর হাতে সেই পাসপোর্ট গুলো তুলে দিলো।ভিয়ান এর পাসপোর্ট দেখেই গার্ড একবার ভিয়ানের পানে তাকালো।এদিকে মেয়ে গুলোর চিৎকার এর আওয়াজ ক্রমশ বেড়ে চললো।পারলে তারা হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।এরেস্ট এর ভয় দেখিয়েও তাদের থামানো যাচ্ছে না।এয়ারপোর্ট পুলিশ মাইক নিয়ে তাদের চুপ করতে নির্দেশ দিচ্ছেন।কিন্তু সেসব সতর্কবাণী তারা যেনো কানেই তুলছে না।

চেকিং লেডি গার্ড ভিয়ানের পাসপোর্ট চেক করে স্মিত হেসে বলে উঠলো

“ক্যান আই গেট এন অটোগ্রাফ?

মেয়েটিকে ডাইভার্ট করতে ভিয়ান এক মুহূর্ত সময় নিলো না।মেয়েটির সফেদ ফর্সা মসৃন হাত খানা টেনে হালকা প্রেস করে চোখ টিপে বলে উঠলো

“নাইস হ্যান্ড,আই লাইক ইট।

এরপর পকেট থেকে একটা মার্কার বের করে ঘচঘচ করে লিখে দিলো
“ভিয়ান নাওয়াফ।

অটোগ্রাফ পেয়ে খুশিতে মেয়েটি আত্মহারা হলো সেই সাথে চোখের ইশারায় কিছু কথা হলো তাদের।আজকাল কার মেয়ে গুলো সুদর্শন পুরুষদের প্রতি একটু বেশিই দুর্বল।যদি সেই পুরুষ হয় টাকা ওয়ালা ড্যাডি তবে তো কথাই নেই।সকল ইশারা সাইডে রেখে মেয়েটি প্রশস্ত হেসে অভীক এবং তাথৈ এর পাসপোর্ট এ নজর দিলো।ভিয়ান তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলো

“ডু ইট এ লিটল ফাস্টার হুম?থাউজ্যান্ডস অফ গালর্স আর মেকিং ট্রাবল আউট সাইড।মাই ওয়াইফ ইজ ফিলিং আনকমফর্টেবল”

মেয়েটি ভিয়ানের কথায় ভয়ে চুপসে থাকা তাথৈ এর পানে একবার নজর বুলালো এরপর পাসপোর্ট এ সাধারণ নজর বুলিয়ে শুধু তথ্য গুলো দেখে অভিবাদন জানিয়ে সিকিউরিটি কে গেট ছেড়ে দিতে বললো।অনুমতি পেতেই আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না ভিয়ান।তাথৈকে এক প্রকার হিচড়ে নিয়েই প্লেনে উঠার জন্য পা বাড়ালো।

ঘন্টা দেড়েক কাটার পর বিমান উড্ডয়নের ঘোষণা এলো।তাথৈ এর চোখ মুখ এখনো ফ্যাকাশে হয়ে আছে।ভিয়ান আর অভীক মুখের মাস্ক এখনো খুলে নি।এয়ার হোস্টেস সকলকে নেটওয়ার্ক ডিভাইস বন্ধ করে সিট বেল্ট বাধার কৌশল দেখিয়ে দিলো।ভিয়ান নিজের সিট বেল্ট বেঁধে তাথৈকে হেল্প করলো।আরো মিনিট দশেক পর ক্যাপ্টেন টেইক অফ এর সকল তথ্য জানিয়ে বলে উঠলো

“উই আর রেডি ফর টেইক অফ।
কথাটির পাঁচ মিনিটের মধ্যে বিমান রান ওয়েতে চলতে লাগলো।বিমান যখন ধীরে ধীরে আকাশে উঠতে লাগলো সেই মুহূর্তে ভিয়ান নিজের মাস্ক খুলে অভীকের উদ্দেশ্যে প্রশস্ত হেসে বলে উঠলো

“থ্যাঙ্কস ডিয়ার অভীক।

ভিয়ানের নিকট থেকে ধন্যবাদ শুনে সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বুঝলো অভীক।এরপর মনে মনে ভাবলো গত রাতের কথা।

“ফলস পাসপোর্ট অনেক সময় এয়ারপোর্ট এ সনাক্ত হয়ে যায় অভীক।এবার আমি কোনো প্রকার রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।রেইন খুব খারাপ ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি।ও আর আমার বিষয়ে বা হাত দিতে পারবে না।কিন্তু এয়ারপোর্ট নিয়েই চিন্তা হচ্ছে।

ভিয়ানের কথায় ভাবুক হয়ে অভীক শুধালো

“তাহলে এই মুহূর্তে কি করবো স্যার?

কিছুক্ষন নিশ্চুপ হয়ে কি যেনো ভাবলো ভিয়ান।এরপর চট করে বলে উঠলো

“টুইটারে প্রায় টু মিলিয়ন মেয়ে ভক্ত আছে আমার।ভক্ত মানে একদম ম্যাড যাকে বলে।তুমি শুধু টুইট করে দাও আগামীকাল সিডনি থেকে নিউইয়র্ক ফিরছেন ভিয়ান নাওয়াফ।অবশ্যই সময় উল্লেখ করবে।এবং শেষ লাইনে লিখে দেবে

“ইফ ইউ আর লাকি ‘উইন এন অটোগ্রাফ এন্ড সেলফি’স।

আমি চাই এয়ারপোর্ট এ ঐদিন ক্রাউড থাকুক অভীক।সকল স্ট্রং সিকিউরিটি ওই ক্রাউড থামাতে বিজি থাকুক ।শত শত মেয়েকে ফেরানো সম্ভব হবে না এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি দের।ওখানে যত ঝামেলা হবে আমি ভেতরে ততো দ্রুত সেফলি চলে যেতে পারবো।

অভীক শুধু ভীতি মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেছিলো

“প্ল্যান কাজ করবে তো স্যার?
ভিয়ান বাকা হেসে উত্তর দিয়েছিলো

“ভিয়ান নাওয়াফ একসময় সিডনির নারীদের স্বপ্নের পুরুষ ছিলো অভীক।নিজেদের প্রেম জাহির করতে কতো রূপসী বাসার গেটের সামনে এসে মাথা ঠুকেছে তা তোমার কল্পনার বাহিরে।সবকিছু আমার প্রতিকূলে না গেলে আয়াজ আমিরকে ছাপিয়ে যেতাম আমি।কিন্তু মন্দ ভাগ্য ছিলো আমার।এবার যেহেতু তাথৈ আমার হয়েই গিয়েছে আমার আর কিচ্ছুটির দরকার নেই অভীক।নিউইয়র্ক এ ছোট একটা সংসার পাতবো আমরা।আমি,মা আর তাথৈ।ধরে নাও আজ থেকে আর কোনো দুঃখের ছায়া আমার পাশে ঘেঁষতে পারবে না।সব এক হাতে প্রতিহত করব আমি।

#চলবে…..