#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৪৮
#সারিকা_হোসাইন
__________
শীতল নিস্তব্ধ শরতের অন্ধকার রাতকে আরেকটু রহস্যময় করতে হঠাৎই আগমন হলো ঘন বজ্রপাত আর ভারী বৃষ্টির।থেকে থেকেই কর্কশ স্বরে গর্জে উঠছে মেঘ রাজ।বাতাসের শো শো দাপট চারপাশে বিরাজমান।কিছুক্ষন আগের মলিন চাঁদটা এখন কালো মেঘের অতলে হারিয়ে গিয়েছে।হঠাৎই সেলিনার বা চোখের পাতা টা লাফিয়ে উঠলো।এদিকে ক্রমাগত দরজায় কড়া নেড়েই চলেছে কেউ।দিয়াশলাইয়ের কাঠি বারুদে ঘষতে ঘষতে ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার হলো সেলিনা।ঢাকা শহরে ইলেক্ট্রিসিটি খুব একটা যায়না বললেই চলে।তাই বিকল্প ব্যাবস্থা সেরকম রাখা হয়না ঘরে।দিয়াশলাই টা এরিকের।কিন্তু অজত্নে পরে থেকে নেতিয়ে গিয়েছে।বারুদের তেজ মিইয়ে এটা প্রায় অকার্যকর ই বটে।তবুও আরেকবার বৃথা চেষ্টা চালালো সেলিনা।এবারো সে বিফল ।মনের অজানা শঙ্কায় ভীত সেলিনা দরজার পিছনে লুকিয়ে ঘাপটি মেরে রইলো।কিন্তু সেলিনাকে অবাক করে দিয়ে থেমে গেলো কড়া নাড়ার শব্দ।ওভাবেই কিছুক্ষন বসে থাকলো সেলিনা।সে যে খুব বিশ্ৰী ভাবে সাইফ আজমীর ফাঁদে পরে গিয়েছে তা তার বিধ্বস্ত মনে জানান দিলো।অবর্ণনীয় কষ্টকর মৃত্যু ভয় ক্রমশ কাবু করলো সেলিনার দুর্বল মনকে।নিজ পুত্রের নিথর দেহের ভাবনা ভেবে অল্প চোখের জল ফেললেন সেলিনা।হঠাৎই নিজের সৌন্দর্যের উপর ঘৃণা ধরলো তার।আজ সে এতোটা সুন্দরী না হলে এসব কিছুই ঘটতো না।সাইফ আজমীর মতো নরকের কীট তার জীবনে কখনো পা ফেলতো না।স্বাভাবিক আর পাঁচ জন মেয়ের মতোই সেলিনা স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকতো।কিন্তু বিধাতা তার জন্য বুঝি এসব দুঃখ ভারাক্রান্ত যাবজ্জীবন ই রেখেছিলেন।
ধীরে ধীরে কমে এলো বর্ষণ আর সমীরনের তেজ।সেলিনার বোকা মন হঠাৎই অকুলিবিকুলি করে উঠলো।দরজায় কে এসেছিলো আর কেনোই বা এসেছিল সবটা জানতে খুব ইচ্ছে হলো তার।মনের ভয় জড়ানো ভাবনা ফেলে ধীরে ধীরে সদর দরজার দিকে এগিয়ে গেলো সেলিনা।কমে আসা বজ্র ঝিলিকের অল্প আলো জানালার কাঁচ ডিঙিয়ে আবছা আলোর বিচরণ করলো ঘর জুড়ে।সেই আলো ধরেই এগিয়ে গেলো সেলিনা।কাঁপা হাতে বড় সিটকিনি খুলে চারপাশে নজর বুলালো সে।নাহ কাউকেই চোখে লাগছে না।বাইরে এখনো ঘুটঘুটে অন্ধকার।শহরের শেষ কোণে ছোট্ট ঘর সেলিনার।এখানে কোনো দেও দানা এসে তাকে খেয়ে চলে গেলেও কেউ কিচ্ছুটি জানবে না।জীবনে সব কিছু খুইয়ে নিঃস্ব সেলিনা।মৃতুকে এখন আর ভয় পান না তিনি।মৃত্যুর চাইতে বিভীষিকা দেখেছেন তিনি তার এই ছোট্ট জীবনে।তবুও ছেলেটাকে বুকে আকড়ে বাঁচতে চান তিনি।কিন্তু সেটা কি আদেও সাইফ আজমী হতে দেবে?
নানান ভাবনা ভেবে চারপাশে নজর বুলিয়ে কারো হদিস না পেয়ে সেলিনা যখন দরজা আটকাতে যাবে ওমনি থাবার ন্যয় হাত বাড়িয়ে সেই দরজা চেপে ধরলো কেউ।অন্ধকারে তার চেহারা অস্পষ্ট।অদূরেই হঠাৎ ঝলমলে আলোকিত হয়ে বাজ পরলো।সেই ঝকঝকে আলোয় নজরে এলো সাইফ আজমীর ক্রুর হাসি যুক্ত সফেদ মুখশ্রী।সুদর্শন চেহারাটা আজ বড্ড ভয়ংকর ঠেকছে।চোখ দুটোও যেনো আগুনের ফুলকি।সাইফ আজমীর উপস্থিতিতে আকস্মিক চিৎকার করে উঠলেন সেলিনা।সেই চিৎকারে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলেন সাইফ আজমী।সেলিনাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে হাসতে হাসতে বলে উঠলেন
“জতো খুশি ততো চিৎকার করে নাও সেলি ডার্লিং।এই বৃষ্টি ভেজা স্তব্ধ নিশুতিতে কেউ তোমার ডাক শুনবে না।
মেঝেতে হামাগুড়ি দিতে দিতে সাইফ আজমীর থেকে দূরে সরে যেতে লাগলেন সেলিনা।পা দুটো আজ যেনো দাঁড়ানোর সমস্ত শক্তি খুইয়েছে।দেহ অবশ হতে চাচ্ছে।মন দুর্বল হচ্ছে ক্রমশ।কান্না জড়িত কন্ঠে সেলিনা বলে উঠলেন
“এখানে কি চাই তোমার?চলে যাও এখান থেকে।আমি আর তোমার ইশারায় নাচবো না।
সেলিনার কথায় বিগলিত ভয়ানক হাসলেন সাইফ আজমী।এরপর রসিকতা মিশ্রিত কন্ঠে বললেন
“আজ যে আমি তোমার যম হয়ে এসেছি সেলি।কিভাবে তোমার রূহ কবজ না করেই চলে যাই বলোতো?
সাইফ আজমীর মুখে এহেন নৃশংস কথা শুনে কেঁপে উঠলেন সেলিনা।তিনি যেনো নিজের বিভৎস মৃত্যু নিজ চোখে দেখতে পেলেন।মনের জোর কিঞ্চিৎ ও অবশিষ্ট রইলো না।তবুও শেষ চেষ্টায় উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলেন
“জীবনে অনেক পাপ করেছো তুমি।সকল কিছুর প্রমান আছে আমার কাছে।নিজের ছোট ভাই আর ভাইয়ের স্ত্রী থেকে শুরু এরিকের গার্লফ্রেন্ড কে পর্যন্ত হত্যা করতে দুবার ভাবো নি তুমি।তুমি কি ভেবেছো আমি এতো সহজে মরবো?আমি মারলে তোমাকে নিয়েই মরবো।আমি পুলিশের কাছে সমস্ত কিছু বলে দেবো।
সেলিনার কথায় বেশ মজা পেলেন সাইফ আজমী।ধীরপদে এগুতে বললেন
“তুই যেই অপরাধ করেছিস তার কোনো ক্ষমা হয়না সেলিনা।অন্যের ছেলে এতো গুলো বছর আমার কাঁধে চাপিয়ে চুপ করে তামাশা দেখেছিস তুই।আমার সমস্ত কিছু ভেস্তে গিয়েছে তোদের মা ছেলের জন্য।তোর ছেলেকে একটু আগেই উপরে পাঠিয়ে দিয়ে দিয়ে এলাম।খুব ছটফট করছিলো জানিস?ছেলেটা বোধ হয় ওখানে একা একা ভয় পাচ্ছে।তুইও চলে যা।মা ছেলে এবার একটু আরামে ঘুমা।
কথা গুলো বলতে বলতেই টেবিলে থাকা ফুলদানি দিয়ে সেলিনার মাথায় সজোড়ে আঘাত করার পদক্ষেপ নিলেন সাইফ আজমী।কিন্তু তার আগেই ফুলের টব সহ মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়লেন তিনি।শক্ত টাইলসে সিরামিকের ফুলদানি বিকট শব্দে চুরচুর করে ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলো।ভয়ে সেলিনা চিৎকার করে ফ্লোরের সাথে মিশে রইলেন।নিজের জীবনের অন্তিম মুহূর্ত ভেবে সৃষ্টি কর্তার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত প্রার্থনা করলেন।কিন্তু একি সবকিছু নীরব কেনো?
“মা!
হঠাৎ এরিকের কন্ঠে আর চার পাশের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতে নিজের জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পরে রইলেন সেলিনা।
***********
নিজেদের বদ্ধ কক্ষে ভালোবাসার চাদরে মুড়ে রয়েছে ভিয়ান আর তাথৈ।ভিয়ানের ব্যাবসায়িক কাজ কর্ম তাথৈ এর ঘাড়ে মেলিনার দায়িত্ব সব মিলিয়ে মুহূর্তেই মানুষ দুটো চূড়ান্ত ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে।
দুজন দুজনকে দেবার মতো যেনো কোনো সময়ই অবশিষ্ট নেই।কিন্তু মনের গভীর বোঝাপড়ার কারনে এসব নিয়ে কারোর কোনো অভিযোগ ই যেনো নেই।
তাথৈকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে কপালে চুমু খেলো ভিয়ান।এরপর বলে উঠলো
“মম কে সামলাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই না?এক্সট্রা সার্ভেন্ট রেখে দেবো?
ভিয়ানের কথায় বিস্ফারিত চোখে তাকালো তাথৈ।এরপর অবাক হয়ে জানতে চাইলো।
“আর কতো কাজের লোক রাখবে তুমি?সার্ভেন্ট এর কারনে সারাদিন ঘর গিজ গিজ করে।এগুলো অহেতুক লাগে আমার কাছে।আর তাছাড়া মাকে নিয়ে ইনজয় করি আমি।উনি তো আমাকে আর এট্যাক করছেন না।ছোট বাচ্চার মতো জাস্ট একটু ছোটাছুটি করে ।ও আমি ঠিক সামলে নিতে পারবো।খবরদার আর কোনো সার্ভেন্ট রাখবে না এই বাড়িতে।রাখলে বাকি গুলোকেও ছাটাই করবো আমি।
তাথৈ এর কথায় স্মিত হেসে নাক টিপে ধরে ভিয়ান আদুরে স্বরে বলে উঠলো
“এতোদিন শুনেছি ছোট মরিচে ঝাল বেশি এখন তো সাক্ষাৎ তার দর্শন পেলাম।বয়স কতো তোমার?একেবারে পাক্কা ঘরনী হয়ে গেলে দেখছি।
ভিয়ানের রসিকতায় মুখ ফুলিয়ে তাথৈ বলে উঠলো
“ঠিক আছে সংসার ফেলে কাল থেকে নাইট ক্লাব আর পার্টিতে পার্টিতে ঘুরবো।
তাথৈ এর ঠোঁট চেপে ধরে ভিয়ান ফিসফিস করে বলে উঠলো।
“তাতেও আমি বাধা দেবো না তোমাকে।আমি তোমাকে কখনো শক্ত শিকলে বাঁধবো না ডার্লিং।
ভিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর বৃথা চেষ্টা করে তাথৈ বলে উঠলো
“ছি ছি।নিজের বউ নাইট ক্লাবে যাবে তাও তুমি খুশি?
ভিয়ান হালকা মাথা ঝুকে বললো
“হু।
“অসভ্য লোক”
বিগলিত হেসে তাথৈ এর গলার ভাজে মুখ ডুবিয়ে ভিয়ান বলে উঠলো
“তুমি যাবেনা জেনেই অনুমতি দিয়েছি।একবার গিয়ে দেখো ঠ্যাঙ ভে*-ঙে দেবো।
“তাহলে একটু আগেই যে ভালো মানুষের মতো স্বাধীন বুলি আওড়ালো”
অবাধ্য হাতের বিচরনে তাথৈকে জ্বালাতে জ্বালাতে ভিয়ান হাসকি স্বরে বলে উঠলো
“বউ পটানোর ধান্দা করলাম একটু।
বলেই ফিক করে হেসে দিলো ভিয়ান।ভিয়ানের মাসেল যুক্ত পিঠে শক্ত কিল বসিয়ে তাথৈ বলে উঠলো
“ভোর চারটের সময় তোমার বদমাশী ধান্দা ছুটাচ্ছি আমি।
তাথৈকে শক্ত করে চেপে ধরে অনুরোধের স্বরে ভিয়ান আবদার জানালো
“বউ প্লিজ!
তাথৈ সায় জানাবার আগেই টুং করে মেসেজ এলো ভিয়ানের ফোনে।এতো রাতে মোবাইলে কিসের শব্দ হলো সেটা নিয়ে ভিয়ান কিছুটা বিচলিত হলো।তাথৈ এর উপর শরীরের ভার ছেড়ে বালিশের নিচ হাতড়ে ফোন বের করতে করতে ধীর স্বরে বলে উঠলো
“যেই শালা আমার মোডের বারোটা বাজিয়েছে তাকে যদি না দেখে নিয়েছি তবে আমি তাথৈ এর জামাই ই না।
ভিয়ানের নাস্তানাবুদ চেহারার দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো তাথৈ।তাথৈ এর থেকে নজর ফিরিয়ে শুকনো মুখে ফোনের মেসেজ চেক করতেই ঠোঁটের হাসি প্রশস্ত হলো ভিয়ানের।মেসেজটা কে পাঠিয়েছে তা বুঝতে এক মুহূর্ত সময় লাগলো না তার ।এই দিনের স্বপ্ন দেখবে বলেই এতো কিছুর আয়োজন করেছিলো সে।ফাইনালি তার এই স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।এবার আসল খেলা দেখবার পালা।উচ্ছসিত খুশিতে চোখের মণি দুটো চকচক করে উঠলো ভিয়ানের।ফোনের স্ক্রিনে আরেকবার নজর বুলিয়ে মেসেজ টা আওড়ালো
“দ্যা ওল্ড ডেভিল ইজ ইন মাই হ্যান্ডস ।
ভিয়ানের চকচকে মুখের পানে তাকিয়ে তাথৈ শুধালো
“হঠাৎ এতো খুশি হয়ে গেলে যে?একটু আগেই তো কাঁদতে নিলে!
হাতের ফোন ছুড়ে ফেলে তাথৈকে জাপ্টে ধরে ভিয়ান বলে উঠলো
“আজকে বাসর রাত বউ।মন মেজাজ বড়ই ফুরফুরে।আজ আর নিস্তার নেই তোমার।খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ ফিরতে হবে আমাদের।তখন অনেক ব্যাস্ত থাকবো।তাই সময় থাকতে ভালোবাসা যা দিতে চাই সব লুফে নাও সুন্দরী।
***********
সময়ের কাটা খুব দ্রুত ঘুরে।ক্যালেন্ডার এর পাতা থেকে খুব নিমিষেই যেনো হারিয়ে যায় দিন মাস বছর।
প্রায় একটি মাসের সেবা শশ্রুষার পর হসপিটাল থেকে রেইন কে ছুটি দেয়া হয়েছে।মাথার ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে।কাটা জায়গায় এখনো ভালো ভাবে চুল গজায় নি।বিশ্বস্ত সঙ্গীর ন্যয় আর্থার পুরোটা মাস নিজের সবটা দিয়ে রেইনের জন্য করে গিয়েছে।নিজের নাম পরিচয় ব্যতীত আর কিচ্ছুটি মনে নেই রেইনের।ভাসা ভাসা কিছু স্মৃতি চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়।সেগুলো নিয়ে ভাবতে গেলেই মাথায় টনটনে ব্যাথা হয়।ডক্টর রিলিজের আগে টেনশন করতে বা বেশি বেশি ভাবতে একদম নিষেধ করে দিয়েছেন।নিজ বাসায় কিচ্ছুটির কমতি নেই রেইনের।তার বিশেষ দেখভাল করার জন্য মোটা টাকার বিনিময়ে নিয়োজিত করা হয়েছে অভিজ্ঞ দুজন নার্স।তারা ওষুধ পত্র থেকে শুরু করে সব কিছুর খেয়াল রাখেন।
নিজের বাড়ি জুড়ে ঘুরে ঘুরে সবটাই দেখছে রেইন।চেনা পরিচিত বাড়িটিও আজ তার কাছে প্রায় অচেনা।ধীরে ধীরে আর্থার তাকে সব কিছু মনে করিয়ে দিতে সাহায্য করছে।হঠাৎই কিছু মেয়েলি পোশাকের উপর নজর যায় রেইনের।ভ্রু কুঁচকে সেগুলোর পানে তাকিয়ে আর্থার এর উদ্দেশ্যে শুধায়
“হুয়াই ইজ দ্যা উইমেনস কথস হেয়ার?
রেইনের এর নির্দেশ করা তাথৈ এর কাপড় গুলোর পানে নজর বুলিয়ে ফাঁকা ঢোক গিলে আর্থার।এরপর পুরো ঘটনা চেপে গিয়ে বানিয়ে বলে উঠে
“ইউ বট ডিজ।
রেইন ভ্রু কুঁচকে শুধায়
“বাট ফর হোম?
“ফর ইউর ফিউচার ওয়াইফ।
কাপড় গুলো নাড়তে নাড়তে রেইন অস্থির হয়ে শুধালো
“হু ইজ শী?
এবার বেশ বেকায়দায় পরলো আর্থার।তাথৈ পালিয়ে যাবার ঘটনা কিছুতেই বলতে পারবে না সে।তবে কি উপায় হবে এখন?
আর্থার এর ভাবনার মাঝে রেইন পুনরায় একই প্রশ্ন করলো।এবার বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফট করে আর্থার বলে উঠলো
“ইউ ব্রোক আপ উইথ হার।
আর্থার এর কথায় রেইন বিস্ফারিত কন্ঠে বলে উঠলো
“হুয়াট?
আর্থার আরেকটু মশলা যোগ করে বলে উঠলো
“ওটা একটা ব্লাইন্ড ডেট ছিলো স্যার।মেয়েটি দেখতে খুবই কুৎসিত ছিলো।আপনি তাকে গিফট দেবার জন্য এসব কিনে ছিলেন।কিন্তু যখন তাকে সামনে থেকে দেখেছেন আপনি নিজেই তাকে রিজেক্ট করেছেন ।
আর এখানে এক দন্ড থাকতে চাইলো না আর্থার।এতো এতো প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই।তারচেয়ে মানে মানে কেটে পরা উত্তম।দেয়ালে থাকা ঘড়ির পানে নজর বুলিয়ে তাড়া দেখিয়ে আর্থার বলে উঠলো
“আই হ্যাভ টু গো স্যার।গুড নাই।হ্যাভ এ নাইস ড্রিম।
রেইনকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে এক প্রকার দৌড়েই প্রস্থান নিলো আর্থার।
এরপর কেটে গিয়েছে আরো একটি সপ্তাহ।ডক্টর এর নির্দেশ অনুযায়ী বেড রেস্ট এ থাকতে থাকতে জীর্ণ মানুষের ন্যায় হয়ে গিয়েছে রেইন ।।সে খুবই ব্যস্ত একজন মানুষ।যেখানে প্রতি মিনিটে তার কোম্পানি লাখ লাখ ডলার প্রফিট করে সেখানে এমন অলস সময় কাটাতে তার মোটেও ইচ্ছে করছে না।বিছানায় শুয়ে দেয়ালে থাকা ঘড়ির পানে একবার নজর বুলালো রেইন।সময় এখন সকালের শেষ প্রান্ত।কিছু ক্ষণ পরেই দুপুরের সূচনা হবে।ঝট করে বিছানা থেকে উঠে একটা লম্বা শাওয়ার নিলো রেইন।ওয়াশ রুমের আয়নায় একবার নিজের পুরো শরীর পরখ করে নিলো।সারা শরীর জুড়ে অসংখ্য সেলাই আর কাটা ছেঁড়ার দাগ।রেইন প্যালেসের প্রত্যেকটি দেয়ালে টানানো নিজের বিশাল বড় বড় স্থির চিত্র দেখেছে সে।ছবি গুলোতে তার যেই আভিজাত্য আর সৌন্দর্য ফুটে রয়েছে তার সিকি ভাগ এই চেহারায় খুঁজে পেলো না রেইন।ঝলমলে সুন্দর চুল গুলোও আজ পিঙ্গল বর্ণ ধারণ করেছে।সেলাই এর জায়গায় চুলগুলো ঠিক ভাবে গজায়নি এখনো।কি এমন ঘটেছিলো সেদিন যার জন্য এতো বড় এক্সিডেন্ট হলো?
মাথায় ভোঁতা যন্ত্রনা হতেই ঝটপট শাওয়ার শেষ করে একটা বাথ রোব জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো রেইন।এরপর কাবার্ড থেকে একটা ডেনিম প্যান্ট আর বেবি পিংক শার্ট গায়ে জড়িয়ে বাইরে যাবার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে নিলো।পায়ে জুতো পরে আয়নায় নজর বুলাতেই চুল গুলোর জন্য একটু বেখাপ্পা লাগলো তার নিজের কাছেই।কালো রঙের একটা ক্যাপ মাথায় পরে নিজের চুল গুলো ঢেকে কী ট্রে থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে পার্কিং লটে ফিরে এলো রেইন।আপাতত অফিসের কাজ সব আর্থার ই সামলাবে।কিছু নিয়ে বেশি ভাবলেই রেইন অস্বস্তি বোধ করে।শারীরিক কন্ডিশন এর কথা চিন্তা করে সে নিজেই ব্যাস্ত কাজে হাত বাড়ায়নি।
বাড়ির বিশ্বস্ত সার্ভেন্ট হ্যারির কাছে নিজের গন্তব্য বলে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো রেইন।একটু মাইন্ড ফ্রেশ খুব প্রয়োজন এই মুহূর্তে।সারাদিন ঘরে শুয়ে বসে থাকার চাইতে ঘুরে বেড়ানো উত্তম।
********
শেলডন ফরেস্ট ওয়াকিং ট্র্যাক
সিডনি,অস্ট্রেলিয়া
সিডনির সবচাইতে সুন্দর মনোমুগ্ধকর হাইকিং ট্র্যাক গুলোর মধ্যে শেলডন ফরেস্ট অন্যতম।চারপাশে ঘন ইউক্লিপটাস, ক্যাবেজ পালম আর নানান নাম না জানা গাছের সারি।আর তার বুক চিরে হেটে হেটে প্রকৃতি দেখার মনোরম চিকন পথ।নিজের বিষিয়ে উঠা মনকে শান্ত করতে শেলডন ফরেস্ট এর বিকল্প আর কিছুই নেই।শীতল বাতাস আর পাখির ডাক।নিমিষেই মনে প্রশান্তি এনে দেয়।
রেইন যখন শেলডন ফরেস্ট এ পৌঁছায় তখন প্রায় দুপুর।গাড়ি থেকে নিজের হাইকিং ব্যাগ,পানির বোতল আর প্রয়োজনীয় জিনিস কাঁধে নিয়ে জঙ্গল এর ভেতর পা বাড়ালো।কতো সময় হাটলো এমন নির্জন পরিবেশে তার কোনো হিসেব রাখলো না।নিজেকে প্রকৃতির মাঝে বিলীন করে মুগ্ধ নয়নে চারপাশে নজর বুলিয়ে তৃপ্তির লম্বা শ্বাস টানলো রেইন।হাটতে হাটতে হঠাৎই থমকে দাঁড়ালো রেইন।চোখের সামনে অনিন্দ্য সুন্দরী এক মানবী কে দেখে হৃদয়ের ধুকপুক শব্দ তাল হারালো।মেয়েটি তার সরু সফেদ লম্বা হাত বাড়িয়ে বনফুল ছেঁড়ার কঠিন অধ্যাবসায় চালাচ্ছে।কিন্তু বার বার সে ব্যার্থ হচ্ছে।দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে রেইন স্মিত হাসলো।এরপর দ্রুত পদে এগিয়ে নিজের বলিষ্ঠ লম্বা হাত বাড়িয়ে সেই ফুল ছিঁড়ে মেয়েটির হাতে দিতেই মিষ্টি হেসে মেয়েটি বলে উঠলো
“ওয়াও,থ্যাঙ্কস এ লট।
প্রতিউত্তরে রেইন খানিক মেপে হাসলো এরপর শুধালো
“নেইম?
মেয়েটি মিহি স্বরে হেসে ফুলটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে উত্তর করলো
“তুলতুল
#চলবে……
#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৪৯
#সারিকা_হোসাইন
________
নির্জন শান্ত প্রকৃতিতে অল্প হাসি আর কিছু আলাপে চলতে থাকলো রেইন আর তুলতুল এর হাইকিং।ইতোমধ্যে রেইন জানতে পেরেছে তুলতুল বাংলাদেশি হলেও তার জন্ম বেড়ে উঠা দুই ই এখানে।তুলতুল প্রায়ই এখানে ঘুরতে আসে তার জিওগ্রাফিক থিসিস রিসার্স এর জন্য।অল্প সময়ের আলাপ চারিতায় রেইন বুঝলো মেয়েটি সাংঘাতিক ব্রিলিয়ান্ট এবং চৌকস।সেটা লিখাপড়া হোক বা কথা বার্তা।আলাপে আলাপে রেইন তার স্মৃতি হারানোর কথা তুলতুল কে জানালে বেশ অবাক হলো তুলতুল।
“আমি আমার জীবন থেকে কয়েকটি মাস হারিয়ে ফেলেছি মিস তুলতুল।সেই ঘটনা গুলো আমার দৃষ্টিতে আবছা ।মনে করতে গেলেই খুব কস্ট হয়।
অসহায় স্বরে কথা গুলো বলে হাঁটায় মনোযোগ দিলো রেইন।রেইনের কথায় বেশ খারাপ লাগলো তুলতুলের।কি বলে রেইনকে শান্তনা দেবে তার ভাষা তার জানা নেই।কারন আজই প্রথম তাদের দেখা হয়েছে।কিন্তু কথাবার্তায় মনে হচ্ছে লোকটি খুবই ভদ্র এবং মার্জিত।আরো কয়েক ধাপ হেটে রেইন থমকে দাঁড়ালো।এরপর কিছুটা ভাবুক হয়ে তুলতুল এর পানে নিজের হাতটা বাড়িয়ে শুধালো
“ক্যান উই বি ফ্রেন্ড?
রেইনের লোমশ ফর্সা হাতটায় নজর বুলিয়ে এক ভ্রু উঁচু করে নিম্ন ভাগের ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছুক্ষন স্তব্ধ রইলো তুলতুল।এরপর নিজের কোমল সুশ্রী হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড শেক করে বলে উঠলো
“ইয়াহ সিউর…
এরপর আর কোন কথা হলো না তাদের।সঠিক দূরত্ব বজায় রেখে দুজন দুজনের মতো চুপচাপ হাটতে আরম্ভ করলো।মৃদু বাতাস আর পাখির অনবরত ডাক অনন্য মূর্ছনার সৃষ্টি করলো।হঠাৎই সমস্ত প্রশান্তু ভঙ্গ করে তুলতুল এর ফোন খানা কর্কশ স্বরে বেজে উঠলো।হাঁটা থামিয়ে বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে ব্যাগ হাতড়ে ফোন বের করে স্ক্রিনে তিহানের নম্বর দেখে বেশ অবাক হলো তুলতুল।ঝটপট ফোন রিসিভ করে কানে তুলে বললো
“ভাইয়া!
ওপাশ থেকে উচ্ছসিত হয়ে তিহান হরবড়িয়ে বলে উঠলো
“তাড়াতাড়ি বিমানের টিকিট কেটে ফেল তুলতুল বাড়িতে বিয়ে আছে।বাংলাদেশ এ ফিরতে হবে আমাদের।
কথা গুলো বলে আরো কিছু বলতে চাইলো তিহান।কিন্তু নেটওয়ার্ক সায় দিলো না এই ঘন জঙ্গলে।তিহানের নম্বরে আরো বার কয়েক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আনমনে তুলতুল ভাবতে লাগলো
“বাড়িতে কার বিয়ে?বিয়ের উপযুক্ত দাদা বাড়িতে কে আছে?
তুলতুল কে আপসেট দেখে রেইন ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো
“এনিথিং রং?
তুলতুল মাথা নিচু রেখে পথ চলতে চলতে থেমে গিয়ে বলে উঠলো
“আই হ্যাভ টু গো টু বাংলাদেশ।
আর দাঁড়ালো না তুলতুল।রেইনকে বাই বলে দ্রুত হেটে শেলডন ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে এলো।বাসায় গিয়ে তাকে এই মুহূর্তে জানতেই হবে কার বিয়ে।সে যা ধারণা করে রেখেছে তাই যদি সত্যি হয় তবে ইমারজেন্সি টিকিট কেটে আগামী কাল ই ঢাকায় ব্যাক করবে সে।
তুলতুল এর যাবার পানে তাকিয়ে কিছুটা বিষন্ন হলো রেইন।মেয়েটি একবারো পিছন ফিরে তাকালো না।নম্বর বা কার্ড কোনো কিছুই বিনিময় পর্যন্ত হলো না।আর যদি কোনোদিন তাদের দেখা হয়?রেইন কি তবে তুলতুল কে হারিয়ে ফেললো?নানান আফসোস আর হতাশা গ্রাস করতে চাইলো তাকে।চিনচিনে সুক্ষ ব্যাথায় ভার হতে চাইলো বুকের ছাতি। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে নিজেই বুঝ দিলো
“জীবনে চলার পথে অনেক জনকেই ভালো লাগবে।কিন্তু তাই বলে কি সবাইকে হৃদয়ে জায়গা দেয়া যাবে?
নিজের অতীত ভেবে কিছুটা হতাশ হয়ে আফসোস এর স্বরে রেইন বলে উঠলো
“লাইফ টা উশৃঙ্খল না হয়ে যদি একটু গুছালো হতো।তবে আমি ঠিক এই মেয়েটিকে হাসিল করতাম।কিন্তু আফসোস আমি আগেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছি।চাইলেই জীবনটা সুন্দর করে গুছানো যায়।কিন্তু সেই গুছানো মানুষটার বড্ড অভাব।কোথায় আছে সে?সবকিছু জেনে তুলতুল কি আমাকে গ্রহণ করবে?
ভেতর থেকে ফট করে না বোধক উত্তর এলো।তাচ্ছিল্য হাসলো রেইন।নিজের অতীত গোপন করে কাউকে জীবনে জড়াতে চায়না সে।দরকার পরলে আজীবন একা থাকবে তবুও কোনো মিথ্যের আশ্রয় নেবে না সে।যদি কখনো দেখা হয় তবে তুলতুল কে প্রপোজ করবে সে।তুলতুল রাজি হলে তার ভাগ্য প্রসন্ন হবে।আর রিজেক্ট করলে ওখানেই হয়তো থমকে যাবে তার নিকৃষ্ট জীবন।
জীবনের ছক কষতে কষতে মনোরম প্রকৃতি অসহনীয় লাগলো রেইনের কাছে।ব্যাগে থাকা ওয়াটার পট থেকে অল্প পানি খেয়ে নিজের হাঁটা থামিয়ে সেও ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে এলো।এরপর গাড়িতে বসে ইঞ্জিন স্টার্ট করে অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো।নিজেকে একটু ব্যাস্ত রাখা খুবই প্রয়োজন।
____________★★★★★_____________
“আচ্ছা মৌটুসী তুমি যদি কখনো জানতে পারো আমি কোনো মানুষ খুন করেছি তখন তুমি কি করবে?আমাকে ঘৃণা করবে?
ছাদ থেকে শুকনো কাপড় গুলো এনে কেবলই সেগুলো ভাঁজ করে ওয়ারড্রোব এ ভরছিলো মৌটুসী।আকস্মিক এই বিকেল বেলা ইকবালের এহেন প্রশ্নে হাতের কাজ থামিয়ে কিছুক্ষন নীরব রইলো সে।এরপর আবার কাপড় ভাজে মন দিলো।কিন্তু মৌটুসীর উত্তর জানার জন্য ইকবাল মরিয়া হয়ে উঠলো।তার ভেতরের সত্তা খুব করে তাকে জ্বালাচ্ছে।মন বলছে ইকবাল মৌটুসী কে নিজের অন্ধকার জগৎ থেকে লুকিয়ে বিশাল অপরাধ করেছে।তাই মৌটুসী কে সব সত্যি জানানো প্রয়োজন।যদি মৌটুসী খুব বেশি রিয়াক্ট করে তবে ইকবাল খুব করে সরি বলবে তাকে।কিন্তু একি?মেয়েটির মধ্যে কোনো হেলদোল ই যে নেই!
অসহ্য অনুভূতি তে ছটফট করে মৌটুসীর হাতের কাপড় কেড়ে নিয়ে ইকবাল পুনরায় বললো
“একটা প্রশ্ন করেছি উত্তর না দিয়ে কি ছাতার কাপড় ভাঁজ শুরু করেছো?
ইকবালের পানে তীক্ষ্ণ নজর বুলিয়ে মৌটুসী গা ছাড়া ভাব দেখিয়ে বলে উঠলো
“বিয়ের আগে এই প্রশ্ন করলে যেকোনো একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতো।বিয়ের মাস দুয়েক পর তোমার এসব প্রশ্নের কোনো ভ্যালু আছে বলে আমার মনে হচ্ছে না।
ইকবাল আরেকটু সিরিয়াস হয়ে পাংশু মুখে বললো
“আমি মানুষ খুন করেছি মৌটুসী।তাও একটা দুটো নয়।অনেক গুলো।
এবার ও মৌটুসী নীরব।মৌটুসীর এহেন ঠান্ডা আচরণ ইকবালের সহ্য হলো না।সে মৌটুসীর দুই বাহু চেপে ধরে শক্ত ঝাকুনি দিয়ে একটু উঁচু স্বরে বলে উঠলো
“মৌটুসী আই এম এ কিলার!
নিজের হাত ইকবালের হাত থেকে ছাড়িয়ে বিছানায় বসে গেলো মৌটুসী।এরপর ইকবালের চোখে চোখ রেখে মিহি স্বরে বলে উঠলো
“জানি।
মৌটুসীর উত্তরে ইকবাল যেনো আকাশ থেকে পরলো।মৌটুসীর আচলে নিজের ঘর্মাক্ত মুখশ্রী মুছে ব্যাস্ত গলায় শুধালো
“কবে থেকে?
লম্বা একটা নিশ্বাস টেনে মৌটুসী উত্তর করলো
“আরো বছর দুয়েক আগে থেকে।আমি নিজ চোখে সেলিম মাস্তান কে শুট করতে দেখেছি তোমাকে।শুধু আমি নই তাথৈ ও দেখেছে।
ইকবাল বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে শুধালো
“ভয় পাওনি?
মৌটুসী নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো
“মোটেও না।আমরা আরো ইনজয় করেছি এটা।উনার কারনে শান্তিতে কলেজে ভার্সিটিতে কোত্থাও যাওয়া যেতো না।প্রকাশ্যে সে আমাদের এক ফ্রেন্ড কে রেপ করার হুমকি দিয়ে ছিলো।শুনেছিলাম থানায় উনার নামে অনেক মামলা ছিলো।বাট পুলিশ উনাকে ধরতে ব্যার্থ হচ্ছিলো।উনার মৃত্যুর পর ক্লাসে মিষ্টি বিতরণ করে ছিলাম আমরা।আর পুরো ঢাকায় কত মানুষ আনন্দ উদযাপন করেছে এটা তোমার অজানা নয়।তুমি যেটাকে অপরাধ ভাবছো ওটা আমাদের কাছে ভালো কাজ মনে হয়েছে।এবং তোমার অতীত নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই পতি মশাই।আমি যে খাটি হীরে পেয়েছি।হীরে আগে কয়লা ছিলো নাকি আগুন ছিলো এসব জেনে আমার কি লাভ?
কথা গুলো বলতে বলতে ইকবালের গলা জড়িয়ে ধরলো মৌটুসী।স্ত্রীর আশকারা পেয়ে ইকবালের বুকের উপর জমে থাকা ভারী বোঝাটা যেনো হালকা হলো।মৌটুসীর গলায় মুখ ডুবিয়ে চোখ বুজে ইকবাল হাফ ছেড়ে বলে উঠলো
“বিশ্বাস করো এতো শান্তি পাচ্ছি যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।জীবনে আমার আর কিচ্ছু পাওয়া বাকি নেই মৌ।তুমি ছাড়া আমি সত্যিই অসম্পূর্ণ।নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।বিধাতা আমাকে উত্তম পুরস্কার দিয়েছেন।এতো এতো কৃতজ্ঞতা কিভাবে স্বীকার করি বলোতো?
ইকবাল কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মৌটুসী বলে উঠলো
“অফুরন্ত ভালোবাসি তোমায়”
মৌটুসীর সাথে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে ইকবাল বলে উঠলো।।
“আমার থেকে বেশি নয়।
××××××××××××
মেহেরিনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছে তাথৈ।মা মেয়ের আলাপ যেনো কোনো ভাবেই শেষ হতে চাচ্ছে না।হঠাৎই তাথৈ এর মনে হলো মেহেরিন কিছু বলতে চায়।কিন্তু লজ্জায় বার বার বলতে চেয়েও ব্যার্থ হচ্ছে।মেহেরিনের ইতস্ততা কিছুটা কমাতে তাথৈ জিজ্ঞেস করলো
“কি লুকোচ্ছ আম্মু?
তাথৈ এর প্রশ্নে মাথা নিচু করে মেহেরিন বলে উঠলো
“ভিয়ানকে নিয়ে দেশে আয়।তোর নানা তোদের দেখতে চেয়েছেন।
তাথৈ বুঝলো মেহেরিন কিছু লুকিয়ে চলেছে তার কাছে।তাই মেহেরিন কে আর না ঘাঁটিয়ে আরো কিছু কথা বলে ফোন রেখে নিজ কাজে মন দিলো।দুপুরের একটু পরেই আজ ভিয়ান বাসায় ফিরলো।চোখে মুখে তার খুশির ঝিলিক।বাসায় পৌঁছে ড্রয়িংরুমেই তাথৈকে পেয়ে গেলো ভিয়ান।মুখে দুস্টু হাসি ঝুলিয়ে ভিয়ান বলে উঠলো
“কি গো আলাল দুলালের মা কি অবস্থা তোমার?
ভিয়ানের দুস্টু হাসিতে তাথৈ কিছুক্ষণ নীরব থেকে কপাল কুঁচকে শুধালো
“ঘটনা কি খুলে বলো তো।
ভিয়ান গায়ের কোট খুলে তাথৈ এর হাতে দিতে দিতে টিপ্পনি কেটে বলে উঠলো
“নতুন শশুর পেতে যাচ্ছি আমি।তাই মনে খুব করে রঙ লেগেছে বুঝলে?
অবাক কন্ঠে উঁচু আওয়াজে তাথৈ ভিয়ানের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো
“নতুন শুশুর মানে?কিসব আবোল তাবোল বকছো?ছাই পাশ গিলেছো নাকি?
তাথৈ এর গালে নাক ঘষে ভিয়ান মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে উত্তর করলো
“ঘরে যেই মারাত্মক এলকোহল আছে ওটা রেখে বাইরের ওসব সস্তা পানিতে কি আদৌ নেশা হয় জানেমান?
ভিয়ানকে সরিয়ে দিয়ে দাঁত পিষে তাথৈ বলে উঠলো
“কি হচ্ছে কি এখানে?কেউ দেখে ফেলবে।
ছোট বাচ্চার ন্যায় অল্প কান্নার ভান করে ভিয়ান বলে উঠলো
“তবে নির্জনে চলো।
“সব সময় ইয়ার্কি ভালো লাগেনা বলে দিলাম।
“আমার এই প্রেম পিয়াস তোমার কাছে ইয়ার্কি মনে হয় বউ?
“তাহলে আগে সত্যি ঘটনা খুলে বলো?
নিরাশ হয়ে তাথৈ এর পানে তাকিয়ে ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেললো ভিয়ান।এরপর গলার টাই এর নট ঢিলে করতে করতে বলে উঠলো
“নানা আন্টির সাথে সাজিদ আংকেল এর বিয়ের বন্দোবস্ত করেছে তাথৈ।আন্টি প্রথমে রাজি হতে চায়নি।কিন্তু বুড়ো মানুষটা খুব করে চাচ্ছিলো আন্টি সুখী হোক।তাই আন্টি মত দিয়েছে আর কি।
মেহেরিনের বিয়ের কথা শুনে তাথৈ এর দুচোখ ছলছল করে উঠলো।মানুষটা কোনো দিন স্বামী সোহাগ পায়নি।ভিয়ান তাকে যেভাবে ট্রিট করে তাথৈ এসব সাইফ আজমীর মধ্যে কখনো দেখেনি।মেহেরিন যথেষ্ট নমনীয় থেকেছে সব সময়।কিন্তু সাইফ আজমী নিজের ঠাঁট বজায় রেখে দিনের পর দিন তার সাথে অন্যায় আচরণ করে গিয়েছেন।যেখানে ভিয়ান তাথৈকে ছাড়া এক মুহূর্ত ঘুমুতে পারে না।সেখানে মেহেরিন আলাদা ছোট একটা কক্ষে পাড়ি দিয়েছে হাজার হাজার রাত।এই মানুষটার জীবন কি আরো আগে বিধাতা গুছিয়ে দিতে পারলো না?এই শেষ বয়সে এসে কতো দিন ই বা সে সুখ ভোগ করতে পারবে?আর নানা ভাই?সে কি আরো আগে এই উদ্যেগ টা নিতে পারে নি?
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে তাথৈ এর দু চোখ জলে ভরে উঠলো।দ্রুত হাতে ভিয়ান সেই জল মুছে জিজ্ঞেস করলো
“কি হয়েছে লাভ?
ধরা গলায় ভিয়ানের বুকে মুখ লুকিয়ে তাথৈ ফুঁপিয়ে বলে উঠলো
“ভালো মানুষ কেনো বেশি বেশি কষ্ট পায় এই পৃথিবীতে?আম্মুর জীবন কেনো ওই লোক নষ্ট করলো ভিয়ান?তার পাপের শাস্তি কে দেবে তাকে?
তাথৈকে বুকে আগলে নিয়ে ভিয়ান বললো
“ভালো মানুষকে কষ্ট দিয়ে বিধাতা পরীক্ষা নেয় তাথৈ।আর সাইফ আজমীর পতন খুব শীঘ্রই ঘটতে যাচ্ছে।পাপের ঘরা যে পরিপূর্ণ।তার বিনাশ আমার হাতে।আগামী সপ্তাহে আমরা ঢাকা যাবো।নিজেকে তৈরি করে নাও।আমাদের অনেক কাজ সেখানে।আন্টির নতুন জীবনের সূচনার আগে ওই জানোয়ার টার সমাপ্তি ঘটাবো আমি।অনেক তান্ডব চালিয়েছে সে এই জীবনে।সব কিছুর কড়ায় গণ্ডায় হিসেব নেবার সময় এসেছে এখন।
**********
সাইফ আজমিকে পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে ইকবালের টর্চার সেলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।ভিয়ানের নির্দেশে এরিক আর ইকবাল মিলে করেছে এই কাজ।বাবার বয়সী মানুষের সাথে এমন করতে যদিও খারাপ লেগেছে ইকবালের।কিন্তু তার নিকৃষ্ট কাজ কর্মের কথা মনে পড়তেই আর কোনো দরদ কাজ করেনি কারো মধ্যে।ইতোমধ্যে ইকবাল বেশ কয়েক প্রকার টর্চার চালিয়েছে তার উপর।মাথা বেয়ে মেঝেতে চুইয়ে পরা রক্তই তার প্রমাণ।মাঝে মাঝেই পানি পানি করে চিৎকার করে উঠেন সাইফ আজমী।ঠিক তখনই ঠান্ডা খাবার পানির বদলে উষ্ণ টগবগে পানি ছুড়ে মারে এরিক।যতবার নিজের অনাগত সন্তান আর প্রেমিকার কথা মনে পরে ততবার ই নিজের নিয়ন্ত্রণ হারায় এরিক।শক্ত হৃদয়ের পুরুষ সে তাই সকলের সামনে চিৎকার করে কাঁদতে পারে না।কিন্তু প্রতিনিয়ত হৃদয় নামক যন্ত্র টি দগদগে হয় সন্তান হারানোর ব্যাথায়।নিকিতার নিথর দেহ মনে পরতেই বেঁচে থাকার আশা ফুরায়।বুকের ছাতি ব্যাথায় ভেঙে আসে। তবুও নীরবে মুখ বুজে সবটাই সয়ে যায় সে।
এরিকের ভাবনার মাঝেই হুসে ফিরলেন সাইফ আজমী।কন্ঠনালী শুকিয়ে কাঠ।এক বিন্দু পানির আশায় দাঁত দিয়ে ঠোঁট জিহ্বা কেটে কুচি কুচি করলেন।এরপর দুর্বল গলায় আওড়ালেন
“পানি…..
#চলবে……