#বড়োজা
#Nadia_Afrin
“সামান্য দু-পিছ মাংস খাওয়ার অপরাধে আমায় ডিভোর্স দেবেন আপনারা মা?
দু-মাসের মেয়ে,ছবছরের ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে এই বৃষ্টির দিনে কোথায় যাব আমি মা?
এক অনাথের সঙ্গে আপনারা এমন অবিচার করতে পারেন না।
আমি তো কম করিনি আপনাদের জন্য।নিজে না খেয়ে খাইয়েছি।সেবা করেছি।মা বলে ডেকেছি।সেই আপনি কীনা আমায় ঘার ধাক্কা দিচ্ছেন মা?”
মিসেস রজনীর ঝাঝালো কন্ঠ,”অবশ্যই দেব।
দু-পিছ মাংসের লোভ যে সামলাতে পারেনা।সে যে কেমন মানুষ তা আমার বোঝা হয়ে গেছে।
ঝটপট আমার ছেলের ঘার থেকে নামো তোমরা মা-ছেলে,মেয়ে।”
তন্নি অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বামীর দিকে তাকাল।
লোকটা পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে আছে।মুখে টু শব্দটি নেই।
তন্নি চেচিয়ে বলে,”কিছু বলছ না কেন আকাশ?
আমি না তোমার স্ত্রী।
তোমার মা এসব কী বলছে আকাশ?
আমি কোথায় যাব?কে আছে আমার তুমি ছাড়া?
কি দোষ আমার?কেন প্রতারণা করছ আমার সঙ্গে?ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব আমি?ছেলেটা তোমায় ছাড়া কিচ্ছু বোঝেনা।
অন্তত নিজের সন্তান দুটোর কথা ভেবে হলেও আমায় ঠাই দাও প্লিজ।”
আকাশের চটপটা উত্তর,”মা যেটা বলবে সেটাই শেষ কথা।
উনি আমায় জন্ম দিয়েছে।আমার খারাপ চাইবে না নিশ্চয়।
উনি যেহেতু এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে,সুতরাং আমার মঙ্গলের জন্যই নিয়েছে।
তাই আমি মায়ের বিরুদ্ধে যেতে পারব না।”
তন্নি ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ে।
বছর ছয়েকের ছেলে আলিফ মায়ের চিৎকারে ঘুম ভেঙে চোখ কচলাতে কচলাতে মায়ের কাছে আসে।
মায়ের কোলে মাথা রেখে সেখানেই শুয়ে পড়ে।
তন্নি ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখের জল বিসর্জন দেয়।
মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
শাশুড়ি রজনী খাম সমেত একটি পেপার এনে তন্নির মুখে ছুড়ে দেয়।
তন্নি মাটি থেকে কুড়িয়ে নেয় সেটি।
ভাঝ খুলে দেখে ডিভোর্স পেপার এটি।
আগে থেকেই আকাশের সাইন করা।
তন্নি আকাশের দিকে তাকায়।
“এই তোমার ভালোবাসা আকাশ?
এর জন্যে বিয়ে করেছিলে আমায়।এতো ভালোবাসা,এতো প্রমিস, কোথায় গেল সব?
নিজের সন্তানদের মুখের দিকেও তাকালে না তুমি।
এতো পাষণ্ড,এতোটা অমানুষ!”
আকাশ তেড়ে আসে।তন্নির গালে স্বজড়ে এক থাপ্পড় দিয়ে বলে,”বেশি বুঝিস না।দোষ টা তোর।এতিম হয়ে আমার মতো ধনী ঘরের ছেলেকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিস তুই।
আমায় ঠকিয়েছিস।
আমি তোর থেকে ভালো ডিজার্ভ করি।সেসময় অন্ধ ছিলাম।তাই তোর মতো ভিখারীকে জীবন সঙ্গী করেছিলাম।
এবার আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
আমার ভাবীর কৃপায় আমার চোখ খুলেছে।
এবার এসব বাচ্চা আবর্জনা নিয়ে বেড়িয়ে যা তুই।”
তন্নি পাশের ঘরে তাকায়।
বড়োজা মিতালি পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
ভাবভঙ্গিতেই বোঝা যাচ্ছে,কাজটা এ মহিলার।
তারমানে ইনি আজ নিজের স্বার্থসিদ্ধি করেই ছাড়ল।
হায় রে আমার পোড়া কপাল!
সাজানো গোছানো সংসারটা পরনারী এসে শেষ করে দিল।
হয়ত এটাই আমার নিয়তি ছিল।
আমি উঠে দাড়ালাম।
এখানে থেকে লাভ নেই আমার।
পেপারে সই করে দিলাম।
ঘরে গেলাম।এ ঘরটা আর নেই আমার।
কতশত স্মৃতি এখানে।
আমার প্রথম প্রেম,প্রথম ভালোবাসা,প্রথম বিয়ের সংসার এঘরে।
এতো স্মৃতি ভুলি কী করে?
অথচ আকাশ কতো সহজে পর করে দিল আমায়।
আমার দু-মাসের ঘুমন্ত মেয়েটিকে ঘুমানো অবস্থাতেই কোলে নিলাম।
মেয়ে আমার আৎকে উঠল যেন।
পিছে ছেলে দাড়িয়ে আছে।দু-বার ঘুম ভেঙে কপাল কুচকে দাড়িয়ে আছে সে।
হয়ত মায়ের ওপর ভীষণ বিরক্ত হচ্ছে।
আবারো ছেলে আমার বিছানায় উঠল।
আমি তাকে নামতে বলি।
সে আধো বুলিতে বলে,”নামব কেন আম্মু?আমি ঘুমাব।
এটা আমার ঘর।
আমি এখানে ঘুমাব।আপুকেও শুইয়ে দাও।
আপুও ঘুমাবে।”
আমি ছেলেকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলাম।
বললাম,”এটা আর আমাদের ঘর নেই বাবা।
আমাদের এখান থেকে চলে যেতে হবে।
আমরা আজ ঘুরতে যাব বাবা।
সারাজীবনের জন্য চলে যাব ঘুরতে।”
ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে ছেলে আমার ভীষণ খুশি।
ছোট্ট বাচ্চাটা ভাবতেও পারছে না কী হবে তার জীবনে।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ছেলে-মেয়েকে তৈরি করে নিলাম।
নিজের একটি পার্সে চারশত টাকা আর ফোন ব্যাতিত কিছুই নিতে পারলাম না।
বাহির থেকে শাশুড়ি মা বলছেন,”আমার বাড়ির টাকা-পয়সা পারলে লুট করে নিয়ে যেও না।
কাবিনের টাকাটা দুদিন পর নিয়ে যেও।
আমরা অকৃতজ্ঞ নই।”
আমি হাসলাম।
ছেলেদের নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে বললাম,”কাবিনের পঞ্চাশ হাজার আপনাদের সাদকা দিয়ে গেলাম।টাকাগুলো দিয়ে ছেলের বিয়ে করিয়ে দেবেন।
আর আমার রেখে যাওয়া জামা আপনার পরবর্তী নতুন মেজো বউয়ের জন্য।”
হনহন করে বেড়িয়ে গেলাম আমি।
আমার বড়োজা মিতালির দিকে তাকিয়ে বললাম,”আসি ভাবি।আপনার জন্য বদদোয়া রইল আমার সংসার ভাঙার জন্য।
যেভাবে আমার জীবন ধ্বংস করলেন।আমার সন্তানদের এতিম করলেন,ঠিক তেমনি আপনি নিঃস্ব হন।
আমার প্রতিটি চোখের পানি আপনার জীবনে অভিশাপ হয়ে আসুক।
আমি এতিম।একজন এতিমের ওপরে হওয়া অন্যায় বিধাতা কখনো মেনে নেবেন না।
আমার সন্তানদের হাহাকার আপনার জীবন নরক করে দিক।
মন থেকে আপনার জন্য এ দোয়া গুলোই এলো।
মিথ্যা মহাপাপ।তাই মনে এক আর মুখে অন্য বললাম না।”
বড়োজা রাগে তেড়ে এলো আমার নিকট।
আমি বেড়িয়ে গেলাম বাড়ি থেকে।একহাত ধরা ছেলের।অন্যহাতে মেয়েকে বুকে নিয়ে হাঁটছি।
এরই মাঝে শুরু হলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি।আমার দুঃখ যেন বৃষ্টি হয়েই ধরণীতে নামছিল।
নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছিল।ইচ্ছা করছিল চিৎকার করে কাঁদি।
কিন্তু আমার শক্ত থাকতে হবে।
আমার ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকিয়ে হলেও নিজেকে শক্ত রাখতে হবে আমায়।
দু-মাসের মেয়েটির মুখখানায় টিপটিপ বৃষ্টি পরছে।
মেয়ে আমার কেঁপে উঠছে।
ছেলেও কাঁপছে এই অসময়ের বৃষ্টিতে।ঠান্ডা বাতাসে ছেলে আমায় জড়িয়ে ধরে শীতে।
উপায়ন্ত না পেয়ে এক চা’য়ের দোকানে আশ্রয় নিলাম কোনোমতে।
সেখানেও দশ বারোজন লোকেরা চা পান করছে,টিভি দেখছে।
লোকগুলো আমায় দেখে যেন অবাক হলো বেশ।
এই বৃষ্টি -বাতাসের বিকেলে দু-মাসের মেয়েকে নিয়ে চা’য়ের দোকানে আমি।ব্যাপারটি অপ্রত্যাশিতই।
আমি একা একটা মেয়ে।
ভীষণ অস্বস্তি লাগছিল।আবার ভয় ও করছিল।
ছেলেকে এক ব্রেঞ্চেতে বসিয়ে দিলাম।
ফোন বের করে এক বান্ধবীকে কল দিলাম।
সব জানালাম তাকে।সে নেটওয়ার্ক প্রবলেম বলে কল কেটে দিল।
আরেকজন বলল পরে কল দিচ্ছি।আরেকজন তো বলল সে নাকি দেশেই নেই।
উপায় না পেয়ে কাছে পিঠে এক দূরসম্পর্কের বোনের বাড়ি গেলাম সরাসরি।
ফোন দিলে সেও যদি মানা করে দেয়,এ জন্য সরাসরি বাড়িতেই গেলাম।ততক্ষণে বৃষ্টি টা আর নেই।রয়েছে শুধু কনকনে বাতাস
বোনের বাড়ি গিয়ে কলিং বেল চাপলাম।
ওর বিশাল বাড়ি।তিনতলা বাড়ির পুরোটাতেই ওরা স্বামী-স্ত্রী ও একজন বাচ্চা থাকে।
ভেবেছিলাম এখানে হয়ত একটু আশ্রয় পাব।
বোনের নাম রিতা।
দরজা খুলে এ অবস্থাতে আমায় দেখে রিতা ভ্রু কুচকায়।
আমি বলি,”আমায় একটু আশ্রয় দে বোন।
অন্তত আমার এই দুধের শিশুর দিকে তাকিয়ে।
আকাশ আমায় ডিভোর্স দিয়েছে।
এই ঝড়-বাদলের দিনে কোথাও একটু মাথা গোজার স্থান পাচ্ছিনা।
তুই দয়া করে আমায় ফিরিয়ে দিসনা।
কথা দিচ্ছি,তিন-চার দিনের মাঝে কিছু একটা ব্যবস্থা করে আমি চলে যাব ওদের নিয়ে।
আপাতত একটু থাকতে দে বোন আমার।
নাহলে বৃষ্টিতে ভিজে মেয়েটাকে আর হয়ত বাঁচাতে পারব না।”
রিতার হয়ত একটু মায়া হলো আমার ওপর।
বাড়িতে আসতে বলল।
ও আগে আগে বাড়িতে প্রবেশ করল।
আমি ছেলের হাত ধরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করি।
সবে মাত্র দরজা পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকেছি,এমন সময় ওর স্বামীর প্রচন্ড চিৎকার শুনতে পেলাম।
ঘরে দুজনের মাঝে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।রিতাকে বকছে সে।বলছে,”কোন সাহসে তোমার বোনকে আমার বাড়িতে থাকতে দিলে?
তিন তিনটে পেট চালানো কম কথা নাকি?
আমার কী রাজভান্ডার আছে?নাকি তুমি জনদরদী হয়েছ?
আমার বাড়ি এসব সমাজ সেবা চলবে না।
ওর স্বামী ওকে ডিভোর্স দিয়েছে তাতে আমাদের কী?ওকে কেন আমাদের আশ্রয় দিতে হবে?আর দিলেও বা,সহজে যাবে নাকি এ বাড়ি থেকে?
ঘারে বসিয়ে তিনজন মানুষকে খাওয়াতে কম খরচ নাকি?
বাজার-সদাই এখন আগুন বরাবর।সেখানে ওদের কীকরে রাখব আমি?
নিশ্চয় তোমার বোন লোভে পড়ে এখানে এসেছে।
এবার চুরি-ডাকাতি করে আমাদের নিঃস্ব করে নিজের পেট চালাবে।”
আর শুনতে পারলাম না আমি।
ছেলের হাত ধরলাম।ঘর থেকে আমার দিকে অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রিতা।
আমি কিছু বললাম না।শুধু একটু হাসলাম।
ছেলেকে নিয়ে,মেয়েকে বুকে চেপে বাইরে বেড়িয়ে এলাম।
চোখ থেকে এবার টপটপ পানি পড়ছে।
চোর পর্যন্ত বলতে বাধল না।অথচ এই মানুষটিকে আমি কম সাহায্য করিনি।
রিতার যখন এর সঙ্গে বিয়ে হয় ছেলেটা বেকার।
রিতার সংসারের জন্য লুকিয়ে-বাঁচিয়ে অনেক দিয়েছি আমি।দুনিয়াতে কেউ নেই আমার। দূরসম্পর্কের বোনটাকেই আপন মনে করতাম।
বাড়িতে পালা হাঁস মুরগির ডিম থেকে শুরু করে দুধ,ঘরের চাল-ডাল পর্যন্ত দিয়েছি।
ওর স্বামী ব্যবসা করবে।কিন্তু টাকা নেই।আমার কাছে হাত পাতে।
নিজের জমানো টাকা দেই।সেই টাকার অর্ধেক এখনো শোধ করেনি ওরা।
আমার টাকায় ব্যবসা করে ওরা উন্নতি করেছে খুব।গাড়ি-বাড়ি সব করেছে।
এতে আমি খুশিই হয়েছি।ওরা ভালো থাক।সুখে থাক।
এটাই আমার প্রত্যাশা।
আজ কীনা তারাই আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল।
একটি দিনের জন্য হলেও আশ্রয় দিলনা।
আমি একটা মেয়ে মানুষ কতোই বা খেতাম!ছয় বছরের ছেলেটা আমার না জানি কত মণ খেত!
মেয়েটা তো দুধের শিশু।ওদের বাড়ির ভাত তো আর খেত না।
ওদের বর্তমান যা সার্মথ্য তাতে আমার মতো দশটা মেয়েকে খাওয়ালেও ফুরোবেনা।
বাড়িতে চারজন কাজের মেয়েই।আমায় না হয় কাজের মেয়ে করেই রাখত।কাজ করে খেতাম দু-বেলা।
বরাবরই আমি প্রবল আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচেছি।পরের বোঝা হয়ে থাকতাম না কখনোই।
এই চরম বিপদে একটু আশ্রয় পেলেই হতো আমার।
ঠিক কিছু না কিছু ব্যবস্থা করে নিতাম।
কিন্তু সেই ধৈর্য্য টুকোও হলো না ওদের।
কথায় আছেনা ধণ হলেই হয় না,মন বড়ো লাগে।
ছেলের চোখে ধরা দিল আমার চোখের পানি।
প্রশ্ন করল,”কাঁদছ কেন আম্মু?ঘুরতে যাব না আমরা আম্মু?
শুধু বৃষ্টিতে ভিজছি কেন?আমার খুব ঠান্ডা লাগছে।চলো বাড়ি যাই।ঘুরতে যাব না আমি।
আপুও ভিজে যাচ্ছে।চলো আপুকে নিয়ে বাড়ি যাই।”
আমি ছেলের দিকে তাকিয়ে বললাম,”কাঁদছি না বাবা।বৃষ্টির পানি পড়েছে চোখে।
তুমি একটু কষ্ট করে সহ্য করো বাবা।
আমি কিছু একটা ব্যবস্থা করছি।”
এক বন্ধ দোকানের ছাউনির নিচে এসে দাড়ালাম ছেলেকে নিয়ে।
নিজেকে যে কী পরিমাণ অসহায় লাগছে বলে বোঝাতে পারব না।
বৃষ্টি আবার শুরু হয়েছে।বড়ো বড়ো ফোটায় পড়ছে পানি।
এমন অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে পারব না আমি।তাই ছেলেকে বসিয়ে ছেলের কোলে মেয়েকে দিলাম।
ছেলে আমার ঠিক ভাবে কোলে নিতে পারছিল না।মাথা ধরছে তো পা ঝুলছে আবার পা ধরছে তো ঘার বাকা হয়ে যাচ্ছে।
তবুও কোনো মতে ছেলের দু-হাতে মেয়েকে জড়িয়ে দিয়ে বললাম,”বোনকে এভাবে শক্ত করে ধরে রেখ।ফেলে দিও না।আপু ব্যাথা পাবে।
এখানেই বসে থাকবে।আমি আসছি একটু।
আম্মুর কথা মনে রাখবে।”
আমি ছুটলাম।মেয়ের কান্নার শব্দও পাচ্ছি।হয়ত শক্ত করে চেপে ধরায় কাঁদছে।
কিন্তু আমার থামলে চলবে না।একটা ব্যবস্থা করতে হবে।সন্ধ্যা হয়ে আসছে।রাস্তায় রাত কাঁটানো সম্ভব নয়।আকাশের অবস্থাও ভালোনা।রাতে ঝড় হবে নিশ্চিত।
আশেপাশের ছোট্ট বাড়িগুলোয় খোঁজ করতে লাগলাম।
থাকার মতো একটি ঘর খুজছি।ভারা নিয়ে সেখানে উঠতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে অন্য কোথাও যেতে পারব না আমি।
মিনিট দশেক খুঁজে একটা ঘর পেলাম।
ভারা সাতশ।তিনশত অগ্রিম নিল।
টিনের ভাঙা ঘর।দরজাটাও আধ ভাঙা।বেড়ার একপাশে কাপড় আর প্লাষ্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা।
অজস্র নোংরা ও বিশ্রি গন্ধ ঘরে।সম্ভবত কুকুর-বেড়াল থেকেছে সেখানে।
বাথরুম বলতে একটা টিউবওয়েল আর একটা ভাঙা টয়লেট মাত্র।
টয়লেটের আশেপাশে শাড়ি দিয়ে ঢেকে দেওয়া।
কিন্তু এই জায়গাটিকেই স্বর্গ মনে হলো আমার।
রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজে ম*রা*র চেয়ে এই ঘরের এক কোণে আশ্রয় নেওয়া অনেক ভালো।
আমি আবারো ছুট লাগালাম ছেলে-মেয়েকে আনতে।
অর্ধেক রাস্তা আসতেই দেখলাম আমার ছেলে মেয়েকে বুকে চেপে ঐ বৃষ্টির মাঝেই দৌড়ে আমার দিকে আসছে।যেন খুব ভয় পেয়েছে সে।
মেয়েটে পড়া পড়া ভাব।
ছেলের পেছন তিনটি কুকুর ধাওয়া করেছে।
প্রাণপণে ছুটছে সে।
চলবে???