বড়োজা পর্ব-১১

0
595

#বড়োজা
#Nadia_Afrin

১১
সেদিনটা ছিল শুক্রবার।
মাংস ভাত,ডাল রান্না করে ঘামার্ত শরীর নিয়ে ডাইনিং এ দাড়িয়েছি সবে।
দেখতে পেলাম আমার বড়োজা এসেছে।
দেবরের বিয়ে উপলক্ষ্যে এসেছে তারা।
এই প্রথম তাকে দেখলাম সামনাসামনি।এর আগে দেখেছি ভিডিও কল অথবা ছবিতে।
মানুষটাকে দেখে চোখ দুটো বড়ো হয়ে গেছে আমার।
ফর্সা ধবধবে চেহারা।স্ট্রেট করা চুল।প্লাক ভ্রু।
পরণে পাতলা জর্জেট শাড়ি।
নীল রঙের হাতা কাঁটা ব্লাউজ।
ঠোঁটে বেবি পিঙ্ক লিপস্টিক।হাতে ঘরি।
ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে।
তিন সন্তানের জননী তিনি।দেখে বোঝার উপায় নেই।
এদিকে আমি দু-বাচ্চার মা হয়ে কেমন হয়ে গেছি।
শুস্ক চেহারা আমার,মলীন হাত-পা।
বড়োজার সামনে দাড়ালে আমার নিজেকেই বয়স্ক লাগে বেশি।

উনার পরণে কতো দামি শাড়ি।আমার পরণে সুতি একটা কামিজ।ধুলো মাখা শরীর,এলোমেলো চুল।
গিয়ে পরিচয় হতেই কেমন যেন লাগছে আমার।

বড়োজা সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়ে ব‍্যস্ত।
আমার দিকে তাকায় সে।মেকি হেসে বলে,”তন্নি না তুমি?আকাশের বউ।
দূরে দাড়িয়ে কেন?আমায় দেখে ভয় পেলে নাকি সংসার হারানোর?
তোমার সংসারে ভাগ বসাতে আসিনি আমি।”

প্রথমেই তার এমন কথা আমার ঠিক হজম হলোনা।
নিজেকে শান্ত রেখে বললাম,”এমন কেন বলছেন ভাবি?
এ সংসার তো আপানারও।
দুজন থেকে এবার তিনজন হবো আমরা নতুন জা এলে।”

বড়োজা মুখখানা কাচুমাচু করে।
শাশুড়িমা তাদের ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে।
আমিও ঘরে যাই।গোসল সেরে বের হয়েছি সবে।
আকাশ এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমায়।
কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,”বড়ো ভাবির কথায় কিছু মনে করেছ?
ওসব পাত্তা দিতে নাই।
এ সংসার তোমার।এ সংসারের জন্য জানপ্রাণ দিয়ে খেটেছ তুমি।
দুদিন এসে ওরা সব নিতে পারে নাকি!
তোমার অবদান অপরিসিম।
এছাড়াও আমি তো পাশে আছি তোমার।সর্বক্ষণ,সব পরিস্থিতিতে তোমার সঙ্গ দেব আমি।”

আকাশের কথা শুনে নিশ্চিন্ত হই আমি।মনে তবুও একটা বেসামাল ভাব।

ফ্রেশ হয়ে একসঙ্গে নিচে আসি।
বড়োজা সবার জন্য গিফ্ট এনেছে।একে একে সবার হাতে দিচ্ছে।
শাশুড়িমার জন্য দামি শাড়ি ও ম‍্যাচিং জুয়েলারি এনেছে।সে তো মহা খুশি।আয়নার সামনে নিজের গায়ে শাড়ি দিয়ে দেখছে বারংবার।
দেবরের জন্য এনেছে।আকাশ কেউ দিল দেখলাম এক ব‍্যাগ।
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছি ছেলে নিয়ে।
জায়ের হাতে আর একখানা ব‍্যাগ মোটে।
আকাশ বারবার এদিক-ওদিক ও তার মায়ের দিকে তাকাচ্ছে।
ওর চোখের ভাষায় আমি ও আমাদের ছেলে।

জা ব‍্যাগটা দেবরের হাতে দিয়ে বলল,”এটা তোমার হবু বউয়ের।”

কেন যেন মনটা ভীষণ খারাপ লাগে আমার।
সবার মাঝে অপমান বোধ হয়।
অন‍্যের জিনিসে আমি কখনোই আশাবাদী ছিলাম না।তার ইমানে হয়নি দেয়নি।
আমার খারাপ লাগে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে।
বড়ো চাচি সে।প্রথমবার দেখা হলো।অন্তত একটা খেলনা দিতে পারত বাচ্চাটার হাতে।
আমায় না দিক,কোনো আফসোস নেই।
বাচ্চাটা সবার গিফ্টের দিকে তাকিয়ে আমার মুখ দেখছে।
ছেলে নিয়ে সরে গেলাম আমি।

দেবরের বিয়ে হয়নি তার বউয়ের জন্য আনল।অথচ আমি এ বাড়িতে ছটা বছর হয়ে গেল।
থাক গে সেসব।আমার স্বামী আমাদের যথেষ্ট দিয়েছে।
অন‍্যের জিনিসের প্রতি লোভ নেই।

আকাশের মুখটা থমথমে দেখলাম।
নতুন মানুষ দেখে কিছু বলছেনা।তবে যখন তখন ব্লাষ্ট করবে,ভাবটা এমনই।

এবার খাবারের পালা।
একে একে সবাই টেবিলে বসছে।শাশুড়ি,দেবর ও ভাসুর একপাশে।
অন‍্যপাশে জা,তার ছেলে-মেয়ে আকাশ ও আমার ছেলে।এক সিট ফাঁকা।
আমি খারাপ বেড়ে দিতে লাগলাম।
সবার পাতে খাবার দিয়ে আকাশের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আছি।যে যার মতো খাওয়া শুরু করেছে।
আকাশ হাত ধুয়ে বলল,”দাড়িয়ে আছ কেন তন্নি?বসে পড়ো।চেয়ার তো খালি আছে।
খাবে কখন তুমি?
বেলা অনেক হলো।”

আমি আমতা আমতা করছি।কেউ বলেনি খেতে বসতে।
বসলে যদি কিছু হয়।বরাবরই একা খেতে হয় আমার।
এ বাড়ির কেউ আমার সঙ্গে তেমন খায়না।রান্না করি কিন্তু আমিই
আকাশ জোর করে খেতে বসালে হয় দেবর নয় শাশুড়ি উঠে যায় টেবিল থেকে।তাই আমিও আর বসিনা।

শাশুড়িমা মুখ বাকিয়ে বললেন,”এক ঘন্টা না খেয়ে থাকলে তোর বউ মরে যাবে নাকি?
খাওয়া শেষে খেতে পারবেনা?
ও বসলে আমাদের বেড়ে দেবে কে?
বড়ো ছেলে, বউ আমার কতো বছর পর এলো।ওরা আগে খেয়ে নিক।সবাই একসঙ্গে বসলে খাবার শর্ট পরতে পারে।”

আকাশ ততক্ষণাৎ উঠে দাড়িয়ে বলে,”তোমরা ছোট বাচ্চা নাকি যে হাতে হাতে খাবার খাওয়াতে হবে?হাত নেই তোমাদের?
খাওয়া শেষে কেন খাবে ও?কষ্ট করে সারাদিন নিজে সব রান্না করেছে এ কথা শুনতে?
ও প্রেগনেন্ট একজন মহিলা।ওর সামনে ওকে না দিয়ে খাও কীভাবে তোমরা?রুচিতে বাধেনা?
এতোগুলো মানুষ খাবে শর্ট পরবেনা।আমার বউ খেলেই শেষ হয়ে যাবে সব?”

আকাশ প্রচন্ড রাগ নিয়ে কথা গুলো বলে খাবার রেখে উঠে যায়।
আমি কী বলব,কী করব জানিনা।
ঘরে যেতে লাগলাম আকাশের পিছু পিছু।
শাশুড়িমা কেঁদে কেটে ভাসাচ্ছেন।
উনি কিন্তু জানতেন আকাশ বেশি কথা বলেনা।কিন্তু যখন বলে গা থেকে চামড়া তুলে নেয় একেবারে।

সব দোষ হয়েছে আমার।
একমাত্র আমার জন্যই নাকি আকাশ তার বাড়ির লোকের সঙ্গে অশান্তি করে।
এই দোষ বরাবরই হয়ে আসে আমার।তাই আর আফসোস করিনা।
জানেন,একসময় মনে বড়ো আশা ছিল,আমার নিজের একটা পরিবার হবে।
একত্রে খাবো,গল্প করব।
কিন্তু আশা আমার আশাই থেকে যায়।

ঘরে এসে আকাশকে আর কিছু বলার সাহস হয়না আমার।বললে এবার আমার ওপর রাগ ঝাড়বে।
চুপ করে বসে থাকি আমি।
ছেলেও চুপ করে শুয়েছে।

ও বেলা আর খাওয়া হয়না আমার।
রাতে রান্না করে ঘরে এসেছি সবে।
এমন সময় বড়োজা এলো আমার ঘরে।
বিছানায় বসে বলল,”পেটে কী বেবি তোমার?
মেয়ে নাকি আর একটা ছেলে?”

তখনও এটা জানা হয়নি আমার।তাই বলি,”চেকআপ করাইনি।অনেক আগে করিয়েছিলাম দুবার।
যা বেবিই হোক,সুস্থ হোক।এটাই আমার চাওয়া।”

বড়োজা কিছুপল চুপ থেকে বলে,”আকাশ তোমায় ভীষণ ভালোবাসে তাই না?”

“হ‍্যা।ভালোবাসে বলেই তো সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আমায় বিয়ে করেছে।এতোকাল আমায় নিয়ে সংসার করছে।”

বড়োজা এবার মুখ বাকিয়ে বলে,”তা ভালো।
অধীক ভালোবাসা আবার ভালো লক্ষণ নয়।দেখে শুনে থাকবে।
তুমি গ্রামের মেয়ে।শহরের নিয়মকানুন ওতো বুঝতে পারবেনা।আমি আবার ছোট থেকে শহরে থেকেছি।সবটাই বুঝি।
এখনকার ছেলেরা ঘরে এক বউ রেখে অফিসে গার্লফ্রেন্ড পালে।
তুমি একটু সাবধানেতেই থাকবে।”

এ কথা বলে উনি চলে গেলেন।
আমি ঘাবড়ে গেলাম ভীষণ।
কী বলে গেল ইনি?
একে তো প্রেগনেন্ট আমি,অল্পতেই চিন্তা ও ভয় পেয়ে যাই।তারমাঝে এতোবড়ো কথা বলে গেল।
এটা কী সত্যি হতে পারে?

না না।এসব কী ভাবছি আমি!
আকাশ আমার স্বামী।অন‍্যের কথা শুনে আমি আমার ঘরের স্বামীকে ভুল বুঝতে পারিনা।
এতো দিনের সংসার আমাদের,অন‍্যের কথায় কেন আমি উতলা হই।

নিজের মনকে নিজেই শান্ত করে নিচে এসেছি।
সবাইকে খেতে দিয়েছি।
খাওয়া শেষে আমার আর আকাশের খাবারটা ঘরে নিয়েছে।ছেলে সবার সঙ্গেই খেয়েছে।
আকাশ নিচে আসবে না।

ঘরে খাবার রেখে কী যেন নিতে নিচে এসেছি।শাশুড়ি আর বড়োজা সোফায় বসে গল্প করছেন।
আমি তাদের পেছন দিয়ে কিচেনে গেছি।ওরা খেয়াল করেনি আমায়।
বড়োজার কিছু কথা শুনতে পাই আমি।
শাশুড়িমাকে তিনি বলছেন,”এভাবে খাবার ঘরে নিয়ে খাওয়ার মানে বোঝেন মা?
ওরা আলাদা খেতে চাচ্ছে।তন্নি বোঝাচ্ছে আপনি ওর স্বামীর টাকায় খান।
এতোগুলো বছরেও এটা বুঝতে পারলেন না?
আজ পর্যন্ত কোনো ছেলেকে দেখেছেন বউয়ের জন্য মাকে কথা শোনাতে?
তন্নি আকাশকে বশ করে রেখেছে।
একপ্রকার তাবিজ বলতে পারেন।ছেলে তো আপনার আরো দুটো আছে।
বড়ো ছেলে,ছোট ছেলে কখনো এমন কাজ করেছে বলুন?”

মা বলছে,”ঐ শয়তান মেয়ের এতো সাহস।
আমার ছেলেকে আমার থেকে কেড়ে নেয়।”

“নেয় কী মা।নিয়েই নিয়েছে।
আকাশ বউয়ের কথায় ওঠে-বসে।বউয়ের আচল ধরে ঘোরে।”

মা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমার ভাসুর মানে বড়োজার স্বামী তাকে ডেকে উঠে।
বড়োজা ঘরে গেল।
মা কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে বাথরুমে গেল।

আমি সোফায় গিয়ে বসলাম।
বড়োজাকে যতোটা ভালো ভেবেছিলাম তিনি তার একাংশ ও নয়।
আকাশের কথা বলছেন তিনি।অথচ তার স্বামীকে তিনি এ বাড়ির কারো সঙ্গে সম্পর্কই রাখতে দেননা তেমন।
মাস বাদে ভাসুর কল দিলেই জা পাশে থাকে।ভিডিও কলে কথা হয় বেশি।
ভাসুর নাকি এখানে আসতে চায়।জা আসতে দেয়না।
এটা অবশ‍্য শোনা কথা।ভাসুরের এক বন্ধু বলেছিল আমাদের।
আকাশ রাগ করুক বা ঝগড়া,পরিবারের সকল দায়িত্ব পালন করে সে।
যে মানুষটা সুখে রাখছে,সব দিচ্ছে তার একটু কটু কথা শুনলে কী খুব ক্ষতি হয়?
বিনা কারণে কাউকে কিছু বলার ছেলে নয় আকাশ।
তাদের দোষে তারা কথা শোনে।
এখানে আমারই বা কী করার!

পরদিনের কথা।
আমি আমার পালন করা মুরগিদের খাবার দিচ্ছি এক পাশে বসে বসে।
বড়োজা এসে আমার পাশে বসেন।
এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলে,”এই হাঁস-মুরগি সব তোমার তন্নি?”

“জ্বী হ‍্যা।”

“ডিমটিম দেয় নিশ্চয়।”

“দেয় মোটামুটি।”

বড়োজা উঠে দাড়ালেন এবার।
বললেন,”তুমি তন্নি বড্ড লক্ষি মেয়ে।
কী সুন্দর গুছিয়ে সংসার করো।কতো সবজি,ফলের গাছ করেছ।
পরিবারের অর্ধেক চাহিদা তোমার এসব থেকেই পূরণ হয়ে যায়।
তবুও তুমি কারো মন পেলেনা।
মাকে দেখি সারাটাদিন তোমার নামে নিন্দা করতে।
এতিম বলে কী তোমার সম্মান নেই?
এ সংসারের জন্য এতো করো তুমি।অথচ তোমার কোনো কদর নেই।
মা সবসময় আমার কাছে তোমার নামে নিন্দা করেছে।
কিন্তু এসে দেখছি,তুমি কতো ভালো একটা মেয়ে।”

এক মূহুর্ত্তের জন্য সেদিন আমার ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল।

মায়ের সঙ্গে দেখছি বড়োজার খুবই মিল।
সারাক্ষণ গল্প করে তারা।
আগে থেকেই বড়োজার প্রতি মায়ের একটু বেশিই টান ছিল।বড়ো ছেলে বউ,বড়ো ঘরের মেয়ে,বড়ো চাকরি করে।
সবমিলিয়ে ভীষণ প্রিয় তিনি।
আমি এতো করেও নাম পাইনা।

জা শাশুড়িকে নিয়ে শপিং করতে যায়।
কোনোদিন দামি শাড়ি,সর্ণের আংটি।
মা সেই আংটি সারা বাড়ি দেখায়।
এমন আংটি আমি চাইলে আমার একার টাকায় তাকে বছরে দুটো করে কিনে দিতে পারতাম।
নিজের টুকিটাকি আয় করা অর্থ ও আমি সংসারের পেছনে ভেঙেছি।
মাস কাবারির অর্ধেক টাকা বেচে গেছে।
সেই টাকা কিন্তু নিয়েছে মা ই।
কোনোবার তার এ‍্যাকাউন্টে রেখেছে।কখনো বা বড়ো ছেলের ঘরে সন্তানদের জন্য এটা সেটা কিনে পাঠিয়েছি।
এ সবটাই করেছেন তিনি আমার অগচরে।তবে জানি আমি সবই।
সংসার যেহুতু করছি,সংসারের মাপ কাঠিও আমার জানা আছে।

ইদানিং শাশুড়িমা আমায় শুনিয়ে শুনিয়ে বড়োজার বাবার বাড়ির প্রতিপত্তির গল্প শোনায়।
এ বাড়ির বেশিরভাগ ফার্নিচার নাকি তার বাবার বাড়ি থেকে দেওয়া।
আমার ঘরের সব ফার্নিচার কিন্তু আমি ও আকাশ নিজেই করেছি।
ওদের কিছু আমরা ব‍্যবহার করিনি।
তাহলে এ কথা আমায় শোনানোর কারণ?

মায়ের ব‍্যবহার দিনকে দিন খারাপের দিকে যায়।
আমায় তিনি সহ‍্যই করতে পারেনা।দু-চোখের বিষ আমি।
ছেলে হওয়ার পর তার অত‍্যাচার কমেছিল অনেকটাই।এবার তা বেড়ে দ্বিগুণ।
বাচ্চা পেটে নিয়ে আমায় গাধার খাটুনি খাটায়।
সবাই পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকে।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

আকাশকে এসব আমি খুব কমই জানাই।
সারাদিন কাজ করে মানুষটা।
অফিসের প্রেশার শেষে আবার বাড়ির প্রেশার দেওয়া যায় নাকি!
সে নিজে দু-একবার এসব দেখেছেও বটে।কিছু বলেনি তেমন।
আকাশ নিজেই বিরক্ত ভীষণ।
একটা ছেলে মানুষ হয়ে কতো আর মহিলাদের সঙ্গে ঝগড়া করা যায়?
আমায় শুধু বলে সেভ হয়ে চলতে।
আলাদা ঘর নেবে।একটা প্রোজেক্ট ওর হাতে।সেটা শেষ হলেই ঘর নেবে অন‍্যত্র।কে জানত,ওর প্রজেক্ট শেষ হওয়ার আগে আমার জীবনটাই শেষ হয়ে যাবে।

এরমাঝে আমার মেয়ে পেটের বিষয়টি জানতে পারি।
জা শাশুড়িকে বলে আমি পাপি,আমার মন নষ্ট তাই মেয়ে হচ্ছে।
ফ্রেশ মন থাকলে ছেলে হতো আবারো।

বিশ্বাস করুন,এ কথা জীবনে শুনিনি আমি।
কন‍্যা সন্তান হলো সৃষ্টিকর্তার রহমত।
যে ঘরে কন‍্যা সন্তান থাকে,সৃষ্টিকর্তা সে ঘরে বরকত দেয়।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।কোনো গ্রুপে বা পেজে আর গল্প দেওয়া হবেনা।
সম্পূর্ণ গল্প পরতে নাদিয়া আফরিন পেজটি ফলো করুন।

জা’য়ের কথায় সেদিন তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম আমি।আমার সন্তান নিয়ে কোনো প্রকার বাজে কথা আমি শুনব না।
জায়ের ও কিন্তু এক মেয়ে।
আমি যখন এ কথা বলি,তিনি তখন চুপ।
সেদিন ইচ্ছে মতো জা’কে কথা শুনিয়েছিলাম।
সেই রাগ তিনি দেখিয়েছেন দুদিন না খেয়ে।তার ছোট বাচ্চাদের মেরে গালি দিয়ে।

বড়োজা যে শুধু শাশুড়ির কান ভাঙিয়েছে এমন না।
আমার কাছেও বলেছে।
গিবত করেছে শাশুড়ির নামে।ততদিনে আমি মানুষ চিনে গেছি।
একদিন আমি শাশুড়িকে ডেকে বলি সবটা।
জা তখন সামনেই ছিল।
তিনি সব অস্বীকার করে।দোষ উল্টে আমার ঘাড়েই দেয়।
আমিই নাকি তাকে সহ‍্য করতে পারছিনা।মায়ের ভালো দেখতে পারিনা।
মা জায়ের সঙ্গে একটু মিলেমিশে থাকছে তাই নাকি আমি হিংসা করছি।
শাশুড়িমা জায়ের কথাই বিশ্বাস করে নেয়।
প্রথম থেকেই তিনি আমায় পছন্দ করতেন না।এবার একজন সাপোর্টার পেয়েছে।
জা দিয়েছে ঢোলের বারি,শাশুড়ি সেই তালে নাচে।

মানসিক ভাবে আমার অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে লাগে।ঠিক মতো খেতে পারিনা।সারাক্ষণ অশান্তি অনুভব হয়।
ঘরে শান্তি না থাকলে কী আর সেই ঘরে মন বসে!

প্রেগনেন্সির এই কঠিন সময়ে আমি একা হয়ে যাই ভীষণ।
খুব কাঁদতাম আড়ালে।মন খারাপ থেকেছে।
ছেলের প্রতি অনিহা হয়েছে।
আকাশের সঙ্গে ঝামেলা হতো সামান্য বিষয় নিয়ে।
দুজনের মন-মেজাজ কারোরই ভালো থাকত না।
কেউ কারো কথা সহ‍্য করতে পারতামনা।
এক কথায়- দু কথায় ঝগড়া হতো প্রচুর।
রাগের বসে দু-বার আকাশ আমার গায়ে হাত তোলে।ওকে আমি ধাক্কা দিয়ে হাত কেঁটে দিয়েছি।
এককথায় যুদ্ধক্ষেত্র।
স্বামী-স্ত্রী আমরাই নিজেদের শত্রু।এক ঘরে থাকা পর্যন্ত বন্ধ করে দেই।ছেলে নিয়ে আলাদা ঘুমাই আমি।
দুজনের মাঝে বিশাল এক প্রাচীর তৈরি হয়।
টানা ছদিন একে-অন‍্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থেকেছি আমরা।
এরপর কথা হলেও খুব কম।
যেই আমরা নিজেদের না দেখলে থাকতে পারতামনা,তারা হলাম একে-অন‍্যের চোখের বিষ।
আকাশ কাজ নিয়ে ব‍্যস্ত থাকে।ঠিক মতো বাড়ি ফেরে না।
আমি সংসার নিয়ে ব‍্যস্ত।
আমার প্রতিনিয়ত মনে হতে লাগে আকাশ আমায় ভালোবাসেনা আমি এতিম বলে।
আকাশের মনে হয় আমি তাকে অবহেলা করি।
এভাবেই চলছিল সময়।
সময় বললে ভুল হবে।
অসময় হবে।

মাঝখান থেকে আনন্দে মগ্ন ছিল বড়োজা।
খাবার টেবিলে বসে খাওয়ার সময় ঝগড়া হতো প্রায়।
আকাশ বাড়িতে খাওয়াই বন্ধ করে দেয়।

আমাদের অশান্তির সুযোগ নিয়ে বড়োজা আমার কানে সর্বক্ষণ আকাশের বিষয়ে নেগেটিভ কথা বলত।যেমন,আকাশের হয়ত অন‍্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে।
তাই সে ঘরের বউকে ভালোবাসেনা।এতোদিন লোক দেখানো ভালোবাসা ছিল।
রাতে বাড়ি ফেরেনা কারণ সেই মেয়ের কাছে যায়।
বউকে সহ ছেলেকে অবহেলা করছে সে।এর মানে স্পষ্ট আকাশ পরনারীতে আসক্ত।
আরো অনেক কথা।

তখন আমি এমনিতেই আকাশের প্রতি রাগ। এসব শুনে আরো জেদ হয়েছে আমার।
তখন বুঝিনি এরা আমার কতো বড়ো ক্ষতি করছে।

বড়োজা শাশুড়িমায়ের সাহায্য নিয়ে আকাশকে ইমোশনালি ভুল বোঝায়।
যেমন, আমি আকাশকে নয় তার টাকাকে ভালোবাসি।এখন টাকার চাহিদা শেষ তাই আর স্বামী ভালো লাগছেনা।
নাহলে কোনো স্ত্রী এতো রুড ব‍্যবহার করতে পারেনা।
আকাশ দিনরাত আমাদের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে আর আমি তাকে ঠকাচ্ছি।

আকাশও এসব কথা বিশ্বাস করে নেয়।দুজনের মাঝের ফাটল এবার গভীর থেকে গভীর হয়।
তবুও কেউ কাউকে ছাড়ছিলাম না আমরা।
আমাদের মাঝের একটা বাধন ছিল আমাদের সন্তান।
যার মুখের দিকে তাকিয়ে দুজনে বি*ষ খেয়ে যেন বি*ষ হজম করছিলাম।
এবার বড়োজার নজর পড়ে আমার ছেলের ওপর।

আলিফকেও সে হিংসা করত।
উনার কূমন্ত্রণায় রক্ষা পায়নি আমার ছোট ছেলেটাও।

একদিন বিকেলে ছেলের জন্য নুডলস রান্না করছি।একটা মাত্র নুডলসের প‍্যাকেট ছিল সেদিন।
আমার ছেলে আবার প্রায় রাতে নুডলস খায়।এজন‍্য ঘরে রাখি সবসময়।
তো ছেলে বায়না ধরেছে দেখে রান্না করে দিয়েছি।
ও স‍্যুপ নুডলস খায়।ডিম বা সবজি দিয়ে খাওয়া বোঝেনা।
সে মতোই রান্না করছি আমি।
বড়োজা একবার দেখে গেল বিষয়টি।
মিনিট দুয়েক পর তার মেয়ে আসে।তাকেও নুডলস বানিয়ে দিতে বলে।
এতোকিছু হলেও বাচ্চাদের প্রতি আমার স্নেহ ছিল।ওরা নিষ্পাপ।

আমি মেয়েটাকে কাছে টেনে বলি,”মা আজ ঘরে নুডলস নেই আর।
একটা ছিল ভাইকে করে দিয়েছি।তুমি আগে বললে তোমায় রান্না করে দিতাম।ভাইয়ে কিছু একটা বুঝিয়ে নিতাম।
কিন্তু এখন ও খেতে শুরু করেছে।
এখন নিলে কাঁদবে ভীষণ।এছাড়াও তুমি তো স‍্যুপ নুডলস খাওনা।
তোমায় আমি কাল রান্না করে দেব টেস্টি করে।”

মেয়েটা কিছু বলল না।
হেঁটে হেঁটে আমার ছেলের কাছে গেল।
আলিফ তখন চেয়ারে বসে চামচ দিয়ে গরম নুডলস খাচ্ছে।
মেয়েটা হঠাৎ নুডলসের বাটি উল্টে দিল আমার ছেলের গায়ে।
ইচ্ছে করেই করল এ কাজ।আমি চোখের সামনে দেখলাম।
ছেলে আমার গগনবিদারী চিৎকার।
অর্ধেক হাত-হাটু প্রায় পুড়ে গেছে।বাচ্চাদের চামড়া অনেক সেনসিটিভ।

মাথায় রক্ত চরে গেল আমার।
মেয়েটাকে প্রচন্ড জোরে ধমক দিলাম।ও যথেষ্ট বড়ো।
কেন করল এই কাজ!

ধমক শুনে মেয়েটা ঘরের বাইরে তাকায়।
আমি দৌড়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে পেছনে তাকাতেই দেখি বড়োজা দরজার আড়ালে দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে আর মেয়েছে ইশারা করছে।

(এই পর্ব তুলনামূলক বড়ো দিয়েছি।
সুতরাং এ পর্ব রিয়েক্ট বেশি চায়।আপনাদের জন্য
কষ্ট করে লিখছি।একটু সদয় হবেন আমার প্রতি।)

এটা আমার একটি ইবুক,,,,,আমার তিনমাস বয়সি মেয়েটাকে মেঝেতে শোয়ালেন।দুইহাত দিয়ে গলা চেপে ধরলেন।
আমি পাগলের মতো করতে লাগলাম।

আমার ছোট্ট মেয়েটার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।
কান্না ও করতে পারছিল না।
মা হয়ে কীভাবে আরেক মায়ের কোল খালি
করছে এই মহিলা।
আমি চেচাতে চেষ্টা করলাম।কিন্তু পারলাম না।মুখ যে বাধা আমার।ছটফটাতে লাগলাম।
ছোট্ট শিশুটার ফর্সা মুখশ্রি লাল টকটকে হয়ে গেল

ছোট্ট ছোট্ট হাত-পা গুলো বারবার নাড়াচ্ছিলো।
একসময় নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেল চারপাশ।
অবচেতন হয়ে পড়ে গেলাম আমি।

বৃষ্টির পানির ফোটায় জ্ঞান ফিরলো আমার।এভাবে য়কতোক্ষণ ছিলাম জানিনা।মরা মেয়ে সহ আমাকে এখানে ফেলে রেখে গেছে অমানুষিক গুলো।
চোখ মেলতেই দেখি ধুধু অন্ধকার মাঠের মধ্যে পড়ে আছি আমি।পাশেই আমার মৃত মেয়ে পড়ে আছে।
মেয়েকে জড়িয়ে ধরলাম।

হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাচ্ছে রাজিয়া।
আজ যেন তার খুব সুখের দিন।
নিজ হাতে মেয়েকে দাফন করলো।
বৃষ্টিতে ঘুরে ঘুরে ভিজতে লাগলো।

এরপর সকাল হলো।এলাকা বাসি রাজিয়াকে পাগল অবস্থায় পেলো।বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করতেই মাতোয়ারা বেগম বললো,’মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে নিজের হাতেই নিজের বাচ্চাকে মেরে কবর দিয়েছে রাজিয়া।
গ্রাম বাসীরা আক্ষেপ করলো।
রাতারাতি সুস্থ মেয়েটার এ কী হয়ে গেল।
বিষয়টি নিয়ে তেমন মাথা ঘামালেন না কেউই।নিজের খেয়ে কে ই বা পরের মোষ তাড়াবে।

সাতদিন পর বাড়ি ফিরলো রায়হান।
পাগলী রাজিয়া এতোদিন শুধু মেয়ের কবরের কাছেই ছিল।পাশের বাড়ির সেই ভাবী সময় করে খাইয়ে দিয়ে যেতো তাকে।
মাতোয়ারা বেগম বা তার বাড়ির কেউ খোঁজ ও নিতো না রাজিয়ার।

রায়হান এসে উঠোনে দাড়াতেই কোথা থেকে যেন ছুটে এলো রাজিয়া।
স্বামীকে জড়িয়ে ধরতেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো তাকে।
গায়ের পোশাক হাত দিয়ে ঝাড়তে লাগলো।
রাজিয়া তার নিজের পোশাকের দিকে তাকালো।
এতো নোংরা,গন্ধ যুক্ত পোশাক দেখেই হয়ত রায়হান সরিয়ে দিচ্ছে তাকে।
সামান্য হাসলো রাজিয়া।
দৌড়ে কলপারে গেলো।রায়হান রাজিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।মাতোয়ারা বেগম ছেলেকে ঘরে নিয়ে গেল।

#চলবে।