বড়োজা পর্ব-১৩

0
503

#বড়োজা
#Nadia_Afrin

১৩
আকাশ ও তার পরিবারের অত‍্যাচার দিনকে দিন বেড়েই চলছিল।
মানুষটা আমার সঙ্গে দু-দন্ড কথাটাও বলেনি।
ছেলেটার প্রতিও কঠিন থেকে কঠিন হয়েছে।
দেখে মনে হয়না এটা ওর সন্তান।
কাছে গেলে গালি দিয়ে,মে*রে তাড়িয়ে দেয়।
বাচ্চা আমার সহ‍্য করতে না পেরে হাউমাউ করে আমায় ধরে কাঁদে।
মা হয়ে সহ‍্য করতে পারিনা আমি।
আকাশের সঙ্গে ঝগড়া করি।না খেয়ে থাকি ঐ অবস্থাতেই।
পরিস্থিতি এমন দিকে চলে যায়,আমি সু*ই*সাইড চিন্তা পর্যন্ত করি। পেটের সন্তানের চিন্তা করে আর ছেলের চিন্তায় মাথা ঝাড়ি।

যেই আকাশ,আমার ছেলে পেটে থাকা কালিন গোসলের কাপড় পর্যন্ত ধুতে দেয়নি।
সে এবারে আমাকে সব কাজ করতে বলে।
শুধু বাড়ির কাজ নয়।ওর ভাবি,তার ছেলে-মেয়ে সহ সবার কাজ করায়।
দুঃখে আমার গলার স্বর ভেঙে আসে।
কোন পাপের শাস্তি আমি পাচ্ছি?
কী অন‍্যায় আমার ও আমার ছেলের?

আকাশ ও রিঙ্কির সম্পর্ক যেন গভীর থেকে গভীর হচ্ছে।দুজনা ঘুরতে যায়।রেস্টুরেন্টে খেতে যায়।ওদিকে বাড়িতে আমি ঠিক মতো খাবারই পাইনা।
ছেলে এঠো-বাসি খেয়ে দিন পার করে।
আকাশ শাড়ি কিনে আনে দামি।ভাবি আমায় দেবে।
কিন্তু না।সে দেয় রিঙ্কিকে।কারণ জিজ্ঞেস করলে বলে,”আমার টাকা আমি যা ইচ্ছে কিনতে পারি,যাকে ইচ্ছে দিতে পারি।
এতো দিন নিয়ে নিয়ে তোমার লোভ হয়েছে।তাই সহ‍্য করতে পারোনা।
আমার র*ক্ত পানি করা টাকা সব তুমি আর তোমার ছেলে ধ্বংস করেছো।”

ওর একথা শুনে আমি নির্বাক ছিলাম।
জবাব দেওয়ার ভাষা ছিল না।

আমার শখের গহনা গুলো ধীরে ধীরে কমতে লাগে।কখনো দেখি শাশুড়ির গলায় আমার চেইন,জা’য়ের হাতে আমার চুড়ি।
প্রতিবাদ করলে আকাশ গায়ে হাত তোলে আমার।
ওর মা,ভাবির আমার সব কিছুর ওপর নাকি অধিকার আছে।তাই যে যার মতো আলমারি খুলে নিয়ে যাই।
আমি শুধু দেখি।সত‍্যিই তো।এগুলো আমার টাকার নয়।আমার টাকা যা ছিল এদের খাইয়ে শেষ করেছি।
আমার মতো ভুল করে বাংলার প্রতিটি মেয়ে।নিজের শখ আল্লাদকে বিসর্জন দিয়ে স্বামীর সংসার উন্নত করার চেষ্টা করে।
শখের বয়সে শখের জিনিস না করে দুটো টাকা জমায়,ঘরের জিনিস করে,স্বামীর আবদার পূরণ করে।
দিন শেষে তারা হয় শূন্য।না থাকে নিজস্ব কিছু,না কোনো সম্পদ!

একটা বয়সে এসে আবার সেই মানুষ গুলোই আপনার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।
চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে আপনার কিচ্ছু নেই।আপনি আগাছা।

আমার ছেলেকে জন্মের পর দেখে দেওয়া আকাশের সেই আংটি ছিল ভীষণ প্রিয়।
খুব বেশি পড়িনি হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে।
দেবরের বিয়ের দিন দেখি সেই আংটি বড়োজার হাতে।
প্রশ্ন করলে জানতে পারি আকাশ নাকি এটা উনাকে দিয়েছে।

এমন ছোট যন্ত্রণাময় ঘটনা ঘটেছিল আমার সঙ্গে প্রতিনিয়ত।
আমি আকাশের সঙ্গে প্রচন্ড ভালো ব‍্যবহার করেছি।বিনিময়ে সে আমায় আঘাত করেছে।কটু কথা শুনিয়েছে।
ঐ বাড়িতে আমি কাজের লোকের মতো হয়ে ছিলাম।
যে যা পেরেছে গালি দিয়েছে।
বড়োজার ব‍্যবহার দিনে দিনে নিকৃষ্ট হয়েছে।
নিজের অবিবাহিত বোনকে বাড়িতে এনে রাখতো।আকাশের সামনে বিভিন্ন সাজ পোশাকে প্রেজেন্ট করতো।
ওদিকে আমি দাসি হয়ে পড়ে রইলাম।
নিজের ঘর,নিজের সংসারে আমার সামান্য মূল‍্য ও রইলো না।
চোখের সামনে আমার ভালোবাসার মানুষটা বদলে গেল।
তিত্বীয় ব‍্যক্তির আগমণ আমার জীবনটাকে তছনছ করে দিল।
বড়োজা পেরেছিল নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে।

মাঝে মাঝে মনে হয় কোথাও চলে যাই।কিন্তু যাওয়ার জায়গা নেই আমার।
ছেলে নিয়ে ওভাবেই পড়ে থাকি।ভরা মাস নিয়ে খাটতে খাটতে আমার অর্ধেক শরীর শেষ।খাই না খাই কারো দেখার বিষয় নেই।
ঘর থেকে এসি খুলে নিয়ে গেছে শাশুড়ি।
আকাশ আর আমার সঙ্গে থাকেনা।
প্রতিবেশি ভাবির কাছে যাই।গিয়েই কাঁদি।সমাধান চাই।
তিনি বলেন,”সবটা হাতের বাইরে চলে গেছে তন্নি।
আকাশ ভাই ছিল ওবাড়িতে তোমার একমাত্র সুভাকাঙ্খি।এবার সেও নেই।
তুমি বুঝিয়েছো,আবেগ দেখিয়ে মন গলানোর চেষ্টা করেছো,সন্তানের দোহাই দিয়েছো।তবুও যেহেতু কাজের কাজ হলো না,আর হয়ত সম্ভব নয়।
এসব পরিস্থিতিতে একজন বাড়ির লোক প্রয়োজন হয়।যিনি তোমার অবিভাবক হয়ে এসে এদের সঙ্গে কথা বলবে,বোঝাবে।প্রয়োজনে শাসিয়ে যাবে।তাহলে য‍দি ওদের মনে ভয় ঢুকে।
কিছুটা হলেও যেন সদয় হয় তোমার প্রতি।
নরম মাটি ও নড়বড়ে গোড়ার গাছ পেয়ে ওরা যা ইচ্ছে করছে।
তুমি তোমার ফুফাতো সেই ভাই-বোনদের সঙ্গে যোগাযোগ করো।
ছোট থেকে ওরা তোমায় পালন করেছে।সামান‍্য মায়া হলেও তো থাকার কথা।
এতোদিন কোনো যোগাযোগ নেই,এখন গেলে নিশ্চয় অবহেলা করবেনা।
একটু সাহায্য করতেই পারে।
অন্তত দুটো কথা তো বলতে পারে।তুমি তাদের অনুরোধ করে দেখতে পারো।
আমি পরের ঘরের বউ।এর চেয়ে বেশি কিছু করার সাধ‍্য আমার নেই।
আমি পারি দুটো পরামর্শ দিতে।কাজে করে দেখাতে পারিনা।”

ভাবির কথায় মনে আমার একটু হলেও আশার আলো জেগেছিল সেদিন।
মেয়ে পেটে আসার পর বড়ো ভাইদের দেখার খুব শখ ছিল আমার।এতোদিন সাহস হয়ে ওঠেনি তাই যাইনি।
মানুষের খাওয়ার ইচ্ছে জাগে।আমার দেখার।

ছেলেকে নিয়ে সেদিন বিকেলেই বেড়িয়ে যাই গ্রামের উদ্দেশ্যে।
অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।
বাড়িটা সেই আগের মতোই আছে।
শুধু চারপাশ বদলেছে।
দরজায় ধাক্কা দেই।বড়ো ভাবির সেই চিরচেনা ঝাঝালো কন্ঠস্বর।
কে’ কে বলতে বলতে আসছে তিনি।

একমূহূর্তের জন্য মনে আমার অজানা ভয় কাজ করে।
ভাবি দরজা খোলে।
আমায় দেখে তাকিয়ে থাকে সুক্ষ চোখে।
হয়ত চিনতে পারেনি প্রথমে।চিনবেই বা কী করে!
ওদের অত‍্যাচার,মানসিক নির্যাতনে ভুগে ভুগে শরীর শেষ প্রায় আমার।কালো হয়ে গেছি।

আমি বলি,”ভাবি ভালো আছেন?
আমি তন্নি।”

পরিচয় দিতেই তিনি কপাল কুচকায়।মুখ ছোট করে।
আমি আশায় খুশি হয়নি বোঝা যাচ্ছে।

তবুও আমি বাইরে দাড়িয়ে শুকনো হাসি।
একটাবার নিজ মুখে ভেতরেও আসতে বলেনা আমায়।শুধু দরজা ছেড়ে দাড়ায়।
অপমান বোধ করলেও বাড়িতে প্রবেশ করি।আমি নিরুপায়।
বাড়িতে যাই।ঘরে চেয়ার থাকা স্বত্ত্বেও আমায় মাটিতে চট পেতে বসতে দেয়।
পেট নিয়ে নিচু হয়ে বসতে প্রায় দম বেড়িয়ে আসে।
কতোদিন পর কতো দূর থেকে এসেছি আমি।
এক গ্লাস পানিও সাধেনা।
আমি সঙ্গে করে আমার পালন করা কিছু মুরগির ডিম,হাঁস-মুরগি সবজি সহ কেজি দুয়েক মিষ্টি ও অল্প করে ফল এনেছি।সেগুলো ভাবির হাতে দেই।
ঘরে চলে যায় ভাবি।
আমি আগাছার মতো বাইরে বসে থাকি।

সময় চলে যায়,সে আসেনা।
বাধ‍্য হয়ে নিজেই ভাবিকে ডেকে বলি,”বড়োভাই,ছোটোভাই কোথায় ভাবি?
আপা কী শশুর বাড়ি?”

তিনি আপেল খেতে খেতে বেড়িয়ে এসে বলে,”তোর ভাইয়েরা কাজে গেছে।আপা শশুর বাড়িতে।
ছোট বউ বাপের বাড়ি।
কী দরকারে এসেছিস হঠাৎ?
তাড়াতাড়ি বলে ফেল।”

আমি আমতা আমতা করে বলি,”ভাই এলেই বলি।ভাইকে বেশি দরকার।”

ভাবি ‘ঠিক আছে’ বলে ঘরে চলে যায়।
কোনো আগ্রহ দেখায় না আমার প্রতি।
সম্পূর্ণ গল্পটি আমার পেইজে দেওয়া আছে।নাদিয়া আফরিন ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন আমার পেইজ।
ফলো দিয়ে সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ুন।
ফলো না করলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।

এদিকে ছেলের মুখটা শুকিয়ে আছে।এতোদূর এসেছে,ক্ষিদে পেয়েছে হয়ত।
হাসফাস করছে।
আমার নিজেরও ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে।
চক্ষুলজ্জার ভয়ে চুপ করে আছি।

মিনিট দশেক পার হয় ভাই আসেনা।ভাবি ঘর থেকে বেরোয় না।
নিজেকে কেমন যেন লাগছিল আমার।

আমি নিজেই ভাবিকে বলি,”এক গ্লাস পানি হবে ভাবি?
কড়া রোদে এসেছি,পিপাসা পেয়েছে।”

বিশ্বাস করুন,উনি শুধু আমায় ঐ একগ্লাস পানিই দেয়।
পানি টুকু ছেলেকে খাইয়ে একটু শান্ত করে বলি,”বাড়ি যেয়ে খাবে।ধৈয‍্য ধরে বসো।একটু পরেই বাড়ি চলে যাবো।”

আসার আগে বাচ্চাটা আমার কতো খুশি ছিল।
মামার বাড়ি যাবে।মজার হাড়ি।
মজার হাড়ি না ছাই।মুখের কথা অব্দি বলছে না এরা।
পুরো গল্পটি নাদিয়া আফরিন পেইজে দেওয়া আছে।ফলো দিয়ে পড়েনিন।
নাহলে হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আমার লেখা সব গল্প পাবেন আমার পেইজে।অন‍্য গ্রুপ বা পেজে আর গল্পটি পাবেন না।তাই সম্পূর্ণ গল্প পড়তে নাদিয়া আফরিন পেজটি ফলো করুন।

ভাই আসে প্রায় আধঘন্টা পর।
ছেলে নিয়ে বসে আছি বাইরে।
ভাই এসে আমায় দেখে বলে,”তুই?
কখন এলি?কেন এলি?
কোনো খোঁজ ছিল না তোর।ভেবেছিলাম ম*রে টরে গেছিস।পালিয়ে নিয়ে তোকে মে*রে ফেলেছে শহরের ছেলে।
এখন দেখছি বেঁচে আছিস।”

ভাইয়ের মুখে একথা শুনে চোখ পানিতে ভরে ওঠে।
মাথা নিচু করে বসে রই।

ভাই চেয়ারে বসে বলে,”এটা তোর ছেলে বুঝি?”

আমি মাথা ঝাকাই।

বড়ো ভাই বলে,”তা কী দরকারে এলি?এতোদিন তো কোনো খোঁজ ছিল না।হঠাৎ কেন উদয় হলি আমার কাছে।”

আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বলি,”ভাই আমার বিয়ে হয়েছে বড়ো ঘরে।
আমার স্বামী ভালো ব‍্যবসায়ী।
প্রতিষ্ঠিত পরিবার।
এতোকাল সংসারে আমি একাই থেকেছি।সুখে ভরপুর ছিলাম আমি আমার স্বামীকে নিয়ে।
বড়োজা আছে একটা।তিনি তার স্বামী সন্তান নিয়ে শহরে থেকেছে।
এবার দেবরের বিয়ে উপলক্ষ্যে এসেছে।
এসেছে থেকে আমার সংসারি অশান্তি করছে।শাশুড়ির কান ভাঙিয়ে আমার বিরুদ্ধে উস্কেছে।
স্বামীর কাছে গিবত করে করে মন বিষিয়ে দিয়েছে।
ছেলে নিয়ে ওখানে থাকাটা ভীষণ চাপের হয়ে গেছে আমার।
প্রতিনিয়ত অত‍্যাচার করছে আমায়।
গাল-মন্দ মার তো আছেই।
আমার শরীর অসুস্থ।তবুও ওরা আমার প্রতি জুলুম করছে।
আমার স্বামী আকাশ আগে এমন ছিল না।ওর বড়ো ভাবির প্ররোচনায় পড়ে এমন হয়ে গেছে।
আমার বড়োজা তার বোনের সঙ্গে আকাশের কিছু করার চেষ্টা করছে।কারণ আকাশ প্রতিষ্ঠিত।ব‍্যবসায়িক দিক থেকে উন্নত।
দিনরাত খাটিয়ে আমার এই অবস্থা করে ছেড়েছে।
আমি বহু চেষ্টা করেছি,তবে ব‍্যর্থ।
তুমি তো জানোই ভাই,দুনিয়াতে আমার কেউ নেই তোমরা ছাড়া।
ছোট থেকে আমায় মানুষ করেছো।
আমার পারিবারিক যা অবস্থা তাতে একজনকে দরকার আমার পাশে দাড়ানোর।
আমার পক্ষ হয়ে দুটো কথা বলা প্রয়োজন।
আমার সংসারটা বাঁচাতে সাহায্য করো ভাই।
নাহলে ছেলে নিয়ে আমার পানিতে ডু*বে মরতে হবে।”

বড়োভাই কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে বলে,”তুই কী আমায় তোর স্বামীর বাড়ি যেতে বলছিস?”

“হ‍্যা ভাই।দয়া করে চলো।এমনো হতে পারে,একজন মানুষ নিয়ে গেলে ওদের মনে ভয় ঢুকলো।
আমার সংসার আমি ফিরে পেলাম।
একান্ত বাধ‍্য হয়ে এসেছি আমি ভাই।
কোনো কূলকিনারা নেই আমার।বলতে পারো মাঝ নদীতে ভাসছি।
খড়কুটো হয়ে তুমি আমায় সাহায্য করো ভাই।
এটা আমার ভবিষ্যতের বিষয়।
আমার একটা ছেলে আছে।এমতাবস্থায় আমার ভালো মন্দ কিছু হলে ছেলেটা এতিম হবে।
পরিস্থিতি যেমন,তাতে ওরা আমার ছেলেকে বের পর্যন্ত করে দিতে পারে।
সংসার,বউ-বাচ্চার প্রতি আকাশের আর কোনো চিন্তা নেই।
সে এখন নতুন জীবন শুরু করতে চায়।নতুনভাবে বাঁচতে চায়।
আমাদের ছেড়ে দিয়ে ঐ মেয়ের সঙ্গে থাকতে চায়।”

ভাই বলে,”যেতে পারি তবে তুই তোর কানের দুল জোড়া আমায় দিলে আমি যাবো।
তোর হয়ে কথা বলব।
শাসিয়ে,বুঝিয়ে সব ঠিক করে দিয়ে আসতে পারব।
তুই রাজি কিনা বল!”

ভাইয়ের কথায় আমার মস্তিষ্ক শূন্য লেগেছিল সেদিন।
ভাই বলে ডাকি যারে,সেও টাকা ছাড়া নড়তে চায়না।
অগত‍্যা নিজের সংসার রক্ষার দায়ে গা থেকে দুল খুলে ভাবির হাতে দেই।
ঐ দিনই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে আসি আমি।
এদের বিশ্বাস নেই।পরবর্তীতে নাও আসতে পারে।
এসেই ভাইকে নাস্তা পানি দিয়ে বসিয়েছি শাশুড়ির ঘরে।
আকাশ তখন বাড়িতেই ছিল।
বড়োজাও ঘরে ঢুকলো দেখলাম।
আমি আর যাইনি।ছেলেকে খাইয়ে নিজে একটু খেয়ে নিলাম।
ওঘরে কী কথা হয়েছে আমি জানিনা।
মিনিট বিশেক পর ভাই বাইরে আসে।হাতে বেশ কিছু টাকা।মুখে হাসি।
এসেই আমার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলে,”দোষ তো তোরই।জামাই ভাই ভালো আছে।
আমায় একটা কাজের ব‍্যবস্থা করে দিয়েছে।
এ‍্যাডভান্স টাকাটা তোর জা দিয়েছে।
তোর জা মানুষ নয় রে।মহামানুষ।
গরীবের প্রতি তার কী দয়া!
ওরাই নাকি তোকে অত‍্যাচার করে!
মিথ‍্যেবাদি।মায়ের মতো হয়েছিস।
তুই ই তো তোর ভালো বড়োজার সঙ্গে ঝগড়া করে বেড়াস।
মিলেমিশে থাকতে পারিস না?
কার সঙ্গে নাকি অবৈধ সম্পর্ক করেছিস এজন্য জামাই এমন করে।
বুঝিয়েছি তোর স্বামীকে।তুই ভালো হয়ে যা।
কাজ-কাম একটু করতেই হয়।
আর তোর বড়োজার বোন মেয়েটাও ভালো।
আমায় নাকি গ্রামে ঘর তুলে দেবে বিনা টাকায়।
ওমন মেয়ে লাখে একটা হয়।
তুই সংসার করে যা।
পারলে ওদের সঙ্গে মিল থেকে গ্রামে এই ভাইটার জন্য কিছু দিস।
অন্তত চু*রি করে হলেও মাস শেষে কিছু টাকা দিস আমায়।
আমি জানতাম না তোর এতো বড়ো ঘরে বিয়ে হয়েছে।এতো ভালো মানুষ।
জানলে কবেই তোকে খুঁজে বের করতাম।
জামাই নিয়ে আমাদের বাড়ি যাস।যাওয়ার সময় তোদের ঘরের মতো একটা সোফা আনবি।
কেমন!
আজ আমি আসি।”

বড়োভাই খুশ মেজাজে ঘর ছাড়ে।
আমি ঠায় দাড়িয়ে থাকি।চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
বড়োজা আচল ঘুরিয়ে এগিয়ে এসে বলে,”যাক কুকুরটা বিদায় হলো।
আমাদের সঙ্গে লড়তে একটা লেলি কুকুর এনেছে গ্রাম থেকে।
টাকার গন্ধ পেয়ে কুকুর আমাদের পায়ের জুতো হয়ে গেছে।”

সেদিন সারারাত কেঁদেছি আমি।
বাড়ি ফিরে বড়োভাই কল দিয়েছিল।
রিসিভ করে বলেছি, মানুষের জাত হলে যেন আমায় কল না দেয় আর।

আমার এই কঠিন পরিস্থিতিতে বন্ধু হয়ে এসেছিল আমার ছোটজা।
ওদের বিয়ের বিশদিন পর ওকে উঠিয়ে আনা হয়।
সেদিনও আমাকে নিয়ে যায়নি।
আমার বদলে আকাশের সঙ্গে রিঙ্কি গিয়েছিল।
আমার ছেলেকে পর্যন্ত নেয়নি।ছেলে যেতে সে কী কান্না!
আকাশ ছেলেকে থাপ্পড় মেরে চলে গেছিলো সেদিন।

ওরা বাড়ি ফেরার পর শুনেছিলাম আকাশকে নাকি আমার ছোটজা ও তার মা-বাবা বেশ কথা শুনিয়েছে আমায় আর ছেলেকে না নেওয়ায়।
তবে আমি যা বুঝেছি,কারণ শুধু এটা নয়।
বাড়িতে যা ঢোলাঢলি করে এরা।ওখানে গিয়েও মনে হয় একই কাজ করেছে।
সব জায়গা সব কিছু করা যায় না।
তটিনীর বাড়ির পরিবেশ ভদ্র।
তাই এসব নোংরামি দেখে কথা শুনিয়ে দিয়েছে।

সেই রাগ আকাশ আমার ওপর খাটায়।
আলমারির সব কাপড় বাহির করে ভিজিয়ে রাখে।
রাতভর তা আমায় দিয়ে ধোয়াই।তখন আমার বাচ্চা হওয়ার সময়।
বিরোধ করলে বলে এক্ষুনি তা*লা*ক দেবে।
ভয়ে সবটা করি আমি।

তটিনী মানে আমার ছোটজা মেয়েটাকে একটু অন‍্যরকম লাগে আমার।
বড়োজার মতো সে নয়।
স্পষ্টবাদী,সাহসি একটা মেয়ে।নতুন এসেই দেখি বাড়ির পরিবেশ বদলাতে চেষ্টা করে।
বড়োজার উশৃঙ্খল চলাফেরায় তীব্র প্রতিবাদ করে।
সোজা বলে,আমিও চাকরি করেছি।আমি তো এমন পোশাক পড়িনি।উনি কেন পড়ছে?
বাড়িতে শালীন পোশাক পড়তে হবে।
এখানে উনি একা থাকেনা।যে যা ইচ্ছে করবে।
ইয়াং দেবর বাড়িতে থাকতে উনি কীভাবে চলাফেরা করে?
আর উনার স্বামী কেন কিছু বলেনা?শাশুড়িমা চুপ থেকে কেন এসব উশৃঙ্খলা সহ‍্য করে?

ওর একের পর এক প্রশ্নে বাড়ির প্রত‍্যেকের মুখ বন্ধ ছিল সেদিন।
আমি খুশি হয়েছিলাম।
যা আমি পারিনি।নতুন এসে ও তা করে দেখাচ্ছে।
বড়োজা খুশি হয়নি।তটিনীকে অনেক ভাবে নিজের দলে করতে চেয়েছে।দামি গিফ্ট দিয়েছে।
আমার বিষয়ে কান ভাঙিয়েছে।
ঐ মেয়ের সোজা কথা,’আমি অন্ধ নই।নিজ চোখে সব দেখতে পাই।
টিচার আমি।তাই ভালো মন্দের জ্ঞান আছে।
আপনার চোখ দিয়ে আমায় দুনিয়া দেখতে হবেনা।’

ওদিন থেকে হলো ঐ মেয়েটাও বড়োজার চোখের কাঁটা।
বিয়ের পরেই রিঙ্কির এ বাড়িতে থাকা বন্ধ করে তটিনী ।
আকাশকে শাসায়,এসব দেখলে থানায় যাবে আমায় নিয়ে।
একপ্রকার ওর চাপে পড়ে আকাশ আমার ঘরে আসে।

তটিনী আমার সঙ্গে মিশতে চাইতো।তবে আমি তেমন আগ্রহ দেখাইনি।
আসলে আমার কোনোকিছুই ভালো লাগেনা।
তটিনী আমার অর্ধেক কাজ কমিয়ে দিয়েছিল।
বড়োজাকে সবসময় টাইট দিয়ে রাখতো।
ওর নামে শাশুড়ির কাছে বিচার দিলে ও নিজেও মুখে মুখে তর্ক করে পাসা পাল্টে দিয়েছে।

একে দেখে বুঝেছি আমি,নরম থাকলে গরম ভাত পাওয়া যায়না এ দুনিয়ায়।
মেয়েটার মুখের জোর ছিল বটে।একটা বললে চারটে শুনিয়ে দিত।
দেবর বউয়ের দলে।সুন্দরী বউ পেয়ে বউ অন্তপ্রাণ।
অবশ‍্য এর জন্যে তটিনী নিজেই দায়ি।
রাতে স্বামীর সামনে নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রেজেন্ট করতো।
কতো রোমান্টিক মূহুর্ত ওদের।নিজের রুপ,গুণ দিয়ে স্বামীকে বশে রেখেছিল।
এসব কথা আমায় তটিনী নিজেই বলেছে।আমাকেও ট্রাই করতে বলতো।আগ্রহ পাইনি।আকাশের কাছে আমার সব রুপ-রঙ ফিকে।
সে কালে আমি শুধু ঘরঘর করে গেছি।নিজেকে একটু সময় দেইনি।এখন তো সব হাতের বাইরে।সাজ দেখানোর মানুষটা পর্যন্ত আর আমার নেই।

ধীরে ধীরে তটিনীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয় বোন তূল‍্য।
একদিন তটিনী তার বাপের বাড়ি যায়।
ঐদিনই আমার ডেলিভারী পেইন ওঠে।
বড়োজা আর শাশুড়ি মিলে বাড়িতেই আটকে রাখে আমায়।
চিৎকার করেছিলাম বলে পুরো বাড়িতে বক্সে গান বাজায়।
ওরা চেয়েছিল আমি ম*রে যাই।অযুহাত দিত বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে ম*রে গেছি।
সৃষ্টিকর্তা আমার সহায় ছিল।
এক দরিদ্র ভিখারি বাড়িতে চাল নিতে এসে আমায় দেখে।
শাশুড়ি,জা তখন ঘর আটকে বসে আছে।আকাশ অফিসে।
সেই মহিলা আমায় সাহায্য করে।
কন‍্যা সন্তানের জন্ম দেই আমি।
পরবর্তীতে এটা নিয়ে থানায় যেতে চাই।
আকাশের আবার সেদিনই এক্সিডেন্ট হয়।আমার আর যাওয়া হয়না কোথায়।
গুরুতর কিছু না হলেও মাথা ফেটেছিল।
রিঙ্কি বাড়ি এসে সে কী কান্না!
চোখ দিয়ে পানি সেই।শুধু আওয়াজ।

তটিনী বাড়ি এলে ওকে সব বলি আমি।
তটিনী কী করেছিল জানেন?
বড়োজাকে চড় মেরেছিল তিনটা।
কেস করতে চেয়েছিল।কিন্তু প্রমাণ ছিলনা।তাই মেরে শোধ দিয়েছে।

বড়োজা এবার উঠে পড়ে লাগে তটিনীর পেছনে।ওকে সহ আমাকে সরানোই তার উদ্দেশ্য।
তটিনী দিনে বাড়ি থাকত না।জবে যেত।
সেই সুযোগে বড়োজা লাগলো দেবরের কান ভাঙাতে।
আমার মনে ভয়ের দানা বাধে।
ভুক্তভোগী আমি।তটিনীর সঙ্গে এমনটা হতে দেব না।বোন ভেবেছি ওকে।
দেবরের চরিত্র শুরু থেকেই নড়বড়ে।
আকাশের মতো ব‍্যাক্তিত্ববান পুরুষ যদি বদলে যেতে পারে।তাহলে এ আর কতোক্ষণ!

একজন মানুষের কানে প্রতিনিয়ত একই কথা বলতে বলতে একদিন সে অবশ‍্যই শুনবে।
মস্তিষ্ক বদলে যাবে।

আমি বুদ্ধি খাটিয়ে তটিনীকে বুঝিয়ে বলি হানিমুনে যেতে।
তটিনী ঘুরতে বেশ পছন্দ করতো।
আমার প্রস্তাবে রাজি হয়।
তবে শর্ত আমায় সহ বাবুদের নিয়ে যাবে।
আমি ছোট মেয়ের দোহাই দিয়ে নিষেধ করি।
মেয়েটা তবুও জোর করে।আবার যেতেও চায়না।
আমি অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠিয়ে দেই।
জায়গা আমি নিজেই ঠিক করে দেই।
ওখানে আমার দেবর চাকরি করতো।তটিনীর কর্মক্ষেত্রও কাছে।
যাওয়ার আগের রাতে তটিনী আমার সঙ্গে থাকে।কতো গল্প করি দুজনা।
বিদায়ের দিনে মেয়েটা আমায় ধরে সে কী কান্না!

ওরা যাওয়ার পর বড়োজার অত‍্যাচার বাড়ে।
আকাশকে প্রলভন দেখায় আমায় ছেড়ে দিয়ে রিঙ্কিকে বিয়ে করার।
সারাজীবন বসে খাবে শশুরের টাকায়।আমার সঙ্গে থাকলে আমাদের চাকর হয়ে নাকি ওর থাকতে হবে।
আমি ও আমার বাচ্চারা ওকে খাটিয়ে মার*ব

আকাশের চুপ থাকা ওর মতামত প্রকাশ করে সেদিন।
ভয়ে ভয়ে থাকি আমি।
কখন না জানি কোন দোষ ধরে।
সবসময় তটস্থ থাকতাম।
ওরা শুধু আমার খুত খুঁজে বেড়াতো।
আমি ওদের বলার আগেই সব করে রাখতাম।যেন আমার ভুল না পায়।
তটিনীর সঙ্গে আমার কথা হতোনা।আকাশ ফোন কেড়ে নিয়েছিল।
তটিনীর সঙ্গে একদিন কথা হয়েছিল।ও ফিরতে চাচ্ছিলো।আমি নিষেধ করে বলি,ওখানেই সেটেল হও তোমরা।
কবছর থেকে ছানা-পোনা নিয়ে বাড়ি ফিরবে।এখান থেকে তোমার স্কুল ও দেবরের অফিস দূরে।তাই ওখানেই থেকে যাও।মেয়েটা রাজি হয়না।বলে আপনার প্রতি যদি জুলুম করে ওরা।
আমি কিঞ্চিৎ হেসে বলি,ভাগ‍্যে যা আছে তাই হবে।তোমার থেকে অনেক কিছু শিখেছি আমি।নিজের লড়াই নিজেই করতে পারি।তুমি চিন্তা করোনা।

বলেছি তো বড়ো মুখ করে।তবে কাজে করে দেখাতে পারিনি।
ভাগ‍্য আমার সহায় ছিল না।
ওদিন ক্ষিদের চোটে লুকিয়ে দু-পিছ মাংস লুকিয়ে খাই।তার জের ধরে ওরা আমায় ডিভোর্স দেয়।
এটা সামান্য একটা ইস‍্যু ছিল।ওরা চেয়েই ছিল আমায় বের করে দিতে।
কারণ হিসেবে মিথ‍্যে রটনা রটিয়েছে।
এরপরের সবটাই আপনারা জানেন।

তন্নির অতীতের ছেদ কাঁটে লতা আপা ও চাচির কান্নায়।

(আজকে তন্নির অতীত শেষ।এটুকু না দিলে গল্পের সৌন্দর্য নষ্ট হতো হয়ত।বেশি তাড়াহুড়ো হয়ে যেত।খোলাসা হতোনা।
আগামী পর্বে চমৎকার কিছু হবে।
কার শাস্তি আগে দেখতে চান আপনারা?
খালার,বড়োজার নাকি আকাশের?
কাল থেকে প্রতিশোধ পর্ব স্টার্ট করবো।সম্পূর্নটা নয়।একটু একটু করে প্রতিশোধ,সেই সঙ্গে তন্নির প্রতিষ্ঠিত।
দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।তাই মিলিয়ে লিখতে চাই।
বাজে কিছু বলে মনোবল ভাঙবেন না।আপনাদের জন্য সারাদিন রোজা রেখে গল্প লিখি।একটু সদয় হবেন আমার প্রতি।দোয়া করবেন।
নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো।
অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখীত।দেরিতে দিয়েছি বড়ো দিয়েছি পর্ব তাই।খুশি হয়ে যাও সবাই।)

চলবে।